ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

0
1300

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#সমাপ্তি_পর্ব
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

বাইরে বৃষ্টির বেড়েই চলেছে সেই সাথে ধূসর আর মেঘের ভালোবাসার প্রকাশ। গাড়ির কাঁচে বৃষ্টির পানি যেন আঁচড়ে পরছে সেই সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে একে অপরের কষ্টগুলো। একে অপরকে আপন করে নিচ্ছে নিজেদের ভালোবাসার চাদরে হয়তো ভয় থেকেই যদি শেষটা অনাকাঙ্ক্ষিত হয়। বিশেষ করে মেঘের সে যে তার প্রেমিক পুরুষ কে অনেক ভালোবাসে তার প্রেমিক পুরুষ যেভাবে তাকে হারাতে চায় না তেমনটা সেও হারাতে চায় না। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বৃষ্টির গতি কমে এলো। মেঘ ধূসরের বুকে মাথা রেখে গাড়ির জানালার কাচ দিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছে। এখনো সে ধূসরের কোলেই বসে আছে। হুট করে মেঘ বলল,,

“জানালাটা খুলে দিন না বৃষ্টি টা একটু ভালোভাবে অনুভব করি।”

তখন ধূসর হেসে বলল,,

“এখন কাজটা কি ঠিক হবে। এমনিতে বৃষ্টি তে ভিজেছো এখন ঠান্ডা হাওয়া লেগে জ্বর আসতে পারে। তাছাড়া বাড়ি ফিরতে হবে তো!

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না। এই যে কতো সুন্দর মুহুর্ত কাটাচ্ছি। কি সুন্দর বৃষ্টিবিলাস করছি গাড়ির মধ্যে থেকে।”

ধূসর দুষ্টু হেসে বলল,,

“গাড়ির মধ্যে একটু আগে প্রেমবিলাস করলে সেটা কি ছিল শুনি! তবে আরেকটু প্রেমবিলাস করলে মন্দ হতো না।

ধূসরের কথার মেঘ ও আজ সায় দিয়ে বলল,,

“আপনাকে কেউ বাঁধা দিয়েছে নাকি আজ কিন্তু নিষ্ঠুর মেয়েটাই প্রথমে আপনার নিকট এসেছে।”

“তারমানে বলতে চাইছো আমরা আজ বাড়ি না ফিরি!”

“আমি জানি না আপনার ইচ্ছে!”

“তাই বুঝি!”

“সত্যি তাই!”

ধূসর আরো কিছু বলবে তার আগেই মেঘ ধূসরের কোল থেকে নেমে গাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে আরও আগেই চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেও মেঘের ফাঁকে ফাঁকে চাঁদকে উকি মারতে দেখা যাচ্ছে যার জন্য একেবারে অন্ধকার নয় হালকা আলো ও আছে। দূরদূরান্তে কাউকে নজরে আসছে না হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ির থেকে নেমে সে নদীর ধারে গেল হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছে মেঘের খুব ভালো হালকা বৃষ্টি হালকা বাতাস এসে ওর গা ছুয়ে দিচ্ছে এখন মাথায় হিজাব নিকাব কোনটাই নেই হাটু লম্বা চুলগুলো এলোমেলো ভাবে পরে আছে কাধে। যা এখন হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চাইছে।ধূসর মেঘের পেছনেই বেরিয়ে এসেছিল ।মেঘকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো মেঘ দুই হাত ছড়িয়ে দিল পাখিদের ন্যয়। ধূসর মুগ্ধ চোখে তার মেঘবালিকা কে দেখতে লাগলো। ধূসর পাশে গিয়ে দাড়াতেই মেঘ বলল,,

“ধরনী এত সুন্দর কেন ধূসর। মনে হচ্ছে অন্যদিনের তুলনায় আজ বেশিই সব সুন্দর লাগছে। আচ্ছা লোকে বলে মানুষের বিদায় ঘন্টা এসে গেলে নাকি সবকিছুই অনেক ভালো লাগে আমার বেলায় তেমনি হচ্ছে নাকি প্রিয়মানুষটা পাশে আছে বলে এমন লাগছে।”

হুট করেই ধূসরের মস্তিষ্কে পুরোনো কথারা আন্দোলন শুরু করলো। মনে হলো মেঘবালিকার সময় ঘনিয়ে আসছে বোধহয় পুরোনো ভয় গুলো বিদ্রোহী হয়ে উঠলো আবারো। কিন্তু সেসব কে এই সময় সাইডে রেখে বলল,,

” প্রিয় মানুষ টা পাশে আছে বলেই হয়তো বা। প্রিয় মানুষ টা পাশে থাকলে সবসময় ভালো লাগে এটা আমাদের অদ্ভুত আনন্দ ও প্রশান্তি দেয়। সব থেকে প্রশান্তি কি দেয় জানো প্রিয় মানুষটার মুখের হাসি। প্রিয় মানুষটার হাঁসি বড্ড বেশিই ভালোবাসি সবথেকে বড় কথা আমি তোমায় ভালোবাসি।’

“বাহ জনাব আজ খুব ভালোবাসি প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এই নিষ্ঠুর মেয়েটার যে আপনার ভালোবাসা প্রকাশে একটু বাগড়া দিতে ইচ্ছে হলো।”

“ইচ্ছে হলো কি বলছো বাগড়া তো দিয়েই দিলে।”

মেঘ হাসলো অদ্ভুত সেই হাসি। ধূসর মুগ্ধ চোখে দেখলো তা। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে দু’জনেই তাই দেখে ধূসর বললো,,

“আমরা ভিজে যাচ্ছি সে খেয়াল আছে এখন চলো বাড়ি ফিরবো অন্ধকার হয়ে গেছে।এরপর জ্বর আসবে কিন্তু বলে দিলাম তাছাড়া রিপোর্টটাও নয়টায় দিবে সে খেয়াল আছে।”

মেঘের হাসিটা গায়েব হয়ে গেল রিপোর্টের কথা শুনে মেঘ বলল,,

“এখন গাড়িটা আমি চালাবো ঠিক আছে!”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

মেঘ আর ধূসর গাড়িতে চড়লো। মেঘ গাড়িতে উঠেছে কিন্তু স্টার্ট দিচ্ছে না। তা দেখে ধূসর ওর দিকে তাকালো মেঘ ওর দিকে আগে থেকেই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল। ও তাকাতেই মেঘের চোখের গভীরতা দেখে ও থমকালো। ও কিছু বলবে তার আগেই হুট করে মেঘ লাইট অফ করে দিল।

__________________

“এই যে ম্যাডাম এই বৃষ্টির মধ্যে এখানে কি করছেন?”

কারো কথা শুনে হির সামনে তাকাতেই দেখলো অনিক গাড়ি থেকে নেমে আসলো। তা দেখে হির বলল,,

“মানুষ বৃষ্টির মধ্যে ছাউনির নিচে কি করে? আজব প্রশ্ন করেন!”

হিরের কথায় অনিক হাসলো আর বলল,,

“রিক্সা পান নি বুঝি!”

“রিক্সা পেলে নিশ্চয়ই এখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম না।”

“চলুন আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।”

“কোন দরকার নেই আমি রিক্সা পেলে চলে যাবো।”

“আপনার কি মনে হয় এই বৃষ্টির মধ্যে রিক্সা পাবেন এটা ভাবাও বোকামি। রাত হয়েছে চলুন!

“এখানে আরো অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে রাত হয়েছে তাও তাহলে আমি থাকলে সমস্যা কি?”

“আরো অনেকে আছে বলেই তো সমস্যা মিস মুমতাহিনা হির।আই থিংক আপনি বুঝতে পেরেছেন কি বলেছি!”

হিরের বাকি সবার দিকে তাকালো সেখানে দুজন বয়স্ক মহিলা রয়েছে ঠিকই আর সবাই ছেলে মানুষ। কয়েকজন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তখন অনিক বলল,,

“এবার নিশ্চয়ই বাঁধ সাধবেন না!”

হির গিয়ে পেছনের দরজা খুলে বসে পড়লো। তা দেখে অনিক হাসলো। অনিক গিয়ে নিজের জায়গায় বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। কিছুক্ষণ মৌনতা ভেঙে অনিক বলল,,

“আজ মেঘের ব্যাপারটা শুনলাম বেশ খারাপ লেগেছে।”

হুট করে বান্ধবীর কথা মনে পরে হিরের চোখ ছলছল করে উঠলো। হির বলল,,

“কিছু হবে না মেঘের। মেঘ একদম ঠিক আছে। আর রিপোর্ট টাও দেখবেন ভুল ছিল।”

অনিক বুঝতে পারল হিরের মনটা খারাপ হয়ে গেছে কন্ঠটাও কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। অনিক প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ সব ঠিকই হবে আপনার বান্ধবীর কিছু হবে না।বাই দা ওয়ে আপনি কিন্তু সেদিনের জবাব দেন নি?”

হির অবাক হয়ে বলল,,

“কোন দিনের?”

“ঐ যে আপনাকে বললাম আমাকে বিয়ে করবেন কি না?”

হির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“আমার সম্পর্কে আপনি কি জানেন? যে বিয়ে করতে এলেন আমার ফ্যামিলি ব্র্যাকগ্ৰাউন্ড শুনলেই তো,,,

অনিক হিরকে আর বলতে না দিয়ে নিজেই বলতে শুরু করল,,

“হির আমি তোমার সবকিছুই জানি এমনকি ফ্যামিলি সম্পর্কেও আমার কোন আপত্তি নেই এমন কি আমার মায়ের ও । বরং আমার সম্পর্কে তুমি কিছু জানো না। আমি যখন এইচএসসি দিই দিয়ে অনার্সে ভর্তি হই তখন আমার বাবা মারা যায় তারপর থেকে মা-ই আমার সব। আমার বাবা একজন পুলিশ ছিলেন সেই হিসেবে জবটা পেয়ে যাই তারপর থেকেই মা ছেলের জীবন। এতগুলো বছর হয়েছে তুমি জানো কাউকে দেখে আমি মুগ্ধ হতে পারি নি। মা বলতো বিয়ে করতে কিন্তু কারো মুগ্ধতা আমাকে আটকে দিতে পারেনি।কিন্তু তোমাকে প্রথম ধূসরদের বিয়েতে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। অল্প দিনের পরিচয় আমাদের কিন্তু মনে হয় আমার অনেক দিনের পরিচিত তুমি। বাড়িতে গিয়েই মাকে জানিয়েছিলাম মা বলে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। আমিও সেদিন তাই করেছিলাম তারপর মনে হলো এত তাড়াতাড়ি করা ঠিক হয় নি তোমাকে আগে জানতে হবে তোমার পরিবার কে সেটা দেখতে হবে তোমার পরিবার আমাকে পছন্দ করবে কি না তাও একটা কথা অতঃপর তোমার ব্যাপারে খোঁজ লাগালাম আর সব জানতে পারলাম একটু তোমার জন্য খারাপ লেগেছিল মাকে জানালাম মা কি বলল জানো মা বলল মেয়েটা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে এতে তো মেয়েটার দোষ নেই। তাদের পৃথিবী আলাদা আর মেয়েটার পৃথিবী আলাদা। তুই বরং মেয়েটাকে আমাদের মা ছেলের পৃথিবীতে যত্ন করে তার আগমন ঘটা তারপর তার পৃথিবীকে রঙিন করে তোল যাতে তার জীবনের অপূর্ণতা সব ধুয়ে মুছে যায়। ”

হির কিছু বলবে তার আগেই অনিক গাড়ি থামিয়ে দিল তা দেখে হির বলল,,

“গাড়ির থামালেন কেন?”

“আপনার বাড়ি এসে গেছে।”

নিজের প্রশ্নে নিজেই লজ্জা পেল হির। সে গাড়ি থেকে নেমে একপা এগিয়ে গিয়ে গেল আবার কি ভেবে পেছনে তাকিয়ে বলল,,,

“আপনার পাশের সিটে বসার জন্য আমি রাজি মিস্টার অনিক!”

বলেই হির চলে গেল এদিকে অনিক তো হা হয়ে হিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে হুট করেই যখন বুঝতে পারলো হির কি বলেছে অনিকের মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। ও হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। হিরের ও অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে সেদিন ভেবেছিল অনিক তার পরিবারের কথা জানলেই সবার মতো আর ওর কাছে আসতে চাইবে না কিন্তু এখানে ঘটনাই উল্টো।

_________________

“ছেলে মেয়ে দুটো আসছে না কেন বলো তো এহসান? বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে রাত আট টা বাজতে চললো অথচ তাদের দেখা নেই।”

দিলরুবা খানমের চিন্তিত কন্ঠের কথা শুনে এহসান খান বলল,,

“এত চিন্তা কোরো না তোমাকে না ওরা বলে গেল হাসপাতাল থেকে আসার সময় ওরা ঘুরতে যাবে দেখো হয়তো নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে আজকের দিনটা একটা অন্যরকম দিন হয়তো নিজেদের কষ্ট ভুলতে একে অপরকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছে।”

“তাই বলে এই বৃষ্টির মধ্যে!”

“তাহলে হয়তো দেখো বৃষ্টির মধ্যে কোথাও আটকা পড়েছে!”

“ফোন করলাম দুই বার ধরলো না এখন দু বারের বেশি ফোন করাটাও অনুচিত তাই আর করছি না।”

“চিন্তা কোরো না এসে পরবে তোমার বউমা বা তোমার ছেলে কেউ ইরেসপন্সিবল নয়।”

তখন দিশান বলল,,

“বাবা একদম ঠিক কথা বলছে দেখো ঠিক চলে আসবে।”

তখন নোলক বলল,,

“ঐ তো এসে গেছে !”

মেঘ আর ধূসর ফিরেছে কাক ভেজা হয়ে। মেঘ মাথায় হিজাব টা এমনিই দিয়ে রেখেছে আর পুরো কাঁধ ঢেকে এসেছে সাদা শাড়ি পরেছে এটা সে ভুলেনি। ওদের ভেজা দেখে দিলরুবা খানম বলল,,

“এই তোরা ভিজলি কি করে?”

” মা জ্বর বোধহয় তোমার বউমা এনেই ছাড়বে তোমার বউমার জন্য আজ দুই দুইবার ভিজতে হয়েছে বৃষ্টি টা থামলো না বলে আবার ভিজেই এইটুকু আসতে হলো। এখন ওপরে যাচ্ছি তাড়াতাড়ি দুই মগ স্ট্রং কফি পাঠাও।

“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি যা তোরা ভেজা গায়ে থাকিস না। ”

মেঘ আর ধূসর চলে গেল ওপরে ধূসর মেঘকে বলল আগে ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করতে। মেঘ চলে গেল ওয়াশরুমে একদম গোসল শেষ করে একেবারে বের হলো। তারপর ধূসর গেল মেঘের খুব লজ্জা লাগছে গাড়ির ভেতরের কথা ভেবে। ততক্ষনে নোলক ওদের কফি দিয়ে গেল তার কিছুক্ষণ পর ধূসর বের হলো তারপর কফির মগটা নিয়ে খেতে লাগলো। কফি খেয়ে বলল,,

“কফিতে কি মিষ্টি কম দিয়েছে নাকি আজ বউ আমার,,

বউ কথাটা শুনে মেঘের কফি গলায় আটকে কাঁশি উঠে গেল। মেঘ বুঝতে পারলো ধূসর কি বলতে চাইছে। মেঘের কাঁশি দেখে ধূসর হাসলো মেঘ অসহায় চোখে তার দিকে তাকালো তা দেখে ধূসর আরো জোরে হেঁসে উঠল তার বেশ লাগছে মেঘকে জ্বালাতে। হুট মেঘ বলল,,

” তখন তার মনে হয়েছিল সামনের মানুষটার সাথে হয়তো সময়ের স্বল্পতা ঘনিয়ে আসছে। তাই সে ভয়ে তাকে আকড়ে ধরেছিল। তার কষ্ট গুলোকে এবং নিজেকে তাকে ভালোবেসে তার মধ্যে বিলীন করতে চেয়েছিল। সময়টা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল হয়তো সেখানে বিলীন হয়ে গেলে এই নিষ্ঠুর মেয়েটার কোন আফসোস থাকতো না। এক সুখের রাজ্যে তার ইতি ঘটতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা যা চাই তা সবসময় হয় না।

মেঘের কথা শুনে ধূসরের হাঁসি মুখটা মুর্ছা গেল। ধূসর মেঘের কাছে এসে বলল,,

“এমন করো বলো না মেয়ে হৃদয়ে যে রক্তক্ষরন হয়।”

মেঘ ধূসরের দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না এই মুহূর্তে তার কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না। তার মাথা ব্যাথা করছে বৃষ্টিতে ভিজছে একটু বেশিই জ্বর বোধহয় এসেই যাবে। কিন্তু সে এখন সেটা ধূসরকে বুঝতে দেবে না। ও চুপচাপ কফি খেতে লাগল ধূসর ও তাই করলো। কফি খাওয়া শেষ হলে মেঘ বলল,,

“আজ নীলকে একদম সময় দেওয়া হয় নি আমি একটু ওদের সাথে দেখা করে আসি।”

ধূসর কিছু বললো না মেঘ চলে গেল। নীল এখন নীলির সাথে নীলির ঘরেই থাকে মেঘ ঘরে গিয়ে দেখলো নীল নিচে বসে কিছু তৈরি করছে আর নীলি ওপর থেকে দেখছে। তা দেখে মেঘ বলল,,

“নীলবাবু কি করছো?”

নীল একবার মেঘের দিকে তাকালো আবার নিজের কাজ করতে শুরু করলো কারন তার অভিমান হয়েছে আজকে সারাদিনে একবারও সে নীলের কাছে আসেনি। মেঘ সেটা বুঝতে পারলো নীলি কিছু বলবে তার আগে মেঘ ইশারা করে তাকে চুপ করতে বলল। মেঘ নীলের সামনে এসে বলল,,

“আমার সাথে কথা বলবে না নীলবাবু?”

“কেউ যেন আমার সাথে কথা না বলে আজ সারাদিন সে বিজি ছিল তার সময় ছিল না আমার সাথে কথা বলার এখন আমিও বিজি আছি তার সাথে কথা বলার সময় নেই আমার।”

নীলের কথা শুনে মেঘ হাসলো।আর বলল,,

“মান হয়েছে বুঝি আমার নীলবাবুর!”

“না সরো আমাকে আমার কাজ করতে দাও।”

“কি করছো? বাড়ি বানাচ্ছো বুঝি তাহলে একটা শক্ত জিনিস দিয়ে বানাও এটা কাগজের বাড়ি একটু ভিজে গেলেই নষ্ট হয়ে যাবে। শুনো নীলবাবু জীবনে যাই করবে সেটা একটু শক্তপোক্ত ভাবে করার চেষ্টা করবে যদি সেটা দুর্বল হয় তাহলে সেটা সহজেই নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু শক্তপোক্ত করে করলে সহজে নষ্ট হবে না।

নীল এবার মেঘের দিকে তাকালো নীল বলল,,

“আম্মু তুমি আজ আমার কাছে আসো নি কেন? জানো আজ কতো কথা বলার ছিল তোমাকে।”

মেঘ নীলকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“এক কাজ ছিল সোনা তাই আসতে পারি নি।”

“তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থেকোনা আম্মু আমার কষ্ট হয়। তুমি তখন তোমার বাড়িতে থাকতে তখন আমার খুব খারাপ লাগতো কিন্তু প্রতিদিন আমার সাথে নিয়ম দেখা করতে, ফোনে কথা বলতে তখন আমার খুব ভালো লাগতো।”

নীলের কথা শুনে মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“আমি তোমার থেকে দূরে যাবোনা নীলবাবু তোমার সাথেই থাকবো। ”

কথাটা বলার সময় মেঘের গলা কাঁপছিল। মেঘ নীলকে ছেড়ে দিয়ে বলল,,

“আচ্ছা হয়েছে আজকের মতো সরি চলো আমি আর তুমি মিলে এখন একটা ঘর বানাবো শক্তপোক্ত যেটা নষ্ট হবে না সহজে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে চলো।”

মেঘ নীলির দিকে তাকালো তার চোখ ছলছল করছে নীলি নিচে নেমে মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“আই লাভ ইউ এন্ড আই নিড ইউ ভেরি ব্যাডলি। নট যাস্ট ফর মি! নীল, ছোট ভাইয়া এমন কি আমাদের পুরো পরিবারের সব থেকে বড় কথা তোর আব্বার।”

মেঘ নীলিকে ছেড়ে মুচকি হেসে বলল,,

“প্রথমটুকু ইংরেজি তে বলার কি দরকার ছিল নিশ্চয়ই পরেরটুকু তুই ভুলে গেছিস তাই না তাই তো বাংলিশ এ পুরো বাক্য কম্পিলিট করলি।”

নীলি মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল সে বললো কি আর মেঘ বলছে কি? মেঘ হেসে বলল,,

“আমি এখন আর মনখারাপ করতে চাই না যা হবে দেখা যাবে। নীলবাবু তোমার মাকে একটু ইংরেজি শিখিয়ে দিও তো তোমার মা ইংরেজি পারে না।”

নীল হেসে বলল,,

“ঠিক আছে আম্মু এবার আসো আমি সব রেডি করে নিয়েছি।”

অতঃপর নীল আর মেঘ মিলে বাড়ি বানাতে শুরু করলো এদিকে ধূসরের টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে সে ওযু করে এলো তারপর নামাজে দায়িয়ে পড়লো শেষ এ কান্না করে খুব করে রবের নিকট কিছু চাইলো। হয়তো তার মেঘবালিকার জন্য। ভাগ্য পরিবর্তনের যে দোয়াই একমাত্র চাবিকাঠি। ধূসর এখন বসে কিছু ভাবছে আটটা পঞ্চাশ বাজে সবাই জেনে নিয়েছে কখন রিপোর্ট দেবে তাই সবাই এখন ধূসরের রুমে নীলিও এসেছে মেঘ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সবাই ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারলো তাই ওকে একা ছেড়ে দিল। অতঃপর মেঘের রিপোর্ট এসেছে সবার চোখ ল্যাপটপের দিকে হুট করেই ধূসর “আলহামদুলিল্লাহ”
বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সবার চোখে আনন্দের অশ্রু। মেঘ ধূসরের আলহামদুলিল্লাহ শুনে ভেতরে এসেছে মেঘকে দেখেই ধূসর মেঘকে জরিয়ে ধরলো তা দেখে সকলে বেরিয়ে গেল। এই সময়টা ওদের একা ছেড়ে দিল। হুট করে ধূসর বলল,,,

“মেঘ তোমার কিছু হয় নি! মেঘ তোমার কিছু হয় নি তুমি একদম ঠিক আছো সেদিন রিপোর্ট ভুল এসেছিল। তোমার রিপোর্ট গুলো দুবার করে চেক করা হয়েছে সেখানেও কিছু ধরা পরে নি মেঘ তুমি ঠিক আছো ডক্টর ঠিকই সন্দেহ করেছিল। নিশ্চয়ই তোমার রিপোর্ট কারো সাথে এক্সচেন্জ হয়ে গেছিল। তুমি হারাবে না মেঘ তুমি আমার সাথেই থাকবে আমার সাথে অনেক পথ পাড়ি দেবে শেষ বয়সে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। আমার সাথে তোমার স্বপ্ন তোমার আশা সব পূরন করতে পারবে মেঘ। আমি তোমায় খুব ভালোবাসি আমার তোমাকে হারাতে হবে না। তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রেখেও অপূর্ণ রাখতে হবে না। সবশেষে তোমায় সাথে নিয়ে আমি বাঁচবো একসাথে একেঅপরের পাশে থেকে একেঅপরকে ভালোবাসে।

বলতে বলতেই ধূসরের চোখ থেকে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পরল সাথে মেঘের ও। হুট করে মেঘ বলল,,

“এই নিষ্ঠুর মেয়েটা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরতার প্রমান দেয় নি ধূসর। এই ধূসর রাঙা মেঘ ধোঁয়াশার মতো হাড়িয়ে যাবে না। সুখের আলো পেয়ে অসমাপ্ত ভাবে হাড়িয়ে যেতে হবে না অন্ধকারে তাকে। ভালোবাসি ধূসর খুব ভালোবাসি আপনাকে।”

“ভালোবাসি আমার মেঘবালিকা খুব ভালোবাসি তোমায়।”

দুজনের মাঝে মৌনতা হয়তো একেঅপর কে অনুভব করছে। হুট করে মেঘ বলল,,

“আমি আব্বার কাছে যাবো ধূসর এখনি।”

ধূসর জানে মেঘ আর তার আব্বার সম্পর্ক কেমন তাই সে মেঘ কে ছেড়ে দিয়ে গাড়ির চাবি দিয়ে বলল,,

“যাও সাবধানে যাবে গিয়ে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিও!”

মেঘ চাবিটা নিয়ে হেসে বলল,,

“শুকরিয়া জনাব! আর হ্যা একটু জাবিন, হির, লিয়া ওদের জানিয়ে দেবেন।

“ঠিক আছে!”

ধূসর মেঘকে নিচে এগিয়ে দিতে এলো এখন বৃষ্টি নেই। নিচে মেঘ সবাইকে বলে বেরিয়ে গেল কেউ বাঁধা দিল না। ধূসর মেঘের বান্ধবীদের জানিয়ে দিল তারা খুব খুশি হলো।মেঘ বিশ মিনিটের মধ্যে তার বাড়ি পৌঁছে গেল। মায়মুনা চৌধুরী দরজা খুলে মেঘকে দেখে অবাক হলো তিনি কিছু বলতে তার আগে মেঘ জিজ্ঞেস করল,,

“আব্বা কি ঘরে?”

“না ঘরে নেই!”

“ওহ আচ্ছা!”

মেঘ একপ্রকার দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল তার আগে ওর মাকে বলে গেল আপনার মেয়ে ঠিক আছে তার কিছু হয় নি মায়মুনা চৌধুরী আনন্দের অশ্রু ফেলল বাকি সবাই ড্রয়িংরুমেই ছিল মেঘ কাউকে পরোয়া না করেই নিজের রুমে গেল কারন তার আব্বাকে সে এখন ওখানেই পাবে। মেঘ দৌড়ে
নিজের রুমে ঢুকলো সে ঠিকই ভেবেছিল। তার আব্বা তার রুমেই আছে তার বিছানায় বসে কিছু একটা দেখছে মেঘ “আব্বা” বলে উঠলো। আয়মান চৌধুরী মেয়ের গলা শুনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“আম্মা আপনি এখন!”

মেঘ ওর আব্বাকে গিয়ে জরিয়ে ধরে বলল,,

“আব্বা আপনার মেয়ে একদম ঠিক আছে। তার কিছু হয় নি। রিপোর্ট টা ভুল ছিল আব্বা। দুঃখের শেষে ক্ষনিকের সুখ পেয়ে হাড়িয়ে যাবে না সে। তার যে তার আব্বার কাঁধে মাথা রেখে অনেক টা সময় কাটানো বাকি। ভাগ্য তার নির্দয় হয় নি ।”

“আমার আম্মা ঠিক আছে তার কিছু হয় নি!”

“হ্যা আব্বা আপনার মেয়ে ঠিক আছে।”

আয়মান চৌধুরী খুশিতে কেঁদে উঠলো। তিনি মেঘকে ছেড়ে দিয়ে মেয়ের গালে হাত রেখে বলল,,

“আপনার ভবিষ্যৎ আপনার অতীতের থেকে উত্তম হোক আম্মা”

“আমিন আব্বা আমিন! চলেন বেলকনিতে যাই।

বাবা মেয়ে মিলে বেলকনিতে গেল মেঘ হুট করে বলল,,

“আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি আব্বা”

আয়মান চৌধুরী হেসে মাথা নাড়লেন মেঘ তার আব্বার কাঁধে মাথা রাখলো । আর বলল,,

“আজকের পরিবেশ টা কি সুন্দর তাই না আব্বা! বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেন পরিবেশ টা সতেজ হয়ে উঠেছে। আমি তো দেখেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি আব্বা।

“শুধু বৃষ্টির জন্য নয় আম্মা এর সবথেকে বড় কারন হলো এখন আপনি এখন খুশি তাই পরিবেশ টা আপনার সুন্দর লাগছে। যখন আমাদের মন ভালো থাকে তখন আমাদের সবকিছুই ভালো থাকে কিন্তু যখন আমাদের মন খারাপ থাকে তখন সবথেকে সুন্দর জায়গাটাও আমাদের মুগ্ধ করতে পারে না।”

“ঠিক বলেছেন আব্বা!”

“তবে জানেন কি আম্মা রাতের পরিবেশ যেমন সুন্দর তেমন ক্ষেত্র বিশেষে অনেক ভয়ঙ্কর ও।”

“আমি বুঝেছি আব্বা আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন। এভাবেই তো আমাকে বাস্তবতা শিখিয়েছেন আব্বা।আপনাকে শুকরিয়া এতো সুন্দর করে আমাকে আগলে রাখার জন্য, বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে সাহায্য করার জন্য, সবথেকে বড় কথা আমাকে এতটা ভালোবাসার জন্য। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি আব্বা।”

“আমিও আপনাকে ভালোবাসি আম্মা!”

মেঘ রাতটা তার পরিবারের সাথে কাটালো পরের দিন মেঘ আবার খান বাড়িতে ফিরে গেল সেদিন আগের ডক্টর ফোন করে জানালো সত্যি সত্যি একজনের সাথে মেঘের রিপোর্ট এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছিল। সেদিন মেঘ দূর্বলতার জন্য মাথা ঘুরে পরে গেছিল। অতিরিক্ত টেনশন স্ট্রেস তার সাথে শরীরটাও বোধহয় খারাপ ছিল তাই ওরকম হয়েছিল।

______________

তিন মাস পর,,

এই তিন মাসে বদলেছে অনেক কিছু। হির আর অনিকের বিয়ে হয়ে গেছে । সেখানে মেঘরা সবাই উপস্থিত ছিল মেঘ হিরের বাবা মাকেও ইনভাইট করেছিল তার এসে তাদের মেয়েকে দেখে গেছে। তাদের হিরকে নিয়ে কোন কিছু বোধহয় আসে যায় না। তেমন হিরের ও যায় না, সে অনিকের মতো হাজবেন্ড আর অনিকের মায়ের মতো শাশুড়ি পেয়ে খুব খুশি। হির, জাবিন, লিয়া জমিয়ে সংসার করছে। মেঘ ও ধূসরের সাথে জমিয়ে নিজেদের সংসার পেতেছে। নীলি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। নীল তার মাকে সম্পূর্ণ সুস্থ দেখে খুব খুশি ।ধূসরের হাসপাতাল আর মেঘ আর পরিবারকে নিয়ে খুব ভালো চলছে। মেঘের যখন কেস আসে তখন আদালতে যায় মাঝে মাঝে শোরুমে গিয়ে সব দেখে আসে। আর অপরাধীরা সকলে তাদের কর্মফল ভোগ করছে। নোলকের এহসান খানের বন্ধুর ছেলের সাথে আকদ হয়েছে কিছুদিন আগে। মেঘ তার আব্বার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে হলেই চলে যায় আব্বার কাছে। মুন কনসিভ করেছে একমাস হলো। জিয়ান ও একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। আগে থেকেই তার পরিবার সম্পর্কে সেই মেয়েকে জানিয়েছে সেই মেয়ের কোন আপত্তি নেই। তাই দুই মাস হলো তারা বিয়ে করেছে। মেঘের মাঝে মাঝে মায়ের সাথেও কথা ওর মা এমন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে যে ও উপেক্ষা করতে পারে না। সে তো মায়ের সান্নিধ্য চেয়েছিল এতকাল সে যে মায়ের ভালোবাসার কাঙাল। তবুও কোথাও একটা কিন্তু রয়েই গেছে তাদের মাঝে। মেঘ তার ধূসর, শ্বশুর শাশুড়ি এবং ধূসরদের পরিবার নিয়ে বেশ সুখেই আছে।

আপাতত মানুষের আনাগোনা নেই রাত্রি বারোটা এই নির্জনে মেঘ আর ধূসর সমুদ্রের পাড়ে খালি পায়ে একে অপরের হাত ধরে হাঁটছে। আজ বিকেলে তারা কক্সবাজার এসেছে নিজেদের শখ পূরণ করার জন্য।দুজনের মুখেই লেপ্টে আছে প্রশান্তিময় হাঁসি। হুট করেই মেঘ একটু দূরে গিয়ে নিচু হয়ে পানি ছিটিয়ে দিল ধূসরের মুখে তা দেখে ধূসর বলল,,

“কি করছো মেঘ ভিজে যাবো তো?”

তখন মেঘ হেসে বলল,,

“ভেজানোর জন্যই তো কাজটা করলাম!”

“তবেরে কিন্তু এখন যা হবে আমি তার জন্য দায়ি থাকবো না বলে দিলাম ।”

“এখন কি হবে!”

ধূসর মেঘের দিকে এগিয়ে গেল আর বলল,,

“এই গভীর রাতে তোমায় গোসল করাবো সমুদ্রের পানি দিয়ে।”

তা শুনে মেঘ ‘না’ বলে দৌড় দিল। ধূসর ও দৌড় দিল মেঘের মুখে হাসি সাথে ধূসরের ও এ যে অন্য এক প্রাশন্তি। কিছুদূর যেতেই ধূসর মেঘের হাত ধরে ফেলল।আর বলল,,

“এবার পালাবে কোথায়?

মেঘ হেসে বলল,,

“পালাবো না তো এবার এখন তো আপনাকে ডুবাবো।”

ধূসর অবাক হয়ে মেঘের চোখের দিকে তাকালো মেঘ এমন ভাবে ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে যে ও মেঘের চোখের গহীনে হয়তো ডুবে যেতে নিল ওর হাত আলগা হয়ে এলো তখন মেঘ ধূসরের হাত ছাড়িয়ে বলল,,

“আপনাকে ডুবানো শেষ এখন পালাবো।”

মেঘ হেসে আবার দৌড় দিল । ধূসর বুঝতে পারলো মেঘের চালাকি তাই ও নিজেও দৌড় দিয়ে বলল,,

“এই নিষ্ঠুর মেয়ে আমাকে ডুবিয়ে তুমি পালাচ্ছো কোথায় দাঁড়াও বলছি।”

মেঘ থামছেই না দৌড়াচ্ছে আর হাসছে অনেক দৌড়ে হাঁপিয়ে উঠেছে তাই মেঘ থেমে সমুদ্রের পাড়ে বালির উপর বসে পরলো ধূসরও মেঘের পাশে বসলো মেঘ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর আসতেই ওর কাঁধে মাথা রাখলো ধূসর হেসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিল মেঘবালিকা কে। হুট করে ধূসর বলল,,

“এখন এই মুহুর্তটা আমার জীবনের সেরা মুহুর্তের মধ্যে একটা।”

মেঘ হেসে বলল,,

“আমারও! শুকরিয়া আমার জীবনে আসার জন্য আমার সব কষ্ট দুঃখ ভালোবেসে ভুলিয়ে এতটা প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য। শুকরিয়া এই নিষ্ঠুর মেয়েকে এতটা ভালোবাসার জন্য ! শুকরিয়া এই ধূসর রাঙা মেঘ কে নিজের ভালোবাসার শুভ্রতা দিয়ে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য। জীবনে হয়তো অনেক মানুষ আসে কিন্তু জীবনসঙ্গীর মতো এতোটা গহীনভাবে কেউ ধারন করতে পারে না। শুকরিয়া আমার জীবনকে নিজের ভালোবাসার গভীর ভাবে আটকে দেওয়ার জন্য আর,

“হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না আমি সব জানি তো। এখন শুধু এই রাতের সমুদ্রকে অনুভব করো সেই সাথে অনুভব করো তোমার পাশে বসা এই আমিকে।”

“আপনি তো আমার প্রিয়জন আমার গহীন অনুভব আপনি তো সর্বদা মেঘের অনুভবেই বিরাজ করেন। আমি খুব লাকি আলহামদুলিল্লাহ যে আপনার মতো একজন উত্তম চরিত্রের জীবন সঙ্গী পেয়েছি।

“আলহামদুলিল্লাহ তুমি কয়েকদিন পর পর আমার সার্টিফিকেট আল্লাহর নিকট পেশ করো!”

“মানে!”

“মানে হলো সাবেক রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দরতম। আর তোমাদের উত্তম ব্যক্তি তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)
আলহামদুলিল্লাহ আমিও খুব লাকি যে তোমার মতো উত্তম সুন্দরতম চরিত্রের স্ত্রী পেয়েছি! আল্লাহ তায়ালা আল কুরআন এর সূরা নূরের ছাব্বিশ নাম্বার আয়াতে বলেছেন যে যেমন চরিত্রের হবে তার জীবনসঙ্গী ও তেমন চরিত্রের হবে। আমাদের নিজের ভবিষ্যতে উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য হলেও আমাদের উচিত নিজেদের কে উত্তম চরিত্রের অধিকারী করা। হাদিসের ভাষায় দুনিয়ার সবচেয়ে দামী সম্পদ কি জানো, একজন নেককার স্ত্রী। আর তুমিই আমার সেই দামী সম্পদ আমার নেককার আদর্শবান উত্তম স্ত্রী, আমার মেঘবালিকা।

মেঘ হেসে বলল,,

“হুম! শুকরিয়া জনাব! আজকের চাঁদটা কি সুন্দর তাই না! সমুদ্রের স্বচ্ছ পানিতে চাঁদের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। এই দৃশ্যটা অনেক সুন্দর।”

‘হুম দৃশ্যটা অনেক সুন্দর। এই ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোকেই তো পূরন করার জন্য এখানে আসা। তবে আরো একটা শখ করছে এখন!

“কি শুনি?”

ধূসর সোজা হয়ে মেঘের মুখোমুখি বসলো তারপর মেঘের চোখে চোখ রেখে বলল,,

“তোমার এই চোখে তাকিয়ে তোমার চোখের গভীরে হারিয়ে যেতে আর এই এত সুন্দর মুহুর্তকে সাক্ষী রেখে তোমার মুখে ভালোবাসি শুনতে! তা নিষ্ঠুর মেয়েটা কি আমার শখ পূরণ করবে।”

মেঘ হাসলো চমৎকার সেই হাসি চাঁদের আলোতে আর সমুদ্রের পানির স্বচ্ছতায় দুজনেরই মুখ চকচক করছে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে দুজনকে। মেঘ ধূসরের দুই কাঁধে দুই হাত রাখলো ওর চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ মৌনতা রেখে বলতে শুরু করল ,,,

আমি ধূসর রাঙা মেঘ,
আপনি মেঘ রাঙা ধূসর গোধূলি!
জীবন মোহনার নীলে,
আমার আকাশে জ্বলজ্বল করে
ধূসর নামক রঙিন রঙে!
ধূসর গোধূলি নিয়ম করে,
আমায় রাঙায় আপন আবিরে!
ধূসর মেঘের তারারা,
জ্বলজ্বল করে উপন্যাসে
রোজ নিয়ম করে ভালোবাসার প্রকাশে!
যদিও নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধির পরশে
কারন সে মুখে প্রকাশ করে না যে তাকে ভালোবাসে,
ভালোবাসি ধূসর স্বপ্ন আমার যতদূর
আমি আপনাকে নিয়ে পাড়ি দিতে চাই বহুদূর!

পরিশেষে তাকে ভালোবেসে,
এই আমি বিলীন হতে চাই
এই ধরনীর বুক থেকে,
সবশেষে এই প্রকৃতি কে সাক্ষী রেখে
আমি বলতে চাই
ভালোবাসি ধূসর খুব ভালোবাসি!

ধূসর আর মেঘ একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে এতক্ষন মেঘ সম্পূর্ণ কবিতা ধূসরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছে। ধূসর পুরো মুগ্ধ হয়ে গেছে হাড়িয়ে গেছে মেঘের চোখের গভীরে। ধূসর ঐ চোখের দিকে তাকিয়েই বলল,,

“আজ আমি আমার নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি তুলে নিলাম মেঘবালিকা। যাতে সে আর পরে আমার ভালোবাসায় তার নিষ্ঠুরতা দেখাতে না পারে। শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে আমি তোমায় ভালোবাসি।”

মেঘ হাসলো চমৎকার হাসি। মেঘ ধূসরের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল,,

“মেয়ে নিষ্ঠুর হোক আর যাই হোক সে পুরো আপনারই ধূসর এহসান শুভ্র। উপাধি তুলে ফেললেও এই নিষ্ঠুর মেয়েটা নিষ্ঠুরতাই দেখাবে আপনার ভালোবাসায়!

” না না এবার আর দেখাতে পারবে না।”

বলেই ধূসর মেঘকে কোলে তুলে নিল তা দেখে মেঘ হাসলো ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বলল,,

“এই ধূসর রাঙা মেঘ আগে যে ছিল বেরঙিন
কিন্তু এখন এই ধূসর রাঙা মেঘ যে বড্ড রঙিন! ভালোবাসা আর পূর্নতা মিলিয়ে জীবন
আজ অসম্ভব সুন্দর।

~~~সমাপ্ত~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে