নারীর সতীত্ব পর্ব-১৬

0
1610

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_১৬
Wohad Mahmud

সবাই থাকবে। আর তোর ভাইয়ের বিপদের সময় আমার পাশে তুই থাকবি না? সারাজীবন আমার পাশে ছিলি আর এখনো থাকবি আমি জানি।

আমার কথায় ইমশোনাল হয়ে মাহমুদা বলে আচ্ছা ঠিক আছে থাকব।

সবাই বসে আছি খাওয়া দাওয়া করে খাবারের টেবিলে। মাহমুদা কে চা আনতে চলে বাবা। মাহমুদা চা নিয়ে এসে সবাইকে দিচ্ছে। চা দেওয়ার সময় এক কাপ চা সব রাকিবের গায়ে ঢেলে দেয়। রাকিবের গায়ে চা ঢেলে দিলে ও মা বলে চিৎকার করে উঠে।

আমি মনে মনে বললাম এতো চিৎকার করার দরকার আছে। চা পড়েছে আগুন না। এটা ভেবে চায়ের কাপে এক চুমুক দেওয়াতে আমার ঠোট টা পুড়ে গেল। তখন আমি বুঝলাম এতো চিৎকার করার কারণ কী। চা টা অনেক গরম। আমার তখন আর বুঝতে বাকি রইল না। এটা ইচ্ছে করেই করেছে মাহমুদা। এটা ভেবেই সত্যি সত্যি অনেক হাসি আসছে আমার। অনেক কষ্ট হাসি টা ঠেকিয়ে রাখলাম। এখন হাসা যাবে না, কারণ সবাই খারাপ ভাববে। আর ভাবলাম এটাই মনে হয় ইটের বদলে পাটকেল।

গায়ে চা পড়ে যাওয়াতে বাথরুমে চলে যায় রাকিব। ভাবি আর ভাবির মা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহমুদার দিকে।

ভাবি বলল একটু দেখে শুনে চা দিতে পারো না মাহমুদা। না পারলে আমাকে বলতে। এতো গরম চা গায়ে পড়েছে রাকিবের গা পুড়ে গেছে।

মাহমুদা বলল আমি তো আর ইচ্ছে করে গায়ে চা ফেলে দি নাই। ভুল করে মিস্টেক হয়েছে গেছে ভাবি। ওহ স্যরি ভাবি ভুল করে গড়ে গেছে।

আমি মনে মনে হাসছি আর বলছি ভুল করে মিস্টেক হয় কেমন আরে আবার। ভালোই তো এক্টিং করতে পারে দেখছি মাহমুদা।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে রুমে যায় রাকিব‌। রাকিবের রুমে যাওয়া দেখে রাকিবের মা রাকিবের পিছনে পিছনে রুমে চলে যায়।

ভাবি বলল আমি সব বুঝি মাহমুদা। তুমি ইচ্ছে করেই করেছো এসব। রাকিবের এখানে আসা তোমার একদম পছন্দ হয়নি আর সেই জন্যই এখান থেকে তাড়ানোর জন্য আমার ভাইয়ের উপর নির্যাতন করছো। এসব তুমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করছো মাহমুদা।

আমি তখন মুচকি হেসে বললাম। আহা ভাবি এসব কেন বলেন। প্রতিশোধ কেন নিতে যাবে। প্রতিশোধ নিতে হলে এক বছর আগেই নিয়ে নিত, এতদিন অপেক্ষা করত না। ভুল তো মানুষের দ্বারা হয়। আপনি যেমন সেদিন সাবনাজের গায়ে ডাবল হিটের চা ফেলে দিয়েছিলেন ভুল করে। ঠিক তেমনি করে আজ রাকিবের গায়ে চা ফেলে দিয়েছে মাহমুদা।

আমাদের এভাবে তর্ক করে কথা বলা দেখে বাবা বলল- কী শুরু করলে তোমরা এসব। এবার থামো। যা বলার জন্য ডাক দিয়েছ সেটা বলো।

আমিও চুপ হয়ে গেলাম আর ভাবির চুপ হয়ে গেল। কেউ আর কোনো কথা বললাম না। ভাবির তো চুপ থাকার না। তার যে মুখ সেই মুখ থেকে খোঁচা মেরে কথা না বললে পেটের ভাত হজম হয় না। সাবনাজের গায়ে চা ফেলে দেওয়ার কথা বললাম বলে চুপ হয়ে গেল। নিজের দোষ ঢাকতে ভেজা বিড়াল হয়ে গেছে।

ভাইয়া তখন বলল আচ্ছা বাবা ঠিক আছে সেটা না হয় বলা হবে। আগে বলো তোমার শরীর কেমন আছে। আগের থেকে কি উন্নতি মনে হচ্ছে?

বাবা বলল আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেকটাই সুস্থ আছি। নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছি আগের থেকে আরো সুস্থ হয়ে যাব ইন শাহ আল্লাহ।

আমি তখন ভাইয়াকে বললাম। আজকে বাবার গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভাগ্য ভালো আপনি ঔষধ টা ঠিক সময় নিয়ে এসেছিলেন না হলে বাবার গ্যাস বেড়ে আরো অনেক অসুস্থ হয়ে যেত।

ভাইয়া আমার দিকে ট্যারা চোখে তাকিয়ে আছে। আর আমি মিট মিট করে হাসছি। কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দিলাম একটু্।

মা বলল আসল কথায় আসা যাক। আমাদের এখানে কেন ডেকে নিয়ে আসছো সাইমা?

ভাবি বলল– মাহমুদের জন্য এই বাড়িতে থাকা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে মা।

কেন কী হয়েছে? মাহমুদ আবার কী করল?

মাহমুদ আমার সাথে আপনার বড় ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। সম্মান দিয়ে কথা বলতে জানে না। আজকেও ওর বড় ভাইয়ের সাথে কথা তুই করে কথা বলছে।

আমি বললাম মা তুমি তো জানো আমি ভাইয়ার সাথে সেই ছোট থেকেই তুই, আপনি দুটা করেই কথা বলি। যতদিন থেকে ভাবি এই বাড়িতে আছে ভাবি তো দেখছে তাহলে এসব কথা কেন তুলে ধরা হচ্ছে?

মা বলল হ্যাঁ ঠিকই তো এখানে আবার সমস্যা কীসের। সারাজীবন এমন করেই কথা বলে মাহমুদ তার বড় ভাইয়ের সাথে।

ভাবি বলল তা না হয় বুঝলাম আমার সাথে ভালো করে কথা বলে না কেন? আর মাহমুদা, রাকিবের বিষয় টা সবার কাছে বলে বেড়ানোর দরকার কী? আর এটা তো বলা হয়েছে এই বিষয় এটা এখানে সমাপ্ত আর কেউ জানবে না তাহলে সাবনাজকে কেন বলল।

আমি উঠে দাড়িয়ে বললাম অনেক হয়েছে আর না। প্রথমত আমি আপনার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করি নাই। আর দ্বিতীয় কথা বলো। সাবনাজ আমার স্ত্রী, এই বাসায় সবকিছু জানা তার অধিকার আছে। সাবনাজকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবেন না আপনি।

বাবা বলল হ্যাঁ এটা তো ঠিক আছে সাইমা। সাবনাজ তো এই বাড়ির বউ। তার সবকিছু জানার অধিকার আছে। শুধু বলা হয়েছিল বাড়ির বাইরে কেউ জানবে না। আর সাবনাজ তো বাড়ির মানুষ বাইরের কেউ না।

তা ঠিক আছে বাবা বুঝলাম। কিন্তু সাবনাজ যদি এই বিষয়ে বাইরে কাউকে বলে তাহলে তখন কী হবে?

বাবা তখন সাবনাজের দিকে তাকিয়ে বলে। সাবনাজ তুমি ওয়াদা করো এসব কথা কখনো কাউকে বলবে না। এমনকি তোমার বাবা মায়ের সাথেও না। যদি বলো তাহলে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।

সাবনাজ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলল। আপনি যেমন বলবেন বাবা। আমি কখনো কাউকে এই বিষয়ে বলব না বাবা।

আমি মনে মনে হাসছি আর বলছি। যাক বাঁচা গেল এখনো সবকিছু আমার অনুকূলে আছে। দেখা যাক সামনে আবার কী ঝামেলা সৃষ্টি করে।

ভাবি তখন বলল এখন তাহলে আসল কথায় আসা যাক। আচ্ছা বাবা আমার পরিবারের লোকজন কী এখানে আমাকে দেখার জন্য আসতে পারে না?

হ্যাঁ অবশ্যই পারে। কেন পারবে না?

তাহলে সেই কত আগের মাহমুদা আর রাকিবের বিষয় নিয়ে এখনো পড়ে আছে মাহমুদ। আর সে জন্যই আমার ভাইকে বলেছে এই বাসা থেকে চলে যেতে। রাকিব এই বাড়িতে কখনো আসতো না শুধু আমার জন্য এসেছে। আবার বাচ্চা হবে জেনে। বাবা মা আপনারা যদি বলেন আমার ভাই এখানে এসে ভুল করেছে তাহলে আমি রাকিবকে এক মুহুর্ত এখানে রাখব না বাসায় পাঠিয়ে দিব।

মা তখন বলল– না না পাঠিয়ে কেন দিবে যা হয়েছিল সব ভুলে গেছি আমরা। আর মাহমুদা তোমার ভাবি যেটা বলছে তা কি সঠিক?

না মা এটা ভুল। আমি এমন কথা কখনো বলি নাই। আমি শুধু বলেছি মাহমুদা সেই কথা এখনো ভুলতে পারে নাই। ওর ব্যবহারে তুমি কষ্ট পাবে না। আর মাহমুদা থেকে একটু দূরে থাকবে তাহলে হয়তো সে এসব আস্তে আস্তে ভুলে যাবে। আর ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করেছি। কিন্তু আমি বাসা থেকে চলে যেতে বলি নাই। এটা মিথ্যা কথা।

ভাবি তখন বলল আচ্ছা তাহলে তুমি সত্যি কথা বলছো আর আমরা দুজন মিথ্যা কথা বলছি। আর সত্যি এটাই যে রাকিবকে এখান থেকে চলে যেতে বলছো।

আমি বললাম যে, সত্যি মিথ্যে কখনো সংখ্যা দিয়ে নির্ধারণ করা হয় না। আপনার কাছে কী প্রমাণ আছে যে আমি আপনার ভাইকে এসব কথা বলেছি।

ভাবি কিছু বলতে যাবে তখন মাহমুদা বলে রাকিবকে ডাকার দরকার রাকিব কী বলে।

রাকিবকে ডাকার জন্য সবাই অনুমতি দিল। আমি গিয়ে রাকিবকে ডেকে নিয়ে আসলাম। রাকিব এসে যা বলল আমি আমি নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছি না। রাকিবকে কী ভুতের ধরলো না কি যে, মিথ্যা না বলে সব সত্যি কথা বলে দিচ্ছে।

রাকিব বলল মাহমুদ ভাইয়া আমার সাথে খারাপ করে কথা বলেনি। আপু যা যা বলেছে সব মিথ্যা কথা। রাকিবের এমন কথা শুনে ভাবি হা করে তাকিয়ে আছে নিজের ভাইয়ের দিকে। ভাবিও বিশ্বাস করতে পারছে না।

রাকিবের কথা শুনে ভাবি মাথা ঘুরে পড়ে যায়।

চলবে,,,,,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ‌।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে