#পর্ব৯
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
গগনজুরে বাষ্পরাশির আনাগোনা দেখা দিচ্ছে। যেনো এখনি বাষ্পগুলো বৃষ্টির আকার ধারন করে ঝুমঝুমিয়ে নেমে পড়বে ধরনির বুকে! মুহুর্তের মধ্যেই গগন জুরে নেমে আসলো অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত! রাস্তাঘাট বৃষ্টি বর্ষনে ধুইয়ে দিচ্ছে! মুন রাস্তার ফুটপাতের ছাউনিতে ঠায় দাড়িয়ে রইলো বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায়! কিন্তু যেভাবে বৃষ্টি বর্ষন বর্ষিত হচ্ছে মনে হয়না সহসা থামবার নাম নিবে। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই একটা বিশ্রী গন্ধ এসে লাগলো মুনের নাকে! এই গুন্ধের সুএপাত খুঁজতে মুন পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো তিন চারজন ছেলে মিলে তাদের হাতের মুঠোয় কি জানি ধরে রেখেছে! মুনকে দেখে তারা সিগারেট খেতে লাগলো হাতের মধ্যে থাকা গন্ধ আসা জিনিশটাকে বিদ্যমান রেখে! সেই মুঠোতে পুরা জিনিস টা যে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না মুনের পরিস্থিতি সন্দেহজনক দেখে মুন হাঁটা লাগায় ওখান থেকে বের হবার উদ্দেশ্য! কিন্তু তখনি একটা গাড়ি এসে থামে ঠিক মুনের সামনে এসে! গাড়ি থেকে একটা লোক বেড়িয়ে আসলো ফর্মাল জামাকাপর পড়ে! চোখের মধ্যে সানগ্লাস পড়ে থাকায়। মুন লোকটিকে চিনতে বেগ পেতে হলো না। লোকটি আর কেউ না লোকটি হলো নয়ন ইনসিয়ার বড়ো ভাই।
–“মুন তুমি এই খানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো এভাবে?”
–“ভাইয়া আসলে আমি আপনাদেরই বাসায় যাচ্ছিলাম ইসিয়ার সাথে দেখা করতে। তখন ইনসিয়ার শশুড় বাড়ি গিয়েছিলাম কিন্তু বাসা থেকে ফোন আসায় ভালো মতন কথা না বলেই চলে গেছিলাম তখন। এখানে একজনকে টিউশনি পড়াইতো ভাবলাম একটু ইনসিয়ার সাথে দেখা করে যাই। কিন্তু দেখুন গাড়ির জন্য ওয়েট করতে করতে বেশ খানিকটা রাত হয়ে গেলো! তাই ভাবছি এখন বাসায়ই চলে যাই। কিন্তু এখন দেখুন বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাই আবারো গাড়ির জন্য ওয়েট করছি এই বৃষ্টি দিয়ে তো হেঁটে হেঁটে যাওয়া যাবে না বলুন? তাই অপেক্ষা করছি।”
–“অহ্ তাহলে চলো আমি তো এখন বাসায়ই যাচ্ছি অফিসের কাজ সেড়ে তুমিও আসো আমার সাথে আমাদের বাড়িতে আজকে রাএে বেলা না হয় থেকে যেও।”
–“না, না ভাইয়া বাসায় আজকে যেতেই হবে। বললাম না আম্মু অসুস্থ তাকে বাসায় রেখে আমি কি করে আপনাদের বাড়িতে যাই বলুনতো? অন্য একদিন যাবো নে আমি বরং এখন চলে যান খামোখা আপনার দেরি হচ্ছে।”
মুনের কথা শুনে নয়নের আনন্দে ভরা মুখশ্রীটি এক নিমিষেই মলিন বর্নে ধারন করলো। হয়তো সে যা চেয়েছিলো সেটা পেলো না তাই। কিন্তু তখনি মস্তিষ্কে সুচিন্তার উদয় হতেই সাথে সাথে মুনকে বলতে লাগলো,
–“বেশ তাহলে তুমি বরং গাড়িতে ওঠো আমি তোমাকে নামিয়ে দিচ্ছি। ইনসিয়ার সাথে না হয় তুমি কাল দেখা করে নিও।”
মুনের কিঞ্চিত সন্দেহ তৈরী হলো মনে! নয়ন ভাই কেনো বারবার তাকে তার গাড়িতে ওঠতে বলছে! সন্দেহের ভিওিতেই মুন উওর দিলো,
–“আপনি ব্যস্ত হবেন না। আপনি বাড়িতে যান আমি ঠিক রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যাবো।”
–“বাড়ি তো আমি যাবই। কিন্তু তুমি ভেবে দেখো এখন এই বৃষ্টি ময় রাত্রে তুমি কিন্তু রিক্সা বা অন্য কোনো গাড়ি সহসা পাবে না। অপরদিকে তোমার পিছনের ছেলে গুলোকে দেখেছো তো? এরপরেও এতো রাত্রে এই বৃষ্টি দিয়ে এখানে এই বখাটে ছেলেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইছো তুমি। ধরো বৃষ্টি যদি আরো জোরে আসে কোনো বিপদ হলে কি করবে তখন তুমি?”
নয়নের কথা শুনে ঘড়ির কাঁটায় চোখ বুলালো মুন। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে আর কিছুক্ষনের ভিতরেই ন’টা বাজবে। এই বার মুনের টনক নেড়ে ওঠলো! রাত্রি বেশ হয়েছে। সত্যিই তো বলেছে নয়ন। এখন এই এতো রাএে গাড়ি না পেলে কি করবে? আর ছেলেগুলোও তো ভালো না। সবদিক বিবেচনা করে মুন সিদ্ধান্ত নিলো নয়নের গাড়িতে ওঠবে। আর যাই হোক এভাবে এতো রাত্রে বৃষ্টি দিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা না করে নয়নের সাথে যাওয়াটাই ভালো। নয়নের ঠোঁটে দেখা দিলো অতি তীক্ষ্ণ হাসি। যেনো তার মনোষ্কামনা পূরন হলো এতক্ষনে!
ইনসিয়া রিহানের খাবারের প্রতি অস্বস্তি বুঝতে পেরে কোনো কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। রিহান খাবার নিয়ে আগের মতন নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে। রিহান মনে মনে ভাবছে মেয়েটা যেনো কীরকম অভদ্র! একজন তাদের বাড়িতে এসেছে তার খাওয়া নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথাই নেই! ইনসিয়ার মা তখন রিহানকে খাবারের দিয়েছিলো সেগুলোর ভিতরে অর্ধেকগুলোতেই রিহানের এর্লাজি আছে আর বাকি গুলো রিহান খায় না। কিন্তু কাউকে মুখের উপর বলতেও পারছে না ভদ্রতার খাতিরে। খাবার নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতে করতেই ইনসিয়া ঘরে এসে উপস্থিত হলো। সাথে করে প্লেটে কিছু নিয়ে এসেছে বোধহয়। ঢাকা দিয়ে রাখার কারনে রিহান বুঝতে পারছে না। ইনসিয়া রিহানের কোতুহলী মনোভাব টা বুঝতে পেরে বললো,
–“এতে চিকেন স্যুপ, নুডুলস আর সাথে একটু পায়েস আছে আপনি এগুলো খেতে পারেন। মায়ের আনা খাবার আপনার জোর করে খেতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনার এই খাবার গুলো খেতে অসুবিধা হচ্ছে।”
রিহানের মনে প্রশ্নেরা উঁকি দিতে লাগলো ইনসিয়ার কথা শুনে। ইনসিয়া এতোকিছু বুঝলো কি করে? মনের মধ্যে কৌতুহল চাপিয়ে রাখতে না পেরে ইনসিয়াকে প্রশ্ন করলো,
–“কিন্তু তুমি কি করে বুঝলে আমি এই খাবার গুলো খাই না? আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি তাহলে কি করে বুঝলে?”
–“আমি ওই বাড়িতে দেখেছিলাম দুপুরে আপনি ওসব খাবার খাননি আপনার জন্য আপনার মা আলাদা করে নুডুলস বানিয়ে দিয়েছিল। তাই আমিও আপনার জন্য স্যুপ আর নুডুলস বানিয়ে এনেছি সাথে পায়েস রেখেছি কারন যদি আপনার খেতে ভালো না লাগে তাই। যতোই হোক আপনাতে তো আর এই পুরো রাত না খাইয়ে রাখাতে পারি না। তাই চুপচাপ খেয়ে নিন এবার।”
রিহান আর কোনো কথা না বলে খেতে লাগলো। ইনসিয়াও চলে গেলো বাহিরে। বাহিরেও নয় বারান্দায় দাড়িয়ে আছে হালকা বৃষ্টির ফোঁটা এসে ইনসিয়ার নাকে মুখে এসে পড়ছে। ইনসিয়া বেশ আনন্দ নিয়েই বৃষ্টি বিলাস করতে লাগলো। ওদিকে নয়ন গাড়ি চালাচ্ছে আর মুনকে একটি প্রশ্ন করে বসলো!
–“মুন তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?”
মুন আনমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। নয়নের প্রশ্নে স্তম্ভিত হলো! ঘাড় ঘুড়িয়ে নয়নের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো নয়ন কেমন যেনো এক দৃষ্টি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে! মুনের বিষয়টি খটকা লাগলো। নয়ন কেনো হঠাৎ করে তাকে এরকম প্রশ্ন করে বসলো?
–“ভাইয়া হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করলেন কেনো?”
–“এমনি করলাম মনে হলো তাই। তুমি তো ইনসিয়ার সাথে ছোটোবেলা থেকেই আছো তাই জিগেস করলাম। তুমি অন্য ভাবে নিও না।”
মুন হাফ ছেড়ে বাঁচলো! সে যা ধারনা করেছিলো মোটেই তা সঠিক হয়নি। ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে মুন উওর দিলো,
–“ভালোবাসার সময়ই পাইনি বলতে পারেন। পরিবার পড়ালেখা, ইনসিয়া এর মাঝেই আমার ব্যস্ত সময় কেটে গেছে। কখনো কাউকে মনেও লাগেনি আর না কাউকে ভালোবেসেছি।”
মুনের কথা শুনে নয়ন বেশ খুশি হয়ে বোঝা যাচ্ছে। যেনো সে যা শুনতে চেয়েছিলো তাই শুনেছে। নয়ন মুচকি হেসে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিতে লাগলো।
রিহানের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। ইনসিয়া রান্নাঘরের কাজ কর্ম সেরে রুমে এসে দাঁড়িয়েছিলো ঠিক সেই মুহুর্তেই বিছানায় থাকা ফোনটি কেঁপে ওঠলো! জানা দিচ্ছে তার ফোরে কেউ কল করেছে। ইনসিয়া চোখ বুলিয়ে দেখলো অপরিচিতো নম্বর থেকে কল এসেছে। কোনো কিছু না ভেবেই ফোন কানে নিয়ে নিলো। হ্যালো বলতেই অপর ব্যক্তির গলা শুনে ইনসিয়া কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলো! যেনো পায়ের নিচের মাটি দু ভাগ হয়ে আসছে! ভাবনায়ও ছিলো দু বছর পর তার অতীত এসে হানা দিবে। ইনসিয়া অতীত মনে করতেই কান্নায় ভিজে গেলো গাল দু’টো। কোনো কথা না বলে ফোনটি বন্ধ করে দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে রইলো!
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।