#ননদ
পর্ব-৪+৫+৬+৭
৫ মিনিটের মধ্যে নাহিদ যা করল আর বললো তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে যা ঘটেছে তা কি সত্যিই ঘটেছে নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি। ও শুধু ওর বোনের দিকটাই দেখলো আমার সমস্যা গুলো বুঝতেই চাইলো না। মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আমি কি ওর কিছুই না? নাদিয়াই কি ওর সব?
নাহ্ এতো অপমানের পর এখানে আর থাকা সম্ভব না। আমি কোনো ফেলনা বস্তু না যে সব সহ্য করব। ব্যাগ প্যাক করে চলে এলাম বাবার বাড়ি। এত রাতে আমাকে দেখে আম্মা-আব্বা-ভাই সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া বললো-
” কিরে তুই এতো রাতে একা কেনো? নাহিদের সাথে কিছু হইসে?”
আমি জোরে জোরে কাঁদছিলাম আর সব কথা বলছিলাম। সব বলার পর দেখি এরা তিনজন এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি কতবড় অপরাধ করে আসছি। আব্বা-আম্মা দুজনই আমাকে কিছু বলতে যাচ্ছে এমন সময় ভাইয়া ওদের থামিয়ে বললো, ” অনেক রাত হয়েছে ও এখন ঘুমাক, আমরা কাল সকালে ওর সাথে কথা বলবো”।
সে রাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। রাতে পানি খাওয়ার জন্য উঠে দেখি ওরা তিনজনও ঘুমায়নি। পরদিন ভোরেই দেখি বড় আপা দুলাভাই বাসায় আসছে। বড় আপা আমাকে দেখা মাত্রই আমাকে জিজ্ঞেস করলো,” কি রে কি শুনছি এসব? তোর কি মাথা ঠিকাছে? একটা এতিম বাচ্চার সাথে তুই এমন করিস কিভাবে?”
– “দেখ আপা যা বুঝিস না তা নিয়ে কথাও বলিস না। আমার সমস্যা আমি বুঝি। তোরা কেউ বুঝিস না। ঐ মেয়ের জন্য আজকে আমার এই অবস্থা। ওর জন্য নাহিদ আমককে চড় মেরেছে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। ও কোন বাচ্চা না, ও একটা কালো ছায়া। ও যতদিন থাকবে আমি কখনোই সুখি হবো না”।
– ” এসব কি কথা বলছিস তুই? তোর চিন্তাধারা এতো খারাপ হলো কবে থেকে? আমরা তো তোকে এমন শিক্ষা দেইনি। এমন বাচ্চা দেখলে কার না মায়া হয়। তুই ওকে কখনো খেয়াল করে দেখছিস ও কত সুন্দর, কত মায়া ওর চেহারায়, ওর কথা শুনলে তো মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।ওর মতো বাচ্চা ঘরে থাকলে তো ঘরের পরিবেশ আপনা আপনি ভালো হয়ে যায় আর এমন বাচ্চাকে তুই কিনা কালো ছায়া বলছিস? ছিঃ তোর একটা বাচ্চাকে কালো ছায়া বলতে একটুও লজ্জা লাগে না?”
আপার সাথে আব্বা দুলাভাইও বলেই যাচ্ছিলেন। আপার পরে আম্মা শুরু করলো-
” আসলে কি জানিস নাহিদ যা করছে উচিত করছে। তোকে একটা না আরও ৫-৬টা লাগানো উচিত ছিলো। অন্য আরেকজনকে বিশ্বাস করে নিজের সন্তানের দায়িত্ব দেয়া মানে বুঝিস? যদি বুঝতে পারতি তাহলে এসব কাজ করতে পারতি না”। আম্মাকে থামিয়ে ভাইয়া বললো,
– ” আম্মা তুমি কাকে কি বলছো? তুমি ওর কথা শুনে বুঝতে পারছো না ও যে আর মানুষের পর্যায়ে নেই, ও অমানুষ হয়ে গেছে। মানুষকে বোঝানো সম্ভব, অমানুষকে না। শুধু শুধু ওর কানের কাছে এসব বলে লাভ নেই সময় নষ্ট হবে”
ওর এই কথা শুনে সবাই চলে গেলো। আমার এতো কষ্ট হচ্ছিলো ভাইয়ার কথা শুনে যে ভাই আমাকে এত আদর করে সে আমাকে বলে আমি নাকি অমানুষ। তখন সত্যিই মনে হচ্ছিলো আমি ফেলনা বস্তু। আমার ঘরের মানুষের কাছেও আমার দাম নেই। সেদিন আম্মাকে আমি গোটাদিনটাই কাঁদতে আর একা একা কথা বলতে দেখেছি। কারনটা ছিলো আমি অমানুষ হয়ে গিয়েছি আর নাদিয়াকে নাকি আমি যন্ত্রনা দিচ্ছি।
সন্ধ্যার দিকে নাহিদ আমাদের বাসায় আসলো আমাকে নিতে। আমি ভেবেছিলাম ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারছে না তাই নিতে আসছে। সে আমার ভুল ভাঙিয়ে বলে উঠলো-
” নাদিয়া কাল সারারাত ঘুমায়নি। তোমাকে ছাড়া নাকি ওর ঘুম আসেনা। আজকে সারাদিন পানি ছাড়া কিছুই খায়নি। তোমাকে ছাড়া ও কিছু খেতে চাইছে না। সারাদিন কান্নাকাটি করেছে। প্লিজ তানহা বাসায় চলো। তুমি না গেলে বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে যাবে”। ওর কথা শুনে পায়েররক্ত মাথায় উঠে গেলো। চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
-” বাহ্ ভালোই তো তোমার বোনের প্রয়োজন তাই আমাকে নিতে আসছো। আমাকে তোমার প্রয়োজন নাই। তুমি কি আমাকে তোমার বোনের কেয়ারটেকার পাইসো নাকি? যাবো না আমি। ওর জন্য আমার জিবনটা জাহান্নাম হয়ে গেছে। ও কি খেলো না মারা গেলো ওসব নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নাই। বোনের জন্য এত দরদ লাগলে আরেকটা বিয়ে করে ঐ বউ কে তোমার বোনের কেয়ারটেকার বানাও। আমার সাথে এসব ফাযলামি চলবে না।”
এসব বলে আমি আমার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আমি যখন ওকে এসব বলছিলাম তখন ওর চোখে পানি ছলছল করছিলো। এর ৮-১০ মিনিট পর ও বের হয়ে গেলো। রুমে বসে ভাবছিলাম এই ৮-১০ মিনিটে আমার ঘরের লোকজন আর নাহিদ মিলে আমার নামে কি কি বলতে পারে। সেদিন আমি আর রুম থেকে বের হয়নি। পরদিন সকালে দরজা খুলে দেখি নাদিয়া আমার রুমের দরজার সামনে ফ্লোরে বসে আছে…..
(চলবে)
লেখা- মিম
#ননদ
পর্ব-৫
এত সকালে ওকে হঠাৎ দেখে মনে হচ্ছিলো আমি ভূত দেখছি। দরজা খোলার সাথে সাথেই ও উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আম্মা বললো,
” সকাল ছয়টায় নাহিদের সাথে আসছে। বিগত দেড় ঘন্টা যাবৎ ফ্লোরেই বসে আছে। বললাম রুমে গিয়ে বসো। ও বললো তোর জন্য এখানে আসছে, তোর রুমেই বসবে। অন্য কোথাও যাবেনা”।
ও আমাকে টেনে খাটে নিয়ে বসালো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে ও যা বললো তা মনে হলে আমার এখনও চোখে পানি আসে। ও কেঁদে কেঁদে বলেছিলো-
” ভাবী, আমি তোমাকে খুব বিরক্ত করি তাই না। তুমি আমার উপর রাগ করেছো। আমি আর কখনো তোমার গায়ের ওড়না আঙুলে পেঁচিয়ে হাঁটবো না। আমি বুঝতে পারিনি তোমার এভাবে হাঁটতে অসুবিধা হয়। আমি তো আগে আম্মুর আঁচল ধরে হাটতাম। আম্মু তো বলে গিয়েছিলো তুমিই নাকি আমার মা এখন থেকে। তাই তোমাকে আম্মু মনে করে তোমার ওড়না ধরে ঘুরতাম। আমি আর এমন করব না। তুমি তোমার অন্য একটা ব্যবহার করা ওড়না দিও আমি ঐটা গায়ে পেঁচিয়ে হাটবো। আমার জন্য তোমাকে আর সকালে উঠতে হবে না। আমি ভাইয়াকে বলছি ও আমাকে সকালের নাস্তা কিনে দিবে। তোমাকে আর স্কুলে বসে থাকতে হবে না। আমি তো এখন আর ছয় বছরের বাবু না আমার এখন সাত বছর হয়ে গেছে। সাত বছরে মেয়েদের ভয় লাগে না। আর যদি লাগে তাহলে তোমার ওড়নাটা নিয়ে বসে থাকবো। আমাকে ভাত খাইয়ে দিতে হবে না। তুমি শুধু ভাতটা মেখে দিও তাহলেই হবে। আমি নিজেই খেয়ে নিবো। আমি তোমার মাঝেও ঘুমাবো না। অন্য রুমে ঘুমাবো। যদি বেশি ভয় পাই তুমি তোমার দরজাটা খোলা রেখো আমি আস্তে করে তোমার ফ্লোরে এসে বালিশের নিচে মাথা দিয়ে ঘুমাবো, যাতে তোমার ঘুমের কোন সমস্যা না হয়। আমি আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করবো না। আম্মু তোমাকে দিয়ে নিজে ঘর থেকে চলে গেছে। তুমিও আমাদের ঘর ছেড়ে দিও না প্লিজ। তুমি না থাকলে ভাইয়া আর আমি খুব কষ্ট পাই। একটুও ভালো লাগে না। তুমি জানো ভাইয়া দুদিন খুব কেঁদেছে। আমিও কেঁদেছি। আর কাঁদতে পারছি না, চোখ খুব ব্যাথা করছে। বাসায় চলো, আমরা তোমাকে নিতে আসছি। আমার সাথে আর রাগ করো না চলো আমরা ভাব করে ফেলি।”
আমি এতক্ষন অবাক হয়ে ওর কথা শুনছিলাম। সাত বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে এত ঘুচিয়ে কিভাবে বলতে পারে। ও আমাকে শুধু বাসায় নেয়ার জন্য এতকিছু sacrifice করছে আর আমি এই মেয়েটাকে কতকিছুই না বলেছি। আমার দুচোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছিলো। আমি কি অনুশোচনায় কাঁদছিলাম নাকি কষ্টে কাঁদছিলাম আমি জানিনা। ঘরের সবাই কাঁদছিলো। আমার ভাইয়ও। যার চোখে হাজার কষ্টেও আমি পানি দেখিনি সে ভাই কাঁদছে। নাহিদ এসে আমার হাতটা ধরে শুধু “প্লিজ তানহা”…. বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আম্মা আমার মাথায় এসে হাত বুলালেন। উনার তাকানো দেখে বুঝলাম যে শুধুমাত্র আম্মাই বুঝতে পেরেছেন যে আমি আসলে কেনো কাঁদছি।
নাদিয়া ওর হাতের বুঁড়ো আঙুলটা আমার দিকে বাড়িয়ে বললো, আসো না ভাবি আমরা ভাব করি……..
(চলবে)
লেখা-মিম
#ননদ
পর্ব-৬
আমিও নাদিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। নাহিদ এ দৃশ্য দেখে আমাদের দুজনকে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো। আমরা নাস্তা করে আমাদের বাসার দিকে রওনা হলাম। গাড়িতে উঠার পর নাদিয়াকে দেখলাম ও ড্রাইভারের পাশে বসেছে। আমি ওকে ওখান থেকে বের করে আমার কোলে এনে বসালাম। ও যে সেদিন কি পরিমান খুশি ছিলো সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। রাস্তায় জ্যামে আটকে ছিলাম। একজন ফকির আসলো ভিক্ষা চাইতে। ও নাহিদেরর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফকিরের হাতে দিয়ে বললো, ” আংকেল আপনি জানেন আজকে আমার আম্মু বাসায় ফিরে যাচ্ছে। এ কথা বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বললো, ওহ সরি সরি আম্মু না ভাবি ফিরে যাচ্ছে।” আমি খুব বুঝতে পারছিলাম ও আমার শ্বাশুড়ি আর আমাকে আলাদা নজরে দেখে না। আচ্ছা ও আমাকে মা হিসেবে দেখে কেনো? আমি তো ওর জন্য তেমন কিছুই করিনি। এগুলো ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ গাড়ির লুকিং গ্লাসের দিকে পড়লো। সেখানে ওর মুখটা দেখা যাচ্ছিলো। আসলেই তো অনেক সুন্দর। খুব মায়া ওরর চোখগুলোতে। আচ্ছা আমি এতোদিন কেনো খেয়াল করিনি।। ওকে দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই ওর মাথায় চুমু দিলাম। নাহিদ আর নাদিয়া দুজনই আমার দিক তাকিয়ে ছিলো। নাহিদের চোখে অন্যরকম এক স্বস্তি দেখতে পাচ্ছিলাম। নাহিদ আমার কাছে এসে সে আমার কপালে চুমু খেলো। মনে অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিলো। বাসায় আসার পর নাদিয়া তার দেওয়া কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চাইলো। কিন্তু আমি তা হতে দেইনি। আস্তে আস্তে বলতে গেলে আমি ওর প্রতি Addicted হয়ে গিয়েছিলাম। ওর হাসি, তাকানো, আহ্লাদ, ওর প্রতিটা কাজের প্রতি আমার নেশা হয়ে গিয়েছিলো। শুধু আমি না আমার যে বান্ধবি ওকে দূরে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলো সেও নাদিয়ার সবকিছুর প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। ও আমাকে ফোন করলেই প্রথমে নাদিয়ার কথা জিজ্ঞেস করতো। আমার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সবাই ওর জন্য পাগল ছিলো। ওকে না খাইয়ে দিলে, ও আমার ওড়না ধরে না হাঁটলে, ওকে না ঘুম পাড়িয়ে দিলে আমার শান্তি লাগতো না। ও আমাকে নিজের অজান্তেই প্রায়ই মা বলে ডেকে ফেলতো। নাহিদ কখনোই নাদিয়ার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতো না। সব আমার উপর বিশ্বাস করে ছেড়ে দিয়েছিলো। ও এতোদিনে আশ্বস্ত হয়েছিলো যে আমি কখনোই নাদিয়ার ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিবো না।
দেখতে দেখতে নাদিয়া বড় হচ্ছিলো। ও ক্লাস এইটে উঠার কিছুদিন পর আমি জানতে পারলাম আমি প্রেগনেন্ট………..
(চলবে)
লেখা- মিম
#ননদ
পর্ব-৭
এতো বড় খুশির সংবাদ পাওয়া সত্ত্বোও আমি খুশি হতে পারছিলাম না এই ভেবে যে নাদিয়া বিষয়টা কিভাবে নিবে। ও আবার এটা মনে করবে না তো আমার নিজের সন্তান আসলে ওর আদর কমে যাবে, আমি ওকে দূরে সরিয়ে দেবো। এই চিন্তায় আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। আমি কাউকে এই কথাটা জানাই নি। দিনশেষে নাদিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
” কি ব্যাপার সারাদিন ধরে দেখছি এতো চুপচাপ। কোন সমস্যা ভাবী?”
আমি চিন্তা করে দেখলাম ওকে বুঝিয়ে বললে ও ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে। ওকে বললাম-
” আসলে নাদিয়া তোকে নিয়ে একটা চিন্তায় আছি। আজকে সকালে ডাক্তার ফোন দিয়ে বলেছে আমি নাকি প্রেগনেন্ট। তুই হয়ত এখন মনে করবি আমি তোকে দূরে সরিয়ে দেবো। কিন্তু বিশ্বাস কর নাদিয়া এই ব্চ্চার জন্য তোকে আমি দূরে সরিয়ে দিবো না। তোর যত্নের কোন অভাব রাখবো না। তুই এখন আমার নজরে যেমন আছিস ঠিক তেমনই থাকবি। তোদের দুজনকে আমি সমান নজরে দেখবো। প্লিজ তুই কোন বাজে ধারনা করে মন খারাপ করিস না।”
ও কিছুক্ষন খুব শান্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
” তুমি কি জানো আজকে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির খবরটা পেয়েছি। কিন্তু তোমার পরের কথাগুলো শুনে আমার খুশি প্রকাশের আগ্রহই পাচ্ছি না। তুমি আমাকে যতটা স্বার্থপর মনে করো ততটা স্বার্থপর আমি না। আর তুমি কিভাবে চিন্তা করলে একটা বাচ্চাকে আমি আমার কম্পিটিটর মনে করব? তুমি আমাকে আদর করবে না সে চিন্তা আমি করিনা। কারন তোমার কাছ থেকে আদর আদায় করার কৌশল আমি ছোট থেকেই জানি।”
ওর কথাগুলো শুনে স্বস্তি ফিরে পেলাম। ও এই খবরটা ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমার বাবার বাসায়, নাহিদকে, আত্মীয়-বন্ধু সবার কাছে ফোনে বলে দিলো। ওর চোখে মুখে যে কি পরিমান খুশি যে দেখতে পাচ্ছিলাম সেটা কাউকে বোঝাতে পারবো না। যেদিন ওর সাথে আমার ভাব হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি খুশি ও সেদিন হয়েছিলো। নাহিদ রাতে বাসায় আসার পর দুই ভাইবোন মিলে গলায় জড়াজড়ি করে খুশিতে কান্না শুরু করলো। নাহিদও অসম্ভব খুশি ছিলো সেদিন। দুই ভাই বোন মিলে আমাকে নিয়ে সেদিন রাত ১টা পর্যন্ত প্ল্যানিং করেছে। আমি কি করলে পরিপূর্ন সুস্থ থাকবো, টেনশন ফ্রি থাকবো, আমার উপর কোন প্রেশার পড়বে না, কিভাবে খুশি থাকবো, কোন ডাক্তার আমার জন্য বেস্ট হবে এইসব। পরেরদিন থেকে নাদিয়া হয়ে গেলো আমার মা আর আমি ওর মেয়ে। যে নাদিয়ার সবকিছু আমি দেখাশুনা করতাম সে নাদিয়া আজ আমার সবকিছু দেখাশুনা করে। মনে হচ্ছিলো আমার শ্বাশুড়ি ওর হাতে আমাকে তুলে দিয়ে গেছেন। ও আমাকে একটা কাজও করতে দিতো না। একটা কাপড় পর্যন্ত আমাকে ভাঁজ করতে দিতো না। বাসায় আগে একটা বুয়া ছিলো, তবুও আমার সুবিধার জন্য নাহিদকে বলে নাদিয়া আরেকটা কাজের বুয়া রাখলো। দু সপ্তাহ পরে একদিন গেট খুলে দেখি আম্মা বড় একটা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে সাথে নাদিয়া দাড়িয়ে আছে। আম্মা ঘরে ঢুকছে আর বলছে –
” এই মেয়ে আমাকে জোর করে নিয়ে আসছে।”
-” মানে কি”? (আমি)
-” নাদিয়া ঘরে ঢুকেই বলে, আন্টি ব্যাগ প্যাক করেন। আমি আমি আপনাকে নিতে আসছি। বেশি করে কাপড় নিবেন। ভাবির ডেলিভারি পর্যন্ত ওখানেই থাকতে হবে আপনাকে। আমি ওকে বললাম, মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতে আমি এতদিন থাকলে মানুষ কি বলবে? তার চেয়ে ভালো হবে ওকে আমার এখানে দিয়ে দাও, ডেলিভারি পর্যন্ত এখানেই থাকবে। এই মেয়ে বলে কি না আমি আমার ভাবি কে এখানে আসতেও দিবোনা আর আপনাকে না নিয়ে আমি বাসায়ও ফেরত যাবো না। কেমন মা আপনি? আপনার মেয়ের এখন আপনাকে দরকার আর আপনি যেতে চাচ্ছেন না। তোর ননদ বলতে গেলে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসছে”।(আম্মা)
-“তুলে নিয়ে আসবো না তো কি করব? আপনি আপোষে আসতে চান নাই তাই জোর করে নিয়ে আসছি”(নাদিয়া)
নাদিয়া আমার এত যত্ন করে সেটা আম্মাও খেয়াল করলো। রাতে আম্মা ওকে বললো-
” তুমিই তো মায়ের দায়িত্ব পালন করছো। তুমি থাকতে আবার আমাকে নিয়ে আসলে কেনো? তোমার কাছে আমি আমার মেয়েকে চোখ বন্ধ রেখে বিশ্বাস করে দিয়ে যেতে পারি”।
কি অদ্ভুত তাই না??? একদিন ওর মা আমার হাতে ওকে তুলে দিয়েছিলো আর আজ আমার মা ওর হাতে আমাকে বিশ্বাস করে তুলে দিচ্ছেন।
খুব ভালো যাচ্ছিলো দিনগুলি। নিজেকে তখন আমার রাণীর মতো মনে হতো। ঘরের সবাই অপেক্ষায় ছিলো কবে বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসবে।
আমার যখন সাড়ে সাত মাস চলছিলো তখন একদিন চেকআপ করানোর জন্য ডাক্তারের কাছে যাবো। আমি বাসার সিড়িঁ দিয়ে নিচে নামছিলাম। নাদিয়াও আমার পিছনে আসছিলো। এমন সময় নাহিদ ঘর থেকে হয়েছে নিচে গিয়ে গাড়ি বের করবে। নাহিদ কখনোই সিঁড়ি আস্তে ধীরে নামতো না। দৌড় দিয়ে নামতো। ওকে ঘর থেকে বের হতে দেখেই নাদিয়া ওকে বললো ভাইয়া একটু আস্তে নেমো……
(চলবে)
লেখা-মিম