#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (৫+৬)
অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,
“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিসনা,অনতি!””
অনিকশার কথায় অন্ত্রীশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। বেশ অবাক হয়েই বললো,
“” কেন,আপু? কি হয়েছে?””
অনিকশার ভীষন রাগ হচ্ছে! কেন হচ্ছে সে বুঝতে পারছেনা,কার উপর রাগ হচ্ছে এটাও বুঝতে পারছেনা। কিন্তু রাগটা অন্ত্রীশার উপর ঢালতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওর উপর ঢালাটা কি ঠিক হবে?? একটুও ঠিক হবেনা! অনিকশা নিজের রাগগুলোকে বড় করে ঢুক গিলে খেয়ে ফেললো। চোখ বন্ধ করে রাগী লুকটাকে ঢেকে নিয়ে শান্ত হয়ে বললো,
“” এটা কোনো বেনারশী হলো,অনতি? এতো বড় ঘরের ছেলে অথচ তার পছন্দ দেখ,কি নিচু? দেখে তো মনে হচ্ছে হাজার টাকাও হবেনা। এমন নিচু মনের ছেলে আমার বোনের হাসবেন্ড হবে? কিছুতেই না। তুই তো আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস। হ্যা তোর গায়ের রংটা আমার তুলনায় একটু কালো,কিন্তু অন্য সব দিক দিয়ে আমার থেকে এগিয়ে!””
অন্ত্রীশা আপুর কথায় এবার বেশ বিরক্ত হলো। সামান্য শাড়ী দেখেই বুঝে ফেললো পালকের মন নিচু? শুধু কালার আর দাম দেখেই সব কিছু বুঝা যায়? সে যে এটা নিজ থেকে পছন্দ করেছে এটা দেখলোনা? এটাতে যে তার স্পর্শ আর ভালোবাসা মিশে আছে। ইশ! আপুটা যে কেন ভালোবাসাগুলো দেখতে পাইনা। না অরিদ ভাইয়ার ভালোবাসা দেখতে পায়, না পালক ভাইয়ার! ছি! ছি!!ছি!!! উনি কি আমার ভাই লাগে নাকি? অনলি পালক!
অন্ত্রীশা পালক নামটা উচ্চারন করাতে লজ্জায় ঠোটদুটো নড়ে উঠছে। অনিকশা কপালটা কুচকিয়ে বললো,
“”তুই হাসছিস কেন? এমন ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে তোর হাসিটা কেমন লাগছে,জানিস?””
“” আপু ব্লাউজটা কেমন টাইট টাইট লাগছে! বোতাম খুলে যাবে নাতো?””
“” আমি তোকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলছি আর তুই কিনা বোতাম নিয়ে পড়ে আছিস? দেখি এগুলো সব খোল। অমন নিচু মনের মানুষের সাথে তোর বিয়ে হতে পারেনা৷ আমি বেঁচে থাকতে তো নাই।””
অনিকশা অন্ত্রীশার কাছে ঘেষে ব্লাউজে হাত দিতেই বললো,
“” আপু,তোমাকে খুব অশান্ত লাগছে। কি হয়েছে বলবে? তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?””
অন্ত্রীশার এমন কথায় অনিকশা ওর ব্লাউজ থেকে হাত সরিয়ে নিলো। কিছুক্ষন বোনের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে থেকে ওর বাহু চেপে ধরলো। ড্রেসিং টেবিলের কাছ থেকে টেনে নিয়ে অন্ত্রীশাকে ওর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে মেঝেতে হাটু ঘেরে বসেছে। অন্ত্রীশার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো,
“” এ বিয়েটা করিস না,বোন।””
“” কিন্তু কেন?””
“” কারন…. কার… পালক তোর থেকে বয়সে অনেকটা বড়!””
“” উফ! আপু মাত্র ৪ বছরের বড়।””
“” ৪ বছর তোর কাছে মাত্র মনে হচ্ছে? এটা অনেক বড়! এত বড় ছেলেকে তোর বিয়ে করতে হবেনা। আমি তোর জন্য ওর থেকেও ভালো ছেলে এনে দিবো।””
“” আপু,অরিদ ভাইয়াও তোমার থেকে ৪ বছরের বড়। তাহলে তুমি কেন অরিদ ভাইয়াকে বিয়ে করেছো? তুমি করতে পারলে আমি করতে পারবোনা?””
“” আমি আর তুই এক? আমিও তো তোর থেকে ৪ বছরের বড়। আমার থেকে তুই বেশি বুঝিস?””
অন্ত্রীশা এবার আপুর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে বললো,
“” এসব ছোটখাটো কারন দেখিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করার থেকে বিরত রাখতে পারবেনা। আমার আজকে তোমার কথা রাখতে ইচ্ছে করছে আপু,তুমি একটা বড় কারন দেখাও তাহলে আমি বিয়ে করবোনা,প্রমিস!””
অন্ত্রীশার কথায় অনিকশার মুখটা চুপসে গেলো। কি বলতে এসে কি বলছে সে? ভেতরের কথাগুলো আর কতদিন অন্ধকারে বন্দী করে রাখবে? এবারও কি সে মুক্তি দিতে পারবেনা??
অন্ত্রীশা বিছানা ছেড়ে উঠে আবার আয়নার সামনে দাড়ালো। ব্লাউজ আর পেটিকোটে নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে তাই দেখার জন্য। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভাবলো,খুবই বিচ্ছিরি লাগছে,কিন্তু মুভিতে নায়িকাদের তো এমন বিচ্ছিরী লাগেনা। তার ও তো ওদের মতো মেদহীন পেট!
“” তোর কি মনে হয় পালক তোকে পছন্দ করে?””
অনিকশার কথায় অন্ত্রীশা আয়না দিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“” অবশ্যই,নাহলে অমন পাগলামি করবেন কেন?””
“” উফ! তুই বুঝতে পারছিসনা। পালক ওগুলো তোকে ভালোবেসে নয়,অন্য কারনে করছে!””
অন্ত্রীশা বোনের কাছে এসে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। অনিকশার কাঁধে নিজের থুতনিটা ভর করে রেখে বললো,
“” আমি জানি,আপু! উনি এ রকম পাগলামী করার ছেলেই নয়। উনার আরেকটা রুপ আছে,যেটা আমার খুব পরিচিতি। ওটাকে কাছ থেকে দেখতে হলে যে উনাকে বিয়ে করা জরুরী!””
এসব কি বলছে অনতি? ও জানে মানে? কি জানে ও? আর কিসের সাথে পরিচিত বলছে? কি বুঝাতে চাচ্ছে ও? তাহলে কি পালককে ও আগে থেকে চিনে? ওর সাথে কি পালকের কোনো কানেক্ট আছে? কিন্তু এটা কি করে হতে পারে? সে রকম হলে তো আমার জানার কথা! অনিকশার মাথা ঝিম ধরে আসছে। এই মুহুর্তে ও কোনো ঝিমে ডুকতে চাইনা তাই পাল্টা প্রশ্নো করে বসলো,,,
“” তুই কি পালককে আগে থেকে চিনিস অনতি?””
অনিকশার প্রশ্নের উত্তরে অন্ত্রীশা ছোট্ট একটা হাসি উপহার দিতেই দরজায় কড়া নড়ে উঠে।
“” পার্লারের মেয়েরা এসে গেছে,আপু!””
অন্ত্রীশা দৌড়ে দরজা খুলে দিতেই ৫/৬জন মেয়ে রুমে ঢুকে গেলো। হাতে বড় বড় বক্স! হয়তো এগুলোর মধ্যে সাজসরন্জাম লুকায়িত!
অন্ত্রীশা বেশ উৎসাহে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটাতে বসে পড়লো। এতক্ষনে পার্লারের মেয়েগুলোও অন্ত্রীশাকে নিয়ে বিজি হয়ে পড়েছে। অনিকশা বেশ কিছুক্ষনের বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,
“” আপু,বাবাকে একটু পাঠিয়ে দিবে প্লিজ? বলবে উনি আমার শাড়ীর কুচি ধরে না দিলে আমি কুচি খুলে রেখেই শাড়ী পড়বো। আর অমন খুলা কুচি নিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসে পড়বো!””
লিয়াকত খন্দকার মেয়ের দিকে না তাকিয়েই মেঝেতে বসে পড়লেন। মেয়ের শাড়ীর কুচিতে হাত দিতেই অন্ত্রীশা বললো,
“” বাবা,আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে তুমি একবারও আমার সাথে কথা বলোনি। রাতের বেলা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেও আসোনি। এখন দেখ,আমাকে দেখতে কেমন লাগছে সেটাও দেখলেনা,আমি কি দেখতে অনেক পচা হয়ে গেছি?””
লিয়াকত সাহেব অশ্রুসিক্ত নয়নে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“” কি করবো,বল! তোর দিকে তাকালেই শুধু চোখে পানি চলে আসছে। কি যে হলো! মনে হয় কঠিন ব্যমো হয়েছে। তোকে বিদেয় করেই চক্ষু হসপিটালে যেতে হবে!””
অন্ত্রীশা এতক্ষন দাড়িয়ে থাকলেও এবার বাবার কাছ ঘেষে বসে পড়লো।
“” দেখি চোখে কি হয়েছে?””
অন্ত্রীশা চোখে হাত দিতেই লিয়াকত সাহেব নিশব্দে কেঁদে উঠলেন।
“” তুমি কি চাচ্ছো আমার এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট হয়ে যাক?””
লিয়াকত সাহেব চোখের পানি মুছে অন্ত্রীশার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
“” আমার ছোট্ট রাজকন্যাটাও তার নতুন রাজ্যে পাড়ি দিবে। সুখে থাকিস! নতুন রাজ্যের রানী হলেই চলবেনা,সেখানকার সবার সুখদুখের সাথী হবে কেমন? সব থেকে ভালোরানী হয়ে দেখাবে!””
অন্ত্রশা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“” তুমি আমার বেস্ট বাবা! আর বেস্ট বাবার মেয়ে অবশ্যই বেস্ট রানী হবে!””
বড় মেয়ের হুট করে বিয়ে হওয়ার কারনে তেমনভাবে বড় করে অনুষ্ঠান করা হয়নি লিয়াকত সাহপবের। তাই ছোট মেয়ের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি হোক সেটা উনি চাননা। নিজে এই বুড়ো বয়সেও দাড়িয়ে থেকে দুহাতে সব সামাল দিচ্ছে। এই মুহুর্তে ছেলের অভাব বুঝতে পারছেন লিয়াকত সাহেব। অরিদ যদিও জামাই হিসেবে একটা চমৎকার ছেলে। হাতে হাতে সব দিক দিয়েই সামলে দিচ্ছে। কিন্তু দুদিন পর তো সেও তার রাজ্যে পাড়ি দিবে। বাড়িটা একদম শুন্য হয়ে যাবে। এত বড় বাড়িতে দুজন বুড়াবুড়ি বন্দী হয়ে থাকাটা কতটা কষ্টকর হবে এখন বুঝতে পারছেন! চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর খোজে গেলেন।
বরপক্ষ চলে এসেছে শুনে অনিকশা অন্ত্রীশার পাশ থেকে উঠে এসেছে। পাশের রুমেই পালকদেরকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিয়ের কাজটা শেষ করেই স্টেজে নেওয়া হবে। তারপর খাওয়া দাওয়া বাকি কাজ সারা হবে।
অনিকশা দুর থেকেই বরকে দেখতে লাগলো,সেও হালকা মিস্টি কালারের মধ্যে সেরওয়ানি পড়েছে। অনিকশার কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকেই শরীরটা রাগে রিরি করছে। এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি মিস্টির দোকান যে সবাই নিজেরাই মিস্টি সেজে বসে আছে? অনিকশার ইচ্ছে হলো বড় করে হা করে পালক আর অন্ত্রীশাকে টুপ করে খেয়ে নিতে। খেতে নিশ্চয় বিচ্ছিরী স্বাদ হবে। ভাবতেই অনিকশার বমি বমি পেলো।
“” অনি,চলোনা আমরাও দ্বিতীয়বারের মতো বিয়েটা সেরে ফেলি!””
অরিদের কন্ঠ পেয়ে অনিকশা পেছন ঘুরতেই ওর চোখ আটকে গেলো অরিদের দিকে! অরিদও মিস্টি কালারের পান্জাবী পড়ে আছে,দেখতে কোনো অংশে তামিলের নায়কের চেয়ে কম লাগছেনা! টিন এজের যে কোনো মেয়ে আজ অরিদকে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে। শতশতবার প্রেমে ডুবে ডুবে বলবে,তোমার প্রেমে আমি হাবুডুবু খেতে চায়,তুমি কি আমাকে পারমিশন দিবে,মিস্টি বালক??? তার তো টিন এজ না,তাহলে ওর ও কেন আজ অরিদের প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে??
অরিদ অনিকশার চোখের সামনে হাতের আংগুলের সাহায্যে তুরি বাজাতেই ওর হুশ এলো।
“” কি মজা!কি মজা!পাপাই,মামনিকে বিয়ে কলবে! আমি আজ দুতো বিয়ে দেখবো!””
অরিদ্রার হাততালির আওয়াজে অনিকশার মন ভালো হয়ে উঠলেও পরক্ষনেই রেগে গেলো।
“” তোমরা বাপ বেটি আজ মিস্টি কালারে মাতিয়েছো কেন? কি কুৎসিত লাগছে। আমার মেয়েটার গায়ে যদি মশা বসে?””
“” কি করবো বলো! তুমিতো তোমার রঙে আমাকে রাঙাতে দাওনা। তাই ভাবলাম তোমার পছন্দের রঙে নিজেকে সাজিয়ে মনটাকে শান্তনা দেই।””
অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে নিতে নিতে বললো,
“” বাড়িটাকে তোমরা সবাই মিলে মিস্টির দোকান বানিয়ে ফেলেছো! যত্তসব!””
পাপড়িকে দেখতেও আজ ভারী সুন্দর লাগছে। কিন্তু যার জন্য এত কষ্ট করে সাজলো সেই তো এলোনা। তাহলে কি লাভ এই সাজ রেখে? পাপড়ির ইচ্ছে হলো নিজের নামের মতো নিজের সাজগোজগুলোকে জড়িয়ে ফেলে দিতে! চোখের পানি দিয়ে সব ঘেটে দিতে। মানুষটা এত কেনো অবহেলা করে আমাকে? কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার। কিচ্ছুনা!
ভাইয়ের পাশে মুখ গোমড়া করেই বসে রইলো পাপড়ী। আর ক্যামেরাম্যান তার সেই গোমড়ামুখের ছবি তোলাই ব্যস্ত!
বিয়ের রীতিনীতি শেষ করে অন্ত্রীশাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দশ্যে বেড়িয়ে পড়লো বরপক্ষ!
বাড়ীর কাছে গাড়ী থামতেই সবাইকে ফেলে পাপড়ি নেমে আসলো। দৌড়ে ছাদে উঠে আতিশের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিং বেজেই যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স আসছেনা। এদিকে পাপড়িও দমে যাচ্ছেনা। কলের পর কল তো মেসেজের পর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ওপাশ থেকে কল আসতেই পাপড়ি চট করে রিসিভ করে বললো,
“” আপনি আসেননি কেন?””
“” আমার ইন্টারভিউ ছিলো,পাপড়ি!””
“” আপনার সবসময় ইন্টারভিউ থাকে। পৃথিবীর সব ইন্টারভিউ কি আপনি একাই শেষ করবেন? ভাইয়া তো আপনার ছোটবেলার বন্ধু তাও আসলেননা? ভাইয়ার কত মন খারাপ হয়েছে জানেন?””
“” তোমার ভাইয়ার মন খারাপ হয়েছে আর জানাচ্ছো তুমি?””
“” ভাইয়াতো বিজি তাই আমি…””
“” এতগুলো কল কেন দিয়েছো? তোমাকে মানা করেছিনা আমাকে এত কল দিবেনা? আমি ডিস্টার্ব ফিল করি। কথা শুনোনা কেন? তোমার জন্য শান্তিমতে ঘুৃমাতেও পারলামনা। তুমি শুধু পালকের বোন বলে কিছু বলতে পারছিনা নাহলে থাপড়িয়ে সোজা করে দিতাম! সব কিছুতে বাড়াবাড়ি!””
আতিশের ধমক খেয়ে পাপড়ি ফুপাতে লাগলো। উনি কি জানেননা আমি কেন কল দেই? নাকি জেনেও না জানার ভান ধরে থাকেন???
“” অমনি শুরু করে দিলে? মানুষকে ডিস্টার্ভ করা আর ফুপানি ছাড়া আর কি কিছু শিখনি? পড়াও তো মাথায় ঢুকেনা। পালকের বোন বলে তোমাকে আমার এত কষ্ট করে পড়াতে হচ্ছে! নাহলে কবেই ছেড়ে দিতাম। এরকম গোবর মার্কা স্টুডেন্ট আতিশ কখনোই পড়ায়না!””
বেশ বিরক্ত আর তাচ্ছিল্যভাবেই কথাগুলো বলে আতিশ কলটা কেটে দিলো। আমি দিনে হাজারটা ইন্টারভিও দিয়েও এতোটা টায়ার্ড হয়না যতটা না তোমার ফুপানি শুনে হই। পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের জিনিস কি জানো পাপড়ি? ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি! আর তুমি সেটাই বারবার করো,আমাকে কষ্ট দাও খুব কষ্ট!! তোমার চোখের পানি মুছার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি চাইনা তোমার চোখের পানি মুছতে গিয়ে আমি আমার আর পালকের সম্পর্কটা নষ্ট করতে!
অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন পালকের রুমের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে ছিলো। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে এসেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিড়ানোই আছে। কেউ আসবেনা ভেবে পালকের রুমটা ঘুরে ঘুরে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। প্রতিটা জিনিসের গন্ধ নিতে নিতে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। ৩ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো রাত হয়ে গেলো উনি এখনো এলেননা?? কখন আসবেন উনি?? হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে অন্ত্রীশা দৌড়ে বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। বড় করে ঘোমটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকটা ঢিপঢিপ করছে! নিশ্বাসটা বন্ধ করে অন্ত্রীশা পায়ের আওয়াজ শুনতে লাগলো।
চলবে
#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (৬)
অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন পালকের রুমের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে ছিলো। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে এসেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিড়ানোই আছে। কেউ আসবেনা ভেবে পালকের রুমটা ঘুরে ঘুরে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। প্রতিটা জিনিসের গন্ধ নিতে নিতে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। ৩ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো রাত হয়ে গেলো উনি এখনো এলেননা?? কখন আসবেন উনি?? হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে অন্ত্রীশা দৌড়ে বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। বড় করে ঘোমটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকটা ঢিপঢিপ করছে! নিশ্বাসটা বন্ধ করে অন্ত্রীশা পায়ের আওয়াজ শুনতে লাগলো। পুরো মনোযোগটাই দরজার দিকে। পায়ের আওয়াজটা আসতে আসতে জোরালো হতে লাগলো,আর তার সাথে তাল মিলিয়ে অন্ত্রীশার হৃদস্পন্দনরাও জোরালো হচ্ছে। অন্ত্রীশার চোখ দুটো আরো গভীরভাবে টিপ দিয়ে ধরে আছে,যার ফলে চোখের পাপড়ির সাথে সাথে,কপাল আর ব্রু দুটোও কুচকিয়ে আছে৷ হাতদুটো দিয়ে শাড়ীটা মুঠো করে ধরে আছে। নিশ্বাস আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করলে তা আরো বেশি ঘন হয়ে আসছে। যেন সে এক কঠিন থেকেও কঠিনতর কাজ করে হাপিয়ে পড়েছে।
পালক অন্ত্রীশাকে বাড়িতে রেখেই সাথে সাথে গাড়ী ঘুরিয়ে ফেলেছিলো। সবাই নতুন বউকে নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলো যে পালকের দিকে কারো নজর পড়েনি। এত ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে খুব অসহায় লাগবে ভেবেই পালক আতিশের বাড়িতে গিয়ে উঠলো। পালককে দেখে আতিশ কোনো রিয়েকশনই দেখালোনা। এমন একটা ভাব যেন সে জানতো পালক এখনি আসবে। আতিশের সাথে গল্প করতে করতে পালকের চোখ লেগে আসে। তখনি আতিশ ওকে ডেকে তুলে বললো,
“” বউকে রেখে আমার সাথে ঘুৃমাবি নাকি? বাসরটাও কি আমার সাথে সারবি ভেবেছিস?””
পালক দুষ্টুমী করে আতিশকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বললো,
“” তুই মেয়ে হলি না কেন রে,আতিশ? তাহলে আমাকে এত পেরেশানিতে থাকতে হতোনা। আমি তোকেই বিয়ে করে নিতাম!””
আতিশও দুষ্টুমীর ছলে একটু ভাব নিয়ে বললো,
“” তোর কি মনে হয় না আমি মেয়ে হলে হাজারটা রাজকুমার আমার পিছে লাইন ধরে থাকতো? আমি ওমন হাজারটা রাজকুমার রেখে তোকে বিয়ে করতাম? আমার পছন্দ এতোটাও খারাপ না পালক!””
পালক আতিশকে ছেড়ে উঠে বসে পড়লো, আতিশের পেটের উপর উঠে বললো,
“” তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমি দেখতে কুৎসিত?””
“” কুৎসিত না কিন্তু রাজকুমারও না!””
“” তুই জানিস,আমি চাইলে প্রতিদিন ডজনখানেক প্রেম করতে পারতাম? শুধু একজনেতে আটকে গিয়েছিলাম দেখে!””
“” আমার পেছনে তো এখনো লাইন লেগে আছে। আর সে তোর থেকে কম সুন্দরী না!””
“” মানে? কে?””
আতিশ কথার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো,
“” তোর বউ তোর জন্য ওয়েট করে আছে পালক! তাকে ভালোবাসবি কিনা সেটা তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু তাকে কষ্ট দেওয়ার তোর কোনো অধিকার নেয়। সেতো ইচ্ছে করে তোর কাছে আসেনি বরং তুই জোর করে এনেছিস। তোর কি মনে হচ্ছে না তার মনে বুনা হাজারটা স্বপ্ন তুই চুরমার করে দিচ্ছিস??””
আতিশের কথায় পালকের হাসি হাসি মুখটা নিভে গেলো। ওর কাছ থেকে সরে এসে ফোনে হাত দিতেই দেখলো ২২ টা মিসড কল। নিজের কথা ভাবতে গিয়ে সে শুধু তার নববধুকে না তার মা,আর বোনকেও টেনশনে ফেলে দিয়েছে। কি করছি এসব আমি?
পালক মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই আতিশের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। বাসায় ঢুকেই আম্মুর বকা খেয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ফোনের লাইটটা অন করতেই দেখে ৩ টা বেজে ৩৩। এতক্ষনে অন্ত্রীশা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে নিয়েছিলো পালক। কিন্তু রুমে ঢুকেই আড়াইহাত ঘোমটা টেনে বসে থাকা তার নববধুকে দেখতো পেলো। রীতিমত চমকে উঠে পালক। এখনো জেগে আছে? কোন আশায় জেগে আছে?? আমি তো তার কোনো আশাই বাসা বেধে দিতে পারবোনা।
পালকের নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। যে মেয়েটাকে নিজের বউ হিসেবে কখনো স্বীকৃতি দিতে পারবেনা সে মেয়েটাকে কেন সে ঘরে তুললো?
পালক রুমের দরজা লাগিয়ে ভাবতে থাকে, আমার কি ওকে সরি বলা উচিত? যদি রেগে যায়? রাগলে রাগবে ভুল যখন করেছি সরি তো বলতেই হবে। যতই হোক ওর সময়ের সাথে খেলা করার আমার কোনো অধিকার নেই, বেচারী আমার অপেক্ষায় এখনো ঘুমাইনি!
পালক অন্ত্রীশার পাশে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকেও মুখ থেকে একটা শব্দ বের করতে পারলোনা। মনে হলো সে কথা বলা ভুলে গেছে, ঠোটঁদুটোও পাথর হয়ে একটা আরেকটার উপর বসে আছে। কিন্তু মনে মনে হাজারটা সরি বলে মেঝেতে শুয়ে পড়লো।
অন্ত্রীশা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেলো,চোখ বন্ধ করে রাখতে রাখতে পাপড়ি ব্যথা হয়ে উঠলো,হাত দিয়ে শাড়ি খামচে রাখতে রাখতে আংগুলগুলো ফুলে গেলো। বিরক্তের জায়গায় এবার রাগ এসে জমাট বেধেছে। রাগে ফুসতে ফুসতে এক টানে ঘোমটা খুলে ফেললো অন্ত্রীশা । কিন্তু রুমে তো কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু সে স্পষ্ট কারো পায়ের আওয়াজ পেয়েছিলো,আর সে নিশ্চিত ওটা তার চুমুবাবুর পায়ের আওয়াজই হবে। তাহলে কি উনি আমার উপর রাগ করে চলে গেলেন? কিন্তু কোথায় গেলেন? অন্ত্রীশা মুখটা কালো করে বিছানা থেকে নামতে নিলেই চোখ আটকে গেলো, নিচে বালিশ ছাড়া গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা পালকের উপর।
অন্ত্রীশার কালো মুখটা আরো কালো হয়ে আসলো। মনে হচ্ছে এখনি তুমুলধারায় বৃষ্টি নামবে।
বিছানায় শুয়ে থেকেই অন্ত্রীশা পালকের দিকে চেয়ে রইলো। ইচ্ছে করছে নিজে চাদর হয়ে উনাকে জড়িয়ে নিতে। এত কেন ইচ্ছে হয় আমার? যে মানুষটা আমার পাশে শুয়ার থেকে মেঝেকে বেছে নিতে পারে তার পাশে আমার কেন শুতে ইচ্ছে করবে?? এটাতো উনার অপছন্দীয় অন্যায় হয়ে যাবে! আর সেটা আমি কখনোই হতে দিতে পারিনা!
অন্ত্রীশা ভারী সাজগোজ,ভারী শাড়ী,ভারী গয়নাসহই শুয়ে রইলো। কিছুই চেন্জ করতে ইচ্ছে করছেনা তার। খুব আলসেমী লাগছে!
বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকলেও অন্ত্রীশার চোখে ঘুম আসলোনা উল্টো পেটের ভেতর কুটকুট আওয়াজ হচ্ছে। মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে থাকা ইদুরগুলো খুদার জ্বালায় অন্ত্রীশার পেটের নাড়ীভুরি সব কেটে খেয়ে ফেলছে। অন্ত্রীশা শুয়া থেকে উঠে পড়লো। উফ! এত ক্ষুধা নিয়ে ঘুৃমানো যায়? পালকের দিকে চোখ পড়তেই অন্ত্রীশার মায়া হলো,এভাবে বালিশ ছাড়া মানুষটা কিভাবে ঘুমাচ্ছে? দেখে তো মনে হচ্ছে বেঘুরে ঘুমাচ্ছে। আর আমি ক্ষুধার জ্বালায় মরছি।
কিছু একটা ভাবতেই অন্ত্রীশার ঠোটে হাসি ফুটে উঠলো। বিছানা থেকে নেমে এসে পালকের পাশে বসে পড়লো। চোখটা বন্ধ করে পালকের শেরওয়ানির পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো। মনে মনে ভাবছে,যদি হিসাবনিকাশ সব ঠিক থাকে,ইনশাল্লাহ হাতে কিছু উঠে আসবে। অন্ত্রীশা পকেটে ভালো করে হাত ঢুকাতেই হাত ভর্তি চকলেট নিয়ে পকেট থেকে বের করলো। চকলেট দেখে অন্ত্রীশার চোখ চকচক করছে! আমি জানতাম আপনি ভুলবেননা!
সকালের মিস্টি আলোর ছোয়া চোখে পড়তেই অন্ত্রীশার ঘুম ভেংগে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে পাপড়ি দুটো মেলতেই অন্ত্রীশা অবাক!
সাদা পান্জাবী,আর মাথায় সাদা টুপি পড়ে সিজদাহই আলিংগন করছে পালক।
পালক সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরলো। কি বলছে অন্ত্রীশা কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। কেন জানি তার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে। তাই কানদুটো আরেকটু খাড়া করে বিছানার কর্নারে চলে এলো।
পালক মোনাজাতে বসে একসময় নিশব্দে কেঁদে উঠে,চোখে বয়ে যাওয়া পানি নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলছে,
“” আমি কি করছি,কেন করছি কিছু জানিনা। বিবেক বলছে অন্যায় করছি কিন্তু মন বলছে ঠিক করছি। বিবেক আর মনের দোটানার সাথে আমি পেরে উঠছিনা,আল্লাহ! তুমি আমাকে এই দোটানা থেকে মুক্তি দাও। আমি মুক্তি চাই,আল্লাহ,মুক্তি!””
পালক মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করতে নিলেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,
“” পুরুষের সৌন্দর্য পরিপুর্নভাবে ফুটে উঠে কখন জানেন?””
পালক ভাবতে পারেনি এতো সকালে অন্ত্রীশা জেগে যাবে। ওর কন্ঠ পেয়ে কিছুটা ভড়কে গিয়ে আড় চোখে পেছনে ঘুরে তাকালো।
অন্ত্রীশা শুয়া থেকে উঠে বললো,
“” সাফমনে মোনাজাতে বসা অবস্থায়। বিবেক আর মন সবসময় দুইরকম ফলাফল প্রদান করে। কেন জানেন?””
অন্ত্রীশার দ্বিতীয় প্রশ্নে পালক একটু ঘাবড়ে গেলো। তবে কি ও সব শুনে ফেলেছে??? অন্ত্রীশার ব্যাখ্যার অপেক্ষা না করেই পালক রুম ত্যাগ করলো। অন্ত্রীশা হা করে পালকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন চোরের মতো পালালো কেন? আমি কি উনার চুরি করা দেখে ফেলেছি???
পাপড়ি ঘুম থেকে উঠেই আতিশের নাম্বারে কল দিলো। মানুষটার ভালোবাসা নাই পেলাম,বকাগুলো তো পাবো? উনার বকার মধ্যেই আমি ভালোবাসা খুজে নিবো। বেশ কয়েকবার রিং হলেও আতিশ পাপড়ির কল রিসিভ করলোনা। আতিশের এই অভ্যাসটা পাপড়ির খুব বিরক্ত লাগে। সে কখনোই প্রথমবার কলে আতিশকে পাইনা। কম করে হলেও পাঁচ,ছয়বার কল দেওয়ার পর পাবে তাও উনি কল ব্যাক করবেন। পাপড়ির কল কখনোই রিসিভ করতে পারেনা৷ পারবে কিভাবে? উনার মাথায়তো ইন্টারভিউয়ের বোঝা চাপানো। বোঝা নামাতে নামাতেই উনি ঘেমে একাকার! তার কল রিসিভ করার সময় কোথায়?
পাপড়ির ভাবনা বিচ্ছেদ ঘটে ফোনের রিংটোনে।
“” তোমাকে না মানা করেছি,আমাকে কল দিতে? আবার কেন কল দিছো? তুমি কি ঘুমের সাথে আমার বকা হজম করে ফেলো?””
“” হুহ!””
“” আবার হুহ! কি? কিছু বললে বলো না বললে কেটে দাও। তুমি যদি ভাবো শুধু হুহ! বলার জন্য কল দিয়ে আমাকে বিরক্ত করবে তাহলে আমি তোমার হুহ! কে…””
“” আজকে পড়াতে আসবেননা?””
“” পড়াতে আসবো মানে? বিয়ের রং কি একদিনেই কেটে গেলো? আর হঠাৎ করে মাথায় পড়ার ভুত ঢুকলো কিভাবে? এমনিতে তো পড়া গুলিয়ে খাওয়াই দিলেও গিলোনা। আজ হঠাৎ বিয়ের আমেজ না কাটতেই পড়ার কথা বলছো?””
“” সামনে আমার টেস্ট পরীক্ষা তো তাই!””
“” তোমার পরীক্ষাতো আমি কি করবো? তোমার পড়া আমি পড়ে দিবো? আমার কি জন্মই হয়েছে শুধু পরীক্ষার পড়ার জন্য? এখন চাকরীর পড়া বাদ দিয়ে তোমার পড়া পড়ে দিতে হবে?””
“” হুম!””
“” আবার হুম! বলা হচ্ছে? কাল আসতেছি! তবে পড়ানোর জন্য না তোমার হুমের বারোটা বাজানোর জন্য!””
আতিশ টুস করে ফোনটা কেটে দিলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে পাপড়ি হেসে ফেললো। ফোনের স্ক্রিনে কয়েকটা চুমু খেয়ে বললো, আপনার কাছে পড়ার জন্য শুধু বিয়ে কেন,আমি তো আমার সব স্পেশাল ডে গুলোকেও ভুলে যেতে পারি। আমার কাছে আপনার সাথে কাটানো একএকটা সেকেন্ড এক একটা স্পেশাল ডে।
অন্ত্রীশাকে গোসল করিয়ে একটা লাল টকটকে জামদানী শাড়ী পড়ানো হয়েছে। হালকা মেকাপ আর সোনার গয়না পড়ানো হয়েছে। একটু পর পর নতুন বউ দেখার বাহানায় ওর উপর হামলে পড়ছে নতুন নতুন মেহমান। এদিকে সারাদিনে আর একবারও পালকের দেখা পাইনি সে। উনি কি আমার কোনো সাজই দেখবেননা???
মিসেস তানিয়া বেগম একটু পরপর এসে অন্ত্রীশার সাথে ফিসফিস করে নানান জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন,আর ইশারায় সালাম করতে বলছেন। সালাম করতে করতে মনে হচ্ছে কোমড় ভেংগে যাবে। তবুও তার সালাম করা শেষ হবেনা। এখন তো দাড়াতেও ভয় লাগছে,মনের ভেতর খুতখুত লাগছে। অন্ত্রীশা মনে মনে গুনে গুনে দেখলো পিরিয়ডের ডেট আসতে এখনো দুদিন বাকি। তাহলে এখনি এমন লাগছে কেন? সবার সামনে আবার লজ্জা পেতে হবেনা তো?? অন্ত্রীশার নতুন মেহমানদেরকে দেওয়া কৃত্রীম হাসিটাও এখন আর আসছেনা। আশেপাশে তাকিয়ে শ্বশুড়বাড়ির কাউকে দেখতেও পাচ্ছেনা। কি যে হবে? ভাবতেই পালক রুমে ঢুকলো।
অন্ত্রীশার মেঘে ঢাকা মুখটা নিমিষেই রোদে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে ভরা রুমেই ডেকে বসলো,
“” এই যে শুনছেন? একটু এদিকে আসবেন? আমার একটা ইয়ে লাগবে!””
অন্ত্রীশার কথায় শুধু পালক নয় রুমে উপস্থিত সকলেই হা করে তাকিয়ে রইলো। নানাজন নানা কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো। তাতে যেন অন্ত্রীশা হাফ ছেড়ে বাচলো। বিছানা থেকে নেমে পালকের মুখোমুখি হয়ে বললো,
“” আমার একটা ইয়ে লাগবে।””
পালক বেশ বিচলিত হয়ে বললো,
“” ইয়ে মানে?””
পালকের পাল্টা প্রশ্নে অন্ত্রীশা থতমত খেয়ে গেলো। তাড়াহুড়ো আর টেনশনে সে এসব কি বলছে? তার কি লাগবে এখন সে কিভাবে বলবে?
পালক তখনো অন্ত্রীশার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে দেখে অন্ত্রীশা আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কি বলবে,কিভাবে বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ জপতে লাগলো। চোখ খুলতেই দেখলো পালক নেই। যাহ! উনি কই গেলো? এখন আমার কি হবে?
পালক বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ীর কাছে এগুতেই একটা বাচ্চা আংকেল বলে ডাক দিলো। পালক পেছনে ঘুরতেই বাচ্চাটা ওর হাতে একটা কাগজ দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
কাগজের ভাজ খুলতেই পালক দেখতে পেলো
***I need a pad an emergency***
ইতি
অন্ত্রীশা
পালক এক লাইনের ইংলিশ লেখাটি দেখে যতটা না বিব্রত হয়েছে তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে নিচে ইতি লিখে নাম লিখার পুর্বে কিছু একটা লিখে কেটে দিয়ে আবার নামটা লিখা হয়েছে। বাচ্চাদের মতো কেটেকেটে কালো দলা পাকিয়ে রেখেছে। কেউ যে নিজের নাম লিখতে ভুল করে তা পালক এটা নিয়ে দুজনকে দেখলো। কাগজটি হাতে নিয়েই পালক নিজের অতীতে হারিয়ে গেলো।
চলবে