ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-৩৬

0
928

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ ওপরে যাওয়ার পর সবাই একপ্রকার থমকে আছে। সবাই ভাবছে মেঘ “নীলি আমায় মিথ্যা বলেছে আব্বা! সরি নীলিমা না নীলাশা ও আমায় মিথ্যা বলেছে ও আমাকে বিশ্বাস করতে পারে নি আব্বা।”এই কথা দ্বারা কি বুঝিয়েছে? হুট করে ধূসর বলল,,

“নীলা মেঘ এগুলো কি বলে গেল তুই কি মিথ্যা বলেছিস ওকে?”

নীলি কাঁদছে! তা দেখে ধূসর আবার বলল,,

“জাবিন, হির, লিয়া তোমরা কিছু জানো? মেঘকে এয়ারপোর্ট থেকেই নোটিস করেছি ও নীলার সাথে তেমন কথা বলেনি উল্টো ত্যারাভাবে জবাব দিয়েছে।”

তখন হির বলল,,

“আমাদের জানামতে সেরকম কিছু নেই শুধু নীলির নামটা ছাড়া। তবে মেঘের আচরন আমরাও লক্ষ্য করেছি আজ। হুট করেই গাম্ভীর্যতায় নিজেকে আবার আবৃত করে নিয়েছে।”

তখন ধূসর বলল,,

‘আব্বা আপনি নিশ্চয়ই জানেন?”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“সেটা তোমার নীলাশা নামক বোনকেই জিজ্ঞেস করো না!”

তখন নীলাশা বলল,

“ভালোবাবা তুমিও মেঘের মতো আমার ওপর রেগে আছো?

“রাগ না করাটা কি উচিত ছিল বলছো?”

” মানছি ভুল হয়েছে কিন্তু বিশ্বাস করো আমি মেঘকে বলতে চেয়েছিলাম পরে কিন্তু বলতে পারি নি।”

“ও তারমানে তুমি কিছুই ভুলোনি তোমার সব মনেই ছিল। আমরা ভেবেছিলাম সত্যিই তুমি কিছু কিছু জিনিস ভুলে গেছো। এরপরেও কি করে বিশ্বাস করবো তুমি কি আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছো নীলিমা সরি নীলাশা।”

“আমি সেদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই তোমাদের শুধু ঠিকানা সঠিক দিয়েছিলাম আর সব ভুল বলেছিলাম।”

“আচ্ছা যারা তোমাকে বিশ্বাস করে সিলেট থেকে
ঢাকায় নিয়ে এনে তোমার চিকিৎসা করালো তাদের কে তুমি ভয় পেলে বাহ চমৎকার।”

তখন ধূসর বলল,,

“প্লিজ আব্বা ও অসুস্থ এভাবে কথা বলবেন না। আর নীলা তুই সব খুলে বল তুই তো কিছু করেছিস তাই মেঘ এভাবে কথা বললো আর চলে গেল আমি ওর কথায় স্পষ্ট কষ্ট দেখেছি। আর কি বললি ঠিকানা সঠিক দিয়ে আর সব ভুল বলেছিলিস কিন্তু কেন শুধু ভয় পেয়ে সেটা আমি বিশ্বাস করি না।”

তখন নীলি বলতে শুরু করল,,

“আসলে গাড়িতে থাকা অবস্থায় হুট ড্রাইভার চাচা বলল আমাকে মাফ করে দিও আমি সব জেনেও তোমাকে এ গাড়িতে আনছি আমি কেন? বলতেই উনি বলল কেউ আমাকে মারার জন্য গাড়ি ব্রেকফেইল করে দিয়েছে আর ওনাকেও হুমকি দিয়েছে গাড়িতে আসার জন্য উনি নাকি দেখে ফেলেছিলেন কাজটা করার সময় উনি যদি চুপ না থাকেন আর আমাকে না নিয়ে রওনা হন তাহলে ওনাকেসহ ওনার পরিবার কে মেরে ফেলবে। তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের জন্য মরবে জেনেও গাড়িতে এসেছে। আর যে থ্রেট দিয়েছে সে নাকি মস্ত বড় মাফিয়া আমার পরিবার কেও মেরে ফেলবে। সিলেট এলাকা বুঝতেই পারছো সেখানে জায়গায় জায়গায় কতো খাদ বলতে বলতেই আমাদের গাড়িটা খাদে পরে যায় তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন শুধু চাচার কথায় কানে বাজছিল আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। প্রায় তিন মাস পর চিকিৎসার পর আমি কথা বলতে পারলাম তখন মেঘ আমার কাছে এসে আলতো করে সাহস জুগিয়ে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে ওকে দেখে সব সত্য বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু চাচার কথা ভেবে সেই মস্ত বড় মাফিয়া যদি আমার নাম শুনে আর আমি বেঁচে আছি শুনে আবার অ্যাটাক করে। যদি আমাকে চিনে ফেলে তাই মেঘকে নামটা বলার সময় নীল আসে মুখে তাই নীলাশাকে বদলে দিই নীলিমা। কারন আমি তো গল্পে পরতাম মাফিয়ারা সব জানতে পারে তাই ভয় পেয়ে সঠিক নাম বলিনি। বাসার সঠিক ঠিকানা দিই যাতে আমি তোমাদের কাছে পৌঁছাতে পারি বাকিটা ভুলে যাওয়ার নাটক করি কারন আমি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যদি সেই মাফিয়া আমার সম্পর্কে জেনে যায়। তাছাড়া যদি চাচার কথামতো তোমাদের কেও মেরে ফেলে তাহলে ভালোবাবা তোমাদের খোজ করলে সেই মাফিয়া যদি ভালোবাবার ক্ষতি করতে চায় কারন উনি আমাকে বাঁচিয়েছে কিন্তু আমার জন্য ভালোবাবার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। তাছাড়া আমার সম্পর্কে যদি জেনে যায় মাফিয়াটা এটাই কারন ছিল ওদের কে সঠিক টা না জানানো। আমার অবস্থা দেখে ডক্টর বলে মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে আমি কিছু জিনিস ভুলে গেছি মাঝে মাঝে সে ব্যাপারে আমার মনে করতে পারে। আবার নাও পারে। তারপর ভালোবাবা তোমাদের খবর নিতে যায় আমার ঠিকানা অনুযায়ী সেখানে গিয়ে দেখে তোমরা নেই। আমি আরো ভয় পেয়ে তাই সে তোমাদের মেরে ফেললো না তো। তাছাড়া ওটা আমাদের পৈতৃক বাড়ি সব ওখানেই তোমরা ওখান থেকে যাবে কেন? মাথায় সব তালগোল পাকায় এদিকে মেঘ আমার খেয়াল রাখে যত্ন করে বন্ধুর মতো তারপর থেকেই আমি মেঘদের সাথে নতুন পরিচয়ে বাঁচতে শুরু করি কিন্তু এক বছর পেরুতেই আমি বুঝতে পারি মেঘদের সব সত্য জানিয়ে দেওয়া উচিৎ । কিন্তু জানিয়ে হয়ে উঠা আর হয় নি। আর এমন ভাব করেছি যেন সত্যিই আমার আর কিছু মনে নেই। মাঝে মাঝে তোমাদের কথা ভুলে বলে ফেলতাম কিন্তু নাম বলা হয় নি কখনো। মেঘ সব নোট করে রাখতো যাতে আমার পরিবার সম্পর্কে জানতে পারে। আমি ওকে কারো নামই বলিনি কখনো। কিন্তু ও আমাকে এত ভালোবাসতো এত ভরসা করতো আমি ওর মর্যাদা রাখতে পারি নি। কিন্তু বিশ্বাস করো ভালোবাবা আমি তোমাদের ভালোর জন্যই তোমাদের মিথ্যে বলেছিলাম।

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“তোমার বাবার নামটা আগে বললে এতকিছু হতোই না তুমি ও থাকতে তোমার পরিবারের কাছেই কারন আমি আর তোমার বাবা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। তোমার এই নির্বুদ্ধিতার জন্য এতগুলো বছর নষ্ট হলো। বুজলাম তুমি আমার বা আমাদের ভালোর জন্য মিথ্যা বলেছো। কিন্তু মিথ্যা মিথ্যাই হয় একবার সত্যি বলে দেখতে বাকিটা দেখা যেত। তারওপর তোমার মিথ্যা বলায় মেঘ!,,

আর কেউ কিছু বলবে তার আগেই মেঘ মাথায় একটা ক্যাপ পরে নিচে এলো এমনিতে তো ও কালো বোরকা হিজাব নিকাব পরাই ছিল। ওকে এই লুকে দেখে সবাই অবাক হলো নিচে এসে মেঘ বলল,,

“মিস্টার ধূসর আপনি না ডক্টর তাহলে এইরকম বোকামো কিভাবে করছেন?”

মেঘের কথা সবাই বেশ অবাক হলো ধূসর অবাক হয়েই বললো,,

“কেন? আমি কি করলাম?”

“আপনার বোন অসুস্থ তারওপর এয়ার জার্নি করে এসেছে তাকে না খেতে দিয়ে না ওষুধ খায়িয়ে না রেস্ট করতে দিয়ে বসে আছেন! এতে আপনার বোনের কতটা অসুবিধা হচ্ছে বা হতে পারে আপনি ধারনা করছেন না!”

মেঘের কথা শুনে সবাই মাথা নাড়ালো সত্যিই তাই আবেগে ভেসে কান্ডজ্ঞান সবাই ভুলে গেছে। নীলিমা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,,

“মেঘ আমার কথা শোন আমি,,”

“সরি এখন আমার একটু বেরুতে হবে আমি এসে শুনছি কিন্তু তুই কাঁদছিস কেন? যাই হোক কান্না বন্ধ কর মাথাব্যাথা করবে ধূসর আপনার ফোনে আমি একটা মেসেজ করেছি সেটা দেখে নীলিকে খায়িয়ে দেবেন আর হ্যা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন আমার আসতে বিকেল বা সন্ধ্যা এমনকি রাত ও হতে পারে। আর নীলি চুপচাপ রেস্ট নিবি, মা আপনার মেয়েকে দেইখেন আসছি।”

সবাই অবাক চোখে মেঘের কথা শুনলো।মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাছে গেল।আর বলল,,

“আব্বা আপনার সাথে কথা আছে একটু ওদিকটায় চলুন!”

আয়মান চৌধুরী ওর সাথে সবার থেকে একটু দূরে গেল। মেঘ নিচু স্বরে বলল,,

“আব্বা শেফালী খান একটু আগে ফোন দিয়েছিল কি জানি জরুরি কথা আছে। কিন্তু আমার কিছু সংশয় হচ্ছে তারা কিছু অন্য প্ল্যান করছে না তো যদি কিছু করে তাহলে একা সামলাবো কিভাবে? ধূসরকেও বলতে পারছি না আজকেই নীলি এলো সবাই এখন খুব খুশি এই মুহূর্তে এমন কিছু বললে সবার আনন্দ নষ্ট হবে। এই মুহুর্ত নষ্ট করতে চাচ্ছি না। কিন্তু কি করবো বুঝতেও পারছি না।”

“আমি আপনার সাথে যাই তাহলে আব্বা?”

” সে আমাকে একা যেতে বলেছে। তাছাড়া সেখানে কিছু হলে আপনার প্রান সংশয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আপনাকে ওখানে নিয়ে রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।”

“আপনিও তো যাচ্ছেন আপনার ও তো প্রান সংশয় থাকতে পারে।”

“কিছু হবে না আমি সামলে নিতে পারবো একা! আপনি এখন জোর করবেন না। তাছাড়া রিভলবার সাথে নিয়েছি তো!

“আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু ঠিকানা টা কোথায় বলুন যাতে একটু হেরফের হলে আপনি ফোন বা টেক্সট করলে আমি সহজেই পৌঁছাতে পারি।”

“***** এই ক্যাফেতে!

“ওকে আম্মা সাবধানে যাবেন!”

“হুম ওখানে তাড়াতাড়ি যদি সব মিটে যায় আমার ফেবারিট জায়গায় যাবো আব্বা আপনিও চলে আসবেন কাজ সেড়ে আপনাকে ফোন দিব অনেকদিন হলো দুজনে একসাথে সেখানে যাই না।”

“মনকে খুশি করার জন্য নিজেকে শান্তনা দিচ্ছেন আম্মা আমি জানি আপনি ওখানটায় কখন যান যখন আপনার মন অশান্ত থাকে তখন। আপনি এখনি ওখানে যেতেন কিন্তু তার আগে শেফালী খান আটকে দিল।”

“আপনার কাঁধে মাথা রাখতে ইচ্ছে করছে আব্বা। কিন্তু চাইলেও এখন আপনাকে বলতে পারছি না আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি!”

আয়মান চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত রেখে বলল,,

“ক্যাপ দিয়ে কান্নাভেজা চোখ না দেখানোর চেষ্টা সেটা আমাকে বোঝাবেন না আম্মা।”

“সবাই কি নিরব চোখের বোবা কান্না অভিলব্ধ করতে পারে আব্বা আপনার থেকে লুকাতে চাই না আমি তবে দুনিয়ার কাছে আমি যেমন নিষ্ঠুর তেমন নিষ্ঠুর হয়েই থাকতে চাই। এই জীবনে খুব কম সংখ্যক আকাংখা আমার সেসব পুরন করেই আমি পৃথিবী ত্যাগ করতে চাই।”

“আমার আম্মা আজ যেন একটু বেশিই আবেগী হয়ে পরছে নাকি তার দূর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে।”

“তিক্ত সত্য যখন সম্মুখে দাড়ায় তখন শক্ত খোলশে মুড়ানো মানুষটাও যেন নড়বড়ে হয়ে যায়।”

আয়মান চৌধুরী অবাক হলো থমকালো তিনি নিজেকে ধাতস্থ করতে বলল,,

“আমার জানামতে নীলি তেমন কোন বড় অপরাধ করে নি? তাহলে এতো কঠিন বাক্য কেন আম্মা।”

মেঘ অসহায় চোখে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না শুধু আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেল।কারো দিকে তাকালো না পর্যন্ত।ধূসর দূর থেকে সবকিছুই দেখছিল হুট করে মেঘের এমন পরিবর্তন ও মেনে নিতে পারছে না। ও দৌড়ে বেরিয়ে গেল মেঘ মাত্র গাড়িতে উঠবে ও চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,,

“মেঘ বালিকা!”

মেঘ ধূসরের দিকে তাকালো ধূসর তাড়াতাড়ি মেঘের কাছে এসে বলল,,

“কোথায় যাচ্ছো?”

মেঘ মাথা নিচু করে বলল,,

“বললাম তো একটু কাজ আছে?”

তা দেখে ধূসর বলল,,

“ক্যাপের মাধ্যমে চোখ ঢেকে রাখলে বুঝি কষ্ট আড়াল করা যায়।”

মেঘ চমকালো আর ধূসরের দিকে তাকালো তা দেখে ধূসর ক্যাপ খুলে বলল,,

“প্রিয়তমার কন্ঠ শুনে যদি বুঝতে না পারি তার মনের অবস্থা কেমন তাহলে সে কিসের প্রেমিক পুরুষ।”

মেঘ নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়েই বলল,,

“সে প্রেমিক নয় আমার, আমার জীবনসঙ্গী আমার অর্ধাঙ্গ সে!যে আমৃত্যু পর্যন্ত আমার সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছে। প্রেমিক হলে বুঝতে পারতো না বোধহয় কিন্তু অর্ধাঙ্গ বলে পেরেছে।”

ধূসর চমৎকার হাসলো। আর বলল,,

“নীলাশার ওপর রেগে থেকো না। ও যা করেছে তোমাদের ভেবেই করেছে।”

“থাক বলতে হবে না আমি ওপর থেকে সব শুনেছি ওকে বলবেন ওর ওপর রেগে নেই একটু অভিমান হয়েছিল এখন সেটুকু নেই আমি কথা বলতাম কিন্তু এখন আমাকে যেতে হবে জরুরি কাজ আছে।”

ধূসরের কেন যেন খুব ভয় করছে। ও মেঘকে হুট করেই জরিয়ে ধরে বলল,,

“কেন যেন ভয় করছে মেঘ বালিকা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে মেঘবালিকা তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”

মেঘের কি হলো জানা নেই ও ধূসরকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“হুম তাড়াতাড়িই ফিরে আসবো ইনশাআল্লাহ।”

ধূসর মেঘকে ছেড়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“আল্লাহ হাফেজ!”

“আল্লাহ হাফেজ!”

বলেই মেঘ গাড়ি নিয়ে চলে গেল ধূসর যে পর্যন্ত গাড়ি দেখা যায় সে পর্যন্ত তাকিয়ে রইল। হুট করেই ওর ভিশন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ও যেতে চাইতো বোধহয় কিন্তু বোনের আসার জন্য গেল না। ধূসর ভেতরে ঢুকলো আর আয়মান চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,

“আব্বা আপনি জানেন ও কোথায় গেল?”

“কেন তোমাকে বলে নি!”

“না সেরকম কিছুই বলে নি শুধু বলেছে কাজ আছে!”

“ওহ আচ্ছা আসলে ওর একটা কেসের জন্য একটা তথ্য আনতে গেছে।”

“ওহ আচ্ছা!”

এটুকু বলে ধূসর নীলির কাছে গেল মেয়েটা এখনও কাঁদছে জাবিন রা দিলরুবা খানম বুঝিয়েছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ধূসর গিয়ে মেঘের কথা নীলিকে জানালো নীলির কান্না থেমে গেল। কিন্তু আয়মান চৌধুরী চমকে উঠলো তার মানে মেঘের মন খারাপ অন্য কারনে যা মেঘ ওনাকে বলে নি আর ঐ ভারী ভারী কথার দ্বারা মেঘ কি বুঝালো। মেঘ কি অন্য কারনে কষ্টে আছে।

________________

এদিকে,,

মেঘ বিশ মিনিটের মাথায় শেফালী খানের বলা ক্যাফেতে পৌঁছে গেছে। মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে ভেতরে। ঢুকেই সে শাড়ি পড়িহিতা অস্থির অবস্থায় শেফালী খানকে দেখতে পেল। মেঘ তাড়াতাড়ি ওখানে গেল। ও বসতেই তিনি বলল,,

“ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য!”

“কি বলতে ডেকেছেন সেটা বলুন!”

“কফি খেতে খেতে বলি!”

“না আমি এখন কিছু খাবো না।”

“এটা কোন কথা নাকি ক্যাফেতে এসে কফি না খেলে শুধু বসে কথা বললে কেমন দেখায়। অর্ডার করাই আছে এখন বললেই দিয়ে দেবে।

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

তখনি শেফালী খান ইশারা দিল দুটো কফি হাজির। কফিতে চুমুক দিয়ে শেফালী খান বলল,,

“আসলে সেদিন তোমাকে অনেক কথা বলার ছিল। কিন্তু বলতে পারি নি ভয়ে?”

ওনার কথা শুনে আর কফিতে চুমুক দিতে দেখে মেঘ ও কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,,,

“কেন?”

“ঐ কাজের লোকটা নজর রাখে বলে তুমি তো জানো না কাদের কতটা নিকৃষ্ট মানুষ। আমি যদি সত্যি তোমাকে বলে দিতাম তাহলে কাজের লোকটা সব বলে দিত কাদের কে। আর কাদের আমাকে মেরে ফেলতো।”

“মানে কিছুই বুঝলাম না!”

“আজ তোমাকে আমি সত্যি কথা বলছি শুনো মা শুনে তুমি চমকে উঠবে। কিন্তু তোমার দুর্ভাগ্য, যাই হোক শুনো আমি আর কাদের ছিলাম কলেজ জীবনের প্রেমিক প্রেমিকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার বিয়ে হয় মাহমুদের সাথে লোকটা ভালো ছিল। আমি রাজি ছিলাম না বিয়েতে।আমি কাদের কে ভালোবাসতাম ওকে আমি ছাড়তে চাই নি। কাঁদের সব জেনেও আমাকে রাজি হতে বলে। কারন আমার মা বাবা নাকি ওকে মেরে ফেলবে এই বিয়েতে রাজি না হলে। ও সেদিন খুব কেঁদেছিল মা বাবাকে ভয় পেয়েই হয়তো আমাকে বিয়ে করতে বলছে। ওর কথা মতোই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। আর আমাদের বিচ্ছেদ ঘটে। মাহমুদ আমাকে ভালোবেসেছিল নাকি প্রথম দেখায় তাই আমাকে হারাতে চায় নি। আমি প্রথম দিনই সব বলে দিই মাহমুদ কে যে আমি কাদেরকে ভালোবাসি আমি ওনার সাথে সংসার করতে পারবো না। সেদিন ও বলেছিল সংসার করতে হবে না ওর সাথে থাকলেই হবে। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম লোকটা আমাকে অনেক ভালোবাসে। দিন যায় লোকটার ওপর মুগ্ধ হতে থাকি ভালোবাসাও তৈরি হয় হালাল সম্পর্কের জোর থাকবেই তাই না। তার সরুপ আমাদের জীবনে সোহেল আসে। আমি কাদেরকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম মাহমুদের ভালোবাসায়। তার দুই বছর পর অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমার জীবনে আবার কাদের ফিরে আসে। আমাকে বিভিন্ন কথা বলে অপমান করে আমি নাকি লোক দেখানো ভালোবাসি তাকে আমাকে ভালোবাসলে সোহেল হলো কিভাবে সব কিছু এমন ভাবে উপস্থাপন করলো আমার মাথা ঘুরে গেল ও কাঁদছিল। আমার খারাপ লাগছিল পুরোনো প্রেম জেগে উঠলো। ও বলেছিল ও আমার জন্য এখনো অপেক্ষা করে আছে । তখন কি হলো বুঝতে পারলাম না। মনে হলো সব ছেড়ে ছুড়ে কাদেরের কাছে যাই‌। ও কাঁদতে কাঁদতে কাছে এসেছিলো আমিও পুরোনো প্রেমে অন্ধ হয়ে তার সাথে পরকীয়া শুরু করি। মাহমুদ অফিসে বের হলেই কাদের আসতো মেতে উঠতাম নোংরা খেলায়। বেশ ভালোই চলছিল দিন, রাতে মাহমুদ আর দিনে কাদের সবার মাঝে আমার লাভ টাই বেশী।বেশ আনন্দ লাগতো। কাদের মদ নিয়ে আসতো আয়েশি ভঙ্গিতে আমরা খেতাম আর তারপরেই শুরু হতো রোজকার মজা।

এইটুকু ঘৃনায় মেঘের শরীর রি রি করে উঠলো। মনে হচ্ছিল এখনি সামনের মানুষটা কে খুন করতে পরকীয়া করে আমার ওর সামনেই লাভের হিসেব দেখাচ্ছে। মেঘ শক্ত হয়ে বসে রইল। শেফালী খান হাসলো কি নোংরা হাসি। আর বলতে লাগলো,,

“এইটুকুতেই এমন শুনো বাকিটা শুনো কি হলো যানো দিন দিন যেন কাদেরকেও ভালো লাগছিল না। নতুন কাউকে দরকার পুরোনো মদ আর পুরোনো লোক কোনটাই ও ভালো লাগতো না। তবুও কাদের আর মাহমুদ কে নিয়ে মানিয়ে নিতাম। এখন সবথেকে বড় কথা কাদের অবৈধ নারী ব্যবসা ওষুধ কারবারি করতো নেশা দ্রব্য বানাতো এমন কি রোকন দিয়ে কাজ করাতো সেটা আমিই ওকে বলেছিলাম ওকে আমাদের হাতে রাখতে। আমিও ওর কাজে ছিলাম ও যখন ওর কাজ নতুন শুরু করে আমাকে বলে টাকা লাগবে আমার নেশার দরকার ছিল কারন মদ ছাড়া চলছিল না যে তাই নিজের জন্য ফুর্তির জন্য মাহমুদ এর থেকে কতোটাকা ব্যবসায় ঢেলেছিলাম তার কোন হদিস নেই। নতুন নতুন ডিল আমি কাদেরের সাথে হ্যান্ডেল করতাম। বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ ড্রাগস খেতাম। মাহমুদ বিদেশে বা কাজের জন্য বাইরে গেলে বাচ্চাদের কাজের লোকের কাছে রেখে। আমি কাদেরের সাথে বাইরে গিয়ে নাচ গান আমোদ ফুর্তি সব করতাম। টাকা, ,ফুর্তি মদ আহ জীবন কতো সুন্দর তাইনা। আমি তো কাদেরের থেকেও নিকৃষ্ট জানিস ও শুধু আমায় ভালোবেসে গেছে কিন্তু আমি ভালোবেসেছি দুজনকে। কিন্তু কাদের জানতো আমি মাহমুদ কে ড্রাগস খায়িয়ে ঘুম পাড়াই কিন্তু সে তো জানে না আমি মাহমুদ কে ড্রাগস দিই ঠিকই কিন্তু ঘুমের না অন্যকিছুর । কাদের জানে ওর ছেলে আকাশ কিন্তু আকাশ যে কার ছেলে সেটা আমি নিজেও জানিনা ।

এ কথা শুনে মেঘ আর নিজেকে সংযত করতে পারলো না। ও ওর হাতে রাখা কফির মগটা শেফালী খানের মুখ বরাবর ছুড়ে মারলো তাতে অবশ্য শেফালী খান একটু আঘাত পেল। হুট করে এমন হওয়ায় ও বাঘীনির মতো এসে চিৎকার করে বলল,,

“তোর এতো তেজ!

তারপর শান্ত হয়ে বলল,,

“কুল কুল এত তেজ ভালো না এটা বরং তুই ওটা রেখে দে পরে কারো বিছানায় কাজে লাগবে?

মেঘ রাগে নিজের চেয়ার ছেড়ে শেফালী খান কে একটা চড় মেরে গলা চেপে ধরে বলল,,,

“কাশফিয়া আয়মান মেঘ কে তোর দূর্বল মনে হয়। আমি তোর মতো নিকৃষ্ট নই। প্রথমে তো পরকীয়া করেছিস তারপর আবার গর্বের সহিত আমাকে বলছিস ছিঃ ছিঃ তোদের মতো মেয়েদের জন্য মা জাতি লজ্জিত ‌। আর কি বললি কারো বিছানায় ছিঃ আমি আমার আল্লাহর দেওয়া অশেষ নেয়ামত আমি আমার স্বামীকে নিয়েই সন্তুষ্ট তোর মতো নই। আল্লাহ কে ভয় কর দুনিয়াতে মজে আখিরাত নষ্ট করেছিস তুই। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু সম্প্রদায় রাত্রী অতিবাহিত করবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য-পানীয়তে ভোগ বিলাসী হয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদন আনন্দ প্রমোদে। এমতাবস্থায় তাদের সকাল হবে শুকুর ও বানরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৬০৪, ২৬৯৯)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এক শ্রেণীর অর্থশালী মানুষেরা নানা ধরনের মদ ও পানীয়ের ব্যবস্থা করে অতি ভোগ-বিলাসে দিনাতিপাত করবে। নানা ধরনের আমোদ-প্রমোদে ও বিনোদনে রাত্রী যাপন করবে। এর মাধ্যম হবে নায়িকা, মদ ও বাদ্য যন্ত্র। এ ধরণের লোকেরা শুকুর ও বানরে পরিণত হবে। হয় তাদের আকৃতি শুকুর ও বানরের মত হবে, অথবা তাদের হালাল-হারামের বিবেচনা থাকবে না। এজন্য নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে শুকুরের সাথে তুলনা করেছন। তাদের চাল-চলন হবে বিজাতিদের মত অর্থাৎ তাদের স্ত্রী ও মেয়েরা বিজাতিদের মত নানা পোশাক পরবে। আর এদের কাছে যেনা হবে সাধারণ কাজ। এদের বাড়ী-গাড়ি হবে কুকুর ও বিভিন্ন ধরনের মূর্তিতে পরিপূর্ণ। তাই তাদেরকে বানরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ তারা বিজাতিদের অনুকরণ করবে।

তুই হচ্ছিস যেনাকারী ব্যাভিচারী। আমার দেখা নিকৃষ্ট মানুষ হচ্ছিস তুই। তোকে আমি ছাড়বো না।”

বলতে বলতেই মেঘের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো হাত ও আলগা হয়ে এলো। শেফালী খান বুঝতে পারলো তার ওষুধ কাজে দিয়েছে তিনি মেঘকে এক ঝটকায় সরিয়ে ফেলল মেঘ পেছনে গিয়ে ঢুলতে লাগলো। ও একটা চেয়ার ধরে দাঁড়ালো। ক্যাফেতে অন্য মানুষ নেই যারাও ছিল ওরা আসার পর চলে গেছে মেঘ বুঝতে পারলো ওকে এখানে ইচ্ছে করে প্ল্যান করেই ডেকেছে ও তাড়াতাড়ি করে ওর বাবাকে মেসেজ করবে তার আগেই শেফালী খান মেঘের গাল ধরে বলল,,

“তুই আমার গায়ে হাত দিলি তোর সাহস দেখে আমি অবাক আবার জ্ঞান দিচ্ছিলি তোর জ্ঞানের ধার ধারি নাকি। এখন কি করবি তুই তোর শরীরে যে আমার ওষুধ কাজ করতে শুরু করেছে। তোর কফিতে আমি ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম যা খাওয়ার বিশ মিনিট পর আস্তে আস্তে কাজ শুরু করবে ত্রিশ মিনিটের মাথায় বেহুঁশ আসলে একটা মেয়ে কম পরেছিল তখন মনে হলো তোকেই সেখানে দিই। কিন্তু মনে হলো তোকে সব জানিয়ে দিই তাই জানালাম। বেচারি কাউকে বলতেও পারবে না কারন আমি রাখবোই না বলার অবস্থায় আসলে ভালো মানুষের অভিনয় কি করে করতে হয় সেটা আমার থেকে কেউ শিখুক। কারন আমি এত নোংরা খেলা করেও হয়েছি বেস্ট মা বেস্ট বউ আর শাশুরিমাও বটে। কারন আমি সোহেলের সামনেই দরজা আটকিয়ে সব করতাম বোকাটা বুঝতোও না । ছেলেদের ভালো শিক্ষা দিতাম যাতে বলে আমার মা বেস্ট।বড় হওয়ার বাড়ি কিছু করতাম না বাইরে যেতাম। সব ঠিকই চলছিল সবার অগোচরে কিন্তু একদিন হুট করে মাহমুদ জেনে যায় আকাশ ওর ছেলে না। কারন কাদের মূর্খের মতো বলে দিয়েছিল আকাশ ওর সন্তান মাহমুদ আমাকে ভালোবাসতো তাই আমার প্রথমভুল ভেবে ক্ষমা করে দেয় আমিও ন্যাকা কান্না করি ও আগেই কাদেরের ব্যাপারে জানতো ওকে ভালোবাসতাম, কাদের আমাকে ফাঁসিয়েছে বলে নানা অনুনয় বিনয় করি। তাই মাহমুদ সব সম্পত্তি সোহেলের নামে করে দেয়। হয়তো ও কাদেরের জন্য কিছু আচ করেছিল। কিন্তু এটা আকাশের ভালো লাগে না কারন ও আমার ছেলে কিনা লোভ তো থাকবেই। তাই রাগের বশে ও সোহেল কে মেরে ফেলে। সোহেল ও হয়তো কিছু জানতো তাই ও নীলের নামে সব লিখে দেয়। আকাশ তারপর জানতে পারে নীলের নামে সব তাই নীলকেও মেরে ফেলতে চায় তখনই তোমার প্রানপ্রিয় বান্ধবী মারা যায়। তার কিছুদিন পরই মাহমুদ আকাশের ব্যাপারে আর কাদেরের সাথে আমার সম্পর্ক ইচ্ছাকৃত ছিল এটা জেনে যায় আমরা যে সকল অবৈধ ধান্দা করি সেটাও জেনে যায়। তাই বাধ্য হয়ে তাকে পথ থেকে সরাতে হয়। তুমি ঠিকই বলেছিলে আমিই মেরেছিলাম কাদেরের সাথে মিলে মাহমুদ কে। তারপর আমি কাদেরকে বিয়ে করি।এখন তোমার প্রশ্ন থাকতেই পারে নীলের সম্পর্কে জেনেও কেন আমি নীলকে মারলাম না। তাহলে শোনো ভালো শাশুড়ির নাটক করতে যেয়ে ঐ ছোটবাচ্চার ওপর মায়ায় পরে গেছিলাম। তাই তাকে শেষ হতে দেখতে পারি নি। তাছাড়া আমার কি ওটা আকাশের ব্যাপার তাই আমিও কিছু বলি নি এমন কি কেউ জানে না ওরা যে আমি নীলের ব্যাপারে জানতাম। সেদিন কাজের লোক কে দেখে ভয় নয় রাগ হয়েছিল আমার তাই মুখটাকে কঠোর করেছিলাম। ভয়ের কথা বললাম যাতে তুমি আমাকে বিশ্বাস করে কফিটা খাও। কারন তুমি সেদিন আমাকে খেয়াল করেছিলে আমি কিছু লুকাচ্ছি। বারবার কাজের মহিলার দিকে তাকাচ্ছিলাম। আমার আগে থেকেই সব প্ল্যান করা তাই তো ক্যাফেতে কেউ নেই।

মেঘ এখন ঢুলছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। ও বলল,,

“যাক কিছুটা অন্তত মনুষ্যত্ব আছে। তবে,,

এটুকু বলেই মেঘ নিজের শরীরের বেচে থাকা সর্বচ্চ শক্তিতে শেফালী খান কে ধাক্কা মারলো। উনি পরে যেতেই মেঘ যতটা সম্ভব অগোছালো পায়ে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে ট্যাব ছেড়ে হিজাব খুলে মাথাটা ট্যাবের নিচে রাখলো। চোখ ডলতে লাগলো চোখে মুখে সমান তালে পানি দিতে লাগলো। ওদিকে শেফালী খান বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে। মেঘের মোবাইল টা হাতেই ছিল ও তাড়াতাড়ি করে ওর আব্বাকে ফোন দেয় ‌। আয়মান চৌধুরী ফোনটা হাতেই রেখেছিল ওনার টেনশন হচ্ছিল। উনি এখনো ধূসরদের বাড়িতেই দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যাবেন। আয়মান চৌধুরী ফোনটা উঠাতেই মেঘ তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“আব্বা তাড়াতাড়ি গার্ডস নিয়ে ক্যাফেতে চলে আসুন!”

আয়মান চৌধুরী সোফা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,,

” আম্মা আপনি ঠিক আছেন আপনার কথা এমন শোনাচ্ছে কেন?”

আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে যায়। ওপাশ থেকে মেঘ বলল,,

“এখন সময় নেই আব্বা তাড়াতাড়ি আসুন!”

মেঘের হাত থেকে ফোনটা পরে গেল কারন দরজার লক ভেঙে শেফালী খান ঢুকে পরেছে আর দুজন লোক বাইরে দাঁড়িয়ে। মেঘের ঘুমের ভাব অনেক টাই পানির জন্য কেটে গেছে এখন সে ভালোভাবেই দাঁড়াতে পারছে। শেফালী খান ওর হাত ধরে বাইরে বের করলো। লোকদুটো ওকে ধরবে এমন সময় মেঘ শেফালী খানের হাত ঝাড়া মেরে ঐ দুজনকে মারতে থাকে। দুজনেই পরে আছে তখন মেঘ শেফালী খানের দিকে ওনার গাল ধরে বলল,,

“দেখেছিস কাশফিয়া আয়মান মেঘ এতটা দূর্বল নয়। একটু আগেই তুই আমার গাল এভাবে ধরেছিলিস না এখন আমি তোর গাল এভাবে ধরে আছি।”

তখন শেফালী খান ওকে ধাক্কা মারলো। মেঘ পিছিয়ে গেল। শরীরটা অনেক দূর্বল না থাকলেও একটু দূর্বলতা আছেই কারন ওষুধ এখনো পেটেই আছে। যেকোনো সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তখন শেফালী খান হেসে বলল,,

“বুঝলাম তুই দূর্বল নোস কিন্তু এতটাও শক্তিশালী নোস। তুই কি ভেবেছিলিস আমি দুজন লোক নিয়ে তোকে নিতে এসেছি না! দরজায় দ্যাখ।”

মেঘ ওদিকে তাকালো আরো পাঁচ জনের মতো ওর এতটাও এখন শক্তি নেই যে পাঁচজনের সাথে লড়াই করবে। মেঘের মনে পড়লো ওর ব্যাগে রিভলবার আছে। ও দেরি না করে ওর ব্যাগের ওখানে গেল। আর রিভলবার টা হাতে নিয়ে বলল,,

“ঠিক বলেছিস আমি ওতটাও শক্তিশালী নই তবে আমার হাতে যেটা আছে সেটা বেশ শক্তিশালী।”

বলেই মেঘ শেফালী খানের হাতে গুলি করে দিল। কারন ও তাকে জানে মারবে না। শেফালী খানের চিৎকারে মেঘের অদ্ভুত আনন্দ লাগলো। বাকিরা ভয় পেল। মেঘ চিৎকার করে বলল,,

“আমার দিকে যে এগুবে তাকে এই রিভলবার দিয়েই শেষ করে ফেলবো।”

সবাই রিভলবার দেখে ভয় পেলো। কারন তারা এমনটা ভাবে নি এমনকি তারাও কোন রিভলবার আনে নি। তাই তারা ভয়ে ভেতরেই ঢুকলো না। পালিয়ে গেল।এদিকে শেফালী খান নিচে বসে পরেছে মেঘ তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“ইসস তোর লোকগুলো তো পালিয়ে গেলরে এখন তোর কি হবে।”

শেফালী খান আঘাতে কাতরাচ্ছে তা দেখে মেঘ বলল,,

“এইটুকু কষ্ট দেখে আমার মন ভরছে নারে ইচ্ছে তো হচ্ছে তোর মতো মহিলাকে সব কটা গুলি মেরে উড়িয়ে দিই। কিন্তু কি করবো বল আমি তো খুনী নই।”

মেঘ ওনাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে হাতে গুলি লাগা জায়গাটায় পা দিয়ে জোরে চাপ মেরে বলল,,

“তোর প্রতি এত ঘৃনা হচ্ছে যে ছুঁতেও আমার শরীর রি রি করছে ঘৃনায়। তোর মতো মহিলার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। এইটুকু কিছুই না। ”

শেফালী খান ব্যাথায় চিল্লাচ্ছে কারন মেঘের পা ঐ আঘাতের জায়গায় মেঘের আনন্দ লাগছে। মেঘ বলল,,

তোমরা তো প্রাধান্য দাও কেবল পৃথিবীর এই (বৈষয়িক) জীবনটাকে
অথচ পরকালীন জীবনটাই উত্তম এবং স্থায়ী— অনন্তকাল
— সূরা আল ‘আলাঃ১৬-১৭
এই আয়াত দ্বারা কি বুঝলি দুনিয়ায় সুখের জন্য পরকীয়া করলি ব্যাভিচার করলি ভাবলি না পরকালে কি হবে তোর সাথে। তাছাড়া,
“নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।” (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।

আমি তো একটু শাস্তি দিলাম বাকিটা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।

বলেই মেঘ পা সরিয়ে নিল। তখনি দরজা দিয়ে আয়মান চৌধুরী ,ধূসর মেঘের তিন বান্ধবী কে দেখা গেল। সবাই ক্যাফের ভেতরে ঢুকে অবাক। দুজন লোক আর শেফালী খান পরে আছে । মেঘের মাথা ভেজা মাথায় হিজাবটাও নেই। মেঘের হাতে রিভলবার। মেঘের চোখ আবার ঝাপসা হয়ে আসছে ওষুধের সাইড ইফেক্ট। মেঘ বুঝতে পারছে তাই তাড়াতাড়ি বলল,,,

“আব্বা এদের তিনজনকেই ধরে ফেলুন আর শেফালী খানকে পুলিশে দেবেন । আর,,

আর কিছু বলার আগেই পরে পরে যেতে নিল ধূসর দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলল সবাই মেঘের ওখানে গেল মেঘের কন্ঠ জরিয়ে আসছে ও নিভু নিভু চোখেই বলল,,

“শেফালী খান কে ধরে নিন আর পুলিশে দিবেন ওনাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। সবথেকে কঠিন।””

এইটুকু বলেই মেঘ চোখ বন্ধ করে নিল সকলে “মেঘ” বলে চিৎকার দিল।

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে