নতুন ভোরের আগমন পর্ব-১১

0
890

#পর্ব১১
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত

ফ্লোরে জায় নামাজেই ঘুমিয়ে রয়েছে ইনসিয়া! ঘুমন্ত মুখশ্রীকে কেমন মায়াবী আভা ফুটে ওঠেছে। যেনো পৃথিবীর সকল মায়া এই মুখশ্রীতে। আলতো করে ছুঁয়ে দেবার ইচ্ছে হলো ওই মায়াবী মুখশ্রী! কিন্তু পরক্ষনেই মস্তিষ্কে উদয় হলো মেয়েটি তার সাথে প্রতারণার করেছে! পরমুহূর্তেই মুখশ্রী ছুঁয়ে দেবার ইচ্ছের বদলে এক রাশ ঘৃনা এসে উপস্থিত হলো মনের কোঠরে! ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে জানান দিচ্ছে বেলা দশটা বেজে গেছে! রিহানের বোধগম্য হলো না সে এতো ঘুম কি করে ঘুমালো! এক মুহুর্ত দেরি না করেই সেখান প্রস্থান করলো রিহান! ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইনসিয়া আগের ন্যায় শুয়ে রয়েছে। ইনসিয়াকে ঘুম থেকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করলো রিহান। ইনসিয়ার নাম ধরে পরপর চার বার ডাক দিলো। কিন্তু ডাকার পরেও ইনসিয়ার কোনো হেল দোল নেই। মনেই হচ্ছে রিহানের কথা তার কর্নকুহরে গিয়ে পৌঁছোয়নি এখনো। আর একবার বেশ জোরে শোরেই ডাক দিলো রিহান ইনসিয়াকে। এবারের ডাক শুনে ঘুম থেকে ধরফরিয়ে ওঠে বসলো! সামনে রিহানকে দেখে হতভম্ব হলো। বুঝতে পারলো না হঠাৎ করে রিহান এখানে বসে আছে কেনো? বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো,

–“আপনি এখানে এভাবে আমাকে ডাকছেন কেনো? কোনো কিছু প্রয়োজন আছে?”

ইনসিয়ার কথা শুনে রিহান আপাদমস্তক ইনসিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত দিলো। শ্যামবর্নের মুখশ্রী টি কেমন যেনো মলিন হয়ে গেছে। চোখ দু’টি লাল বর্নে ধারন করেছে! বোঝা যাচ্ছে রাত্রে ঘুমোয়নি ভালো করে। গলার স্বর কেমন ভারী লাগছে নির্ঘাত ঠান্ডাও লেগেছে। কিন্তু রিহান ইনসিয়াকে সে সম্পর্কে কিছু জিগেস করলো না কারন রাত্রে ইনসিয়াকে বলার পরেও ইনসিয়া যখন কথা শুনে তাহলে এখন আর কোনো কিছু জিগেস করা অর্থহীন মনে হলো রিহানের কাছে। রিহানের ভাবনার মাঝেই ইনসিয়া আবারো প্রশ্ন করলো, “কিছু বলছেন না যে?”

রিহানের টনক নড়লো সে ইনসিয়ার দিকে দৃষ্টি নত করে বলে ওঠলো,

–“ঘড়িতে চেয়ে দেখো দশটা বেজে গেছে। অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে আমার মনে হলো তোমাকে ডাকা দরকার তাই ডেকেছি।”

ইনসিয়াও ঘড়িতে দৃষ্টিপাত করলো সত্যিই সূর্য্য এতোক্ষণে মাথার উপরে ওঠে গেছে। রিহানকে কিছু না বলে দেরি না করে তড়িঘড়ি করে ওঠে পড়লো। ইনসিয়া। ওদিকে রিহান ইনসিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। কিয়ৎক্ষন পূর্বেই ইনসিয়া ফ্রেশ হয়ে বেরোলো। রিহানকে বললো,

–“নিচে চলুন বাবা মা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে খাওয়ার জন্য বসে আছেন আমাদের জন্য। আর আপনারো নিশ্চয়ই ক্ষিদে পেয়েছে তাই চলুন তাড়াতাড়ি।”

— রিহানকে কিছু বলতে না ইনসিয়া নিজে নিজেই চলে গেলো নিচে! রিহান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভেবে কূল পায় না মেয়েটি এমন কেনো? সবকিছুতেই রিহানের প্রতি খাপছাড়া ভাব। আর কোনো কিছু না ভেবেই রিহানও ইনসিয়ার পিছন পিছন নিচে চলে গেলো। নিচে গিয়েই দেখতে পেলো ইনসিয়ার বাবা টেলিভিশন দেখছে। ইনসিয়ার মা রান্নাঘরে কাজ করছে হয়তো কাজ শেষ হয়নি এখনো অব্দি। ইনসিয়ার বড়ো ভাইকে দেখা গেলো না নিচে। হয়তো এতোক্ষণে অফিসে চলে গেছে সে। রিহান নিচে যেতেই ইনসিয়ার বাবা তাকে বসতে বললেন। রিহান সালাম দিয়ে বসলেন। ইনসিয়ার মা ডাইনিং টেবিলে সবাইকে ডাকতে লাগলেন। রিহান ডাক শুনে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো। দেখলো তার সাথে সাথে ইনসিয়ার বাবাও খেতে বসলেন। বুঝতে বেগ পেতে হলো না তাদের জন্যই এতো বেলা অব্দি ইনসিয়ার বাবা না খেয়ে রয়েছেন। রিহান ব্যাপারটা বুঝেও কোনো কথা না বলে নিশ্চুপ ভাবে খেতে লাগলো। ইনসিয়ার মা’ও বেশ খাতির দারি করেই রিহানতে খাওয়াচ্ছে। রিহানের খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে যখন টেবিল থেকে ওঠবে ঠিক সেই মুহুর্তেই তার পকেটে থাকা মুঠোফোনটি বেজে ওঠলো। রিহান ফোন ধরেই দাঁড়ানো থেকে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো! ইনসিয়ার বাবা, মা, ইনসিয়া প্রত্যেকে বুঝতে বেগ পেতে হলো না যে ফোনে এমন কিছু বলা হয়েছে যেটা পেয়ে রিহান শকড্। ইনসিয়া কৌতুহল দমাতে না পেরে রিহানকে জিগেস করলো,

–“আপনার কি হয়েছে? এরকম ভাবে বসে পরলেন যে?”

মলিন দৃষ্টি মেলে ইনসিয়ার দিকে তাকালো রিহান। অস্ফুট স্বরে ইনসিয়াকে বললো,

–“বাবা একটু হার্ট অ্যাটাক করেছে! হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

ইনসিয়া আর কাল বিলম্ব না করে রিহানের সাথে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। সাথে পুরো পরিবারও গেলো। রিহানকে কেমন যানি এলোমেলো লাগছে! হয়তো বাবাকে বড্ড বেশিই ভালোবাসে।

———————————————————

করিম চাচা কে এভাবে কাঁদতে দেখে ইনশাদের মনে ভয়ের উদয় হলো। সে জিগেস করলো,

–“করিম চাচা আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো? কি হয়েছে আমাকে সবটা খুলে বলুন? বাড়ির সবাই কোথায়?”

করিম চাচা ইনশাদের কথা শুনে নিরবে মাথা নিচু করে অশ্রু বির্সজন দিতে লাগলো। মাথা নতো করে বললো,

–“ইনশাদ বাবা বড়ো সাহেব সকালে একটু আগে হার্ট অ্যাটাক করেছে। হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তাকে। সবাই মিলে হাসপালেই আছে। আমি যাইনি কারন এখন রান্না করে সবার জন্য নিয়ে যেতে হবে। সকাল বেলা কিছু খাবার আগেই হঠাৎই এই অঘটন।”

ইনশাদের চোখ বেয়ে দু -ফোঁটা অশ্রু নির্গত হলো! যাকে বড়ো বাবা বলে ডেকেছে এতোদিন সেই মানুষটার এতো বড়ো বিপদে সে পাশে থাকতে পারলো না! কালবিলম্ব না করে ইনশাদ করিম চাচার থেকে হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

____________________________________

ইনশাদ হাসপাতালে ঢুকেই দেখতে পেলো সবাই চেয়ারে বসে আছে মুখ মলিন করে! সকলের মুখ দেখেই বোঝাই যাচ্ছে কতোটা চিন্তিতো সবাই। তার বড় মা দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর কাঁদছে! ইনশাদের ভেতরে এক অজস্র ঝড় বয়ে গেলো! পৃথিবীতে এই দু’টো মানুষেরই কষ্ট সহ্য করতে পারে না সে। অথচ তার ভিতরে একজনই হাসপাতালে ভর্তি আর অপর জন কাঁদছে। ইনশাদ গিয়ে মিতালী রহমান কে বড়ো মা বলে ডাক দিলেন। মিতালী রহমান পিছন ঘুরে ইনশাদকে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো!

–“তুই বড্ড দেরি করে ফেলেছিস ইনশাদ! দেখ না তোর বড়ো আব্বু কীরকম শান্তিতে বেডে শুয়ে রয়েছে আর আমাদের সকলকে চিন্তায় ফেলে রেখেছে।”

–“বড়ো মা তুমি চিন্তা করো না। বড়ো আব্বু ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে। আমি ভেবেছিলাম আচমকা দেশে এসে তোমাদের সারপ্রাইজ দিবো কিন্তু ভাবিনি আমিই এভাবে সারপ্রাইজড্ হয়ে যাবো।”

–“হ্যাঁ তোর বড়ো আব্বু খুব করে চাইতেন তুই দেশে আসবি। তার ইচ্ছেও ছিলো রিহান আর তোকে একসাথে বিয়ে করাবে কিন্তু তোর সময়ের প্রয়োজন ছিলো বলে দেশে আসলি না। কিন্তু এখন যখন এলি দেখ তোর বড়ো আব্বু শুয়ে রয়েছে শান্তিতে।”

ইনশাদ আর কোনো কথা বললো না। সে চুপ করে রইলো। বুঝতে বেগ পেতে হলো না তার মিতালী রহমান একটু বেশিই ভেঙে পড়েছে। সে মিতালী রহমানকে সান্তনা দিতে লাগলো। এক পর্যায়ে হাসপাতালে ঢোকার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রযেছে ইনশাদ। কেনো যানি পুরনো ক্ষতো খুব পোড়াচ্ছে।

রিহান অতি দ্রুত ড্রাইভ করে হাসপাতালে চলে এলো। হাসপাতালে এসেই তড়িঘড়ি করে মিজানুর রহমানের কেবিনের দিকে পাগলের মকন ছুটতে লাগলো। রিহানের পিছু পিছু ইনসিয়ার বাবা মা-ও গিয়েছেন। ইনসিয়া ভেতরে ঢুকবে এমন সময়ই কারো সাথে ধাক্কা খায়। বিপরিত মানুষটিকে দেখে ভয়ংকর অতীত ভেসে ওঠলো চোখের সামনে। ইনসিয়া চোখ মেলে ভালো করে দৃষ্টিপাত করতেই মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসলো “তুমি এখানে?”

ইনশাদ ইনসিয়াকে দেখে চমকে গেলো! সে কোনোমতেই আশা করেনি ইনসিয়া এই মুহুর্তে এখানে আসবে। একটু আগে যার জন্য হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্ট হচ্ছিলো এখন সেই মানুষটিই তার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে! এখন হৃদয়ে সেই সৃষ্ট ক্ষতো ঝড়ে পরিনত হয়েছে। ইনশাদ বলে ওঠলো “তুমি এখানে কি করছো?”

ইনসিয়ার ভেতরে এক অজানা ভয় কাজ করছে ইনশাদকে দেখে! ইনশাদের সাথে কথা বলতে চোখে মুখে স্পষ্ট জড়তার ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইনসিয়ার ইনশাদের প্রশ্নে কোনো কিছু না ভেবেই উওর দিলো

–“আমার শশুর মশাই হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আজকে তাকেই দেখতে এসেছি।”

কথাটি শোনা মাএই ইনশাদের……
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে