#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২
হালকা নাস্তা শেষে সবাই বসলো আড্ডা দিতে। মিহিকা ছাড়া প্রায় সবাই বসেছে। হেনা বেগম মিহিকাকে ডেকেছেন। মিহিকা সেখানেই গেছে। হেনা খান একটা হলুদ রঙের শাড়ি মিহিকার হাতে ধড়িয়ে দিয়ে বলল,
“কালকে এই শাড়িটা পড়িস। সবাই শাড়ি পড়বে তুই আবার বাদ যাবি কেন?”
মিহিকা শাড়িটা হাতে নিলো। চোখমুখ চকচক করে উঠলো মিহিকার নতুন শাড়ি দেখে। শাড়ি তার পছন্দের তালিকায় সবার উপরে। মন চাইলেই সে শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ায়। মিহিকা হাসিমুখে শাড়িটা নিয়ে নিজের রুমে রাখতে গেল।
শাড়িটা রুমে রেখে বের হতে যাবে তখনি কপাল কুচকে এলো মিহিকার। বেডের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে আছে মিহিকার চাচাতো বোন মাহি। মেয়েটা মিটিমিটি করে হাসছে। মিহিকা চোখ ছোট ছোট করে মাহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিরে মাহি এমন করে হাসছিস কেন পাগলের মতো?”
মাহি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“আপু আমি ক্রাশ খাইছি।”
মিহিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। অবাক হয়ে বলল,
“মানে কি বলছিস তুই? কার উপর আবার ক্রাশ খাইলি।”
মাহি আবারো লজ্জা পাওয়ার ভাব করে বলল,
“হিয়া আপুর চাচাতো ভাই এসেছেনা। লম্বা করে, চাপ দাঁড়ি, শ্যামলা করে, গালে আবার একখানা টোলও পড়ে, চোখের মনি খয়েরি রঙের।”
মিহিকার চোখগুলো যেন আরো বড় বড় হয়ে গেল। চেচিয়ে বলল,
“আর মানুষ পাইলিনা তুই শেষমেষ ওই বন মুরগী।”
মিহিকার কথা বুঝতে না পেরে কপাল গুটিয়ে মাহি তাকালো মিহিকার দিকে। মিহিকা নিজ মনে কিযেন বিড়বিড় করে মাহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখ তুই যার উপর পারিস তার উপর ক্রাশ খা। তবুও ওই বন মুরগির উপর খাসনা। ব্যাটা বহুত খারাপ।”
মাহি ভ্রুকুচকে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“না উনি ভালো। তুমি বেশি বুঝো।”
মিহিকা মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,
“বুঝবি বুঝবি ব্যাটা যে কি বদ?”
তখনি হিয়া তাদের ডাকতে এলো। ওরা দুইজন ওর পিছু পিছু যেতে লাগলো। সবাই আড্ডার পার্ট শেষ করে রাতের খাবার খেতে বসেছে। হেনা খান আর তার বড় জা রেহানা খান সবাইকে খাবার পরিবেশন করছেন। আরহামের প্লেটে চিংড়ি মাছ দিতে নিবে তার আগেই আরহাম হাত উঠিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,
“আন্টি আমার এলার্জির সমস্যা আছে।”
হেনা খান হেসে বললেন,
“ওহ দুঃখিত আমি জানতাম না।”
আরহাম সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,
“আন্টি সমস্যা নেই। আপনার জানার কথা না।”
মিহিকা খেতে খেতেই নিজ মনে ভাঙালো,
“আমার এলার্জির সমস্যা। ঢং দেখি বাঁচিনা। চিংড়ি খাছু কোনোদিন। খাবি কেমনে ঢং করতে করতেই সময় যায়। তখন যে বেগুনি খেলি তখন এলার্জি হয় না। যতসব।”
মিহিকার পাশেই হিয়া বসে ছিলো। বেচারি জোরে হাসতেও পারছেনা। কিছু বলতেও পারছেনা।খাওয়া দাওয়া শেষে মিহিকা, ইরা, হিয়া আর মাহি সবাই একরুমে শুয়ে পড়লো। কাল সকাল থেকেই হলুদের আয়োজন শুরু হবে। তাই সবাই সবার মতো রেস্ট নিতে লাগলো।
আরহাম একটু ছাদের দিকে গেল। মিহিকাদের বাসা শহরের দিকেই। ঠান্ডা তেমন না থাকলেও আছে কিছুটা। আরহাম ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকিং করছিলো আর সিগারেট খাচ্ছিলো। কুয়াশার সাথে সিগারেট ধোঁয়াগুলো ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। আরহাম তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে।
—————
সকালে হেনা খানের ডাকে মিহিকার ঘুম ভাঙলো। মিহিকা চোখ কচলে উঠে বসলো। পাশে কাউকে না দেখে বুঝলো সবাই উঠে পড়েছে। মিহিকা হেলেদুলে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো আরহামের সাথে। আরহামকে দেখেই কপাল চাপড়াতে ইচ্ছা করলো মিহিকার। নিজ মনেই বলল,
“সকাল সকাল বন মুরগি মুখ দেখতে হলো। না জানি দিন আমার কত খারাপ যায়।”
মিহিকাকে নিজ মনে বিড়বিড় করতে দেখে আরহাম কপাল কুচকে বলল,
“এই মেয়ে সাইড দেও এমন কাকতাড়ুয়ার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন সামনে?”
মিহিকা নাকমুখ কুচকে বলল,
“আপনিই তো আমার সামনে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন।”
আরহাম চোখ ছোট ছোট করে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এতো ত্যাড়ামি করো কেন আজব তো!”
মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আপনি ত্যাড়া আপনার চৌদ্দ গুষ্টি ত্যাড়া।”
আরহাম আঙুল তুলে বলল,
“মেয়ে তুমি এতো..!”
আরহামের কথার মাঝেই মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে আরহামের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আরহাম নাকমুখ কুচকে তাকিয়ে রইলো মিহিকার যাওয়ার দিকে।
মিহিকা সকালের নাস্তার জন্য টেবিলে বসলো। হেনা খান মিহিকার জন্য প্লেটে খিচুড়ি আর ডিম ভাঁজা রেখেছেন। মিহিকা খেতে লাগলো। তার খাওয়ার মাঝেই আরহাম এসে টেবিলের অপর প্রান্তে বসলো। মিহিকা আড়চোখে একপলক দেখে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। রেহানা বেগম এগিয়ে এলেন। আরহামকে খাবার তুলে দিলেন রেহানা বেগম। হিয়াও এসে বসলো মিহিকার পাশের চেয়ার টেনে।
আরহাম খাচ্ছে আর ফোনে কি যেন করছে। মিহিকা বেশ বিরক্ত হলো। এতক্ষন সে যদি নাস্তা করতে করতে ফোন টিপতো তাহলে তার পা উষ্টা দিয়ে সৌদি পাঠায় দিতো।
খাওয়া শেষ হতেই সবাই ছাদে গেল। ছাদে হলুদের স্টেজ সাজানো হচ্ছে। হামিম, মিহির, ইরার বড় ভাই শাওন সবটা দেখছে। মিহিকা এপাশঅপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। তখনি মিহিকার সামনে এসে দাঁড়ালো মাহি। মিহিকা কপাল কুচকে বলল,
“কি সমস্যা তুই এমন অবতারের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
মাহি মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার ক্রাশের সাথে তুমি কি কথা বলছিলে তখন?”
মিহিকা কুচকে যাওয়া কপাল আরো কুচকে বলল,
“আমি কোথায় ওই ফালতু লোকের সাথে কথা বললাম?”
“ওই যে নাস্তা করার আগে।”
মিহিকা বিরক্ত হলো। চরম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কইতেছিলাম আমি মরমু তো মরার জন্য কোন জায়গা ভালো হবে।”
বলেই হনহনিয়ে চলে গেল মিহিকা। মাহি বোকা হয়ে তাকিয়ে রইলো মিহিকার যাওয়ার দিকে।
আরহাম ফোনে কল আসতেই সে কিছুটা দূরে গিয়ে কল রিসিভ করলো। কানে ফোন নিয়ে বলল,
“কি হয়েছে কল করেছো হঠাৎ?”
অপরপাশ থেকে কি বলল তা বোঝা গেল না। আরহাম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“পারবো না এখন দেখা করতে। ঢাকা গিয়ে দেখছি।”
বলেই কল কেটে ফোন পকেটে রেখে পিছনে ঘুরতেই আরিশাকে দেখতে পেল। আরিশা আরহাম ঘুরে তাকাতেই বলল,
“ভাইয়া আম্মু ডাকছে তোমাকে।”
আরহাম ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আসছি তুই যা।”
আরিশা ভ্রুকুচকে বলল,
“ভাইয়া তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে।”
আরহাম কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“তুই জেনে কি করবি?”
আরিশা চোখ ছোট ছোট করে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“না তেমন কিছু না। তুমি যাও আম্মু ডাকছে।”
আরহাম আরিশার কথায় পাত্তা না দিয়ে ছাদ থেকে নেমে পড়লো। বসার ঘরে মায়ের সামনে গিয়ে বলল,
“কি বলবে আম্মু?”
আরহামের মা রাবেয়া বেগম বললেন,
“হামিম, শাওনের সাথে বাজারে দিকে যা তো। তোর বাবা একটা ঔষধ আনতে ভুলে গেছে। ওটা নিয়ে আয়। আর একটু ঘুরেও আয় না হয়।”
আরহাম সম্মতি দিলো মায়ের কথায়। শাওন, হামিম, মিহির, আর আরহাম মিলে একসাথে বাজার গেল।
মিহিকা, হিয়া, মাহি, আরিশা মিলে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে কি পড়বে না পড়বে তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। একটু পরেই ইরাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হবে।
ছাদের একপাশে রান্নার কাজ চলছে। বাড়ির বড়রা সবাই রান্নার তদারকি করছে।
——————
মিহিকা হলুদ রঙের একটা শাড়ি পড়ে নিলো। হালকা মেকআপের সাথে হালকা গহনা পড়ে আয়নার সামনে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো নিজেকে। না ভালোই লাগছে। বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলতে লাগলো সে। ইচ্ছেমতো কয়েকটা ছবি ডেও দিলো। সবাই রেডি হয়েছে নাকি সেটা দেখার জন্য হেলেদুলে রুম থেকে বের হয়ে মাহির রুমে দিকে যেতে নিবে তখনি শাড়ির সাথে উষ্টা খেয়ে পড়ে যেতে নিবে তখনি একটা শক্ত হাত তার ডানহাত আকড়ে ধরলো।
মিহিকা ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করলো। আর একটু হলেই পড়ে মুখ ফাটতো তার। পিটপিট করে তাকাতেই দেখলো আরহাম চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পড়নে তার হালকা হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবী, চুলগুলো সেট করা। মিহিকা দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে চলে যেতে নিবে তখনি আরহাম বলে উঠলো,
“আজব মানুষ তো তুমি। তোমাকে কত বড় একখান বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিলাম। একটা কিছু বললেও না।”
মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“একটা কিছু।”
আরহাম হা হয়ে তাকিয়ে রইলো মিহিকা দিকে। এই মাইয়া কি মাইয়া। মিহিকা হনহনিয়ে চলে গেল।
#চলবে