#নসীব
#পার্ট_১২
#আরবি_আরভী
আমি হা করে তার কথাগুলো শুনছিলাম।। কে উনি??
নীলয়ের কথা বলা শেষ হলে আমি চোখের পানি ফেলে তাকে জিজ্ঞাসা করে বলি,,,
-এসব কি নীলয়,,,আপনি এভাবে কাকে কি বলছেন,,,,
নীলয় আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে,,
-হা হা হা এখনো বুঝতে পারোনি,,,,
-না, আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে দাদীমা আপনার পরিবার ওঁরা সবাই কোথায়,,,,,
-এখানে কেউ নেই তুমি এখন আমার কারাগারে বন্দী মিস.নীলা।।কথামত চললে কোনো ক্ষতি করব না আর যদি বারাবারি করেছ তাহলে ,,,,
আমার হাত পা কাপছেঁ।। তার চোখের ভেতরের এক হিংস্র থাবা আর আচরণ বলে দিচ্ছে আমার সব প্রশ্নের উত্তর।। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতে লাগলাম।। পেছন থেকে নীলয় আমাকে সরিয়ে গালে থাপ্পড় দিয়ে বাদা দিতে থাকেন।। আমি টেবিলের উপর ছিটকে পড়ি।। নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে ।। একপর্যায়ে তার সাথে হাতাহাতি শুরু করলে নীলয় আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করেন আর আমি সাথেসাথে জ্ঞান হয়ে ফেলি।।
আস্তে আস্তে চোখগুলো খোলা মাত্রই সামনে ঝাপ্সা কিছু দেখতে পেলাম।। জানালার ফোটো ভেদ করে আলো এসে চোখে পরছে।। দিনের আগমন বুঝতে পারলাম।। মাথাটা ঝিম ধরে আছে।। কোনোভাবে উঠে দাঁড়িয়ে কালকের কথাগুলো চিন্তা করতে লাগলাম।। খুব কান্না পাচ্ছে।। ভয়ংকর পরিবেশে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছি আর এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া পথ খুজছি।। কিন্তু না কেউ আমার কথায় সাড়া দিল না।।
কেটে গেলো ২ টি দিন নীলয় সন্ধ্যায় এসে আমাকে খুব জোড়াজুড়ি করে একটা করে ইঞ্জেকশন দিয়ে যান।।।। দুপুর পেরিয়ে বিকেল।। খুব খিদে পেয়েছে।। ২ দিন কিছুই খাইনি।। টেবিলে থাকা পঁচা রুটিটা কামড়ে খেতে লাগলাম।। আমার বেবীর জন্য অন্তত আমাকে বেচে থাকতে হবে।।
শুয়ে আছি।। ভাবলাম ঘরটির তল্লাশি নিলে কেমন হয়।। যেই ভাবনা সেই কাজ।। প্রত্যেকটা রুম খুব ভালো করে চেক করতে লাগলাম।। সিড়ি বেয়ে সবচেয়ে বড় রুমটায় ঢুকে আমি চিৎকার করে উঠলাম।। রুমটার সব জায়গায় রক্ত মেখে আছে।।এখানে কোনো মেয়ে থাকতো হয়তো কিন্তু ঝুলন্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে আমার ধারনা বদলে যায়।। কারো বিয়ের পিক মনে হচ্ছে।। আমি মুখ চেপে কান্না করতে করতে ভয়ে আলতো পায়ে পিকটার কাছে গিয়ে অবাক হয়ে যাই।।। নীলয় আর একটা মেয়ের ওয়েডিং পিক।।
রুমটার সব ফার্নিচার খালি ছিল তাই চলেই যাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার ড্রেসিং টেবিলটার দিকে নজর যায়।।
টেবিলটার উপরে একটা রক্ত মাখা খবরের কাগজ রাখা।। পিকচারের সেম মেয়েটা সাংবাদিকের রুপে খবরের কাগজে।। আমি নিউটা বেশ মন দিয়ে পড়তে থাকি।।। রিপোর্টার ওয়ালিফা ।। তার আর্টিকেলটা ছিল নারীপাচার ও শিশু পাচার প্রতিবাদে।।
আমার হাত থেকে খবরের কাগজটা পরে যায়।। বুঝতে আর বাকি থাকে না ওয়ালিফা আসলে কে আর তার সাথে কি ঘটেছে।। চোখ বেয়ে পানি পরছে আমার।।
এসব খুজতে খুজতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে টেরও পাইনি।। নীলয় এসে আমাকে না পেয়ে খুব জোরে জোরে ডাকছেন,,,,,
-নীলা কোথায় গিয়েছিস,,,,লুকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই,, দেখ আমাকে রাগাবি না,,,
আমি খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম,,,,
-ওয়ালিফাকে তুই মেরেছিস না,,,, বিয়ে করেছিলি না ওঁকে আরে তোর বউ ছিল ওঁ,, কেন মারলি বল জানোয়ার বল,,,,
-কি করব আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল,,, কতবার বললাম এসব থেকে দূরে থাকো কিন্তু না আমার বিরুদ্ধে কথা বলবেই শালী,,, তাই,,,
-তাই মেরে দিয়েছিস,,
-বেশি কথা বললে তোকেও শেষ করে দিব,,
কথাটা শোনা মাত্রই আমি দৌদৌড়ে সেখান থেকে পালাতে চাইলে নীলয় কাঠ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে।। আমি মাঠিতে লুটিয়ে পড়ি তারপর সে আমাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ফোনে বলতে থাকেন,,,
-এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে ,,, ওয়ালিফার ব্যাপারটাও জেনে গেছে,,,,,ইয়ার তাড়াতাড়ি ম্যানেজ কর প্লিজ আমার আর ভালো লাগছে না ,,,
চোখ দুটো খুলে নিজেকে হসপিটালে আবিস্কার করলাম,।।।মাথায় ব্যান্ডেজ।।গায়ে পেশেন্টেদের নীল পোশাক।।
আমি উঠে বসে চারদিকটা ভালো করে দেখতে লাগলাম ।।জানি পালাতে পারবো না নীলয়ের লোক আমাকে চোখে চোখে রাখছে।। খুব চেনা চেনা লাগছে হসপিটালটা।। তারপর মনে পরলো।। এই হসপিটালেই তো নীলয়ের দাদীমা এডমিটেড ছিলেন।। ১০১ নং কেভিনে।। দাদীমা নিশ্চয় আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।।
সেই আশায় জলদি করে উঠে।। ১০১ নং কেভিন খুজতে লাগলাম।।১০১ নং কেভিন পেয়েও গেলাম।। দরজা খুলতেই আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি।।
রুমটা সম্পুর্ণ খালি।। আমি ঘেমে যাচ্ছি।। একজন নার্সকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে,,,,
-আপনি এখানে কেন।। এই রুমটায় আমরা কোনো পেশেন্ট রাখি না চলুন এখান থেকে,,
-কি বলছেন আমি গত শুক্রবারে এখানে একজন ICU এর পেশেন্টে সাথে দেখা করে গেলাম,, বৃদ্ধ মহিলা।।
-আপনার মাথা ঠিক আছে তো আমি কোনোদিন এই রুমে কোনো রোগীকে দেখিনি আর শুক্রবারে তো আমাদের ডিউটি নেই তাহলে আপনে কিভাবে,,,,দেখুন এখান থেকে চলুন এখানে না কেউ ছিল না কেউ আছে।।
আমার মাথাটা ঘুরে যাচ্ছে।। মেঝেতে বসে কান্না করতে লাগলাম।। অনেকক্ষন পর একটা ছোট্ট ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,
-তুমি কাদছ কেন,,,
আমি কোনো কথা বলছি না,,,,
-আমি তোমাকে আগেও দেখেছি তখন তো হ্যাপি ছিলে এখন কি হল,,,
আমি চোখের পানি মুছে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,,,
-কোথায় দেখেছ আমাকে,,,
-গত শুক্রবার এখানে,,,
-আচ্ছা বাবু বলতে পারো এখানে যে দাদীমা ছিলেন উনি কোথায় তুমি ওদের দেখেছ,,,
-হ্যা,, ওঁরা তো চলে গেছে,,,
-কখন???
-তুমি চলে যাওয়ার পর দাদীমা আরও অনেক মানুষ হাটতে হাটতে চলে গেছে,,,,, আর আসেনি,,,
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।। তাহলে সবকিছু মিথ্যে নাটক ছিল।। আসলে ওঁরা কেউ নীলয়ের পরিবারের সদস্য নয়।। এতটা বোকা আমি।। বিশ্বাস অর্জন করতে নীলয় এমটা করেছে আমার সাথে।।
চলবে,,,,,