ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১৯

0
620

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘের এই মুহূর্তে কি রিয়াক্ট দেওয়া উচিৎ মেঘ বুঝতে পারছে না। হুট করেই মেঘের অনুভূতিশূন্য লাগছে। মেঘ এক দৃষ্টিতে অদ্ভুত ভাবে ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর এক হাতে ভর দিয়ে মাথা উঠিয়ে মেঘের দিকে ঘুরে আছে। মেঘ তার পাশেই কারন পেটের জন্য সে উঠতে পারছে না মাথাটাও ভার হয়ে আছে। মেঘ কিছু বলছে না দেখে ধূসর বলল,,,

“কি হলো নিষ্ঠুর মেয়ে তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তোমার একান্ত ব্যক্তিগত নিষ্ঠুর পুরুষ ফিরে এসেছে পুরোনো মিস প্রতিবেশী নিষ্ঠুর মেয়েটার প্রেমে পাগল হওয়া প্রেমিক হয়ে।”

মেঘ এবার ও কিছু বললো না অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে যেন কতোদিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। ধূসর মেঘের চোখের দিকে তাকালো কি মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে এই চোখে ডুবে যেতে। মেঘের চোখ ছলছল করছে। মেঘ আস্তে আস্তে হাত উঠিয়ে ধূসরের মুখে হাত বুলাতে লাগলো ধূসর মেঘের ছোয়ায় চোখ বন্ধ করে নিল। ধূসর চোখ খুলতেই মেঘ বলল,,

“ধূসর আপনার সব মনে পরে গেছে।”

ধূসর মুচকি হেসে বলল,,

“সব মনে না পরলে কি? একটা মেয়ের বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। নাকি একটা মেয়ের এতো খেয়াল রাখতাম। নাকি একটা মেয়েকে অবিবাহিত ভাবে জরিয়ে ধরতাম। আমি তাকে পছন্দ করি তো কি হয়েছে এসব করার জন্যও তো একটা অধিকার দরকার মানে একটা বৈধতা দরকার তাই না।”

মেঘের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। তা দেখে ধূসর তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,,,

“উঁহু একদম কান্না না আজ তো তোমার খুশির দিন। তোমার তো আজ ঈদ লাগার কথা। তোমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে তোমার ধূসর তোমার কাছে ফিরে এসেছে।”

মেঘ চোখে পানি নিয়েও মুচকি হাসলো আর বলল,,

“আমায় একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন ধূসর।”

“না বাবা একদম না আমার বউ ব্যাথা পেলে। এখন না আমার বউ আগে সুস্থ হয়ে নিক। তারপর কথা দিচ্ছি সারাদিন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো ছাড়বো না।”

“ধরুন না একটু প্লিজ।”

“আরিব্বাস নিষ্ঠুর মেয়েটা আমাকে রিকুয়েস্ট করছে। যা সে কখনো করে না । তাহলে তো রাখতেই হয়। এখন বলো শুয়ে শুয়ে জড়িয়ে ধরবো নাকি দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরবো।”

ধূসরের পাগলামি দেখে মেঘ হাসে। আর বলে,,

“আগে আপনি দাঁড়ান তারপর আমাকে দাঁড় করান তারপর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন। কারন শুয়ে শুয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরতে পারবো না হাতে ক্যানেলার তো।”

ধূসর আগে উঠলো তারপর মেঘকে নিজের দুই পায়ের ওপর মেঘের দুই পা রাখতে বললো। ধূসর ও সাহায্য করলো অতঃপর মেঘ ধুসর এর দুই পায়ের ওপর দাঁড়ালো ধূসর সাবধানে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু মেঘ তার তো কোন সাবধানতার দরকার নেই সে নিজের একটুও যত্ন নেবে না। ধূসর হালকা করে ধরলেও মেঘ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। পেটে হালকা ব্যাথা লাগছে কিন্তু ও প্রকাশ করছে না।ও নিজের পাগল ডক্টরকে অনুভব করছে। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেল। মেঘ কিছু করছে না দেখে ধূসর বলল,,

“মেঘবালিকা!”

“হুম!”

“এখন ছাড়ো ফ্রেশ হতে হবে তো। এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে তোমার সমস্যা হবে।”

“আমার এভাবেই ভালো লাগছে।”

ধূসর মেঘকে ছাড়িয়ে কোলে নিল আর বলল,,

“এখন চলো ফ্রেশ হও। সীমিত সময়ের খুশির জন্য আমি তো তোমাকে বেশি কষ্ট দিতে পারি না। এভাবে থাকলে পরে সত্যি সমস্যা হবে। ”

মেঘ ধূসরের গলা জড়িয়ে ধরলো আর বলল,

“হুম!”

ধূসর মেঘকে ফ্রেশ করিয়ে দিল।তারপর মেঘকে বেডে শুইয়ে দিল। মেঘের খিদে পেয়েছে তাই ধূসর গেল খাবার আনতে। ততক্ষন মেঘ কি যেন ভাবলো। ধূসর খাবার এনে মেঘকে খায়িয়ে দিল। সবে সকাল সাড়ে ছয়টা বাজে। তা দেখে মেঘ বলল,,

“ধূসর আপনি একটু ঘুমিয়ে নিন আসুন বেডে এসে শুয়ে পরুন।’

“পেশেন্ট আমি না তুমি। তাছাড়া আমার ঘুমের প্রয়োজন নেই।আমি ঠিক আছি।”

“না আপনি ঠিক নেই। কাল রাতে আপনি ঘুমান নি আমি জানি এখন এসে শুয়ে পড়ুন। আপনার তো বউয়ের সেবা করতে হবে তাই না। আপনি ঠিক না থাকলে সেবা কিভাবে করবেন?”

“বললাম তো আমি ঠিক আছে। আর আমার শরীরে অনেক শক্তি আছে। এটা দিয়েই বউয়ের সেবা করতে পারবো।”

“ধূসর আপনি কিন্তু আমার কথা শুনছেন না। যা বলছি আসুন এখানে।”

মেঘ একটু চেপে শুলো তা দেখে ধূসর হেঁসে মেঘের বেডে শুয়ে পড়লো। ধূসর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে তা দেখে মেঘ বলল,

“আপনাকে ঘুমানোর জন্য এখানে শুতে বলেছি আমাকে দেখতে না। চোখ বন্ধ করুন।”

ধূসর ভদ্র বাচ্চার মতো চোখ বন্ধ করে নিল। মেঘ ধূসরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একটা সময় ধূসর ঘুমিয়ে পড়লো। আর মেঘ সে ধূসরের কপালে চুমু দিয়ে মুগ্ধ চোখে ধূসরকে দেখতে লাগলো। কি অদ্ভুত ভালোবাসা তাই না । নার্সটা সব কিছুই দেখছিল এদের ভালোবাসা দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে। মেঘ আর ঘুমায় নি। আটটা বাজতেই ধূসরের পরিবার কে দেখা গেল। সেই সাথে মেঘের বান্ধবীরাও এসেছে। সবার আগে দিলরুবা খানম ঢুকলো। তারপর বাকি সবাই। মেঘের বেডে মেঘের পাশে ধূসরকে দেখে একটু অবাকই হলো। দিলরুবা খানম জিজ্ঞেস করলেন,,

“মেঘ এখন কেমন আছো?”

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা আপনারা কেমন আছেন?”

তখন নীলি বলল,,

“তোর এই অবস্থায় কি করে ভালো থাকি বল! এই তিন চারদিন যা গেল।”

“আস্তে বল উনি ঘুমাচ্ছেন তো। কাল রাতে ঘুম হয় নি ওনার আমার জ্বর এসেছিল তাই।”

মেঘের ধূসরের প্রতি ভালোবাসা দেখে সবার মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। তখন হির মেঘের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,,

“তার মানে সব ঠিক আছে। তোর জামাই ঘুমাচ্ছে আমরা বরং বাইরে যাই। তোর জামাইয়ের ঘুম ভাঙলে বলিস তখন এসে তোর সাথে কথা বলবো ঠিক আছে।”

হিরের ফিসফিস করে কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

“না বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। একটু আস্তে কথা বললেই হবে। মা আপনারা বসুন না।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“না মেঘ ধূসর ঘুমাক আমরা তো এখনি যাচ্ছি না। ধূসর উঠলে না হয় এসে তোমার সাথে কথা বলবো।”

এই বলে দিলরুবা খানম সবাইকে নিয়ে বাইরে গেলেন। আয়মান চৌধুরীর পরিবার ও এসেছে আজ। সমশের চৌধুরী, জাহানারা চৌধুরী, আশা চৌধুরী, আজান ,মুন ও এসেছে সাথে মায়মুনা চৌধুরী ও এসেছেন। হাসপাতালে এসে দেখলো সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে তাই এগিয়ে গিয়ে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“কিরে এহসান সবাই বাইরে কেন?”

এহসান খান হেঁসে বললেন,,

“তোর মেয়ের জামাই তোর মেয়ের কেবিনে ঘুমাচ্ছে ঘুমে ডিসটার্ভ হবে দেখে সবাই বাইরে।”

“তা আমার মেয়েও কি ঘুমে নাকি?”

‘না তোর মেয়ে জেগে আছে তার জামাইকে পাহাড়া দিচ্ছে। যাতে তার জামাই এর ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে।”

এই কথা শুনে আয়মান চৌধুরী জোরে হেঁসে ফেললেন।তা দেখে সবাই হাসলো। তখন হির বলল,,

“আসলে ভালোবাবা কাল রাতে মেঘের জ্বর এসেছিল। ধূসর ভাইয়া সেবা করেছে রাতে ঘুমাতে পারে নি। তাই এখন ঘুমাচ্ছে নীলি একটু জোরে কথা বলেছিল বলে তোমার মেয়ে বলল আস্তে কথা বলতে তাই আমরা চলে
এলাম। কথাই বলবো না যেখানে সেখানে আস্তে জোরে কি। এত গুলো লোক গিয়েছি একটা করে কথা বললেই অনেক কথা।”

‘হয়েছে হয়েছে আর আমার শ্বশুর এর কাছে নালিশ দিতে হবে না। ঘুম থেকে উঠে পরেছি আমি। একটু ঘুমিয়েছি বলে এতকিছু । ঘুমাতাম না বুঝলে শালিকা তোমার বান্ধবী ধমকে শুয়িয়ে দিল তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল আমিও ভদ্র ছেলের মতো ঘুমিয়ে পরলাম আর কিছুই না।”

ধূসর কেবিনের বাইরে এসে বললো। ও আরেকটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে বাইরে এসে সবাইকে ভেতরে যেতে বলবে তখন বাইরে এসে কথাগুলো শুনতে পেল। ধূসরের কথা শুনে সকলে হাসলো তখনও চৌধুরী বাড়ির সকলের চোখে বিষ্ময়। মেঘ তার জামাইকে নিয়ে এতো পসেসিব। অতঃপর সবাই ভেতরে ঢুকলো। মেঘ সবার সাথে কথা বললো। মেঘের বান্ধবীরা একটু থেকে চলে গেল। আয়মান চৌধুরী বাদে চৌধুরী বাড়ির আর সবাই ও চলে গেল। ধূসর আর আয়মান চৌধুরী ডক্টরের সাথে কথা বলতে গেছে। দিলরুবা খানম মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,

“ভালো মানুষের সাথে খারাপ কিছু হয় না। আল্লাহর রহমত তোমার সাথে ছিল। সব কিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ।”

” হুম মা আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু মা আমার একটা অভিযোগ আছে। আপনার ছেলের সব মনে পরেছে। সেটা আপনার ছেলে কাল আমাকে বলে নি আজ সকালে বলল যদি ধরা না পরতো তাহলে বোধহয় তাও বলতো না।”

“আর কি বলবো বলো মেঘ আমার ছেলে তো পাগল মাথায় কখন কি চলে বোঝা যায় না। তুমি ঠিক উপাধি দিয়েছো পাগল ডক্টর।”

“বাহ একটু সুস্থ হতে না হতেই আমার নামে নালিশ করছো। আর আরেকজন কে দেখো নিজের ছেলের বিরুদ্ধে ছেলের বউয়ের সাথে তাল মেলাচ্ছে।”

কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলল ধূসর। দিলরুবা খানম হাসলেন আর বললেন,,

“সত্যের সাথে সবসময় থাকতে হয় বুঝলি।”

“হুম হুম আমাকে বলতে হবে না। মেয়েকে পেলে ছেলেকে ভুলে যাও।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ধূসর সব ঠিক আছে এখন বলো তোমার স্মৃতি কিভাবে ফিরলো।”

তখন ধূসর মুচকি হেসে বলল,,

“আপনার মেয়ের জন্য।”

তখন মেঘ অবাক হয়ে বলল,,

“আমি কি করলাম শুনি?”

“আগের দিন রাতে তুমি ফোনে আমাকে আগের ঘটনা বললে। তখন হুট করেই আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয় মনে হচ্ছিল সব আমার সামনেই ঘটছে। কিন্তু যখন তোমাকে নয়না আঘাত করে তখন একই জিনিস বারবার দেখে ওটা আমার মস্তিষ্ক ক্যাচ করে আর তখন আগেকার ঘটনা স্পষ্ট হয়ে উঠে। এমনিতেও তোমার সাথে সময় কাটালে আমার সবকিছু মনে পরতো শুধু আবছা ছিল কিছু স্পষ্ট ছিল না। তোমার ঐ অবস্থা দেখার পর আমার কাছে সব স্পষ্ট হয় আর আমার মনে পরে।”

“ওহ আচ্ছা!”

দুপুরের দিকে ধূসরের পরিবার ও চলে গেল। ধূসর নিচে তাদের এগিয়ে দিতে গেল। আপাতত মেঘ আর আয়মান চৌধুরী আছে। মেঘ শুয়ে আছে। সে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন আম্মা?”

“সেই ছোটবেলার বাদাম খাওয়ার ঘটনা মনে পরছে হুট করে। আব্বা আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। আর বাদাম খেতে ইচ্ছে করছে।

“হুট করে এমন ইচ্ছে হলো কেন আম্মা?

“জানিনা তবে আমার কি মনে হয় জানেন, ভাগ্যিস আপনার সামনে ওভাবে বাদাম খাচ্ছিলাম নাহলে আমার আব্বার সাথে আমার এত সুন্দর সম্পর্কের সন্ধি কিভাবে হতো।”

আয়মান চৌধুরী হাসলেন। আর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। মেঘ চোখ বন্ধ করে সেই ঘটনা ভাবতে লাগলো। তখন মেঘের সবে পাঁচ বছর পরেছে মুন বাদাম খাবে বলে বায়না করে তাই মায়মুনা চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী সব বাচ্চাকে বাদাম দেন। ওদের ড্রয়িংরুমে রেখে নিজেদের কাজে চলে যায়। সবাই বেশ বড় ছিল মুন ,জায়মা,জিয়ান এদের ৭/৯ বছর হবে তখন। ওদের খাওয়া দেখে মেঘ ও বলে সে খাবে। তখন জায়মা ওকে বাদাম দেয় কিন্তু বাদাম কিভাবে খেতে হয় ও জানে না। এমন কি মেঘ খেয়ালও করে না ওরা কিভাবে খাচ্ছে। তাই ওদের জিজ্ঞেস করে কিভাবে বাদাম খায়। এটা শুনে জিয়ান মজা করে বলে ‘এমনি একটা বাদাম গালে দিয়ে ভাতের মতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে হয়।’ মেঘ ঠিক আছে বলে খায় কিন্তু মেঘের ভালো লাগে না। উল্টো গলায় বোধহয় কাঁটা কাঁটা বিঁধে এরকম মনে হয়। মেঘের অবস্থা দেখে সবাই হাসে। ওরা কিছু বলবে তার আগে ওখানে আয়মান চৌধুরী আসেন ওরা ওনাকে দেখেই চলে যায়। যদি বকা দেয় তো। আয়মান চৌধুরী সোফায় মেঘের পাশে বসেন। মেঘ আরেক টা বাদাম খেয়ে বলে ,,

“আব্বা এই বাদাম একটুও মজা না। কতো কষ্ট দেয় গলায় তাও আজ মুন আপু এটা খেতে বায়না করলো।”

মেয়ের কথা শুনে আয়মান চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কেন আম্মা বাদাম তো মজাদার একটা খাবার। এতে তো কোনো তেমন কিছু নেই যে গলায় কষ্ট দেবে।”

“আপনি খেয়ে দেখুন আপনিও কষ্ট পাবেন। এই যে এই ভাবে!”

বলেই মেঘ আরেকটা বাদাম গালে দিল তা দেখে আয়মান চৌধুরী মেয়েকে থামালেন আর বললেন,,

“এভাবে বাদাম খেতে কে বলেছে আপনাকে? এভাবে বাদাম খায় না। এভাবে খেলে তো কষ্ট পাবেনই। বাদাম এভাবে খেতে হয় খোসা ছাড়িয়ে।

বলেই মেঘকে দেখিয়ে খোসা ছাড়িয়ে মেঘের হাতে বাদাম দিলেন । তারপর খেতে বললেন। মেঘ খেয়ে বলল,,

“এটা মজা আছে। আপনি আরো খোসা ছাড়িয়ে দেন আব্বা আমি আরো খাবো।”

মেয়ের কথায় আয়মান চৌধুরী খোসা ছাড়িয়ে দিলেন
হুট করে মেঘ বলল,,

“সবাই আমাকে কষ্ট কেন দেয় আব্বা। আপনি জানেন এভাবে জিয়ান ভাইয়া আমাকে বলেছে বাদাম খেতে। আপনি জানেন মা আমাকে একটুও আদর করে না। কিন্তু মুন আপুকে কতো আদর করে। আজ তো আপু আবদার করলো দেখে মা বাদাম দিল। অথচ আমি দু’দিন ধরে আইসক্রিম খেতে চাইছি কেউ আমাকে কিনেই দিল না। উল্টো বকাঝকা করলো। আমি কি খারাপ আব্বা যে আমাকে সবাই আমাকে কষ্ট দেয়।”

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে আয়মান চৌধুরী কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলেন। মায়মুনা চৌধুরী যে ওকে ভালোবাসে না সেটা সে জানে কিন্তু এতটা অবহেলা মেঘের প্রাপ্ত নয়। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে কোলে নিয়ে বললেন,,

“আম্মা এরপর থেকে সব আমাকে বলবেন। আর কাউকে বলতে হবে না। যেটা না জানেন সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন। আমি আপনার সব কথা শুনবো। আর আপনার আবদার ও পূরন করবো। এখন চলেন আইসক্রিম খেয়ে আসি।”

“আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আব্বা।”

“আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি।”

এভাবেই শুরু হয়েছিল পরিবারের মধ্যে থেকেও বাবা মেয়ের অদ্ভুত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এরপর থেকে মেঘের সবকিছু তাঁর আব্বা। দুজন দুজনকে এতটা ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে যে এই দু’জনের বিপরীতে যদি পুরো পৃথিবী থাকে তবুও এই দুজন এই দু’জনকেই বেছে নেবে। হুট করে ছোটবেলার কথা ভাবতেই মেঘের মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। হুট করে মেঘ চোখ খুলে বলল,,

“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি আব্বা!”

হুট করে মেয়ের মুখে ভালোবাসি শুনে আয়মান চৌধুরী হাসলেন আর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,

“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি আম্মা।”

তখন ধূসর এলো দরজা ঠেলে। আর বলল,,

“বাবা মেয়ে কি করা হচ্ছিল শুনি। খাওয়ার সময় হয়েছে এখন আপনারা খেয়ে নিন।

ধূসর মেঘকে খায়িয়ে ওষুধ খাওয়ালো। আয়মান চৌধুরীর একটা ফোন এলো তিনি বাইরে চলে গেলেন। তখন ধূসর মেঘের হাত ধরে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি দেখছেন?”

“দেখছি নিষ্ঠুর মেয়েটা কে কি অদ্ভুত আব্বাকে কতো সহজে ভালোবাসি বলে দিলে। অথচ আমার ভালোবাসা বলায় নিষ্ঠুরতা দেখায়। সেই ঘটনার সময় দুবার ভালোবাসি বলেছিলে। তাছাড়া এই পাঁচ বছরে কখনো ভালোবাসি বলো নি।”

“ভালোবাসি বলি নি দেখে কি? আপনার কখনো মনে হয়েছে ভালোবাসার কমতি আছে।”

‘তা মনে হয় নি কিন্তু!!’

“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ধূসর।”

ধূসরের মনে পরলো মেঘকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে তাই ধূসর আর কিছু বললো না শুধু বলল,

“হুম ওষুধের প্রভাবে তুমি ঘুমাও।”

মেঘ ঘুমিয়ে পরলো ধূসর মেঘের হাত ধরে মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও মেঘবালিকা এখনো অনেক কিছু করার বাকি। তোমার অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয় নি তো এখনো।”

দেখতে দেখতে সাতটা দিন পার হয়ে গেল। মেঘকে আজ রিলিজ করে দেয়া হবে। মেঘ বহুদিন পর নিজের শ্বশুরবাড়ি যাবে। সবাই বলেছিল মেঘকে চৌধুরী বাড়িতে রাখতে কিন্তু ধূসর আর আয়মান চৌধুরী মানা করেছে বলেছে মেঘ এখন খান বাড়িতেই যাবে। আয়মান চৌধুরী কেন বলেছেন সেটা মেঘ ছাড়া কেউ জানেনা। এখন ও বাড়িতে গেলে রিস্ক হতে পারে তাই আয়মান চৌধুরী নেন নি। সবাই বাড়ির দিকে রওনা হলো কিন্তু ধূসর মেঘকে নিয়ে পরে আসবে বলে জানিয়ে ওকে নিয়ে অন্য একটা জায়গায় গেল। একটা গোডাউনে সামনে নিয়ে গাড়ি থামালো । তা দেখে মেঘ বলল,,

“আমরা এখানে এলাম কেন? আর এটা তো আব্বার গোডাউন।”

ধূসর গাড়ি থেকে নেমে মেঘকে কোলে নিয়ে বলল,,

“চলোই না তারপর দেখতে পাবে।”

“আমি হাঁটতে পারি তো তাহলে কোলে কেন?”

“আমার বউ আমি কোলে নেব তোমার তাতে কি চুপ করে থাকো।”

মেঘকে নিয়ে ধূসর গোডাউনের ভেতরে ঢুকলো। একটা অন্ধকার রুমে নয়না আর আকাশ কে আটকে রাখা হয়েছে । ধূসর মেঘকে নিয়ে ওখানেই ঢুকলো ওখানে কতগুলো গার্ড ছিল ধূসর একজন কে চেয়ার আনতে বলল। লোকটা চেয়ার এনে দিল ধূসর মেঘকে সেখানে বসিয়ে দিল। মেঘ সামনে তাকাতেই দেখলো আকাশ আর নয়নাকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে । মেঘ কিছুই বললো না ও বুঝতে পারল ধূসর ওকে কেন এনেছে। আয়মান চৌধুরী আগেই মেঘকে বলে রেখেছে তাই ও সব বুঝতে পারছে। দুইজন গার্ড গিয়ে ওদের ওপরে এক বালটি করে পানি ফেলল দু’জনে ধরফরিয়ে উঠলো। ওরা চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো মেঘ চেয়ারে বসে আছে তার পাশে ধূসর দাঁড়িয়ে আছে। ওদের অবাক হওয়া চোখ দেখে ধূসর বলল,,

“কি রে ঘুম থেকে উঠে ভাবছিস চোখে ভুল দেখছিস নাকি? আরে নারে ভুল নারে আমি আর মেঘ দু’জনেই সত্যি সত্যি দাঁড়িয়ে আছি।”

এই বলে ধূসর ওদের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর একটা লাঠি নিয়ে আকাশের থুতনির নিচে রেখে বলল,,

“শফিকের থেকে শুনলাম তুই নাকি সেবার আমার মেঘবালিকার মাথায় আঘাত করেছিলি। সেটা তো পুরোনো হিসাব আছেই আবার এই বারো মেরেছিস। তো তোকে কি করা উচিত বলতো।”

নয়না আর আকাশ ভয় পাচ্ছে মেঘ শান্ত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ বলল,,

“আমাদের মাফ করে দাও প্লিজ।”

তখন ধূসর হেসে বলল,,

“একবার হলে মাফ করে দেওয়ার চিন্তা করতাম। কিন্তু একই ভুল দুই বার করেছিস কি করে মাফ করি বলতো।”

বলেই ধূসর আকাশের মাথায় বারি মারলো পর পর দুটো। তারপর ইচ্ছে মতো লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগলো। আকাশ চিৎকার করছে তা দেখে নয়না আরো ভয় পাচ্ছে। না জানি ওর সাথে কি করে। কিছুক্ষণ পর ধূসর থামলো আর বলল,,

“তোকে মেরে ফেললে শান্তি হতো আমার কিন্তু আমি তো খুনী নই তাই এইটুকুই থাক।’

আকাশ খুব ক্লান্ত এতগুলো মার খেয়ে। ওর মাথা হেলে পরছে। এবার ধূসর গেল নয়নার কাছে। ধূসর বলল,,

‘আকাশ শুধু মাথায় মেরেছিল তাই এই অবস্থা। কিন্তু তুই তো আমার মেঘবালিকার জীবনটাই বের করে নিতে চেয়েছিলি তোর সাথে কি করা যায় বলোতো। অবশ্য তুই একটা মেয়ে তোকে তো কিছু করতেও পারবো না।”

তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা বলো তো কি করা যায়।”

মেঘ হেঁসে এগিয়ে আসলো তারপর নয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঠাটিয়ে পরপর কতোগুলো থাপ্পড় মারলো। কিন্তু ও এইটুকুতেই হাঁপিয়ে উঠলো অসুস্থতার জন্য। তখন ধূসর মেঘকে নিয়ে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিল। আর বলল,,

‘এইটুকু থাপ্পড় এ ওর কিছুই হবে না মেঘ। কি করবো তুমি শুধু বলো বাকিটা আমি দেখে নেব। তাছাড়া আমি নিজেকে প্রতিজ্ঞা করেছি আইন শাস্তি দেওয়ার আগে আমি একটু ওদের শাস্তি দেব। এটা বাড়াবাড়ি হবে না প্রতিশোধ নেওয়া হবে। ইসলামে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা আছে কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়া জায়েজ আছে। তাছাড়া আমরা ওদের মতো করবো না। কারন আমরা ওদের মতো নই।

তখন মেঘ বলল,,

“আজ আপনার দিন আমি কিছু জানি না। তবে আমি সুস্থ থাকলে ওর হাত টাই কেটে নিতাম কারন ও ঐ হাত দিয়েই আপনার পেটে ছুরি বসিয়েছিল।”

“বাহ দারুন আইডিয়া গার্ডস একটা বড় দেখে চাকু নিয়ে এসো। আজ একজনের হাতের অপারেশন করবো।”

মেঘ হাসলো অতঃপর গার্ড একটা বড় চাকু নিয়ে এলো। তখন দুজন মহিলা গার্ডস নয়নার ডান হাত খুলে একটা টেবিলের ওপর রাখলো কারন ঐ ডান হাত দিয়ে ওদের মেরেছিল। ধূসরের মধ্যে আজ অন্যরকম হিংস্রতা কাজ করছে। মেঘ শান্ত চোখে দেখছে এর কারন আছে ওর ওপর মেঘের অদ্ভুত রাগ আছে। নয়না বারবার না না করছে ওকে মাফ করে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু ধূসরের কানে পৌছাচ্ছে না। ধূসর সত্যি সত্যি নয়নার ডান হাত কেটে ফেলল। নয়না গগন ফাটিয়ে চিৎকার দিল। তারপর মেঘ বলল ওদের কে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বাকিটা ও কোর্টে দেখে নেবে। ধূসর মেঘকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে