নাপুরুষ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
1819

#না_পুরুষ
#শেষ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



সুফলার দেবর বাজারে গিয়েছিল সেই সকাল বেলা বাজার করতে। কিন্তু বেলা গড়ালেও তার দেবর আর বাড়ি ফিরে এলো না। বাড়িতে সবাই যখন দুশ্চিন্তায় মগ্ন তখন সংবাদটা এলো। খারাপ সংবাদ। বাজার থেকে কেউ একজন এসে জানিয়েছে যে সুফলার দেবরকে মেয়রের ভাতিজার সাঙ্গ পাঙ্গরা মেরে হাত পা ভেঙ্গে রেখে গেছে। এবং হুমকি দিয়ে গেছে পরিবারের বাকী সবকটারই এই হাল করবে। এবং ঘরের মেয়েদেরকে অসম্মান করবে।ইজ্জত হরণ করবে।শোনে ভয়ে ওদের প্রাণ যায় যায়।সুফলারা ওদের দেবরের কথা ভুলে গিয়ে সবাই মিলে দূরের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে গা ঢাকা দিতে রাতেই রওয়ানা হয়ে গেল। সুফলার দেবর যে হাসপাতালে পড়ে আছে তার সাহায্যে কেউ পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারেনি। ভয়ে।যদি হাসপাতালে গেলে ওদেরকেও মারে!

মিম্মির বাবাকে আর ওই ভাড়াটে ছেলেটাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে ইচ্ছে মতো মারছে।মারের চোটে মিম্মির বাবা হড়বড় করে তার সাথে যুক্ত আছে এমন অনেকের নামই বলছে। এমনকি তার শাশুড়ি এবং স্ত্রীর নামটাও বাদ রাখেনি।বলেছে তার শ্যালকের নববধূ রুপার জন্য এমন পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।তার ভাড়াটে ছেলে ভুল করে মেয়রের ভাতিজির সাথে খারাপ আচরণ করেছে।সে যায়হোক। পাওয়ারফুল লোকেদের ক্ষেত্রে এই দেশের আইন বরাবরই শক্ত। এই মামলা থেকে বেরিয়ে আসতে ওদের অনেক দিন লেগে যাবে হয়তোবা। এবং সুফলা লায়লা সহ মিম্মিদের বাড়ির সবকটা মানুষের জীবন মাস ছয়েকের জন্য জাহান্নাম হয়ে গেল।ওরা মনে হয় এই ছ’মাসের ভেতর কেউই আর বাড়ি ফিরতে পারবে না!ফিরলে মেয়রের বাড়ির ছেলেরা ওদের হাত পা ভেঙ্গে ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিবে একেবারে!

তবে বাড়ি ফিরবেন পৃথুলের বাবা। কবে ফিরবেন তা বলেনন। এই সংবাদটি তিনি জানিয়েছেন রুপাকে আজ বিকেল বেলা। বলেছেন,’মা,আমি ছুটি নিয়েছি। বাড়িতে এসে পনেরো দিনের মতো থাকবো।’
রুপা খুশি হলো। সীমাহীন খুশি। তবে সে এই খুশির মাঝেও তার শ্বশুরের সাথে ওদের দুঃখের কথা বললো।বললো,মিম্মির বাবার ভয়াবহ বিপদের কথা।কী হবে ওদের?এসব কিছু।
পৃথুলের বাবা সবকিছু শোনে হাসলো। হেসে বললো,’মাগো,আমি যা জানি তুমি যখন তা জানবে তখন ওদের প্রত্যেকের মুখে থুথু ছিটিয়ে দিবে। কিন্তু আমি নিজের মুখে এসব বলবো না তোমায়। একজন বাবা হয়ে তার মেয়ের কাছে এসব কথা বলা যায় না। লজ্জা হয়। ঘেন্না হয়। তবে তুমি খুব শীঘ্রই সবকিছু শুনতে পাবে। এবং তখন ওদের প্রত্যেককে খুঁজে বেড়াবে। খুঁজে বেড়াবে শুধুমাত্র ওদের মুখে থুথু ছিটিয়ে দিতে। কিন্তু দূর্ভাগ্য তোমার যে ওদের কাউকেই তুমি কোথাও খুঁজে পাবে না।ওরা তখন চারদিকে জাহান্নামের আগুন নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াবে। কিন্তু কোথাও একটুও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা পাবে না। কোথাও না!’
পৃথুলের বাবার কথাগুলো আজ ভার ভার।এসব কথার কোন শুরু শেষ রুপা বুঝতে পারলো না। ওরা এমন কী করলো যে বাবা ওদের বিষয়ে এমন করে বললেন? ওদের মুখে থুথু ছিটাবার কথা।আর ওরা পালিয়ে পালিয়েই বেড়াবে কেন?কী সমস্যা ওদের? রুপার মাথায় কিছুই ঢুকলো না।
সে তার শ্বশুরের সাথে কথা শেষ করে তার শাশুড়িকে ফোন দিলো। লায়লা বেগমের ফোন বন্ধ। এরপর ফোন দিলো সুফলাকে।সুফলার ফোনও বন্ধ।রুপা এবার সবচেয়ে বেশি অবাক হলো। হচ্ছে টা কী! ওদের ফোন পর্যন্ত বন্ধ।কী হয়েছে আসলে ওদের?
সে ভাবলো রাতে পৃথুলকে জিজ্ঞেস করবে সুযোগ পেলে।

আজ রাতে শুধু ওরা দুজন পুরো বাড়িটিতে।পৃথুল আর রুপা।আর কেউ নেই। রুপা ভাবলো,আজ অনেক কথা বলবে পৃথুলের সাথে।আজই সুযোগ ওর কাছ থেকে সব কিছু জেনে নেয়ার।কেন সে ওর থেকে দূরে দূরে থাকে! আমেরিকায় থাকাকালীন সময় কী তার কোন সম্পর্ক ছিল কি না! এইসব কিছু। তবে রুপার মনে ভয়।রুপার সাথে একা এই বাসায় থাকতে হবে এই ভয়ে যদি পৃথুল কোথাও উধাও হয়ে যায়!
কিন্তু আশ্চর্য জনক বিষয় হলো আজ পৃথুল কোথাও উধাও হলো না।আধো আলো আধো অন্ধকার মাখা মন কেমনের সন্ধ্যায় রুপা যখন কিচেনে রান্না বসিয়েছে তখন পৃথুল এসে চুপটি করে দরজায় দাঁড়িয়েছে। দাঁড়িয়ে থেকে তাকে দেখছে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে।
রুপা ওদিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। এবং ঠোঁটের পাপড়ি মেলে মিষ্টি করে হাসলো।
পৃথুল আজ নিজে থেকেই কথা বললো। এবং রুপাকে তুমি করে সম্বোধন করলো। সে বললো,’রুপা, তুমি খুব সুন্দর মেয়ে। খুব সুন্দর! সৃষ্টিকর্তা তোমায় অপরুপ করে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু কী দূর্ভাগ্য আমার দেখো।আমি—
রুপা উদগ্রীব হয়ে পরবর্তী কথাটা শুনতে চায়লো।বললো,’আমি, তারপর? তারপর কী পৃথুল!’
পৃথুল কেঁদে ফেললো। শব্দ করে কাঁদছে ও।চোখ থেকে শ্রাবণের জলধারার মতো পানি পড়ছে গাল বেয়ে।টপটপ করে।একটা ছেলে এভাবে কাঁদতে পারে, চোখের জল ঝরাতে পারে এমন ভাবতেও পারেনি কোনদিন রুপা।সে তার রান্না রেখে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো পৃথুলের কাছে। তারপর পৃথুলের একেবারে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,’কী হয়েছে পৃথুল?কী হলো তোমার? কাঁদছো কেন?আমি কী তোমায় কোন কারণে কষ্ট দিয়েছি?বলো!বলো পৃথুল!’
পৃথুল বললো,’অনেক হয়েছে। অনেক।আর চুপ করে থাকবো না। লজ্জায় চুপ হয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।আমি তোমার মতো একটা লক্ষ্মী মেয়ের দুঃখের কারণ হতে পারি না। কিছুতেই না!’
রুপা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছুই না।পৃথুল এসব কী বলছে?কেন বলছে?
রুপা জানতে চায়লো। সবকিছু খুলে বলতে বললো পৃথুলকে। বললো,’পৃথুল, তোমার মনের চেপে থাকা দুঃখের কথা আমায় বলো। দেখবে মন হালকা হয়ে গেছে!’
পৃথুল তার চোখ মুছতে মুছতে বললো,’সব বলবো।আজ রাতে সব কিছু খুলে বলবো তোমায়।আর চুপ থাকবো না তোমার সামনে এসে। কিংবা তোমায় দেখে পালিয়েও বেড়াবো না এ ঘর থেকে ও ঘরে।সময় এসেছে সব খুলে বলার।সময় এসেছে তোমার জীবন সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়ার!’
রুপা খুশি হলো। তবে তার আর কিছুতেই তর সয়ছে না।সে উদগ্রীব হয়ে আছে পৃথুলের মুখ থেকে সবকিছু শোনার জন্য।সে অপেক্ষা করছে রাতের জন্য। এখন তো সবে সন্ধ্যার শুরু।দিনের আলো মরতে শুরু করেছে কেবল।আরেকটু পর দূরের বনে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকবে।লেবুর বাগান জুড়ে গন্ধ উঠবে সাদা মসৃন ফুলের।আর আকাশ জুড়ে ভেসে বেড়াবে থালার মতো মস্ত এক চাঁদ। সেই চাঁদের আলোয় দুজন মানব- মানবী বসবে উঠোনের সবুজ ঘাসের উপর। তারা মুখোমুখি বসে থাকবে গভীর রাত পর্যন্ত।এই রাত কথা বলার রাত। এই রাত রহস্য উন্মোচনের রাত।আজ রাতে পৃথুল বলে দিবে রুপাকে তার নিজের বিষয়ে সবকিছু। রুপা এই চির আকাঙ্ক্ষিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে কিচেনে চুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ভাতের হাঁড়িতে চামুচ নাড়াতে নাড়াতে।

রাত নয়টা ত্রিশ বাজে ঘড়িতে।ওরা রাতের খাবার খেয়েছে।রুপা আর পৃথুল।আজ রুপা নিজের হাতে ভাত শালুন বেড়ে দিয়েছে পৃথুলকে। তারপর দুজন মুখোমুখি বসে এক টেবিলেই রাতের খাবার খেয়েছে। খাওয়া শেষ হলে পৃথুল নিজেই বললো,’চলো, বারান্দায় গিয়ে বসি।’
রুপা বললো,’উঠোনে বসতে কী তোমার আপত্তি আছে?যদি আপত্তি না থাকে তবে আমরা উঠোনে বসতে পারি!’
পৃথুল বললো,’আপত্তি কিসের আবার!চলো উঠোনেই বসি গিয়ে।’
তারপর ওরা গিয়ে উঠোনের ঠিক মাঝখানে বসে পড়লো। দুজন মুখোমুখি। চাঁদের চিকচিকে কিরণ এসে ওদের চোখে মুখে পড়ছে।কী যে সুন্দর লাগছে ওদের!
কিন্তু অতসব সুন্দরের মাঝেই এবার কাঁদতে হবে রুপাকে।রুপা যখন পৃথুলের মুখ থেকে সবকিছু শুনবে তখন ও নিশ্চয় কাঁদবে। কাঁদবে ওর ভাগ্যের জন্য। কিংবা ও কাঁদবে পৃথুলের মতো লক্ষ্মী একটা ছেলের গোপন অসুখটার কথা শোনে!
পৃথুল বললো।বলতে শুরু করলো।
প্রথমেই সে বললো তার নিজের মা বোন আর বোন জামাইয়ের করা চক্রান্তের কথা।ওর মা ওকে ভুল সন্দেহ করেছিল। ভেবেছিল ওর বাবার সাথেই রুপার পরকিয়ার সম্পর্ক। এই জন্য বাড়ি থেকে আপদ বিদায় করতে অত বড় চক্রান্ত করেছিল ওরা।পৃথুল বললো সে এসবের কিছুই জানতো না আগে।পরে সব শুনেছে।
পৃথুলের মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনে রুপার মনে হলো তার একটা পাঁজর ভেঙে গেছে।কী সর্বনাশ! কথায়,চলনে বলনে ফেরেশতা তূল্য মানুষগুলোর ভেতরটা অত নোংরা! তবে কী তার শশুর এই জন্যই বলেছিলেন এদেরকে তুমি খুঁজবে। খুঁজবে এই জন্য যে ওদের মুখে ঘেন্নায় থুথু ছিটিয়ে দিতে!
রুপার এবার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই এদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এবং ওদের মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়া প্রয়োজন।
কিন্তু পৃথুল জানালো ওরা পলাতক। মিম্মির বাবার বাড়িতে ওরা ফিরতে পারলেও এ বাড়িতে কখনো ফিরতে পারবে না ওরা।সুফলাও না।
লায়লা বেগমও না।পৃথুলের বাবার সিদ্ধান্ত কঠিন সিদ্ধান্ত। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই শেষ বয়সে এসে তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দিবেন। এই বিষয়ে পৃথুলের সাথেও তিনি পরামর্শ করেছেন।পৃথুল বলেছে,শত হলেও লায়লা তার জন্মদাত্রী মা।সে তার বাবাকে ওই কথায় হ্যা বলতে পারে না। তবে সে তার মায়ের প্রতি আরেকটি কারণে ক্রোদ্ধ।ক্রোদ্ধ তার বাবাও।কারণটি হলো পৃথুলের জন্য জোর করে বিয়ে করিয়ে সুন্দর একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করে দেয়া। ওই কারণেই পৃথুল তার বাবাকে বললো, তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। আমার এতে কোন ক্ষোভ থাকবে না!
এরপর পৃথুল রুপার কাছে তার বিষয়ে বললো।সে বললো আমেরিকায় আমার কোন মেয়ের সাথে কোন ধরনের সম্পর্কই ছিল না।ওসব আমার মায়ের করা চক্রান্ত।উনি সব মিথ্যে নাটক সাজিয়েছেন।আমি বার বার না বলেছি। তবুও।
উনি জোর করেছেন। অনেক চিকিৎসা চলেছে আমার। অনেক ফকির কবিরাজ।শেষে এই বিয়ে।
আমি যখন আস্তে আস্তে বড় হতে চলেছি তখন থেকেই বুঝতে শুরু করেছি যে আসলে আমার মেয়েদের প্রতি কোন ধরনের ফিলিংস নেই।বলতে পারো আমি কখনো কোন মেয়েকে নিজের প্রেমিকা বানাবো, বিয়ে করে ঘরে আনবো এমন কোন ভাবনা কোনদিন মনে আসেনি। কিংবা সিনেমায় যা হয়,ওই যে একটা ছেলে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়,স্পর্শ করে একে অপরের শরীর।এসব আমার কাছে কোন ফিলিংস এনে দিতে পারে না। মেয়েদের প্রতি আমার যা আছে তা স্বাভাবিক ভাবেই মায়া, মমতা। ওইদিন রাতে তুমি যে আমার কাছে এলে, আমায় জাপটে ধরলে তখন আমার অস্বস্তি লাগছিলো। কেমন ঘেন্নাও হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বমির উদ্রেক হচ্ছে। আমার যে ছেলেদের প্রতি কোন ধরনের অনুভূতি আছে বিষয়টা তেমন কিছুও না।সারা জীবন আমি এমন। কিন্তু আমার মা আমায় বুঝতে পারে না।আমায় জোর করে বিয়ে করালো। কোনো এক কবিরাজ নাকি বলেছে বিয়ে করালেই আমি ভালো হয়ে যাবো।বাবা নিষেধ করেছে বারবার।আমি রাজি হয়নি। তবুও। একরকম জোর করেই এটা করলো। আমি না বলেছি। অনেক বার। কিন্তু এর বেশি কিছুই করার ছিল না। স্বাভাবিক লজ্জা বলে একটা কথা আছে।আমি পারিনি রুপা।আমি পারিনি!’
এই জোৎস্না সুভিত সুন্দর স্বর্গীয় রাতে দুজন মানব-মানবী কাঁদছে। একজন তার জীবনের চরম দুঃখের কথাগুলো বলতে গিয়ে।অন্যজন কাঁদছে তার জীবনে নতুন একটি কলঙ্ক যোগ হয়েছে এই দুঃখে।
রুপা তার চোখ ভরা জল নিয়ে ওর দিকে তাকিয়েছে।পৃথুলের গাল বেয়ে টপটপ করে জল নামছে।আর পৃথুল কাঁদছে। বাচ্চা ছেলেদের মতো। সে কাঁদতে কাঁদতে বলছে,’আমায় মেরে ফেলো রুপা।আমায় মেরে ফেলো। আমার কিছুই করার ছিল না।ওরা জোর করেছিলো!ওরা বোঝেনি আমায়!’
রুপা কী করবে ভেবে পাচ্ছে না!পৃথুলের প্রতি ওর কিছুটা হলেও মায়া জন্মেছে এই কদিনে। তবে এই মায়ার জোরে কিছুতেই সে এখানে থাকতে পারে না। বিয়ে তো আর পুতুল খেলা নয়। কিংবা জীবন মানেই তো আর সিনেমায় ধরে রাখা দুই ঘন্টার চেয়ে কয়েক মিনিট বেশি সময় মাত্র নয়।একটা জীবন অনেক বড়ো। এখানে সে এভাবে থাকতে পারবে না। কিছুতেই না।কী করবে সে?তার ভবিষ্যৎ কতটা ভয়াবহ,কতটা আঁধার এই ভেবে সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
কী অদ্ভুত এই রাত।কী অদ্ভুত এই সময়। দুজন মানব-মানবীর কান্নায় এই স্বর্গীয় মুহূর্তটা হয়ে উঠলো যেন মুহূর্তে কোন এক কারবালা প্রান্তর!
——
পরদিন সকাল বেলা রুপা চলে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওদের বাড়ির ড্রাইভার‌ গিয়ে তাকে দিয়ে আসবে।পৃথুলেরও কিছুই করার নেই। কিংবা সে চায়ও না রুপা এখানে থাকুক।রুপা এখানে থাকলে তো কোন লাভ নেই কারোরই।তার তো রুপার প্রতি শারীরিক কিংবা মানসিক কোন প্রকার অনুভূতি নেই। তবে কেন শুধু শুধু রুপাকে এখানে রেখে কষ্ট দিবে!
এরপর যা ঘটলো তা একেবারেই নাটকীয়। সিনেমার মতো।গল্পের মতো।কল্প কাহিনীর মতো। সেই সকালে রুপা যখন গাড়িতে উঠবে উঠবে চিরতরে এ বাড়ি থেকে তার বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য। ঠিক তখন বাড়ির গেইট খুলে আরেকটি গাড়ি এসে ঢুকলো বাড়িতে। এবং সেই গাড়ি এসে থামতেই গাড়ির ডোর খুলে বের হলো পৃথুলের বাবা। চমকে উঠলো রুপা ‌। ভীষণ রকম।যেন সে স্বপ্নে দেখছে এমন একটি দৃশ্য।
এবার দু হাত বাড়িয়ে রুপাকে ডাকলেন পৃথুলের বাবা।রুপা পাখির মতো উড়ে গিয়ে বাবাকে জাপটে ধরলো। তারপর কান্নায় ভেঙে পড়লো।
পৃথুলের বাবা তার পিঠে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,’বাবার বাড়ি ছেড়ে মেয়ে বেরিয়ে যায় একমাত্র বিয়ের পরেই। বিয়ের আগে নয়। তুমি এখানে থেকে পড়াশুনা করবে মা।আমি তোমায় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তারপর যোগ্য পাত্রের হাতেই তোমায় তোলে দিবো। ততোদিন তোমার ঠিকানা এ বাড়িই।এ বাড়ি তোমার নিজের বাড়ি মা।
আর এ বাড়িতে তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে তোমায় সঙ্গ দেবে আমাদের পৃথুল।’
রুপা খুশিতে জরজর করে কেঁদে উঠলো। ওখানে খানিক আড়ালে দাঁড়িয়ে পৃথুলও আনন্দিত হলো।এ জীবনে তার একটিও বন্ধু নেই। এবার তো একটা বন্ধু হলো!

—সমাপ্ত—

(এই গল্পটি কেন লিখলাম?
হ্যা সেই কথাটিই বলছি এখন। এই গল্প লিখার একটিই উদ্দেশ্য। আমাদের সমাজে অনেক মা বাবাই আছেন যারা মেয়ে বিয়ে দেয়ার আগে খুব একটা যাচাই-বাছাই করেন না।তারা জেনে রাখুন, মেয়ে বিয়ে দেয়ার আগে যাচাই- বাছাই করাটা অবশ্য কর্তব্য।এটা খেয়াল রাখবেন।ছেলে বড় লোক,বড় শিক্ষিত এসব ভেবে যাচাই -বাছাই না করেই মেয়েকে বিক্রি করে দিবেন না দয়া করে।সবার শশুর তো আর রুপার শশুরের মতো অতো ভালো শশুর না! ধন্যবাদ।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে