ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-৩৯

0
737

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ কি বলছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না তবে সবাই আন্দাজ ঠিকই করলো কিছু একটা হয়েছে। সবার মধ্যে ভয় ও বিরাজমান বিশেষ করে ধূসর আর আয়মান চৌধুরীর। ।মায়মুনা চৌধুরী মেয়েকে এত আদুরে ভাবে জরিয়ে ধরলো কোনদিন জড়িয়ে ধরেছিল কিনা তাও সন্দেহ। মেঘ ওনাকে ছাড়িয়ে বলল,,

“এভাবে কাঁদছেন কেন? দেখছেন সবাই ভয় পেয়ে গেছে। তাছাড়া কান্না কখনো মানুষের বাস্তবতা পাল্টাতে পারে না। যদি এমন হতো তাহলে এতদিনে কান্না করে আমি নদী বানিয়ে ফেলতাম আর বাস্তবতা কে মুছে দিতাম।”

আয়মান চৌধুরী মেয়ের কাছে এগিয়ে গেল আর বলল,,

“আম্মা সেদিন আপনার কথা শুনেই কিছু হয়েছে বুঝেছিলাম। আজ মায়মুনা কাঁদছে আমি শিওর আপনার কিছু হয়েছে কি হয়েছে আম্মা? আমাদের খুলে বলুন ভেতর থেকে ভয় নামক জিনিস টা বারবার চিৎকার দিয়ে উঠছে।”

মেঘ প্রথমে ওর আব্বার চোখের দিকে তাকালো তার চোখে পানির আভাস তারপর সে ধূসরের দিকে তাকালো সে এক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখটাও ছলছল করছে। মেঘ আস্তে আস্তে ধূসরের দিকে এগিয়ে গেল ওর হাত ধরে ওর আব্বার কাছে আনলো তারপর আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে বলল,,

“আপনারা দুজনে আমার কথা পুরোটা মন দিয়ে শুনবেন আগেই কোন রিয়াক্ট করবেন না।

এইটুকু বলে মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল,,

“আমাদের বিয়ের দু’দিন আগে আমি হুট করে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে যাই। সেখানে পথচারী এক আপু আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে ডক্টর আমাকে কিছু টেস্ট দেন আমি ভালোমতো সেগুলো করি কিন্তু সেদিন হাসপাতালের রিপোর্ট দিতে পারবে না বলে আমাকে জানায় কাল আমি রিপোর্ট না আনলে নাকি উনারা ডাক্তারের কেবিনে পাঠিয়ে দেবে আর উনি পরে ফোন করে আমাকে জানাবেন রিপোর্টে কি আছে। এটা শুনে আমিও ভালোমতো বাড়ি চলে আসি বিয়ের আমেজ শুরু হয় আমার মাথা থেকে রিপোর্ট গুলো আনার কথা বা ডক্টরকে কল করার কথা বেরিয়ে যায়। তাছাড়া ঐ ডাক্তার নাকি তিনদিনের জন্য বিদেশে গিয়েছিল কাজে সে ও ভুলে যায় রিপোর্ট গুলো ওনার কেবিনে পাঠিয়েছিল কাল নীলির সাথে রাগ করে ওপরে যেতেই তার ফোন পাই সে আমাকে জানান আমার নাকি ,

এটুকু বলে থামে কারন মেঘের গলা কাঁপছে কেন যেন বলতে পারছে না। ও একটা ঢুক গিলে চোখ বুজে বলল,,

“আমার নাকি ব্রেন টিউমার ছিল যা এখন অনেক বড় আকার ধারন করে এখন ক্যান্সারে পড়িনত হয়েছে। আমি নাকি বেশিদিন বাঁচবো না। আগে হলে কিছু করা যেত এখন নাকি কিছু করার নেই। অপারেশন করলেও বাঁচার চান্স নেই বললেই চলে।

মেঘ চোখ বুজে বলে তো ফেলল কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে চোখ খুলে তার আব্বার আর ধূসরের দিকে কিভাবে তাকাবে। মেঘের কথা শুনে সকলের চোখ ছলছল করে উঠলো। মেঘ আস্তে করে চোখ খুললো ও চোখ খুলতেই আয়মান চৌধুরী আর ধূসরের চোখের পানি টুকু গড়িয়ে পড়ে যেতে দেখলো। তা দেখে মেঘের ভেতরটা বোধহয় কেউ ছুড়ি দিয়ে বারবার ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে এরকম মনে হলো। যার জন্য সবার চোখে পানি কিন্তু সে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে কোন চোখে পানি ছাড়াই এখন মনে হচ্ছে ধূসরের উপাধি দেওয়া পারফেক্ট নিষ্ঠুর মেয়ে! মেঘ ওদের চোখে পানি দেখে বলল,,

“আমি আগেই বলেছিলাম আগে কোন রিয়াক্ট করতে না। তাহলে চোখে পানি কেন মুছুন তাড়াতাড়ি!”

“আমাদের আগে কেন জানান নি আম্মা?’

“আগে পুরোটা শুনুন আব্বা প্লিজ কাঁদবেন না আপনাদের কান্না আমার একদম সহ্য হয় না। তাড়াতাড়ি মুছুন চোখ আমি যেন পানি না দেখি।”

ধূসর হাতের কব্জি দিয়ে পানি মুছে ফেলল মেঘ ওর আব্বার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,,

“তারপরের টুকু শুনুন কাল বিকেলে ডক্টর আবার ফোন করে আমাকে কিছু সিমটম জিজ্ঞেস করল একটা ছাড়া আমি বাকিগুলো আমি না বললাম তখন উনি বলল এরকম কেসে নাকি মাঝে মাঝে সিমটম বোঝা যায় না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিমটম গুলো বেরিয়ে আসে। আমাকে আবার পরীক্ষা করতে বলেছে কারন উনার সন্দেহ হচ্ছে আমার কিছু হয় নি কারও সাথে বোধহয় রিপোর্ট এক্সচেঞ্জ হয়েছে এরকম হতেই পারে। আপনাদের আগে বলিনি কারন আমি ভেবেছিলাম এই সব ঝুটঝামেলা মিটে গেলে আজ গিয়ে আবার পরীক্ষা করে দেখবো আসলে কি হয়েছে তারপর সিওর হয়ে জানাতাম আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে এই যে কষ্ট পাচ্ছেন এই কষ্টটা আমি দিতে চাইনি আব্বা তাই বলি নি।

আসলে ভেতরে ভেতরে মেঘ ও খুব ভয় পাচ্ছে যদি সত্যি হয় তো। মেঘ ওদের দুজনের হাত ছেড়ে দিল। সেদিন মেঘ যখন এই কথাটা জেনেছিল তখন যেন ওর পুরো পৃথিবীটাই থমকে গিয়েছিল ওর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু ও কাঁদে নি কারন ও কাঁদতে চায় না। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“একদম ভয় পাবেন না আম্মা আপনার কিছু হবে না। ইনশাআল্লাহ রিপোর্ট টা ভুলই হবে আমি জানি আপনি ভেতরে ভেতরে খুব ভয় পাচ্ছেন আপনার কথা বলার ধরন আর চোখ দেখেই বুঝেছি তাছাড়া সেদিনের কথায় আমি ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম !”

মেঘের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। মেঘের বোধহয় চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো,,

“আমি সব পেয়ে এভাবে হারাতে চাই না আব্বা আমি আপনাদের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই খুব ভালো থাকতে চাই।”

কিন্তু বলা হলো না। ধূসর আস্তে আস্তে ওপরে চলে গেল সবাই দেখেও কিছু বললো না । ওকে দেখে মনে হচ্ছে কোন অনুভূতিহীন মানব হেঁটে চলেছে। হুট করেই উৎসব মুখর পরিবেশটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মেঘ কোন কথা না বলে তার আব্বাকে ছেড়ে সবার অবস্থা দেখে মেঘ হাঁসি ফুটিয়ে বলল,,

“দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে কেউ খাবে না নাকি! সবাই খেতে বসুন আজ আমি সবাইকে সার্ভ করে দিব।”

সবাই অবাক চোখে মেঘকে দেখছে এই মেয়েটা এতকিছুর মধ্যেও এভাবে কিভাবে পারছে। মেঘ সবাইকে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকাতে দেখে বলল,,

“সবাই কি দেখছেন আমি কোন এলিয়েন না! এখন তাড়াতাড়ি বসুন তো রোহিনী ভাবি তুমি আমাকে হেল্প করো। আরে আপনারা দেখি শোক পালন করছেন এখনও সবশেষ হয়ে যায় নি আশার আলো আছে। আশায় মানুষ বাঁচে তাই পরে যা হবে দেখা যাবে এত সুন্দর উৎসব মুখর পরিবেশটা আপনারা শোক সভা বানাচ্ছেন দিস ইজ নট ফেয়ার। এখন সবাই বসে পড়ুন।

বলেই মেঘ ওর চিরচেনা মুচকি হাসি দিলো। সবাই বুঝতে পারলো মেঘ হাঁসি খুশি থাকতে চাইছে তাই সবাই ওর খুশিতে নিজেদের সামিল করতে চাইলো। সকলে হৈ হৈ করে বসে গেল এটার ক্রেডিট যায় হির, ইশান আর দিশানের ওপর। সবাই খাওয়া শুরু করলে দিলরুবা খানম বলল,,

“মেঘ! ধূসর?

“এই তো মা আমি এখন ওনার খাবার নিয়ে ওপরে যাবো আমি জানি উনি এখন নিচে আসবেন না। চিন্তা করবেন না আমি সামলে নেব উনাকে!”

মেঘ দুজনের জন্য খাবার বেড়ে নিল তা দেখে নোলক একটু মজা দেওয়ার জন্য বলল,,

“ভাবি কি ব্যপার বলো তো আজকাল দেখছি ঘরেই বেশি খাওয়া হচ্ছে। আমাদের সাথে খাবার খেতেই পারছো না। ভাইয়া তো কাল দুইবার খাবার ওপরে নিয়ে গেছিল।

মেঘ হেসে বলল,,

“জামাই বউ পাগল হলে যা হয় আরকি বুঝলে নোলক। এতদিন তো পাগল ডক্টর আমার জন্য খাবার নিয়ে গেছে আজ নাহয় পাগল ডাক্তারের জন্য আমি নিয়ে গেলাম। দেখি তাতে যদি মশাইয়ের একটু মন ভালো করতে পারি কিনা।”

মেঘ হেসে ওপরে উঠলো কিন্তু সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতেই মেঘের হুট করে হাসি গায়েব হয়ে গেল। হাসতে হাসতে হুট করে মধ খারাপ হওয়ার যে ব্যাপারটা এটার থেকে বোধহয় কষ্টের কিছু হয় না। ওর ভয় হচ্ছে যত এগুচ্ছে ভয়টা বাড়ছে বলে তো এলো সামলে নেবে কিন্তু কিভাবে সামলে নেবে ঐ পাগল ডক্টরটা যে তাকে খুব ভালোবাসে। হুট করে এটা যে সে কিছুতেই মানতে পারছে না। ও চলে গেল তখন নোলক বলল,,

“ভাবি খুশি থাকতে চাইছে তাকে খুশি রাখতে অতিরিক্ত কথা বলা অনুচিত বলে মনে করি না। রিপোর্ট যাই হোক না কেন আমাদের উচিত সবসময় ভাবিকে হাসিখুশি রাখা।”

নোলকের কথায় সবাই সায় দিল। অতঃপর এতক্ষন মেঘের সামনে হাসিখুশি মুখ করে থাকলেও হুট করে সবার মুখ অন্ধকার নেমে এলো। সবাই আস্তে আস্তে বিরস মুখে খেতে লাগলো।

_____________

ধূসর বেলকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে প্রানহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। তখন মেঘ খাবার নিয়ে ঢুকলো ধূসরকে ঘরে না দেখে বলল,,

“ধূসর আপনি কোথায়?”

মেঘের আওয়াজ পেয়ে ধূসর তাড়াতাড়ি বলল,,

“এই তো আমি বেলকনিতে !”

মেঘ খাবারগুলো টেবিলের ওপর রেখে ধূসরের কাছে গিয়ে বলল,,

“খাবেন না নাকি কতবেলা হয়ে গেছে দেখেছেন। আসুন খাবেন চলুন আমি খাবার ঘরে নিয়ে এসেছি।”

তখন ধূসর আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল,,

“আমি খাবো না খেতে ইচ্ছে করছে না!”

“আমি খায়িয়ে দিলেও না!”

ধূসর মেঘের দিকে তাকালো আর বললো,,

‘না এখন খেতে ইচ্ছে করছে না!”

“আপনার তো খুশি হওয়ার কথা মানে আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটা আপনাকে আগ বাড়িয়ে খায়িয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু আপনি না করছেন এটা কোন কথা এখন তো আমার আপনাকে বলতে ইচ্ছে করছে নিষ্ঠুর পুরুষ।”

“এই কথাটা যদি অন্যসময় বলতে তাহলে হয়তো অনেক খুশি অনুভব করতাম কিন্তু এখন কেন যেন খুশি অনুভব করতে পারছি না!”

মেঘ ধূসরের হাত ধরে বলল,,

“এতটা ভেঙে পড়ছেন কেন? এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না!”

“আমি কিছু ভাবতে পারছি না মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!”

“আগে খেয়ে নিন তারপর আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো তাছাড়া আপনি না ডাক্তার এইটুকুতে হাল ছেড়ে দিবেন। আসুন আমি আপনাকে আজ খায়িয়ে দেব। আজ আর নিষ্ঠুর মেয়ে বলার সুযোগ দেব না প্রমিজ।”

ধূসর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা হাসছে তাই ওর ইচ্ছে করলো না বাঁধা দিতে। মেঘ ধূসরের হাত ধরে নিয়ে বিছানায় বসালো তারপর ভাত মাখিয়ে ধূসরের সামনে ধরলো তখন ধূসর বলল,,

“তুমি খাবে না!”

“খাবো তো আপনার সাথে আপনাকে এক লুকমা খাওয়াবো আমি এক লুকমা খাবো!”

মেঘ ধূসরকে খাওয়াচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। ধূসর এক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসরের চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল মেঘ যত্ন সহকারে তা মুছিয়ে দিয়ে বলল,,

“আপনাকে কি বলেছিলাম আমি আপনার মনে আছে। কান্না আর হাঁসি খুব মূল্যবান জিনিস যা বুঝেশুনে খরচ করতে হয় তাছাড়া জানেন কি এই সমাজে ছেলেদের কাঁদা বারন কিন্তু আপনি কাঁদছেন এটা কিন্তু ঠিক না।”

“ছেলেদের কাঁদা বারন তাই বলে কি তারা কষ্ট পায় না নাকি তাদের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয় না।”

“আমার মতে মেয়েদের থেকে ছেলেদের মনে বেশি রক্তক্ষরণ হয় এবং কষ্ট ও বেশি পায়। কিন্তু তারা দেখাতে পারে না মেয়েদের মতো। মেয়েরা কাঁদলে কেউ কিছু বলবে না কিন্তু একটা ছেলে কাঁদলে তারা সম্মুখেই বলে দেবে দূর্বল পুরুষ। হয়েছে এখন বাদ দিন তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন তারপর আমরা হসপিটালে যাবো টেস্ট করাতে। ইনশাআল্লাহ খারাপ কিছু হবে না।”

“ইনশাআল্লাহ মেঘ ইনশাআল্লাহ!”

মেঘ আর ধূসরের খাওয়া শেষ। তখন ধূসর বলল,,

“মেঘ আজ সাদা শাড়ি পরবে সেদিনের মতো আমিও সাদা পাঞ্জাবি পড়বো তারপর হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আমরা দুজনে অনেক ঘুরবো আর সেই জায়গায় যাবো যেখানে তুমি আমাকে তোমার মনের কথা বলেছিলে আমাকে ভালোবাসি বলেছিলে।”

মেঘ হেসে বলল,,

“ঠিক আছে! কিন্তু এখানে কি সাদা শাড়ি আছে।

“হুম আছে সেদিনের পর তোমাকে বলেছিলাম না সেই দিনটা আমরা আবার সেলিব্রেট করবো তার জন্য কিনে রেখেছিলাম।”

“বাহ এডভান্স সব। আচ্ছা আমি এগুলো নিচে রেখে এসে তারপর রেডি হচ্ছি।”

মেঘ নিচে গেল সবাই খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে আছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আম্মা আজ কি হাসপাতালে যাবেন?”

“হুম ধূসরদের হাসপাতালে। এই তো এখন ওপরে গিয়ে রেডি হয়ে বের হবো।”

“তাহলে আমরা আজকের মতো আসি।”

মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,

“সাবধানে যাবেন! আমি জানি তো এখন আমার আব্বা বাড়ি গিয়ে কি করবে। চিন্তা করবেন না আব্বা ইনশাআল্লাহ্ খারাপ কিছু হবে না।”

মায়মুনা চৌধুরী মেয়ের কাছে এলো তখন মেঘ বলল,,

“আমাকে এ কয়েকদিনের মধ্যে এতটা ভালোবাসার জন্য শুকরিয়া। আপনি জানেন আমি খুব করে চাইতাম আপনি আমায় জরিয়ে ধরুন কিন্তু সেরকম কোনদিন কিছু হয় নি আজ পুর্ন হয়েছে ভালোই লাগছে। চিন্তা করবেন না আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”

মেঘ ওনার সামনে থেকে সরে জাবিন লিয়া আর হিরের সামনে গেল। তারা তিনজনেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে হুট করে তিন বান্ধবীই মেঘকে জরিয়ে ধরলো হির বলল,,

“যাই হয়ে যাক না কেন তুই একদম ভয় পাবি না। মনে রাখবি ভালো মানুষের সাথে কখনো খারাপ কিছু হয় না।”

মেঘ ওদের ছেড়ে বলল,,

“হুম এখন তো তোরা বাড়ি যাবি গিয়ে মেসেজ দিস!”

সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল মেঘ দেখলো পেছনে ঘুরে শাশুরির কাছে গেল । দিলরুবা খানম মেঘের কপালে চুমু দিলেন আর গালে হাত রেখে বললেন,,

“ওপরে যাও ধূসর হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে তোমরা বেরুবে তো!”

মেঘ ওপরে চলে গেল ধূসর ফোনে কারো সাথে কথা বলছে সব রেডি করে রাখতে বলছে হয়তো মেঘের টেস্ট এর জন্যই। মেঘ দেখলো ধূসর ওর শাড়ি হিজাব নিকাব বিছানার ওপরে রেখেছে মেঘ শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি পরে এলো । সাদা শাড়ি চুল গুলো ছাড়া দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। ধূসর ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ মনে হচ্ছে একটু শুভ্র মেঘ!”

“শুকরিয়া এবার আপনি চেন্জ করে আসুন।”

ধূসর চেন্জ করে আসলো ততক্ষনে মেঘ হিজাব নিকাব বেঁধে রেডি। ধূসর আজ নরমাল একটা সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরেছে কোন কাজ নেই তাতে। ধূসরকে দেখে মেঘ বলল,,

“জনাব আজ কিন্তু মাক্স ছাড়া বের হবেন না!”

“বউ যখন বলেছে তখন তো মাক্স ছাড়া বের হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা।”

ধূসর চুল ঠিক করল মানিব্যাগ নিল তারপর মেঘের হাত ধরে নিচে নামলো সকলে ওদের প্রশংসা করলো অতঃপর ওরা গাড়ি নিয়ে চলে গেল। হাসপাতালেও ধূসর মেঘের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওদের যারাই দেখছে তারাই তাকিয়ে আছে। হুট করে একজন ডাক্তার বলল,,

“তা শুভ্র সাহেব আজ দেখি দু’জনই শুভ্র রঙের তা কোন মেঘের দেশে যাওয়ার প্ল্যান করছেন নাকি!”

তা কথা শুনে ধূসর হেসে বলল,,,

“যদি পারতাম মেঘের দেশে তাকে নিয়ে যেতে তবে অবশ্যই যেতাম। কিন্ত আপাতত ধরনীর বুকে সবুজের মাঝেই যেতে হচ্ছে। যাই হোক পরে থাকা হবে কিছু কাজ আছে।

ধূসর মেঘের হাত ধরে নিয়ে চলে গেল তারপর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব টেস্ট করালো। আর বলল রাতেই রিপোর্ট রেডি করে ফেলতে। কারন ও দেরি করতে পারবে না। ধূসর নিজের চেম্বারে গিয়ে মেঘের ডক্টরের সাথে ফোনে কথা বলল দুজনে কিছু পরামর্শ করলো তখন একজন নার্স মেঘকে বলল,,

“আপনি ভিশন লাকি ম্যাডাম যে স্যারের মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছেন।”

“হ্যা তা আর বলতে! আই এগ্রি আই এম ভেরি লাকি পার্সন।”

তখনি ধূসর আসলো ধূসর মেঘকে নিয়ে চলে গেল গাড়িতে গিয়ে বলল,,,

‘তা ম্যাডাম আজ কিন্তু সেদিনের মতো রিক্সা নেব না গাড়িতেই যাবো। কারন আমরা শুধু ওখানে যাবো না ফুচকা খাওয়ার কম্পিটিশন করবো যা আগের বার বাদ পরে গিয়েছিল।”

মেঘ হেসে বলল,,

‘আপনি যেমনটা বলেন জনাব!’

ধূসর গাড়ি স্টার্ট করলো রাস্তা থেকে বেলুন দেখে বিশটার মতো বেলুন কিনলো রঙ বেরঙের। মেঘ হাসলো কিছু বললো না হাওয়ার মিঠাই কিনলো দুটো । কারন মেঘের হাওয়ার মিঠাই অনেক পছন্দের।মেঘ হেসে হাওয়ার মিঠাই খেল আর ধূসরকেও খায়িয়ে দিল। তারপর একটা ফুচকার দোকানে গিয়ে বলল ছয় প্লেট ফুচকা দিতে কারন তারা কম্পিটিশন করবে আর গাড়িতে দিয়ে যেতে বলল ধূসর কারন মেঘকে নিয়ে সে বাইরে বের হবে না মেঘ কমফোর্টেবল ফিল করবে না। মেঘ নিকাব খুলে ফেলল অতঃপর ফুচকা এলে দু’জনে কম্পিটিশন শুরু করলো মেঘ তিন প্লেট খেয়েও আরেকটা প্লেট থেকে চারটা ফুসকা খেয়ে নিল সেই হিসেবে মেঘ জয়ী। মুলত ধূসর ইচ্ছে করেই হেরেছে।ধূসর হেসে দোকানে গিয়ে প্লেট দিয়ে এলো আর টাকা দিয়ে এলো। ধূসর আসতেই মেঘ হেসে বলল,,

“হেরে গেলেন তো!ছেলেরা যতোই খেতে পারুক ফুচকা নিয়ে মেয়েদের সাথে কোন কম্পিটিশনেই ছেলেরা জিততে পারবে না।”

“ওকে মেনে নিলাম , তুমি তো জিতে গেলে কিন্তু তোমাকে কি পুরস্কার দেওয়া যায় বলোতো।”

“কিছু দিতে হবে না।”

“তা বললে কি করে হয় চলো!”

ধূসর গাড়ি স্টার্ট দিল তারপর একটা ফুলের দোকানের সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।সে ফুলের দোকানে গিয়ে কয়েকটা লাল গোলাপ আর একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে এলো। মেঘ এতক্ষন গাড়ি থেকে ধূসরকে দেখছিল। ধূসর গাড়িতে এসে বলল,,

‘তোমার হাত দাও মেঘবালিকা!”

মেঘ বিনা বাক্যে হাত এগিয়ে দিল ধূসর মেঘের হাতে বেলি ফুলের মালা টা পেঁচিয়ে দিয়ে বলল,,

“এটা আমার মেঘবালিকার জন্য!”

মেঘ হেসে বলল,,

‘শুকরিয়া জনাব!”

ধূসর গোলাপগুলো এগিয়ে দিল তা দেখে মেঘ বলল,,

“এগুলো কার জন্য?”

” তোমার জন্য!এগুলো তুমি একটু আগে কম্পিটিশনে জিতলে তার পুরস্কার!”

“এর আগে এত সুন্দর পুরস্কার কেউ দিয়েছে বলে তো মনে হয় না। সবকিছুর জন্য শুকরিয়া।”

মেঘ হেসে দুটো গোলাপ ধূসরের দিকে এগিয়ে বলল,,

“এই দুটো লাল গোলাপ নিষ্ঠুর মেয়েটার জীবনসঙ্গীর জন্য!”

ধূসর হাসলো আর ফুল দুটো নিয়ে বলল,,

“শুকরিয়া মাই ডিয়ার ওয়াইফি।”

“তো এবার যাওয়া যাক সেই কাঙ্খিত জায়গায়!”

‘হুম!”

ধূসর আবার গাড়ি স্টার্ট দিল কিছুক্ষণ পর সেই জায়গায় পৌঁছে গেল। সেখানে আজ ও মানুষের আনাগোনা নেই। মুল কথা নির্জন জায়গা তেমন কেউ বোধহয় জায়গাটা সম্পর্কে কিছু জানে না। ধূসর গাড়ি থেকে নেমে মেঘের পাশের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিল মেঘ মুচকি ধূসরের হাত ধরে নামলো। ওরা গিয়ে বড় গাছটার নিচে বেঞ্চ রাখা সেখানে বসলো । দু’জনেই চুপ করে সামনের নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। একজায়গায় থেকেও যখন মানুষ চুপ থাকে তখন হয়তো তাদের কিছু বলার থাকে না নয়তো অনেক কথা বলার থাকে কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবে এটা বুঝতে পারে না। বেশ খানিকক্ষণ মৌনতা হুট করে ধূসর বলল,,

“মেঘ ভালোবাসি খুব ভালোবাসি!”

তখন মেঘ সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,,

“অতঃপর মনে হচ্ছে আমাকে এতটা ভালোবাসা উচিৎ হয় নি আপনার । তারপর আমি দেখলাম আপনার আর আমার দূরত্ব হয়তো বা বাস্তব আকার ধারন করতে চলেছে বোধহয়। অতঃপর এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসার পরেও যেন জীবনটা বাস্তবতার নিকট মাথা নত করতে চাইছে।

ধূসর মেঘের দিকে তাকালো মেঘ সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে। আবারো মেঘ বলল,,

“কোন এক শুভ্র শহরে আমাদের আবার দেখা হবে।
একে অপরের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকানো হবে।
কতো শত মান অভিমান সেখানেই বিলীন হবে।
পুরো শহর মুখরিত হবে বিভিন্ন ফুলের সুবাসে।
তখন আমি শুধু আনমনে আপনার মুখের দিকে
তাকিয়ে আপনাতেই মুগ্ধ হবো আর বলবো
ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।

ধূসর মেঘের হাতে হাত রেখে বলল,,

“মেঘ!”

মেঘ এবার ধূসরের দিকে তাকালো ওর চোখ ছলছল করছে মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“যদি কখনো সূদরে হারাই,
কাছে এসে ধরা না দিতে পারি
তবে নিয়ম করে চিঠি দিব আপনার নীড়ে
পড়ন্ত বিকেলে উড়ন্ত মেঘ হয়ে।”

যদি রিপোর্ট টা সত্যি হয় ধূসর আমি যদি হারিয়ে যাই আপনার থেকে তাহলে আমায় ভুলে যাবেন না কিন্তু। ভুলে যাবেন না তো আপনার একজন একান্ত ব্যক্তিগত নিষ্ঠুর মেয়েটা নামক ভালোবাসা ছিল। তাকে নিষ্ঠুর মেয়ে বললেও মুচকি হাসতো। সে সবসময় লুকিয়ে ভালোবাসতে চাইতো প্রকাশ করতো না। এমনকি আপনার ভালোবাসা প্রকাশেও সে বাগড়া দিতে দিতো। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার হাত ধরে গোটা জীবন পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল । সে আপনাকে নিয়ে অনেক শখ পূরণ করতে চেয়েছিল কিন্তু হয় নি । এসব ভূলে যাবেন না তো!

মেঘের চোখ ছলছল করছে। সব শুনে ধূসরের চোখ ও ছলছল করে উঠলো এ যে হারানোর ভয়। ধূসর বলল,,

“কাউকে ভালোবাসার পর ,কারো মায়ায় জড়িয়ে যাওয়ার পর সেই মানুষটার থেকে দূরে থাকা বড্ড বেশি কষ্টকর আর তাকে ভোলা দুঃসাধ্য ছাড়া আর কিছু নয়।তোমাকে পেয়েছিলাম বলেই তোমাকে হারানোর ভয় আমি কখনোই করি নি।

মেঘ ধূসরের হাত দু’টো ওর হাতের মুঠোয় নিল ।ধূসর বুঝতে পারলো মেঘ এতক্ষন নিজেকে যতোই শক্ত দেখাক না কেন ও আসলে ভয় পাচ্ছে যদি রিপোর্ট টা সত্যিই হয় তাহলে। মেঘ বলল,,

“ডক্টরের সাথে কথা বলার পরেও কেন যেন সহজ ভাবে সব নিতে পারছি না সবকিছু আমাকে পাগলের মতো ভাবাচ্ছে মস্তিষ্কে ভয় গুলো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মন থেকে সব সহজভাবে মেনে নিতে চাইলেও সব যেন সহজ ভাবে নিতে পারছি না। আমার ভিশন ভয় হচ্ছে ধূসর আমি হারিয়ে যাব না তো ধরনীর বুকে থেকে। যদি হাড়িয়ে যাই তাহলে সবসময় নিজের খেয়াল রাখবেন । আর হ্যা আমাকে কোনদিন ভুলে যাবেন না। সবসময় হাসিখুশি থাকবেন আর সবথেকে ইম্পোর্টেন্ট কথা মনে রাখবেন আমি সবসময় আপনাকে ভালোবাসি।

মেঘ কাঁদছে শক্তপোক্ত মেয়েটাও আজ নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করছে তার প্রিয়মানুষটার সামনে। ধূসর কিছু বলবে তার আগে মেঘ ধূসরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে কান্না মাখা কন্ঠে বলতে শুরু করল,,,

“ধূসর আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি আপনার থেকে হারাতে চাই না। আমি আপনার জীবনে বসন্তের ঝড়ে যাওয়া পাতার হতে চাই না আমি আপনার জীবনের নতুন পাতার মতোই মতো সবসময় আপনার সাথে থাকতে চাই।আমি আপনার জীবনে ফুল হতে চাই না কারন ফুল ও একসময় ঝড়ে যায় আমি আপনার জীবনে একটা শক্তপোক্ত গাছ হয়ে থাকতে চাই। আপনার সাথে সমুদ্রের পাড়ে আপনার হাতে হাত রেখে হাঁটতে চাই। অনেকগুলো সকাল একসাথে দেখতে চাই আপনার শেষ বয়সে আপনার কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস করতে চাই। আপনার হাতে হাত রেখে অনেক টা পথ পাড়ি দিতে চাই। আপনার সাথে আমাদের রঙিন ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চাই। আমি আপনার জীবনে নিষ্ঠুর মেয়ে হতে চাই না ধূসর আমি আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চাই । প্লিজ ধূসর রিপোর্ট টা যদি সত্যি হয় তাহলে প্লিজ আমায় হারাতে দেবেন না ধূসর আমি বাঁচতে চাই ধূসর আমি সুখের হাতছানি পেয়ে সব হারাতে চাই না। আমি আপনার সাথে সুখী হতে চাই। প্লিজ ধূসর আমাকে আপনার জীবনে আপনার দেওয়া নিষ্ঠুর মেয়েটা উপাধি কে সত্যি সত্যি আপনার জীবনে জায়গা করতে দেবেন না। আমি বাঁচতে চাই ধূসর আপনার সাথে প্লিজ আমাকে হারাতে দেবেন না।”

ধূসর ও কাঁদছে ধূসর মেঘের দু গালে হাত রেখে বলল,,

“মেঘবালিকা তোমাকে হারাতে দেব না। কিছু হবে না তোমার ! আমাদের শেষ পরিনতি এতটা নিষ্ঠুরতায় হতে পারে না। আমাদের শেষ পরিনতি সুন্দর হবে। আমাদের নিয়তি এতটা নির্দয় হতে পারে না। আমি তোমায় খুব ভালোবাসি মেঘ কিছুই হবে না তোমার।

“আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি ধূসর! খুব ভালোবাসি খুব খুব ভালোবাসি ধূসর।

মেঘ আরো জোরে কেঁদে উঠলো মেঘ ধূসরকে জরিয়ে ধরলো। ধূসর ও কাঁদছে এ যে কি রকম কষ্ট সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আজ যেন ওদের কান্নার সাথে প্রকৃতিও যেন কাঁদতে চাইলো ধরনীর বুকে বৃষ্টির আগমন ঘটলো । দু’জনে এখনো বসে আছে বৃষ্টি দেখে ধূসর মেঘকে জরিয়ে ধরা অবস্থায়ই কোলে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে ওকে কোলে নিয়েই গাড়িতে বসলো। ধূসর বৃষ্টির জন্য গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে দিল একহাত দিয়ে । হুট করেই মেঘ ধূসরের আরো কাছাকাছি চলে এলো। ওদের সব কষ্ট ধীরে ধীরে যেন বিলীন হতে শুরু করলো বাইরের বৃষ্টি আর ওদের একেঅপরের ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে।

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে