#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেঘ ফোনটা এখনো কানে ধরে রেখেছে। আয়মান চৌধুরী আর হির দের দেখে ও ওদের দিকে তাকালো। ওর আব্বার কানেও ফোন। হিরদের চোখেও পানি। মেঘ মাথা দিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করলো ও যা শুনছে তা সত্যি কিনা? ওরা চোখে পানি রেখে মুখে হাঁসি ফুটিয়ে মাথা নাড়ালো মানে সত্যি। ও ফোন নামালো অন্যদিকে ঘুরলো ওপর দিকে তাকিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা ও হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাথা ঘষতে লাগলো। ততক্ষনে ধূসররা এগিয়ে এসেছে ওরা কিছু বলবে তার আগেই মেঘ দৌড়ে গিয়ে আয়মান চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,,
“আব্বা আই ওন, আই ওন, আমি জিতে গেছি আব্বা আমি হারি নি। আমরা পেরেছি আব্বা আমরা হারি নি।
বলতে বলতে মেঘ কেঁদে উঠল। এ যে খুশির কান্না এ যে সুখের। এদিকে খান বাড়ির কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। মেঘ আয়মান চৌধুরী কে ছেড়ে ওর তিন বান্ধবী কে ধরে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,
“আমাদের বিশ্বাসে আমরা জিতে গেছি বান্ধবীরা।”
তখন হির বলল,,
“হ্যা আমাদের বিশ্বাস জিতেছে এই খুশিতে একটু চার বান্ধবী লাফানো যাক।”
ওরা খুশির চোটে সময় জায়গা ভুলে চার বান্ধবী গোল হয়ে চারজন কে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো লাফাতে শুরু করলো। আয়মান চৌধুরী হেসে উঠলো এ যে তৃপ্তির আনন্দের হাসি। আয়মান চৌধুরী বলল,,,
“আম্মা থামেন এটা আপনার শ্বশুরবাড়ি এ কথা কি ভুলে গেছেন। বুঝতে পারছি আপনি আজ অনেক খুশি দেখেন সবাই কিভাবে আপনাদের দেখছে।”
আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে ওরা থেমে গেল, সবাই লজ্জা পেল। সবথেকে বেশি মেঘ। তখন জাবিন বলল,,
“কি ভালোবাবা বলেছিলাম না তোমার মেয়ে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। সেই জন্যই তো আমরা ওর এই রিয়াকশন দেখার জন্য বাড়ির সামনে এসে ফোন করেছিলাম। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম আমাদের গম্ভীর নিষ্ঠুর বান্ধবী কি করে এই খুশির খবর শুনে।”
তখন মেঘ বলল,,
“কিন্তু ডক্টর আমাকে ফোন কেন করলো না? আমাকেই তো সবার আগে ফোন করার কথা তাহলে?”
“তোকে ফোন করেছিল কিন্তু ফোনটা বোধহয় নীলের কাছে ছিল ও ধরে বলেছে আম্মু ব্যস্ত আছে এখন কথা বলতে পারবে না। আসলে নীল তখন কার্টুন দেখছিল। তাই ভালোবাবা কে আর আমাদের ফোন করেছিল। ডক্টর সব জানালে আমরা চারজন মিলে ডিসাইড করি তোর এখানে আসবো। আমরা এসে গেট থেকে তোকে ফোন দিয়েছিলাম।”
মেঘ নীলের দিকে তাকালো তারপর নীলকে গিয়ে জরিয়ে ধরে বলল,,
“নীলবাবু তুমি ফোনটা আমাকে কেন দিলে না? তুমি জানো ওখানে একটা সুখবর ছিলো। তোমার জন্য ওটা মিস করলাম।”
তখন নীল বলল,,
“সরি আম্মু কিন্তু কি সুখবর?”
তখন মেঘ ওকে ছেড়ে হিরদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“এই কি সুখবর?”
তখন হিররা তিন বান্ধবী চিৎকার করে বলল,,
“নীলবাবু তোমার মায়ের জ্ঞান ফিরেছে!”
নীল মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“সত্যি !”
মেঘ বলল,,
“তিন সত্যি!”
“ইয়েইইইইইইই এখন থেকে আমি কথা বললে মা শুধু শুনবে না আমার সাথে মাও কথা বলবে। আমরা খুব খেলবো মা আমাকে আদর করবে তাই না আম্মু।”
“একদম তাই।”
তখন ধূসর বলল,,
“আমাদের কেউ কিছু বলবে? আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। সেদিনের কথা অনুযায়ী নীলিমা মারা গিয়েছিল আকাশ মাহমুদ ও তাই বলেছিল।”
তখন মেঘ বলল,,
“আমি বলছি আসলে সেদিন ওকে জরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বুঝতে পারলাম ও এখনো জীবিত আছে। পালস আস্তে আস্তে চলছে। এটা বুঝতে পেরে আমি দেরি না করে আব্বাকে বলি। তারপর তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে যাই। গুলি খাওয়ার আগেও ও মাথায় আঘাত পেয়েছিল রক্তের প্রয়োজন ছিল আমরা ম্যানেজ করে রক্ত কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আগে ওর একটা মেজর এক্সিডেন্ট হয়েছিল আঘাত আর পরে ভয় পাওয়ার জন্য ও ব্রেন প্রায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে ও কোমায় চলে যায়। ডক্টর রা বলেছিল কোন আশা ভরসা নেই ও কোনদিন কোমা থেকে ফিরবে না তবে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করলে কিছু উন্নতি হতে পারে হয়তো কোমা থেকে ফিরতে পারে কোনদিন। এ কথা শুনে আমরা সবাই থমকে যাই। ওকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আব্বাকে বলি বিদেশে পাঠিয়ে দিতে। আমাদের বিশ্বাস একদিন নীলি ঠিকই আমাদের কাছে ফিরে আসবে। এরপর আমি ওর চিকিৎসার জন্য শোরুম খুলি বাইরে চিকিৎসা করানো চারটে কথা নয় জানি সেদিন আব্বা কি বলেছে আপনাদের। ওটা নীলের জন্য নয় নীলিমার জন্য খুলেছিলাম। এতদিন নীলি কোমায় ছিল কাল নাকি জ্ঞান ফিরেছে তবে অবস্থা বেশি ভালো না দেখে ডক্টর আমাদের জানায় নি আজ অনেকটা উন্নতি হয়েছে তাই আজ আমাদের জানিয়েছে। আব্বা বলেছে দেশে পাঠিয়ে দিতে তাই ওনারা কালকেই পাঠাচ্ছে।
মেঘ গিয়ে আয়মান চৌধুরী কে বলল,,
“শুকরিয়া আব্বা কাল নীলিকে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন কারন এখন যে ওকে আমার দরকার শুধু আমার নয় ওর নিজের ও এখন ফেরাটা দরকার আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া ।”
আয়মান চৌধুরী হাসলো আর বলল,,
‘আমি জানি তো আমার আম্মার এখন নীলিকে খুব দরকার নাহলে যে তার কিছু একটা হাড়িয়ে ফেলার ভয় থাকবে। তাই তো বলেছি পাঠিয়ে দিতে কারন সেই যে আপনার মোক্ষম প্রমান!”
“আপনি আমায় এত বুঝেন কেন আব্বা?
“যেভাবে আপনি আমাকে বুঝেন আম্মা সেই ভাবে।”
মেঘ হাসলো তা দেখে আয়মান চৌধুরী ও হাসলো। সবাই সব শুনে বেশ খুশী হলো ধূসর দের পরিবারেরও আলাদা শান্তি অনুভব হচ্ছে। বিশেষ করে ধূসর আর দিলরুবা খানমের। তখন নোলক বলল,,
“কিন্তু এর মাঝে নীলের ওর মায়ের সাথে দেখা হলো কিভাবে? না মানে ও তো তোমাদের সাথে দেশে ছিল।”
মেঘ হাসলো আর বলল,,
“তোমরা বিদেশে থাকতে আমি তোমাদের সাথে দেখা করতে যেভাবে যেতাম সেভাবে প্রতি তিন মাস পরপর আমি নীলির সাথে দেখা করতে যেতাম সাতদিনের মতো ওখানে গিয়ে থাকতাম নীলকেও নিয়ে যেতাম। এমনকি আমি ছয়মাসের জন্য বিদেশে গিয়েছিলাম ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য তখন আমি নীলকে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং সেখানেই নীলি ছিল নীল নিয়মিত হসপিটালে ওর মায়ের সাথে দেখা করতে যেতো। তাছাড়া আমি সবসময় ওকে ওর মায়ের ব্যাপারে বলতাম।
“ওহ আচ্ছা!”
এহসান খান বলল,,
“আয়মান মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বোস! ”
“নারে আমরা এখন বাড়ি যাই অন্য একদিন আবার আসবো?”
তখন ধূসর বলল,,
“ডিনার টা তো করে যান আব্বা!”
“না ধূসর একবারে বাড়ি গিয়েই করবো সবাই অপেক্ষা করছে!”
“হির লিয়া জাবিন তোমরা অন্তত করে যাও।”
লিয়া আর জাবিন শ্বশুর বাড়ি যাবে তাই ওরা বলল,,
“না ভাইয়া আমাদের জন্যও সবাই অপেক্ষা করছে।”
তখন মেঘ হিরের কাছে এসে বলল,,
“হির তুই অন্তত না করিস না।”
তখন হির তখন আস্তে করে বলল,
” আমি একা মানুষ আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নেই। তবে আমার রান্না করা আছে রাতে না খেলে সকালে ওটা ফেলে দিতে হবে। আমি তো আবার ফ্রিজের খাবার খেতে পারি না নাহলে ফ্রিজে রাখতাম অযথাই খাবার গুলো নষ্ট হবে যাকে বলে অপচয়। অপচয়কারী শয়তানের ভাই এটা জানিস তো।আসছি।
হিরের কথায় বুঝতে পারল মেঘ, মেয়েটা ভিশন একা হয়ে পরেছে। মেঘের হিরের কথা শুনে কান্না পেল মেয়েটার এই পৃথিবীতে সবাই আছে পরিবার ও আছে কিন্তু আসলে কেউ নেই। তার জন্য অপেক্ষা করেও কেউ নেই। ওরা সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। কাল চার বান্ধবী আর নীল যাবে নীলি কে আনতে। ওরা সকলে একসাথে ডিনার করলো নীল আজ মেঘের সাথে থাকবে। কাল খুব সকালে নীলিকে আনতে এয়ারপোর্ট এ যাবে দেখে নীল তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলো আজ সে ভিশন খুশি। মেঘ আজ খুব খুশি মেঘের খুশি দেখে ধূসরও খুশি। মেঘ বেলকনিতে দাঁড়ালো তখন ধূসরও মেঘের পেছনে গেল মেঘ ধূসরের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বলল,,
“কাল আপনাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?”
ধূসর অবাক হয়ে বলল,,
“সারপ্রাইজ! কিন্তু কিসের জন্য!”
“আজ আমি ভিশন খুশি তাই।”
“তোমাকে আজ অন্যরকম লাগছে?”
“সত্যি বলতে আমার নিজেকেও নিজের কাছে অন্যরকম লাগছে। সত্যি বলতে আমি এতটা খুশি বোধহয় এর আগে কখনো হইনি।”
“আচ্ছা বেশ তা কি সারপ্রাইজ শুনি!”
“বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকে নাকি তবে বিশ্বাস করুন সারপ্রাইজ টা পেয়ে আপনি এবং আপনার পরিবার চমকে যাবেন সেই সাথে খুশিও হবেন কথা দিচ্ছি।”
“এই যা তুমি তো রাতের ঘুম তাহলে হারাম করে দিলে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে জীবনের বেস্ট কিছু পেতে চলেছি । যা দেখে চমকে যাবো আবার খুশিও হবো।আচ্ছা তুমি কনসিভ করো নি তো? আমি বাবা হতে যাচ্ছি না এটাই কাল বলবে তাইনা।
ধূসরের কথা শুনে মেঘ হা করে ধূসরের দিকে তাকালো। কি বলছে এসব মেঘ নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“আপাতত কনসিভ করছি না! তবে ইনশাআল্লাহ তাড়াতাড়ি করবো। এটা না অন্যকিছু।
“তাহলে কি হতে পারে কিছু হিন্টস দাও!”
“কালই না হয় দেখে নেবেন!”
“কিন্তু আমার যে ধৈর্য্য ধরতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে এখনি জেনে নেই।”
“আচ্ছা সেসব বাদ কালকেই দেখতে পাবেন এখন বলুন কাল এয়ারপোর্টে আপনি যাবেন কি না?”
“তুমি কি চাও আমি তোমার বান্ধবী কে তোমাদের সাথে আনতে যাই?
“আমার চাওয়া না চাওয়ায় কি আসে যায় আপনি বলুন যাবেন কি না।”
“বউ যখন বলেছে তখন তো যেতেই হবে।”
“এখন বউ বলেছে বলে তাই না।”
“আচ্ছা ঐসব বাদ দাও তুমি তখন তোমার বান্ধবীদের সাথে লাফাচ্ছিলে তখন কিন্তু তোমাকে বাচ্চাদের মতো লাগছিল।”
এ কথা শুনে মেঘ লজ্জা পেল তা দেখে ধূসর হেসে বলল,,
“আজকাল দেখি আমার বউ খুব লজ্জা পাচ্ছে।আগে কিন্তু এতো লজ্জা পেতো না হুট করে লজ্জা মহাশয় আমার বউয়ের কাছে কোথা থেকে আসলো। অবশ্য লজ্জা পেলে তোমাকে আরো সুন্দর লাগে মেঘ বালিকা।”
মেঘ আরো লজ্জা পেল আর মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,,
“ঘুমাবেন না নাকি আমার ঘুম পাচ্ছে!”
মেঘ যেতে নিল তা দেখে ধূসর মেঘের হাত ধরে ফেললো আর বলল,,
“এই যে মেয়ে পালাচ্ছো কোথায়? আজ তো ধূসর এহসান শুভ্র তোমায় নিয়ে এই বেলকনিতেই রাত বিলাস করবে!”
“রাত বিলাস?”
“ভেতরে নীল ঘুমাচ্ছে ও ওর মতো ঘুমাক আমরা আমাদের মতো একটু সময় কাটাই!”
“মানে?”
“মানে অনেক কিছু!”
বলেই ধূসর বেলকনির লাইট অফ করে দিল।
____________________
অতঃপর ফজরের আজান কানে যেতেই মেঘ চোখ খুলল আপাতত সে বিছানায় নীলের পাশে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু ওরা তো বেলকনিতে ছিল। মেঘ মুচকি হেসে ওর পাশে তাকাতেই দেখলো ধুসর ওকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেঘ ধূসরকে ডাক দিল নিজে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে ফজরের সালাত আদায় করে নিল। অতঃপর ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা করতে লাগলো ভোরের আলো ফুটতেই মেঘ কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়ালো ধূসর ও ওর পাশে দাঁড়ালো সকালের স্নিগ্ধ হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ধূসরকে বলল নীলকে উঠাতে ও এখন নিচে মাকে রান্নার সাহায্য করতে। মেঘ নিচে গিয়ে সাহায্য করলো রান্নার জন্য। অতঃপর সবাই ব্রেকফাস্ট করার জন্য ড্রাইনিং এ বসলো হুট করে দিলরুবা খানম বলল,
“মেঘ তোমার বান্ধবী আই মিন নীলিকে এই অবস্থায় কোথায় রাখবে ভেবেছো?”
মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
“আপাতত ফ্ল্যাটেই থাকুক আমি না হয় প্রতিদিন যাওয়া আসা করবো।”
“তুমি যদি কিছু না মনে করো তাহলে একটা কথা বলি আসলে আমি জানি নীলি তোমার যতই ভালো বান্ধবী হোক না কেন তুমি ওকে আমাদের বাড়িতে রাখার কথা বলবে না কারন তুমি অন্যরকম। দেখো মেয়েটা অসুস্থ তাছাড়া নীল ও আমাদের সাথে থাকছে ফ্ল্যাটে হির ওকে একা দেখে রাখতে পারবে না। নীল ও ওর মায়ের কাছে থাকতে চাইবে। এই অবস্থায় ফ্ল্যাটে না রেখে নীলা আই মিন নীলিকে আমাদের এখানে রাখলে বোধ হয় ভালো হবে। তুমিও দেখাশোনা করতে পারবে তোমার আর ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতে হবে না প্রতিদিন তাছাড়া আমরাও বাড়িতে অনেক গুলো লোক আছি ওর দেখাশোনা করতে পারবো ও যখন সুস্থ হবে তখন না হয় ফ্ল্যাটে থাকবে।”
মেঘ দিলরুবা খানম এর সব কথা শুনলো তখন এহসান খান বলল,,
“আমার বিষয়ে চিন্তা করো না মেঘ আমার আপত্তি নেই। ”
তখন বাকি সবাই বলল,
“আমাদের ও আপত্তি নেই!”
মেঘ সবার দিকে তাকালো দিলরুবা খানম এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“মা আপনার ওকে এখানে রাখার ইচ্ছা কেন হলো?”
দিলরুবা খানম মেঘের গালে হাত রেখে বলল,,
“জানি না মা তোমার বান্ধবীর প্রতি আলাদা টান অনুভব করছি মনে হচ্ছে আমার নীলাশা যদি থাকতো তবে তার মতোই হতো বোধহয়।”
“আপনি কি নীলিমার জায়গায় নীলাশাকে অনুভব করছেন মা!”
“জানি না মা অদ্ভুত অনুভূতি হয় নীলিমার কথা ভাবলে?”
“এজন্যই বোধহয় মা বলে মায়েদের অনুভূতি অন্যরকম এর তুলনা কারো সাথে হয় না। কিন্তু আমার,
“মানে?”
“মানে কিছু না মা আমি নীলিকে সোজা এখানেই আনবো। ও বাংলাদেশ নামবে এগারোটায়।”
তখন এহসান খান বলল,,
“ধূসর যাবে তোমাদের সাথে সব একেবারে নিয়ে আসবে।”
তখন ধূসর বলল,,
“তুমি না বললেও আমি যেতাম কাল রাতে মেঘের সাথে কথা হয়েছে!”
তখন নোলক বলল,,
“আমার আজ ক্লাস নেই আমিও যাই তাহলে?”
“কোন দুঃখে?”
নোলক ক্লোজ আপ মার্কা হাসি দিয়ে বলল,,
“এয়ারপোর্ট টা না হয় ঘুরে দেখে আসবোনি!”
নোলকের কথায় সবাই হেসে দিল। তখন মেঘ বলল,,
“সমস্যা নেই তুমি ও চলো নোলক!”
তখন রিমঝিম বলল,,
“আমাদের কে নিবে ছোট মা!”
তখন রোহিনী বলল,,
“তোমাদের কেন যেতে হবে একদম বায়না করবে না ওরা ঘুরতে যাচ্ছে না একজন কে আনতে যাচ্ছে।”
তখন রিম বলল,,
“নীল ও তো যাচ্ছে তাহলে আমরা কেন যাবো না!”
“নীল যাচ্ছে কারন নীলের মা আসছে তাই!”
“নীলের মা আমাদের কি হয় ছোট মা!”
তখন মেঘ হেসে বলল,,
“তোমাদের ফুপি হয় মানে ফুপির মতো বুঝতে পারলে!”
মেঘের কথা শুনে সবাই অবাক হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। তখন ঝিম বলল,,
“আমরাও তাহলে ফুপিকে আনতে যাবো ছোট মা তুমি মাকে বলো না যাতে যেতে দেয়।”
তখন রোহিনী বলল,,
“তোমরা গিয়ে কি করবে গাড়িতেই তো বসে থাকতে হবে এর থেকে বাড়িতে থাকো আমরা তোমার নতুন ফুপির জন্য ওয়েলকাম কার্ড বানাবো ঠিক আছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমরা বাড়ি থাকবো।”
“এই তো সোনা মেয়েরা আমার!”
অতঃপর ওরা দশটার দিকে রওনা হলো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য। মেঘ, ধূসর,নীল আর নোলক এক গাড়িতে। হির,লিয়া আর জাবিন এক গাড়িতে। অতঃপর ওরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেল নীলির আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। নীলির সাথে একজন ডক্টর আর নার্স ও আসবে এমনিতে ও অসুস্থ একা ট্রাভেল সম্ভব নয়। কিন্তু মেঘের জন্য আসতেই হলো কেসটা যে কালকেই কোর্টে উঠবে। অতঃপর এগারোটা বেজে গেছে । মেঘরা সবাই চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে অতঃপর নীলির দেখা পাওয়া গেল হুইলচেয়ারে তার পেছনে একজন সেটা ঠেলছে সেটা বোধহয় নার্স আরেকজন কিছু ব্যাগপত্র নিয়ে আসছে সেটা বোধহয় ডক্টর। নীলির মেঘদের দেখে হাসি ফুটে উঠলো। মেঘ ছলছল চোখে নীলির দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসরের অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আর নীলিকে ভিশন চেনাও লাগছে এই চোখদুটো ওর ভিশন চেনা। নার্সটা মেঘের সামনে এসে নীলির কথা মতো হুইল চেয়ার থামিয়ে দিল। নীলি আস্তে আস্তে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মেঘকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মেঘ ও নীলিকে জরিয়ে ধরলো। নীলি কেঁদেই যাচ্ছে মেঘ কিছু বলছে না তা দেখে তখন হির বলল,,
“আরে ভাই একজনের কাছে গিয়ে কাঁদলে তো সব পানি শুকিয়ে যাবে। আসো বান্ধবী আমার কাছে আসো আমি ও তোমার চোখের পানি দ্বারা গোসল করতে চাই।”
হিরের কথা শুনে নীলি মেঘকে ছেরে বলল,,
‘হির ভালো হয়ে যা বুঝেছিস ভালো হতে পয়সা লাগে না।”
“ও মাই আল্লাহ এই কোমায় থেকে ফেরা মহিলা আমারে মনে রাখছে মানুষ কোমা থেকে ফিরলে পুরোনো স্মৃতি ভুলে যায়। তুমি ভুলো নাই আফা আই এম তো অবাক আফা ভেরি ভেরি অবাক।”
হিরের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। কিন্তু ধূসর কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলো এযে ওর বোনের কন্ঠস্বর। কিন্তু ও এখন এসবে পাত্তা দিল না। নীলি বলল,,
“এই ড্রামাবাজ অফ যা আয় আমার কাছে আয় আসলে হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হয় তাই তো হুইলচেয়ারে বসে আসলাম।”
হির এসে নীলিকে জরিয়ে ধরলো। কুশল বিনিময় করলো। নীলি হির কে ছেড়ে বলল,,
“জাবিন লিয়া ওদের কি ইনভেটিশন কার্ড দিতে হবে আয় কতোদিন জরিয়ে ধরি না তোদের।”
তখন জাবিন বলল,,
“কি জানি দিতে হতেও পারে! আমরা কেন আগ বাড়িয়ে যাবো শুনি আমাদের যে পাত্তা দেয় না আমরাও তাকে পাত্তা দিই না ঠিক না লিয়া!
তখন লিয়া বলল,,
“একদমই তাই!”
“হইছে আমার মা রা আসেন আমার ভুল হয়ে গেছে।”
ওরা গিয়ে মিস ইউ বলে নীলিকে জরিয়ে ধরলো। মেঘ এক কোনায় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। নীল ধূসরের কোলে আশেপাশের সবাই ওদের বন্ধুত্ব দেখে মুগ্ধ। হুট করে নীলি বলল,,
“মেঘ!
মেঘ চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,,
“হুম!”
“আমার ছেলে আমার নীল! ও কোথায় ও ঠিক আছে তো?
মেঘ কিছু বলবে তার আগে নীল ধূসরের কোলে থেকে বলল,,
“এই যে আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি আর তুমি এখন সবার শেষে আমায় খুঁজছো?”
নীলি চমকে নীলের দিকে তাকালো ও একটা ছেলের কোলে আছে। নীলি কষ্ট করে হাঁটু গেড়ে বসলো ডক্টর নার্স মানা করলো তাও শুনলো না নীলি হাত বাড়িয়ে বলল,,
“আমার নীল আমার বাচ্চা মায়ের কাছে আসবে না?”
নীল ধূসরের কোল থেকে দৌড়ে মাকে গিয়ে জরিয়ে ধরলো। নীলিকে ছেলেকে পরম আবেশে জরিয়ে ধরে অসংখ্য চুমু দিয়ে মুখ ভরিয়ে দিল। আর বলল,,
“আমার নীল ঠিক আছে তার কিছু হয় নি। আমার নীল আমার বাচ্চা ঠিক আছে।”
নীলি নীলকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল। তখন নীল বলল,,
“মা তুমি কি ব্যাথা পাচ্ছো?
‘না বাবা সন্তানকে জরিয়ে ধরাতে মায়েরা ব্যাথা পায় না।”
“তাহলে কাঁদছো কেন? কান্না মুছো!”
নীলের কথা নীলি কান্না মুছে নিল আর বলল,,
“এই যে মা কান্না মুছে ফেলেছে কিন্তু তুমি যার কোলে ছিলে সে কে?”
“ওটা তো আব্বু!”
নীলি চমকে উঠলো আর বলল,,
“আব্বু!”
“হুম আব্বুই তো আম্মুর হাজব্যা, হাজবে আম্মু বলো না কি হবে?”
মেঘ বলল,,
“ওটা হাজবেন্ড হবে!”
“হুম হাজবেন্ড?”
“মেঘ তোকে নীল আম্মু বলে?”
মেঘ তখন কঠোর স্বরে বলল,,
“কেন কোন সমস্যা নাকি তোর নীলের আমাকে আম্মু বলাতে?”
“না না সমস্যা কেন হবে আমি তো বরং খুশি। নীলের আম্মু ছিল আব্বু ছিল। আমি জানি আমার ছেলেকে তুই আমার মতোই আগলে রেখেছিলিস। তা তোর হাজবেন্ড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না।”
তখন ধূসর বলল,,
“থাক আপু আমি আপনাকে চিনি পরিচয় দিতে হবে না। কেমন আছেন আপনি?আমি,,
তখন ধূসরের কথার মাঝেই মেঘ বলল,,
“উনি ডক্টর ডি.এ শুভ্র আর ওনার পাশে ওর নাম নোলক আমার ননদ।”
মেঘের কথা শুনে সবাই অবাক হলো। ধূসরকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিল কেন? নীলি বলল,,
“ওহ আচ্ছা ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
ভাইয়া ডাক শুনে ধূসরের কেমন যেন লাগলো শান্তি অনুভব হলো সেসব এখন পাত্তা না দিয়ে ও বলল,,
“জি আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি।”
নীলি মেঘকে কিছু বলবে তার আগে মেঘ বলল,,
“অনেক কথা হয়েছে এবার বাড়ি যাওয়া যাক। তোরা সবাই গাড়িতে বোস আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি।
সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। জাবিন নোলক ওরা নীলি কে ধরে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল। ধূসর নীলির জিনিস পত্র গাড়িতে ওঠালো। ততক্ষন মেঘ নীলির সাথে আসা ডক্টরের কাছে গিয়ে বলল,,
‘আসলে নীলি কে এখন আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমাকে বুঝিয়ে দিন।”
“সমস্যা নেই ম্যাম আপনার বাবা একজন নার্সকে আনতে বলেছিল আমি নিয়ে এসেছি।”
“না লাগবে না আমি ওর দেখাশোনা করবো তাছাড়া আমি ছাড়াও অনেকে থাকবে আপনি আমাকে বুঝিয়ে দিন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
তখন জাবিন বলল,,
“এই মেঘের কি হয়েছে রে এভাবে কেন কথা বলছে? তাছাড়া নীলি আসার পর ভালোভাবে ওর সাথে কথাও বললো না। ধূসর ভাইয়া কেও ডক্টরের পরিচয় দিল। বুঝলাম না মেঘ ঠিক চাইছে কি?”
হির বলল,,
“সেটা তো আমরাও বুঝতে পারছি না। নীলিকে জরিয়ে ধরলো ঠিকই কিন্তু ভালো মন্দ কিছুই বললো না এমন কি জিজ্ঞেস ও করলো না নীলি কেমন আছে মুখটাও গম্ভীর করে রেখেছে হুট করে পুরোনো মেঘকে দেখতে পাচ্ছি আমি।”
নীলি ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে ওর কেমন যেন ধূসর কে চেনা চেনা লাগছে আর ভিশন কাছের ও লাগছে। মনে হচ্ছে দাড়িটা না থাকলে হয়তো ভালো মতো চিনতে পারতো। তাছাড়া ওনার নাম শুভ্র আবার মেয়েটার নাম নোলক ওর ছোটবোনের নাম ও তো। ও গবেষণা করতে লাগলো। এতকিছু ভাবতে ভাবতে মেঘ যে ওর সাথে ভালোমতো কথা বলেনি সেটা বুঝতে পারলো না। ও নীলকে নিয়ে আছে। জাবিনরাও এখন খান বাড়িতে যাবে আয়মান চৌধুরী ও আসবেন এটা ধূসর জানিয়েছে ওদের। অতঃপর সবকিছু গুছিয়ে মেঘ ধূসরকে বলল,,
“আপনি পাশে বসুন আমি ড্রাইভ করবো?”
তখন ধূসর বলল,
“কেন?”
“আমার ইচ্ছে তাই!”
ধূসর পাশের সিটে বসলো পেছনে নোলক নীলি আর নীল। মেঘ গাড়ি ছাড়লো হুট করে নীলির মেঘের কথা মনে পড়লো যে ও ওর সাথে ভালো করে কথা বলে নি। হুট করে নীলি বলল,,
“মেঘ তুই কি আমার ওপর রেগে আছিস?”
এ কথা শুনে সবাই মেঘের দিকে তাকালো মেঘ একমনে ড্রাইভ করছে বোধহয় কিছুই শুনেনি। তখন ধূসর বলল,,
“মেঘ নীলি কিছু বলছে তোমায়?”
মেঘ থমথমে মুখে বলল,,
“শুনেছি আমি! আমি রেগে নেই তাই কিছু বলি নি!
মেঘের ব্যবহারে সবাই অবাক হয়ে গেল এটা কোন মেঘ। নীলি বুঝতে পারল মেঘ সত্যিই রেগে আছে। তাই ও বলল,,
“মেঘ আমাকে তোকে চেনাতে আসিস না আমি ভালোমতোই চিনি তোকে এখন বল আমার দ্বারা কি কিছু হয়েছে আমার ওপর রেগে আছিস কেন?”
“আমি রেগে নেই তোর ওপর!”
“তাহলে আমার সাথে ভালো করে কথা কেন বলছিস না। আসার পর থেকে দেখছি একটাবার জিজ্ঞেস ও করিস নি আমি কেমন আছি।”
“আমি তো তোকে দেখতেই পাচ্ছি তুই কেমন আছিস আবার জিজ্ঞেস কেন করতে হবে? তুই না অসুস্থ চুপ করে থাক নোলক নীলির মাথা টা তোমার কাঁধে নাও তো। আর নীলি তুই চোখ বুঝে থাক। আর নীলবাবু তুমি সাইডে গিয়ে বসো। নোলক তোমার সমস্যা নেই তো?
“না ভাবি কোন সমস্যা নেই!”
নীল মেঘের কথা মতো সাইডে বসলো নোলক নীলির দিকে চেপে বসলো। নীলি মিররে মেঘের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। ও বুঝতে পেরেছে কিছু তো একটা আছে। মেঘ তা মিররে দেখে বলল,,
“আমার দিকে না তাকিয়ে নোলকের কাঁধে মাথা রাখ ও তোর বোনের মতোই। ”
নীলির ভালো লাগছিল না বলে ও নোলকের কাঁধে মাথা রাখলো। তবে ওর ভালো লাগলো রেগে থাকলে কি হবে ও ওর কেয়ার করছে। অতঃপর ওরা খান বাড়িতে পৌঁছে গেল। জাবিনরা গাড়ি থেকে নেমে নীলিকে নামালো মেঘ নীলির হাত ধরে আস্তে আস্তে যাচ্ছে আসলে নীলি হাঁটতে পারছে কিন্তু একটু একটু বেশিক্ষন না তাই যেহেতু মেঘের শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে তাই কষ্ট হলেও হেঁটেই ভেতরে যাবে সে রাস্তায় জেনেছে নোলকের থেকে যে ও সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ওদের বাড়িতেই থাকবে। সকলে ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করছে। আয়মান চৌধুরী ও এসেছে নোলক নীলকে নিয়ে আগেই ভেতরে চলে গেছে। ধূসর ও তাই। ওরা পাঁচ বান্ধবী একসাথে ঢুকলো। নীলি ঢুকেই সামনের মানুষগুলো কে দেখে চমকে উঠলো এখানে যে তার বাবা মা রয়েছে। কেউ কিছু বলতে তার আগে নীলি দিলরুবা খানম এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“মা!”
দিলরুবা খানম চমকে উঠলো সাথে বাকি সবাই। শুধু মেঘ আর আয়মান চৌধুরী ছাড়া। দিলরুবা খানম এগিয়ে এসে বলল,,
“কি বললে তুমি? তুমি আমায় মা ডাকলে?
‘মা আমার মা আমি নীলাশা!”
এ কথা শুনে সবাই আরো চমকে উঠলো মেঘ নীলির হাত ছেড়ে দিল। দিলরুবা খানম নীলিকে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,
“আমার নীলাশা আমার মেয়ে এহসান দেখেছো আমার মেয়ে মারা যায় নি বেঁচে আছে। সেই জন্য মেঘের বান্ধবী নীলির জন্য আমি অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল এটা যে আমার মেয়েই। সেই চোখ সেই মুখ শুধু মুখে একটু পরিবর্তন হয়েছে। কন্ঠও সেইম।
খান পরিবারের সবাই নীলির দিকে এগিয়ে আসলো। । তখন নীলি বলল,,,
“হ্যা মা আমি নীলাশা তোমাদের মেয়ে আমি এক্সিডেন্টে মারা যাই নি।
কিছুক্ষণ সবার মেলোড্রামা হলো। সবাই নীলিকে বসালো কারন সে অসুস্থ। হুট করে এহসান খান বলল,,
“তুমি কোথায় ছিলে নীলাশা? তাছাড়া তুমি বাঁচলেই কিভাবে?
“আমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছিল ওরা!”
তখন এহসান খান বলল,,
“কারা বাঁচিয়েছিল?”
“মেঘ আর মেঘের বাবা ওরা আমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছিল।”
এ কথা শুনে সবাই আরেক দফা চমকালো। ধূসর বলল,,
“মেঘ আব্বা আপনারা?”
তখন আয়মান চৌধুরী বলল,,
“আমি বলছি এহসান তোর মনে আছে আমি একটা কাজে সিলেট গিয়েছিলাম। তুই তো পড়াশোনা শেষ করে সিলেটে এলি কাকার বিজনেস দেখতে শুরু করলি তোর সাথে দেখা হতো না শুধু ফোনে কথা হতো। সেবার মেঘের ছুটি ছিল বলে মেঘকেও আমার সাথে নিয়েছিলাম। তোকে ফোনে বলেছিলাম তোদের বাড়িতে আসবো ! কাজ থেকে ফেরার মাঝ পথে একটা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সামনেই একটা গাড়ি খাদে পরে যায়। আমি আর মেঘ তাড়াতাড়ি নামি ওখান থেকে দেখলাম গাড়ির বেশ কিছু টা দূরে একটা স্কুল ড্রেস পড়ুয়া মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। মেঘ আর আমি তাড়াতাড়ি ওখানে গেলাম দেখলাম নিঃশ্বাস চলছে চারপাশে কাউকে দেখতে পেলাম না তাই তাড়াতাড়ি করে আমরা মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম। মেয়েটার অবস্থা ভালো ছিল না। মেয়েটা খুব বাজে ভাবে আহত হয়েছিল তাড়াতাড়ি হসপিটালে নেওয়ার ফলে মেয়েটা বেঁচে যায়। কিন্তু সারা শরীর ব্যান্ডেজ করতে হয় এমন কি মেয়েটার কথাও বলতে পারতো না। সিলেটে নতুন কাউকেই তেমন চিনি না তোকে ফোন করি তুই ধরিস না। তাই পুলিশকে জানাই তারা নাকি একটা কাজে ব্যস্ত এখন আসতে পারবে না। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না আবার মেয়েটাকে একা ছাড়তেও পারছিলাম না। এদিকে পুলিশের ও কোন খোজ নেই। দুদিন পর মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে মেয়েটা কিছুই বলতে পারে না। পরে না পেরে মেয়েটাকে আমাদের সাথে ঢাকায় নিয়ে আসি চিকিৎসা করাই। প্রায় তিনমাস পর মেয়েটা সুস্থ বোধ করে হালকা হালকা কথা বলতে পারে তার থেকে তার পরিবারের কথা জেনে আমার সিলেটে আসি। কিন্তু গিয়ে দেখি সে বাড়িতে কেউ নেই তালা মারা আশেপাশে থেকে জানতে পারি মেয়েটার পরিবার সবাই অন্য কোথাও চলে গেছে আর কয়েকদিন আগেই এ বাড়ির একটা মেয়ে মারা গেছে। বুঝতে পেরেছিলাম সেই মেয়েটার কথাই বলছে। তারপর মেয়েটাকে সব জানাই। তারপর থেকে মেয়েটাকে দেখাশোনার দায়িত্ব আমি নিই। মেঘও মেয়েটার ভালো বান্ধবী হয়ে যায়। আমি মেঘের সাথেই মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করাই। এসএসসি পরীক্ষার পর মেয়েটা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো। তার আগে একটা বাসা ভারা করে দিয়েছিলাম কারন মেয়েটাকে বাড়ি নেওয়া সম্ভব ছিল না। সেই মেয়েটাই এই মেয়ে তোদের নীলাশা আমিও জানতাম না ও তোর মেয়ে। কারন আমি সিলেটে এর আগে তোদের বাড়ি কখনোই যাইনি। আগে গেলে হয়তো তোদের বাড়ি দেখেই চিনতে পারতাম।”
সবটা শুনে সবাই অবাক দিলরুবা খানম মেয়েকে জরিয়ে ধরলো মেয়েটা কতটা কষ্ট করেছে। ধূসর ও গিয়ে বোন কে জরিয়ে ধরলো। সবাই মেঘের বাবাকে ধন্যবাদ দিল। হুট করেই ধূসর বলল,,
“মেঘ তুমি জানতে তাই না যে তোমার নীলিই আমাদের নীলাশা। সেই জন্যই তুমি বলেছিলে আজ আমার আর আমার পরিবারের জন্য সারপ্রাইজ আছে আর এটাই তোমার সারপ্রাইজ তাই না।”
একথা শুনে সবাই অবাক হলো। তখন মেঘ হেসে বলল,,,
“হুম এটাই সারপ্রাইজ তবে আগে জানতাম না। জেনেছি কয়েকদিন আগে। আপনার মনে আছে সিলেটে গিয়ে আমি একটা জায়গায় গিয়েছিলাম আপনাকে না নিয়ে তখন আমি আপনাদের বাড়িতেই গিয়েছিলাম। কারন আমি আর নীলি দুই তিন বার গিয়েছিলাম ওর পরিবারের খোঁজে। আপনার সাথে আপনাদের বাড়ি দেখে আমি অবাক হয়েগিয়েছিলাম। নীলি ওর পরিবার সম্পর্কে আমাকে বললেও আপনারা আপনার বোনের বিষয়ে বলেন নি প্রথম খটকা ওখানেই লাগে। আমি বিভিন্ন ভাবে জানার চেষ্টা করি আসলে নীলি আপনাদের বোন কি না। আশরাফ হক নীলিকে মেরে ফেলেছিল এটা শুনে সিওর হই যে আপনার বোনই নীলি কিন্তু মা বলে তার মেয়ের নাম নীলাশা এক পা পিছিয়ে যাই আপনার ফোনে ছবি দেখে একশত ভাগ সিওর হই যে আপনার বোনই নীলিমা ওরফে নীলাশা। তাই তো এ বাড়িতে নিয়ে এলাম মায়ের কথায় এমনিতেও আজ আপনাদের সাথে দেখা করাতাম নীলিমা নামক নীলাশাকে।
শেষ এর কথা ও নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলল। কি ছিল ওর চাহনিতে নীলি নামক নীলাশা বুঝতে পারলো না। নীলিমা উঠে মেঘের দিকে এগিয়ে যাবে তখন মেঘ আয়মান চৌধুরীকে বলল,,
“নীলি আমায় মিথ্যা বলেছে আব্বা! সরি নীলিমা না নীলাশা ও আমায় মিথ্যা বলেছে ও আমাকে বিশ্বাস করতে পারে নি আব্বা।”
বলেই মেঘ ওপরে নিজের রুমে চলে গেল। আয়মান চৌধুরী অসহায় চোখে মেঘের যাওয়ার দিকে তাকালো। বাকি সবাই কেউ কিছু বুঝতে পারলো না ঠিকই কিন্তু এটা বুঝতে পারল মেঘ ভিশন কষ্ট পেয়েছে। নিলিমা কেঁদে উঠলো সে যে সত্যিই মেঘকে মিথ্যে বলেছে।
~চলবে,,