নরীর সতীত্ব পর্ব-১০

0
1819

#নরীর_সতীত্ব
#পর্ব_১০
Wohad Mahmud

এটাই ছিল আজ বিকালের কাহিনী। আর আমি সেই জন্যই সাবনাজ কে কিছু বলি নাই আর সাথে করেও নিয়ে আসি নাই।

মাহমুদার সাথে কথা বলে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। হঠাৎ সাবনাজের কলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ফোন রিসিভ কররা সাথে হঠাৎ নিচে চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তাড়াতাড়ি করে নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে দেখি ভাইয়া , মাহমুদা আর মা কান্না করছে বাবার রুমে। আমিও তাড়াতাড়ি করে বাবার রুম গেলাম। গিয়ে দেখি বাবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, বমি করার মতো করছে,বুক ধড়ফড় করছে আর গা দিয়ে ঘাম ঝড়ছে‌

আমার আর বুঝতে বাকি রইল না হার্ট অ্যাটাক করেছে বাবা। বাবার এমন অবস্থা দেখে আমিও থাকতে পারলাম না আমিও জোরে কান্না করে দিলাম।

ভাইয়াকে বললাম এ্যাম্বুলেন্সে খবর দিতে হবে তাড়াতাড়ি। ভাইয়া বলল দিয়েছি আমি। চলে আসবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। তারপর বাবাকে ধরে রুমের বাহিরে নিয়ে আসলাম। বাবার মুখে হাওয়া দেয়ার চেষ্টা করলাম আর শক্ত জায়গায় শুইয়ে দিয়ে জামা টা খুলে দিলাম। বমি ভাব হওয়ার কারণে এক দিকে কাত করে দিলাম যাতে ভালো মতো বমি হয়ে যায়।আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে এক ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে নিতে হবে না হলে বড় একটা সমস্যা হবে। আর বাসায় যা করার দরকার আমি সব করেছি। এখন জরুরি হাসপাতালে নিতে হবে।

দশ মিনিটের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। তারপর বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। যেই ডাক্তার আমার বাবার চিকিৎসা করল সেই ডাক্তার আবার আমার শিক্ষক ছিলেন। স্যার আমাকে একপাশে ডেকে বললেন, তুমি একজন ডাক্তার কিন্তু তোমার দ্বারা এসব ভুল হওয়ার কথা না মাহমুদ।

আমি বললাম কেন স্যার? আমার দ্বারা কোনো ভুল হয়েছে কি স্যার।

তুমি কি জানতে তোমার বাবা সিগারেট খায়?

হ্যাঁ স্যার জানতাম আমি।

তাহলে তোমার উচিত ছির তোমার বাবাকে সিগারেট থেকে পরিত্রাণ কারানো‌। কারণ এই সিগারেট তোমার বাবার জীবন আস্তে আস্তে শেষ করে দিচ্ছে।

আমি বললাম স্যার অনেক বুঝিয়েছি আমি বাবাকে, যাতে সিগারেট না খায় বাবা। শুধু আমি না পরিবারের সবাই নিষিদ্ধ করছে। কিন্তু বাবা কথা শুনে না আগের থেকে কমিয়ে দিয়েছে প্রতিদিন একটার বেশী খায় না। অনেকদিনের অভ্যাস আমিও আর জোর করি নাই‌

স্যার বলল, আচ্ছা যা হয়েছে হোক আর যাতে সিগারেট না খাই সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। রেস্টে থাকতে বলবে ভারি কাজ করতে দিবে না।

আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে স্যার। আমি আমার দিক দিয়ে বাবাকে সুস্থ করার জন্য চেষ্টা করব। আর আল্লাহ যেটা করবে সেটাই হবে। আমি কি আজ বাবাকে সাথে করে বাসায় নিয়ে যেতে পারি।

হ্যাঁ আজ বিকালে নিয়ে যেতে পারো। সকাল তো প্রায় হয়ে গিয়েছে।

বিকালে বাবাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। তারপর বললাম তুমি রেস্ট নাও তোমার সাথে কথা আছে।

সারারাত জেগে সারাদিন কাজে করে অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আমিও ফ্রেশ হয়ে নিলাম তারপর তারপর রেস্ট নিব। ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি ৫০ মিসড কল। সাবনাজ দিয়েছে সব কল। এতক্ষণে আমার মনে পড়ে কাল ফোন রিসিভ করেই কথা না বলে আমি নিচে গিয়েছিলাম। ফোন রিসিভ করেছিলাম কিন্তু কথা হয়নি। তারপর থেকে অনেক গুলো কল দিয়েছে সাবনাজ। অতঃপর একটা মেসেজ ও দিয়েছে। কল ধরে কথা বললে না এতগুলো কল দিলাম রিসিভ করলে না। মনে হয় কোনো সমস্যায় আছো। সময় হলে একটা কল দিও আমাকে।

আমি তো মনে করছিলাম আমার এমন করাতে সাবনাজ রাগ করবে কিন্তু এখানে দেখছি অন্যরকম। যাক ভালো হয়ে এমন সমস্যা বুঝতে পারা মানুষ আমার অনেক প্রয়োজন। আমি চেয়েছিলাম না আমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে আমার সমস্যা না বুঝে উল্টা রাগ করবে। আমি চেয়েছিলাম কেউ আমার সমস্যা গুলো গভীর থেকে ভেবে দেখুক আর সেটাই পেয়েছি।

তারপর সাবনাজ কে ফোন দিলাম।

সাবনাজ ফোন ধরে। কেমন আছো মাহমুদ তুমি। সেই রাত থেকে ফোন দিচ্ছি। ফোন রিসিভ করো না আবার ব্যাক করো না। কোনো সমস্যা হয়নি তো। তুমি ঠিক আছো তো বাসায় সবাই ঠিক আছে?

আমি বললাম শান্ত হও তুমি আগে সব বলছি আমি আস্তে আস্তে। তুমি রাতে যখন ফোন দাও তখন ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে নিচে হৈচৈ এর শব্দ শুনতে পাই। আমি তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে যাই। নিচে গিয়ে দেখি বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাড়াতাড়ি করে বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আসলে তোমাকে কিছু বলার সুযোগ পাইনি। হঠাৎ করে সব কিছু হয়ে গিয়েছে। আর কাছে ফোন ছিল না সে জন্যই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই। আর তুমি ফোন দিয়েছে সেটাও জানি না। কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি তুমি অনেকগুলো ফোন দিয়েছ।

আচ্ছা এসব কথা বাদ দাও যা হওয়ার হয়েছে। আমি ও বুঝেছিলাম কোনো সমস্যা হয়েছে, কিন্তু এতোবড় সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারি নাই। আচ্ছা বাবা কেমন আছে এখন?

আলহামদুলিল্লাহ। এখন কিছুটা ভালো আছে। যথা সময়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সাবধানে থাকতে বলছে।

আমি আজ তাহলে চলে আসছি মাহমুদ। বাবা অসুস্থ সেবাযত্ন করতে হবে।

আমি বললাম না থাক, আজ আসতে হবে না সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে। কাল সকালে গিয়ে আমি তোমাকে নিয়ে আসব। নিয়েই চলে আসব। বেশিক্ষণ থাকব না।

না মাহমুদ তোমাকে আসতে হবে না। তুমি বাবার কাছে থাকো। আমি আমার ছোট ভাইয়ের সাথে কালকে চলে আসতে পারবো। সমস্যা হবে না কোনো।

আমি আর জোর করলাম না। আমাকে বাবারা কাছে থাকতে হবে। তারপর সাবনাজের সাথে কথা শেষে করে, রেস্ট নিয়ে বাবার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি বাবা বসে আছে বালিশে হেলান দিয়ে। আমি বললাম এখন তোমার শরীর কেমন আছে বাবা?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। বুকে ব্যথা একটু আছে এখনো।

আমি বললাম ডাক্তার বলেছেন তুমি অনেক সিগারেট খাও। এই সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তোমার জন্য না হয় অন্তত আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে সিগারেট খাওয়া টা বন্ধ করে দাও। অনেক সিগারেট খেয়েছেন আরো খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ও আছে। তোমাকে ছাড়া আমরা সবাই অচল হয়ে যাব বাবা।

ভাবি পিছন থেকে বলে আর কত মাহমুদ এবার তো নিজের বউ কে নিয়ে আসবে। না কী এখানে আসতে ভয় করছে পরিবারের কাজ করতে হবে বলে। আমি বুঝিনা নিজের শ্বশুর তো বাবার মতো হয় এতো কিছুর পরেও কীভাবে না এসে থাকতে পারে। আর পরিবারের লোকজন বা কেমন নিজেরা না আসলে তো মেয়ে দিয়ে পেটাতে পারে।

আমি মনে মনেই বললাম এই মহিলার লজ্জা হবে না। কাল এতকিছু বলার পরেও ফটর ফটর করে কথা বলছে। লজ্জা বলতে কিছু নেই। আমি উঠে দাড়িয়ে বললাম। বাসায় তো আরো একটা বউ আছে। সে কী এই দেশের রানী? নিজের শ্বশুর তো বাবার সমতুল্য হয় তাহলে কই তাকে তো দেখলাম না শ্বশুর কে সাহায্য করতে। রাতে যখন বাবার হার্ট অ্যাটাক হয় তখন চোখ দিয়ে একফোঁটা পানিও পড়তে দেখলাম না। বাবার কাছে এগিয়ে আসতে দেখলাম না।

আর হ্যাঁ সাবনাজকে আমি কিছুক্ষণ আগে জানালাম বাবার এমন অবস্থার কথা। আমি ফোন দিয়েছিলাম না। কারণ রাতে তাড়াতাড়ি করে ফোন নিয়ে যেতে পারি নাই। কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়েছিলাম আজকে, এখনি আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি আসতে মানা করেছি অনেক রাত হয়ে যাবে আসতে‌। আমাকে বলেছে বাবার কাছে থাকতে। কালকে ওর ভাইয়ের সাথে আসবে। আমি আর কিছু বলতে চাই না। আবার এমন অবস্থা চিন্তা করলে বাবার পক্ষে সেটা ভালো হবে না।

রুম থেকে চলে আসব তখন মা বলে বাইরে অপেক্ষা কর মাহমুদ, মাহমুদা, বউমা তুমি থেকো। আমরা সবাই মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পরে মা এসে বলে। মাহমুদা তোর বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে আই। মাহমুদা গিয়ে বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে আসে।

তারপর মা বলে কাল রাতে মাহমুদ যেটা বলল সেটা সঠিক।

বড় ভাইয়া বলে কোন কথা।

মা বলল ফর্ম ফিলাপ এর টাকা দিয়েছিলে না মাহমুদা কে?

ভাবি তখন বলে তখন টাকা ছিল না মা। থাকলে অবশ্যই দেয়া হতো।

আমি তখন হাসতে হাসতে বললাম তার পরেই তো বোনের শপিং এর জন্য টাকা দিলেন বিকাশ করে এটাও তো সঠিক, এটা কেন বলছেন না ভাবি মায়ের কাছে?

ভাইয়া কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি মা বলে,,,,,

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে