নারীর সতীত্ব পর্ব-০৯

0
1768

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_০৯
Wohad Mahmud

দুই ঘন্টা জার্নির পরে আমি বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেল বাজালাম। কিছুক্ষণ পরে দরজা খুলে দেয়। দরজা টা আর কেউ না ভাবি খুলে দিচ্ছে। বুঝলাম না আজ অন্যরকম কেন হলো। ভাবি আজ প্রায় দুই বছর আমাদের এখানে আছে কোন দিন দেখলাম না গেট খুলে দিতে আজ হঠাৎ গেট খুলে দিচ্ছে বুঝলাম না। দরজায় দাঁড়িয়ে আমার পিছনে কি যেন খুঁজছে ট্যারা চোখে। আমি বললাম এভাবে চোরের মতো করে কী খুঁজছেন বাহিরে।

ভাবি বলল কিছু না এমনিতেই দেখলাম আর কেউ এসেছে কী তোমার সাথে। আর আমি চোরের মতো কই খুঁজছি। এখন আমাকে চোর বলার মানে কী। আমাকে দেখে কী চোর মনে হয়।

কিছু না ভাবি এমনিতেই বললাম। আমি মনে মনেই বললাম। আমি তো ভালোই বুঝতে পারছি কী হয়েছে ভাবি আর কিছু খুঁজছেন চোরের মতো করে। সাবনাজ কে খুঁজছেন আপনি। তারপর মুচকি হেসে চলে আসলাম।

তারপর সরাসরি আব্বুর রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি আব্বু সেই। মা আর মাহমুদা বসে আছে। আমি বললাম বাবা কোথায় আছে। রুমে দেখছি না কেন? বাবা তো অসুস্থ তাহলে কোথায় গেল।

মাহমুদা বলল বাবা ওয়াশরুমে আছে।

আচ্ছা তাহলে বাবা আসুক আমি ততক্ষণে বাবার জন্য অপেক্ষা করি।

আরে না না , তুই অনেক পথ জার্নি করে এসেছিস ফ্রেশ হয়ে তারপর এসে বাবার সাথে দেখা করিস।

তারপর রুমে চলে আসলাম আমি। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম আমি। তারপর আবার বাবার রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি বাবা দিব্যি রুমের মধ্যে হাঁটাচলা করছে।

আমি বললাম এটা কী বাবা তোমার তো এক্সিডেন্টে হয়েছিল পায়ের হাড় সরে গিয়েছিল। এমন হলে তো তুমি হাঁটাচলা করতে পারবে না। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব তুমি দিব্যি হাঁটাচলা করছ।

আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে বাবা। তখন মা আর মাহমুদা ঘরে আসল। আমি মাহমুদা কে বললাম কিরে কী হয়েছে, আমাকে মিথ্যা কেন বললি। আমি ঠিক আছে কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি।

মাহমুদা বলে তোর জন্য খুশির সংবাদ আছে ভাইয়া।

আমি বললাম কিসের খুশির সংবাদ আবার। এমনিতেই মিথ্যা বলে বাড়িতে নিয়ে এসেছিস আবার। এখন মনে হয় আবার মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছিস খুশির সংবাদ বলে।৩০৮

এক সপ্তাহ আগে তুই একটা চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলি ভাইয়ার অফিসে মনে আছে?

হ্যাঁ মনে আছে। আর কতই তো ইন্টারভিউ দিলাম। শুধু টাকা চায়। কোনো রকম একটা চাকরি পেয়েছিলাম। কেন এটাও রিজেক্ট হয়ে গেছে?

আরে না অ্যাপার্টমেন্ট লেটার দিয়েছে। এক সপ্তাহ পরে থেকে জয়েন করতে বলেছে। তোর নতুন বিয়ে হয়েছে তাই বড় ভাইয়া কথা বলে এক সপ্তাহ পরে জয়েন করানোর কথা বলেছে। আর বাবাও এক্সিডেন্টে করেছিল। তেমন সমস্যা হয়নি অটোর সাথে ধাক্কা লেগেছিল। ঔষধ খাচ্ছে ব্যথা অনেক টা কমে গেছে।

রাতে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করছি। আর বাবা বাইরে গিয়েছে একটু চা খেতে। তখন ভাইয়া বলল তোর বড় ভাবি হয় একটু সম্মান দিয়ে কথা বলিস। চোর বলাটা ঠিক হয়নি তোর।

আমি মনে মনে হাসলাম বাহ ভাইয়া আসতে না আসতেই নালিশ করা হয়ে গিয়েছে। ভাবি সামান্য সামান্য বিষয় নিয়ে বড় বড় রিয়েক্ট করে। আমি হাসতে হাসতে ভাইয়া কে বললাম আরে আমি তো মজা করে বলছি। বড় ভাবি হয় আমার, আমি একটু ভাবির সাথে মজা করে কথা বলব নাতো কে বলবে। আমি এই বিষয় টা হেঁসে উড়িয়ে দিলাম। আমি বুঝতে পারছি এসব সামান্য বিষয় নিয়ে আমার আর ভাইয়ার মধ্যে একটা খারাপ সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমাদের মধ্যে এই সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি তা কখনো হতে দিব না। ৪৯০

খাওয়া দাওয়ার মাঝামাঝি অবস্থায় ভাবি বলল সাবনাজ আসল না কেন মাহমুদ।

আমি জানতাম এই কথাটা বলবেই ভাবি। সাবনাজ কেন আসল না এটা জানতে চাইবে। আমি মুচকে হেঁসে বললাম। সাবনাজের আসার কী দরকার আজকে আবার‌। এমনিতেই তো দুই তিনদিন পরে চলে আসবে।

ভাবি তখন বলল তোমাকে তো বলা হয়েছে বাবা এক্সিডেন্ট করছে তাও কেন আসল না। বাবার এক্সিডেন্টের কথা শুনে তো আসা দরকার ছিল। বাবা কেমন আছে সেটা দেখতে সাবনাজের আসা দরকার ছিল।

আমি বললাম বলা হয়েছিল বাবার পায়ের হাড় সরে গিয়েছে কিন্তু সেটা তো হয়নি। মিথ্যা বলা হয়েছিল আমার সাথে, আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।

তখন তো তুমি জানতে না মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। আসলে এমন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছে যার আদব কায়দা কিছু শেখা নেই। এসব মেয়েগুলো কোথা থেকে যে আসে। এসব মেয়েদের কারণে আমাদের মতো মানুষের বদনাম।

আমি বললাম অনেক হয়েছে ভাবি আপনার এসব আজাইরা মার্ক কথা শুনতে শুনতে আমার ধৈর্য পার হয়ে গিয়েছে। আমি আসার সময় দরজা কেন খুলতে গেলেন আগে আগে বলেন তো আমকে।

ভাইয়া তখন বলে মাহমুদ মানুষের মতো কথা বল অমানুষের মতো না। গেট খুলতে গিয়েছে তো এখানে কী অপরাধ হয়েছে হ্যাঁ?

আমি মুচকি হেসে বললাম। অপরাধ কিছু হয়নি। আজ দুই বছরে তো এর আগে কখনো গেট খুলে নাই। আর গেট খুলে চোরের মতো দেখেছিল আমার পিছনে সাবধান আছে কী? মনে মনে চাচ্ছিল সাবনাজ যাতে না আসে। তাহলে বাড়ির সবার সাথে আমাদের নামে কাটি মেরে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে আর এখন বাবার প্রতি দরদ দেখাতে আসছে।

মা গালে থাপ্পর মেরে বলে তোর বড় ভাবি হয় এভাবে কথা বলতে লজ্জা করছে না। আর ঠিকই তো বলছে সাবনাজের মধ্যে কোনো আদব কায়দা নেই। শ্বশুরের এক্সিডেন্টের কথা শুনে, না এসে কীভাবে থাকতে পারল।

সামান্য বিষয় নিয়ে এমন কেন করছো তোমরা। সব সময় যেটা দেখা যায় সেটা হয় না, আর যেটা দেখা যায় না সেটা হয়। এখন সবকিছু দোষ আমাদের।

তোমার বড় ছেলে তার শালির পিছনে সব কিছু খরচ করে। যখন যা দরকার হয় দেয়। কিন্তু যখন নিজের বোনের বেলায় আসে তখন তোমার বড় ছেলের কাছে এক টাকাও থাকে না। ফরম ফিলাপ না করতে পারলে পরিক্ষা দিতে পারবে না এটাও জেনেও তোমার বড় ছেলের বউ বলে টাকা নেই এখন দিতে পারবে না। আর সেটা শুনেই তোমার ছেলে নিজের বোনের টাকা দিতে পারে না। কিন্তু তার পরেই শালির শপিং এর জন্য টাকা তো ঠিকই দিতে পারে। বেকার থেকেও বোনের ফরম ফিলাপ এর টাকা দিতে হয়। কিন্তু তোমাদের চোখে আমার কোনো মূল্যে নেই। সবকিছুর মূল্য পাবে বড় ছেলে বড় বউ। এটা বলেই উঠে পড়লাম আমার দেখাদেখি ভাইয়া ও উঠে পড়ল। তারপর আমাকে বলে —

আজকের ব্যবহার টা তুই অনেক খারাপ করলি মাহমুদ। বড়দের সম্মান দিতে শিখলি না।

বউ এর কথা শুনে চললে বউ এর পিছনে পিছনে চলে যে ছেলে নিজের পরিবার কে দূরে ঠেলে দেয় সে আবার সম্মানের কথা বলে। বিষয় খুব হাস্যকর হয়ে যায়। এসব করে সম্মানের কথা বাদ দিয়ে হাতে চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকেন কাপুরুষের মতো।

ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে থাপ্পড় মারতে যাবে ঠিক সেই সময় আমি ভাইয়ার হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে রুমে চলে আসলাম।

রুমে এসে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম মন খারাপ করে। যতসব হয়েছে ভাবির জন্য। সাবনাজের কথা না তুললে এমনটা হতো না। ভাবি সবার মাথার মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর সবাই তার কথা মতো চলছে। সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সাবনাজ কে ফোন দিলাম কিন্তু কয়েকবার দেওয়া পরেও ফোন রিসিভ করছে না। মনে হয় অনুষ্ঠানে আছে। সাবনাজের ফোন কাছে নেই মনে হয়।

ছোট বোন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে আসব ভাইয়া।

আমি বুঝতে পারলাম আজকের ঘটনা নিয়ে ভয় পেয়ে আছে। আমি বললাম চলে আই।

মাহমুদা কান্না করতে করতে বলল সব দোষ আমার। তুই সত্যি টা বলে দিলি কেন?

আমি বললাম যেটা করেছি ভেবে চিন্তে করেছি। এমনিতেই বাসায় মা আর ভাবি আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না। এর যদি আমি সত্যি টা বলে দিই তাহলে তুই ও তাদের চোখে খারাপ হয়ে যাবি।

ফ্লাশ ব্যাক। আজ সকালের ঘটনা। হ্যালো ভাইয়া আব্বুর কিছু হয়নি। তুই চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছিলি সেখানে তোর চাকরি টা হয়ে গিয়েছে সে জন্য তোকে সারপ্রাইজ দেওয়া জন্য আব্বা এই নাটক সাজিয়েছে।

আমি বললাম ওহ আচ্ছা তাহলে বিষয়। তবে আমি না গেলেও তো চলবে সমস্যা নেই।

না না আমি ভাইয়া তুই না আসলে বাবা বুঝে যাবে আমি সব বলে দিয়েছি তোকে।

আচ্ছা ঠিক আছে তবে আমি সাবনাজ কে নিয়ে আসছি না। যদি সত্যি সত্যি বাবা এক্সিডেন্ট করত তাহলে নিয়ে আসতাম। তারপর আমি মাহমুদার কথা শুনে হাসতে হাসতে বাইরে হাঁটতে গেলাম। আর ভাবলাম বাবা যখন আমার সাথে নাটক করছে আমিও একটু নাটক করি।
এটাই ছিল আজ বিকালে কাহিনী। আর আমি সেই জন্যই সাবনাজ কে কিছু বলি নাই আর সাথে করেও নিয়ে আসি নাই।

মাহমুদার সাথে কথা বলে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। হঠাৎ সাবনাজের কলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ফোন রিসিভ কররা সাথে হঠাৎ নিচে চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তাড়াতাড়ি করে নিচে গেলাম।

চলবে,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে