নসীব_পার্ট_৩
আরবি_আরভী
-কি রে মা কি হয়েছে,,, আর এই ছেলে কে তোর সাথে,,,, (আবির আমার হাত ধরে আছে সেদিকে নজর দিয়ে)
-আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল আমি আবির,,
-ওয়ালাইকুম আসালাম তা বাবা তোমাকে তো চিনলাম না ,,
-আংকেল আপনার জন্য অনেক বড় একটা খুশির সংবাদ নিয়ে এসেছি ,,, (ঠোঁটে মিথ্যা হাসি নিয়ে)
-কি খুশির সংবাদ,,
– কনগ্রেচুলেশন আংকেল আপনে নানুভাই হতে যাচ্ছেন,, আপনার একমাত্র মেয়ে প্রেগন্যান্ট,,
বাবা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ওপর যেন আকাশটা ভেঙে পরলো।। গোটা পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেলো।। আমার থেকে কখনো এটা আশা করেননি তা উনার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।। চোখ দিয়ে তার রীতিমতো পানি চলে এসেছে।। কথাটা যেন তার বিশ্বাস হয়েনি তাই নিশ্চিত হতে আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন ,
-নিলা এসব কি,,, কি বলছে ছেলেটা তুই আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস,,,
আবির ভ্রু কোচকে বাবাকে বলতে লাগল,,
-ইয়ে আংকেল আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে নিলার তো বিয়ে হয়নি,, না মানে বলতে চাচ্ছি,,,,
বাবা চোখ দুটো লাল করে রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে,,
– আমার মেয়ে এসব করতে পারে না।। আমার মেয়ে ফুলের মতো নিষ্পাপ নিলা তুই বলে দে যে তুই আমার মেয়ে তুই এসব করতেই পারিস না এই ছেলে যা বলছে সব মিথ্যা,,, কি রে বল,,
বাবার কথাগুলো শুনে ডুকরে কেদে উঠলাম।। বাবা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে কষে দু গালে থাপ্পড় দিয়ে চাবুকটা হাতে নিয়ে খুব জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন।।এমন জানলে নাকি উনি অনেক আগেই আমাকে নিজ হাতে মেরে ফেলতে।।উনার আত্নসম্মানকে হীন করার আমার কোনো অধিকার ছিল না।।আমার মত মেয়ের উনার দরকার নেই।।
আবির লোকদেখানো শান্তনা দিয়ে বাবাকে আটকিয়ে বলতে লাগলেন,,
-কামডাউন কামডাউন,, মেয়ের এই অবস্থা হলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক,,,, যেমনটা আমার লেগেছিল,, যখন আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন,,তাকে ব্যা** বলেছিলেন আমার জন্ম নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন,,, এখন আপনার মেয়েকে কি বলবেন মি.আকরাম সাহেব,,,
-কে তুমি,,,
-আমি আফরোজা ইমরান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আবির চৌধুরী,, আপনার মেয়ের আগত সন্তানের পিতা,,
-না আমি বিশ্বাস করি না চুপ কর চুপ ,, নিলা তুই তো ভালো একটা জব করে আমাদের সুদিন ফিরিয়ে আনবি বলেছিলি তাহলে এসব কি ,, এই জানোয়ারটা তোর সাথে জোর করে কিছু করেছে মা বল আমাকে তুই ভয় পাস না আমরা পুলিশের কাছে যাবো,,,
-আপনাকে নিলা এভাবে বোকা বানিয়েছে তাহলে ,, শুনুন আপনার মেয়ে টাকার বিনিময়ে আপনার কাছে মিথ্যা বলে দীর্ঘ ৪ টা মাস আমার সাথে আমার বাড়িতে ছিল।। আমরা একসাথে শুয়েছি একসাথে থেকেছি নিলা তো কয়েকদিনেই আমাকে আপন করে নিয়েছে আমার সামনে কাপড় চেইঞ্জ করতেও তার কোনো আপত্তি ছিল না তাই না নিলা,,,,,সত্যি টা হল আমার আম্মু না আপনার মেয়ে একটা চরিত্রহীনা নষ্টা,,,, একসময় মেয়ের বিয়েতে আপনার অনেক অমত ছিল আর এখন তো ফ্রিতে দিলেও আপনার এই বাজে মেয়েকে কেউ গ্রহণ করবে না কেউ না (মুচকি হেসে)
বাবা গম্ভীর হয়ে চেয়ারে বসে মেঝে দিকে তাকিয়ে আবিরের কথাগুলো শুনছে।।।বাবার রাগটা যেন আগের মত নেই নাকি শরীরের সাথে পেরে উঠছেন না।। আবির উনার সাধ্যমতো আমাকে অপদস্থ করে আমার কাছে এসে চোখ রাঙিয়ে বলে গেলেন আমি যদি কোনোদিন উনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি তাহলে খুন করে ফেলবেন,, যাওয়ার আগে মুখের উপর টাকার বান্ডিলগুলো ছুড়ে ফেলে বলে গেলেন,,,
-ডো অ্যাবর্শন এস সোন এস পসিবল,,
তারপর চশমাটা পড়ে চলে গেলেন।। বাবা এখনও নিস্তব্ধ হয়ে আছেন।। আমি দৌড়ে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে তার হাত দুটো ধরে আকুতি মিনতি করে আমার বাধ্যকতার কথা বলতে থাকলাম তার সাথে তার জন্য যে আমি আমার জীবনটাও দিতে পারি সেটাও বললাম,,
-বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তোমাকে আমি হারাতে চাইনি বাবা তাই নিজের অতি মুল্যবান জিনিসটার বিনিময়ে তোমাকে বাচাতে চেয়েছি,, তুমি আমার সব বাবা আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি মান সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি আমাকে তুমি বকা দাও মারো,,, বিশ্বাস কর বাবা আমি এখানে থাকব না অনেক দূরে চলে যাবো,,, তুমি শুধু একবার আমার সাথে কথা বল,,,
বাবা আমার চোখের দিকে তাকালে আমি ভয় পেয়ে যাই।। রক্তমাখা দুটো চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে,,,।। এই প্রথম আমি সরাসরি বাবাকে কাদতে দেখলাম।
-মা রে তুই আমাকে বাচাতে যা করেছিস সেই কাজটা করেই আমাকে মেরে ফেলেছিস,, আগে মানুষ আমাকে দেখলে শ্রদ্ধা করত আর এখন আঙুল তুলবে ছ্বি ছ্বি করবে গালি দিবে,,
-বাবা আমি,,,, (কান্না করতে কারতে)
-চুপ এই পাপি মুখে আমাকে বাবা বলবি না তোর বাবা মরে গেছে মরে গেছে,,,
কথাগুলো বলেই বাবা হাটতে হাটতে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।। আমি মেঝেতে পড়ে থেকে নিজের পাপের জন্য বাবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।। সত্যি আমি যা করেছি তার কোনো ক্ষমা নেই আমার মরে যাওয়া উচিত।। এই জীবন রাখার কোনো অধিকার নেই আমার,।।।কিন্তু এখন তো আর আমি একা না,,,
রাত পেরিয়ে সকাল হল বাবা রুমের দরজা খুলছেন না অনেকবার ডাকলাম কিন্তু কোনো সারা শব্দ নেই।। মনে খুব ভয় কাজ করলে আমি কান্না করতে থাকি তারপর কয়েকজন প্রতিবেশীদের ডেকে এনে দরজা ভেঙে ভিতরে গিয়ে দেখি বাবা ফ্যানের সাথে ঝুলছেন।।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।।বাবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।। চোখ বেয়ে অনাবরত পানি পরছে।। যাক আজ থেকে আমি এতিম হয়ে গেলাম ।। এই পৃথিবীতে সম্পুর্ণ একা একজন।
চলবে,,,,,