ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-৩৮

0
975

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

সন্ধ্যায় মাগরিবের আজান শুনে মেঘ উযু করে এসে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিল। নামাজ পড়ে নীলির ঘরে গেল। ধূসরের বিকালে একটা ইমার্জেন্সি এসে পরেছে তাই সে হাসপাতালে গেছে। মেঘ নীলির ঘরে গিয়ে দেখতে পেল নীলি বসে আছে নীল আর রিমঝিম তার পাশে বসে কি যেন করছে। মেঘ হেসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম বাচ্চারা!”

তিনজনেই একসাথে বলে উঠল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম!”

তখন মেঘ হেসে ওদের কাছে গিয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ তবে আপনারা জানেন কি যখন একসাথে অনেকে থাকে তখন কেউ সালাম দিলে সকলের পক্ষ থেকে একজন জবাব দিলে হবে। সবার দিতে হবে না। মনে থাকবে?”

“হ্যা মনে থাকবে!”

“এবার বলো তোমরা এখন কি খাবে তোমাদের আম্মু বানিয়ে দেবে।”

তখন রিম বিরস মুখে বলল,,

“তুমি তো আমাদের ছোট মা! আম্মু না তাহলে আম্মু বললে কেন শুধু। তারমানে তুমি নীলকে আমাদের থেকে বেশি ভালোবাসো বুঝতে পেরেছি।”

তখন নীল বলল,,

“হ্যা বাসেই তো তাই না আম্মু!”

“তাই নাকি ছোট মা!”

“ওরে আমার সোনাবাচ্চারা আমি সবাইকেই খুব ভালোবাসি কাউকে বেশিও না আবার কম ও না।”

তখন ঝিম বলল,,

“তাহলে প্রমান দাও আমাদের?’

“কি প্রমান দিতে হবে বলো!”

“আমাদের ফেবারিট খাবার রেঁধে খাওয়াতে হবে!”

“ওকে একবার বলেই দেখো না তিনজনের ফ্রেবারিট খাবার হাজির করবো।”

তিনজনেই খুশিমনে একসাথে বলে উঠল, “বিড়িয়ানী”

তা দেখে মেঘ হাসলো আর বলল ,,

“তারমানে তিনজনে বিড়িয়ানি খাওয়ার জন্য একসাথে প্ল্যান করে আমার সাথে এসব করা হলো বুঝি।”

তিনজনেই হেঁসে দিল আর নীল বলল,,

“তুমি বুঝে ফেললে আম্মু আসলে কি বলোতো আজ বিকেল থেকে তিনজনেরই খুব বিড়িয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বড় মাকে বললে বড় মা বলল দুপুরে অনেক ভারি খাবার খাওয়া হয়েছে এখন বিড়িয়ানি রান্না করা যাবে না। তাই তিনজন এ বসেছিলাম তোমাকে বলব তুমি ও কি সুন্দর বলার আগেই জিজ্ঞেস করলে আমরা কি খেতে চাই। আর আমরা তো জানি তুমি আমাদের তিনভাইবোনকেই ভালোবাসো তাই আমাদের কথা রাখবে।”

“আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার! কিন্তু আমি যদি না রান্না করি তাহলে কি বলবেন আপনারা আমি আপনাদের ভালোবাসি না! যদি রান্না দ্বারা আমার ভালোবাসা প্রমান পায় তাহলে ধরে নিন আমি আপনাদের ভালোবাসি না।”

মেঘের এই ভারি কথা ওদের ঠিক বুঝে আসলো না। কিন্তু মনে হলো তাদের আম্মু বা ছোট মা বললো আমি ভালোবাসি না। কিন্তু নীল ঠিকই বুঝতে পারল মেঘ কি বলেছে। নীল গিয়ে মেঘের হাত ধরে বলল,,

“তুমি তো আমাদের ভালোবাসো বলো ! এর প্রমানের জন্য তোমাকে রান্না করতে হবে না । আমরা জানি তুমি আমাদের ভালোবাসো। ওটা তো এমনি বলেছি তুমি মন খারাপ করো না।”

নীলি এতক্ষন মুগ্ধ চোখে বাচ্চাদের আর মেঘকে দেখছিল ওদের সম্পর্ক কেমন সেটা কথার ধরনেই সে বুঝতে পেরেছে তাই তো কোন কথা বলছে না। মেঘ নীলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“দেখলি তোর ছেলে কি বুদ্ধিমান সব বুঝে ফেলেছে!”

নীলি হেঁসে বলল,,

“ওর আম্মু কে দেখতে হবে না দ্য গ্ৰেট কাশফিয়া আয়মান মেঘ।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“তো বাচ্চারা তোমাদের মন খারাপ করতে হবে না তোমাদের আম্মু প্লাস ছোট মা তোমাদের সাথে মজা করলো একটু । এখন তোমাদের এই ছোট মা প্লাস আম্মু তোমাদের বিড়িয়ানি রেঁধে খাওয়াবে।”

তিনজনেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। মেঘ হেসে বলল,,

“কিন্তু আমার সাথে তোমাদের কেও থাকতে হবে! রান্নায় আমাকে সাহায্য করবে ঠিক আছে। বড় ভাবীকে আমি দেখে নেব।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

“তো চলো যাওয়া যাক রান্নাঘরে!”

“জি আম্মু/ ছোট মা!”

“ঠিক আছে তোমরা নিচে যাও আমি নীলিকে নিয়ে আসছি!”

ঠিক আছে বলে ওরা চলে গেল দৌড়ে। ওরা যেতেই নীলি বলল,,

“ওদের সাথে তোর খুব মধুর সম্পর্ক!”

“বাচ্চারা এমনই তুমি ও যদি ওদের সাথে ওদের মতো করে মিশতে পারো তাহলে তুমি তাদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে থাকবে। তাছাড়া নীল তো ছিলই আমার সাথে রিমঝিম ও খুব নেওটা আমার! হুম এখন ওঠ নিচে নিয়ে যাই তোকে, সবার সাথে কথা বললে ভালো লাগবে তাছাড়া বিকেলে হাঁটার কথা ছিল সেটাও করিস নি। ”

“এখন নিচে যেতে আলসে লাগছে! হাঁটতে ইচ্ছে করছে না।”

“তা বললে তো হবে না যেতেই হবে তুই যত বেশি হাঁটাহাঁটি করবি তত তাড়াতাড়ি তুই সুস্থ হয়ে ঠিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারবি।”

“অনেক দিন হলো তোর কাঁধে উঠি না চল আমাকে কাঁধে উঠা যা সিড়ির আগে নামিয়ে দিস।”

“এ আইছে তোর এখন ওজন দেখছিস তোর মতো মহিলাকে আমার মতো এইরকম মেয়ে উঠাতে পারবে কাধে কথা বলবি একটু বুঝেশুনে বলবি তো।”

“এখন তুই মেয়ে আর আমি মহিলা তাই না। আমি যদি মহিলা হই তাহলে তুই ও মহিলা।”

“হুম হয়েছে এখন চল!”

“একটু কাঁধে নে না!”

“তোকে উঠালে আমার হাড্ডি সব মরমর করে ভেঙ্গে পরবে। তার থেকে আমি এক হাত দিয়ে তোকে ধরে নিয়ে যাচ্ছি।”

“কি এতবড় ইনসাল্ট! তোর সাহস কতো বড় তুই ইনডিরেক্টলি আমাকে ওজন নিয়ে অপমান করলি সর যাবো না নিচে আমি!”

“আরে ভাই রেগে যাচ্ছিস কেনো? আয় হাত ধর!

“যাবো না আমি নিচে!”

বলেই নীলি দাঁড়ানো অবস্থায় অন্যদিকে মাথা ঘুরালো মেঘ হেসে ওর সামনে গিয়ে বলল,,

“নে ওঠ আমার ঘাড়ে চেপে ঘাড়টা না মটকালে তো তোর শান্তি লাগবে না ।”

নীলি খুশি মনে মেঘের কাঁধে উঠলো মেঘ দুই হাত দিয়ে নীলিকে ধরে নিল তারপর হাঁটতে লাগলো। তখন মেঘ বলল,,

“সাইজটাই বেড়েছিস বুঝলি ওজন ঠিকই আছে আগের মতো মনে হচ্ছে!”

“দেখলি হুদাই তুই এতগুলো কথা খরচ করলি।”

ধূসর মাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরল ড্রয়িংরুমে এসে আর ওপরে তাকিয়ে মেঘদের দেখে অবাক হয়ে গেল। ধূসর একটা চিৎকার দিয়ে বলল,,

“এই নীলাশা তুই মেঘের কাঁধে উঠেছিস কেন?”

ধূসরের কথা শুনে যে যেখানে ছিল দৌড়ে ড্রয়িংরুমে এসে উপরে তাকাতেই দেখলো মেঘ নীলিকে কাঁধে নিয়ে আসছে। হুট করে ধূসরের কথা শুনে নীলি কাঁধ থেকে নেমে গেল বেচারা ভয় পেয়েছে। ও পরে যেতে নিল মেঘ সামলে নিল। অতঃপর ওকে ধরে নিচে এসে ধূসরকে বলল,,

“এত জোরে কেউ চিৎকার করে আমি আর নীলি তো ভয়ই পেয়েছিলাম। ”

তখন ধূসর বলল,,

“না আসলে হুট করে দেখে আর কি! যাই হোক ও তোমার কাঁধে উঠেছিল কেন?”

“কারন আমার বান্ধবীর ইচ্ছে হয়েছে আগের মতো আমার কাঁধে উঠবে।”

“আগের মতো মানে?”

তখন নীলি বলল,,

“আসলে ছোট ভাইয়া আমি আর মেঘ স্কুল কলেজ লাইফে একেঅপরের কাঁধে বহুবার চড়েছি তাই। ও বলল নিচে আসতে তাই ওর কাছে আবদার রাখলাম আমাকে কাঁধে নিতে হবে সিড়ি পর্যন্ত এই যা!”

“ওহ আচ্ছা তুই বোস আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

ধূসর চলে গেল ওপরে। তখন রোহিনী বলল,,

“এই মেঘ তুমি এই তিন বাচ্চা বাহিনীকে কি বলেছো?”

তখন মেঘ বলল,,

“কেন কি করেছে তারা!”

“চা বানাচ্ছিলাম হুট করেই তিনজন এলো নীল বলল কিচেন নাকি এখন ওদের দখলে তুমি নাকি বিড়িয়ানি রেঁধে ওদের খাওয়াবে আর তারা নাকি তোমাকে রান্নায় সাহায্য করবে। দেখো কোথা থেকে কাপড় যোগার করে তিনজনে মাথায় বেঁধেছে।”

মেঘ তিনজনের দিকে তাকালো রোহিনী যা বলেছে তাই তিনজনেরই মাথায় কাপড় বাঁধা। তখন মেঘ বলল,,

“তা নীলবাবু তোমাদের এই বুদ্ধি কে দিল?”

তখন নীল বলল,,

“আমি দেখেছি অনুষ্ঠানে যারা রান্না করে তারা মাথায় কাপড় বাঁধে তাই আমরাও বেঁধেছি।”

“আচ্ছা যাও রান্নাঘরে আমি আসছি!”

তিনজনে মিলে চলে গেল তা দেখে সকলে হাসলো। তখন রোহিনী বলল,,

“মেঘ!”

“ভাবি আমি জানি সব কিন্তু বাচ্চারা খুব করে চেয়েছে আর আবদার করেছে তাই করতেই হবে। তাছাড়া তেল কম দিব নীলিও খাবে সব দেখেই রান্না করবো চিন্তা করবেন না।”

তখন দিলরুবা খানম বলল,,

“বাচ্চারা আবদার করেছে তখন তখন তো রাখতেই হবে। মেঘ তুমি তোমার মতো করো আসলে দুপুরে সবাই ভারি খাবার খেয়েছে তাই রোহিনী বারন করেছিল।”

“আমি জানি সেটা নীল বলেছে সমস্যা নেই আমি সব দেখেই রান্না করবো।’

মেঘ রান্না করতে চলে গেল। ধূসর ফ্রেশ হয়ে সব শুনলো এরপর দুই বোন আর ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিতে লাগলো কতবছর পর চার ভাইবোন আবার একসাথে। ওরা হাসছে কিছু বলে মেঘ রান্নার ফাঁকে ফাঁকে ওদের হাসি খুশি পরিবার দেখলো। কিন্তু তার বাচ্চা বাহিনী সাহায্য করছে কম মাখাচ্ছে বেশি তাই ওদেরকে বাইরে পাঠিয়ে দিল। রোহিনী ওদের তিনজন কে ফ্রেশ করিয়ে দিল এখন সবাই ড্রয়িংরুমে বসলো। মেঘের রান্না শেষ তাই ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। তখনি ধূসরদের কলিং বেল বেজে উঠলো। দিলরুবা খানম বলল,,

“এই অসময় আবার কে এলো? সবাই তো আজ বাড়িতেই।”

রোহিনী গিয়ে দরজা খুলে দিল। আর খুলে ওর ফুপিশাশুরি শিরিন কে দেখতে পেল।( এর আগে একটা পর্বে লেখা হয়েছিল ধূসরের কাকা বা ফুপি নেই ওখানে মিস্টেক হয়েছিল ওর ফুপি শিরিন তো ছিলই বিয়ের সময় একটা সমস্যার আসতে পারেনি)
রোহিনী বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম ফুপি কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! আলহামদুলিল্লাহ ভালো তোমরা কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”

বোনকে দেখে এহসান খান এগিয়ে এসে বলল,,

“কিরে কোন খবর না দিয়েই চলে এলি! তা হাবিব কোথায় তোর ছেলে মেয়ে কোথায়?

“আর বলো না ভাইয়া তুমি তখন ফোন দিয়ে নীলাশার কথা বললে তখন আর থাকতে পারলাম না। তাই চলে এলাম হাবিব এসেছে কাল ওর একটা কেস কোর্টে উঠবে তাই ক্লাইন্টের সাথে দেখা করতে গেছে। চলে আসবে এক ঘন্টার মধ্যে। আর তোমার ভাগিনা ভাগনি পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত।

তখন ধূসর বলল,,

“ও নীলাশাই বুঝি সব তোমার আমি কেউ না? আমার বিয়েতে আসলে না কেন তুমি!”

“আরে বোকা ছেলে তোর বউকে তো আগেই দেখেছি তাছাড়া আমি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু সমস্যার জন্য আসতে পারি নি। তা আমার নীলাশা আর তোর বউ কোথায়?”

মেঘ এগিয়ে এসে সালাম দিল। উনি সালামের উত্তর নিয়ে ওর পাশে কাটিয়ে চলে গেল নীলাশার কাছে। মেঘ বুঝতে পারলেও কিছু বললো না। শিরিন গিয়ে নীলাশাকে জরিয়ে ধরে কতক্ষণ কথা বললো নীলাশাও ফুপির সাথে কথা বলতে লাগলো।উনি নীলের ব্যাপারেও জানেন। অতঃপর সবাই কে খাওয়ার ডাকা হলো। তখন নীল বলল,,

“আম্মু আজ তুমি খায়িয়ে দাও!”

তখন শিরিন খান বলল,,

“তোমার মা তো অসুস্থ এসো দাদুভাই আমি তোমাকে খায়িয়ে দিচ্ছি।”

তখন নীলি বলল,,

“ও আম্মু মেঘ কে বলেছে আমাকে না ও আমাকে মা বলে মেঘকে আম্মু বলে।”

“কেন মেঘ কি ওর মা নাকি যে ওকে আম্মু বলতে হবে?”

এ কথা শুনে মেঘ থমকে গেল ও সবেই নীলের জন্য খাবার বাড়তে নিয়েছিল শিরিনের কথা শুনে ওর আপনা আপনি হাত থেমে গেল। সবাই মেঘের দিকে তাকালো। মেঘের চোখটা ছলছল করে উঠলো কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে নিল তখন ধূসর বলল,,

“না মেঘ নীলের মা নয় কিন্তু মায়ের থেকে বেশি কিছু। প্রথমত শুধু জন্ম দিলেই মা হয় না। তুমি বোধহয় জানো না নীলের সকল দায়িত্ব মেঘই পালন করেছে এমন কি আজ পর্যন্ত নীলের সবকিছু মেঘ দেখে। তাছাড়া প্রথমে তো মেঘ আর আব্বা নীলাকে বাঁচিয়েছে এমন কি নীলার সমস্ত দেখাশোনা ওনারা করতো নীলার এক্সিডেন্টের পর নীল আর নীলাশার দুজনেই দায়িত্ব মেঘ কাঁধে তুলে নিয়েছিল তুমি তাকে এভাবে কি করে বলতে পারো ফুপি।”

সব শুনে শিরিন খান আমতা আমতা করে বলল,,

“আসলে আমি ওভাবে মিন করতে চাই নি ওটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’

তখন এহসান খান বলল,,

“তোর তো আগে থেকেই অনেককিছু মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়। এখন কোন কথা না চুপ করে খা।”

তখন নীল মেঘের হাত ধরে বলল,,

“কি হলো আম্মু খায়িয়ে দেবে না!”

মেঘ শুধু বলল,,

“হুম!”

মেঘ নীলের জন্য খাবার বেড়ে ওকে খায়িয়ে দিতে লাগলো চুপচাপ মেঘ খাবার টেবিলে একটা কথাও বলে নি। খাওয়া শেষ বাচ্চারা সবাই চলে গেছে ওপরে! হুট করে শিরিন খান বলল,,

“বিড়িয়ানিটা কে রেঁধেছে অনেক মজা হয়েছে!”

তখন দিলরুবা খানম বলল,,

“ওটা মেঘ রেঁধেছে বাচ্চারা বায়না করছিল তাই।”

“ওহ আচ্ছা যাক রান্না বান্নাটা ভালো করে!”

তখন ধূসর বলল,,

“শুধু রান্না বান্না না আমার বউ সবদিক দিয়েই অলরাউন্ডার তার সব যোগ্যতায় আছে !”

“ভুল বললি তোর বউয়ের যে গায়ের রঙ তা এই রকম আমাদের পরিবারের না আমার বংশের কারো ছিল না সেই হিসেবে তোর বউয়ের কোন যোগ্যতা নেই তোর বউ হওয়ার!”

কথাটা শুনে মেঘের মুখ শক্ত হয়ে গেল। কেউ কিছু বলবে তার আগে মেঘই বলল,,

“আপনাকে দেখে অবাক হলাম আপনার মতো শিক্ষিত মানুষ ও আজকাল গায়ের রঙ দিয়ে মানুষ কে বিচার করছে। প্রথমত কেউ নিজ ইচ্ছে তে নিজ আকৃতি বা গায়ের রঙ চয়েজ করে পৃথিবীতে আসে না। আল্লাহ তায়ালা খুব যত্ন করে তার ইচ্ছা অনুযায়ী তার বান্দাদের গঠন করে। আপনি যেভাবে বলছেন সেটা রবের সৃষ্টিকে অবমাননা বলে। তাছাড়া মানুষ যোগ্যতা অর্জন করে তার গুন দিয়ে গায়ের রঙ দিয়ে নয়। তাছাড়া আমি জানি প্রথম থেকেই আপনার আমার গায়ের রঙ নিয়ে আমাকে পছন্দ নয়। তারমানে এই না আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করবেন। সবথেকে বড় কথা ধূসর আর আমার বন্ধন এবং সম্পর্ক আল্লাহ প্রদত্ত আমি যদি এর থেকে আরো কালো হতাম তবুও তিনি আমার জীবনসঙ্গীই হতো। আজকাল সময় দুজন স্বামী স্ত্রীর যদি কেউ একজন কালো থাকে তাহলে লোকে সমালোচনা করে এই কালো মেয়ে বা ছেলের ওর বউ বা জামাই হওয়ার যোগ্য নয় তবুও কি দেখে বিয়ে করলো কিন্তু সবথেকে বড় ফ্যাক্ট তো এটাই তারা দুজন দুজনের যোগ্য দেখেই আল্লাহ তায়ালা তাদের একেঅপরের তকদিরে একেঅপরকে রেখেছেন। আল্লাহর বানানো তারাই পারফেক্ট ম্যাচ। সবথেকে বড় কথা বিয়ের প্রপোজাল টা আপনার ভাই এবং ভাইয়ের ছেলে দিয়েছিল আমি বা আমার আব্বা নয়। যদিও কিছু বলতে চাইছিলাম না কারণ আপনি আমার গুরুজন। কিন্তু এমন ভাবে কথা বললেন যে না বলে থাকতে পারলাম না । কষ্ট পেলে দুঃখিত কিন্তু আমার যোগ্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে সেটা আমার পছন্দ নয়।”

অপমানে শিরিন খানের মুখ থমথমে হয়ে গেল। বাকি সবার মুখে তৃপ্তির হাসি কারন এই বাড়ির সকলেই মেঘকে খুব ভালো বাসে এবং স্নেহ করে। মেঘ খেতে বসতে যাচ্ছিল ওনার কথা শুনে আর লম্বা স্পিচ দিয়ে খাওয়ার ইচ্ছা হলো না ও ওপরে যেতে নিল তখন কেউ বলল,,

“এই তুমি ইয়ং ব্যারিস্টার K.A.Megh না?”

কথাটা শুনে সবাই ড্রয়িংরুমের দিকে তাকালো সেখানে শিরিন খানের হাজবেন্ড হাবিবুর রহমান দাঁড়িয়ে। মেঘ বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম! জি আমিই সে।

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! তা তুমি এখানে ও হো আমি তো ভুলেই গেছি তুমি ধূসরের বউ। তাই হোক কেমন আছো?”

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো! আপনি কেমন আছেন?

“জি ভালো! তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে দেখা করার।”

“কি যে বলেন আমি ততটাও ইম্পোর্টেন্ট কেউ না!”

“তা বললে হয় নাকি আজ পর্যন্ত কতোগুলো বড় কেস হ্যান্ডেল করেছো! এমনকি কোন কেস হারো নি পর্যন্ত।

“তা আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?”

“আমার এক লয়ার বন্ধুকে তুমি হাড়িয়েছিলে আমিও সেদিন সেখানে ছিলাম ওখান থেকে দেখেছি তবে তোমাকে সেই ধূসরের বিয়েতে দেখেছিলাম তাই সেদিন মনে করতে পারি নি। আজ সব ক্লিয়ার।”

“ওহ আচ্ছা!”

“কাল কিন্তু শেফালী খান আর কাদের এর কেসটার নিয়ে তোমার সাথেই আমার ফাইট!”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“সেটা আমি জানি তবে আপনি ধূসরের ফুপা হবেন এটা বুঝি নি। কারন আমাদের দেখা হয়েছিল একবার বিয়েতে তাই মনে ছিলনা আপনার চেহারা।

“কাল প্রথম হারার জন্য তৈরি থেকো?”

এ কথা শুনে মেঘের কেন জানি হাসি পেল ।সে একটু হাসলোও তা দেখে ধূসরের মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেঘ কিছু বলার আগে ধূসর বলল,,

“কাসফিয়া আয়মান মেঘ আজ পর্যন্ত কোন কেস হারে নি কেন জানেন ফুপা। কারন তার সত্যতার এবং নিজ যোগত্যার জন্য। আমি জানিনা শেফালী খান এবং আব্দুল কাদের কি বলেছে আপনাকে তবে মিথ্যা যত বড়ই হোক না কেন একটু সত্যই বড় মিথ্যা কে ধ্বংস করতে সম্ভব।”

ধূসরের কথা শুনে মেঘ মুচকি হাসলো আর বলল,

“সবথেকে বড় কথা কি জানেন সামনের মানুষটাকে ওপর থেকে জাজ করতে হয় না এমন কি দূর্বল ভাবা একেবারেই উচিত নয়। কোর্ট এমন একটা যায়গা যেকোন সময় যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারে।”

তখন হাবিবুর রহমান বলল,,

“তার মানে বলছো তুমি জিতবে?”

“ইনশাআল্লাহ তাছাড়া কাশফিয়া আয়মান মেঘ কখনো মিথ্যে কেস নেয় না এবং লড়ে না আপনি বোধহয় জানেন না তাদের বিরুদ্ধে কেসটাই আমি করেছি। এরেস্ট ওয়ারেন্ট আমিই বের করেছি আমার জন্যই তারা আজ জেলে। যাই হোক কালকের জন্য শুভকামনা রইল আপনার জন্য।”

বলেই মেঘ উপরে চলে গেল এদিকে হাবিবুর রহমান চিন্তায় পড়ে গেল তারমানে কি সে মিথ্যে কেস হাতে নিয়েছে । কিন্তু সে তো বিজনেস ম্যান আব্দুল কাদের কে চেনে এতদিন পর্যন্ত কোন খারাপ রেকর্ড দেখেনি। কিন্তু সে তো বলল কেউ মিথ্যা জালে ওনাকে ফাঁসিয়েছে এবং উনার স্ত্রীকেও। নাম তো মেঘ বলেছিল তবে বুঝতে পারে নি এই মেঘই সেই মেঘ। তখন ধূসর বলল,,

“ডিয়ার ফুপি এটা হলো আমার বউয়ের যোগ্যতা । যা সামনের জনকে তার সম্পর্কে ভাবার জন্য ফোর্স করে।বাবা তোমার বোনকে বলে দিও আমার বউয়ের সম্পর্কে যদি কিছু বলে তাহলে ভালো কিছু বলতে নাহলে কিছুই বলতে হবে না। আমার বউ যেমনই হোক সে আমার খুব কাছের এবং খুব শখের। তাকে কিছু বললে পরে আমি কিন্তু বসে থাকবো না বুঝেছো। আর মা তোমার বউমার জন্য খাবার বাড়ো বউটা আমার না খেয়েই চলে গেল।”

ধূসরের শেষের কথা শুনে সকলে হাসলো দিলরুবা খানম হেসে মেঘের জন্য খাবার বেড়ে দিলেন। ধূসর খুশি মনে বউয়ের জন্য খাবার নিয়ে গেল। ও যেতেই এহসান খান বলল,,

“শিরিন ধূসর যা বললো শুনলি তো এরপর থেকে কিন্তু আমিও চুপ থাকবো না মেঘ আমার বাড়ির বউ আমাদের সম্মান তার অসম্মান করা মানে আমাদের অসম্মান করা । তাই সাবধান আর হ্যা আমার ছেলের চয়েজ তোর থেকে হাজার গুণ ভালো আছে আশরাফের কথা ভুলিনি এখনো বরং তার জন্য আমাদের কি কি পোহাতে হয়েছে তার ধারনা নেই। শেষ পর্যন্ত মেঘ সব সামলে নিয়েছে। আর হাবিব সরি এত সিন ক্রিয়েট করার জন্য হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও।”

শিরিন খান রেগে চলে গেল। পেছনে হাবিবুর রহমান ও গেল। এদিকে আমাদের ধূসর মশাই এসে দেখলো তার বউ বিছানা ঠিক করছে শোয়ার জন্য। তা দেখে ধূসর বলল,,

“বিবিসাহেবা খেয়ে নিন আপনার জামাই আপনার জন্য খাবার এনেছে। না আমিই খায়িয়ে দেব। কি জানি হাত দিয়ে নাও খেতে পারে।

মেঘ হেসে বলল,,

“আমি জানতাম আপনি খাবার নিয়ে আসবেন তবে আমি নিজেই খেতে পারবো।

“আমার বউকে আমি খাওয়াবো তাতে তোমার কি!”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি খায়িয়ে দিন আমি ঘুমাবো কাল বেশ ধকলের কাজ আছে।”

ধূসর হাত ধুয়ে মেঘকে খায়িয়ে দিল মেঘ খাবার কম খেয়ে ধূসর কে বেশি দেখলো। খাওয়া শেষ করে বলল,,

“আপনি এত ভালো কেন ধূসর?

“কারন আমার বউটা অনেক ভালো। অনেক সুইট আর কিউট।

“ওমনি বউয়ের প্রশংসা করা শুরু হয়ে গেল!”

“আরে আমি তো বউয়ের প্রশংসা না সুন্নত পালন করছি।

“তাই বুঝি!”

হুম তাই। আচ্ছা বাদ দাও,তখনকার জন্য সরি ফুপি আসলে ঐরকমই। মন খারাপ করে থেকো না। নিজেকে একদমই ছোট ভাববে না।”

“নিজেকে ছোট ভাবলে কি তখন ওগুলো বলতাম ! তা ছাড়া ছোট বেলায় আমার আব্বা আমাকে একটা কথা বুঝিয়েছিল। সেটা মানার পর থেকে এই আমিকে কেউ কষ্ট দিতে পারে নি। কারন নিজেকে আমি কষ্ট পেতেই দিই নি।

“কি বলেছিল আব্বা?”

মেঘ হেসে বলল,,

“অন্যের কথায় নিজেকে কোনঠাসা করো না মেয়ে। নাহলে দিনকে দিন এরা তোমাকে পেয়ে বসবে আর মিস্টি মুখের কথার জালে তোমাকে যত্ন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে।”

“তোমার আব্বার আর তোমার নিজের জন্যই তুমি এমন ব্যাক্তিত্বের মানুষ। হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড়।

“ধূসর একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবেন!”

মেঘ আর ধূসর শুয়ে পড়লো। ধূসর আলতো করে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। হুট করে মেঘের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। মেঘ আর ধূসর ঘুমিয়ে পড়লো।

__________________

অতঃপর সকাল হতেই মেঘ রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। মেঘ ধূসরকে বলেছে পরে নীলিকে নিয়ে আসতে। আর কাউকে কোর্টে যেতে মানা করেছে। এদিকে হাবিবুর রহমান ও বেরিয়েছে। অতঃপর কোর্টে সবার আগে আব্দুল কাদের ও শেফালী খানের কেস উঠবে। মেঘ আর হাবিবুর রহমান নিজেদের কাজ শুরু করলো। হাবিবুর রহমান বললেন,,

“তো মহামান্য আদালত আমি প্রথমেই বলে নিতে চাই । আমার ক্লায়েন্টদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।”

তখন মেঘ অবজেকশন দিয়ে বলল,,

“ওহ রিয়ালি মিস্টার হাবিব আচ্ছা ধরুন আমি মেনে নিলাম তাদের ফাঁসানো হয়েছে। তবে এটা বলুন তাদের দুই জায়গায় থেকে দুই সময়ে কেন এরেস্ট করা হয়েছে আর দুজনকেই আলাদা আলাদা কেস এ কেন? মহামান্য আদালত আমি তাদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই আমি কি ওনাদেরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি।”

কোর্ট অনুমতি দিল মেঘ ওনাদের সামনে গিয়ে বলল,,

“তো মিসেস শেফালী খান আপনি বলুন তো কোন অভিযোগে আপনাকে এরেস্ট করা হয়েছে?”

শেফালী খান আমতা আমতা করে বলল,,

“আমি জানি না আমাকে তো একজন গুলি করেছিল আমি হাসপাতালে ছিলাম তখন হুট করে পুলিশ আমাকে ধরে!”

“মিথ্যা বলা কেউ আপনার থেকে শিখুক যাই হোক আমি বলছি কেন আপনাকে এরেস্ট করা হয়েছিল? আপনাকে এরেস্ট করা হয়েছিল মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র এর স্ত্রীকে কিডন্যাপ করতে চাওয়ায় অপরাধে। এবং গুলি টা কেউ না নিজেকে রক্ষা করতে সেই করেছিল।”

“না আমি এরকম কিছুই করি নি! তাছাড়া প্রমান কোথায় আমি তাকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলাম। কোর্ট প্রমান ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করে না এটুকু আইন আমিও জানি।”

“ইয়েস আই নো তবে মহামান্য আদালত এর প্রমান আমি একটু পরে দিচ্ছি তার আগে আমি কিছু প্রশ্ন আব্দুল কাদেরকে করে নিই। তো আব্দুল কাদের আপনি তো জানেন আপনাকে কেন এরেস্ট করা হয়েছে?”

তখন আব্দুল কাদের বলল,,

“আমিও জানি না আমি অফিসে ছিলাম এমন সময় পুলিশ গিয়ে গ্ৰেফতার করলো।”

মেঘের খুব হাসি পেলেও কিন্ত মেঘ হাসলো না। সে বলল,,

“আজব মানুষ আপনাদের দুজনকে কেউ ফাঁসিয়ে দিল কি অভিযোগে ফাঁসিয়ে দিল সেটাই জানেন না বাহ!”

তখন হাবিবুর রহমান অবজেকশন দিয়ে বলল,,

“মহামান্য আদালত আমার সহযোগী এবার একটু বেশিই সিন ক্রিয়েট করছেন বলে আমার মনে হয়।”

“দুঃখিত মিস্টার হাবিব আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। আমার সহযোগী মিস্টার হাবিব যদি আরেকটু ধৈর্য্য ধরেন তো আমি আমার কার্যক্রম খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবো। প্লিজ মহামান্য আদালত আমাকে আরেকটু সময় দেওয়া হোক।”

কোর্ট অনুমতি দিল মেঘ বলল,,

‘ধন্যবাদ মহামান্য আদালত। তো আব্দুল কাদের আপনার ওপর অভিযোগ হলো এই আপনি একজন অবৈধ ব্যবসায়ী যে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কাজ করে থাকেন যেমন নারী পাচার, অবৈধ ওষুধ উৎপাদন এমন কি কিছু মাস আগে রোকনুজ্জামান এর সাথে আরেকজন মেন কালপ্রিট কে দেখা গিয়েছিল সেটা আপনার এবং আপনিই সেই মেন কালপ্রিট দেশের শত্রু।”

“অবজেকশন মহামান্য আদালত আমার সহযোগী এভাবে ভিত্তিহীন কোন অভিযোগ আমার ক্লায়েন্টের ওপর আনতে পারেন না। তিনি বেশ নামকরা বিজনেস ম্যান সে এসব করতে পারে না।”

হাবিবুর রহমানের কথায় মেঘ বলল,,

“মানুষ কি পারে আর পারে না সেটা কেউ বাইরে থেকে ধারনা করতে পারে না। মহামান্য আদালত আমি এখন আমার প্রমান পেশ করতে চাই যে প্রমান দেখলে শেফালী খান ও আব্দুল কাদের কি কি করতে পারে সব প্রমান হয়ে যাবে। আমাকে অনুমতি দেওয়া হোক।”

কোর্ট অনুমতি দিল মেঘ প্রথমে শেফালী খানের বাড়িতে করা রেকডিং দেখালো তারপর ওটার সাথে রোকনুজ্জামান এর রেকডিং মিলিয়ে দেখালো যে দুজন ব্যক্তি একজনই। তারপর মেঘ ক্যাফেতে তোলা কালকের ভিডিও দেখালো যেখানে মেঘের সাথে কি কি করেছে সব দেখা গেল। এমন কি শেফালী খান কি কি বলেছে সব যারা ভিডিও দেখলো তারা সবাই শেফালী খানের দিকে ঘৃনার দৃষ্টি ছুড়লো এমনকি আব্দুল কাদের নিজেও। তাছাড়া ওখানে আব্দুল খান কি কি করে সব বলা আছে। তাই সব প্রমান হয়ে গেল। হাবিবুর রহমান অবাক হয়ে গেল। আর মেঘের দিকে তাকিয়ে রইল। আদালত তাদের যোগ্য শাস্তি ঘোষণা করলো। হাবিবুর রহমান চলে গেলেন কোর্ট থেকে লজ্জায় ওনার আর আজ কেস নেই। এরপর আসলো আকাশের কেস আকাশের লয়ার অন্য একজন। মেঘ নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে নীলিকে নিয়ে এলো ধূসর আর নীলি ঠিক সময় পৌঁছে গেছিল। আকাশ তো নীলিকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছিল। অতঃপর মেঘ আকাশ কে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করলো। নীলকে নিয়ে মেঘের ওপর করা কেসটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তাই ওর কেস ওঠার আগেই কোর্ট সমাপ্ত করে দিয়েছে। আপাতত মেঘ ধূসর আর নীলি বাড়ি ফিরলো বাড়ি আজ উৎসব মুখর পরিবেশ একসাথে এতগুলো জয় তাই এহসান খান বললেন স্পেশাল কিছু করতে। আজ মেঘের বাপের বাড়ি দাওয়াত করা হয়েছে এমন কি মেঘের বান্ধবী এবং তাদের হাজবেন্ড দের। সবাই হাজির কিন্তু শিরিন খান আর হাবিবুর রহমান লজ্জায় আজই চলে গেছে কেউ বাধাও দেয় নি।মেঘ বাড়ি ঢুকেই সবাইকে দেখে চমকে উঠলো। ওরা ফ্রেস নিচে আসলো সবার সাথে কথা হচ্ছে হুট করে মায়মুনা চৌধুরীর ফোন বেজে উঠল উনি একটু দূরে সরে এসে কথা বলে যা শুনলো তার শুনে ওনার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল উনি মেঘের দিকে তাকালো মেঘ হিরদের আর নীলির সাথে কথা বলছে কি নিয়ে যেন হাসছে। উনি আস্তে আস্তে গিয়ে মেঘের সামনে দাঁড়ালো তা দেখে সবাই একটু অবাক হয়ে গেল বটে মেঘ হাঁসি মুখেই ওনার সামনে দাঁড়িয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“কিছু বলবেন?”

উনি কিছু না বলেই হুট করে মেঘকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।সবাই তো অবাক হলোই সাথে মেঘ ও । মেঘ বলল,,

“কি হয়েছে মা! কাঁদছেন কেন?

“ডক্টর সোহেলী যা বলল তা কি সত্যি!”

এটা শুনে মেঘ থমকে গেল। মেঘ নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“আগে সবসময় কি ভাবতাম জানেন আমার দুঃখ ফুরানোর আগেই বোধহয় আমি ফুরিয়ে যাবো। কঠিন বাস্তবতার চারপাশে আমি এক ক্ষনিকের প্রহরী হয়তো বা তবে আশা আছে একটা এখনো কিছু শেষ হয় নি।তবে শেষ এসে গেছে জানি তবুও চাইনা সে শেষের হাতছানি।”

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে