ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৮

0
633

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

হির আর লিয়া বিয়ের ডেকোরেশনের জন্য লোকদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিল। হুট করে হিরের নজর যায় মেঘের দিকে ও মেঘকে দেখে এগিয়ে আসে। তখন মেঘের একটু ওপরে একটা লোক হাতুরি আর লোহা দিয়ে কিছু কাজ করছিল। হুট করেই লোকটার হাত থেকে হাতুরিটা পরে যায়। তাই দেখে হির ‘মেঘ’ বলে দৌড়ে গিয়ে ওকে সরিয়ে আনে তাল সামলাতে না পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে। হুট করে এমন হওয়ায় মেঘ চমকে উঠে। সেই সাথে সকলে । মেঘকে না সরালে হাতুড়িটা ওর মাথার ওপর পরতো।সবাই তাড়াতাড়ি করে ওদের দিকে যায়। হিরের চিৎকার এতটাই জোরে ছিল যে বাড়ির ভেতরে থাকাও মেঘের পরিবার সবাই বাইরে চলে আসে। এদিকে লিয়া সব ঘটনাই দেখেছে তাই ও ওদের কাছে গিয়ে বলল,,

“মেঘ হির ঠিক আছিস?”

হির মেঘকে ছেড়ে দেয় আর দু’জনেই মাথা নেড়ে জানায় ঠিক আছে। এরপর লিয়া রেগে লোকটাকে বলে ,,

“দেখে কাজ করতে পারেন না। এতটা ইরেসপন্সিবল কিভাবে হতে পারেন? দেখছেন এখান দিয়ে লোকজন চলাচল করছে দেখে কাজ করবেন না। হাতুড়ি কিভাবে হাত থেকে পরে যায়। আপনার আইডিয়া আছে এটা যদি মেঘের মাথায় পড়তো তাহলে কি হতো?”

তখন হির বলল,,

“লিয়া একদম ঠিক বলেছে । প্রফেশনাল হয়েও এভাবে ইরেসপন্সিবলভাবে কাজ কিভাবে করতে পারেন?”

ততক্ষনে লোকটা নিচে এসে পরেছে।সে মুখ ছোট করে বলল,,

“সরি ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে । আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারি নি হাতুড়িটা হাত থেকে পরে যাবে। এমনিতে তো সেফটি নিয়েই কাজ করি ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে।”

তখন মেঘ বলল,,

“হির লিয়া ছাড় না কিছু হয়নিতো?”

‘হয়নি কিন্তু হলে কি হতো? অবশ্য তোকে বলে লাভ আছে, নিজের তো একটুও যত্ন নিস না। যত অবহেলা তোর নিজের প্রতি।”

“আহ হা এমন করছিস কেন? উনি তো উনার ভুল স্বীকার করেছে তাহলে। তাছাড়া কেউ ইচ্ছা করে কাউকে আঘাত করে না। এটা একটা এক্সিডেন্ট ছাড় তো ভাইয়া আপনি আপনার কাজ করুন। আর হ্যা এরপর থেকে সাবধানে কাজ করবেন।

লোকটা মাথা নেড়ে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে চলে গেল। তখন হির রেগে বলল,,

“তুই ওনাকে যেতে বললি কেন? তুই না হয় ভালো মানুষ আমি তো না। একদম ধুয়ে ছেড়ে দিতাম।”

তখন মেঘ বলল,

“মাথা ঠান্ডা কর হির! লোকটা কিন্তু তোদের লোকই। একটা ভুল হতেই পারে তাই নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। সবথেকে বড় কথা লোকটার কাছে থেকে ভুলে পরে গিয়েছে আর ক্ষমাও চেয়েছে। অহেতুক রাগ করা বন্ধ কর।”

“তুই!”

“একটাও কথা না চল। ভেতরে চল!”

তখন লিয়া বলল,,

“তুই ওকে থামিয়ে দিলি দেখে নাহলে লোকটাকে জেলে পাঠিয়ে দিতো হির। তার বান্ধবীর মাথায় ভুল করে হাতুড়ি ফেলার অপরাধে। হবু বর পুলিশ থাকলে যা হয় আর কি?”

কথাটা শুনে মেঘ মুচকি হাসলো আর লিয়া একটু জোরেই হাসলো। হির রাগী চোখে ওদের দিকে তাকালো। আয়মান চৌধুরী এইমাত্র বাড়ি ফিরলেন ওদের এক জায়গায় দেখে আর ওনার পরিবার কে ওদের পেছনে দেখে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,,

“কি ব্যাপার বাড়ির সবাই এখানে?”

তখন মেঘ বলল,,

“সবাই মানে আমরা তো তিনজনই?”

“পেছনে দেখেন আম্মা আপনার পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে আছে।”

মেঘ পেছনে ঘুরে দেখলো সত্যি তাই। সকলে যে ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সেটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারলো মেঘ। মেঘ এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“কি ব্যাপার সবাই অবাক হয়ে কি দেখছেন?”

তখন মুন বলল,,

“তুই এনাদের চিনিস?”

“হুম ওরা আমার বান্ধবী হির আর লিয়া।”

“সেদিন বললি না তো?”

‘এমনিই! তাছাড়া ওদের নিয়ে কি বলবো। আজ তো জানতেই পারলে।”

তখন জায়মা বলল,,

“ওরা বোধহয় তোকে খুব ভালোবাসে তাইনা। তোর জন্য নিজেদের কাজ করার লোকের সাথে ওভাবে কথা বলছিল।”

“ওরা ঐরকমই আমায় নিয়ে একটু পসেসিব হাজার হোক বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা। তোমরা সবাই ভেতরে যাও আমি ওদের নিয়ে আসছি।”

সবাই ভেতরে চলে গেল। কিন্তু মায়মুনা চৌধুরী ওদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। হুট করে তার মেয়েকে কেউ এত দাম দিচ্ছে এটা তার মনে অন্যরকম একটা অস্বস্তি দিচ্ছে। তিনি ভেতরে চলে গেলেন বাড়িই ছিল শুধু মায়মুনা চৌধুরী আর আশা চৌধুরী। ছেলেরা সবাই অফিসে আয়না চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী কোথায় যেন গিয়েছে। শমশের চৌধুরী সামনের দোকানে গিয়েছেন আজান কে নিয়ে একটু আড্ডা দিতে বোধহয়। সবাই যেতেই আয়মান চৌধুরী জানতে চাইলো কি হয়েছে লিয়া সব জানালো সবাই বাড়িতে ঢুকলো। মেঘ নিজের জিনিস পত্র নিয়ে আর হিরদের নিয়ে ওপরে চলে গেল। মেঘ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো হির ওর শপিং সব বের করেছে। তা দেখে মেঘ হেঁসে বলল,

“কেমন হয়েছে?”

তা শুনে হির বলল,,

“আমারটা পিংক কালার সেটা বেশি সুন্দর।”

“বাহ জাবিন বলে দিয়েছে?”

“তো বলবে না।”

“হুম তোদের একজনের কাছে যে কথা বলা আর বাকি তিনজনের কাছে বলাও তাই।”

“হুম!”

“বাই দা ওয়ে তোর বিলাই কই?”

“আজানের কাছে রেখে গিয়েছিলাম ওর কাছেই বোধহয়। তোরা কফি খাবি?”

তখন লিয়া বলল,

“এই দোস্ত ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। চল না ফুচকা খেতে তাই।”

“সবে সাতটা বাজে এখন বাড়িতে এলাম আবার যাবো। এনার্জি নাই! তোরা বরং বাড়ি যাওয়ার পথে খেয়ে নিস।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“চল নিচে চল কফি খাই।”

“না এখন বাড়ি যাবো রাত ও হয়ে গেছে ভেবেছিলাম সন্ধ্যার আগেই কাজ বুঝিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো‌। কিন্তু দেরি হয়ে গেল ,তোর সাথে দেখা করার জন্য আবার আরেকটু থেকে গেলাম। আবার দুদিন পর আসবো দেখতে কাজ কতোদূর এগুলো।তারপর একেবারে বিয়ের আগের দিন।”

” ওহ আচ্ছা ।”

ওরা আরো কিছুক্ষন কথা বলে ওদের নিয়ে মেঘ নিচে এসে দেখলো সবাই বাড়ি চলে এসেছে। মেঘ হিরদের বিদায় দিয়ে কিচেনে গিয়ে দুই মগ কফি বানালো তারপর একটা নিয়ে সোফায় বসে খেতে লাগলো। আরেকটা আয়মান চৌধুরীর হাতে দিল। তখন হুট করে রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“তা মেঘ শুনলাম তোমার শোরুম আছে?”

“জি বড় ফুপা আছে। আজ ওখান থেকেই শপিং করেছি।”

“সেটা তো আগে বললেই পারতে তাহলে।”

“আমি বলতে চাইনি তাই। তাছাড়া ওরা যদি আমার শোরুমে না যেত? তবুও আমি ওদের বলতাম না আমার শোরুম আছে ওখানে চলো।”

তখন আয়না চৌধুরী বলল,,

“ওখানে বলে নিয়ে গেলে তো ফ্রিতে দিতে হবে তাই বলে নি?”

এ কথা শুনে মেঘ হেঁসে বলল,,

“আমি প্রফেশনাল লাইফ আর পার্সোনাল লাইফ মিক্সড করি না। তারপরেও ওদের জিজ্ঞেস করুন ছাড় দিয়েছি কিনা? ওদের কে বিশ পার্সেন্ট ছাড় দেওয়া হয়েছে।”

“মাত্র বিশ পার্সেন্ট ছাড় সব ফ্রিতে দিলেই কি?”

“কেন আমি কি ওগুলো ফ্রিতে কিনেছি নাকি! তারওপর আমার দাদুভাই এর টাকা কম আছে নাকি যে তার নাতনির বিয়ের শপিং ফ্রিতে করাবে!”

তখন শমসের চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ যা বলেছে ঠিক বলেছে। সবারই। বি প্রফেশনাল থাকা উচিৎ।”

তখন আশরাফ হক বলল,,

“বাহ বিজনেস ম্যান এর মেয়ে একটা শোরুমের মালিক বিষয়টা খারাপ না। তুমি ও একজন বিজনেস ওমেন। আচ্ছা আয়মান তোর কম্পানির নাম কি?

এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী একটু ভরকালো তবুও নিজেকে শক্ত করে বলল,,

“আমার কম্পানির নাম জেনে তুই কি করবি? আমার কোন জিনিস এ নাক গলাবি না তুই। বোন জামাই বোন জামাই এর মতো থাক।”

“বোন জামাই এর আগে আমরা বন্ধু?”

“একটা বিশ্বাসঘাতক কখনো আমার বন্ধু হতে পারে না।”

বলেই আয়মান চৌধুরী উঠে গেল। তখন আয়না চৌধুরী বলল,,

“তুমি কি এমন করেছো যে? ভাইয়া তোমাকে সবসময় বিশ্বাসঘাতক বলে।”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

“নিশ্চয়ই কোন জঘন্য কাজ করেছে। তা না হলে এক সময়কার কাছের বন্ধু এত সহজে সবার সামনে বিশ্বাসঘাতক বলতে পারে না।”

বলেই মেঘ ও উঠে কফির মগ নিয়ে কিচেনে রেখে ওপরে চলে গেল। ওরা যেতেই সমশের চৌধুরী বললেন,,

“কি এমন হয়েছিল আশরাফ যে আয়মান তোমাকে এভাবে বলে?”

আশরাফ হক আমতা আমতা করে বলল,,

“তেমন কিছু না বাবা একটা মিসআন্ডাস্ট্যান্ডিং হয়েছে। তবে আমি ওকে বোঝাতে চেয়েছি আমার ভুল ছিল না। কিন্তু ও আমার কোন কথা শুনতেই নারাজ। তাই ওটা এখনো রয়ে গেছে।”

“ভুল ধারনা বেশিদিন রাখতে নেই তাহলে সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসে।”

বলেই সমশের চৌধুরী অন্যরকম হেঁসে উঠে গেল। বাকিরাও যে যার মতো চলে গেল।

ছাদে গিয়ে আয়মান চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। মেঘ তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বলল,,

“আব্বা?”

“এমন কি জিনিস আছে যার সত্যতা জেনেও সহ্য করতে অনেক কষ্ট হয়?”

মেঘ হেসে বলল,,

“কাছের বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা।”

“আমি তো ওকে বন্ধু ভেবেছিলাম। তাহলে ও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা কেন করেছিল আম্মা! আর বারবার কেন আমাকেই?

মেঘ আয়মান চৌধুরী কে নিয়ে ওখানে থাকা দোলনায় বসালো আর ওনার হাত ধরে বলল,,

“একদম কষ্ট পাবেন না আব্বা!”

“ওকে দেখলে আমার সহ্য হয় না আম্মা। শুধুমাত্র ওর জন্য আমি ছাত্রজীবনে ইন্টার প্রথম বর্ষে থাকতে অপমানিত হয়েছি। ও নকল নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু স্যার আসতেই সেটা আমার বেঞ্চে রেখে দিয়েছিল নিজেকে বাঁচাতে।স্যার সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই সবার সামনে আমাকে অপমান করেছিল।এমনকি আব্বাকে জানায় সামান্য ক্লাস টেস্টে যদি নকল করে তাহলে বার্ষিক পরীক্ষায় কি করবো। লজ্জায় সেদিন বাবাকে বলতে পারি নি আমি এই কাজ করি নি আমার বন্ধু আশরাফ করেছে। কারন সে যে আমার বন্ধু আর আব্বা তাকে খুব স্নেহ করতেন। যদি বলে নিজে বাঁচতে ওর কথা বলছি। তাই বলি নি কিন্তু ও একজন ড্রাগ এডিক্টেড এবং সেগুলোর ব্যবসা করতো। আমি জানতে পারলাম পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর। আমি পুলিশ কে জানাতে চাইলে ও কিভাবে জেনে ফেলে কিন্তু এতটাই ধূর্ত যে তাড়াতাড়ি করে আব্বাকে আর আয়নাকে পটিয়ে আমার বোনকেই বিয়ে করে নিল। আর আমাকে বলল পুলিশ কে জানালে আমার বোনের ওপর টর্চার করবে এমন কি মেরে ফেলতেও হাত কাঁপবে না। ও এগুলো ছেড়ে দেবে নতুন বিজনেস শুরু করবে বলে কথাও দিল ও নাকি আয়নাকে ভালোবাসে। আমি শেষবার সুযোগ দিলাম। ও করলোও তাই আমি ভেবেছিলাম হয়তো ও ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু না আমাকে নিচে নামাতে যা কিছু করতে পারে ও। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে এতকিছু। আমি সবসময় ফাস্ট বয় ছিলাম ও সেকেন্ড নাহলে এহসান সেকেন্ড থাকতো। সেটা ওর সহ্য হতো না। এমনকি আমি মায়মুনা কে পছন্দ করতাম বলে ও মায়মুনা কে পেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওকে পায় নি বলে ও আমার বোনকেই ভালোবাসার কথা বলে বিয়ে করে যাতে আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারে। ও একটা কারনে আয়নাকে বিয়ে করেনি এটা কারনেও বিয়ে করেছে। তাছাড়া এতদিন যা,,

আয়মান চৌধুরী কে আর বলতে না দিয়ে মেঘ হাত শক্ত করে ধরে বলল,,

“আব্বা শান্ত হন! আমি সব জানি হায়পার হয়ে যাচ্ছেন তো।

আয়মান চৌধুরীর চোখ ছলছল করছে পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা সব মনে পরছে। আয়মান চৌধুরী নিজেকে শান্ত করে বলল,,

“আম্মা আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি?”

মেঘ সোজা হয়ে বসে মাথা নাড়ালো আয়মান চৌধুরী মেয়ের সম্মতি পেয়ে মেঘের কাঁধে মাথা রেখে বলল,,

“আমার সাথেই কেন হলো আম্মা?”

“আব্বা একদম মন খারাপ করবেন না। আপনি কি জানেন না,,রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ
আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন, তাকে তিনি দুঃখকষ্টে রেখে পরীক্ষা করেন !
সহীহ বুখারী: ৫৬৪৫

এই দুঃখ কষ্ট তো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। যারা ধৈর্য্য ধরে সেই সময়টা কাটাতে পারে সেই তো সফল আব্বা। আর কিছুটা সময় ধৈর্য্য ধরে নিন।
‘ধৈর্য্য মানুষকে ঠকায় না,
বরং উত্তম সময়ে শ্রেষ্ঠ উপহার দেয়।
সূরা যুমার – ১০
আবার আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জেনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটে।
_সুরা বাকারা: ২১৪
সময় সঠিক হলে সবকিছুই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর তো কিছুটা সময়।”

আয়মান চৌধুরী সবটুকু মন দিয়ে শুনলো তার মনটা ভালো হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন,,

‘আপনার সাথেও তো আম্মা কম খারাপ কিছু ঘটেনি তারপরেও আপনি।”

“আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে। আমি মন থেকে এই কথাটা মানি আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ছেড়ে দেন না।একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই নিখুঁত, সর্বশক্তিমান, অমুখাপেক্ষী, দানশীল ও পরম দয়ালু। তাঁর প্রতিই সর্বাবস্থায় ভরসা রাখুন।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
“আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?”
[সূরা যুমার: ৩০]

“যে ব্যক্তি আল্লাহ্ র উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” [সূরা ত্বলাক্ব: ৩]

আমার জন্য আমার রব যথেষ্ট। তারওপর একটা জিনিস কি জানেন আব্বা আমার জীবন নিয়ে আমার তেমন কোন প্রত্যাশা নেই, আশা নেই, চাহিদা নেই। যেখানে কোন এক্সপেক্টেশন নেই সেখানে যা পাবো সেটাই আমার কাছে অনেক মনে হবে।যেখানে আমার কোন এক্সপেক্টেশন নেই সেখানে আমার খারাপ লাগাটা ও নেই। তাছাড়া আপনি আছেন তো আমার সুখ। আমার জীবনে শুধু দুঃখ আছে সুখ নেই নাকি। এই যে আপনি, ধূসরের পরিবার আমার বন্ধুমহল। বাকি সব বাদ দিয়ে যদি এই কয়েকজন মানুষ কে নিয়ে আমার জীবন সাজিয়ে বলি তাহলে আমার থেকে সুখী তো আমি কাউকে দেখছি না। সবথেকে বড় কথা কি জানেন আব্বা? ধূসর আমাকে ভুলে গেছে তবুও আমায় নিয়ে তার পাগলামি বেড়েছে। এখন বলুন তো আমি কেন বলবো না।”

আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আপনি ঠিক বলেছেন আম্মা যার এক্সপেক্টেশন কম সেই তার জীবনে সুখী।”

“দেখেছেন আব্বা আমরা কথা বলতে বলতে কোথা থেকে কোথায় চলে গিয়েছি।”

“শুকরিয়া আম্মা আমার মনকে শান্ত করার জন্য।’

” হুম এখন রাতের শান্ত প্রকৃতি অনুভব করুন।”

“হুম!”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী নিজেদের মতো সময় কাটাতে লাগলো। এদিকে মায়মুনা চৌধুরী এসেছিলেন আয়মান চৌধুরী কে ডাক দিতে আর জায়মারা এসেছিল মেঘকে ডাকতে। এভাবে বাবা মেয়েকে দেখে কেউ তাদের ডিস্টার্ভ করলো না।
__________

দেখতে দেখতে মুনের হলুদের দিন এসেই পরলো। এ কয়েকদিন এ ধূসর মেঘকে ফোন দেয় নি জেদ করে। কিন্তু মেঘ ঠিকই তার ব খোঁজ নিয়েছে। মেঘের মামার বাড়ি থেকেও দুদিন আগেই সবাই এসে পরেছে।সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত। মেঘ ড্রয়িংরুমে ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল তখনি আগমন ঘটে ধূসরদের পরিবারের ধূসর আর দিশান ছাড়া ওরা বিকেলে আসবে। মেঘ এক কোনে দাড়িয়ে নিজের মতো কথা বলছিল হুট করেই মেঘের নজর যায় তাদের দিকে দিলরুবা খানম এক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে ছলছল করে তাকিয়ে আছে। মেঘ ফোনে কথা বলতে বলতেই তাদের দিকে আসে। তারপর ফোনটা কাটতেই দিলরুবা খানম মেঘকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেঘ ও তাকে দুই হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে। সবাই অবাক চোখে মেঘ আর দিলরুবা খানম কে দেখে। ওদের এভাবে দেখে সকলেই ড্রয়িংরুমে চলে এসেছে। মায়মুনা চৌধুরী অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেঘদের দেখছে। এদিকে দিলরুবা খানম কিছু বলছে না তা দেখে মেঘ ফিসফিস করে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম মা কেমন আছেন?”

দিলরুবা খানম মেঘকে ছেড়ে কপালে চুমু খেয়ে গালে হাত রেখে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো?

মেঘ হেসে বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!

তখন মায়মুনা চৌধুরী ওদের কাছে এসে বলল,,

“এনারা কারা?”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ওরা হলো এহসানের পরিবার। এহসান আমার বন্ধু তুমি চেনো তো?”

তখন আয়না চৌধুরী হুট করেই বলল,,

“হ্যা এহসান ভাইকে চিনি কিন্তু ওনাদের পরিবারের সাথে মেঘের কি সম্পর্ক? না মানে জরিয়ে ধরলো আবার চুমুও খেল।”

মেঘের কেন জানি খুব হাঁসি পেল। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আমরা পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম একসময়। তাই ওদের সাথে আমাদের বন্ডিংটা সুন্দর । আর ভাবি তো মেঘকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন।”

মেঘ দেখলো রোহিনী আর নোলক ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মেঘ ওদের কে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,

“তোমাদের কথা হাড়িয়ে গেছে বুঝি? নাকি আমায় ভুলে গেছো আমার কাছে গেলে না।”

রোহিনী হেসে মেঘকে ছেড়ে বলল,,

“কি বলি বলো তো মেঘ। তুমি আমার বান্ধবী+ বোন কোনটা বলবো বুঝতে পারছি না। আর নোলক তোমাকে আপু বলার জন্য টানা তিন দিন প্যাক্টিস করেছে।”

নোলক হেঁসে বলল,,

“কি করবো বলো ভা আপু । সরি আপু, আপু যে হতেই চায়না পাঁচবছর এর অভ্যেস কয়েকদিনে কি পরিবর্তন হয়।”

“তা দিশান ভাইয়া কোথায়?”

“শুধু দিশান নাকি ধূসর ও আছে এই প্রশ্নে?”

রোহিনীর কথায় মেঘ হাসলো আর বলল,,

“আমি তো একজনের কথা জিজ্ঞেস করলাম?”

“আমি দু’জনের কথাই বলছি দিশানের অফিসে একটা মিটিং আছে বিকেলে আসবে। আর ধূসরবাবুর ও একটা অপারেশন আছে সেটা শেষ করে বিকেলে আসবে।”

“ওহ আচ্ছা!”

মেঘ ওদের সাথে কুশল বিনিময় করে রিমঝিম কে কোলে নিলো । ওদের কপালে চুমু দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো। ওরা আন্টি বলা শিখে এসেছে তাই সমস্যা নেই। তারপর এহসান খান এর সাথে গিয়ে কুশল বিনিময় করলো। মায়মুনা চৌধুরী আর আশা চৌধুরী কিচেনে ওনাদের জন্য নাস্তা বানাচ্ছিল তখন হুট করে আশা চৌধুরী বলল,,

“দ্যাখ মায়মুনা মেঘকে আজ কতো খুশি আর স্বাভাবিক লাগছে। এহসানের পরিবারের সাথে কতটা ফ্রি ভাবে কথা বলছে। মনে হচ্ছে ওদের পরিবারের সদস্য মেঘ। বাচ্চা থেকে শুরু করে এহসান পর্যন্ত মেঘের সাথে ফ্রি। আবার দ্যাখ মেঘের মুখে হাঁসি দেখা যায়না আর ওনারা আসার পর দ্যাখ মেঘের মুখ থেকে হাঁসি সরছেই না।”

আশা চৌধুরীর কথা শুনে মায়মুনা চৌধুরীর বুকটা জ্বলতে লাগলো কিন্তু কেন সেটা তিনি বুঝেও বুঝতে চাইছেন না। তিনি শুধু ছোট করে বললেন,,

“হুম!”

মেঘই এসে সকলের জন্য নাস্তা নিয়ে গেল। সবাই কে নিজেই সার্ভ করলো। তখনি বাড়িতে ঢুকলো নীলিমা আর ওর হাজবেন্ড আর নীল। ও ‘আম্মু” বলে চিৎকার দিল। হুট করে এমন হওয়ায় সবাই চমকে উঠলো। নীল দৌড়ে আসছে তা দেখে মেঘ হেসে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো নীল দৌড়ে গিয়ে মেঘকে জরিয়ে ধরলো। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না মেঘকে কেন আম্মু বলছে। মেঘ বলল,,

‘নীলবাবু আস্তে আস্তে পরে যাবে তো?”

“অনেক দিন পর দেখা হলো আম্মু তাই আর কি?”

“হুম কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও ভালো আছি।”

তখন নীলি ওদের কাছে এসে হেঁসে বলল,,

“না ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি না। ও আমার ছেলে। কিন্তু মেঘকে নিয়ে এমনভাবে চিল্লাচিল্লি করে যে কেউ মনে করবে নীল ওর ছেলে।”

তখন নীল বলল,,

“মা তুমি তো আমায় বকো আম্মু কি আমাকে বকে? বরং আমাকে তোমার বকুনির হাত থেকে বাঁচায়।”

“এত দেরি হলো কেন তোদের? আর জাবিন কই?”

মেঘের কথায় তখন দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে জাবিন বলল,,

“এই যে আমি ওদের সাথেই এসেছি কিন্তু বাহির থেকে হির আটকে দিয়েছিল তাই।”

“তা ঐ দুই মহাশয়া কোথায়?”

“এই মেঘ আমরা এখানে?”

বলেই হির আর লিয়া হাজির। মেঘ তার বান্ধবীদের দেখে হাসলো। অতঃপর সবাই সবার পরিচয় পেয়ে গেল। এবং সবাই জানতে পারলো মেঘের জীবনে চার চারটা ভালো বন্ধু রয়েছে এবং তাকে ভালোবাসার জন্য আয়মান চৌধুরী বাদ দিয়ে আরো অনেকে রয়েছে। মেঘের তিন বান্ধবী মেঘের রুমে থাকবে। বাকি সবাই গেস্ট রুমে থাকবে বলে জানানো হলো। মেঘের কাছের মানুষদের দেখে চৌধুরী বাড়ির সকলে অবাক।

বিকেল বেলা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখে চোখে প্রশান্তি নেমে আসে। এতদিন যে বিরহে ছিল তা নিমিষেই উধাও হয়ে মুগ্ধতা ঘিরে ধরে। সামনে থাকা মানুষটার দিকে নজর পরতেই চোখ স্থির হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,,

“আরে আপনি এখানে? অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার সাথে দেখা হবে ভাবতেই পারি নি।”

~চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে