নসীব পার্ট- ৫

0
1433

#নসীব
#পার্ট_৫
#আরবি_আরভী

-দেখ তোমার সামনে হাত জোড় করছি তুমি প্লিজ চলে যাও আর কখনো আসবে না,,,, (বিরক্তি ভাব নিয়ে)

আমি আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে খালামনি হাত দুটো স্পর্শ করে ডুকরে কেদে উঠলাম ,,,

-আমার থাকার কোনো জায়গা নেই ,,যতদিন না কোনো কাজ পাচ্ছি আমাকে এখানে তোমার কাছে রেখে দাও না খালামনি ,,, বিশ্বাস করো কোনো ঝামেলা করব না ,, নিপা তরী সুমি সাজিয়া ওরা যেমন তোমার বাড়ির স্টার্ফ তেমনই মনে করো না আমিও একজন নতুন কাজে যোগ দিয়েছি,,, ও খালামনি আমাকে বেশি কিছু দিতে হবে না শুধু থাকার জায়গা আর খাবার দিলেই হবে,,, বিশ্বাস কর কাজ পেলে চলে যাবো,,
এক জাটকায় হাত দুটো ছাড়িয়ে,,,
-মাথা খারাপ খাল কেটে কুমির আনব নাকি,,, অতীতের কিছুই ফিরে আনতে চাই না,,
-আবিরের এনগেজিমেন্টে কোনো ঝামেলা হবে না,, খালামনি থাকতে দাও না প্লিজ,,আমি খুব অসহায় প্লিজ সাহায্য কর (তার পাগুলো জড়িয়ে)
-আচ্ছা আচ্ছা ছাড়ো,,, ঠিক আছে কিন্তু একজন স্টার্ফ হয়েই থাকবে কখনো যদি আমাদের ফ্যামিলির কেউ হতে চেয়েছ অথবা পারিবারিক কিছু নিয়ে আলোচনা করেছ তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব,,,

খালামনি কথাগুলো বলছে এমন সময় আবির অফিস থেকে ফিরে আমাকে দেখে রেগে একাকার হয়ে বলতে থাকেন ,,
-তুমি,,, সাহস হয় কিভাবে আমার বাড়িতে আসার,,
-আবির ও নিপাদের সাথে কাজ করবে তাছাড়াও কয়েকদিন পর তোর এনগেজমেন্টের অনেক কাজ,, লোক পেয়ে গেছি ভালোই হয়েছে বল,,
-কোনো দরকার নেই অনেক লোক আছে কাজ করার,,

তারপর আবির আমার হাতটা ধরে জোর করে টেনে বাড়ির থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করছেন ।। খালামনির কথাও শুনছেন না।। আমিও অনেক রিকুয়েস্ট করছি কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।। গেইটের সামনে এনে রেগে আঙুল দেখিয়ে বলতে লাগলেন,,

– আর কোনো দিন যদি আমার বাড়ির বরাবর দেখিছি তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ,, যেইনা বাবা মেনে নিতে অস্বীকার করছে অম্নি আমার কাছে ফিরে আসা তাই না ,,,,তোদের মত মেয়েরা এমন কেন আচ্ছা বল আর কত টাকা দিলে তোর এই অপবিত্র শরীরটা আর আমাকে দেখতে হবে না হুম,,(ভীষণ রেগে)
-আপনার থেকে খারাপ তো এই পৃথিবীতে আর কেউ হতেই পারে না আবির আপনে অনলি ওয়ান যে কি না অযথাই একটা নোংরা গেইম খেলে আমাকে শেষ করে দিয়েছেন,,,আপনে জানোয়ার থেকেও নিকৃষ্ট ,,আল্লাহর গজব পড়ুক,,,
-স্টপ টকিং নন্সেন্স এন্ড গেড লস্ট ফ্রম হ্যার,,

কথাটা বলে চলে যাচ্ছিলেন,,,

-শুনুন আমাকে থাকতে না দিলে এক্ষুনি পুলিশের কাছে গিয়ে বলব আপনে আমার সাথে জোর করে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছেন আমাকে বিয়ের প্ররোচনা দিয়ে এখন বিয়ে করতে অস্বীকার করছেন,,, প্রতারণার করেছেন,, তখন আপনার বিয়ের কি হবে চিন্তা করে দেখেছেন,,,

উনি ভীষণ রেগে চোখগুলো আগুনের গোলা করে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন এরই মধ্যে খালামনি এসে আবিরকে শান্ত করার চেষ্টা করছে আর এদিকে নিপা এসে আমাকে ঘরের ভেতর নিয়ে চাচ্ছে।। আবির কিচ্ছু বলছে না তার বিয়েতে ঝামেলা হবে হয়তো এটা ভেবে মনকে শান্তনা দিচ্ছেন।। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।খুব ভয়ংকর চাহনি পারলে যেন এক্ষুনি গিলে খেতেন আমাকে ।।

এভাবেই শুরু হল আমার জীবনের আরেকটা নতুন ধাপ।। সত্যি বলতে আমি আগে জানতামই না যে আমার মধ্যে এত ধৈর্য আছে।। ।অসুখ বমি মাথা ব্যাথা এসব কাটিয়ে সারাদিন পরিশ্রম করছি ।। খালামনি কাজে অসন্তুষ্ট হলে আমাকে যে বের করে দিবেন তখন যাবো কোথায় ।।

আমার বমি আর বারেবারে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার কারনটা সবার কাছ থেকে আড়াল করতে পারলেও নিপার কাছ থেকে করতে পারেনি।।আমার গল্পটা জেনেই ছাড়লো।। মেয়েটা রীতিমতো কেদে গলা জড়িয়ে বলতে লাগল আজ থেকে ও নাকি আমার ছোট বোন আর আমার কথামত প্রেগ্ন্যাসির ব্যাপারটা কাউকে বলবে না বলে প্রমেস করল,।। যাক এখানে সব স্বার্থপরদের ভিড়ে একটা বোন তো পেলাম,,,।।

কয়েকদিন পরই আবিরের এনগেজমেন্ট ইভেন্ট আয়োজন করা হলো।।মেয়ে আমেরিকার সিটিজেন নাম তরী। কালকেই দেশে ফিরেছে।। ৫ বছর আগে আবির অফিসের কাজে আমেরিকা গেলে সেখানের তার সাথে তরীর পরিচয় হয়।। তরীকে আর তার ফ্যামিলিকে খালামনির খুব পছন্দ হয়ে যায় বিত্তশালীর পরিবারের একমাত্র মেয়ে।। এ বিষয় আবিরের মত জানতে চাইলে উনি উনার মায়ের খুশি সবচেয়ে দামী বলে জানিয়ে দেন।।

আগামীকাল আবিরের এনগেজমেন্ট রাতে আবির আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমি যেন কোনোভাবেই উনার এনগেজমেন্ট পার্টি এটেন্ট না করি ঔ দিন বাবার বাসায় চলে যেতে বলছেন।। বেচারা ভয় পাচ্ছে আমি যদি আবার কোনো হট্টগোল পাকিয়ে দেই।।

যেহেতু আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই আবিরের কথাটা রাখতে পারলাম না লুকিয়ে এখানেই থেকে গেলাম।। সন্ধ্যায় বেস রমরমাট পরিবেশ।। গেস্টদের অভাব নেই।। শিল্পপতি আবির চৌধুরীর এনগেজমেন্ট বলে কথা।। রিং এক্সচেঞ্জ হলে সবাই আনন্দে উতফুল্ল হয়ে উঠেন।।নিজেকে মানুষের ভিরে আড়াল করে সব দেখছি ।। সবশেষে শুরু হল কাপল ডান্স।।যে যার মত পার্টনার নিয়ে ডান্স করছে।। আবির তরীকে নিয়ে কাপল ডান্সে মগ্ন।। মন মরা করে দাড়িয়ে আছি বাবার কথা খুব মনে পরছে একমনে বাবার কথা চিন্তা করছি ।। এদিকে নিপা আমার অবস্থা দেখে ভেবেছে আবিরের জন্য মন খারাপ তাই ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দেয়।। আমি লুটে গিয়ে আবিরের উপর পড়ি।। সব অন্ধকার লাইটের ফোকাস আমাদের উপর।। উনার রাগি চোখগুলো দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যাই।। আজকেই আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন নিশ্চিত।। উনি গম্ভীর চেহারায় তাকিয়ে থাকলে আমি আমতা আমতা করে যাওয়ার জন্য যেইনা ফিরেছি অম্নি উনি আমার হাতটা ধরে ঘুরিয়ে উমার বুকের সাথে মিশিয় এক হাত আমার হাতে আর অন্য হাত কোমরে রেখে গানের সাথে তাল মিলাতে থাকেন,,,

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে