নব্যদিনের সূচনা পর্ব-০২+০৩

0
1159

#নব্যদিনের সূচনা
হুমাইরা হুর
(২)+(৩)

মাঝ রাতে গভীর পানি পিপাসায় আমার ঘুম ভেঙে গেলে।হাতের কাছে পানি না পেয়ে পানি আনার জন্য উঠে দরজার খুলতে গেলেই আশ্চর্য হলাম দরজা বন্ধ। কিন্তু রীতি আপু দরজা বাইরে দিয়ে কেনো লাগিয়ে দেবে?

সেই রাত ভয়ে ভয়ে কাটল আমার। বুঝতে পারছিলাম না রীতি আপু কেন দরজাটা বাইরে থেকে আটকে রাখেছিলো। এখনও আমার চারপাশে হানা দিচ্ছে?

রাতে ঘুম হলো না আমার।এসময় চোখটা লেগে এসেছিল আমার। রীতি আপু ঠাক্কায় ঘুম ভাঙলো। আমি দরজা আটকানোর কারন জিগ্যেস করতেই তিনি আমতা আমতা করে বলতে লাগল ভুলে লাগিয়ে দিয়েছিলো।কেন জানি কথাটা আমার বিশ্বাস হলো না।যাই হোক তখন কার মত চিন্তা বাদ দিলাম। রীতি আপু আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকলেন। খাবার টেবিলে বসতেই সেই কালকের ছেলেটার সাথে দেখা হলো।আশ্চর্য কালকে যতটা সুন্দর ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি সুন্দর। মাথা ঝাকড়া ঝাকড়া চুল,নীলাভ চোখের অধিকারী তিনি বেশি লম্বা না ৫ ফিট ৯ এর মত লম্বা। খাওয়ার সময় ছেলেটার সাথে আমার দু তিনবার চোখাচোখি হয়েছিলো।প্রথম দেখায় ছেলেটা কে আমার ভালো লেগেছিলো।

কিন্তু এই ভালো লাগে ই যে কাল হয়ে দাড়াবে কে জানত?

কেটে গেলো সাপ্তাহ খানেক।দেখতাম ছেলে রাতে আসত।আমার সাথে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি ও হয়েছিলো। নিরবে পাশ কেটে এড়িয়ে যেতাম।ভালো লাগতে শুরু করেছিলো ছেলেটাকে আমার।রীতি আপুর সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম ছেলেটার নাম সোহান। সে পুলিশ।ছেলেটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বোধ বেড়ে গেলো।ছোটবেলা থেকেই যেনো আমার পুলিশ দের প্রতি দুর্বলতা ছিলো। তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা চোখে দেখতাম।কারণ আমার বাবা ছিলেন পুলিশ। আমার মনে হতো আমার বাবার প্রতিচ্ছবি যেন তারা।ছেলে টা পুলিশ জানার পর থেকে আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়ি তার প্রতি। দিনে দিন যেন আমার ভালোলাগা তার প্রতি বাড়ছিলো।তার কথাবার্তা আমায় মুগ্ধ করে দিতো।আস্তে আস্তে তাকে আমি ভালবাসতে শুরু করি। কিভাবে মনের কথা বলব তা বুঝতে পারছিলাম না।ভেবেছিলাম তার মত সুদর্শন ছেলে আমার মত আমার মত এতীম কেন ভালবাসতে?কই আমি তো তেমন সুন্দর না। না আছে আমার লম্বা চুল,না গায়ে ফর্সা রঙ।
তার পাশে আমাকে মানাবে না।এটা নিজের কাছে অসহায় লাগত নিজেকে।যেই মেয়ে কিনা ঘর ছাড়া তার ও কি সুখ কপালে আছে?তাই নিজেকে গুটিয়ে রাখা শুরু করলাম।যতটা পারতাম এড়িয়ে চলাম।কখনো দেখা হলে দেখতাম তার নীলাভ চোখ আমার দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে রয়েছে,যেন কিছু বলতে চায়। আমি নিরবে সেখান থেকে চলে যেতাম।কত দিন আর অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকব? নিজের তো কিছু করতে হবে তাই না।তাই রীতি আপুকে টিউশনি যোগার করে দেওয়ার বললাম।আর লেখাপড়া শুরু করার কথা বললাম।সে আমার সাথে সহমত পোষণ করল।

কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে সোহান একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সে আমাকে জরিয়ে ধরে।হতভম্ব হয়ে যায় সেই দিন। হাত-পা যেন আমার স্তব্ধ হয়ে আসছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি যেন অজ্ঞান হয়ে যাব। আমাকে জড়িয়ে ধরেছে অঝোরে কাঁদতে থাকে।ছেলেরাও বুঝি কাঁদে?তাকে অসহায় লাগছিলো। আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। এক মুহূর্তে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তার ভালোবাসার কথা শুনে। ভেবেছিলাম হয়তো মনে ভুল।কিন্তু না আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েে সে আমাকেই ভালোবাসে বলেন। সেও আমাকে ভালোবাসে কথাটা শুনে আমি যতটা খুশি হলাম তার থেকে বেশি অবাকই হলাম কারণ তার মত ছেলে আমার মত মেয়েকে ভালোবাসতে পারে এটা আদৌ সম্ভব।আমার প্রতি না জানা হাজারো অভিযোগ সে আমাকে জানায়।তার প্রতি দুর্বল থাকায় আমিও মানা করতে পারি না। আমাকে গড়ে উঠলো আমাদের মাঝে প্রণয় সম্পর্ক। নিজের থেকেও বেশি তাকে আমি বিশ্বাস করতাম। আমাদের সম্পর্কের কথা রীতি আপুও পর্যন্ত জানতো।। এর মাঝে আমি ভার্সিটি এডমিশন এর প্রস্তুতি নিতে থাকি। তিনি আমাকে সাহায্য করতেন। রীতি আপু আমাকে তিনটি টিউশনি খুজে দিয়েছিল। তিনি আমাকে বাইকে করে আমাকে সেখান দিয়ে আসতেন।হাজারো অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে তার কাছে বসতাম।নিজেকে খোলা পাতার ন্যায় তার কাছে উপস্থাপন করেছিলাম।

কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি ভালোবাসাও আমার ভাগ্যে ততদিন জুটলো না। ভেবেছিলাম তিনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন আমাকে কখনো ধোকা দিবেন না। কিন্তু না তিনি আমার বাবা মায়ের মতো আমাকে ধোকা দিলেন ।

নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য এক মেয়ের সাথে ঘ`নি`ষ্ঠ অবস্থায় দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মাথায় আমার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল আর মেয়েটা যে রীতি আপু হতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি র।রীতি আপু আমার সাথে এমনটা করবেন তা আমার পক্ষে ভাবা অসম্ভব ই ছিলো।তিনি তো আমার বোনের মত ছিলেন। কিন্তু দুইজন তো ভাই-বোন তাহলে তাদের মধ্যেই নোংরা সম্পর্ক কিভাবে সম্ভব? আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।

তাদের একেবারে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে আমি এসে পৌঁছে ছিলাম। বাসার চাবি থাকায় ঢুকতে সমস্যা হয় নি আমার।টিউশন যাওয়ার পর শরীর টা ভালো লাগছিলো না তাই একটা টিউশন না করে চলে এসেছিলাম তাড়াতাড়ি বাসায়।নিজের রুমে যাওয়ার সময় অস্পষ্ট কিছু শব্দ শুনতে পাই।কি হয়েছে তা দেখার জন্য সামনে যেতেই যে এমন অবস্থা দেখব তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি তখন । তারা অসম্ভব নোংরা ভাষায় কথা বলছিলো।তাদের কথাবার্তা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।

কথা গুলো এমন ছিলো যে সোহান আমাকে কখনেই ভালোবাসে নি। আমাকে ভোগ করার জন্য এমন করেছে।আর সোহান আর রীতি আপু ভাইবোন ও না।তারা হলো এসব নোংরা কাজে একে অপরের পাটনার।রীতি আপু মেয়েদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসে।আর সোহান তাদের সাথে প্রেমের নাটক করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তার ভিডিও বানিয়ে রাখে। পরে মেয়েদের কে ব্লাকমেইল করে তারা দিয়ে নোংরা কাজ করায়।আর আমি নাকি তাদের পরবর্তী শিকার।তাদের কথা না শুনলে মেয়েদের বয়স্ক লোকের কাছে বেঁচে দেন।

কথা গুলো শুনে আমার ভয়ে গা কাপতে লাগল।এ কোন নরকে এসে পৌছেছি। এক নরক থেকে বের হয়ে সেধে সেধে আর নরকে এসেছি?রীতি আপুকে ভালো ভাবতাম আর তিনিই আমাকে এ জঘন্য কাজের সাথে যুক্ত করতে চান। ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো আমার। হটাৎ করে রীতি আপু আমাকে দরজার পাশে দেখে ফেললেন।তৎক্ষনাৎ সে সোহানকে ঠাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিয়ে আমার কাছে আসতে লাগলেন। রীতি আপুকে আমার দিকে আসতে দেখে আমি পালাতে চেষ্টা করলাম।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। রীতি আপু আমার চুলের মুঠি ধরে চেপে ধরল।আমি ছাড়াতে চেষ্টা করলে সোহান এসে আমাকে জোরে কয়েকটা থাপ্পড় দিল।আমি যেনো নেতিয়ে পড়ালাম।রীতি আপু আর সোহানের এই রুপ যেনো কোনো মতেই আমি মানতে পারছিলাম না। আমি রীতি আপুর কাছে ভয়ে আকুতি মিমতি করতে থাকি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু তারা আমাকে ছাড়তে নারাজ।আমাকে দিয়ে নাকি অনেক টাকা কামাই করতে পারবে।রীতি আপু আমার চুলে মুঠি ধরে আমি যে রুমে থাকতাম সেই রুমে নিয়ে গেলেন। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দরজা আটকে দিলেন।কি করবো আমি বুঝতে পারছিলাম না। এ কোথায় এসে পড়লাম? যেই সম্মান হারানোর ভয়ে নিজের বাড়ি থেকে চলে আসলাম সেই সম্মান এখন বেচতে হবে আমার?

এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেলো।দরজার খোলার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে দেখি সোহান এসেছে।হাতে একটা ক্যামেরা। বুঝতে পারলাম না সোহান কি করবে এটা দিয়ে।মনে ভয় দানা বাঁধতে থাকল। সোহান রুমের এক কোণায় ক্যামেরা সেট করল। করে নিজের শার্ট খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।কি হতে চলেছে তা আন্দাজ করে আমার বুকের ভিতরে হু হু করে উঠল।তবে কি…

চলবে?

#নব্যদিনের_সূচনা🌾

🍂হুমাইরা হুর🍂

(৩)

সোহান রুমের এক কোণায় ক্যামেরা সেট করল। নিজের শার্ট খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।কি হতে চলেছে তা আন্দাজ করে আমার বুকের ভিতরে হু হু করে উঠল।তবে কি আজ রক্ষে নেই?

সোহান আমার একবারে কাছে চলে আসল।সোহানের নিশ্বাস গুলো আমার মুখের উপর পড়ছিলো।সোহান শক্ত করে আমার দুই হাত দুটো চেপে ধরেছিল। তার থেকে নিজেকে বাঁচতে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। ঘৃণা হচ্ছিল নিজের প্রতিই যে এমন মানুষকে আমি ভালোবেসেছিলাম। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম।এমন নিষ্পাপ মুখশের পিছনে যে একজন ভক্ষক আমি বুঝতে পারিনি। কি নিখুত অভিনয় ছিলো তার। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পুলিশদের তো` আজ পর্যন্ত আমি সম্মানের চোখে দেখতাম। তারাই তো সমাজ রক্ষা করে।আজ তারাই আবার মেয়েদের সর্বনাশ করতে দুদন্ড ভাবে না। রক্ষকই তো ভক্ষক হয়ে দাড়িয়েছে সমাজের জন্য।

কোনো মতেই সোহানের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারছিলাম না।বিশাল দেহী এই শক্তপোক্ত অমানুষের কাছে আমার শক্তি যেন কিছুই না। সোহান আমার দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হয়ে যাচ্ছিলো।তাহলে কি আমিও আজকের পর থেকে নোংরা মেয়ে হিসেবে বিবেচিত হব? সমাজের কাছে নিজেকে বিক্রি করেতে হবে?ধ`র্ষি`তার ট্যাগ লাগাতে হবে নিজের নামের উপর।

সোহান আমার ঘাড়ে মুখ ডুবালো।বাজে ভাবে স্পর্শ করা শুরু করেছিলো।আমি যেন নরক যন্ত্রণা ভোগ করছিলাম।আল্লাহ কে বার বার ডাকছিলাম।

সেই মুহুর্তে রীতি আপু আসল।রীতি আপু এসে সোহানকে থামিয়ে দিলো।এসে যা বলল তাতে আমার কিছুটা সময় এর জন্য স্বস্তি পেলেও পরবর্তীতে তা ভেঙ্গে যায়।

রীতি আপু সোহান কে বলে যে আমারে সাথেকিছু না করতে এই মুহুর্তে। কারণ বিকেলে তাদের একজন বড়লোক কাস্টমার আসবে।যে কিনা তাদের অনেক টাকা দেয়।রীতি আপু আমার ছবি দেখিয়েছিলো তাকে।এক দেখায় লোকটার মনে ধরে যায়।তার আমাকে নাকি চাই। তাই তারা আমাকে বিক্রি করে দিবে।কিন্তু লোকটার এর শর্ত যে আমাকে তার আগে কেউ ছুতে পারবে না।আর আমাকে পেলে অনেক মোটা অংকের টাকা দিবে। অনেক টাকার কথা শুনে রীতি আপু লোভ সামলাতে না মেরে তাকে হ্যা করে দেয়।তার চোখ মুখ লোভে চিক চিক করছিলো।

রীতি আপুর কথা শুনে সোহান রাগ উঠে যায়।সে চেয়েছিলো সে আমাগে প্রথমে ভোগ করবে।কিন্তু রীতি আপু বাধা দেওয়ায় পাশে থাকা টেবিল টা লাত্থি মেরে চলে যায়।যাওয়ার আগে আমার উপর অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যায়।নীলাভ চোখের এক সুদর্শন ছেলের ভেতরে যে জঘন্য এক শয়তান আছে তা সামনে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না। রীতি আপু আমার জন্য খাবার রেখে চলে যান।আর আমাকে হুমকি দিয়ে যান।

বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়লাম।চারিপাশ যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। আমি এই শয়তানদের চিনতে কেন পারি নি আগে থেকে?

ভালো ভাবে ভেবে দেখলাম সবই আমার চোখের সামনে ছিলো।অন্ধ বিশ্বাসের কারণে আমি কিছুই বুঝতে পারি নি।

রীতি আপুর বাসায় দুই রুম থাকায় এক রুমে আমি থাকতাম আরেক রুমে আপু থাকত। ঘরে কোনো সোফা ছিলো না। এদিকো সোহান তো এ বাসাই থাকত।কিন্তু রাতে কই থাকত?আর আমার রুমের দরজা প্রাই বাইরে দিয়ে লাগানো থাকত। এসব কথা কোনো দিন মাথাই আসে নি তারা এক সাথে এক বিছানায় রাত পার করত।আর আমি কি পরিমাণ বোকা যে চোখের সামনে দিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে পাত্তা ই দেই নি।আমার সামনেই ঘটছিলো সব আর আমি কিনা কিছু বুঝতেই পাটি নি।

আবার রীতি আপু যখন কলেজে পড়ত, তখন একবার শুনেছিলাম রীতি আপুর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো।আমি তখন বুঝিনি ব্যাপার টা কি?সেই কথা শোনার পর রীতি আপুর যে কি কান্না। তিনি কিভাবে কিভাবে প্রমান করে দেন সেটা সে ছিলো না,এডিট করে তার মুখ বসানো হয়েছে।কিছুদিন গুঞ্জনের পর সব শান্ত হয়ে গিয়েছিলো।অনেকে আমাকে বলেছিলো রীতি আপু ভালো না। সেইসব কথা তখন পাত্তা দেই নি। কারণ পুরো কলেজে রীতি আপু ছাড়া আমার কাছের মানুষ কেউ ছিলো না।তাই অসম্ভব বিশ্বাস করতাম।আসলে মেয়েরা নাকি সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে।আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি কোনো কিছু মিথ্যা ছিলো না।

রীতি আপুকে বিশ্বাস করা আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল তারপরে বড় ভুল ছিলো সোহানকে ভালোবাসা। ভাবতে পারিনি সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষ আমাকে এভাবে ধোঁকা দিবে।

জীবনের সামনে যে এখনো অনেক বিপদ। এখন আমার কি করতে হবে? অন্ধকার লাগছিল চারিপাশ।এই বিপদের সময় সাহায্যের জন্য কেউ ছিলনা না।

না বসে থাকলে কোনো তো হবে না।নিজের জীবন সম্মান বাঁচানোর জন্য লড়াই করতে হবে। বিছানা ছেড়ে উঠলাম চারপাশ দেখতে লাগলাম কোনো ফোন বা টেলিফোন জাতীয় কিছু পাওয়া যায় নাকি।হন্নতন্ন হয়ে খুজলাম কোথাও কিছু পাই কি না।কিন্তু না কিছুই ছিলো না সেখানে।রীতি আপু আমাকে যে রুম দিয়েছিলেন সেখানে কোনো বারান্দা ছিলো না।ছোট একটা জানালা ছিলো। যেহেতু রীতি আপুর বাসা ৫ তালায় তাই কোনো ভাবে কাউকে ডাক দিলে শোনা যেত না।তখনই মাথায় আসলো কাগজে লিখে সাহায্য চাওয়ার কথা।তখনি আবার খুজতে লাগলাম কোনো কাগজ বা কলম আছে নাকি।অনেক খুজে একটা প্যাড পেলাম কিন্তু কোনো কলম বা পেনসিল পেলাম না। কি দিয়ে লিখব তাহলে?হটাৎ চোখে পড়ল একটা কাজল।কোনো মতে লিখলাম-

`আমি খুবই বিপদে পড়ছি।দয়া করে আমায় সাহায্য করুন।আমি রিজিপারি ভবন এর ৫ তলায় অবস্থান করছি।এরা আমাকে বেচে দিতে চায়।দয়া করে সাহায্য করুন।`

এতটুকু লিখে সামনে থাকা বল প্লাস্টিক ফুল এর সাথে আটকিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। পালানোর কোনো সুযোগ ই পাচ্ছিলাম না। দরজা বন্ধ।

কি করবো ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেলো।হটাৎ কারো বেল্টের আঘাতে ঘুম ভাঙ্গল। দেখলাম সামনে রীতি আপু আর সোহান দাড়িয়ে।রীতি বপুর হাতে সেই প্লাস্টিকের ফুল টা। তবে কি আমি বাচতে পারব না? ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো।ফুলটা রীতি আপুর হাতে পড়ে গেলো।

রীতি আপু এসে আমাকে কয়েকটা থাপ্পড় দিলো।আর বিচ্ছিরি ভাষায় গালাগালি করতে লাগল।বাড়িয়ালা নাকি চিঠি এটা পেয়ে বাসায় এসেছিলো।বাড়িয়ালা রীতি আপুকে দীর্ঘ দিন ধরে চেনার কারণে কতাটা ভুয়া মনে করে। তাও রীতি আপুকে সর্তক করে দিয়ে যায়।আমার জন্য তারা ফেসে যেতে গিয়েছিলো তাই তারা আমার রুমে আসে।আর মারতে শুরু করে।রীতি আপুকে থামিয়ে সোহান একের পর এক বেল্টের বাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলো।ব্যাথায় কাতরাতে থাকলাম।এত যত্রণা আমি কোনোদিনও সহ্য করে নি।এক পর্যায়ে যেন আমি নেতিয়া পড়লাম।রীতি আপু দৌড়ে এসে সোহানের হাত থেকে আমাকে বাচিয়ে নীলেন।আর সোহানকে গালাগালি করতে লাগলেন।কারন আমি মরে গেলে তারা টাকা কিভাবে পাবে?

সোহান বেরিয়ে গেলো।রীতি আপু আমার ক্ষত জায়গায় মলম লাগাতে শুরু করলেন।আর শান্ত হয়ে আমাকে মেনে নিতে বললেন।। আর বলতে শুরু জরলেন তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

রীতি আপুর বাবা মা গরীব ছিলেন।তাদের আর্থিক সমসয়া তাকার কারনে তিনি তার ফুফু বাড়ি থেকে পড়া শোনা করতেন।তখন তার বয়স সবে ১২ বছর। অবুঝ ছিলেন তিনি। তার ফুফুতো ভাই ছিলো সোহান।একদিন রাতে যখন রীতি আপু পড়ছিলো তখন তার ফুফা তার কাছে আসেন। বিভিন্ন চকলেট,খেলনা দিয়ে কাছে বসান।অবুঝ রীতি আপু তখন তার কাছে গিয়ে বসত।খালু তাকে বলত আদর করবে। তাই বলে ঐদিন রাতে সেই ১২ বছরের রীতি আপুকে ধ`র্ষ`ণ করেন। অবুজ রীতি আপুর কান্না যেনো থামছিলোই না।খালু তাকে ভয় ডর দেখিয়ে দিনের পর দিন নি`র্যাতন করতে থাকে।রীতি আপুর বসয় যখন ১৫ বছর তখন তিনি গর্ভ`বতী হয়ে যান।সকল ঘটনা তিনি তার ফুফু কে জানান। ফুফু শুনে রীতি আপুকে মারা শুরু করে।মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেন রীতি আপুকে।। আর ঐ অধমরা রীতি আপুকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যায় আর বাচ্চা টা নষ্ট করিয়ে ফেলেন সমাজের ভয়ে।এসব কিছুই দেখছিলো সোহান।সমাজের ভয়ে রীতি আপুর ফুফু ও চুপ থাকেন। রীতি আপুর বাবাকে কি করে বলবেন তাই তিনি রীতি আপুকে নিজের কাছে রাখেন।ফুফার অত্যাচার কমলেও রীতি আপুর ফুফু রীতি আপুকে অমানুষিক অত্যাচার করতেন।মাঝে মাঝে ফুফু না থাকলেও ফুফা আবার ও তার নোংরা কাজ করতেন।একদিন সোহানের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়েন।ছেলের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতেন না তিনি। ততদিনে সোহান রীতিকে ভালবাসতে শুরু করেছিলো।রীতিকে সোহান বাচানোর পর থেকে রীতিও সোহান কে ভালোবাসতে শুরু করে। সোহান রীতিকে পালিয়ে ঢাকা নিয়ে আসে।

সব কিছু ভালোই চলছিলো রীতি সোহানকে ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দেয় সোহানের কাছে।সোহান ও যেন রীতিকে ভালোবাসত।তারা বিয়েও করে।কিন্তু রক্ত বলে কথা আছে না? বাপের মত ছেলে। সোহান এর মেয়ের নেশা ছিলো। সে রীতি ভালোবাসলেও মেয়েদের নিয়ে ব্যাবসা করত।সোহানের জন্য রীতি আজ মুক্ত।আর রীতি সেহানে ভালোবাসে বলে এই অন্যায়ের সাথে যুক্ত।

শুনে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।রীতি আপুও যে এতটা অসহায় ছিলো তা ভাবতেও পারি নি।রীতি আপু চলে গেলে রেখে গেলেন আমাকে এক গোলক ধাধায়। কিছুক্ষণ পর সোহান আসল।কিছু জামা কাপড় আমার সামনে রাখল।আর পরে বললেন।আমি না পড়ায় সোহান আমাকে জোড় করে পড়িয়ে দিতে গেলে রীতি আপু বাধা দেয়। সোহান কে যেতে বলে চুপচাপ আমাকে জামাগুলো পড়তে বলেন।

আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে রীতি আপু আর সোহান এক বয়স্ক লোক এর সামনে বসালেন।বয়স্ক লোকটা আমাকে দেখে আমার গায়ে হাত দেওয়ার চেস্টা করলেন। আমি সরে যেতেই আমার দিক হেসে তাকিয়ে বললেন

`পাখি যত উরার উর।একটু পর আমার খাঁচায় বন্দি হবি। `

আমি তখনো পালানোর কথা ভাবছিলাম। রীতি আপু আমাকে সুন্দর একটা রুমে বসিয়ে রেখে গেলেন।আর বলে গেলেন চুপচাপ যা হচ্ছে মেনে নিতে।রীতি আপু যেতে না যেতেই বয়স্ক লোকটা আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার গায়ে থেকে ওড়না টান দিয়ে ফেলে দিলো মাটিতে।তাহলে কি….

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে