ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-৩১+৩২

0
972

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

এইটুকু বলে মেঘ শেষ করলো। মেঘের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। নিকাবের নিচে দেখে হয়তো তেমন কেউ বুঝতে পারছে না। সবার চোখেই নিলীর পরিনতির কথা শুনে চোখ ছলছল করছে।আয়মান চৌধুরী মেয়েকে আগলে নিল। ধূসর এসে হাঁটু গেড়ে মেঘের সামনে বসে মেঘের হাত ধরে বলল,,,

“সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলে তাই না। সরি আমি তোমার পাশে থাকতে পারি নি।তবে এরপর থেকে দেখবে সবসময় তোমার পাশে থাকবো।”

মেঘ নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“আপনারা থাকুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

মেঘ উঠে দাঁড়ালো সবাই বুঝতে পারলো কষ্ট না দেখানোর চেষ্টা। মেঘ তাড়াতাড়ি ওপরে চলে গেল।

“আব্বা নীলিমা নামক মেয়েটি কি সেদিনই মারা গিয়েছিল।”

হঠাৎ করেই ধূসর অনুভব করছে ওর ঠোঁট কাঁপছে তাই প্রশ্নটা করতে গিয়েও আর করা হলো না। ও একটা ঢুক গিলল। দিশান এহসান খান আর দিলরুবা খানমের হুট করেই ভিশন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মেঘের কথা রাখতেই দিলরুবা খানম এসেছিলেন সবার সাথে। এসে এরকম একটা পরিস্থিতিতে পরবে সেটা বোধহয় ভাবতে পারেন নি। হুট করে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ধূসর এর আগে তোমার সামনে বলেছিলাম না মেঘের তিন সত্তা একটা হলো আমার মেয়ে একজন যোদ্ধা যে আমার শত্রুর পক্ষে সবসময় নিরব যুদ্ধ করেছে। আরেকটা তোমার সামনে থাকে। আর তিন নাম্বার হলো মেঘের মা সত্তা। এর আগে যখন তোমার আমার বিদেশে দেখা হয়েছিল তখন বলেছিলে না মেঘ আগের মতো হাসেনা কেন আরো গম্ভীর কিভাবে হলো। আসলে নীলির সেই ঘটনার পর আমার মেয়েটা হাসতে ভুলে গেছিল। তারওপর নীলের চিন্তা ওর মা হয়ে ওঠা। নীলের একটু সমস্যা ছিল সেটার জন্য টাকার দরকার হতো। তাই মেঘ নীলদের জন্য সেই শোরুম টা খুলেছিল যাতে আমার থেকে টাকা না নিতে হয়। এমনকি মেয়েটা নীলের দেখাশোনা আর শোরুম নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিল যে দু বছর ঈদেও মেয়েটা ফ্ল্যাট থেকে বাড়ি আসতো না। আমি গিয়ে দেখা করতাম ওর সাথে প্রায়ই। বাড়ির আগের পরিস্থিতি তো জানোই কেউ মেঘের খোঁজ নেয় নি কেউ প্রয়োজনই মনে করেনি। বোঝা তো মেঘ একা একা উঠাচ্ছিল। সাথে যোগ দিয়েছিল মেঘের তিন বান্ধবী। মেঘ মাঝে মাঝেই মাঝরাতে চিৎকার করে কাঁদতো ওর বন্ধুরা ছাড়া কেউ দেখেনি সে কান্না। সেদিন যখন আশরাফ এলো আমি জাবিনদের ডেকেছিলাম কেন? কারন সেই দিনটাই ছিল নীলির সাথে ঘটা সেই দিন। মেঘ সেদিন সারাদিন একা একা থাকে কি করে কেউ জানে না। হয়তো নীলির স্মৃতি মনে করে সারাদিন কাটিয়ে দেয়। সারাদিন বাইরে কাটিয়ে রাতে এসে নীলকে জরিয়ে ধরে বসে থাকতো।কারন নীলি মেঘের কাছে কি সেটা মেঘ ছাড়া আর কেউ জানেনা। নীলিমা শুধু মেঘের বন্ধুই ছিল না বরং ওর বোন সাথে ওর মাও ছিল। ওরা ছিল একেঅপরের সেরা বন্ধু। তোমার সামনে ও ঐ কষ্ট দেখাতে পারতো না তাই তোমাকে সেদিন যেতে দিই নি। তোমার প্রশ্ন থাকতেই পারে তোমাকে কেন জানায় নি। ও তোমাকে জানাতো কিন্তু তার আগে মেঘ জানতে পারে আকাশের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে। যদি তোমাকে জানায় তাহলে তোমার মাধ্যমে নীলকে ধরতে পারবে আকাশ। তাই তোমাকে বলে নি। তবে সে নীলকে নিয়ে সবসময় ভয়ে থাকতো সবার থেকে লুকিয়ে রাখতো। যেদিন আশরাফ দের কেস জিতলো মেঘ ফোন পেয়ে চলে গেল কেন জানো নীল দোলনা থেকে পরে হাত কেটে ফেলেছিল তাই। মেঘ সবসময় চায় নীল যেন ভালো থাকে ওর মুখের হাঁসি যেন সবসময় থাকে। এই কারনে নীলের সামনে মেঘ কখনো মন খারাপ করে না। নীলের সামনে মেঘের থেকে সুখী কেউ নেই। নীল ও মেঘকে ছাড়া কিছুই বুঝে না মেঘকে খুব ভালোবাসে তাই তো আম্মু বলে। মেঘের পড়াশোনা শেষ করে যখন ও বাড়ি আসে তখন ও প্রতিদিন নিয়ম করে নীলের সাথে দেখা করতো। ও নিজেই জানে না নীল ওর কাছে কি শুধু জানে নীলের কিছু হলে ও জিন্দা লাশ হয়ে যাবে।”

আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে মায়মুনা চৌধুরী কাঁদতে লাগলো তার মেয়েটা এতো কষ্ট করেছে অথচ তিনি জানার প্রয়োজনই মনে করেন নি। উল্টো বাড়ি না আসার জন্য ঢং বলে অবজ্ঞা করেছে। সবার চোখেই পানি চলে এসেছে। একটা মেয়ে কি করে একা একা এত কষ্ট সহ্য করতে পারে। ধূসরের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। একটু আগেই বিয়ে বাড়িটা উৎসব মুখর ছিল হুট করেই যেন শোকসভায় পড়িনত হয়েছে।

______________

ওদিকে হির নীলকে ফ্রেশ করিয়ে বিছানায় বসিয়ে চুল ঠিক করে দিচ্ছিল সেই সময় মেঘ গিয়ে নীলকে জরিয়ে ধরলো। নীল ও তার আম্মুকে জরিয়ে ধরলো। হুট করে নীল বলল,,

“আম্মু আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান চলছে আমি কি এই পুরোনো টি শার্টেই থাকবো তুমি আমার জন্য নতুন জামা কিনো নি? আচ্ছা তোমার বাড়ি কি আমার জামা আছে?

নীলের কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

“নীলবাবু তুমি জানো তোমার জন্য আমি অনেক সুন্দর দেখে একটা সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা কোটি কিনেছিলাম কিন্তু তোমাকে দেওয়া হয় নি। সবাই নতুন জামা পরবে তুমি কি পুরোনো জামা পরেই থাকবে এটা তো তোমার আম্মু হতে দিতে পারে না তাইনা।”

‘ইয়েই আমি নতুন জামা পড়বো।”

মেঘ ওয়ারড্রপ থেকে একটা প্যাকেট বের করে হিরের হাতে দিয়ে বলল,,

“তুই পড়িয়ে দে আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।”

“এটা কবে কিনলি?”

“ধূসরের জন্য পান্জাবি কিনতে গিয়েছিলাম সেদিন ছোট পাঞ্জাবিটা দেখে নীলের জন্যও সেইম সবকিছু কিনেছিলাম। দেব দেব করে দেওয়া হয়ে উঠেনি তারপর আমার ঐ অবস্থা হলো ভুলেই গিয়েছিলাম। নীলের কথায় মনে পড়লো।”

বলেই মেঘ নিকাব খুলে হাত মুখ ধুয়ে এলো। ততক্ষনে হির নীলকে রেডি করে দিয়েছে। মেঘ আসতেই নীল বলল,,

“আম্মু দেখো আমাকে একদম আব্বুর মতো লাগছে সেইম সেইম!”

মেঘ হেসে বলল,,

“হুম লাগছে তো নীলবাবু।”

মেঘ টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে নীলকে কোলে নিয়ে হাটা ধরলো আর বলল,,

‘তো চলো নীলবাবু এখন নিচে যাওয়া যাক। সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

“আজকে কিসের অনুষ্ঠান ছিল আম্মু!”

তখন হির বলল,

“আজকে তোমার আম্মুর আবার বিয়ে হচ্ছিল আজ তোমার আব্বু তোমার আম্মুকে তার বাড়ি নিয়ে যাবে।”

তখন নীল বলল,

“তাহলে আমি কোথায় থাকবো? হিরু মামনির সাথে নাকি আম্মুর সাথে!”

তখন মেঘ বলল,,

‘আমরা পাঁচজন মিলে মিটিং করে তারপর দেখবো কোথায় তুমি থাকবে। তবে হ্যা এবার আমার সাথে থাকার চান্স বেশি।”

‘যদি তোমার সাথে থাকি তাহলে হিরু মামনির সাথে কে থাকবে হিরু মামনি তো একা থাকতে ভয় পায়। আমি ছিলাম বলে এতদিন ভয় পেতো না আমি চলে গেলে হিরু মামনিতো ভয়ে ঘর থেকেই বের হবে না।”

এ কথা শুনে মেঘ হাসলো সাথে হির ও ।হির বলল,,

“হ্যা তাইতো নীলের কথার দম আছে আমি তো ভয়ই পাই সে তো ভয় পায় না। এইজন্য ওয়াশরুমে যেতে গেলে হিরু মামনি বলে চিল্লাচিল্লি করে।”

“আরে মামনি আমি তো চিল্লাচিল্লি করে তোমাকে শোনাই যাতে তুমি মনে করো তুমি একা বাসায় নেই আমিও তোমার সাথে আছি। ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই।”

মেঘ এবার জোরেই হাসলো ওরা নিচে চলে এসেছে কথা বলতে বলতে কিন্তু ওদের মনে হয় খেয়াল নেই। বাকি সবাই অবাক চোখে মেঘের হাসি দেখছে। মেঘ হাসি থামিয়ে বলল,,

“নীলবাবু চিন্তা করো না তোমার হিরু মামনিকেও তাড়াতাড়ি একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেব। যাতে একা থাকতে না হয়।”

“ঠিক বলেছো আম্মু।”

বলেই দুজনে হাসলো। হির নীলের গাল টিপে বলল,,

“ওরে পাকা ছেলে !”

তখন ধূসর বলল,,

“কি নিয়ে হাসাহাসি করা হচ্ছে তোমাদের আমাদেরকেও বলো আমরাও শুনি।

তখন মেঘ বলল,,

“তেমন কিছু না।”

ধূসর এসে নীলকে কোলে নিল আর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ আমার বাবাটাকে তো এই শুভ্র রঙে অনেক সুন্দর লাগছে।”

“আম্মু কিনে দিয়েছে না আর আম্মুর চয়েজ অলঅয়ে আলওয়ে আম্মু কি যেন বলো না।’

নীলের কথা বলার ভঙ্গি তবে সবার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল।মেঘ হেসে বলল,,

“ওটা অলওয়েজ হবে।”

“হ্যা ওটাই অলওয়েজ বেস্ট। এটা আম্মুর কাছেই ছিল আমাকে দিতে চেয়েছিল কিন্তু দেওয়া হয়ে উঠেনি তাই আজকে পড়িয়ে দিল।”

তখন এহসান খান বলল,,

“তো বাকিটা এখন সেরে ফেলা যাক। যদিও না করলেও হবে বিয়েটা আগেই হয়েছে এখন শুধু ধূসরের ইচ্ছের জন্য।”

তখন ধূসর বলল,,

“তো মিসেস এখন তো কোথাও যেতে হবে না। তো কবুল টা বলে ফেলুন।”

মেঘ হেসে মাথা নাড়ালো। ওরা আবার আগের মতো বসলো হুট করেই পরিবেশ টা আবার উৎসব মুখর হয়ে উঠলো। ধূসর নীলকে কোলে নিয়ে বসে আছে অতঃপর মেঘ কবুল বলে দিল সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে মোনাজাত করলো। তখন নীল মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,

“আম্মু খুদা লাগছে।’

“আচ্ছা এক মিনিট বসো আমি আনার ব্যবস্থা করছি। এই লিয়া?”

“হ্যা বল !”

“নীলের জন্য খাবার নিয়ে আয় ওর খুদা লাগছে!”

“আনছি!”

সবাই আগেই খেয়েছে তাই এখন আর কেউ খাবে না। লিয়া খাবার আনতেই মেঘ হাত ধুয়ে ওকে খায়িয়ে দিতে লাগলো। তখন ধূসর ওদের পাশে বসলো আর ওদের দেখতে লাগলো। ধূসরের নীলকে খুব আপন লাগছে। ও মুগ্ধ চোখে মেঘ আর নীলকে দেখতে লাগলো। খাওয়া শেষ হলে তখন এহসান খান বলল,,

“হয়েছে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন এখন তো আয়মান মেয়েকে বিদায় দিতে হবে।”

হুট করেই এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী আর মেঘের বুকটা চমকে উঠলো। মেঘ ওর আব্বার দিকে তাকালো আর উনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। আয়মান চৌধুরী মেয়ের দিকে এগিয়ে এলেন ওনার চোখ ছলছল করছে।মেঘ এক দৃষ্টিতে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ আয়মান চৌধুরীর মুখোমুখি দাঁড়ালো আর বলল,,

“আম্মা!”

মেঘ আয়মান চৌধুরী কে জরিয়ে ধরে বলল,,

“আব্বা একদম কাঁদবেন না। মুন আপুর বিয়েতে আজানকে কি বলেছিলাম আপনার মনে আছে। এটা আমাদের সাময়িক বিচ্ছেদ আব্বা। আমাদের একেবারে বিচ্ছেদ নয় তাহলে আপনার চোখে পানি কেন আব্বা। আপনি জানেন না আপনার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না। আমার জন্য একদম কাঁদবেন না আপনি। যখনি আমাকে মনে পরবে আপনি আমায় ফোন দিবেন আমরা কথা বলবো যখন আপনার আমাকে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করতে ইচ্ছে করবে আমি যদি আপনার কাছে না থাকি তাহলে ফোন দেবেন আমাকে আমি খোলা আকাশের নিচে চলে যাব। দুজন দুই প্রান্তে থেকেও আমরা অনুভব করবো আমরা একেঅপরের সাথে আছি একই চাদ দেখছি। যখন আপনার আমার কাঁধে মাথা রাখতে ইচ্ছে হবে তখন চোখ বন্ধ করে ভাববেন আমি আপনার পাশেই আছি।”

আয়মান চৌধুরী মেয়েকে আগলে বলল,,

“আপনি তো আমারটা বললেন আম্মা আপনি কি করবেন? যখন আমাকে আপনার মনে পরবে।”

“আপনাকে যা বললাম আমিও তাই করবো আব্বা।”

আয়মান চৌধুরী মেয়েকে ছেড়ে কপালে চুমু খেলো। আর বলল,,

“আমি একদম কাঁদবো না আম্মা আপনাকে আমি হাঁসি মুখেই বিদায় দেব।’

সকলে এই অদ্ভুত বাবা মেয়ের সম্পর্ক দেখে মুগ্ধ। হয়তো এই প্রথম কোন মেয়ে না কেঁদে বাবাকে শান্তনা দিচ্ছে না কাঁদার জন্য। আয়মান চৌধুরী মেঘের হাত ধূসরের হাতে দিয়ে বলল,,

“আমি জানি আমার কিছুই বলতে হবে না। তোমাকে ধূসর। তুমি জানো মেঘ কেমন আর ওর কিসের প্রয়োজন। শুধু বলবো নিজেদের খেয়াল রেখো।”

এক এক করে মেঘ সবাইকেই জরিয়ে ধরলো। শুধু মায়মুনা চৌধুরী কে ছাড়া ও শুধুমাত্র তার সামনে গিয়ে বলল “আসছি;” ব্যস এইটুকুই। আর আজান সে তো অন্য লেভেলের তাকে বুঝিয়েও লাভ হয় নি। সে মেঘকে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। ভাইয়ের এত ভালোবাসা দেখে মেঘের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। মেঘ তাড়াতাড়ি সেটা মুছে ফেললো। নীল তো হা করে সবাইকে দেখে যাচ্ছে। আপাতত সে ইশানের কোলে অবস্থান করছে। মেঘের তিন বান্ধবীর কোন হেলদোল নেই। তা দেখে ইশান জাবিনদের কাছে গিয়ে বলল,,

“বান্ধবীর বিদায় হচ্ছে তোমরা তিনজন কাঁদছো না কেন?”

তখন হির বলল,,

“ইশান ভাইয়া আমরা কাঁদবো কোন দুঃখে যেখানে কিনা আমার বান্ধবীই কাঁদছে না আজব কথাবার্তা বলছেন তো আপনি।’

তখন জাবিন বলল,,

“একদম ঠিক তাছাড়া ও কি আমাদের ছেড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পারি দিচ্ছে নাকি আজাইরা একদম চুপ থাকুন।’

তখন লিয়া বলল,,

“ওরা দুজন একদম ঠিক বলেছে ইশান ভাইয়া।”

তখন ফাহিম পেছন থেকে বলল,,

“কি নিষ্ঠুর তোমরা!”

তখন তিনজনেই এক সাথে বলল,,

“হুম আমরা নিষ্ঠুর কারন নিষ্ঠুর মেয়েটার বান্ধবী আমরা।”

তিনজনে এমন ভাবে একসাথে বলল যে সবাই ওদের দিকে তাকালো। ইশান আর ফাহিম তাদের বউ আর শালিদের কর্মকান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মেঘ এবার এসে ওদের তিনজন কে একসাথে জরিয়ে ধরলো। ওরা আজকের জন্য শুভকামনা জানালো। তখন হির বলল,,

“যাক বাবা মেঘ তোরটাও ডান। এখন তাড়াতাড়ি আমার একটা হিল্লে করে ফেল। বয়স তো হলো বুড়ি হয়ে যাচ্ছি। সব কিন্তু তোদের দায়িত্ব!”

তখন লিয়া হেসে বলল,,

‘হয়ে যাবে বান্ধবী নট টেনশন। দ্যাখ বিয়ে বাড়িতেই কত ব্যাচেলর ছেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটাকে ধরে করলেই হয়।”

মেঘরা চার বান্ধবী হাসলো এটা নিয়ে। তখন ধূসর কাছে এসে বলল,,

“তো মিসেস এবার যাওয়া যাক।”

মেঘ আস্তে করে বলল,,

“হুম!”

তখন ধূসর ইশানের থেকে নীলকে কোলে নিয়ে বলল,,

“তো নীলবাবু এবার আব্বুর সাথে আব্বুর বাড়ি যাওয়া যাক।”

মেঘ অবাক চোখে ধূসরকে দেখছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তুমিই না বলেছো আমার সাথে নীলের দেখা হলে আমরা একসাথে থাকবো। তাহলে তাছাড়া আমাদের সাথে জাবিন,হির আর লিয়াও যাচ্ছে।”

“ওহ আচ্ছা!”

মেঘ শেষ বারের মতো আয়মান চৌধুরীর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো। ধূসর ও উঠলো। নীল যাবে হিরদের সাথে। গাড়ি চলতে শুরু করল। ধূসর মেঘকে একহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বলল,,

“মেয়ে তুমি এতো ভালো কেন?”

মেঘ কিছু বললো না। তখন ধূসর আবার বলল,,

“মন খারাপ লাগছে নাকি এখন?”

মেঘ ছোট করে জবাব দিলো,,

“না!”

“শুনো মেয়ে তোমাকে আমি বেশ ভালো করেই জানি এবং চিনি। তুমি ওপরে যতই শক্ত দেখাও ভেতরটা ততই নরম। তুমি যে তোমার আব্বাকে কাঁদতে বারন করলে আর নিজেও কাঁদলে না এর কারণ শুধু তুমি তোমার আব্বার কান্না না তোমার আব্বাও তোমার কান্না সহ্য করতে পারে না। তুমি কাঁদলে সে আরো অসহায় বোধ করতো আরো ভেঙে পরতো। কারন তুমিই তোমার আব্বার শক্তি আর সাহস।”

“আপনি আমায় এতো বুঝেন কেন ধূসর। আপনি সবকিছু মুহুর্তেই বুঝে ফেলেন আজ এতকিছু হলো একবার ও আমাকে ভুল বুঝলেন না। আবার আমার জন্য একজনকে খুব বাজে ভাবে মারলেন।”

“তোমায় আমি ভালোবাসি মেঘ অন্যের কথায় আমি তো তোমার দিকে আঙুল তুলতে পারি না যদি কারনটা মিথ্যা হয়। তাছাড়া ও তোমার গায়ে হাত তুলেছে ওর সাহস হলো কি করে, তোমার গায়ে হাত দেওয়ার তাই মেরেছি তাই বলা চলে ওর ভাগ্য ভালো। তাছাড়া আমি তোমাকে বেশ ভালোভাবেই চিনি ।এখনকার সময়ে আমরা অন্যের কথায় বিশ্বাস করে অনেক সুন্দর সম্পর্কগুলো নষ্ট করে দিই। তখন এটা ভাবি না সামনের মানুষটাকে আমি চিনি ভালোমতো, তাকে ভালোবাসি ব্যস অন্যের কথায় তাকে দোষ দিয়ে আমার জীবন থেকে বের করে দিই। আমাদের সকলের উচিত আমাদের সামনের মানুষটা কে আগে বিশ্বাস করা তারপর ঠিক বেঠিক অনুসন্ধান করা তারপরে যদি সে ভুল প্রমানিত হয় তাহলে তখন আমরা তাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আসতে পারি।এসব বাদ দাও!

‘হুম! ধন্যবাদ আমাকে এতটা ভরসা বিশ্বাস করার জন্য। সবথেকে বড় কথা আমাকে এতটা ভালোবাসার জন্য।”

ধূসর হাসলো আর বলল,

“তুমি জানো যে নিষ্ঠুর মেয়েটা আমায় ভালোবাসি বলে না। সেই নিষ্ঠুর মেয়েটা আজ সবার সামনে জরিয়ে ধরে ভালোবাসি বলছে। আমার তো তখন মনে হচ্ছিল হাওয়ায় ভাসছিলাম।”

মেঘ হেসে বলল,,

“আপনি এমন কেন ধূসর?”

‘কেমন!”

“সুইট আর কিউট!”

ধূসর হাসলো প্রশান্তিময় হাসি। ও মেঘকে জ্বালাতে বলল,,

” মাই ডিয়ার ওয়াইফি থ্যাঙ্কস ফর দি কমপ্লিমেন্ট। তো বলেন হানিমুনে কোথায় যেতে চান?”

মেঘ লজ্জা পেল কিন্তু লজ্জা কে প্রশ্রয় না দিয়ে বলল,,

“ছয় বছর হয়েছে আমাদের বিয়ের এর মাঝে আমরা অনেক জায়গায় ঘুরেছি এর মধ্যে হানিমুন আসছে কোথা থেকে আমরা কোথাও যাচ্ছি না।”

“এটা বললে তো হবে না আমরা আজ বিয়ে করলাম বুঝেছো আগে যা হয়েছে সব ভুলে যাও। আমরা হলাম নিউ ম্যারিড কাপল।”

“নিউ ম্যারিড কাপল!”

বলেই মেঘ হাসলো তা দেখে ধূসর মুগ্ধ চোখে মেঘের হাসি দেখতে লাগলো। আর মনে মনে বলল,,

“মেঘবালিকা এভাবেই সবসময় তোমাকে হাসিখুশি রাখবো যাতে পুরোনো সব তিক্ত স্মৃতি তোমার মন ও মস্তিষ্ক থেকে মুছে যায়।

মেঘ দেখলো ধূসর ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা দেখে ও হাঁসি থামিয়ে বলল,,

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

“তুমি এতো সুন্দর কেন বউ! ইস কি সুন্দর তোমার হাসি একদম বুকে গিয়ে লাগে।”

” এখন রাখুন! এতো ড্রামা করেন আপনি!”

“এই যে আমি একটু আমার বউয়ের প্রশংসা করি তোমার সহ্য হয় না, নিষ্ঠুর মেয়ে একটা সবসময় বাগড়া দেওয়ার জন্য রেডি হয়ে থাকে।”

“আপনার এরকম কথা কিন্তু আমার দারুন লাগে।”

ধূসর কিছু বলবে তার আগেই গাড়ি থেমে গেল ও চারদিকে তাকিয়ে দেখলো বাড়ি পৌঁছে গেছে।তাই ও বলল,,

‘হয়েছে দেখো তোমার শুশুরবাড়ি পৌঁছে গেছি গাড়ি থেকে নেমে পড়ো। না থাক আমি নেমে তোমার দরজা খুলে দিচ্ছি।”

বলেই ধূসর নেমে পড়লো। আর নেমে গিয়ে মেঘের সাইডের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিল। মেঘ মুচকি হেসে হাত ধরলো। দরজার সামনে দাঁড়াতেই দিলরুবা খানম বরন করে নিলেন। মেঘকে আগে ফ্রেশ করাতে নিয়ে গেল রোহিনী আর নোলক সাথে মেঘের বান্ধবীরাও গেল। অতঃপর সবাই নীলকে বুঝিয়ে মেঘের বান্ধবীদের কাছে রেখেছে। আপাতত মেঘ বসে আছে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে তার ফুলশয্যার খাটে। খুব সুন্দর করে পুরো ঘরটাকে লালগোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে। মেঘের ভিশন লজ্জা লাগছে যদিও এর আগে এই ঘরে অনেকবার এসেছে কিন্তু আজ পার্মানেন্ট, অনুভূতি অদ্ভুত। বাইরে ইশান, দিশান, নোলক আর রোহিনী দরজা আটকিয়ে রেখেছে ধূসরের সাথে ঘরে ঢোকার টাকা নিয়ে দর কষাকষি হচ্ছে। ইশান তো ঠাস করে বলেই দিল,,

“আহ হা চান্দু ও বাড়িতে তোমার বউয়ের বান্ধবীদের কতো টাকা দিয়ে এলে তখন তোমার টাকা ফুরায় না এখন বন্ধু, ভাই ,ভাবি আর বোনকে টাকা দিতে গিয়ে তোমার টাকা নাই তাই না।”

তখন ধূসর বলল,,

“আমি কি বলেছি আমার টাকা নাই! আমার টাকা আছে আমার রুমের ভেতর মানিব্যাগে যা ছিল সব শেষ ক্যাশ নাই তোরা কার্ড নিতে পারিস। আমার বউয়ের কাছে যেতে যদি তোদের লাখ টাকাও দিতে হয় আমি তাও রাজি।”

এ কথা শুনে সবাই হৈ হৈ করে উঠলো এদিকে মেঘের লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠলো। কি বউ পাগল ছেলেরে বাবা। অতঃপর ধূসর বাইরে সবাইকে ঠান্ডা করে ভেতরে প্রবেশ করলো। আর ঢুকে লাল টুকটুকে লাড়ি পড়িহিতা তার মেঘবালিকা কে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। মেঘ সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম ইয়া ক্বালবি!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম ইয়া হাবিবি! মাশাআল্লাহ আমার অনেক সুন্দর নাম দিয়েছেন বিবি সাহেবা‌।”

মেঘ হাসলো তারপর বললো,,

“ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসুন আমি ওযু করে এসেছি!”

“হুম!”

বলেই ধূসর ওয়াশরুমে ঢুকলো। বিয়ে বাড়ির পোশাক ছেড়ে নরমাল সাদা পাঞ্জাবি পরে বের হলো। মেঘ জায়নামাজ বিছিয়ে ধূসরের টুপি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।এ ঘরের সবকিছুই তার জানা। ধূসর মুচকি হেসে মেঘের থেকে টুপি নিল। তারপর দুজনে একসাথে দু রাকাত নফল সালাত আদায় করে ভবিষ্যতের দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া করলো। সকলের মঙ্গল কামনা করলো। নামাজ শেষে মেঘ জায়নামাজ দুটো গুছিয়ে রেখে বিছানায় বসলো। ধূসর মুচকি হেসে বলল,,

‘দাঁড়াও আরেকবার রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দোয়াটা তোমার মাথায় হাত রেখে পড়ি। যদিও আমাদের আগের বিয়ের রাতে পরেছিলাম।”

মেঘ মুচকি হেসে মাথা এগিয়ে দিল। ধূসর ওর মাথায় হাত রেখে দোয়া পরলো। অতঃপর দু’জনে মুখোমুখি বসলো। ধূসর মেঘের মোহরানা আগেই শোধ করেছিল তাই এখন আর দরকার নেই। ধূসর মেঘের হাত দুটো ধরে বলল,,

“গোলাপের সমারোহে মনের গহীনে চোখের মুগ্ধতায় তুমি আমার একফালি সুখ‌। আমার মেঘবালিকা আমার সারাজীবনের সুখ।

তুমি আমার জীবনের এমন একজন নারী যার প্রতি আমার মুগ্ধতা কখনো হারায় না। তোমার দিকে তাকালে আমার চক্ষুদ্বয় শীতল হয়ে যায়। কেউ একজন বলেছিল সময়ের সাথে মুগ্ধতা হাড়িয়ে যায় আর যখন মুগ্ধতা শেষ হয়ে যায় তখন নাকি বিচ্ছেদ ঘটে। আমি তাদের বলতে চাই মুগ্ধতা সময়ের সাথে শেষ হয় না। বরং সময়ের সাথে ভালোবাসা আর মুগ্ধতা বেড়ে চলে যদি জীবনসঙ্গী সঠিক হয়।”

তখন মেঘ মুগ্ধ চোখে ধূসরের কথা মন দিয়ে শ্রবন করলো। তারপর মুচকি হেসে বলল,,

“ভালোবাসা কি শুধু মুখে ভালোবাসি বলা, তার সাথে ফুচকা খাওয়া ,ফুল দেওয়া ঘুরাঘুরি করা! না ভালোবাসা এটা নয় যদি শুধু এগুলো হয় তাহলে সেই মুগ্ধতা একটা সময় কেটে যাবে ভালোবাসাও মলিন হয়ে যাবে কারন তাদের মাঝে সত্যিকারের ভালোবাসা ছিলই না । ভালোবাসা হলো একেঅপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, একে অপরের প্রতি দায়িত্ব , একে অপরের করা অসংখ্য যত্ন। একে অপরের প্রতি সম্মান , একে অপরের কাছে গুরুত্ব একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী। সবশেষে একে অপরের সবথেকে বিশ্বস্ত বন্ধু। ভালোবাসার কোন শেষ নেই শুধু আছে প্রকাশের ভিন্নতা। মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তার প্রিয়জনকে ভালোবাসে। নাহলে মুখে এতবার নিষ্ঠুর মেয়ে বলেও কেউ এতো ভালোবাসে। আর নিয়ম করে নিয়মিত ভালোবাসি বলে।”

মেঘের এতো মনোমুগ্ধকর কথা আর শেষে ওকে নিয়ে বলা কথা শুনে ধূসর হাসলো। আর বলল,,

“স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া প্রদত্ত সবথেকে সুন্দর সম্পর্ক । সবথেকে বড় কথা উত্তম জীবসঙ্গীর প্রতি কখনো মুগ্ধতা হারায় না। কারন আল্লাহ তায়ালা যে আমাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন। তবে হ্যা তোমার কথা অনুযায়ী স্বামী স্ত্রীর সংসার যে শুধুই ভালোবাসার তা নয় বরং শ্রদ্ধা, দায়িত্ববোধ এবং বোঝাপড়ার এক মিশ্রিত বন্ধন। প্রতিটি সম্পর্কেই কিছু দুঃসময় থাকবে, কিছু মনোমালিন্য থাকবে। হাতের পাঁচ আঙ্গুল তো আর সমান নয়। চিন্তাভাবনার ভিন্নতা কোন খারাপ জিনিস নয়, বরং এটাই আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য।

“হুম! জনাব!

“তুমি জানো আমি আমার ভালোবাসা সবসময় তোমার কাছে প্রকাশ করি কেন?”

“কেন?”

“এখনকার সময়ে স্বামীর ভালোবাসা প্রকাশ এক অন্য মাত্রা এনেছে। স্ত্রীদের প্রতি একটু কেয়ার ভালোবাসা দেখালে তারা উপাধি পায় বউপাগল। এই জন্য অধিকাংশ স্বামী’ই ভাবেন স্ত্রী’র প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে’র কি আছে! সে তো জানেই আমি তাকে ভালোবাসি। সবার সামনে প্রকাশ করে কেন বউ পাগল উপাধি নেব। কিন্তু তারা মানুষের কথা মনে রাখলেও তারা এটা মনে রাখে না। স্ত্রী’র প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ রাসূল (স) সুন্নাহ। তিনি খুদ তার স্ত্রীগনদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন।”

“হুম সেটা তো আছেই কিন্তু ধূসর স্বামীরা ভালোবাসা প্রকাশ করলে বউ পাগল উপাধি পায়। কিন্তু স্ত্রীরা ভালোবাসা প্রকাশ না করলে বুঝি নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি পায় হুম!”

মেঘের কথা শুনে ধূসর হাসলো আর বলল,,

“না সবাই পায় না। কারন কেউ আমার মতো এত সুন্দর করে সাহস করে নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি দিতেই পারবে না। বলা যায় এটা তাদের মাথায়ই আসবে না। এই যুগে সবাই বউকে ভয় পায় কি না।”

“কি বললেন আপনি!”

“আব কিছু না কিছু সত্যি কথা যাই হোক গল্প করেই সারারাত কাটিয়ে দেবেন নাকি ম্যাডাম আজ যে আমাদের নতুন করে আবার ফুলশয্যা।”

কথাটা শুনে মেঘ লজ্জা পেল আর ধূসরের বুকে মাথা লুকালো! ধূসর ও তার মেঘবালিকা কে তার বুকে আগলে নিল।

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

সকালের স্নিগ্ধ মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় ধূসরের। আর চোখ খুলতেই সদ্য গোসল করা হালকা নীল রঙের শাড়ি পরিহিতা তার মেঘবালিকা কে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। মূলত তিনিই পর্দা সরিয়েছেন তার দরুন ধূসরের মুখে মিষ্টি রোদ পরেছে। ধূসর মুগ্ধ হয়ে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলো,,

“মাশাআল্লাহ মনে হচ্ছে নীল একটু টুকরো আকাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে।”

তখন মেঘ ভেজা চুল পেছনে দিয়ে বলল,,

“মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র বিছানা ছেড়ে এখন উঠুন। অনেক বেলা হয়ে গেছে দেখেছেন সূর্য মামাও উঠে পরেছে।”

“শুভ সকাল মাই ডিয়ার ওয়াইফি!”

“শুভ সকাল! এখন তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন ফজরের নামাজ কাযা হয়ে গেছে আমি এখন পরে নিচ্ছি আপনি গোসল করে আসুন।”

“আমার জন্য একটু দাঁড়াও এই পাঁচ মিনিটে গোসল করে আসছি। তারপর একসাথে ফজরের কাযা সালাত আদায় করবো।

“ঠিক আছে!”

ধূসর গেল গোসলে মেঘ ধূসরের জন্য জামাকাপড় বের করলো কারন মশাই জামাকাপড় ছাড়াই চলে গেছে গোসলে এখনি ডাক পরবে। ঠিক পরলোও তাই। মেঘ হেসে জামাকাপড় দিল। কিছুক্ষণ পর ধূসর বের এলো তারপর একসাথে সালাত আদায় করে নিল। সবে সাড়ে ছয়টা বাজে মেঘ নিচে গেল ধূসরের একটা ফোন এলো তাই ও ফোনে কথা বলতে লাগলো। মেঘ নিচে যেতেই দেখলো তার তিন বান্ধবী সোফায় বসে আছে নিচে তেমন কেউ নেই। যেহেতু অনুষ্ঠান হবে না তাই আত্মীয়স্বজন বলতে শুধু ধূসরের মামার বাড়ি। তারাও বোধহয় ওপরে। কারন ধূসরের কোন ফুপি বা কাকা নেই ‌। হয়তো বেশ রাত করে শোবার জন্য ঘুমিয়ে আছে নয়তো এত সকালে নিচে নামছে না। মেঘ কে দেখেই লিয়া মশকরা করে বলল,,

“নতুন বউ এতো সকাল সকাল নিচে ও মাই আল্লাহ ভেজা চুল মাশাআল্লাহ।”

তখন মেঘ বলল,,

“একদম ফাজলামো করবি না।”

“আরে এখন যদি ফাজলামো না করি তাহলে কখন করবো বান্ধবী।”

তখন হির বলল,,

“এই বিয়াত্তারা আমি এখানে আবিত্তা আর সব থেকে বড় কথা আমি ওতো কিছু বুঝি না তাই আপনাগো বড়গো কথা আমার সামনে কইবেন না ঠিক আছে।”

তখন লিয়া বলল,,

“হ আমরা হইলাম বড় আর তুমি কচি খুকি। ঠিক সময় তোর বিয়ে হলে তোর পুলাপাইন স্কুলে যাইতো।”

তখন জাবিন বলল,,

“তোরা চুপ করবি!”

“আহ হা সোনা তোমার তো নতুন নতুন বিয়া হইছে যদি তোমারেও বলি তাই মেঘের টান টানতেছো তাইনা।”

লিয়ার কথায় জাবিন কিছু বলবে তার আগেই মেঘ বলল,,

“তোরা থামবি কি শুরু করছিস আর লিয়া তুই চুপ থাক। আর কিছু বলবি না। যার জন্য এখানে আসতে বলেছি!

তখন হির বলল,,

“হুম বলে ফেল তোর মেসেজ পেয়েই তো এলাম।”

“তোদের মধ্যে কেউ একজন আমার অফিসে যাবি ওখানে আমার এসিস্ট্যান্ট মেয়েটার কাছ থেকে একটা কাগজ নিয়ে আসবি। মেয়েটির সাথে সব কথা হয়েছে কাল রাতে সে সব কিছুর ব্যবস্থা করে ফেলেছে সকালে মেসেজ করে জানিয়েছে যে পেপার রেডি। আমিই যেতাম কিন্তু আমার যাওয়াটা আজ শোভনীয় নয়। কেন যেন মনে হচ্ছে আজ কিছু একটা ঘাপলা তো হবেই তাই প্রি প্ল্যান করা। কালকে আকাশের কথা শুনে মনে হলো সে জেল থেকে খুব তাড়াতাড়ি আর সহজেই বেরিয়ে যাবে তাকে কেউ সাহায্য করছে। আর যতদূর মনে হচ্ছে ও আমাকে অন্যভাবে ফাসাবে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কথাগুলো পরেও বলা যেত কিন্তু সবার সামনে বললে সবাই টেনশন করতো। সবথেকে বেশি ধূসরে। তাই এখন বলে রাখছি।

“কিন্তু কিসের কাগজ!”

“সেটা পরে জানতে পারবি! এখন কে যাবি সেটা তোরা ডিসাইড কর।”

তখন হির বলল,,

“এখানে সবার জামাই আছে আমার নাই তাই আমিই যাইগা।”

তখন জাবিন বলল,,

“তুই কতোভালো হির আমগো মনের কথা বুঝে ফেলছোস।”

“নতুন নতুন বিয়ে করছো না চান্দু জামাই এর কাছাকাছি থাকবা তার খাতির যত্ন করবা তাই না।”

“হইছে থাম বইন তুই আর ড্রামা করিস না যা!”

তখন মেঘ বলল,,

‘আচ্ছা নীল কোথায়? এখনো ঘুম নাকি উঠে পরেছে।”

তখন লিয়া বলল,,

‘ঘুমেই কাল রিম ঝিম এর সাথে অনেকক্ষন খেলেছে আমাকে বললো ওরা নাকি ভাইবোন হয়ে গেছে।”

‘ভাইবোন!”

তখন দিলরুবা খানম ড্রয়িংরুমে আসলো মেঘদের দেখে বলল,,

“আরে মেঘ তোমরা নিচে চলে এসেছো। নতুন বউ নিচে চলে এলো আর আমরা বাড়ির পুরোনো রা এখনো নিচে আসতে পারলাম না।”

তখন মেঘ হেসে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“আহ মা এটা কোন ব্যাপার না। কি রান্না করবেন আমি আপনার হেল্প করে দিচ্ছি চলুন!”

“তোমার আজ করতে হবে না। পরে তোমার শুশুর বলবে আসতে না আসতেই নতুন বউ আসতেই কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।”

“বাবাকে আমি সামলে নেব আপনি চলুন তো! তাছাড়া আমি এই বাড়িতে নতুন না আমি পুরোনোই।”

“না মা আজ ছেড়ে দাও কাল থেকে কোরো তাছাড়া আমার ভাই আর ভাইয়ের বউ তার ছেলে মেয়ে আছে তারা কি বলবে বলো তো।”

তখন ধূসর বলল,,

“তোমার বউমা অন্য কারো ধার ধারে নাকি। ও যা বলে তাই করে থাক করুক তোমাদের সুবিধা হবে। তাছাড়া বউয়ের হাতের রান্না খাবো এটা ভালো না।”

“তুই চুপ থাক ধূসর। একদম কথা বলবি না।

‘আহ মা তুমি কিন্তু আমার বউ আর বউয়ের বান্ধবীদের সামনে আমাকে অপমান করছো।”

‘বেশ করছি অপমান করছি যেই না দুই টা কথা বললাম তোর অপমান হয়ে গেল।”

তখন মেঘ বলল,,

“আহ হা মা কি শুরু করলেন রান্নায় দেরি হয়ে যাবে তো চলুন!”

মেঘের জোরাজুরিতে দিলরুবা খানম বাধ্য হয়ে ওকে নিয়ে কাজ করতে লাগলো। এবাড়িতে সকল রান্না দিলরুবা খানম আর রোহিনী করে। দিলরুবা খানম এর কথা অনুযায়ী আমার ছেলেমেয়েদের মা থাকতে তারা কেন অন্যলোকের রান্না করা খাবার খাবে। কাজের লোক অন্যান্য কাজ করে তাই তাদের সকালে পাওয়া যায় না। কিছুক্ষণ পর রোহিনী এলো আর এসেই মেঘকে দেখে অবাক হলো সে হেঁসে বলল,,

“তা মা আজ পুরোনো এসিস্ট্যান্ট ভুলে নতুন এসিস্ট্যান্ট নিয়েছেন বুঝি। নতুন আসতেই পুরোনোকে ভুলে গেলেন।”

তখন দিলরুবা খানম মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,,

“রোহিনী টেনে মারবো এক চড়। এরকম কথা বললে আর বলো না আমার আগে দেখি মেঘ নিচে এসে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে আমি আসতেই সে বায়না ধরলো সে আমার সাথে রান্না করবে বারবার মানা করেও ফেরাতে পারলাম না। তারওপর তোমার দেওর সে তো বউ পাগল বউ যা বলে তাতেই সায় দেয়।”

দিলরুবা খানম এর কথায় মেঘ লজ্জা পেল। তা দেখে রোহিনী হেসে বলল,,

“আর লজ্জা পেতে হবে না খানবাড়ির সব ছেলেই বউ পাগল তাই না মা। ইভেন আমার শুশুরমশাই ও।”

এ কথা শুনে দিলরুবা খানম লজ্জা পেল। আর মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,,

“হুম অনেক কথা হয়েছে এখন রোহিনী কাজে লেগে পড়ো ঐ কুচি করা আদারসুনগুলো বেটে ফেলো জলদি গরুর মাংসে দিতে হবে। আর মেঘ যাও তোমার জামাই আর বান্ধবীদের কফি দিয়ে এসো। বাকিরা নিচে আসলে তখন দেওয়া যাবে।

এখানের অবস্থা দেখে মেঘ হাসলো সে সত্যিই একটা ভালো পরিবার পেয়েছে যেখানে মন খুলে সবাই সব করতে পারে। ইভেন শাশুড়ির সাথে মজাও করতে পারে। রোহিনী হেসে ঠিক আছে বলে বাটতে লাগলো। মেঘ ও কফি নিয়ে এলো।
এদিকে ধূসর সোফায় বসে আছে। লিয়ারা কিছু নিয়ে কথা বলছে মাঝে মাঝে ধূসর ও কিছু বলছে। মেঘ ওদের কাছে এসে সবাইকে কফি দিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর এক এক করে সবাই নামতে লাগলো। ইশান নীলকে একেবারে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে কোলে করে নিচে আসলো। ও আসতেই ধূসর নীলের সাথে কথা বলতে লাগলো ইশান ধূসরকে পিন্চ মেরে কথা বলতে লাগলো। এদিকে মেঘদের রান্নাও প্রায় শেষ। অতঃপর ব্রেকফাস্ট করার জন্য সবাই টেবিলে বসলো। তখন রোহিনী বলল,,

“আজ কিন্তু মেঘ ও আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে।”

এ কথা শুনে এহসান বলল,,

“কি তোমরা নতুন বউকে দিয়ে কাজ করিয়েছো?”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“সেটা তোমাদের নতুন বউকেই জিজ্ঞেস করো।”

তখন মেঘ বলল,,

“আসলে বাবা ,,”

তখন মেঘের মামি বলল,,

“মেয়ের তো তেমন রুপ নেই তাই কাজ করে সবার মন জয় করার চেষ্টা করছে আর কি!”

কেউ কিছু বলবে তার আগেই ধূসর বলল,,

“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন মামি আমার বউয়ের মন কারো জয় করতে হবে না। কারন মেঘ অনেক আগেই এটা জয় করে নিয়েছে তার ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে। তাছাড়া আমাদের বিয়ে নতুন নয় সেই ছয় বছর হতে চলল আমাদের বিয়ের। এটা আমার বউয়ের সংসার তাই নিজে থেকে আগেই গুছিয়ে নিচ্ছে। আমার বউ তো অন্তত কিছু পারে আপনার মেয়ে তো গুড ফর নাথিং।”

ধূসরের খোঁচা মারা কথায় তিনি চুপ হয়ে গেলেন। ওর মামাতো বোন অপমানে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল তার মা এমন কিছু বলবে ওর মাথায়ই আসেনি। আসলে ধূসরের সাথে তিনি তার মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এই জন্য মেঘকে তার তেমন পছন্দ নয়। ধূসর যেহেতু বললো তাই এটা নিয়ে কেউ কিছু বললো না। মেঘের বান্ধবীরা খুব খুশি। ধূসরের পরিবারের মুখেও হাসি ফুটে উঠল। স্বামী তো এমনই হওয়া উচিত। মেঘ ও মুচকি হাসলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এহসান খান বলল,,

“হুম হয়েছে কোন কথা এবার চুপচাপ খাও সবাই।”

সবাই চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো । নীল বসেছে ধূসরের পাশে তখন নীল বলল,,

“আম্মু খায়িয়ে দাও।”

মেঘ কিছু বলবে তখন ধূসর বলল,,

“আজ আম্মু না বাবা আজ আব্বু তোমায় খায়িয়ে দেবে।”

তখন রিমঝিম বলল,,

“আর আমাদের কে খাওয়াবে না চাচ্চু।”

“আহ হা আমার মিষ্টি বাচ্চারা হ্যা তোমাদের কেও খায়িয়ে দেব। তাহলে বাচ্চাপার্টি চলো আমরা সোফায় যাই। একসাথে তিনজনকে খায়িয়ে দেব।”

রিমঝিম ইয়ে বলে সোফায় চলে গেল। বাকিরা কেউ কিছু বললো না মেঘ ধূসরের ব্যবহারে মুগ্ধ। মেঘ বুঝতে পারল ধূসর নীলকে নিজের ছেলে ভাবতে শুরু করছে। ধূসর ওদের খাওয়াচ্ছে মেঘ মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন রোহিনী পাশে থেকে বলল,,

“এই যা ওদের তো গরুর মাংস দিতেই ভুলে গেছি।”

রোহিনী বাটি নিয়ে ওখানে গেল মেঘের হুস আসলো অতঃপর চার বান্ধবী একসাথে বলে উঠল,,

“নীলকে গরুর মাংস দিবেন না ওর গরুর মাংসে এলার্জি!”

হুট করে এমন হওয়ায় সবাই এক প্রকার চমকে উঠলো। চার বান্ধবী একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো। রোহিনী ভয় পেয়ে গেছিল। তখন ধূসর বলল,,

“ঠিক আছে নীল কে দেব না। তোমরা চার বান্ধবী টেনশন নিও না।

তখন দিলরুবা খানম বলল,,

“তোমরা দেখছি নীলের সবাই বেশ খেয়াল রাখো।”

তখন মেঘ হেসে বলল,,

“আমাদের চারজনের যে একটাই ছেলে তাই। সবথেকে বড় কথা নীলির গরুর মাংসে এলার্জি ছিল সেখান থেকেই নীল পেয়েছে তাই বেশি মনে থাকে।”

দিলরুবা খানম আনমনে বলল,,

“নীলি মানে নীলের মায়ের আমার মেয়ে নীলাশা ওর ও তো গরুর মাংসে এলার্জি ছিল।”

তখন মেঘ বলল,,

“মা কিছু বললেন?”

ওনার হুস আসলো আর বলল,,

“না তেমন কিছু না।”

সবার খাওয়া হয়ে গেছে এবার বসবে দিলরুবা খানম রোহিনী আর মেঘ। ধূসর ও ওদের নীলদের কে খায়িয়ে দিয়েছে। রোহিনী আর দিলরুবা খানম বসে পরলেন। মেঘ হিরকে ডেকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল। হির ওপরে গেল রেডি হতে তারপর মেঘ এসে ড্রাইনিং ধূসরের পাশের চেয়ারে বসলো। কারন সে তখন তিনবাচ্চাকে খায়িয়ে দিয়েছে এখন নিজে খাবে। মেঘ বসতেই ধূসর বলল,,

“বিবি সাহেবা আজকের রান্না অনেক ভালো হয়েছে মাশাআল্লাহ আর তরকারির তো জবাব নেই যেটা তুমি রেঁধেছো।

এ কথা শুনে মেঘ হেসে বলল,,

“হয়েছে জনাব আর প্রশংসা করতে হবে না।”

“আরে আমি তো এক ঢিলে দুই পাখি মারার কাজ করলাম !”

তখন রোহিনী বলল,,

‘যেমন ছোট ভাইয়া?”

“তুমি জানো না ভাবি ‘ স্ত্রীর প্রশংসা করা সুন্নাত। রাসূল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) সবার সেরা, এবং খাদিজা (রাঃ) এর ভালোবাসার প্রশংসা করতেন ———(বুখারীঃ৫২২৯, ৩৪১১)
তাই মেঘের প্রশংসা করলাম বউ ও খুশি হলো আর সুন্নাত পালন করাও হলো।
তো বিবিসাহেবা আজকে কি হয়েছে বলো তো বাচ্চাদের সাথে তোমাকেও খায়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।”

ধূসরের কথা শুনে দিলরুবা খানম আর রোহিনী মুচকি হাসলো। মেঘ লজ্জা পেয়ে বলল,,

“থাক দেওয়ার দরকার নেই আমি নিজে হাত দিয়ে খেতে পারবো। আপনি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন।”

“তুমি কিন্তু আমাকে নেকি পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছো?”

“আমি কি করলাম আবার?”

“স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়া সুন্নাত। স্ত্রীকে খাবার খাইয়ে দিলে তা সদকা হিসেবে কবুল হয়, এবং তার প্রতিদান রয়েছে। মানে হলো নেকি রয়েছে।
———(আবু দাঊদঃ২৮৬৪)
তুমি কিন্তু তা থেকে আমাকে বঞ্চিত করছো।এটা ঠিক না।

মেঘ লজ্জা পেল তখন দিলরুবা খানম বলল,,

‘আহ হা ধূসর দেখছিস না মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে আজ ছেড়ে দে পরে খায়িয়ে দিস।”

‘আচ্ছা ঠিক আছে যাস্ট এক লুকমা দেব তারপর ও নিজের হাতে খাবে।”

বলেই ধূসর মেঘের সামনে এক লুকমা তুলে ধরলো। মেঘ সে তো লজ্জায় শেষ বাকিরা মিটিমিটি হাসছে। কারন সবাই ড্রয়িংরুমেই বসা। কারো কারো কাছে ঢং ও লাগলো। মেঘ কোন রকমে ধূসরের হাত থেকে এক লুকমা খেল। তারপর মাথা নিচু করে খেতে লাগলো। ধূসর ও বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খেতে লাগলো। অতঃপর সবার খাওয়া শেষ হলে ওরা সবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসলো। ততক্ষনে হির রেডি হয়ে চলে গেছে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় যাচ্ছে ও বলে দিয়েছে কাজ আছে। ড্রয়িংরুমে আসতেই তখন এহসান খান বলল,,

“মেঘ আয়মানের সাথে কথা হয়েছে?”

“জি বাবা ঘুম থেকে উঠে তারসাথে কথা হয়েছে।”

“কখন আসবে বলেছে কিছু আসলে এখন ফোন করছি ফোন ধরছে না। আসলে বড় করে অনুষ্ঠান করছি না ঠিকই কিন্তু বিজনেস পার্টনাররা জেকে ধরেছে বুঝতে পারছো তাই ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান রেখেছি তোমার সমস্যা নেই তো আসলে সরি তোমাকে আগে জানানোর উচিৎ ছিল।”

“সমস্যা নেই বাবা আমি ভালোমতো সব মানিয়ে নেব। আর আব্বা ওনারা বোধহয় বিকেলের দিকে আসবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ওপরে গিয়ে রেস্ট নাও। দুপুরেই সবাই চলে আসবে।”

“আচ্ছা!”

মেঘ ওপরে এলো সাথে লিয়া আর জাবিন ও নীল রিমঝিম কে নিয়ে খেলায় মত্ত হয়ে গেল। নিচে ধূসররা বাবা ছেলেরা মিলে কিছু ডিসকাস করতে লাগলো। ইশানের একটু কাজ আছে তাই ও চলে গেল। প্রায় দুই ঘণ্টা পর হির ফিরলো। মেঘের কাছে আসলো দেখলো ধূসর আছে তাই ও ওর সাথে কথা না বলেই চলে গেল। অতঃপর দুপুরে সবাই মেঘকে রেডি করতে এলো। ধূসর আজকের জন্য একটা শুভ্র রঙের গ্ৰাউন আর ক্রীম রঙের হিজাব নিকাব কিনে রেখেছিল কারন অনুষ্ঠান না হলেও চৌধুরী বাড়ির সকলে আসতো। আর শুভ্র রঙ হলো মেঘ আর ধূসরের ফেবারিট রঙ। তাই ওটাই বেস্ট। অতঃপর সবাই মেঘকে রেডি করিয়ে দিল। ধূসর তখন চলে গেছিল ওর রেডি হওয়া শেষ তাই রুমে এসে নিজেও রেডি হয়ে গেল ক্রিম কালারের শার্ট ওপরে সাদা কোর্ট আর সাদা প্যান্ট। দু’জনের ডাক পরতেই ওরা নিচে নেমে এলো ধূসর মেঘের হাত ধরে নিচে আসছে আপাতত কেউ এখনো আসেনি সবাই ওদের দুজনের প্রশংসা করলো তখন সদর দরজায় দেখা গেল কতোগুলো পুলিশ কে। হুট করে পুলিশ দেখে সবাই ঘাবরে গেল। এহসান চৌধুরী আর ধূসর এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল কিসের জন্য এখানে এসেছে তখন পুলিশ অফিসার বলল,,

“আমরা কাশফিয়া আয়মান মেঘ কে এরেস্ট করতে এসেছি!”

কথাটা শুনে এক প্রকার সবাই চমকে উঠলো। সবথেকে বেশি ধূসর। তখনি আয়মান চৌধুরীরা সবাই এসে পরলো তাদের বিকেলে আসার কথা থাকলেও এহসান খানের কথায় এখনি চলে এসেছে তিনি সদর দরজায় পুলিশের কথা শুনে বলল,,

“মানে কি বলছেন কি?”

সবাই সদর দরজায় তাকিয়ে তাদের কে দেখলো আয়মান চৌধুরী তাড়াতাড়ি মেয়ের কাছে এলো। তখন মেঘ বলল,,

“আব্বা রিল্যাক্স!

তখন পুলিশ অফিসার আবার বলল,,

“কাশফিয়া আয়মান মেঘকে ডাকুন?”

তখন মেঘ বলল,,

“আমিই কাশফিয়া আয়মান মেঘ। তো পুলিশ অফিসার আপনি কিসের জন্য আমাকে এরেস্ট করতে এসেছেন!”

“আপনার নামে অভিযোগ আছে আপনি জোর করে নীল খান নামক একটা বাচ্চা ছেলেকে আটকে রেখেছেন তার পরিবারের কাছে থেকে দূরে রেখেছেন।”

তখন ধূসর বলল,,

“সব মিথ্যে কথা ! মেঘ এরকম কিছুই করে নি‌!”

“সেটা তো আমরা জানি না আমাদের কে আমাদের কাজ করতে দিন।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আমার মেয়েকে আমি কোথাও নিয়ে যেতে দেব না। ধূসর নীলকে ডাকো।”

তখন মেঘ বলল,,,

“আহ হা আব্বা এতো চিন্তা কেন করছেন? তো অফিসার অভিযোগটা কি আকাশ মাহমুদ করছে নাকি শেফালী খান?”

‘জি দু’জনেই ওনারা তো একই পরিবার।”

তখন নীলকে নিয়ে ধূসর আসলো নীল দৌড়ে মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,,

“আম্মু কি হয়েছে? এখানে এতো পুলিশ কেন?”

“কিছু না নীলবাবু তুমি যাও তো খেলো আর ধূসর এর মাঝখানে নীল কে টানার কি হলো।”

নীল মেঘের কথা মতো চলে গেল তখন ধূসর বলল,,,

“এটা দেখেও বলবেন মেঘ নীলকে জোর করে আটকে রেখেছে?”

“ওহ শত জানি না আমাদের কে আমাদের কাজ করতে দিন। কনস্টেবল যাও হাতকরা পরাও আর নিয়ে চলো।”

তখন মেঘ বলল,,

“আরে দাড়ান এতো তারা কীসের হির যা সকালের কাগজটা নিয়ে আয়!”

হির গিয়ে কাগজটা নিয়ে এলো মেঘ সেটা হাতে নিয়ে পুলিশ অফিসারের কাছে গিয়ে বলল,,,

“ধরুন অফিসার অভিযোগটা মিথ্যা হলেও এটা আসল।”

অফিসার কাগজ দেখে বলল,,

‘তারমানে আপনি জানতেন আজ এরকম কিছু হতে পারে।”

“আপনার বন্ধু আকাশ মাহমুদ কে আমি ভালোভাবেই চিনি সে ঠিক কি করতে পারে সেটাও তার কাজ দেখে ধরতে পারি। এখন আপনি আসুন আর হ্যা কাইন্ডলি আকাশ মাহমুদ কে বলে দেবেন যাই হয়ে যাক না কেন নীল তার হাতে কখনোই আসবে না যতোই ভালোগিড়ি দেখিয়ে শেফালী খানকে প্রলোভিত করুক না কেন সে কিছুই করতে পারবে না। এখন আপনারা আসতে পারেন।”

“এখন না হয় আপনাকে না নিয়ে যেতে পারলাম কিন্তু কোর্টে তো ঠিকই যেতে হবে!”

“সেটা যখন যাবো দেখা যাবে এখন আসতে পারেন। তবে এটা দেখে ভালো লাগলো বন্ধু ঠিক করুক কিংবা ভুল,আপনি আপনার বন্ধুর পাশে আছেন।”

পুলিশটা রেগে সবাইকে নিয়ে চলে গেল। বাকিরা সব চেয়ে চেয়ে দেখলো। অতঃপর

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে