part 8+9+10+11
#ননদ
পর্ব-৮
নাহিদ নাদিয়ার কথা পাত্তাই দিলো না। ও ওর মতো দৌঁড় দিয়েই নামছিলো। নাদিয়া যা সন্দেহ করেছিলো তাই হলো। নাহিদের গায়ের সাথে আমার জোরে ধাক্কা লেগে গেলো। আমি নিচে পড়ে যাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎই অনুভব করলামআমি নিচে পড়ে যায়নি। নাদিয়া আমাকে ধরে রেখেছে। আমার বাচ্চাটার কিছু হয়নি। নাদিয়া খুব রেগে গিয়েছিলো। নাদিয়া বললো,
” আমি জানতাম এমন কিছু একটাই হবে। তুমি তোমার মতোই নামবে। তাই প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলাম। আসলে ভাইয়া তোমার না কোন চিন্তাই নেই। বাচ্চাটা যদি মারা যেতো তাহলে তুমি কি করতে? মানুষ এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হয়? তোমাকে বলা সত্ত্বও তুমি সাবধান হওনি।”
ঠিকই তো আজকে যদি মেয়েটা না থাকতো তাহলে তো আমি নিচেই পড়ে যেতাম। আমার বাচ্চাটির কি হতো? ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছিলো সাথে নাহিদের উপর রাগও হচ্ছিলো প্রচুর। সেদিন আমি আর হসপিটালই যাইনি। নাহিদের সাথে কোন কথাই বলিনি। সারাটাদিন নাদিয়ার হাত ধরেই বসেছিলাম। সেদিন মনে হচ্ছিললো ও আল্লাহ প্রেরিত কোন ফেরেশতা। ওকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন আমার আর আমার বাচ্চাটাকে এত বড় বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য। সারাটাদিন ঘোরের মাঝেই ছিলাম। আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না আমি ঠিকঠাক আছি।
ধিরে ধিরে আমার ডেলিভারী ডেট এসে পড়লো। আমি যেদিন থেকে হসপিটালে এডমিট হলাম সেদিন থেকে নাদিয়াও আমার সাথে হসপিটালেই থাকলো। ওকে কোনভাবেই বাসায় পাঠাতে পারিনি। আমাকে যখন অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হচ্ছিলো তখন আমাকে ও.টি তে ঢোকানোর আগ পর্যন্ত নাদিয়া আমার হাত ধরেই রেখেছিলো আর বারবার বলছিলো, ” ভাবি একদম ভয় পাবা না। সবকিছু ভালো হবে ইন শা আল্লাহ”।
আমি আম্মাকে বলেই রেখেছিলাম আমার বাচ্চাকে যেনো নাদিয়ার হাতেই প্রথম দেয়া হয়। শুনেছিলাম বাচ্চা প্রথম যার কোলে যায় তার সাথে নাকি বাচ্চার আত্মার সম্পর্ক তৈরী হয়। আমি চাইছিলাম আমার দুই সন্তানের মাঝে যেনো আত্মার সম্পর্ক তৈরী হয়।
আমাদের ঘরে ছেলে সন্তান এলো। আমার ইচ্ছানুযায়ী আমার ছেলেকে নাদিয়ার কোলেই দেয়া হলো। আমাকে ও.টি. থেকে বের করার পর আম্মা আমাকে বললো-
“জানিস তুই যতক্ষন ও.টি. তে ছিলি ততক্ষন ও ও.টি.র দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই ছিলো। একটুও এদিক সেদিক যায়নি এমনকি বসেও নি। তোর বাচ্চাকে দেখার পর আমরা সবাই বাচ্চাকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম তোর কথা আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু ও বাচ্চাকে কোলে পাওয়ার পরও তোর কথা ভুলেনি। আমাদের মধ্যে একমাত্র ও ই তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিলো তুই কেমন আছিস? তুই ভালো আছিস শুনেও ও শান্ত হয়নি। তোকে নিজ চোখে দেখার পরই ও শান্ত হয়েছে”।
আমাকে বেডে দেয়ার পর ও এসে আমাকে এক হাতে ধরে রেখেছে আর বাবুকে আরেক হাতে কোলে নিয়ে রেখেছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও আর ছোট নাদিয়া নেই। ও অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এখন ও একাই আমাকে আর বাবুকে সামলাতে পারবে। বাবুর নাম আমরা ওর পছন্দ মতই রাখলাম,”নিহাল”। নাদিয়া নিহালকে সর্বক্ষন আগলে রাখতো। নাহিদকে ও ওর রুমে পাঠিয়ে নিজে আমার আর বাবুর সাথে থাকতো। বাবু যতবার রাতে ঘুম থেকে উঠতো ততবারই ও উঠে বসে থাকতো। ওকে কত বলতাম তুই এভাবে রাত জাগিস না তোর সমস্যা হবে। তুই তোর রুমে ঘুমা নাহিদ আর আমি সামলে নিবো। কিন্তু ও রাজি হতো না। বলতো, ” ভাবি আমি নিহালকে আমার চোখের সামনে বড় হতে দেখতে চাই। ওর জীবনের একটা মূহূর্তও আমার অদেখা থাকুক তা আমি চাই না” আমি ওর এই ধরনের মুরুব্বি টাইপ কথাগুলো শুধু চুপচাপ শুনতাম আর মনে মনে হাসতাম। কখনো কিছুই বলতাম না। মেয়েটা খুব ছোট থেকেই বেশ গোছানো চিন্তাধারার ছিলো। অন্যের যেকোন সমস্যা না শুনেই বুঝে ফেলতো। কখনোই অন্যায় আবদার ধরতো না। ওর বয়সটা খুব কম হলেও ওর চিন্তা ভাবনা ছিলো একদম বড়দের মতই। ও যখন ক্লাস নাইনে উঠলো তখন ওর স্কুল থেকে একদিন ফোন আসলো। ফোনটা ওর হেডমিসট্রেসের ছিলো। উনি বললেন-
“স্কুলে তো ফরম ফিলাপ হচ্ছে। নাদিয়া তো ওর ফরমে ওর মা-বাবার নামের জায়গায় আপনার এবং আপনার স্বামীর নাম দিয়েছে”।
আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। উনাকে বললাম,” আচ্ছা ঠিকাছে আমি দেখছি”। নাদিয়া বাসায় আসার পর ওকে জিজ্ঞেস করলাম,” কিরে তুই নাকি ফরমে আমাদের নাম দিয়ে আসছিস?”
-” হ্যাঁ দিয়ে আসছি। তোমরাই তো আমার মা-বাবা। তোমরা আমাকে নিজের মেয়ের মতো বড় করছো আর তোমাদের আমি মা-বাবা মনে করি তাই তোমাদের নাম দিয়ে আসছি”।
ঠিকই তো ও তো আমাদেরই মেয়ে আমাদের নাম দিবে না তো কার নাম দিবে?…..
(চলবে)
লেখা-মিম
#ননদ
পর্ব-৯
একদিকে নাদিয়া বড় হচ্ছে অন্যদিকে নিহাল। নিহালের সাথে নাদিয়ার ঠিক সে সম্পর্কই তৈরী হয়েছে যেমনটা আমি চেয়েছিলাম। আমার ছেলে আমার চেয়ে নাদিয়ার ভক্ত বেশি ছিলো। ওর কারনে নিহালকে পালতে আমার কোন কষ্টই হচ্ছিলো না। নাদিয়া আচার-ব্যবহার,কাজ,কথা সব দিক দিয়েই আমার শ্বাশুড়ির প্রতিচ্ছবি ছিলো। নাদিয়ারএস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট যেদিন প্রকাশ পেলো সেদিন যে আমরা কি খুশি হয়েছিলাম তা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। ওর রেজাল্ট প্রকাশের দিন আমার বাসার সবাইকে দাওয়াত দিয়ে এনেছিলাম। সেদিন রাতে আম্মা আর আমি ছাদে বসে গল্প করছিলাম। উপর থেকে দেখলাম একটা বিয়ের গাড়ি দেখলাম যাচ্ছে। গাড়িটা দেখেই আমার নাদিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আম্মাকে বললাম-
” আম্মা, নাদিয়াটা কেমন দ্রুত বড় হয়ে যাচ্ছে দেখেছো”?
-” হুম দেখেছি। এইতো আর কিছুদিন। এরপরই দেখবি মেয়েটাও এরকমই গাড়িতে করে একদিন শ্বশুড়বাড়িতে চলে যাবে”
-” আচ্ছা আম্মা মেয়ে যখন শ্বশুড়বাড়িতে চলে যায় তখন মায়ের কেমন লাগে?”
-” কেমন লাগে!!! এত বছর একটা মেয়েকে বুকে আগলে রেখে বড় করার পর অন্যের হাতে তুলে দেয়াটা কলিজা কেটে অন্যকে দিয়ে দেয়ার সমান। ঐ কষ্ট টা কাউকে বোঝানো সম্ভব না। এটা আমরা যে মায়েরা মেয়ে কে বিয়ে দিসি শুধু আমরাই বুঝি”।
আম্মার কথা শুনে আমার কলিজাটায় লাগছিলো। আম্মাকে বললাম-
” আম্মা আমি নাদিয়াকে কিভাবে আরেকজনের হাতে কিভাবে তুলে দিবো? আমি তো ওকে দিয়ে থাকতে পারবো না। ও আমাকে ছেড়ে আরেক বাড়িতে থাকবে মনে হলেই দম আটকে আসছে। নাহ্ ওকে আমি আরেক জনের বাড়িতে দিবো না”
-” তাহলে কি ওকে বিয়ে দিবি না?”
-” দিবো কিন্তু ওর জামাই ঘর জামাই থাকবে”।
বাসায় এসে নাহিদকেও জানিয়ে দিলাম-
” শোনো, নাদিয়ার জামাই কিন্তু ঘর জামাই থাকবে।”
নাহিদ ভেবেছিলো আমি দুষ্টামি করছি। আমার কথা শুনে বললো-
” তাহলে তো ওর জামাইর ওকে রান্না করে খাওয়াতে হবে”। এই কথা বলেই ও জোরে হেসে উঠলো।
-” দেখো আমি কিন্তু সিরিয়াস। ও চলে যাবে মনে হলেই আমার মাথা খারাপ হয়ে আসছে আর তুমি মজা করছো? তবে অবশ্য তুমি তো করবাই ওর আর সম্পর্ক তুমি কি বুঝবা নাকি?”
ও মুচকি হেসে বললো-” তানহা, নাদিয়ার কোন সিদ্ধান্তে আমি কখনো হস্তক্ষেপ করিনি, করবও না। ও যতটুকু আমার, তারচেয়ে অনেক বেশি তোমার”।
ওকে আমরা খুব ভালো একটা কলেজে ভর্তি করালাম। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক বেশি স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু কথায় আছে না,” বেশি আশা করা ঠিক না, যতবেশি আশা করবে তত দ্রুত তা ভেঙে যাবে।”
আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিলো……..
(চলবে)
লেখা-মিম
#ননদ
পর্ব-১০
ওকে কলেজে ভর্তি করানোর ৩-৪ মাস পর্যন্ত ও স্বাভাবিক ছিলো। নাহিদের চাচাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানের পর থেকে ওর আচরন কেমন যেনো বদলে যেতে শুরু করলো। ও চুপচাপ বসে থাকতো, মাঝে মাঝে একাই হাসতো, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতো না, নিহালের সাথেও তেমন মেলামেশা করতো না। ওরএই পরিবর্তন আমাদের সবার নজরেই পড়তে লাগলো। নাহিদের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম। ও বললো,
” দেখো তুমি ওকে বড় করেছো। আমার চেয়ে তোমার সাথে ও বেশি ফ্রি। আমি সাথে থাকলে ও কিছু নাও বলতে পারে। এরচেয়ে ভালো হবে তুমি ওকে একা জিজ্ঞাস করো।”
আমি ওর চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। এর দুদিন পরে ওকে সুযোগ বুঝে জিজ্ঞাস করলাম,
-” নাদিয়া কি হয়েছে তোর? তুই এমন বদলে যাচ্ছিস কেনো? কেউ কিছু বলেছে তোকে? তোর মুখের দিক আমি তাকাতে পারছি না। না খেয়ে তো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিস”।
ও মুচকি হেসে বললো, “ভাবী একটা বিষয় নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম, বিষয়টা নিয়ে এগোবো নাকি বাদ দিবো দ্বিধাটা এখন আর নেই, আমি আমার উত্তর পেয়ে গিয়েছি। আজ থেকে তুমি আমাকে আবার স্বাভাবিক দেখবে”।
ওকে আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম কয়েকবার কিন্তু ও বারবারই উত্তর দিলো যে সময় হলে নাকি বলবে। ওর কথাগুলো আমার কাছে কেমন যেনো গোলকধাঁধার মতো লাগছিলো। তখনই আমার সন্দেহ হচ্ছিলো নাদিয়া কারও সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো না তো?? কথাগুলো আমি আম্মার সাথে বললাম। আম্মা সব শুনে বললো-
” দেখ ও এখন বড় হয়েছে। আর এই বয়সে প্রেম করাটাই স্বাভাবিক তুই এত চিন্তা করিস না”।
-” নাদিয়া প্রেম করছে সেটা নিয়ে আমার সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে ভালো খারাপ বিবেচনা করার মত বয়স এখনো ওর হয়নি। যদি সেই ছেলে ভালো না হয়, যদি নাদিয়ার কোন ক্ষতি করে তাহলে আমি কি করব?”
-” উফফ তুই এত চিন্তা বাদ দে তো। ও যদি কারো সাথে প্রেম করেই থাকে তাহলে তো জানতেই পারবি। ছেলে ভালো না খারাপ তখন তো আমরা বুঝতেই পারবো। আর নাদিয়া তোকে যথেষ্ট মান্য করে। তোর কথার বাইরে ও কিছু করবে না। তুই শুধু খেয়াল রাখ ও কখন কি করে।”
আম্মার কথা অনুযায়ী আমি ওর সব বিষয়ে লক্ষ্য করা শুরু করলাম। দেখলাম ও আমার কাছ থেকে কথা লুকাচ্ছে এমনকি মিথ্যা কথাও বলছে। আমি খুব কষ্ট পেতাম যখন দেখতাম আমাকে ও মিথ্যা কথা বলছে। মনে হতো আমার এত আদরের নাদিয়া আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ওকে আমি কয়েকদিন জিজ্ঞাস ও করেছি ও কাউকে পছন্দ করে কিনা, কিন্তু ও বরাবরই অস্বীকার করেছে।
মাস তিনেক পর একদিন রাতে নিহাল অনেক রাতে ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। তাই আবার ঘুম পাড়ানোর জন্য ওকে কোলে নিয়ে ঘরে হাঁটতে লাগলাম। নাদিয়ার রুমের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি তখন শুনতে পেলাম রুম থেকে কথা বলার আওয়াজ আসছে। এত রাতে কথা বলে কে ওর রুমে? আস্তে করে ওর রুমের দরজা খুলে দেখি ও জানালার পাশে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে-” অনেক রাত হয়েছে প্লিজ তুমি এখান থেকে এখন যাও”।
বুঝতে পারলাম বাসার সামনে ওর জন্য কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। সাথে সাথে আমি অন্য রুমের বেলকোনিতে গেলাম। আমার ধারনাই ঠিক ছিলো। যেয়ে দেখি এক ছেলে ওর জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটি একটু জোরে কথা বলছিলো আর দোতালা বাসা হওয়াতে ছেলেটার কথা আমি শুনতেই পাচ্ছিলাম। ছেলেটা বলছিলো-
” তুমি না আসলে আমি যাবো না। তোমাকে আমি কাছ থেকে এক নজর দেখেই চলে যাবো”
আমি ওখানেই দাড়িয়ে ছিলাম এটা দেখার জন্য যে ও কতক্ষন দাড়িয়ে থাকে।
৪-৫মিনিট পরই দেখি নাদিয়া ঐ ছেলের সাথে দেখা করার জন্য নিচে চলে গিয়েছে আর ওকে দেখা মাত্রই ছেলেটি ওকে জড়িয়ে ধরেছে। নাদিয়া একবার ছাড়াতে চেয়েছিলো কিন্তু ছেলেটি ওকে ছাড়েনি। এসব দেখে আমার মাথা ঘুরাচ্ছিলো। নাদিয়া এতদূর এগিয়ে গেছে অথচ আমি এর কিছুই জানি না। নাদিয়া উপরে তাকাতেই দেখে ফেলে যে আমি উপর থেকে দাড়িয়ে সব দেখছি……..
(চলবে)
লেখা- মিম
#ননদ
পর্ব-১১
ও আমাকে দেখে দৌড়ে চলে এলো। আমি ঐ ঘরেই দাড়িয়ে ছিলাম। নিজেকে খুব বেশি বুদ্ধি শূন্য লাগছিলো। নাদিয়া রুমে এসে আমার হাত ধরে বললো-” ভাবি আমি সরি”
আমি ওর হাতটা ছাড়িয়ে বললাম, ” আমি এখন কোন কথাই বলতে চাই না, তুই গিয়ে ঘুমা। কাল সকালে কথা হবে”।
আমি সেই রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। সারা রাত এ ঘর ও ঘর হেঁটেছি। পরদিন সকালে আমি ওকে কলেজ যেতে দেয়নি। নাহিদকেও সকালে অফিস যেতে দেইনি। কারন এই বিষয়টার একটা সুরাহা করার খুব দরকার ছিলো। মেয়ে আমার রাত দুইটায় ঘর থেকে বের হয়ে যায় আরেক ছেলের ডাকে কথাটা মনে হতেই আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছিলো। সকালে নাস্তা শেষে নাদিয়াকে আমাদের সামনে বসতে বললাম। নাহিদ জিজ্ঞাস করছিলো কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বলো? আমার মিটিং দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে নাদিয়ার সামনেই গত রাতের কথা বলেছি। সব শুনে তো নাহিদের চোখ কপালে উঠার উপক্রম। আমরা দুজনই অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম। তবুও আমরা ওর সাথে কোন খারাপ ব্যবহারই করিনি। আমরা চেয়েছিলাম ঠান্ডা মাথায় বিষয়টা সামলাতে। আমি নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম-
” ছেলেটার নাম কি?”
-” আসাদ”
-” ওকে তুই চিনিস কিভাবে”?
-” তৌহিদ ভাইয়ার (নাহিদের চাচাতো ভাই) বন্ধু। তিশা আপুর বিয়েতে পরিচয় হয়েছে”
-” তৌহিদ কি জানে?”।
-“হ্যা ওদের ঘরের সবাই জানে। চাচীও জানে”।
সেদিন যখন ও বললো ওর প্রেমিক তৌহিদের বন্ধু এ কথা শুনে আমার আত্মা বের হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। কারন তৌহিদ মোটেও ভালো ছেলে না। ওর বন্ধু না জানি কেমন হবে। তবুও মনটাকে অনেক কষ্টে স্থির করলাম এই ভেবে যে ছেলেটি ভালোও হতে পারে। নাদিয়ার কাছ থেকে সব খবর নিয়ে জানতে পারলাম ছেলেটা মাস্টার্স করছে পাশাপাশি ছোটখাটো জব ও করে, ওর বাবা রেলওয়ে ডিপার্টমেন্টের অফিসার ছিলেন, ছোট দুইটা ভাইবোন আছে, ছেলে খুবই ভালো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আর নাদিয়াকে নাকি পাগলের মতো ভালো বাসে। নাদিয়ার কথা শুনে ভালোই মনে হলো। তবুও আমার সন্দেহ গেলো না। সন্দেহ দূর করার জন্য আমি লোক ঠিক করলাম ওর খবর নেয়ার জন্য। জানতে পারলাম ছেলে আমার বাবার বাসার এলাকাতেই থাকে এবং সে যা বলেছে তার অর্ধেকই মিথ্যা। ছেলে আসলে মাস্টার্স পাশ ও না জবও করে না। এই ছেলে এস.এস.সি. ফেইল। প্রতিরাতেই নেশা করে বাড়ি ফিরে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ থাক দূরের কথা সে কোনদিন মসজিদেই পা রাখেনি। রাস্তায় মেয়েদের আজেবাজে কথা বলা আর বিভিন্ন মেয়েদের সাথে
শারিরীক সম্পর্ক করে ছেড়ে দেয়াটা তার নেশা। প্রতি ছয় মাস পরপর নতুন কোন মেয়েকে তার শিকার বানায়। এসব কথা শোনার পর আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিলো। তবুও আরো ভালো করে সত্যতা জানার জন্য আমি আমার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম। সেও একই কথাই বললো। কি করব আমি দিশেহারা হ য়ে যাচ্ছিলাম। ছুটে গেলাম আমার চাচী শ্বাশুড়ির বাসায়। উনাকে ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলাম-
” নাদিয়া আসাদের সাথে প্রেম করে সেটা কি আপনি জানেন?”
উনি এক ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বললেন,
-” হ রে মা। আমি তো নাদিয়ার মায়ের মতই। মা তো সন্তানের মুখটা দেখলেই বুইঝা যাই সন্তান কি চায়”।
-” আসাদ যে একটা বেকার ছেলে, মদ খায়, বিভিন্ন মেয়েদের সাথে ঘুমায়, অশিক্ষিত এগুলো জানার পরও আপনি এসব কিভাবে সায় দিলেন?”
-” আরে ধুর বেক্কল মাইয়া, পোলা মানুষই তো এই বয়সে এসব করব। বিয়ার পর সব ঠিক হইয়া যাইবো। আর পোলা বেকার তো কি হইছে?? আমার দেবর তো আর নাহিদ নাদিয়ার জন্য কম রাইখা যায় নাই। ঐখান থেইকা ঐ পোলারে দিবি। ব্যবসা বানিজ্য কইরা খাইবো”। উনার কথা শুনে ইচ্ছা হচ্ছিলো উনাকে আমি উপর থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেই। উনাকে খুব জোরে চিৎকার করেই বললাম,
-” আপনার মাথা ঠিকাছে? আপনি কিবলছেন এসব? আপনার কি ধারনা আপনি আমাকে উল্টা-পাল্টা বুঝাবেন আর আমি আপনার কথা মেনে নিবো। আমি ওকে ঐ অসভ্য ছেলের হাতে তুলে দিবো? কখনোই না।”
-” ঐ মাইয়্যা নাদিয়ারে বিয়া দেওয়ার তুমি কেডা? আমি ওর বড় চাচী। বড় চাচী মায়ের চেয়েও বেশি। আমাগো মাইয়্যা আমার পছন্দে আমি বিয়া দিমু আর এই পোলার লগেই দিমু। এই ব্যাপারে তুমি নাক গলাইবা না”।
-” আমি আমার মেয়ের ব্যাপারে একশ বার নাক গলাবো। বরং আপনি গলাতে আসবেন না। আপনি শুধুমাত্র ওর নাম মাত্র চাচি। আজ পর্যন্ত আপনি ওর প্রতি কোন দায়িত্বই পালন করেন নি। ছোট থেকে আমি ওকে বুকে আগলে বড় করেছি। আমি ওর মা। ওর সব ডিসিশন আমি নিবো। অন্য কারো কোন অধিকার নাই ওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার। এমনকি নাহিদেরও না।”
-” ওরে আল্লাহ রে!!!! তা ম্যাডাম আপনে কবে থেইকা ওর মা হইলেন”?
-” যেদিন থেকে ওর মা আমাকে ওর মা হওয়ার অধিকারর দিয়ে গেছে”। এটা বলে আমি বের হয়ে গেলাম
(চলবে)
লেখা-মিম