#নব_ফাল্গুনের_দিনে (পর্ব ৪)
নুসরাত জাহান লিজা
নৈঋতা হলে এসেই রিহানের মাকে কল দিল। তিনি ওর জন্য এত যত্ন করে ওর প্রিয় খাবার রান্না করে পাঠিয়েছেন, ওর অবশ্যই তাকে একবার কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত বলে মনে হলো।
“নীরু, কেমন আছো, মা?”
“ভালো আন্টি। আপনার শরীর এখন কেমন? রিহানের কাছে শুনলাম।”
“এখন ঠিক আছি, মা।”
“আন্টি, আপনি এই শরীর নিয়ে এত কষ্ট করে রান্না করেছেন…”
ওকে থামিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, “আমার রান্না করতে ভালো লাগে। না করলেই মনে হয় বুড়ো হয়ে গেছি।”
“আপনার রান্না ভীষণ মজা আন্টি। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।”
ওই প্রান্তে মৃদু হাসির আভাস পেল নৈঋতা, “এই যে তুমি খুশি হয়েছে, এতেই আমি খুশি মা।”
“দোয়া করবেন আন্টি।”
“অবশ্যই। তুমি আমার পাগল ছেলেটার যেভাবে খেয়াল রাখো, তুমি আছো বলে আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকি। নইলে ওকে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই।”
“আপনি একদম চিন্তা করবেন না আন্টি। ও খুব ভালো ছেলে।”
“কিন্তু অত্যন্ত গা ছাড়া। নিজের খেয়াল রাখে না। জীবন নিয়ে সিরিয়াস না। এগুলোই চিন্তার। ভালো থেকো মা”
রিহানের মায়ের সাথে কথা বলে নৈঋতার ভালো লাগল। কেমন মা মা একটা গন্ধ। রিহানের সাথে ওর বন্ধুত্বের পরে পরে রিহান বাড়িতে গিয়ে ওকে নিয়ে গল্প করেছিল মায়ের কাছে। পরে যেদিন তিনি শুনেছেন সেদিনই কল দিয়েছিলেন নৈঋতাকে। ভীষণ আন্তরিক গলায় ওকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। এরপর মাঝেমধ্যে কথা হয়। ভদ্রমহিলা ওকে স্নেহ করেন।
বিকেলের কথা মনে পড়ল ওর। রিহান হৃদির সাথে কথা বলছিল৷ কী বলছিল, কিছুই ওর কানে ঢোকেনি যেন। মুহূর্তটা সে মুছে ফেলতে চায় মন থেকে।
***
ওরা একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত। দেশের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় তারা ডোনেশন কালেক্ট করে।
এবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রিহান, নৈঋতারা ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে ডোনেশন কালেক্ট করছে। ভীষণ ক্লান্তিকর কাজ, তবুও যখন মনে হয় মাধ্যমে কারো সাহায্য হচ্ছে, সেই ক্লান্তিটা মিলিয়ে যায়, বরং আলাদা একটা উদ্যম কাজ করে।
এরমধ্যে ওদের ফরম ফিলআপের ডেট দিয়ে দিল লেভেল ফোর সেমিস্টার ওয়ানের ফাইনাল পরীক্ষার। এটা একটা মহাযুদ্ধ মনে হয় নৈঋতার কাছে। এত দৌড়াদৌড়ি করে ফরম নিয়ে, পূরণ করে আবার হল প্রভোস্ট, প্রক্টরের সাইন নেয়াটা মহা ঝক্কির কাজ। তার মধ্যে গরমটা পড়েছে অতিরিক্ত।
রিহান ওর হাত খরচের টাকা থেকে বেশিরভাগ টাকাই সেই ফান্ডে দিয়ে দিয়েছিল৷ হুট করে এভাবে ডেট পড়ে যাবে বুঝতে পারেনি।
নৈঋতার বাবা যে টাকা পাঠান, সেটা থেকে প্রতিবারই কিছু টাকা বেঁচে যায়। সেসব সে জমিয়ে রাখে৷ রিহানকে বলল,
“আমার কাছ থেকে ধার নে।”
“তুইও তো দিলি।”
“আমার জমানো আরও কিছু টাকা আছে৷”
আসলে বাবা যা পাঠান, সে খুব হিসেব করে খরচ করে বাকিটা জমিয়ে রাখে নিজের একাউন্টে। কখন কোন দরকার পড়ে, তখন নিজে থেকে হাত পেতে চাইতে ওর ভালো লাগে না বলেই জমায়।
“আচ্ছা, তবে আমি আজই গিয়ে লিখে রাখব। একদম নেব না নেব না, করবি না।”
“আচ্ছা, করব না।”
প্রক্টর অফিসে ফরম জমা দিয়ে বেরিয়ে আসছিল ওরা, রিহান বলল, “এত প্যারা যে কেন দেয় এরা! এই যুগে এসে সিস্টেমটা ডিজিটাল করতে পারে না!”
“সেটাই৷ বেহুদা দৌড়াদৌড়ি।”
“তোকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। চল ওদিকে বসি।”
নৈঋতার সত্যিই ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল। ছেলেটা ওকে এত বোঝে কীভাবে! ওরা পাশেই ইউনিভার্সিটির টিএসসি লেক ভিউতে এসে বসল। জায়গাটা সুন্দর। অসংখ্য গাছা গাছালি এখানে। মন ভালো হয়ে যায়।
রিহান ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ওকে দিল, “এতে স্যালাইন গুলে নিয়েছিলাম বের হবার আগে। খা, ভালো লাগবে।”
“স্যালাইন খেলে কার ভালো লাগে?”
“আমার লাগে।”
“এ্যাহ্!”
“আমি বললাম তোর লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ নেই৷ তাও শুনলি না।”
এরমধ্যে হৃদির কল এলো, কথা শেষ করে রিহান আবার ওর পাশে এসে বসে বলল,
“আমাকে ডাকছে, বলল ওর সাথে থাকব কিনা, ফরম নেয়ার সময়।”
নৈঋতা ভেতরের বিষাদ চেপে বলল, “যা তাহলে।”
“আমি না করে দিয়েছি।”
নৈঋতা বলল,
“কেন? তোর হৃদির সাথে থাকা উচিত ছিল।”
“কেন?”
“তাহলে বেশি করে ইমপ্রেস করতে পারতি।”
“ও আমার প্রতি এমনিতেই ইমপ্রেস হয়ে আছে। ওই বরং আমাকে ইমপ্রেস করতে চাইছে। ওকে যদি আমি বলতাম, বরং আমার অনেক কাজ ও করে দিত।”
“তো তুই না ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড, এভাবে বলছিস কেন? বরং ওকে হেল্প করা উচিত।”
“এত পুতুপুতু আমার পোষায় না।”
নৈঋতা অবচেতনেই প্রশ্ন করল, “তাহলে আমার জন্য করতে চাইলি কেন?”
রিহান একরাশ বিস্ময় নিয়ে বলল, “তুই আর হৃদি এক হলি? তোর সাথে ওকে মেলাচ্ছিস কেন?”
“এটা উত্তর হলো?”
“যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর।”
“মেলে না কেন?”
“কারণ তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
বলে খানিকটা থেমে রিহান হঠাৎ বলল, “তুই কি জানিস, তুই এ পৃথিবীর সবচাইতে ভালো মেয়ে?”
কথাটা নৈঋতার হৃদয়ের কোথায় গিয়ে যে লাগল! মনে মনে আওড়ালো, “তবুও তুই আমাকে একটু অন্য চোখে কেন দেখলি না? কেন একটু অন্যরকমভাবে ভালোবাসলি না?”
কথাগুলো হয়তো কোনোদিনই সে রিহানকে বলতে পারবে না। ছেলেটা ওকে এত ভালো বুঝতে পারে সবকিছুতে, শুধু যা এখন নৈঋতার কাছে একান্ত আরাধ্য, সেটাই বুঝতে পারে না!
……….
আজকের পর্বটা তাড়াহুড়োয় এডিট করা। এই পর্বের কমতিটুকু আগামী পর্বে পুষিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।