#নসীব
#পার্ট_১০
#আরবি_আরভী
নীলয় শক্ত করে আমার হাতটা ধরে,,
-জুলিয়েট নীলাকে দেখতে চেয়েছিল তাই ও এসেছে,,,
ডক্টর অনুমতি দিলে নীলয় আমাকে কেভিনের ভেতর পাঠিয়ে দিয়ে বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকেন ।।
অক্সিজেন মাস্ক পড়া একজন বৃদ্ধা।। আমি কাছে গিয়ে উনাকে সালাম দিলে উনি চোখ খুলে আলতো হেসে,,, ইশারায় আমাকে উনার পাশে বসতে বললে আমি বসে পড়ি,,
-কেমন আছিস,
-ভালো,, আপনার শরীর এখন কেমন?
-ভালো না,, রোমিও টার জন্য সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়,,,
-জ্বি????
-হা হা হা নীলয়টার কথা বলছি,,আমার দাদুভাই,, আমার বন্ধু।।
-ও আচ্ছা,,
উনি আমার হাত দুটো আকড়ে ধরে ছলছল করে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,
– দাদুভাই তোকে খুব পছন্দ করে,,,তোর সাথে পরিচয় হওয়ার পর দাদুভাইকে আমি নতুন করে হাসতে দেখেছি,, বছর কয়েক আগে যে ছেলে তার প্রিয়তমাকে হারিয়ে মরতে বসেছিল সে নতুন করে বাঁচতে শিখছে শুধু তোর কারনে,,,, আমার দাদুভাই একটু রাগি কিন্তু ওঁর মনটা খুব নরম,,,,
-নীলয় কাউকে ভালোবাসতো?
-হ্যাঁ,, ওয়ালিফা নামের একটা মেয়ে দাদুভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল তারপর আস্তে আস্তে ভালোবাসা,, ১৩ বছর একসাথে অনেকটা পথ চললেছিল তারা,, কিন্তু বিয়ের এক সপ্তাহ আগে ওয়ালিফা ,,,,,(চোখ বেয়ে পানি পরছে)
-দাদীমা কি হয়েছিল ওয়ালিফার বলুন প্লিজ,,
-ওয়ালিফার কার এক্সিডেন্ট হয়ে যায়,, রোমিও তা কিছুতেই মানতে পারেনি প্রচুর ডিপ্রেশনে চলে যায় তারপর রাত করে বাড়ি ফেরা, পার্টি নেশাদ্রবে নিজেকে বিলিয়ে দেয় অনেকবার নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল,,,,কারো কোনো কথা শুনতো না পাগল হয়ে গিয়েছি দাদুভাই,,, (কাদতে কাদতে)
-প্লিজ কাদবেন না,,
-তোকে দেখার পর ওঁ জীবন ফিরে পেয়েছে তোকে ভালোবেসে কাছে পেতে চেয়েছে,, তোর মাঝে নাকি দাদুভাই ওয়ালিফার দেহের সুগন্ধ অনুভব করতে পারে,,,,,, আমি জানি আমার দাদুভাইকে তুই ঠিক করতে পারবি,, আমাকে কথা দে ওঁকে ছেড়ে কখনো যাবি না,,,
কিছু বলতে যাবো তখনই ডক্টর এসে আমাকে বের করে দেয়।। পেশেন্টর সাথে ইমোশনাল হয়ে পরলে নাকি উনার কন্ডিশন আরও খারাপ হয়ে যাবে।।
গাড়িতে বসে আছি।। নীলয় আমার মেডিসিন গুলো কিনতে ফার্মাসিতে গেলে আমি টাইম দেখতে নীলয়ের ফোনটা অন করলে ডিসপ্লেতে আমার ছবি দেখে ফোনটা অফ করে দেই।। বাসায় ফিরছি।।নীলয়ের দিকে বার বার তাকাচ্ছি বলে নীলয় মুচকি হেসে বলতে লাগল,,
-কি প্রেমে-ট্রেমে পড়ে গেলে নাকি,
-কার?
-কার আবার আমার,,,
-ইস!! চেহারা দেখেছেন আয়নায়,,
-ও হ্যালো কত মেয়ে আমার উপর ক্রাসড তুমি জানো,,
-কাউকে ভালোবাসতেন,,,
-এখনো বাসি,,খুব খুব অনেকটা বেশি,,
পৌঁছে গেলে আমি গাড়ি থেকে নামতেই নীলয় পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,,,
-নীলা,,
-হুমম,,
-You are most beautiful girl in the world,,
আমি ভেবাচেকা খেয়ে দাড়িয়ে থাকলে নীলয় মুচকি হেসে চলে যায়,,,
বাসায় ফিরে আমার মনে পড়ে খালামনির ঔষধের কথা।। নিপা আমাকে দেখে রাগ দেখিয়ে বলে,,,
-কোথায় ছিলেন ম্যাডাম কত চিন্তা হচ্ছিল জানেন,,
-খালামনির ঔষধ আনতে,,,
-আপনি আসতে দেরী হচ্ছিল বলে আমি নিয়ে এসেছি,,,
-থ্যাংকস নিপা,,
রাতে শুয়ে শুয়ে নিপার সাথে গল্প করছি এমন সময় অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ দিয়ে কেউ একজন আমাকে গার্ডেনে যেতে বলে।। সেখানে গিয়ে একটা গিফট বক্স খুজে পাই।।ওপেন করে অবাক ।। খুব সুন্দর একটা নীল শাড়ি।।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে এটা নীলয়ের কাজ,,ঝটপট নীলয়কে কল দিয়ে বললাম,,,
-থ্যংকস খুব সুন্দর গিফট,,
-কিসের গিফট???,, (বিস্মিত হয়ে)
– আর নাটক করতে হবে না,,,
-সরি্ বুঝতে পারছি না কি বলছ,,,
-হ্যালো হে হ্যালো,,, ধুর নেটওয়ার্ক প্রব্লেম মনে হচ্ছে।।
কয়েকদিন পর নীলয় আমাকে দাদীমার কথা বলে।। উনি নাকি আমাকে দেখতে খুব জেদ করছেন।। আমি নীলয়ের দেয়া নীল শাড়িটা পড়ে দাদীমাকে দেখতে যাচ্ছি।। যাওয়ার পথে জ্যাম পরলে আমি জানালার দ্বারে তাকিয়ে আছি।। হঠাৎ আমার নজর কালো গাড়িটার দিকে যায় যেটা আবির ড্রাইভ করছেন।।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে থাকলে একপর্যায়ে আবিরের চোখ আমার উপর আটকা পড়ে,, আমাকে আর নীলয়কে একসাথে দেখে নিমিষেই তার চেহারার রঙ বদলে গম্ভীর হয়ে যায়,,,,
হসপিটাল থেকে ফিরতে আমাদের রাত হয়ে যায়।। প্রচুর ঝড় হচ্ছে বলে দাদীমা ছাড়ছিলেন না।। কিন্তু ঝড়ের তীব্রতা বেড়েই চলছে তাই আর দেরি করিনি।।
বাসায় সবাই চিন্তিত।। আবির নাকি এখনো অফিস থেকে ফিরেননি।।ফোনটাও অফ।। কোনো এক্সট্রা মিটিং নেই এমনকি তরীদের ওদিকেও যাননি।। কোথায় আছেন কেউ কিচ্ছু জানে না।।
এরমধ্যে আমাকে দৌড়ে কাকভেজা হয়ে রুমে ডুকতে দেখে খালামনি ভীষণ রেগে বলে,,,
-এসেছে নবাবের সাহজাদী,,
-না মানে খালামনি ,,,
-কোথায় ছিলি সারাদিন ,,বাবার প্রতিশোধ নিতে আবার আমার ছেলেটার খুন করে দিলি নাতো,,(কাদো কাদো কন্ঠে )
-কি বলছেন খালামনি,,,,
-এই একদম ন্যাকামি করবি না কার প্রাইভেটকার দিয়ে এসেছিস এত রাতে কোথা থেকে এসেছিস,, তোর মত এই নষ্টামী আমাদের বাড়িতে আর চলবে না ,,বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে,,
নিপা ভীতু কন্ঠে বলতে থাকে,,
-ম্যাম সাহেব বাহিরে অনেক বৃষ্টি,,, সকালে,,,,
-তুই চুপ কর নীলা আজকে এক্ষুনি এই মূহুর্তে বাড়ি ছেড়ে যাবে,,,
কান্না করে খুব মিনতি করছি কিন্তু খালামনি কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না আমাকে টেনে গেইটের বাহিরে রেখে গেলেন।। খুব কান্না করছি।। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে কাঁপতে শুরু করেছি রীতিমত,,,
চলবে,,,,,,