#নাপুরুষ
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
পৃথুলের বাবা চলে যায় পরদিন ভোর সকালে।শশুরকে বিদায় দিতে গিয়ে রুপার খুব কষ্ট হয়!তার কেবল মনে হয় এই বাড়িতে থাকতে এখন তার কষ্ট হবে। ভীষণ কষ্ট হবে!
চলে যাওয়ার সময় রুপার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তার শশুর।হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,’মা,আমি অল্প ক’দিন পরই ফিরে আসবো। এখন আমার যেতেই হবে।না গেলে চাকরি টা হারাতে হবে!’
তারপর গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়েও আবার থামেন তিনি। পেছন ফিরে ডাকেন রুপাকে।রুপা এগিয়ে যায় তার শশুর বাবার কাছে।ওর শশুর তখন ওর কাছে এক রকম ফিস ফিস করে বলে,’আমি যে কদিন পর ফিরে আসবো এটা যেন কেউ না জানে মেয়ে! ঠিক আছে?’
রুপা বললো,’কেউ জানবে না।’
তারপর ওর শশুর আবার বললো,’আমি রোজ ফোন করবো কেমন!’
রুপা কান্নাভেজা গলায় বললো,’আচ্ছা বাবা। সাবধানে যাবেন। সাবধানে!’
পৃথুলের বাবা মৃদু হাসলেন। তারপর বললেন,’সাবধানেই যাবো মা। চিন্তা করো না!’
‘
বাবা চলে যাওয়ার পর পৃথুল তার পুরনো ঘরে ফিরে গেল।তার মনের ভয় এবার কাটলো পুরোপুরি।যাক বাবা বাঁচা গেল!বাবা যাওয়াতে ওই ঘরটা সে ছাড়তে পারলো! আর বাঁচতে পারলো রুপার কবল থেকে!
সেদিন তো ও মরতেই বসেছিল।মেয়েটা ডাইনির মতো ওর গায়ের উপর শুয়ে পড়লো।ওর তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি রুহটা উড়াল দিচ্ছে অচীন দেশে!ভাগ্যিস গায়ে বল আছে। নয়তো ওর থেকে কী করে বাঁচতো!
‘
পৃথুলের বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই লায়লা বেগমের মাথায় বাজ পড়লো।সে একটা হিসেব কিছুতেই মিলাতে পারছে না। দুদিনের পরিচয়েই পৃথুলের বাবা রুপার অতটা আপন হয়ে গেল কী করে?
যাওয়ার সময় এই দুজনে যা করলো যেন এরা বাপ মেয়ে!এটা না হলে অন্য কিছু।যেন জোড় পাখির এককি চলে যাচ্ছে বলে অন্যটির ডানা খসে গেছে!
সুফলাও তো এখানে ছিল। ওর সাথে তো বাড়তি দুটো কথাও বললো না যাওয়ার সময়। নাকি নিজের মেয়ের চেয়ে পরের মেয়ের প্রতি দরদ বেশি হয়ে গেল!এসব তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারেন না।যতো সব আধিক্যেতা!
‘
রুপার মন খারাপ গেল সারাদিন। ওদিকে আবার পৃথুল ও ঘরে নতুন বসতি গড়েছে। কাঁথা বালিশ নিয়ে গেছে একটু আগে।
রুপা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,’এইগুলো এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?’
পৃথুল কথার উত্তর দেয়নি।
সন্ধ্যা বেলা সে তার মাকে ফোন দিলো। ফোন দিয়ে কেঁদে কেটে বললো,’মা আমার এখানে ভালো লাগছে না।আর বাবাও চলে গেছেন আজ। এখন তো সমস্যা নাই! আমি বাড়িতে আসবো। তুমি মাকে ফোন করে বলো একটু!’
রুপার মা ধীর কন্ঠে বললো,’আচ্ছা আমি কথা বলে দেখছি কী হয়!’
বলে ফোন কেটে দিলেন তিনি।
তারপর ফোন করলেন লায়লা বেগমের সাথে। লায়লা বেগম তখন এমনিতেই রেগে আছে রুপার প্রতি। সে তখন সোজা বললো,’আপনার কথায় তো আমি চলি না।তাই আপনার কথায় আমার ছেলের বউকে নাইওরও পাঠাবো না! কখন নাইওর করার সময় হবে তা আমি বুঝবো!ঈদের আগে সে যেতে পারবে না। বুঝেছেন?’
রুপার মা বললো,’আচ্ছা আপা।’
এই মহিলার স্বভাবটাই এমন।তার ভাবনাটা এমন, শাশুড়ি ধনী, বিত্তশালী। তাকে রাগানো উচিত হবে না।তার কথায় কথায় থাকলেই বরং মঙ্গল হবে! মেয়ে তার আদর পাবে।সেও বাড়তি একটু সম্মান পাবে!
এরপর তিনি রুপাকে ফোন করে বললেন,’উনি না করেছেন। অতদিন তো ধৈর্য্য ধরে থাকছসই মা।আর কয়টা দিন থাক।ঈদ তো এসেই গেছে!’
রুপা কিছু বললো না।রাগে দুঃখে ক্ষোভে সে ঝট করে ফোন কেটে দিল!
তারপর সে রাতটা তার কাটলো কেঁদে।
তাকে কাঁদতে দেখে তার শাশুড়ি ভাবলো সে কাঁদছে তার শ্বশুরের জন্য। এবং এসব নাক কান্না দেখে তার পিত্তি জ্বলে উঠলো।সে রাতেই সে সুফলার সাথে বললো,’সুফলারে, মাইয়ার ভাব তো ভালা না!’
সুফলারও রাগ রুপার প্রতি। এই মেয়ে তার বাবার কাছ থেকে তার ভালোবাসার জায়গাটাও কেড়ে নিয়েছে!
সে বললো,’মা, ভেবেছিলাম ও শান্ত প্রকৃতির। কিন্তু এখন দেখি কাল নাগিনী!’
লায়লা রাগে ফুঁস ফুঁস করতে করতে বললো,’ছেলে বউ রাখতে পারবো না দেইখা এখন তার বাপে বউ রাখবো! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এই জন্যই তো বলি যে লোক আমারে কোনদিন কালো মুখে কথা বলে নাই সেই লোক আমারে তুই তুকারি করে।গালে চড় দেয়!’
থুক করে একদলা থুথু ফেললো জানলা দিয়ে লায়লা।
তারপর আবার বলতে শুরু করলো। বললো,’লক্ষণ ভালো না। এই লক্ষণ বড় খারাপ লক্ষণ।’
সুফলাও তার মায়ের কথায় যোগ দিলো।সে বললো,’হ মা। খুব খারাপ লক্ষণ।’
‘
পরদিন বিকেল বেলায় রুপার ফোনে কল এলো।পৃথুলের বাবা ফোন করেছে।তাকেই যে সবার আগে ফোন করেছে ব্যপারটা তা না।এর আগে লায়লার ফোনে কল করেছে।লায়লার ফোনে বন্ধ জানাচ্ছিলো। হয়তো বা নেটওয়ার্ক সমস্যা। এরপর পৃথুলকে ফোন দিলো।পৃথুলের সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু পৃথুল এমন ধাঁচের মানুষ যে সে নিজেই শুধু জানলো যে ওর বাবা পৌঁছে গেছে।আর কাউকে এটা জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না সে।
এরপর তিনি ফোন দিলেন রুপাকে।রুপা ফোন রিসিভ করেই বললো,’বাবা, কেমন আছেন?’
পৃথুলের বাবা বললেন,’ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?’
‘ভালো না বাবা।’
‘ও মা কেন?কী হয়েছে মা?’
‘আপনার জন্য খারাপ লাগছে। ভীষণ খারাপ লাগছে!’
পৃথুলের বাবা বললেন,’এক কাজ করো মা। তুমি বাড়ি থেকে কদিন থেকে এসো গিয়ে।মন ঠিক হয়ে যাবে।’
রুপা খুশি হলো। কিন্তু সে মনমরা হয়ে বললো,’মা তো বলেছেন ঈদের পর যেতে!’
‘না তুমি কালকেই যাবে।পৃথুল তোমায় নিয়ে যাবে!আমি ওর মাকে বলে দিবো!’
রুপা খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে বললো,’আচ্ছা বাবা।’
তারপর পৃথুলের বাবা বাড়িতে যেভাবে রোজ একটা করে সুন্দর সুন্দর গল্প বলতেন তার কাছে। ঠিক ফোনেও একটা গল্প বললেন। মজার গল্প।গল্প শুনে হাসতে হাসতে ভেঙে পড়লো রুপা।
ওদিকে ব্যপারটা চোখে পড়লো সুফলার।ও গিয়ে তৎক্ষণাৎ ওর মাকে ডেকে নিয়ে এলো। তারপর বললো,’দেখো মা এক ঘন্টা ধরে বাবার সাথে কথা বলছে!’
লায়লা বেগমের মাথা যেন সঙ্গে সঙ্গে গরম হয়ে উঠলো।সে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেয়ের কাছে বললো,’এইসব কী রে মা? এইসব কী!তোর বাপ ওখানে গিয়ে পৌঁছে আমাদের কাউকে একটা কলও দেয়নি।অথচ এই মেয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কথা বলছে।কী অত সব কথা ওদের?আর এই মেয়ে কথা বলতে বলতে এমন বেহায়ার মতো হাসছে কেন?বেশরম মেয়ে কোথাকার!’
সুফলা বললো,’আস্তে মা আস্তে। কেবল শুরু। সামনে আরো অনেক কিছু দেখতে পাবে।এটা হলো পরকিয়া। পরকিয়ার কোন বয়স নাই। কোন সম্পর্কের বাছ বিচার নাই!’
লায়লা বেগমের শরীরে এবার আগুন ধরে গেল।সে গলা ছেড়ে চেঁচাবে নাকি ঘর থেকে ঘাড় ধরে সতীন দূর করবে সেই চিন্তায় মশগুল হলো!
‘
লায়লার মাথায় আকাশটা ভেঙে পড়লো রাত ঠিক আটটা আটাশ মিনিটে। তখনই কলটা আসে পৃথুলের বাবার।দু বার কল রিসিভ করেনি লায়লা। তৃতীয়বার রিসিভ করে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে বললো,’কী হয়ছে কল দেও কেন?’
ওপাশ থেকে মিষ্টি করে হেসে পৃথুলের বাবা বললেন,’তোমার নম্বর বন্ধ থাকে কেন? আগে কতোবার ফোন দিলাম।বন্ধ বলে!’
লায়লা বেগম এ কথা বিশ্বাস করলো না। কখন গেলে? এখন কেমন আছো? এসব কিছুই জিজ্ঞেস করলো না।সে ফোন কানে ধরে ফুঁস ফুঁস করতে লাগলো।
ও পাশ থেকে পৃথুলের বাবা বললেন,’শুনো লায়লা, আগামীকাল পৃথুলকে দিয়ে বউমাকে ওর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিও। মেয়েটার মন খারাপ। ওখানে গিয়ে দু চারদিন থেকে এলেই মন ঠিক হয়ে যাবে!’
এই কথাটা শোনার পরই লায়লা বেগম অনুভব করলো মাথার উপরের সাত সাতটা আকাশ এসে ভেঙে পড়েছে তার মাথার উপর।সে—
‘
#চলবে