ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-৩৩+৩৪

0
950

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ বুঝতে পারলো সবাই ওর কাছে এখনি প্রশ্নের ঝুলি খুলে বসবে। হিররা শুধুমাত্র জানতো কাগজে কি আছে। হির মেঘের কাছে এগিয়ে বলল,,

“ইউ নো বান্ধবী ইউ আর এ জিনিয়াস। তুই আগে থেকেই জানতি এরকম কিছু হবে।”

তখন ধূসর বলল,,

“হির তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো আর কাগজে কি ছিল? যার জন্য পুলিশ অফিসার চলে গেল আর কি বলল কোর্টে দেখা হবে? সবথেকে বড় কথা শেফালী খান কে?

তখন মেঘ বলল,,

“আরে ধূসর রিল্যাক্স আমি জানি সবার অনেক প্রশ্ন আমি এক এক করে উত্তর দিচ্ছি। প্রথমত শেফালী খান আকাশ মাহমুদের মা ওরফে নীলির শাশুরি মা। আর কাগজ টা হলো প্রি বেল অর্ডার। আর বাকিটা হলো কাল যখন আকাশ মাহমুদ যে ঘটনা ঘটালো মনে হয়েছে সে শুধু নীলকে না আমাকেও আপনার থেকে আলাদা করতে চাইছে। তারপর যখন সে ধরা পরলো আমার মনে হলো সে যখন সে নীল কে এভাবে নিতে চায়নি তাহলে অন্যকিছুর প্ল্যান করতে পারে এখন আইনি সাহায্য নিতে পারে। আমার নামে কেস করতে পারে হয়তো শেফালী খানকে তার রক্তের কথা বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে কিছু করতে পারে তাই রাতেই আমার এসিস্ট্যান্ট কে বলি প্রি বেল এর একটা পেপার তৈরি করতে সে সব করে সকালে জানায় হির ওটা আনতেই সকালে গিয়েছিল। আপাতত বেল পেলাম কিন্তু কেসটা কোর্টে উঠবে তখন আমাকে যেতে হবে। এই হলো মূল কাহিনী।”

তখন ইশান বলল,,

“বাপরে এতো কিছু মেঘ এত বুদ্ধি কোথায় রাখো।”

তখন ধূসর বলল,,

“কার বউ দেখতে হবে না। ডক্টর ধূসর এহসান শুভ্র এর ব্যারিস্টার বউ।”

এ কথা শুনে সবাই হাসলো। তখন মেঘ সব রেখে ওর বাবার কাছে গেল এটা দেখে সকলে চুপ হয়ে নিজেদের মতো রইল‌। মেঘ ওর আব্বাকে বলল,,

‘আসসালামু আলাইকুম আব্বা কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো! আপনার তো বিকেলে আসার কথা ছিল তাহলে এখন!”

“আর বলবেন না এহসান বলল এখন আসতে ওর বিজনেস পার্টনারদের সাথে পরিচিত করতে।”

‘ওহ আচ্ছা কাল রাতে ঘুমিয়েছিলেন আব্বা?রাতের ওষুধ খেয়েছিলেন?”

আয়মান চৌধুরী মেয়ের গালে হাত রেখে বলল,,

“হুম ওষুধ খেয়েছিলাম আপনি তো আজান কে দায়িত্ব দিয়ে এসেছিলেন সে হুট করেই দায়িত্ববান হয়ে গেছে। তবে ঘুমটা খুব একটা হয় নি।”

“তাই তো সকাল হতেই ফোন দিয়েছিলেন।”

“হুম!”

“আব্বা একটা জিনিস জানেন কি? যদি মনে করেন আমি আপনার থেকে দূরে তাহলে সত্যিই আপনার মনে হবে আমি আপনার থেকে দূরে আছি। কিন্তু যদি মনে করেন আমি আপনার কাছেই আছি তাহলে যত দূরেই থাকি না আপনার মনে হবে আমি আপনার কাছেই আছি।”

“বুঝতে পেরেছি আমার আম্মা আমাকে কি বলতে চেয়েছে।”

তখন এহসান খান ওদের কাছে এসে বলল,,

“এসেই মেয়ের সাথে কথা বলতে শুরু করলি আমরাও আছি তো।”

“আমার আম্মার সাথে যতোই কথা বলি এহসান মন যে ভরে না।”

“আচ্ছা ঐ যে আমার বিজনেস পার্টনাররা চলে এসেছে। চল!

আয়মান চৌধুরী এহসান খানের সঙ্গে চলে গেল। তখন বাকিদের সাথে মেঘ কথা বলল আজান তো ছারতেই চায় না। মেঘ সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে মায়মুনা চৌধুরী শুধু দেখতে লাগলো তখন দিলরুবা খানম ওনার কাছে এসে বলল,,

“কি হলো আপা মেঘের কাছে যাবেন না?”

তখন মায়মুনা চৌধুরী বললো,,

“কিছু সম্পর্ক দূর থেকেই সুন্দর কাছে গেলে তিক্ততা চলে আসে। এই কথাটা একদিন মেঘ বলেছিল তখন কথাটার মর্ম বুঝতে পারি নি তবে আজ বুঝতে পারছি। ওর কাছে যাওয়ার যোগ্যতা নেই আমার কোনদিন অর্জনই করতে পারি নি।”

“চিন্তা করবেন না আপা সত্যি যা হয়েছে তা ভুল তবে ইনশাআল্লাহ্ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“হুম এখন সেই দিনটারই অপেক্ষা করছি।”

তখন ধূসর এলো শাশুড়ির কাছে কুশল বিনিময় করলো তারপর অন্যদের সাথে কথা বলতে লাগলো হুট করে ধূসরের নজর পড়লো তার বাবার বিজনেস পার্টনার একজনের হাতের দিকে। ধূসর তাড়াতাড়ি মেঘের কাছে গেল তখন মেঘ জায়মাদের সাথে বসে কথা বলছিল। ধূসর কিছু বলবে তার আগে ধূসরের বাবা ওনার বিজনেস পার্টনারদের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলো একজনের সাথে কথা বলার সময় দুজনেরই খটকা লাগলো। কারন কন্ঠটা কোথাও শুনেছে। একজন বারবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছিল তা দেখে মেঘ আন্দাজ করলো। মেঘ হাতের দিকে দেখতে লাগলো। অতঃপর দু’জনেই আন্দাজ করলো কিছু। মেঘ আর ধূসর একজায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে ধূসর বলল,,

“ব্যারিস্টার বউ আপনি কি কিছু আন্দাজ করেছেন বাবার বিজনেস পার্টনারদের মধ্য হতে।”

তখন মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,,

“আমি যা ভাবছি আপনিও কি তাই ভাবছেন ডক্টর !”

ধূসর ঘার ঘুরালো মেঘ আগে থেকেই ঘুরে ছিল দু’জনের চোখাচোখি হতেই দুজনে হেসে উঠলো আর বলল,,

“কনগ্ৰাচুলেশন মিস্ট্রি সল্ভ এখন প্রমানের পালা।”

তখন রোহিনী বলল,,

“এই তোমরা দুজনে কি মিস্ট্রি সল্ভ করছো?”

তখন মেঘ বলল,,

“রিয়াল লাইফ মিস্ট্রি!”

অতঃপর চৌধুরী পরিবার ছাড়া সবাই খেয়ে দেয়ে একটু সময় কাটিয়ে চলে গেল। রাত হলো আজ ধূসর আর মেঘ চৌধুরী বাড়িতে যাবে। জাবিনরা ওখান থেকেই নিজেদের শুশুরবাড়ি চলে গেছে। হির যাবে ফ্ল্যাটে হুট করেই হিরের মনটা খারাপ হয়ে গেল। চারপাশ থেকে একাকিত্ব ঘিরে ধরেছে যেন। আপাতত হির রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু একটা গাড়িও পাচ্ছে না। মেঘ বলেছিল আরেকটু পর মেঘের সাথে বের হতে ও বাড়ি নামিয়ে দিয়ে যাবে। কিন্তু হির শুনলো না এখন নিজেই নিজেকে বকছে আর বলছে,,

“কি দরকার ছিল একা একা রাত করে বাড়ি ফেরার মেঘ বলল যাওয়ার সময় ড্রপ করে দিয়ে যাবে কিন্তু না তোর ভালো কথা সহ্য হয় না হির এবার বোঝ কেমন লাগে। আর গাড়িগুলোও সব মরে গেছে আজ যে হির রাস্তায় নেমেছে। এখন এইটুকুর জন্য উবার ডাকবো, না থাক আরো লেট হবে এর থেকে আরেকটু অপেক্ষা করি।”

তখন একটা গাড়ি থামলো প্রথমে হির একটু ভয় পেলেও চালককে দেখে দম ছাড়লো কারন লোকটা অনিক । অনিক গাড়ি থেকে নেমে বলল,,

“গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন নাকি মিস? এখন কিন্তু গাড়ি পাবেন না বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যার দিকে এখন গাড়ি পাওয়া মুশকিল আপনি আমার সাথে আসুন আমি লিফট দিচ্ছি।”

হির ভাবলো মানা করবে কিন্তু পরিস্থিতি সাপেক্ষে মেনে নিল। ও গিয়ে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে বসলো। তা দেখে অনিক হাসলো। অনিক নিজের সিটে আগেই বসেছিল হির বসার পরেও সে গাড়ি স্টার্ট দিলো না তা দেখে হির বলল,,

“এখন কি আপনি বলবেন আমি আপনাকে আমার ড্রাইভার মনে করেছি নাকি যে পেছনে এসে বসেছি। যদি এটা বলেন তবুও আমি এখানে বসবো ঠিক আছে।কারন হুট করেই কারো পাশাপাশি বসা যায় না ওটার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। তাছাড়া আপনি অপরিচিত মানুষ হুট করে আপনার পাশে বসা বড্ড বেমানান। তাতে মানুষ আমাকে আনস্মার্ট আর অসামাজিক বলুক সমস্যা নেই। আপনার গাড়ি ছাড়ার হলে ছাড়ুন না হলে বসে থাকুন।”

অনিক হাসলো আর বলল,,

“আপনাকে আমি যে শুধু আলাদা ভাবতাম তাই না আপনি সত্যিই আলাদা । এটা সত্যি মানুষ আপনাকে অসামাজিক বলবে কিন্তু আমি এই বিষয়ে রেসপেক্ট করলাম। কারন আপনি ঠিক বলেছেন অপরিচিত মানুষের পাশে বসা বড্ড বেমানান। যাই হোক আমরা অপরিচিত থেকে পরিচিত হতে পারি।”

“হুম জানি আপনি তো ধূসর ভাইয়ার বন্ধু নাম অনিক সাথে পুলিশ।”

“এটাকে পরিচিত বলে নাকি অবশ্য একটু আগেই অপরিচিত বলেছেন। যাই হোক আমি অনিক হোসাইন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। আপনি?”

“আমিও তো এটাই বলেছিলাম যাকগে আমি মুমতাহিনা হির একজন ওয়েডিং প্ল্যানার।”

“ওহ আচ্ছা!”

“এখন গাড়ি ছাড়ুন!”

অনিক কথা না বলে গাড়ি ছাড়লো। সারা রাস্তা ফ্ল্যাটের ঠিকানা ছাড়া আর কোন কথা হলো না ওদের মাঝে। ফ্ল্যাটের সামনে গাড়ি থামালে হির বাইরে বেরিয়ে ধন্যবাদ জানালো তখন অনিক বলল,,

“আপনি চাইলে আমার পাশে বসার অধিকার নিতে পারেন। ‘

“মানে?”

“আমাকে বিয়ে করবেন মিস মুমতাহিনা হির!”

কথাটা শুনে হির একপ্রকার থমকে গেল ও অনিকের দিকে তাকালো একবার ,তারপর তাড়াতাড়ি করে ভেতরে চলে গেল একটাবার পেছনে তাকালো না পর্যন্ত। তখন অনিক ভাবলো ,,

“একটাবার তাকালো না পর্যন্ত নাকি ওনার আমাকে পছন্দ নয় । নাকি হুট করে একটু পরিচয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম বলে ধূর আমারো এত তাড়াতাড়ি করা উচিৎ হয় নি। কিন্তু ওনাকে যে প্রথম দেখায়ই ভালো লেগেছে। ধূর কি করবো ? আপাতত বাড়ি যাই পরেরটা পরে দেখা যাবে।

বলে অনিক গাড়ি ছাড়লো আড়াল থেকে হির দেখলো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্ল্যাটে ঢুকে পরলো। কিন্তু ঢুকতেই সব এলোমেলো দেখে হির দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও গিয়ে সরাসরি বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। ভালো লাগছে না কিছুই। হুট করেই সবকিছু অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে।

_________________

মেঘরা খান বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে আসলো। নীলকেও নিয়ে এসেছে। যদিও দিলরুবা খানম রেখে আসতে বলেছিল কিন্তু নীল বলছে তার আম্মুর সাথে আসবে তাই মেঘ সাথে করে নিয়ে এসেছে। মায়মুনা চৌধুরী আগেই চলে এসেছিলেন জামাই এর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার জন্য। ধূসর এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই মায়মুনা চৌধুরী আর আশা চৌধুরী জামাই আপ্যায়নে লেগে পড়লো ধূসর সব খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে সবকিছু বেশি বেশি করে তার প্লেটের চারপাশে রেখেছে তখন ধূসর বলল,,

“মা আজান কোথায়? মুজাহিদ ভাইয়া কোথায় ওনাদের ডাকুন একসাথে খাই। আব্বা কে ডাকুন!

তখন মায়মুনা চৌধুরী বলল,,

“তোমার আব্বা খাবেন না ধূসর আর আজান ওরা আসছে! ঐ তো এসে গেছে!”

মুজাহিদ ধূসরের পাশে বসে ধূসরের কানের কাছে গিয়ে বলল,,

” নতুন জামাই সবকিছু খাবেন কিন্তু কিছু রেখে ওঠা যাবে না। আমিও এমন গ্যাড়াকলে পরেছিলাম ভাই। খুব কষ্টে এদের থেকে মুক্তি নিয়েছিলাম বুঝেছো বি প্রিপেয়ার।”

ধূসর হাসলো মুজাহিদ ঠিক হয়ে বসলো। তখন মুন বলল,,

“এই তুমি ধূসরকে কানে কানে কি বললে?”

তখন ধূসর বলল,,

“কি আর বলবে দুলাভাই বলছিল আমি নতুন জামাই দেখে সবাই আমাকেই বেশি বেশি খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করছেন সে বুঝি পুরোনো হয়ে গেছে।তাকে কেউ দেখছেই না।”

মুজাহিদ হা করে ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে কি সুন্দর করে ওকে ফাঁসিয়ে দিল। মুন রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে মুজাহিদ একটা মেকি হাঁসি দিল। তখন আশা চৌধুরী মুজাহিদ এর প্লেটে বেশি করে খাবার দিয়ে বলল,,

“আমাদের বাড়িতে সব জামাই-ই সমান নাও বাবা খাও।”

তখন মুজাহিদ বলল,,

“আমি সেরকম কিছুই বলিনি ফুপি ধূসর মজা করেছে।”

তখন মুন বলল,,

“হয়েছে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না চুপচাপ খাওয়া শুরু করুন।”

তখন মুজাহিদ আস্তে করে বলল,,

“ধূসর এভাবে না ফাসালেও পারতে?”

“আমরা হইলাম ভাইরা ভাই! বুঝলেন আমি একা কেন বেশি খাবো তাই ভাবলাম আপনাকেও নিয়ে খাই ।”

অতঃপর ওরা সবাই খাওয়া শুরু করলো আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী শুধু দিয়েই যাচ্ছে দু’জনকে ওরা নানা করেও থামাতে পারছে না। মেঘ ড্রয়িংরুম থেকে সবকিছুই দেখছিল ওদের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে আর খেতে পারবে না। মেঘ ওখানে গিয়ে বলল,,

“আহ হা ফুপি কি শুরু করেছো সারাবছরের খাবার একসাথেই খাওয়াবে নাকি!”

তখন আশা চৌধুরী অবাক চোখে বলল,,

“কেন আমি কি করলাম?”

“কি করছো না তাই বলো দেখছো ধূসর আর মুজাহিদ ভাইয়া খেতে পারছে না তাও জোর কেন করছো?”

‘আরে জামাই মানুষদের একটু বেশি বেশি খেতে হয় জানিস তোর ফুপা আস্ত তিন কেজি মাংস একাই খেতো তারসাথে ভাত মাছ পায়েশ সব খেতো।”

“অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না ফুপি এরপর ওনাদের বদ হজম হবে। তাছাড়া এখন যুগ পাল্টেছে আগের মানুষের মতো এখনকার মানুষ সেরকম খেতে পারে না। অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। ধূসর মুজাহিদ ভাইয়া আপনারা হাত ধুয়ে আসুন।”

তখন ধূসরের প্লেটে এখনো অনেক খাবার ও কি করবে বুঝতে পারছে না। একবার প্লেটের দিকে আরেকবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে। মেঘ ওর ভাষা বুঝতে পেরে বলল,,

“ওটার দিকে তাকাতে হবে না আমি আপনার প্লেটে খেয়ে নেব। আপনি যান রেস্ট করুন।”

ধূসর হেসে মেঘের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,,

“জামাইয়ের এটো প্লেটে খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে।”

ধূসরের কথা শুনে মেঘ হেসে বলল,,

“এটা কে বলেছে?”

“মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র বলেছে!”

ধূসর চলে গেল মেঘ হাসলো। মুজাহিদ উঠে মুনের কাছে গিয়ে বলল,,

‘মেঘের থেকে কিছু শেখো কিভাবে জামাইয়ের সুবিধা অসুবিধা দেখতে হয় তার এটো প্লেটে খাবার খেতে হয়।পারো তো শুধু জামাইএর ওপর ছুড়ি ঘুরাতে।”

মুন ওর দিকে তাকালো তা দেখে মুজাহিদ চলে গেল। মেঘ খেতে বসলো মেঘের দেখাদেখি মুন ও খেতে বসলো যদিও আলাদা প্লেটে তা দেখে মেঘ হাসলো। মেঘের আব্বার মুখে প্রশান্তির হাসি এভাবেই তো সবসময় একেঅপরের পাশে থাকলে জীবন সুন্দর। মেঘ খাওয়া শেষ করে আব্বার সাথে একটু কথা বলে ওপরে আসলো । ধূসর সটান হয়ে শুয়ে আছে তা দেখে মেঘ বলল,,

“খাওয়া বুঝি খুব বেশি হয়েছে?”

তখন ধূসর বলল,,

“ব্যাপারটা তেমন না কিন্তু এভাবে সটান হয়ে চার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে আলাদা শান্তি কাজ করে।”

‘হুম এখন কি ঘুমাবেন?”

‘না চলো বেলকনিতে তাই একটু বাগান বিলাস করে আসি তোমার বেলকনিতে তো অনেক ফুলের টপ রয়েছে।”

“চলুন!”

ওরা বেলকনিতে গেল ওখানে দুটো বেতের টুল পাতা মেঘ আর আয়মান চৌধুরী এখানে বসে মাঝে মাঝেই আড্ডা দিতো তাই‌। ওরা গিয়ে ওখানে বসলো হুট করে ধূসর বলল,,

“তো মিসেস আজকের টা নিয়ে কি ভাবলেন কি করবেন?”

“কোনটা শেফালী খানের ব্যাপারটা নাকি বাবার বিজনেস পার্টনার নাকি রোকনুজ্জামান এর বস এর ব্যাপারটা।”

“বলা গেলে তিনটাই মূলত দুইটা।”

“কাল দেখা করবো শেফালী খানের সাথে উনি তো সব জানতেনই কিন্তু হুট করে আকাশ মাহমুদের কথা কিভাবে প্রলোভিত করলো আচ্ছা ওনাকে ভয় দেখিয়েছে নাকি। এখন আকাশ জেলে আছে এখনি কিছু একটা করা যাবে। আর বাকিটা দেখি কবে করা যায়। সবকিছু একসাথে করা যায় না একটা একটা করে করতে হবে। আচ্ছা বাদ দিন সেসব পরে দেখা যাবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“আচ্ছা আপনার কাছে নীলাশার কোন ছবি আছে আগের?”

“হুট করে এমন কথা বলছো কেন?”

“না নীলাশাকে দেখতে ইচ্ছে হলো সবাই তো তাকে অনেক ভালোবাসে তাই!”

“ওহ আচ্ছা আসলে আমরা তেমন ছবি তুলি না কিন্তু আছে দাড়াও গুগল ফটোস এ আছে দেখাচ্ছি।”

ধূসর ফোন এনে গুগল ফটোসে গিয়ে ছবি খুঁজতে লাগল কিছুক্ষণ পর পেয়েও গেল। মেঘের সামনে ধরলো মেঘ খুব মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখলো ওর মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। ও বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ মাশাআল্লাহ আপনার বোন তো দেখি খুব সুন্দর!”

‘মাশাআল্লাহ ঠিক আছে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ কিসের জন্য।”

“এমনিই আল্লাহর প্রশংসা করলাম তাই। তো কোনদিন যদি নীলাশা কে পেয়ে যান তাহলে কি করবেন?

“আমাদের কাছে রাখবো কখনো দূরে যেতেই দেব না আমাদের থেকে।”

“আচ্ছা!”

“হুম!”

“আচ্ছা নীলিমা কি,,

ধূসরকে বলতে না দিয়ে মেঘ বলল,,

“দাঁড়ান আমি একটু দেখে আসি নীল ঘুমিয়েছে কিনা? আজ তো সে আজানের সাথে ঘুমাবে।”

মেঘ উঠে চলে গেল ।ধূসরের সেদিনের মতো আজকেও প্রশ্ন করা হলো না। ও সামনে তাকালো । এদিকে আজান আর নীল ফোনে গেমস খেলছে ও গিয়ে তা দেখে বলল,,

“কি হচ্ছে এখানে আজান তুই ফোন নিয়ে গেমস খেলছিস?”

‘আহ হা আপু আসলে কি বলতো নীল গেমস খেলবে বলে বায়না করছিল তাই !”

“ফোনটা কার শুনি তোকে তো ফোন দেওয়া হয় নি?”

“এটা মায়ের ফোন আমি গিয়ে নিয়ে এসেছি!”

“আচ্ছা এখন রাখ নীল তুমি তো ভালো বাচ্চা তাই না ঘুমিয়ে পড় ফোন দাও আমার কাছে!”

“আমি এখন ঘুমাবো না গেমস খেলবো কি সুন্দর বাইক চলে!”

“আজান এটা তোর কাজ নিশ্চয়ই ওকে বাইক গেমস এনে দিয়েছিস আর মায়ের ফোনে নিশ্চয়ই এগুলো তুই ডাওনলোড করেছিস।”

“তা নয় তো কি মা কি এগুলো খেলবে।”

‘হুম নীল এখন ফোন দাও।”

“দেব না আম্মু!”

নীল ছোটাছুটি করছে মেঘ ও বিছানার চারপাশে ছুটছে। একসময় নীল বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিল বাইরে তা দেখে মেঘ ও দৌড় দিল সামনেই সিড়ি তা দেখে মেঘ ভয় পেল। মেঘ চিৎকার করে বলল,,

“নীল থামো সামনে সিড়ি আছে পরে যাবে!”

নীল দৌড়াচ্ছে আর বলছে,,

“থামবো না আম্মু তাহলে তুমি আমার থেকে ফোন নিয়ে নেবে আর ঘুমাতে বলবে।”

“নীল থামো ফোন নেব না তবুও দাঁড়াও।”

নীল একদম সিড়ির কাছেই ওখান দিয়ে ধূসর আসছে মেঘ আসার পর ওর মনে হলো নীলের সাথে দেখা করে ঘুমাতে তাই। এদিকে নীল কথা বলার জন্য বুঝতে পারল না সামনে কি আছে ও স্লিপ খেয়ে পরে যেতে নিল তখন মেঘ চিৎকার করে বলল,,

“নীললললল!”

ধূসর নীলকে ধরে নিল। মেঘের এখনো হাত পা কাঁপছে। ও ওখানেই বসে পরলো ওর আনাফের পরে যাওয়ার ঘটনা চোখের সামনে ভাসছে। এদিকে মেঘের চিৎকারে সকলেই নিজেদের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। ধূসর তাড়াতাড়ি নীলকে নিয়ে মেঘের কাছে গেল মেঘ চোখ বন্ধ করে বিরবির করে কিছু বলছে তা দেখে ধূসর বলল,,

“মেঘ চোখ খুলো দেখো নীলের কিছুই হয় নি ও ঠিক আছে। ও পরে যায় নি।”

মেঘ চোখ খুলল ওর চোখ ছলছল করছে তা দেখে নীল মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“সরি আম্মু আর আর দুষ্টুমি করবো না ফোনে গেমস ও খেলবো না এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পরবো তুমি প্লিজ কষ্ট পেও না।”

মেঘ নীলকে জরিয়ে ধরলো তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে কঠোর কন্ঠে বলল,,

“আমি ঠিক আছি! যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড় আর হ্যা ফোনটা আমার কাছে দাও।”

“আম্মু তুমি কি আমার সাথে রাগ করলে?”

“না যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!”

“তাহলে এভাবে কেন কথা বলছো!”

“এমনি তুমি যাও!”

নীল ধূসরের দিকে তাকালো ধূসর ইশারা করে বোঝালো মেঘ যা বলছে তাই করতে। নীল মেঘের গালে চুমু দিয়ে ওর হাতে ফোন দিয়ে আজানের কাছে চলে গেল। আজান ওদের পেছনেই রুম থেকে বের হয়ে এসেছিল। আজান এগিয়ে এসে বলল,,

“সরি আসলে!”

“কোন কথা না তা গিয়ে শুয়ে পড়।”

মেঘ উঠে তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে এলো। আয়মান চৌধুরী ধূসরকে জিজ্ঞেস করতেই আজান আর ধূসর সব বলল। তারপর আজান নীলকে কোলে নিয়ে রুমে চলে গেল। তখন আয়মান চৌধুরী বলল,,

‘আসলে মেঘ এমন রিয়াক্ট করলো কারন ওর নীলের প্রতি রাগ হয়েছে তাছাড়া ও সিড়ি থেকে পরে যেতে পারতো আর যদি পরতো তাহলে আনাফের মতো ওকেও হাড়িয়ে ফেলতো তাই ভয় ও পেয়েছে। রাগ আর ভয় মিলিয়ে ওদের সাথে এমন আচরন করলো।”

সব শুনে ধূসর বলল,,

‘সমস্যা নেই আব্বা আমি মেঘকে সামলে নেব আসছি।”

বাকিরা সবাই যে যার রুমে চলে গেল ধূসর ও গেল। মেঘ শুয়ে আছে এক পাশে ধূসর গিয়ে তা দেখে বলল,,

“তার সাথে একটু কঠোর গলায় কথা বললে যদি খারাপ লাগে তাহলে বললে কেন?”

তখন মেঘ বলল,

“জীবনে দুইটারই দরকার আছে তাকে ভালোবাসি বলে শাসন করবো না এমনটা নয় তার বোঝা উচিৎ সে যা করছিল ভূল। যদি সিড়ি থেকে পরে যেত। এখন এমনিতেই বুঝে যাবে রেগে কথা বললাম না।’

“আরে রিল্যাক্স কিছু হয় নি তো!”

“আপনি না থাকলে হতেও পারতো।”

“আচ্ছা এ টপিক বাদ এখন আমরা আমাদের প্রেমের আলাপ করবো। তুমি যাওয়ার পর একটা জিনিস মাথায় এলো আমরা যদি নব্বই দশকের প্রেমিক প্রেমিকা হতাম তাহলে কেমন হতো আমরা একে অপরকে চিঠি দিতাম। একটা চিঠির জন্য কতোদিন অপেক্ষা করতাম একই চিঠি কতোবার পড়তাম কতো আবেগ মাখানো চিঠি হতো তুমি কতো আশা নিয়ে আমার চিঠির জন্য বসে থাকতে ইসস কি মুহুর্ত সাচ এন বিউটিফুল মোমেন্ট উইথ বিউটিফুল ফিলিংস তাই না।”

হুট করেই মেঘের মুড ভালো হয়ে গেল ও নিজেও একটু মজা নেওয়ার জন্য বলল,,

“এমন ভাবে বলছেন যেন আমাদের প্রেমের বিয়ে হয়েছে। তাছাড়া আমার বয়েই যেত আপনার চিঠির অপেক্ষা করতে। ”

“এমন করে বলছো কেন যাস্ট ইমাজিন আমরা নব্বই দশকের প্রেমিক প্রেমিকা ইস আমার ভেবেই কিরকম লাগছে।”

“দুই হাজার তেইশ এ এসে আমি কেন ভাববো নব্বই দশকের প্রেমিক প্রেমিকা। ”

“ভারি নিষ্ঠুর মেয়ে তো তুমি আমি এতো সুন্দর মুহুর্তের কথা বলছি আর উনি নিরামিষ মহিলা আমার এত সুন্দর মুহুর্তে বাগড়া দিচ্ছে।”

মেঘ হাসলো তা দেখে ধূসর বলল,,

“একদম হাসবে না মেয়ে তোমার আমাকে জ্বালিয়ে হাসি পায় হুম!”

“খুব মজা লাগে! তবে জানেন কি নব্বই দশকের প্রেম একদম খাঁটি ছিল। এখনকার মতো ড্রেসচেন্জ করার মতো কেউ বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড পাল্টাতো না। তারা ভালোবাসতো আজীবনের জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের মিলন ঘটতো না। কারন তারা এখনকার যুগের মতো কিছু হলেই বা পরিবার না মেনে পালাতো না। তারা ভালোও বাসতো আবার বাবা মায়ের সম্মানের কথাও ভাবতো। এতো কিছুর পরেও কিন্তু একে অপরকে ভালোবাসতো আজীবন। তবে হ্যা তাদের চিঠি পাওয়ার মধ্যে একটা অদ্ভুত থ্রিল কাজ করতো। কিন্তু জানেন তো হারাম ইজ হারাম রিলেশনশিপ ইজ হারাম ইন ইসলাম।

“ওকে আমার বউ আমি সব বুঝতে পেরেছি। কিন্তু তোমায় নিয়ে যদি আমি চিঠি লিখতাম তাহলে কি লিখতাম জানো কবির কথা ,,
প্রহর শেষে আলো রাঙা
সে-দিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম
‌‌ আমার সর্বনাশ।”

মেঘ হাসলো কি সুন্দর হাসি ধূসর মুগ্ধ চোখে দেখলো। তারপর বলল,,

“হাসছো কেন?”

“আমার এতো সুন্দর চোখে আপনি আপনার সর্বনাশ দেখলেন।”

“হুম দেখলাম তো! কিন্তু আমার চোখে তুমি কি দেখেছো বলো আমার চোখে কি তোমার সর্বনাশ দেখেছো!

“না তো আমি আপনার চোখে আমার সর্বনাশ দেখিনি মুগ্ধতা দেখেছি? কিন্তু আপনার প্রতি অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করেছি!”

“কিন্তু সেটা তো আমার চোখের দিকে তাকিয়েই তাই না?”

“না তো আমি তো আপনার চোখ সেদিন দেখেনি কারন আপনি ক্যাপ পরেছিলেন। আমি তো আপনার কন্ঠে বলা একটা কথায় মুগ্ধ হয়েছিলাম।”

“মানে? বুঝলাম না কোন কথায়?

“বুঝতে হবে না ঘুম পাচ্ছে!”

“আজ তো বলতেই হবে এই নাও তোমার হাত ধরেছি। সবসময় তো আমি আমার কথা বলি আজ তোমার কথা শুনবো আমার কি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলে কি অনুভব করেছিলে যার জন্য বিয়েতে রাজি হয়েছিলে। আমিও জানতে চাই আমার প্রতি তুমি কিসে অনুভুতি অনুভব করেছিলে!

“ওকে বেশ বলছি আগের বাসায় আপনার আর আমার বেলকনি কিন্তু পাশাপাশি ছিল!”

“হুম ছিল তো?’

“আমি একদিন গাছে পানি দিচ্ছিলাম বেলকনিতে তখন আপনি বেলকনিতে বসে মাথায় ক্যাপ পরে একটা উপন্যাস পরছিলেন। দুজন দুজনের কাজ করছিলাম হুট করে আমি হাঁচি দিয়েছিলাম তখন আমি আলহামদুলিল্লাহ বলেছিলাম আপনি জবাবে বলেছিলেন ইয়ারহামুকাল্লাহ। ওটাই আমাকে অদ্ভুত অনুভূতি দিয়েছিল বলতে গেলে আপনার প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। কিন্তু আপনি আমার দিকে তাকান নি যেটা আমাকে আরো মুগ্ধ করেছিল।”

ধূসর সেদিনের কথা মনে করলো আর হেসে বলল,,

“ওহ আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার তাই তো বলি আসলে, সেদিন তোমাকে দেখে তোমার দিকে তাকাই নি যদি অস্বস্তিবোধ করো তাই এছাড়াও তো তুমি ওরনা দিয়ে ভালো মতো সব ঢেকেই এসেছিলে তবুও যদি অস্বস্তিবোধ করো। তবে হ্যা হাঁচির শব্দ আর আলহামদুলিল্লাহ শুনেছিলাম তাই তার জবাব দিয়েছিলাম। আসলে,,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃ) বলেনঃ কেউ হাঁচি দিয়ে যেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার অপর (মুসলমান) ভাই বা সংগী যেন ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে। সে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললে (শুকরিয়াস্বরূপ) সে যেন বলে, ‘ইয়াহদিকাল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকা’ (আল্লাহ তোমায় সৎপথে চালিত করুন এবং তোমার অবস্থার সংশোধন করুন)। -(বুখারী, আবু দাউদ)

তুমি কি আমার ইয়ারহামুকাল্লাহ এর জবাব দিয়েছিলে?”

“হুম দিয়েছিলাম নিচু স্বরে আপনি বোধহয় উপন্যাসে একটু বেশিই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন তাই শুনতে পান নি।”

“‘হুম! আচ্ছা শুয়ে পড়ি চলো !’

“হুম !”

“শুভ রাত্রি না, না, তুসবিহুন আলা খইর!(আপনি একটি ভালো খবর পেয়ে জেগে উঠুন )”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“তুসবিহুন আলা খইর!”

“শুকরিয়া মেরে বিবিসাহেবা কত্তো ছোট্ট কিন্তু কত সুন্দর এই উক্তিগুলো, অত্যন্ত সুন্দর সুন্নাহ তাই না।”

“হুম!”

ধূসর মেঘকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। অতঃপর সকাল,,

~চলবে?

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আজানের ধ্বনি কানে যেতেই মেঘ উঠে ধূসরকে ডেকে তুলল ফজরের নামাজের জন্য। ধূসর উঠে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এলো , মেঘ ওয়াশরুমে ডুকবে তখন ধূসর বলল,,

“আমি তাহলে মসজিদ থেকে নামাজটা পরে আসি জামাতের সাথে নামাজ পড়া হবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। আজান তো একটু আগেই দিল জামাতে বোধহয় দাঁড়ায় নি আপনি নামাজ শুরু করার আগে পৌঁছে যাবেন ইনশাআল্লাহ্।”

“হ্যা পৌঁছাতে পারবো বেশি দূরে তো না। কয়েকদিন ধরে জামাত মিস যাচ্ছে আজ যেহেতু আগে উঠেছি তাহলে মিস দেওয়াটা উচিত হবে না। তাছাড়া আজান তো কাল বলছিল ও নিয়মিত মসজিদে যায়।”

“হুম দেখেন মসজিদে যাবে কি না তাহলে ওর সাথেই যেতে পারবেন আর হ্যা সাবধানে যাবেন।”

“হুম ইনশাআল্লাহ্ আসছি!”

“আরে দাঁড়ান টুপি নিয়ে যান!’

“শুকরিয়া বিবিসাহেবা!”

মেঘ টুপি এনে ধূসরকে দিল। ধূসর বাইরে এসে দেখলো আজান মাথায় টুপি পরে মাত্র রুম থেকে বের হলো।তাই ও আজান কে ডেকে ওর সাথে চলে গেল মসজিদের উদ্দেশ্যে। এদিকে মেঘ ফ্রেশ হয়ে ওযু করে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল। তারপর তাসবিহ পরতে লাগলো এটা ওর নিয়মিত কাজ। এ বাড়িতে থাকতে ভোরের আলো না ফোটা অব্দি ও তাসবিহ পরতো। ভোরের আলো ফুটতেই মেঘ বেলকনিতে চলে গেল ধূসর আর আজান বোধহয় মসজিদে কিছু নিয়ে কথা বলছিল তাই ভোরের আলো ফোটার পর এখন তারা দুজন আসছে মেঘ বেলকনি থেকে স্পষ্ট তাদের দেখতে পেল। অতঃপর ধূসর নিজের রুমে চলে এলো। মেঘকে কোথাও না পেয়ে বেলকনিতে গেল। মেঘ বসে সকালের স্নিগ্ধ প্রকৃতি অনুভব করছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম বিবিসাহেবা!

মেঘ মুচকি হেসে জবাব দিল,,

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম জনাব! জামাত পেয়েছিলেন তো?

“আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছিলাম!”

“যাক আলহামদুলিল্লাহ! আপনারা এতক্ষন মসজিদে ছিলেন তাসবিহ পরেছেন নাকি কোন কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলেন।

“না গো তাসবিহ পড়া হয়নি । তোমাদের মুন্সি ছোটখাটো আলোচনা করেলেন।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে এখন চারটে কালিমা তিনবার করে পড়ুন যা দিনের অর্ধেক সময় জিকির করার থেকেও উত্তম !

“শুকরিয়া মনে করানোর জন্য। ধূসর পড়লো,,

সুবহাল্লাহি আদা’দা খলকিহি (৩ বার)
সুবাহানাল্লাহি রি’দ্ব নাফসিহি (৩ বার)
সুবাহানাল্লাহি যি’নাতা আরশিহি (৩ বার)
সুবাহানাল্লাহি মি’দাদা কালিমাতিহি (৩ বার)

এই হাদিস টা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা নেয়ামত সুবাহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। যারা ব্যস্ততার জন্য অনেকসময় জিকির তাহবিহ পরতে পারে না তাদের জন্য উত্তম মাধ্যম।”

“হুম এই হাদিসটা যবে থেকে জেনেছি সেদিনই মুখস্থ করে নিয়মিত পাঠ করি। উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন, সে সময় তিনি তার (ঘরে) নামাযের জায়গায় ছিলেন। আবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায় দুপুরে তার কাছ দিয়ে গমন করেন এবং তাকে বললেনঃ তুমি কি তখন হতে এই অবস্থায় আছ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি কিছু বাক্য শিখিয়ে দিব না যা তুমি বলবে? অতঃপর এই চারটি বাক্য শিখিয়ে দিলে এবং তিনবার করে পরতে বলেছেন।
{ সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮০৮), মুসলিম
জামে’ আত-তিরমিজি (৩৫৫৫)}

“আলহামদুলিল্লাহ আমাকে আল্লাহ তায়ালা তোমার মতো উত্তম জীবনসঙ্গী দান করেছেন! যে আমাকে দ্বীনের পথে চলতে সাহায্য করে। এই যে কি সুন্দর ঘুম থেকে তুলে দিলে নামাজের জন্য। আবার দোয়া গুলো পড়ার জন্যও সাহায্য করলে। অবশ্য এখানে আমার ক্রেডিট ও আছে আমি দোয়া করেছি বলেই না এরকম জীবনসঙ্গী পেয়েছি।”

“তা কি বলে দোয়া করেছেন বলুন তো!”

“যেটা সকল অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য এবং উত্তম সন্তানাদির জন্য করা উচিৎ।
“রব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্বুররতা আ’ইয়্যুন ওয়াজআলনা লিল মুত্তাক্বীনা ইমামা”।

অর্থ- ইয়া আল্লাহ আপনি আমাকে এমন স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তান দান করুন যাদের দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।আর আপনি আমাকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন”

এখন বলো তো তুমি এই দোয়া করেছো তো?”

“হুম যবে থেকে জেনেছি তবে থেকেই! এই জন্যই তো এত ভালো হাজবেন্ড পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।”

“বলছো আমি ভালো?”

“আমি কখনো খারাপ বলেছি নাকি আপনাকে? আপনিই তো দিনরাত জপতে থাকেন নিষ্ঠুর মেয়ে।”

ধূসর অমায়িক হাসলো আর বলল,,

“তোমার নিষ্ঠুর মেয়ে বলার যে আনন্দ আছে তা অন্য কোথাও নেই। সবারই নিজের দেওয়া নাম দিয়ে ডাকার আলাদা একটা অনুভুতি আছে যা আমি নিষ্ঠুর মেয়ে বলে পাই তাছাড়া তুমিও তো পছন্দ করো।”

“বারে লজিক! হয়েছে নিচে চলুন কফি খাবেন তো!”

“হুম স্নিগ্ধ সকালে বউয়ের হাতের কফি ব্যাপারটা দারুন।”

মেঘ হেসে চলে গেল। ধূসরও পেছনে গেল নিচে এখনো বোধহয় কেউ নামেনি মেঘ একবার আজানের রুমে গেল। আজান এসে আবার শুয়ে পরেছে তা দেখে মেঘ হাসলো তবে ও ঘুমাতে বারন করে সকালের সতেজ আবহাওয়া গায়ে মাখতে বলে কিন্তু মাঝে মাঝে কাজটা করলেও বেশীরভাগই করে না। নীল ওর পাশেই আরামসে ঘুম। মেঘ গিয়ে তিন মগ কফি বানালো কারন তার আব্বা আসবে এখনি নিচে। এটা সবসময়ই হয়ে এসেছে মেঘ আর আয়মান চৌধুরী নামাজ পরে ভোরের আলো ফুটতেই নিচে এসে কখনো কফি কখনো চা খেয়েছে। তিন মগ দেখে ধূসর জিজ্ঞেস করল,,

“তিন মগ কেন?”

“আমার পাশে এসে এখন যে বসবে তার জন্য!”

ধূসর কিছু বলবে তখনি আয়মান চৌধুরী মেঘের পাশে এসে বসলো মেঘ এক মগ কফি তার আব্বার দিকে এগিয়ে দিল। আয়মান চৌধুরী হেসে মেয়ের নিকট থেকে কফি নিয়ে খেতে লাগল। ধূসর কিছু বললো না শুধু হাসলো। হুট করে আয়মান চৌধুরী বলল,,

“ধূসর আজ কি তোমার হসপিটাল আছে নাকি এখনো ছুটিতেই আছো?”

“ডক্টর আর ছুটি! তবে এ তিনদিন বেশ ভালোই গেল কোন ইমার্জেন্সি আসে নি যা এসেছে বাকিরা সামলে নিয়েছে তবে আজ নাস্তা খেয়ে হসপিটালে যাবো। মেঘ ও বের হবে শেফালী খানের সাথে নাকি দেখা করবে।”

“ওহ আচ্ছা! তা তোমরা বাড়িতে যাবে কখন?

“বিকেলে আমি দুপুরেই হসপিটাল থেকে চলে আসবো ততক্ষনে মেঘের কাজ ও হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে । তা আম্মা আপনার কি মনে হয় শেফালী খান আপনার কথা মানবে?”

“জানি না আব্বা তবে চেষ্টা করবো। তাছাড়া উনি তো সব জানতেনই তাহলে এখন কেন এরকম করছেন কিছু তো একটা ব্যাপার আছেই আব্বা। দেখি কথা বলে যদি মেনে নেয়।”

“আর যদি না মানে তাহলে?”

‘তাহলে আর কি আপনার মেয়ে জেলে থাকবে আর নীলকে হারিয়ে ফেলবো!”

“আম্মা এটা কোন ধরনের কথা।”

“আমি ফ্যাক্ট বললাম আব্বা। তবে একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ তায়ালা একটা দরজা বন্ধ করে আরেকটা দরজা খুলে দেন আল্লাহ ভরসা। আমাদের তো কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাহায্য করবেন। তাছাড়া আল্লাহর ওপর যে ভরসা করে কার্যনির্বাহী রুমে তিনিই তাকে সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। এতো চিন্তা করার কারন নেই যা হবে দেখা যাবে শুধু আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চেষ্টা করবো।”

“হুম সেটাই!”

তখন মায়মুনা চৌধুরী নিচে আসলেন তার একটু পরে জাহানারা চৌধুরীকেও দেখা গেল একে একে সবাই নিচে আসছে। আয়মান চৌধুরী রুমে চলে গেল।মেঘ উঠলো আর নীলকে ঘুম থেকে তুলতে চলে গেল। ধূসর মুজাহিদ এর সাথে কথা বলতে লাগলো। মেঘ নীলকে আস্তে আস্তে ডাকলো যাতে আজান না উঠে যায়। কারন একটু আগেই ঘুমিয়েছে কাঁচা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে মানুষ অনেক রেগে যায় তাই মেঘ সে রিস্ক নিল না। এদিকে আম্মুর ডাকে নীল চোখ খুললো আর মেঘকে দেখে খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলো। মেঘ ও জরিয়ে ধরে কোলে নিল ‌ নীল বললো,,

“আম্মু তুমি রাগ করে নেই তো আমার ওপর? আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছি আমার ভুল হয়েছে।’

“না এখন রাগ নেই তবে তুমি যদি একই ভুল আবার করো তাহলে রেগে যাবো।”

“আচ্ছা আমি আবার ভুল করলে তুমি বকে দিও।”

“হুম এখন চলো ব্রাশ করতে হবে তো ওগুলো আমার রুমে আছে।”

“হুম তুমি আমাকে এভাবেই নিয়ে যাও আমি তোমার কাঁধে একটু ঘুমাই। ”

“ওকে চলো!”

মেঘ নীলকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হলো ।নিচ থেকে সবাই দেখলো মেঘ নীলকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে নিচে এলো। তখন নীল ধূসরের কাছে গিয়ে বলল,,

“আব্বু তুমি নাকি আজ আম্মু কে আবার তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে।”

ধূসর হেসে নীলকে কোলের উপর বসিয়ে বলল,,

“হ্যা যাবো তো!”

“আবার কাল কে নিয়ে আসবে এবাড়িতে গতকালের মতো।”

“কেন তোমার এটা কেন মনে হলো?”

“আরে বাবা পুরশুদিন তুমি আম্মুকে রাতে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে গেলে আবার কাল রাতে নিয়ে এলে আজ আবার নিয়ে যাবে কাল আনবে নাকি তাই বলছি।”

“ওরে পাকা ছেলে আসলে কি বলো এ দুদিন যা হলো তা হলো বিয়ের নিয়ম এটা আগে থেকে হয়ে আসছে। আজ তোমার আম্মু আমারদের বাড়িতে গেলে কাল আর আসবে না কয়েকদিন পর আবার আসবে।”

“ওহ আচ্ছা আমি ভাবলাম আম্মু এবার থেকে একদিন ওখানে একদিন এখানে থাকবে আমি তো টেনশনেই পরে গেছিলাম স্কুলের মতো একদিন ও বাড়িতে আবার এবাড়িতে আসতে হবে। কারন আমিও তো আম্মুর সাথে আসা যাওয়া করবো। আচ্ছা আম্মুর দুইটা বাড়ি তাই না। না না আম্মুর তো দুইটা না তিনটা বাড়ি একটা বাবার বাড়ি, একটা শুশুরবাড়ি,আর একটা নিজের বাড়ি। কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ঢোকেনি।

মেঘ এ কথা শুনে নীলের দিকে তাকালো ও এগুলো পেল কোথা থেকে মেঘ নীলের কাছে গিয়ে বলল,,

“এগুলো তুমি কোথা থেকে শিখলে নীল?”

‘কাল রাতে আজান মামা তোমার বাড়ির কথা বললো তো। তাই!”

“আজান নিচে আসুক ওর হবে আজকে!”

তখন ধূসর বলল,,

“আহ হা ও ছোট মানুষ ওতশত ভেবে বলেছে নাকি!”

‘ও ওতটাও ছেলে মানুষ নয় এটা বুঝতে পারবে না বাচ্চাদের সামনে কি বলতে হয়!”

“আচ্ছা বাদ দাও!”

তখন মুজাহিদের একটা ফোন আসলো ও ফোনে কথা বলার জন্য একটু উঠে গেল কথা শেষ আবার এসে সোফায় বসলো। ওর মুখটা কালো হয়ে আছে তা দেখে ধূসর বলল,,

“ভাইয়া কিছু কি হয়েছে? আপনাকে এমন লাগছে কেন?”

তখন মুজাহিদ বলল,,

“আর বলো না একটা নতুন ডিলের পেপার হারিয়ে গেছে। ওটা আমার কাছেই ছিল আজ পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু কাগজটা আমি রেডি করে আমার টেবিলের ওপর রেখে এসেছিলাম । গতকাল রাতে আমার রুমে বাবা কাগজটা আনতে গিয়ে দেখে নাই । সারাঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। ধূর আমি যদি কাগজটা টেবিলে না রেখে আলমারিতে রাখতাম তাহলে এটা কখনোই হতো না। আমার ভুলের জন্যই বোধহয় আজ ডিলটা আমাদের হবে না। খারাপ লাগছে কাগজটা থাকলে অবশ্যই আমরা ডিলটা পেতাম।

তখন ধূসর বলল,,

“এভাবে বলবেন না মুজাহিদ ভাইয়া! আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে জিনিস তোমার উপকারে আসবে তার দিকে অগ্রসর হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও আর অক্ষমতা প্রকাশ করো না। যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তাহলে এ কথা বলো না : ‘যদি আমি এ রকম করতাম তাহলে অবশ্যই এমন হতো।’ বরং তুমি এ কথা বলো : ‘আল্লাহ্ যা তাক্বদীরে রেখেছেন এবং ইচ্ছা করেছেন তাই হয়েছে।’ কেননা ‘যদি’ কথাটি শয়তানের জন্য কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়। (সহীহ মুসলিম, আহমাদ)

তখন মুজাহিদ বলল,,

“সরি ধূসর । আমি বুঝতে পেরেছি।”

ধূসরের কথায় মেঘ হাসলো। অতঃপর ব্রেকফাস্ট রেডি সবাই খাওয়ার জন্য ড্রাইনিং এ গেল ততক্ষণে আমাদের আজান ও নিচে আসলো কারন আয়মান চৌধুরী বলে দিয়েছেন ড্রাইনিং এ যেন লেট না হয় এই জন্য রোজ সে অ্যালার্ম দিয়ে রাখে। আজান এলো কিন্তু ঘুম বোধহয় ভালো হয় নি। ও এসে ধূসরের পাশে বসলো। মেঘ ওর সামনের চেয়ারে আর পাশে নীল মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আজানের হাই উঠলো ওর নজর গেল মেঘের দিকে তাকিয়ে ও অর্ধেক হাই দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। তা দেখে নীল হেসে উঠলো। তা দেখে ধূসর বলল,,

“কি হয়েছে নীলবাবু হাসছো কেন?”

তখন নীল আজানের কথা বললো। সবাই মুচকি হাসলো তখন মুন বলল,,

“কিন্তু আজান তুই এরকম করলি কেন?”

“আরে আপু তুমি জানো না আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “হাই শয়তান কর্তৃক আসে। অতএব যখন তোমাদের কারো হাই আসে, তখন সে যেন সাধ্যানুসারে তা রোধ করে। কেননা, যখন তোমাদের কেউ হাই তুলে তখন শয়তান হাসে।” (বুখারী ৩২৮৯, মুসলিম ২৯৯৮)

এটা মেঘ আপু বলেছিল কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম মেঘ আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই ওরকম করলাম।”

তখন মেঘ বলল ,,

“হয়েছে এবার চুপচাপ খা।”

সবাই একসাথে খেল । তারপর নিজেদের মতো রেডি হয়ে নিচে এলো ধূসর আর মেঘ। নীলকে আগেই বলে রেখেছে যেন আজানের সাথে থাকে ওর কাজ আছে। নীল মানা করে নি। নিচে এসে মেঘ নীলের কপালে চুমু দিয়ে আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেল। ধূসর ও মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। মায়মুনা চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী একসাথে দাড়িয়ে দেখলেন। হুট করে জাহানারা চৌধুরী বললো,,

“নিঃসন্দেহে মেঘ একজন ভালো মা হয়েছে!”

মায়মুনা চৌধুরী অসহায় হাসলেন আর বলল,,

“হুম তা হয়েছে তবে তোমার কথা শুনে মেঘের একটা ঘটনা মনে পরলো।”

“কি ঘটনা বলো না ভাবি?”

যদিও ঘটনাটা খুব সুখকর ছিল না তবে তোমাকে বলছি । মেঘ একদিন খুব রেগে গিয়েছিল জানো জাহানারা হয়তো কষ্টও পেয়েছিল তখন মেঘের তেরো বছর একটা পার্কে গিয়েছিলাম ওদের নিয়ে ওদের মামা বাড়ি থেকে সবাই খেলছিল ও বসে ছিল তাই ওর হাতে টাকা দিয়ে বলেছিলাম সবার জন্য আইসক্রিম আনতে মেঘকে যে টাকা দিয়েছিলাম সেই টাকায় যতোগুলো হয়েছিল ততগুলোই নিয়ে এসেছিল। এদিকে মুন আজান ওর বয়স দুই কি এক আমার ছয়জন ভাটিজা ভাটিজি ছিল মেঘ একটা ওর হাতে রেখে আর সবগুলো আমার হাতে দিল। সবাইকে দিতে যেয়ে একটা কম পড়লো তাও আনাফের থেকে এক বছরের বড় ছোট ভাইয়ার মেয়েরটা। তাই মেঘের হাতের টা নিয়ে নিলাম তখন মেঘ আমাকে বলেছিল ,

“আমারও তো আইসক্রিম পছন্দ আমিও খাবো আপনি আমার থেকে আইসক্রিম টা নিলেন কেন?”

জবাবে আমি বলেছিলাম,

“তোমার থেকে রিনা (ছোটমামার মেয়ে) তাই তোমার উচিত ওকে তোমার আইসক্রিম টা দেওয়া। ”

“আচ্ছা টাকা দিন আমি নিয়ে আসছি আরেকটা।”

“আমার কাছে আর টাকা নেই।”

“মুন আপুও তো আমার বড় আপনি ওর থেকে নিন না।”

“মুন আর তুমি এক হলে নাকি। তাছাড়া মুনের আইসক্রিম কতোটা পছন্দ তুমি জানো না।

এ কথাটা মেঘের মনে হয় অনেক আঘাত এনেছিল সেদিনই ও আমার সাথে এতো রাগ করে কথা বলেছিল। ও চিৎকার করে বলেছিল,,

“লাগবে না আপনার আইসক্রিম। মুন আপুও আপনার মেয়ে আর আমিও আপনার র মেয়ে তাহলে এত ব্যবধান কিসের নিজের মেয়েরটা ছিনিয়ে অন্যকারো হাতে তুলে দিতে পারেন অথচ বড় মেয়ের থেকে ছোট মেয়েকে দিতে পারেন না। একই পেটের বোন তবুও আকাশ পাতাল তফাৎ আপনার মতো এরকম নিষ্ঠুর মা আমি হতে চাই না। আপনি জানেন তখন আমি পুতুল খেলা করতাম তখন আমার পুতুল তিনটা হোক আর চারটা আমি একরকম সাজাতাম যাতে সবাইকে এক লাগে কেউ মন খারাপ না করে অবুঝ ছিলাম তবুও। আর আপনি? আমি আপনার মতো ভেদাভেদ করি না। আমি কখনো মা হলে কখনোই নিজের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্যবধান রাখবো না‌। সবাইকে খুব ভালোবাসবো আর আমি হবো বেস্ট মা। আপনার মতো মা যেন কারো না হয়।

এই কথা বলেই মেঘ পার্ক থেকে চলে গেছিল।আমি অবাক চোখে সেদিন মেঘকে দেখেছিলাম হয়তো খারাপও লাগছিল মেঘের কিন্তু আমি মেঘের প্রতি সহানুভূতি দেখাই নি সেদিন আজ তোমার ভালো মা শুনে সেদিনের কথা মনে পড়লো। তুমি ঠিক বলেছো
নিঃসন্দেহে মেঘ একজন ভালো মা। অন্যের ছেলেকেই যেভাবে আগলে রেখেছে নিজের ছেলেমেয়েকেই কতোজন এভাবে আগলে রাখতে পারে না। মেঘ ঠিক বলেছে আমার মতো নিষ্ঠুর মা যেন কারো না হয়।

জাহানারা চৌধুরী অসহায় চোখে মায়মুনা চৌধুরীর দিকে তাকালো। মেঘের জীবনটা এতটা দুর্বিসহ ছিল তিনি যেন আন্দাজ ও করতে পারে নি। অবশ্য তিনিও খুব একটা খেয়াল করে নি তার বাচ্চা কাচ্চা আর নিজের দুঃখ নিয়ে এতটাই মশগুল ছিল যে তার আশেপাশেই তার থেকে বেশি কষ্টে আছে একটা ছোট বাচ্চা সেটা সে দেখতেই পায় নি। তিনি কিছু বললো না নিজের মতো কাজ করতে লাগলো। মায়মুনা চৌধুরী ও চোখের পানি মুছে কাজ করতে লাগলো।

_______________

মেঘ বসে আছে শেফালী খানের সামনে শেফালী খান মেঘের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“আমি জানতাম তুমি আসবে?”

মেঘ হেসে বলল,,

‘হঠাৎ করে এরকম একটা স্টেপ নেওয়ার কারন? আমি কি নীলকে আপনার থেকে দূরে রেখেছি আমি তো নীলের ব্যাপারে সব জানিয়েছিলাম আপনাকে তবুও কে?

‘আমি কিছু জানিনা আমার শুধু আমার নাতি কে চাই!”

“আকাশ মাহমুদ কি আপনাকে জোর করেছে যদি করে থাকে তাহলে আমাকে বলুন আমি ঠিক একটা কিছু ব্যবস্তা করবো। আকাশ মাহমুদ এখন জেলে কিছু করতে পারবে না। তাছাড়া সবথেকে বড় কথা আকাশ মাহমুদ নীলিকে মেরেছিল নীলকে মারতে চায় আপনি তো জানেন তাহলে কিসের জন্য এরকম করছেন? একটা সময় নীলের সুরক্ষার জন্য আপনি ওকে এই বাড়িতেও আনতে চান নি?

উনি কিছু বলবে তার আগে একটা কাজের মহিলা এলো। শেফালী খান ওনার দিকে একবার তাকিয়ে নিজেকে কঠোর করে নিল। মেঘ সব লক্ষ্য করলো । মহিলার চাহনিও বেশ অদ্ভুত। হুট করে শেফালী খান চিৎকার করে বলল,,

“আমি কিছু জানি না আর জানতেও চাই না নীল, খান বাড়ির বংশধর আর ও খান বাড়িতেই থাকবে। তুমি যদি ভালোয় ভালোয় নীলকে ফেরত দাও তো ভালো নাহলে কি হবে আমি নিজেও জানি না তাছাড়া কোর্টে কিন্তু তোমাকে হারতেই হবে।

মেঘ শেফালী খানের কথায় অবাক হয়ে গেল। উনি বারবার কাজের মহিলার দিকে তাকাচ্ছে তা মেঘ ভালোমতোই দেখতে পেল। মেঘ যা বোঝার বুঝে গেল। মেঘ হেসে বলল,,

“হ্যা হ্যা ঠিক বলেছেন নীল তো খান বাড়িতেই থাকবে কিন্তু মাহমুদ খানের বাড়িতে না এহসান খানের বাড়িতে। বাই দা ওয়ে মাহমুদ খান আপনার স্বামী চার বছর আগে মরলো কিভাবে? ইস বেচারা স্ট্রোক করে ঘুমের মধ্যেই চলে গেল।সেটা স্ট্রোক ছিল নাকি ইচ্ছে করে কেউ মেরেছে আর স্ট্রোকের নাম দিয়েছে এখন তো মনে হচ্ছে আপনিও তার সাথে জরিয়ে ছিলেন।”

“মেঘ এবার কিন্তু তুমি তোমার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছো।”

“মেঘের মাত্রা অলওয়েজ ছাড়াই থাকে। কিন্তু আমি যা বললাম তা অসম্ভব কিছু নয় যে নাতিকে মারার আশংকার কথা জেনেও আকাশ মাহমুদের সহজেই কাজ হাসিল করার জন্য বাড়িতে আনতে পারে ,তার কাছে একরম টা খুব একটা কঠিন কিছু নয়। ”

শেফালী খানের চোখ আরও কঠিন হয়ে উঠলো। তা মেঘ ভালোমতোই দেখতে পেল। তখনি বাড়ির ডোলবেল বেজে উঠলো। কাজের মহিলা দরজা খুলে দিল তখন ঢুকলো জনাব মোঃ আব্দুল কাদের যে নাকি এহসান খানের একজন বিজনেস পার্টনার। মেঘ ড্রয়িংরুম থেকে ওনাকে দেখে একপ্রকার চমকে উঠলো। কিন্তু মেঘ বুঝতে পারলো না। উনি মেঘদের দিকে এগিয়ে গেল। মেঘ ওনাকে দেখে বলল,,

“আরে কাদের আংকেল আপনি এখানে?”

লোকটা বোধহয় মেঘের কথায় থতমত খেয়ে গেল। শেফালী খান ও ভয় পেয়ে গেল। কাদের বলল,,

‘তুমি কে তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।”

“কালকেই তো পরিচয় হলো আমি ধূসর এর ওয়াইফ এহসান খানের নতুন বউমা মেঘ।”

“ওহ আচ্ছা বুঝতে পারি নি। আর তুমি k.A.Megh না একজন ব্যরিস্টার।”

এ কথাটা শুনে মেঘ অবাক হলো কারন বেশিরভাগ মানুষ মেঘের ব্যারিস্টার নাম শুনলেও তেমন চেনেনা কিন্তু উনি চিনলো কিভাবে? মেঘ বলল,,

“হুম কিন্তু আপনি কিভাবে জানেন?”

‘আরে তুমিই তো রোকনুজ্জামান এর অবৈধ ব্যবসায়ের সব প্রমান এনে দিয়েছিলে। আমি ছিলাম তো কোর্টে ওখানে তোমাকে দেখেছি আমি।”

“কিন্তু সেদিন কোর্টে তো আপনি ছিলেন না। আর আপনি কোর্টে কেন গিয়েছিলেন।

এ কথা শুনে জনাব কাদের থতমত খেল মেঘ যা ওনাকে দেখে যা আন্দাজ করেছিল তা সিওর এ বদলে গেছিল কালকেই আজ এক্সটা সিওর হয়ে গেল। তিনি আমতা আমতা করে বলল,,

“আসলে একটা জমির কাগজ বানাতে গিয়েছিলাম। তখন আমার লয়ার বলল তুমি নাকি খুব ভালো লয়ার অনেকগুলো কেস তুমি সল্ভ করেছো আজ তোমার কেস আছে। তাই আগ্রহ হলো তোমাকে দেখতে তাই চলে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি বোধহয় আমাকে খেয়াল করো নি। আর তাছাড়া আমি তাড়াতাড়ি কোর্ট থেকে বেরিয়েও গিয়েছিলাম।”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“ওহ আচ্ছা! আপনি এখানে না মানে আমার জানামতে আপনি এই বাড়ির কেউ না।”

“কিন্তু আমিই এ বাড়ির সব বলতে পারো এখানে আমার কথাই চলে?”

“মানে বুঝলাম না!”

“আমি শেফালী খানের কারেন্ট হাজবেন্ড!”

এ কথা শুনে মেঘ বোধহয় ঝটকা গেল। ও অবাক চোখে শেফালী খান আর কাদের এর দিকে তাকালো। মেঘের মাথায় নানা কিছু ঘুরতে লাগলো। ও নিজেকে সামলিয়ে নিল। ও কিছু বলবে তখন কাদের বলল,,

“তুমি যতো বড় ব্যারিস্টারই হও না কেন এ বাড়ির রক্তকে তোমার কাছে রাখতে পারবে না। কারন আমি কিছুতেই এটা হতে দেব না। আর মাত্র তিনদিন তারপরেই তো কেস কোর্টে উঠবে। তাছাড়া তোমার বান্ধবী তো মরেই গেছে তুমি প্রমান পাবে কোথায় আকাশ খুনী ও নীলকে মারতে চায়। আর তুমি কোনদিন প্রমান ও করতে পারবে না আকাশ খুনী। আর এই সব সম্পত্তি আমাদের হবে বুঝতে পারলে মানে আকাশের হবে সব‌।এখন যা হচ্ছে সব আমার প্ল্যান করা আমি জানতাম তুমি ব্যারিস্টার তাই তোমার আইন দিয়েই তোমাকে মাত করবো বুঝতে পারলে।

মেঘ হাসলো কেন যেন তার খুব হাসি পেল। কিন্তু নিকাবের আড়ালে দেখে সামনের মানুষগুলো দেখতে পেল না। মেঘ নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“তারমানে আপনি সব জানেন?”

“হুম জানি তো আর আমি আমার আকাশ কে আমার ছেলের মতোই দেখি। আকাশ ও আমাকে বাবার মতোই দেখে!

তখন মেঘ বলল,,

“ছেলের মতোই না ছেলে! যাই হোক আপনারা যে নোংরা খেলায় নেমেছেন তাতে সেই খেলায় আপনি জিততে পারবেন না আব্দুল কাদের।”

“সেটা দেখা যাবে তবে তোমাকে কিছুতেই আমি জিততে দেব না। তার জন্য যা করতে হয় তাই করবো।

মেঘ কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে গেল। মেঘের মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খেতে লাগলো। তবে মুখে হাসির রেশ ও রয়েছে এখানে এসে যে তার লাভ বই লোকসান হয় নি। সে খুশি মনে বাড়িতে চলে গেল। বিকেলে ধূসরের সাথে মেঘ সবার থেকে বিদায় নিয়ে নীলকে নিয়ে চলে গেল। আয়মান চৌধুরী আর আজানের বেশ মন খারাপ হলো কিন্তু মেঘের কথা ভেবে আয়মান চৌধুরী খুশি মুখেই মেয়েকে বিদায় দিল। অতঃপর খান বাড়িতে যেতেই রিম ঝিম দৌড়ে মেঘের কোলে উঠে পরলো মেঘ হেসে তাদের কোলে নিল। তা দেখে নীল একটু ধমকে বলল,,

“এই তোমরা দুজন নামো আমার আম্মুর কষ্ট হচ্ছে না। তোমরা দুজন একসাথে আমার আম্মুর কোলে উঠেছো কেন? নামো বলছি নামো।”

নীলের ধমকে সবাই চমকে নীলের দিকে তাকালো। মেঘ হাসলো আর বলল,,

“নীলবাবু এমন করছো কেন? এরাও তো আমার মেয়ে বুঝেছো! তাছাড়া তোমার আম্মুর কষ্ট হচ্ছে না। ”

এ কথা শুনে নীলের কি হলো বোঝা গেল না। নীল গিয়ে রোহিনীর কাছে গিয়ে বলল,,,

“আমাকে কোলে নাও বড় মা। আর হ্যা ওরা যতক্ষন আম্মুর কোলে থাকবে আমিও তোমার কোলে থাকবো।”

সবাই বোঝার চেষ্টা করলো আসলে নীল চাইছে টা কি। শুধু মেঘ বুঝতে পারলো নীলের জেলাসি। রোহিনী নীলকে কোলে নিল ।তারপর নীল বলল,,

“আমাকে একটা হামি দাও তো গালে?”

রোহিনী অবাক চোখে নীলের দিকে তাকালো। রোহিনী কিছু বলছে না দেখে নীল আবার বললো,,

“তুমি আমায় ভালো বাসো না বড় মা? আমি তোমায় কতো সুন্দর করে বড় মা ডাকি তুমি একটা হামি দিতে পারছো না।”

রোহিনী হেসে নীলের গালে একটা চুমু দিল। তখন রিম ঝিম দু’জনে তাড়াতাড়ি করে মেঘের কোলে থেকে নেমে বলল,,

“মা তুমি ওকে আদর করলে কেন?”

নীল হেসে বলল,,

“নাও বড় মা এবার নামিয়ে দাও। ওরা নেমে গেছে।”

নীল নেমে গেল ধূসরের কাছে। ও বলল,,

“আব্বু চলো আমরা ওপরে যাই!”

তখন রিমঝিম বলল,,

“তুমি ওকে আদর করলে কেন ?এবার আমাদের কেও আদর দাও।”

বলেই দুই মেয়ে রোহিনীর কোলে উঠে পরলো। রোহিনী বেচারি কি হলো বুঝতে পারল না। মেঘ এবার একটু জোরেই হেসে উঠলো। বাকিরা কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। তখন ধূসর বলল,,

“তুমি এভাবে হাসছো কেন?”

তখন মেঘ হেসে বলল,,,

“নীলবাবুর জেলাসি দেখে। আমার কোলে অন্য বাচ্চা তার ওঠা পছন্দ নয় এমন কি বিড়ালের বাচ্চাও। রিমঝিম আমার কোলে উঠলো দেখে আমাদের নীলবাবুর জেলাসি হয়েছে তাই ওদের বোঝালো কিভাবে নিজের মা তাদের সামনে অন্য কাউকে আদর করলে কেমন লাগে। মূলত সে আমার কোলে অন্য বাচ্চাদের দেখতেই পারে না। একবার কি হয়েছে জানেন পাশের ফ্ল্যাটের একটা বিড়ালের বাচ্চা আমার ফ্ল্যাটে এসে আমার কোলে উঠে পরেছিল আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম নীল বলার পরও থামাই নি। তাই ও রেগে বিড়াল টাকে ধরে নিয়ে ঐ ফ্ল্যাটে দিয়ে এসেছিল আর বলেছিল ঐ বিড়াল যাতে আমাদের ফ্ল্যাটে না যায়। তারপর থেকে ঐ বিড়ালকে দেখে ও এমন লুক দিতো মনে হয় খেয়েই ফেলবে।”

মেঘের কথা শুনে সবাই হাসলো তখন মেঘ নীলের সামনে বসে বলল,,

“রিমঝিম তোমার কি হয় ?”

“আমি ওদের বোন বানিয়েছি তো!

“তার মানে তোমরা ভাইবোন তুমি জানো মায়েরা সবসময় ভাইবোন কে একইরকম ভালোবাসে। তবে তুমি ওদের বড় না ওরা তো ছোট ওরা তো কোলে উঠবেই। তুমি ওদের বড় ভাই তাহলে তোমার ওদের কে খুশি রাখতে হবে না। এটা তোমার দায়িত্ব বুঝলে ওরা আমার কোলে উঠলে ওদের ভালো লাগে ওরা খুশি হয়। তাহলে তুমি কি ওদের খুশি করবে না?”

নীল একবার রিমঝিমের দিকে তাকালো আবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“হ্যা করবো কিন্তু ওদের কে বলবে একটু একটু করে যেন তোমার কোলে থাকে।”

“এই তো আমাদের ভালো নীলবাবু এখন চলো ওপরে যাই ফ্রেশ হতে হবে তো।”

মেঘ হেসে নীলকে নিয়ে চলে গেল। সবাই মেঘের কথায় মুগ্ধ। হুট করে রোহিনী বলল,,

“ছোট ভাইয়া কপাল গুনে বউ পেয়েছো। যে নাকি অন্যের ভালো লাগে না বলে আরেকজন কে কষ্ট দিবে না। উল্টো দু’জনই যেন খুশি থাকে সেই ব্যবস্থা করবে।”

“কার বউ দেখতে হবে না ভাবি?”

তখন নোলক বলল,,,

“হ্যা হ্যা ধূসর এহসান শুভ্র এর বউ। ছোট ভাবীর একটু ভালো দেখলেই ক্রেডিট নেওয়ার জন্য চলে আসে।”

“এই নোলক তুই চুপ থাক এখন সর ফ্রেশ হয়ে আসি।”

ধূসর হেসে চলে গেল ওপরে। দেখতে দেখতে মেঘের একটা দিন ভালো মতোই চলে গেল খান বাড়িতে। রাতে মেঘ ধূসরকে কাদেরের সম্পর্কে বলেছে। পরের দিন রাত আটটায় খান বাড়ির সবাই ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছিল ধূসর সহ। হুট করে নীল দৌড়ে মেঘের কাছে ফোন নিয়ে এলো কেউ ফোন করেছে মেঘ নাম্বার দেখে তাড়াতাড়ি উঠে দরজার সামনে এলো ফোনটা ধরেই যা শুনলো তাতে ওর চোখে পানি এসে গেল সেটা সুখের না দুঃখের বোঝা গেল না। তখনি আয়মান চৌধুরী জাবিন,হির আর লিয়াকে সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখা গেল। খান বাড়ির কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। সকলে ওদের দেখে দাঁড়িয়ে পরেছে ওরা এই সময় এই বাড়িতে কেন? তাও না জানিয়ে!

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে