ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৩

0
5

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৩

মিহিকা মাহির রুমে গিয়ে দেখলো মাহি, হিয়া, আরিশা একদম রেডি হয়ে গেছে। মিহিকাকে দেখে আরিশা এগিয়ে এসে বলল,
“মিহি আপু তোমাকে তো সেই লাগছে।”

মিহিকা আলতো হেসে বলল,
“তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে শাড়ি পড়ে।”

আরিশা মুচকি হাসলো। মিহিকা, মাহির কাছে যেতেই মাহি নিজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মিহি আপু দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে?”

মিহিকা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“একদম লেবু গাছের পেত্নীর মতো লাগছে।”

মাহি রাগে কটমট করতে লাগলো। মিহিকার সাথে সবাই হাসতে লাগলো। মাহি রাগে গজগজ করতে করতে রুম ছেড়ে চলে গেল।

মাহির কথায় আবারো সবাই হাসলো।

মাহি সোজা আরহামের কাছে গেল। আরহাম ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিলো। মাহি ওর সামনে গিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“দেখুন তো আমাকে কেমন লাগছে?”

আরহাম কপাল কুচকে তাকালো মাহির দিকে। চরম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কেমন লাগবে আবার? যাও গিয়ে আরিশাকে বলো।”

আরহামের উত্তর পছন্দ হলোনা মাহির। নাকমুখ কুচকে বলল,
“আমি তো আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম।”

আরহাম ফোন কানে দিয়ে মাহির পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মাহি ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে রইলো আরহামের যাওয়ার দিকে।

আস্তে আস্তে সবাই ছাদে আসতে লাগলো। ছাদের একপাশে স্টেজ করা হয়েছে। তাঁজা গাঁদা ফুলের মালা, গোলাপ ফুল, রজনীগন্ধা দিয়ে ছাদ সাজানো হয়েছে। চারদিকে ছোট ছোট রঙিন বাতি জ্বলছে, আর মৃদু হাওয়ায় ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। সবাই এসে বসতে শুরু করলো। মিহিকা, হিয়া, আরিশা একপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। মাহি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো, মনটা খারাপ হয়ে গেছে তার। কত সুন্দর করে সাজলো সে আর এখন কেউ একটুখানি বললও না কেমন লাগছে?

মিহির এই ঠান্ডার মাঝেও আইসক্রিম খাচ্ছিলো। মাহি এবার ক্লাস টেনে। আর মিহির ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। মিহিরের দুইবছরের ছোট মাহি।মাহিকে গাল ফুলিয়ে থাকতে দেখে মিহির আইসক্রিম খেতে খেতে এগিয়ে গেল মাহির দিকে। মাহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“কিরে, কার উপর রাগ করে গাল ফুলিয়েছিস?”

মাহি মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“তোমার কোনো কাজ নেই? যাও, তোমার আইসক্রিম খাও!”

মিহির হেসে বলল,
“আরে, তাই তো! ঠান্ডার মধ্যে এই আইসক্রিমই সব রাগ ভুলিয়ে দেয়। তুইও খাস, সব ভুলে যাবি।”

মাহি দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“দে এখনি খামু।”

মিহির মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তুই কিনে খা। আমারটা দিমুনা।”

মাহি এবার আরও রেগে গিয়ে বলল,
“তুই কি ভাবছিস, আমি কিনে খাওয়ার টাকা পাই না?”

মিহির দাঁত বের করে হেসে বলল,
“তুই তো ফক্কিন্নি। তোর টাকা কুটি থেকে আসবি।”

মাহি রাগে দুপা দিয়ে মেঝেতে আঘাত করে হনহনিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। মিহির সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলো।

ইরাকে এনে বসানো হলো স্টেজের সোফায়। হলুদ রঙের শাড়ি, কাঁচা ফুলের গহনায় বেশ ভালো লাগছে ইরাকে। শাওন ইরার কাছে নিজের ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোর ফোন কোথায়? নে কথা বল ফারাবি অস্থির হয়ে গেল তোকে ফোনে না পেয়ে।”

ইরা খানিকটা লজ্জা পেল। ফারাবি ওর হবু বড়, শাওনের বন্ধু। তিনবছরের প্রেমের পরে অবশেষে কাল তাদের বিয়ে। দুইজন দুইজনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ইরা ফোন কানে ধরতেই ফারাবি খানিকটা রাগী কন্ঠেই বলল,
“ফোন কোথায় রাখো? কতবার কল করেছি তার খোঁজ খবর রাখো।”

ইরা নরম গলায় বলল,
“ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই বুঝতে পারিনি। সরি ”

ফারাবি জোরে জোরে শ্বাস টেনে বলল,
“ভিডিও কলে আসো।”

ইরা কিছু না বলে ভিডিও কল রিসিভ করলো। মুখের সামনে ধরতেই ফারাবির চেহারা ভেসে উঠলো। ইরা আলতো হেসে বলল,
“কি মহাশয় রাগ কমেছে? কেমন লাগছে আমাকে?”

ফারাবি হাসলো। মাথার পিছনের চুলগুলো চুলকে বলল,
“তোমাকে দেখে রেগে থাকা যে বড্ড কঠিন মায়াবতী।”

ইরা লজ্জামাখা হাসি দিলো। তখনি ইরার পাশ থেকে টুকু দিলো মিহিকা আর হিয়া। দুইজন সুর করে বলে উঠলো,
“মায়াবতীইইইই”

ইরা যেন আরো লজ্জা পেল। মিহিকা আর হিয়া হাসতে লাগলো। ফারাবি হেসে বলল,
“শালিকারা দেখি সেজেগুঁজে একদম তৈরি।”

মিহিকা হেসে হেসেই বলল,
“দুলাভাই দেখছি আপুর জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছেন না।”

ফারাবি হেসে বলল,
“তোমার জন্য তাহলে এমন কারো ব্যবস্থা করি। কি বলো তুমি?”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমার কাউকে লাগবে না গো দুলাভাই। আমারে সহ্য করার মতো এখনো কেউ জন্মায়নি।”

ফারাবি হাসলো। হেসেই বলল,
“কপালে যে আছে সে আছেই চিন্তা করো না গো শালিকা।”

মিহিকা হাসলো। হেসেই বলল,
“আচ্ছা দুলাভাই কথা বলেন আপুর সাথে আমি যাই।”

বলেই মিহিকা সরে এলো। চারপাশে মাহিকে খুঁজতে লাগলো। শাড়িটা উঁচু করে এপাশঅপাশ তাকিয়ে মাহিকে দেখতে না পেয়ে কপালে ভাঁজ পরলো। পাশেই মিহিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহিকা এগিয়ে আসলো। এপাশে ওপাশে তাকিয়ে বলল,
“কিরে মাহি কোথায়?”

মিহির ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“আমি কি জানি!”

মিহিরের কথায় বেশ বিরক্ত হলো মিহিকা। মিহিকা নিজেই মাহিকে খুঁজতে গেল। মিহিকা সামনে এগোতেই দেখলো আঁধারের মাঝে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। মিহিকা কপাল কুচকে ফেলল। ওখানে আবার কে? সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কে, কে ওখানে?”

আরহাম ফিরে তাকালো। ক্ষীণ আলোতে মিহিকাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আরহাম গভীর কন্ঠে বলল,
“আমি, কেন কোনো সমস্যা?”

মিহিকা ফুস করে একটা শ্বাস টেনে বলল,
“ও বন মুরগি!”

আরহাম কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“এই মাইয়া কি মুরগি মুরগি বলো? আমারে তোমার কোন দিক দিয়ে মাইয়া মানুষ মনে হয়!”

মিহিকা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মানে?”

আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“মুরগি আবার কি?”

মিহিকা ফিক করে হেসে বলল,
“ওও তাই বলুন।”

আরহাম মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল। মিহিকা পিছনে ঘুরে হিয়ার কাছে গিয়ে বলল,
“হিয়াপু মাহি কোথায়?”

হিয়া মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বড় মামির কাছে গেছে নিচে।”

মিহিকা হিয়ার পাশে বসে বলল,
“ওও আমি তো এতক্ষন ওরে খুঁজে খুঁজে মরতেছিলাম। হিয়াপু নাচবে না?”

হিয়া মুচকি হেসে বলল,
“হুম পরে, আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বড়রা চলে যাক। তুই কি করবি জানি?”

মিহিকা সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,
“আমি আর মাহি মিলে নাচবো ভাবছি।”

“তাহলে তো ভালোই।”

একটু পরে সবাই একে একে ইরার গায়ে হলুদ দিতে লাগলো। মিহিকা ইরার গালে মাখিয়ে একটুখানি হলুদ নিয়ে গেল মাহিকে মাখাতে। মিহিকার শয়তানি হাসি দেখে মাহির আর বুঝতে বাকি নেই মিহিকা কিছু না কিছু করবেই করবে। মাহি শাড়ির অনেকটা অংশ উঁচুতে তুলে ভো দৌড় দিতে লাগলো। মিহিকাও ওর পিছু পিছু দৌঁড়াতে লাগলো। মাহি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একজায়গায় গিয়ে হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগলো। মিহিকা তো পেয়েছে সুযোগ। এবার তো সে মাহিকে হলুদ ভুত বানিয়েই ছাড়বে। মিহিকা ছুটে মাহির মুখে মাখতে যাবে তখনি উষ্টা খেয়ে একটা দেয়ালের সাথে বারি খেল।

মিহিকা ঝটকা খেল। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো। তখনি মাহি চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“আপু তুমি এটা কি করলে?”

মিহিকা চোখ পিট পিট করে তাকাতেই দেখলো এ তো দেয়াল না। এটা তো কারো বলিষ্ঠ বুক। মিহিকা ঝট করে মাথা উঁচিয়ে তাকাতেই যেন বড় একটা ধাক্কা খেল। এতো বন মুরগি থুক্কু বন মোরগা। মিহিকা দ্রুত সরে এলো। আরহামের পাঞ্জাবীর বামপাশের বুকের দিকে একদম হলুদ লেগে গেছে। মিহিকা তাকালো সেদিকে। আরহাম চরম বিরক্তি নিয়ে পাঞ্জাবীর দিকে তাকিয়ে নাকমুখ কুচকালো। হিসহিসিয়ে বলল,
“এই মেয়ে চোখে দেখ না। আমার নতুন পাঞ্জাবীটার কি একটা অবস্থা করেছো?”

মিহিকা অবাক হওয়ার ভাব ধরে বলল,
“আমি আবার কি করলাম? আপনারই তো দোষ। আমি কি বলছিলাম এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে।”

আরহামের রাগ যেন তিরতির করে বেড়ে গেল। সব দোষ নিজে করে এখন বলছে সে কোনো দোষই করেনি। সব দোষ তার। আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ফালতু কথা বলবেনা একদম। তুমিই তো আমার গায়ে এসে পরলে।”

মিহিকা আঙুল তুলে বলল,
“কিহ আপনি আমাকে গায়ে পড়া মেয়ে বললেন?”

আরহাম অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। সে কখন মিহিকা গায়ে পড়া বলল। আরহাম চোখ বড় বড় করে বলল,
“আমি আবার কখন এই কথা বললাম!”

মিহিকা আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এহ ভাব করছে এমন যেন কচি খুকি। আপনি বলছেন। আপনি জানেন আমি কে? আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন করে কথা বলার?”

আরহামের এবার মাথা ঘুরছে। এই মাইয়া তো সব কথার দুই লাইন বেশি বুঝে। আরহামের মন চাচ্ছে পাশ থেকে একটা ইট তুলে মিহিকার মাথায় ফাটাতে। আরহাম কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিহিকা বলে উঠলো,
“আপনি আমার সাথে এত ঝগড়া করেন কেন বলুন তো?”

আরহামের চোখ আরো বড় বড় হয়ে গেল। সে কোথায় বেশি ঝগড়া করে। মিহিকাই তো ক্ষণে ক্ষণে ঝগড়া করে তার সাথে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে