ধোয়ার-নেশা পর্ব (১৩+১৪)

0
1731

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৩+১৪)

অন্ত্রীশা পুনরায় প্রশ্ন করার জন্য ঠোট নাড়াতেই পালক ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিয়েছে। নিজের ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার তাড়নায় থাকলেও আজ সে ব্যর্থ হলো। অন্ত্রীশা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে পালককে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। ওর ডান গালে!

অন্ত্রীশার এমন হুট করে হাইপার হয়ে যাওয়াটা হজম করতে পারছেনা পালক। একটু আগে তার সাথে কি হয়েছে বুঝার আগেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপু,তুমি?””

পালকের সাথে সাথে অনিকশাও হতভম্ব। অন্ত্রীশার এমন কঠিন রুপ সে আগে কখনো দেখেনি। হঠাৎ কি এমন হলো যে সে পালককে চড় মেরে বসেছে? স্বামী তার বউকে চুমু খাবে এটাই স্বাভাবিক,এতে এতো রাগের কি আছে? তবে কি অন্ত্রীশাও বুঝতে পেরেছে পালক তাকে ভালোবাসেনা???

অনিকশা দরজার কাছটাতে দাড়িয়েই পালকের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ত্রীশার ছুরে দেওয়া প্রশ্নটা যেন তার কাছে পৌছোয়নি। অন্ত্রীশা দরজার কাছটাতে এগিয়ে গিয়ে বেশ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,

“” আপু,তুমি কখন এলে?””

এতোকাছ থেকে অন্ত্রীশার ডাকে এবার অনিকশা অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। কিছুটা আনমনা হয়েই বললো,

“” এইদিকে একটা কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।””
“” ওহ! আচ্ছা।””

কিছুক্ষন আগেও যে মেয়েটা রাগে ফেটে যাবার উপক্রমে ছিলো সেই মেয়েটার এতো ঠান্ডা মেজাজটা অনিকশার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” তুই ঠিক আছিস তো,বোন?””
“” আপু,তুমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি!””

অনিকশাকে রেখেই অন্ত্রীশা আবার জোরে জোরে কদম ফেলে নিজের রুমের দিকে ছুটছে। পালক এখনো বারান্দাতেই দাড়িয়ে আছে,হাতে জ্বলন্ত সিগরেট! যেটা আগুনের রেখা ফুটিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিচ্ছে!

অন্ত্রীশা পালককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পুনরায় পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে বসে পালকের গালে।

“”ইচ্ছে করছে আপনাকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় মারি। পৃথিবীতে যতগুলো সিগারেট আছে ততগুলো থাপ্পড় মারি। লজ্জা করেনা অন্যের জন্য সিগারেট খেয়ে আমাকে বিষাক্ত করতে? আর কখনো যদি এই দুর্গন্ধ জিনিসটা ছুয়ে আমাকে ছুতে আসেন তাহলে এই সিগারেটের মতো আমিও আপনাকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিবো!””

অন্ত্রীশা নিজের বক্তব্য পেশ করে হনহন করে বেড়িয়ে এলো।

একটা মেয়ের কাছ থেকে পরপর তিনটা থাপ্পড় খেয়েও এতোটা শান্ত কি করে আছে বুঝতে পারছেনা পালক। তার তো রাগ করা উচিত,এমন রাগ যে রাগে অন্ত্রীশা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কিন্তু তার কেন রাগ হচ্ছে না? কেন সে অন্ত্রীশার হাতটা শক্ত করে ধরতে পারেনি? কেন সে অন্ত্রীশার চড়ের বিপরীতে সেও চড় মারতে পারেনি? তবে কি সে চাইছিলো অন্ত্রীশা তাকে মারুক? মারতে মারতে তাকে শেষ করে দিক? কিন্তু কেন?

“” পাপড়ি ছাড় আমাকে। ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। এমন গায়ে পড়া মেয়েগুলো আমার একদম পছন্দ না!””
“” না ছাড়বোনা। আপনি আমার কল রিসিভ করেননি কেন? এই তিনদিনে আমার কি অবস্থা হয়েছে জানেন? আমি মানসিক সিক হয়ে পড়েছি। কাউকে কিছু বলতেও পারছিলাম না।””

পাপড়ি তার অভিমানির কথার সুরের সাথে আতিশকে আরো বেশি করে জড়িয়ে নিচ্ছে। পারলে সে আতিশের মধ্যে ডুকে যায়।

পড়ালেখা আর চাকরীর টেনশনে আতিশের জীবনে কোনো মেয়ের আগমন ঘটেনি। যেহেতু কোনো মেয়েকে নিয়ে তার চিন্তার রাজ্যে চিন্তারা বিচরন করেনি সেহেতু কোনো মেয়েকে ছোয়াও তার দ্বারা সম্ভব হয়নি। আর এভাবে জড়িয়ে ধরাও সে কল্পনা করেনি। তাই এমন হুট করে পাপড়ির জড়িয়ে ধরাটা আতিশের ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। পাপড়ির ঘেমে যাওয়া শরীর থেকেও এক অদ্ভুত ভালো লাগার সুঘ্রান পাচ্ছে সে। ভেতরে ভেতরে অনেককিছুই ভালোমন্দ করার চিন্তাভাবনারাও জমা হচ্ছে। সে চাইলেই যে এই বদ্ধ ঘরে অনেক কিছুই করতে পারে এটাও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। এই মুহুর্তে পাপড়ির মধ্যে ভালোমন্দ আলাদা করার বোধশক্তি নেই। সে এখন আতিশের ভালোবাসা চাই। আতিশের ভালোবাসায় ডুব দিতে চাই।

নিজের জাগ্রত হওয়া পুরুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে পাপড়িকে ছাড়িয়ে নিলো নিজের থেকে। আতিশ চাইনা এই ছোট্ট পবিত্র মেয়েটার শরীরে কোনো কলংকের দাগ বসাতে। ওকে ভালোবাসারই কোনো যোগ্যতা নাই নিজের মধ্যে তাহলে তাকে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে কিভাবে জড়াবে? আর পালক? পালক কি কখনো মানবে এটা? বন্ধু হওয়ার সুবাদে সেতো জানে আমি কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ এখানে এসে থেমেছি?? কোনো ভাই চাইনা তার বোনকে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন পরিবারে বিয়ে দিতে। সব ভাই চাই তার বোনটাকে একটা রাজপ্রাসাদের রানী বানিয়ে দিতে। যেখানে সে সুখ দুখের গল্প করতে করতেই দিনরাত পার করে দিবে। আর পাপড়ি? দেখতেও তো কোনো রাজকুমারীদের চেয়ে কম নয়!

আতিশ বেশ ঝাঝালো কন্ঠে ধমকিয়ে উঠলো পাপড়িকে,

“” তোর লজ্জা করেনা আমাকে জরিয়ে ধরতে? তোর কি মনে হয় তোর মতো পিচ্ছি মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? একরাত আদর করলে পরের রাতে খুজে পাওয়া যাবেনা। তোর মতো শুটকি মেয়ে কখনোই আমার বউ হতে পারেনা। আমার তো নাদুসনুদুস বউ চাই। আর তুই তো বয়সেও অনেক ছোটো। দেখা যাবে তোকে শিখাতে শিখাতে বাসর রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে গেছে। পরে তো আমার বাসর রাতও করা হবেনা। সব থেকে বড় কথা তুই পালকের বোন মানে আমারও বোন। এক্ষুনি বাসায় যাবি বাকি আমি পালককে তোর কীর্তিকলাপ দেখানোর জন্য ডেকে আনবো?””

আতিশের কথায় পাপড়ি ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চোখে পানি টলমল করছে। মনে হচ্ছে চোখের দুটো পাপড়ি এক হওয়ার সাথে সাথে পুরো পৃথিবী ডুবে যাবে।

“” এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন? আমার কথা কি তোর কানে ঢুকেনি?””

পাপড়ি অসহায়ভঙ্গিতে আতিশের হাতটা চেপে ধরে বললো,

“” আমি আপনার বোননা বউ হতে চাই। আমি সব শিখে নিবো। আমি বেশি বেশি খেয়ে মোটা হবো। আপনি যা বলবেন তাই শুনবো তবুও আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিয়েননা প্লিজ! আমি এ অবস্থায় বাসায় যেতে পারবোনা। দেখুন আমি তো এখনি নিশ্বাস নিতে পারছিনা। আর আপনি না থাকলে নিশ্বাস কিভাবে নিবো? আমি আপনাকে ভালোবাসি আতিশ!””

পাপড়ির মুখে ভালোবাসি কথা শুনতেই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে আতিশ। কিছুটা উগ্র হয়ে বললো,

“” তুই যদি এক্ষুনি আমার সামনে থেকে না যাস,তুই আর কোনোদিনও আমার মুখ দেখতে পারবিনা। কোনোদিনও না।””

আতিশ উল্টোদিকে ঘুরে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে। তারও যে এখন পাপড়ির মতো নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে! তারও যে চোখ ভিজে আসছে। তারও যে বুকের ভেতরে জ্বলেপুরে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সমুদ্রের অথৈ জলে ডুবে মরে থাকতে। আর কত সে নিজের ব্যর্থতা বয়ে বেড়াবে? ব্যর্থতার গ্লানি টানতে টানতে সে আজ নিশ্ব হয়ে গেছে। একেবারে নিশ্ব হয়ে গেছে। আজ তার আফসোস হচ্ছে খুব বেশিই আফসোস হচ্ছে,তার গরীব ঘরে জন্ম নেওয়ার জন্য।

“”তুমি কি কিছু বলবে? নাকি এভাবে হনুমানের মতো তাকিয়ে থাকবে? আমি কল কেটে দিলাম।””
“” এই না না,অনি। তুমি এখন কল কেটে দিলে আমি বিষ না খেয়েও মরে যাবো। পরে,দেখবে নিউজ পেপারে প্রথম পৃষ্ঠায় আমার ছবি দিয়ে শিরোনাম দিয়েছে,বউয়ের ভিডিও কল কেটে যাওয়ায় বিষপানহীন যুবক মৃত!””
“” এইসব ফালতু ফালতু কথা তুমি কই পাও অরিদ? শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।””
“” আজ দুদিন পর তুমি আমাকে কল দিলে তাও ভিডিও কল,এই রাগ দেখানোর জন্য? আমিতো ভাবলাম তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে না পেরে এতক্ষনে পাগল হয়ে গেছো। যেমনটা আমি।””
“” আবার?””
“” আচ্ছা সরি বউ। এতো রাগ করো কেন? আমি যে তোমাকে ঘন্টা ঘন্টায় কল দিচ্ছি,ভিডিও অডিও,মেসজ,কোনোটারই তো রিপলাই করোনা। আজ নিয়ে তিনদিন হলো তোমাকে ছেড়ে পঞ্চগড়ে পড়ে আছি। তিনদিনে মাত্র তিনবার কথা হয়েছে তোমার সাথে তাও পাঁচমিনিটের বেশি হবেনা। এতো ব্যস্ততা কি নিয়ে জানতে পারি?””
“” আমার কি এখন তোমার কাছে জবাবদিহি করতে হবে অরিদ?””
“” আরে,তুমি তো আবার রেগে যাচ্ছো। আচ্ছা এসব বাদ। একটা চুমু দাওনা লক্ষী বউ!””

অনিকশা অরিদের আবদারকে তোয়াক্কা করেই বললো,

“” তুমি আসবে কবে?””
“” তুমি বললে আমি এখনি চলে আসবো। আসবো অনি?””
“” তোমার কাজ শেষ?””
“” না। কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিয়ে কাজ করতে মন চাইছেনা। অনি, আমি চাকরীটা ছেড়ে চলে আসি?””
“” আসো। আমিও সবকিছু গুছিয়ে অরিদ্রাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো।””

অনিকশার এমন উত্তরে অরিদের মুখটা চুপসে গিয়েছে। মন খারাপ করে বললো,

“” আচ্ছা আসবোনা।””

অরিদের অমন মন খারাপ হওয়া মুখটা অনিকশার দেখতে ইচ্ছে করছেনা। কলটা কেটে দিবে ভেবেও কাটলোনা। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো,

“” খেয়েছো?””
“” হুম! তুমি খেয়েছো বউ?””
“” সত্যি খেয়েছো?””
“” না।””
“” তাহলে মিথ্যে বললে কেন?””
“” নাহলে তুমি খাওয়ার বাহানা দিয়ে কল কেটে দিবে। তোমাকে তো আমি চিনি। সবসময় আমাকে দুরে রাখার কৌশলে ডুবে থাকো। এতদিন পর কল দিলে অথচ আমার দিকে একটু ভালো করে তাকালেওনা। তাকালে ঠিক বুঝতে পারতে,তোমার থেকে দুরে থেকে এই তিনদিনেই আমার কি হাল হয়েছে! আমার বোধহয় আর, এই জন্মে তোমার ভালোবাসা পাওয়া হবেনা,অনি!””

অরিদের কথাগুলো অনিকশার শরীরে কাটা হয়ে বিধছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। কাটাগুলো কি শরীর ভেদ করে তার হৃদপিন্ডেও ঢুকে গেছে? হয় তো তাই হবে। নাহলে চামড়াই ব্যথা না হয়ে হৃদপিন্ডে ব্যথা অনুভব হচ্ছে কেন?

কে বলেছে সে অরিদকে দেখেনি? দেখেছে,খুব ভালো করে দেখেছে। এই যে ছেলেটা না খেয়ে,না ঘুমিয়ে চোখের নিচে গর্ত করে ফেলছে এটাও সে ভালো করে দেখেছে। তার ফর্সাগালগুলো যে রোদে পুরে কালচে হয়ে গেছে,এটাও সে দেখেছে,তার ঠোটগুলো যে শুকিয়ে বিবর্ন হয়ে গেছে এটাও সে দেখেছে। কিন্তু সে যে দেখেছে এটাই তো দেখেনি অরিদ। এখানেই তো ফারাক রয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে অনিকশার। তার ভেতরটাও যে অরিদের জন্য পুরে সেটা কি সে কখনো প্রকাশ করতে পারবেনা? কোনোদিনও না? আর কত মানুষটাকে এভাবে দুরে রাখবে???

“” কিগো,ক্যামেরা অফ করে রাখলে কেন? ভালোবাসা দিবেনা বলে একটু দেখতেও দিবেনা? এমন করলে কিন্তু সত্যি সত্যি আমি সব ছেড়েছুড়ে চলে আসবো। আমি আর এভাবে থাকতে পারছিনা। একটু দুরে এসেছি বলে তুমি বেশি বেড়ে গেছো না? শুনেছি ভালোবাসার গভীরতা বাড়াতে মাঝে মাঝে নাকি প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দুরে আসতে হয়। আমিতো তাও করেছি এবারও কি তোমার ভালোবাসা পাওয়া থেকে ব্যর্থ হবো? অনি? ও অনি,বউ ক্যামেরাটা অন করোনা।””
“” সারাক্ষন ভালোবাসা ছাড়া তোমার কি আর কোনো কথা নাই? করবো না অন। তুমি এভাবেই থাকো।””
“” যার যেটার অভাব সেতো সেটার পিছনেই ছুটবে,অনি! এতো রাগ না? এবার এসে নেইনা। তোমার সব রাগ আমি বস্তায় ভরে রেললাইনে রেখে আসবো। রেলগাড়ী পিষে দিয়ে যাক, আমার অনির সব রাগ!””
“” আমি রাখলাম!””
“” অনি!””
“” হুম!””
“” আমি আর এভাবে তোমার অবহেলা নিয়ে থাকতে পারছিনা। তুমি কি করবে আমি জানিনা। কিন্তু আমার অনির ভালোবাসা আমার চাই। ফিরে এসে যেন আমি আমার অনিকশা,আমার বউকে পাই। যার মধ্যে গিজগিজ করবে অরিদের জন্য ভালোবাসার!””

অরিদ তার কথা শেষ করে টুপ করে লাইন কেটে দিয়েছে। সে জানে এখন লাইন না কাটলেও অনিকশা লাইন কেটে দিতো। সবসময় তার ইচ্ছে রাখবেনা সে। এখন থেকে আমার ইচ্ছাও তোমাকে রাখতে হবে অনি। রাখতেই হবে!

অনিকশাকে বিদায় দেওয়ার পর পালকের সাথে আর কোনো কথা হয়নি অন্ত্রীশার! সে চাইও না কথা বলতে! যেকোনো জিনিসেরই একটা লিমিট থাকে। কিন্তু পালক সেটারও অতিক্রম করে ফেলেছে। যে জিনিসটার ধারে কাছেও কখনো যাইনা অথচ তার ধোয়াই কিনা আমার পেটে দিবে? কেন আমি কি করেছি উনাকে? সবসময় আমার সাথে এমন কেন করবেন উনি? এমনি এমনি তো একটু কথাও বলতে আসেনা যখন আসবে তখন তাকে ধোয়া নিয়ে আসতে হবে? তাও আবার অন্যের সামনে? এমন হুটহাট চুমু খেয়ে বসে যে আপু দেখে ফেলে! আমি নাহয় জানতামনা উনি চুমু খাবেন কিন্তু উনিতো জানতেন? তাহলে দরজাটা লাগিয়ে আসলে কি হয়? উনার নাহয় লজ্জা বলতে কিছু নেই,কিন্তু আমার তো আছে? বড় আপু হয় আমার। আমার আপু মানে তো উনারও আপু তাইনা???

শুয়ে একমনে হাজারও ভাবনায় ডুবে থাকলেও এবার যেন তার টনক নড়ে উঠেছে। শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লো অন্ত্রীশা। আবার বিড়বিড় করে বললো,আরে তাইতো,এই ব্যাপারটা তো আমার মাথায় কখনো আসেনি। উনি যখনই আমার কাছে তখনি আপু চলে আসে। এটা কি সত্যি এক্সিতেন্টলি ঘটে নাকি কারো ইচ্ছাকৃত সাজানো ঘটনা?

টেনশনে অন্ত্রীশা বসা থেকে দাড়িয়ে পড়েছে। পায়চারী করতে করতে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকে পরপর সাজিয়ে নিচ্ছে। খুটে খুটে সব বুঝার চেষ্টা করছে। অজান্তেই অন্ত্রীশার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো,তবে কি আপুর সাথে পালকের??? ওহ মাই গড! এটা কি করে হতে পারে? না আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা!

পালক সোফাতে শুয়ে শুয়ে অন্ত্রীশার কর্মকান্ড দেখছিলো। একবার বসছে তো আরেকবার শুয়ে পড়ছে। আবার শুয়া থেকে উঠে পায়চারী করছে। তো আবার গিয়ে বসে পড়ছে। এক পর্যায়ে অন্ত্রীশা জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতেই পালক বেশ অবাক হলো। হয়েছেটা কি এর?

অন্ত্রীশা সারারাত ছটফট করে কাটিয়ে দিয়েছে। সারারাতে একটা মিনিটের জন্যও চোখ বন্ধ করতে পারেনি সে। নানান প্রশ্ন তাকে জর্জরিত করেছে । আর এই সব প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্যই সকাল সকাল অনিকশার বাসার উদ্দশ্যে রওনা দিয়েছে অন্ত্রীশা!

“” অনতি,তুই?””
“” এমন চমকে গেলে যে, আপুর বাসায় কি বোন আসতে পারেনা?””

অনিকশা মুখে হাসি ফুটিয়ে অন্ত্রীশাকে ভেতরে এনে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,

“” তা না বিয়ের পর তো এই প্রথম আমাদের বাড়ি এলি,তাও না জানিয়ে,তাই একটু অবাক হয়েছি।””
“” অরিদ ভাইয়ার কি খবর? আর অরিদ্রাকে দেখতে পাচ্ছিনা যে?””

ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে অন্ত্রীশার পাশে এসে বসেছে অনিকশা। ঠোটে আগের হাসিটা এখনো লেগে আছে।

“” ওর দাদা দাদির সাথে হাটতে বেড়িয়েছে। তুই তো ঘেমে গোসল করে ফেলেছিস। একটু বোস আমি সরবত বানিয়ে আনছি।””

অনিকশা উঠতে নিলেই অন্ত্রীশা ওর হাত চেপে ধরে বললো,

“” আপু,তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা। একটু বসবে প্লিজ?””

চলবে
#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৪)

ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে অন্ত্রীশার পাশে এসে বসেছে অনিকশা। ঠোটে আগের হাসিটা এখনো লেগে আছে।

“” ওর দাদা দাদির সাথে হাটতে বেড়িয়েছে। তুই তো ঘেমে গোসল করে ফেলেছিস। একটু বোস আমি সরবত বানিয়ে আনছি।””

অনিকশা উঠতে নিলেই অন্ত্রীশা ওর হাত চেপে ধরে বললো,

“” আপু,তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা। একটু বসবে প্লিজ?””

অনিকশা অন্ত্রীশার চেপে ধরা হাতটার দিকে তাকিয়ে আবার অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। ওর চোখমুখটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। আর এতো সকালে উঠে এ বাসায় আসা তাও কিছু না জানিয়ে হুট করে চলে আসা স্বাভাবিক নয়। কিছুতো একটা হয়েছে। কিন্তু কি? আর কিই বা এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে ও? পালককে নিয়ে কিছু বলবে না তো?? পালকের কথা মনে পড়তেই অন্ত্রীশার ভেতরটা ছেদ করে উঠেছে। যা থেকে সে দুরে থাকতে চাই তাই কেন বার বার তার কাছে এসে ল্যাপ্টে পড়ে?

অন্ত্রীশা আপুকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো,

“” ছোটবেলা থেকেই তুমি আর আমি একসাথেই বেড়ে উঠেছি। তুমি যে আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতে তা কারো অজানা নয়। তোমার দিনে রাতের চব্বিশটা ঘন্টায় আমাকে নিয়ে কাটতো। কারোর উপর রাগ থাকলেও আমার কাছে এসে ঝাড়তে,আবার খুব খুশি হলেও আমাকে জড়িয়ে ধরেই দুটো চুমু খেয়ে বলতে,আমার সব খুশির ভাগ আমি তোকে দিতে চাই,অনতি! কিন্তু হঠাৎ করেই তুমি চেন্জ হতে লাগলে,আমার থেকে দুরে দুরে থাকার চেষ্টা করতে। যেখানে তুমি আর আমি সবসময় একি রুমে দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ঘুমাতাম সেখানেও তুমি অন্য রুমে থাকার বায়না করা শুরু করে দিলে। শুধু রাত না দিনের বেলাও তোমার রুম বন্ধ! আসতে আসতে তুমি আমাদের থেকে দুরে যেতে লাগলে। কিন্তু এই দুরত্বটা আমাদের কাছে অসহনীয় লাগলেও তোমার মধ্যে ছিলো অনাবিল সুখ। তোমার চালচলন,আচার ব্যবহার সবকিছুতেই চেন্জ। নিত্যনতুন জামা কাপড় কেনার বাহানায় শপিংমল,সাজগোজের বাহানায় পার্লার এমন কি রাত করে বাসায় ফেরাও শুরু করলে। এই জিনিসগুলোতে আমরা যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম ঠিক তখনি তুমি অরিদ ভাইয়াকে নিয়ে হাজির! বাড়িতে তুমি বড় মেয়ে ছিলে,আদর ভালোবাসাটাও তেমনি ছিলো। আমাদের কোনো ভাই না থাকার সুবাদে তোমার লুকিয়ে বিয়েটাকেও মেনে নিয়েছিলাম আমরা। এতে যেন আমাদের থেকে তোমার দুরত্ব আরো বেশি বাড়তে লাগলো। ছোটখাটো জিনিস নিয়ে রাগারাগি,ঝগড়া বিবাদ,সারাক্ষন তিকতিক্ষে মেজাজ তোমার।””
“” তুই এগুলো বলার জন্য এখানে এসেছিস,অনতি?””

অন্ত্রীশা অনিকশার আরেকটু কাছে চেপে এসে বললো,

“” নাহ,আপু। কিন্তু আমি যা বলতে চাই তারসাথে এগুলো রিলেটেড! একটু চুপটি করে শুনো আপু!””

অনিকশাকে কিছু বলতে না দিয়েই অন্ত্রীশা আবার বলতে শুরু করে দিয়েছে,

“” অরিদ ভাইয়াকে তুমি নিজে বিয়ে করেছিলে। তারমানে উনি তোমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো। কেন করেছিলে এটা আমরা একবারও জানতে চাইনি। আব্বু চাইনি এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক তাই। কিন্তু এক দু মাস যেতে বা যেতেই তুমি অরিদ ভাইয়ার সাথে রাগারাগি করে সবকিছু উল্টোপাল্টে করে দিচ্ছিলে। তোমার বোন হওয়ার সুবাদেও আমি অরিদ ভাইয়ার দলেই কারন উনি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। আর যে সংসারে স্বামী তার বউকে এতো ভালোবাসে সে সংসারে ঝগড়া কিভাবে লাগতে পারে? এমন তো নই যে তুমি তাকে ভালোবাসোনা। যদি ভালো নাই বাসতে তাহলে তো বিয়েটা তুমি করতে না!””

অন্ত্রীশা কথা বলতে বলতে এক সময় অনিকশার কাধে মাথা রেখে হালকা জড়িয়ে নিয়ে আদুরী গলায় বললো,

“” তুমি এতে বছর ধরে যে সত্যটাকে ভেতরে পুষে রেখেছো সেটা আজ মুক্ত করে দাও আপু। যে সত্যটা তোমাকে এভাবে কঠোর থেকেও কঠোরতার রুপে বন্দি করছে সেটাকেও মুক্ত করে দাও। আমি তোমাকে হেল্প করবো,আপু!””

অন্ত্রীশাকে নিজের কাধ থেকে সরিয়ে শক্ত কন্ঠ ধারন করলো অনিকশা,

“” কি বলতে চাস,তুই? সেটা সোজা করে বল এতো পেচাচ্ছিস কেন?””

অন্ত্রীশা এবার জোর করে তার আপুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” তুমি আর আমি আব্বুর আদর্শে বড় হয়েছি,আপু! আমি জানি তুমি কোনো অন্যায় কাজ করতে পারোনা। হয়তো তুমি কোনো অন্যায় কাজের মুখোমুখি হয়েছিলে,যেটা তোমাকে তোমার আদর্শ থেকে নড়াতে পারেনি। আর এই অন্যায় কাজটা তুমি করতে পারোনি বলেই আজ তুমি অন্ধকারে ডুবে আছো সাথে আমাদেরকেও ডুবিয়ে রেখেছো!””
“” অনতি,তুই কিন্তু…””
“” পালক আর তোমার মধ্যকার সম্পর্কের কথা জানতে চাই!””

অন্ত্রীশার এই ছোট্টবাক্যটাই যেন অনিকশাকে থমকে দিয়েছে। অনেকটা কাচের মতো শক্ত হয়ে গেছে সে। যাকে এখন একটু আঘাত করলেই হাজারটা টুকরো হয়ে ভেংগে পড়বে।

“” পালককে কি তুমি আগে থেকে চিনতে?””

অনিকশা নরম ধাচের শক্ত আয়নার মূর্তি হয়ে বললো,

“” পালক এন্ড আই ওয়াজ ইন এ রিলেশনশীপ!””

অনিকশার উত্তরে অন্ত্রীশার যতটা না বিস্মিত হওয়ার কথা ছিলো তার ছিটেফোটা ছাপ প্রকাশ পাইনি তার চেহারায়। বরংচ আরো সহজ স্বাভাবিকভাবেই বললো,

“” আমি পুরোটা শুনতে চাই আপু। বিস্তারিতভাবে। যাতে আমার চোখের সামনে তোমাদের লাভ স্টোরিটা ভেসে উঠে।””

অন্ত্রীশার এমন আবদারে থতমত খেয়ে যাচ্ছে অনিকশা। নিজের স্বামীর লাভস্টোরী অন্য মেয়েকে নিয়ে তাও মেয়েটা অন্য কেউ নয় তারই বড় বোন,এইভাবে স্বাভাবিক শান্ত হয়ে কিভাবে শুনতে চাই? ও কি আদৌ হুশে আছে নাকি বেহুশ হয়ে হুশে থাকার অভিনয় করছে??

অনিকশার কাধে ঝাকি দিতেই অনিকশার চোখের পলক পড়ছে।

“” আপু বলোনা,প্লিজ। আমি ওয়েট করছি!””
“” সেদিন ছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারী,ভেলেন্টাইনস ডে! যেহেতু এটা সরকারী ছুটি না সেহেতু এই দিনে ভার্সিটি অফ থাকার কথা না। তোকে কলেজে নামিয়ে দিয়েই আমি আমি আমার ক্লাসের দিকে এগুচ্ছিলাম। আমার ফাইনাল ইয়ারের লাস্ট এক্সাম ছিলো ওইদিন। এক্সাম শেষে বের হতেই রিতালী আমার চোখ ধরে ফেলে! আমাকে চুপ করিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের মাঠের ঠিক মাঝখানে দাড় করিয়ে আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো। আমি রিতালীকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই চোখের ইশারায় বললো নিচের দিকে তাকাতে। আমি নিচে তাকাতেই,,,””
“” পালককে হাটু গেড়ে বসে থাকতে দেখলে তাইনা আপু?”‘
“” হুম!””
“” তারপর? কটিনিউ করো!””
“” তারপর আর কি ও প্রপোস করলো আর আমি রাজী হয়ে গেলাম!””

অন্ত্রীশা এতক্ষন সোফাতে শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে অনিকশার কথা শুনছিলো। শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,

“” প্রপোস করলো আর তুমি রাজী হয়ে গেলে? তুমি কি আগে থেকেই পালককে ভালোবাসতে,আই মিন পছন্দ করতে?””
“” তা জানিনা। কিন্তু আমাদের ভার্সিটির প্রত্যেকটা মেয়ের ক্রাশ ছিলো ও। আমি এটা সিওর ছিলাম আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকলে সেও আমার মতো একি কাজ করতো!””
“” তুমি আমার আপু হয়ে পালকের কাছে সাধারন হয়ে গেলে? এটলিস্ট নিজের সেল্ফ এটিটিউটটা বজায় রাখার জন্য পরে জানাবে এটাও তো বলতে পারতে। আচ্ছা তারপর কি হলো?””
“” তারপর আরকি,ওর গভীর ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিতে থাকলাম। ডুবতে ডুবতে এতোটাই অতলে চলে যাচ্ছিলাম যে তোদের কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছিলাম। অবশ্য আমার দোষটা কিসের বল ও মানুষটাই এমন। যে কাউকে নিজের প্রেমে ফেলে দিতে পারে,যেমনটা তোর ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এক চুমুতেই তুই বশ হয়ে গেলি!””

অনিকশা কথার ছলে অন্ত্রীশার গাল টিপে দিতেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” তাহলে তুমি অরিদ ভাইয়াকে কেন বিয়ে করলে? পালক তো এখনো তোমাকে ভালোবাসে। উনি তো তোমাকে ধোকা দেইনি আপু,তুমি কেন দিলে?””

অন্ত্রীশার এই প্রশ্নটাই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে অনিকশা। ওর কাছ থেকে কিছুটা সরে এসে আমতা আমতা করে বললো,

“” ওর সাথে আমার কোনোকিছুতেই মিলছিলোনা। যার সাথে একটা বছরও আমি মানিয়ে নিয়ে চলতে পারিনি তার সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকতাম?””
“” তাহলে যাকে কখনো ভালোইবাসোনি তার সাথে সারাজীবন থাকার দলিলে কিভাবে সাইন করলে আপু?””

অনিকশা কিছুটা রাগ নিয়ে অন্ত্রীশাকে ধমকে বললো,

“” তোর যা জানার ছিলো বলে দিয়েছি,আমার আর অরিদের মাঝখানে আসবিনা। তাহলে কিন্তু আমি…””
“” আপু,আমি আসি!””
“” আসি মানে? মাত্রই তো এলি,এখনি চলে যাবি?””
“”হুম!””

অন্ত্রীশা সোফা থেকে পার্স আর মোবাইলটা নিয়ে দরজার কাছটাতে এগুতেই অনিকশা ডেকে উঠলো,

“” অনতি!””

অন্ত্রীশা উল্টো দিকে মুখ রেখেই বললো,

“” কিছু বলবে আপু?””
“” পালক একটা নিষ্পাপ ছেলে,কোনো কালো ছায়া ওর উপর পড়েনি। একটা বছরে ওর সাথে আমার হাজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো ঘনিষ্ঠতার স্মৃতি নেই। আমরা এমন সিচিউশনেও ছিলাম যেখানে আমাদের মধ্যে অনেককিছুই হতে পারতো কিন্তু ও আমার হাতটা পর্যন্ত ধরেনি। একেবারেই ধরেনি এটা বলবোনা,ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনে ধরেছিলো যে ছোয়ায় কোনো ভালোবাসা বা কামুকতা ছিলোনা,ছিলো দায়িত্ববোধ!””
“” সত্যি?””
“” হুম! ওর ভেতরের ভালোবাসাটা ছিলো পবিত্রায় ঘেরায় যেটা আমি ভাংতে পারিনি।””
“” তুমি উনাকে এখনো ভালোবাসো তাইনা আপু?””

অনিকশা অন্ত্রীশার কপালে দুটো চুমু খেয়ে বললো,

“” নারে পাগলী,ওর প্রতি আমার কখনোই ভালোবাসা জন্মায়নি। ওর ভালোবাসা আমাকে অবাক করতো। কিন্তু কেন জানি আমার ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করতোনা। যদি ইচ্ছেই করতো তাহলে আমি কখনোই অরিদকে বিয়ে করতাম না। আমি তো এটাও জানি আমি যদি এখনো ভালোবাসার দোহায় দিয়ে ওর কাছে ফিরতে চাই ও খুশি মনে আমাকে বরন করে নিবে। কিন্তু আমি কেন যাবো?””
“” তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছে উনি যে তোমাকে জেলাস করানোর জন্য এতকিছু করতো তুমি একটুও জেলাস হওনি?””
“” একদম না। তুই যে জেলাসের কথা বলছিস সে জেলাস ফিল করিনি। করলে এতদিনে অনেককিছুই ঘটে যেতো। তবে হ্যা,একটু একটু মন খারাপ হয়েছে। যেমনটা তোর কোনো ফ্রেন্ড অন্য কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করলে তুই আমার কাছে এসে কাঁদতি,তেমনটা। একটা বছর একসাথে চলাফেরা করেছি। হুট করে অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করে নিলেতো খারােপ লাগবেই তাইনা?'”

সকালে রোদের তীব্রতাকে মাথায় না নিলেও এখন নিতে হচ্ছে। যেমনটা চুপচুপা ঘাম নিয়ে অনিকশার বাসায় পৌছে ছিলো,অন্ত্রীশা। এখনও সে সেরকমই চুপচুপা ঘাম নিয়েই বাসে বসে আছে। তারাহুড়োয় ছাতা নিয়ে বের হয়নি সে। আজ যে তাকে মাথা ব্যথারা খুব করে চেপে ধরবে খুব বুঝতে পারছে সে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতিতে ডুবে যেতে যেতে আবারও ভাবনায় ডুব দিচ্ছে অন্ত্রীশা!

অনিকশা যে তাকে সবকিছু খুলে বলেনি সেটা সে তখনি বুঝতে পেরেছে। অন্ত্রীশারও কেন জানি ইচ্ছে হয়নি সবটা জানতে। কেন হয়নি? আপু বলতে ইততস্ততায় ভুগতো তাই? নাকি অন্য কারনে??? অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই হালকা হেসে উঠে।

আচ্ছা সত্যিই কি পালক আপুর সাথে ঘনিষ্ঠতাই আবদ্ধ হয়নি? যেখানে বাসের পাশের সিটের পাঁচ মিনিটের জন্য একজন অপরিচিত মেয়েকে দেখলেও পুরুষজাতিগুলো কামুকতায় ছটফট করে। নানাভাবে তাকে ছুয়ার বাহানা বানায়। কেউ কেউ তো প্রকাশেই! তাহলে সেখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এতোটা কাছাকাছি,এতোটা নিরিবিলি জায়গায় এতোটা সময় একসাথে থাকলে ছেলেদের মনে একটু অন্যকিছু করার ইচ্ছে জাগবে এটাই স্বাভাবিক। বরংচ না জাগাটাই অ স্বাভাবিক! তবে কি আপু আমাকে মিথ্যে বলেছে? যদি আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকতো তাহলেও কি এই কথাগুলো বলতো?

কন্টাক্টরের ডাকে অন্ত্রীশা চোখ মেলে। বাস থেকে নেমেই রিকসায় উঠে পড়েছে।

বাসায় আসতেই পালকের মুখোমুখি হয়েছে অন্ত্রীশা। দুজনের চোখে চোখ পড়তেই পালক চোখ সরিয়ে গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেলো। পালকের গালে এখনো লালচে আভা দেখা যাচ্ছে। অন্ত্রীশা নিজের ডান নাতটা চোখের সামনে ধরতেই মু্খ থেকে বেড়িয়ে এলো,তোর হাতে এতো শক্তি? এভাবে একটা পুরুষের গালকে কলংকিত করে দিলি.??

সারাদিন একা ঘরে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছিলো অন্ত্রীশা। তার মধ্যেতো যখন তখন নানা ভাবনায় মাথাটাকে পাগল করে দিচ্ছে। কিছুটা রিলাক্স হওয়ার আশায় পাপড়ির রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে অন্ত্রীশা!

এ বাসায় আসার পর থেকে পাপড়িকে রুম থেকে তেমন একটা বের হতে দেখেনি অন্ত্রীশা। মেয়েটাকে দেখলে মোটেও শান্তশিষ্ট লাগেনা। চেহারায় একটা চনচলতার ভাব রয়েছে।

অন্ত্রীশা দরজায় পরপর দুবার নক করতেই পাপড়ি দরজা খুলে দিয়েছে।

“” কিছু বলবে ভাবী?””
“” তোমার রুমে ঢুকা নিষেধ?””
“” নাতো,কেন?””
“” এইভাবে আমাকে বাইরে রেখেই সবসময় কথা বলোতো তাই ভাবলাম।””

পাপড়ি রুমের লাইট জ্বালিয়ে অন্ত্রীশাকে ভেতরে এনে বসিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়েছে। এটা যেন বেশ অস্বাভাবিক মনে হলো অন্ত্রীশার কাছে। এখনো তো তেমন রাত হয়নি যে ও ঘুমাবে তার উপর সামনে ওর পরীক্ষাও। তাহলে লাইট বন্ধ করে কি করছিলো?

পাপড়ি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে অন্ত্রীশার পাশে বসতেই,অন্ত্রীশা বললো,

“” তোমার চোখ,মুখের এই অবস্থা কেন? কাঁদছিলে?””

অন্ত্রীশার এমন হুট করে করা প্রশ্নে বেশ ঘাবড়ে যায় পাপড়ি।

“” কেন কাঁদছিলে,পাপড়ি?””

পাপড়ি অন্ত্রীশার কাছ থেকে উঠে যেতে নিলেই ওকে জোর করে বসিয়ে দিয়ে অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” এই বয়সে মেয়েরা দরজা বন্ধ করে কেন কাঁদে সেটা মুখ ফুটে বলতে লাগেনা। আমি কি তোমাকে দুটো কথা৷ বলবো? তুমি মন দিয়ে শুনবে?””

পাপড়ি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁবোধক উত্তর দিলেও অন্ত্রীশা কিছু না বলেই বেড়িয়ে এলো। মেয়েটা আরেকটু কেঁদে হালকা হোক তারপর নাহয় বলা যাবে।

পালক অফিস থেকে বেশ রাত করেই ফিরেছে।অন্ত্রীশার মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে। কিন্তু রুমে ঢুকেই খালি বিছানা পেয়ে সে হতাশ। তারমানে ও ঘুমোয়নি? তাহলে কোথায় গেলো? বারান্দার দিকটাই তাকাতেই চাঁদের আলোই অন্ত্রীশার ছায়া দেখতে পাচ্ছে। এতোরাতে ওখানে কি করছে? রাতে অমন ছটফট করে সকালে কোথায় বেড়িয়েছিলো? ওর মনে চলছেটা কি??

ভাবনাতুর চেহারায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দরজায় হাত পড়তেই একটা চিরকুট দেখতে পেলো পালক। ছোট্ট করে লিখা,

**সরি!!

ইতি
অন্ত্রীশা

যেটা টেপ দিয়ে দরজায় আটকানো। পালকের চিরকুটে চোখ পড়তেই চোখ,মুখ উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছে।

পালক ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় চেন্জ করে বারান্দার দিকে পা বাড়িয়েছে। অন্ত্রীশা পাশে এসে দাড়িয়েছে সে!

নিজের পাশে পালকের উপস্থিত পেয়ে অন্ত্রীশা রুমের দিকে পা বাড়াতেই ওর হাত আকড়ে ধরেছে পালক,

“” আর কিছুক্ষন থাকোনা,অন্ত্রীশা। তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। শুনবেনা আমার গল্প????

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে