#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
দেখতে দেখতে চার পাঁচদিন কেটে গেল।আপাতত মেঘ আর মেঘের তিন বান্ধবী আর নীল বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে কাদের নাকি আসার কথা। অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে কিন্তু তাদের কোন ইয়ত্তা নেই। অতঃপর বিরক্ত হয়ে জাবিন বলল,,
“কিরে মেঘ সেই শোরুম থেকে নিয়ে এলি কারা নাকি আসবে? আর যে বা যারা আসবে তাদের কোন কান্ডজ্ঞান নেই সময় বলেও তো কথা আছে একটা।”
তখন মেঘ বলল,,
“আরে এতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছিস আর কিছুক্ষন কর হয়তো রাস্তায় জ্যামে আটকে গেছে !”
“আমার খিদা লাগছে তোদের জন্য খেতেও পারছিনা।
তখন নীল বলল,,
“আহ হা জাবিন মামনি তুমি বাচ্চাদের মতো করছো কেন? আমি কিন্তু বাচ্চা কিন্তু তোমার মতো অধো আধো আহ হা আম্মু কি যেন বলে বলো না।”
মেঘ হেসে বলল,,
“ওটা অধৈর্য হবে!”
“হ্যা হ্যা ঐটাই আমি কিন্তু সেটা হচ্ছি না।”
“আচ্ছা বাবা সেটা ঠিক আছে কিন্তু আসবে টা কে?”
তখন হির বলল,,
“ঐ তো এসে গেছে।”
জাবিন সামনে তাকালো আর তাকিয়ে চমকে উঠলো এ তো ইশানের পরিবার আর ইশান। জাবিন তো পালালোর পাঁয়তারা করছে। মেঘ গিয়ে ওনাদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। তারপর সবাই ওদের টেবিলেই বসলো। ইশান গিয়ে জাবিনের পাশে বসলো জাবিন মাথা নিচু করে বসে আছে। হুট করে ইশানের মা বলল,,
“তো জাবিন কেমন আছো মা!”
হুট করে এমন কথা শুনে জাবিন চমকে তার দিকে তাকালো। জাবিন ছোট করে বলল,,
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন আন্টি!”
“আরে মেয়ে আন্টি বলছো কেন? এখন থেকে মা বলার অভ্যাস করো কয়েকদিন পর থেকে তো তাই-ই ডাকতে হবে।”
“মানে? আসলে আপনি কি বলতে চাইছেন? আমি বুঝতে পারছি না!”
“আরে তুমি যদি ইশানের বউ হও তাহলে কি তুমি আমায় আন্টি ডাকবে তখন তো মাই-ই ডাকবে তাই না।”
জাবিন মেঘদের দিকে তাকালো মেঘ চোখ দিয়ে আশস্ত করলো। ও এতক্ষনে সব বুঝতে পারলো। মেঘ বলল,
“তো আন্টি এবার বলুন বিয়ের তারিখ টা কবে ফেলছেন!”
তখন জাবিন বলল,,
“আমি এ বিয়ে করতে পারবো না!”
তখন ইশান বলল,,
“কেন বিয়ে করতে পারবে না কেন? কি সমস্যা!”
“আপনাকে বলতে বাধ্য নই। মেঘ আমি উঠছি আমার কাজ আছে।”
জাবিন উঠবে তখন ইশান বলল,,
“তুমি কি আমার মায়ের জন্য বিয়েটা করতে চাইছো না। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন মা রাজি দেখেই আমরা এখানে এসেছি। এর আগে মাই-ই তোমাকে বলেছিল রাজি না হতে তাই না।”
“ব্যাপারটা তেমন না আসলে,,,
জাবিন মেঘ আর ইশানের মায়ের দিকে তাকালো। ইশানের মা উঠে এসে জাবিনের গালে হাত রেখে বলল,,
“যা হয়েছে ভুলে যাও মা আমি মন থেকেই চাই তুমি আমার ইশানের বউ হও। না না এটা মনে করো না আমি অভিনয় করছি। আমি সত্যি বলছি।”
“তা হঠাৎ করে এরকম সিদ্ধান্তের কারন? সরি কিছু মনে করবেন না!
“আমার ভুল ভেঙে গেছে মা! আমি আর আমার ছেলেকে কষ্ট পেতে দেখতে পারছি না। আমি বুঝে গেছি আমার ছেলের সুখ তোমাতেই নিহিত। তুমি ছাড়া ওর জীবনে অন্য কেউ আসলে ও সঠিকভাবে বাঁচতে পারবে না। আমি শুধু একজনের না দুজনের জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিলাম আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি মা।প্লিজ রাজি হয়ে যাও । আমার মেয়ে হয়ে আমার পরিবারে প্রবেশ করো। আমি তোমার মা হতে চাই।”
তখন মেঘ জাবিনের কাছে এসে বলল,,
“এত দুঃখের মাঝে যখন সুখ হাতছানি দিচ্ছে তাহলে সেটা নিতে ক্ষতি কিসের!”
“মেঘ তুই!”
“আমি জানি তুই কি ভাবছিস সব পরে হবে!”
মেঘ হির আর লিয়া জাবিনকে দূরে নিয়ে বোঝাতে লাগলো অতঃপর সে রাজি হলো। মেঘ এসে খবরটা দিতেই ইশান আলহামদুলিল্লাহ পরলো। অতঃপর ইশানের পরিবার ঠিক করলো যেহেতু জাবিনের তেমন কেউ নেই। আর ইশান ও দেরি করতে চাইছে না।তাই কালই কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে সারতে। জাবিন মানা করতে চাইলেও বাকিরা রাজি হয়ে গেল। এতক্ষন কেউ নীলকে খেয়াল করে নি নীলও কোন টু শব্দ করে নি। জাবিন বিয়েতে রাজি দেখে ও চিৎকার করে বলল,,
“ইয়েইইই আমার মামনির বিয়ে হবে!”
এটা যেন ইশানের পরিবারের সবার কাছে বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো। ইশান পুরো থম মেরে গেল। মেঘরা বুঝতে পারল ওরা কি ভাবছে ওরা কিছু বলবে কিন্তু জাবিন মানা করলো জাবিন দেখতে চায় ইশান কি রিয়াক্ট করে। ইশানের বাবা নীলকে বলল,,
“জাবিন তোমার কি হয় বাবু?”
“আমার মামনি কেন?”
তখন ইশান বলল,,
“তাহলে এর জন্য তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছিলে না। কিন্তু তোমার তো কারো সাথে সম্পর্ক ছিল না তাহলে এই বাচ্চাটা এলো কিভাবে?”
জাবিন কিছু বললো না। তা দেখে ইশান বলল,,
“ওর বাবা কে?”
তখন নীল বলল,
“আমার বাবা তো আকাশের তারা হয়ে গেছে।”
তখন ইশান নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমি ওকে সহ তোমাকে বিয়ে করবো । তোমাকে আমি ভালোবাসি তুমি এক বাচ্চার মা হও আর দশটা বাচ্চার আমি তবুও তোমাকে বিয়ে করবো।”
এ কথা শুনে জাবিনের খুব হাসি পেল। তখন মেঘ বলল,,
“রিল্যাক্স মিস্টার ইশান নীল জাবিনের বাচ্চা নয়।”
“তাহলে ও যে মামনি বলল?”
তখন মেঘ কিছু বলবে তার আগে নীলই বলল,,
“আমি তো হিরু মামনি আর লিয়ু মামনিকেও মামনি বলি।”
“মানে?”
“ইশান ভাইয়া আপনি আমার সাথে আসুন আপনাকে বলছি।”
মেঘের কথায় ইশান মেঘের সাথে একটু দূরে গিয়ে কথা বলল মেঘ নীল আর নীলিমার বিষয়ে সব জানালো। সব শেষে ইশান বলল,,
“ধূসর কিছু জানে এ সম্পর্কে?”
“না জানে না তবে কেন যেন মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি জেনে যাবে। আসলে আগেই জানাতাম কিন্তু এটা রিস্ক হয়ে যেতো। কারন তার সাথে আকাশ মাহমুদের পরিচয় আছে। আমি সিওর সে ধূসরের ওপর নজর রাখে এবং তার সাথে কথাবার্তা বলে।
“তুমি চিন্তা করো না আমি সর্বদা তোমাদের পাশে আছি। কোন সাহায্য লাগলে বলো বিনা দ্বিধায়।”
“আপাতত বেশি কিছু করতে হবে না। আপনার বন্ধুকে নীলের ব্যাপারে না জানালেই হবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে জানাবো না। তোমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার জন্য শুভকামনা।”
“শুকরিয়া! আপনাদের বিয়ে তো কাল হচ্ছে আমাদের টা পরে তাই আপনাকেও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা!”
“শুকরিয়া! তো এখন যাওয়া যাক!”
“হুম তবে আপনার পরিবারকে সব জানানোর প্রয়োজন নেই। শুধু বলবেন জাবিনের ছেলে না।”
“হুম আর হ্যা মাকে বোঝানোর জন্য শুকরিয়া সেদিন যদি তোমরা তিন বান্ধবী জাবিনের ব্যাপারে মায়ের সাথে না কথা বলতে তাহলে জাবিনকে আপন করে পেতাম না।”
“মেনশন নট ভাইয়া! আমার বান্ধবী টা শুধু দুঃখই পেয়ে গেল এখন নাহয় একটু সুখের মুখ দেখুক।”
“ইনশাআল্লাহ তোমার বান্ধবীকে এমন ভালোবাসবো যাতে তার দুঃখগুলো সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।”
“ইনশাআল্লাহ এখন চলুন!”
ওরা দুজনে জাবিনদের কাছে চলে গেল। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। অতঃপর সবাই খেয়ে দেয়ে নিজেদের কাজে বেরিয়ে পরলো। মেঘের ইচ্ছে হলো ধূসরের সাথে দেখা করতে তাই ও রিক্সা নিয়ে রওনা দিল মাঝপথে মেঘ ফোন দিল ধূসরকে। ধূসর ফোন ধরে সালাম দিল,,
“আসসালামু আলাইকুম ওয়াইফি! বাহ আজকের দিনটা দারুন বলতে হবে নিষ্ঠুর মেয়েটা আমায় আগ বাড়িয়ে ফোন দিয়েছে!
“ওয়ালাইকুমুস সালাম! ভনিতা বাদ দিন তো আপনাকে দুই টা সুখবর দিতে ফোন দিলাম!”
“সুখবর বাহ্ তো বলে ফেলো!”
“কাল ইশান ভাইয়া আর জাবিনের বিয়ে হবে কাজী অফিসে!”
“বাহ তোমার নিষ্ঠুর বান্ধবী মেনে নিয়েছে তাকে আলহামদুলিল্লাহ আমার বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে আর সেন্টি খাবে না। কিন্তু কাল যে আমার একটা সমস্যা আছে। কালকে একটা অপারেশন এর জন্য আমাকে ঢাকার বাইরে যেতে হবে সকালে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হবে। আমি কি করে থাকবো।”
“তাহলে পুরশুদিন করতে বলি!”
“না না তা কি করে হয় ইশান কালকের দিনটার জন্য কতোদিন, না না কতোবছর ধরে অপেক্ষা করছে এখন বাগড়া দেওয়া উচিত হবে না। তাছাড়া তুমি আছো তো আমি আর তুমি তো একই। এবার দ্বিতীয় সুখবরটি বলে ফেলো।”
“আপনি হসপিটালে?”
“হ্যা কেন?”
“আমি আপনার হসপিটালের নিচে আসছি আপনার কেবিনে?”
“কি সত্যি! ওকে আই এম ওয়েটিং ফর ইউ লাভলি ওয়াইফি!”
ধূসর খুশি মনে ফোন রাখতেই সামনের মানুষটা বলল,,
“কি ব্যাপার ধূসর খুব খুশি মনে হচ্ছে?”
“আর বলবেন না আকাশ স্যার সরি ভাইয়া মেঘ আসছে হসপিটালে মাই ওয়াইফ তাই। তাছাড়া আমার বন্ধু ইশান ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে কালকেই বিয়ে।”
“ওহ আচ্ছা!”
“আপনার সাথে তো দেখা হয়েছিল বিয়েতে তার সাথে আপনার একটু কথা কাটাকাটি হলো সেটাই।”
“ওহ আচ্ছা!”
মেঘ রিসিপশনে এসে ধূসরের নাম বলতেই ওকে যেতে বলল কারন মেঘকে হসপিটালের প্রায় সবাই-ই চিনে ফেলেছে।মেঘ নক করল তখন ধূসর বলল,,
“কাম ইন!”
মেঘ খুশিমনে কেবিনে ঢুকতেই মেঘের হাঁসি গায়েব হয়ে গেল। সে যে মোটেও আকাশ মাহমুদ কে আশা করেনি এটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মেঘ একটু একটু করে আগালো। ধূসর ওর নিজের চেয়ার ছেড়ে মেঘকে বসতে দিল। মেঘ বসলো না। ধূসর হেঁসে বলল,,
“আকাশ ভাইয়া এই যে মেঘ আর মেঘ উনি,,”
মেঘ শক্ত কন্ঠে বলল,,
“ওনার পরিচয় আমাকে দিতে হবে না আমি বেশ ভালো করেই চিনি ওনাকে! অবশ্য আমার থেকে ভালো ওনাকে কে চিনে?
মেঘের এমন কথায় ধূসর অবাক হলো। তখন মেঘ বলল,,
“আপনার কি এখন কোন কাজ আছে ধূসর?”
“না তেমন কোন কাজ নেই!”
“তাহলে হসপিটালের ছাদে চলুন কিছুক্ষন আপনার সাথে প্রাইভেট সময় কাটাই।”
এ কথা শুনে আকাশ মাহমুদের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর ধূসরের তো কাশি উঠে গেল। এদিকে মেঘের দুজনের অবস্থা দেখে হাসি পেল। বিশেষ করে আকাশ মাহমুদের চেহারা দেখার মতো হয়েছে। আকাশ মাহমুদ বলল,,
“আচ্ছা ধূসর আজকের মতো আসি তোমাদের বিয়েতে দেখা হচ্ছে তৈরি থেকো!”
সে চলে গেল কেবিন থেকে। লাস্টের কথা গুলো সে মেঘের দিকে তাকিয়েই বলল। মেঘ তা দেখে একটু ভরকালো তৈরি থাকার কথা কেন বললো। তখন ধূসর বলল,,
“মিসেস ধূসর এহসান শুভ্র আপনার কি হয়েছে বলুন তো আজ বেশ অন্যমুডে আছেন!”
“জানিনা কিন্তু আজ খুব ভালো লাগছে! নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে এখন শুধু হিরের বিয়েটা দিতে পারলেই বাঁচি। মেয়েটা ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট পায়। সবসময় ফানি ফানি কথা বলে নিজে হাসে অন্যকে হাসায়। কিন্তু দিন শেষে সেও অসহায় হয়ে পরে। তার যে সবাই থেকেও কেউ নেই।’
“ইনশাআল্লাহ দেখবে খুব তাড়াতাড়ি হিরের ও একটা কিছু হয়ে যাবে। আচ্ছা বাদ দাও এখন বলো আমাদের বিয়ের তো দশ দিন বাকি। শপিং করেছো?
“আমার এতো আগে শপিং করে লাভ কি তাছাড়া আমি শুধু ফোনে বলবো কোনটা লাগবে, দেন আমার সব হাজির।”
“ওহ হো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার বউয়ের শপিং মল আছে। তবে তোমার ড্রেসটা আমি পছন্দ করবো যদিও তোমার শোরুম থেকেই কিনবো।”
“কবে যাবেন আমাকে বইলেন আমি পৌঁছে যাবো।”
“হুম!”
“আচ্ছা আপনি এই আকাশ মাহমুদ কে দাওয়াত দিয়েছেন আমাদের বিয়েতে?”
“আর বলো না আমি তো জানি তুমি শুধু পরিবার আর আত্মীয়দের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চাইছিলে। কিন্তু উনি এমন ভাবে বলল যে না বলে পারলাম না। বাইরের বলতে উনি আর আমার বন্ধুরা মানে ইশান অনিক ওরা থাকবে আর কেউ না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে!”
ধূসর দুষ্টু হেসে বলল,,
“তো চলো ছাদে তাই প্রাইভেট সময় কাটাতে হবে তো!”
“অসভ্য একটা ওটা তো এমনিই বলেছি যাতে উনি চলে যায় আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারি।”
“বাহ বেশ বুদ্ধিমতী তো তুমি! অবশ্য হবেই তো ব্যারিস্টার বলে কথা।ভালোবাসি আমার ব্যারিস্টার বউকে !”
“হুম ভালো! যাই হয়ে যাক না কেন ভালোবাসি না বললে চলবে না। অনেক হয়েছে আমি গেলাম!”
“নিষ্ঠুর মেয়ে তো তুমি আমি ভালোবাসি বলছি আর উনি চলে যাওয়ার কথা বলছে। নিজে তো ভালোবাসি বলো না এখন আমার বলায়ও তোমার সমস্যা হচ্ছে।
“আমি এরকমই নিষ্ঠুর!এখন গেলাম!”
আচ্ছা যাবে তো চলো তোমাকে ফুচকা খাওয়াই জামাই এর হসপিটালে এসেছো কিছু না খেলে হয় নাকি। আমাদের হসপিটালের নিচে দারুন ফুচকা বানায় চলো।”
“আপনি এখানের ফুচকা খান!”
“না খাইনি দেখে মনে হলো। আচ্ছা চলো এখন টেস্ট করি।”
“হুম চলুন ফুচকা দেখে মানা করলাম না।”
“জানি তো মানা করবে না তাই তো বললাম মেয়ে হয়ে জন্মেছো আর ফুচকা পাগল হবে না তা তো হয় না। অবশ্য আমিও এক ফুচকা পাগল যে নাকি নিয়ম করে বউয়ের সাথে দেখা হলেই ফুচকা খাই।”
“হয়েছে কথা শেষ এখন চলুন!”
“হ্যা চলো।”
ওরা দুজনে মিলে ফুচকা খেলো। যারা ধূসরকে চেনে সবাই অবাক। আকাশ ও আড়ালে ওদের কে দেখলো।আর রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কিছু বিরবির করলো।
__________________
দেখতে দেখতে মেঘ আর ধূসরের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আর চার দিন বাকি। সেদিনের পরেরদিনই জাবিনের বিয়ে হয়ে গেছে।ধূসর ছিল না বলে মেঘ নীলকেও নিয়ে গেছিল। ওদের বিয়েটা সহজ ভাবে ভালোভাবেই মিটে গেছে। জাবিন এখন শুশুরবাড়ি থাকে। এখন হিরটা বড্ড একা হয়ে গেছে। এখন সে একাই নীলকে নিয়ে থাকে। বিয়ের জন্য সবাই এক্সাইটেড কিন্তু মেঘের যেন কোন হেলদোল নেই।সে বেশ মজায় আছে। এখনো শপিং ও করেনি। এদিকে আমাদের ধূসর বাবুর এক্সাইটমেন্ট যেন ধরে না। সে এখনই দেখছে কোনটা কোনটা আর কি পরলে তাকে ভালো লাগবে। এটা নিয়ে পরিবারের সবার কাছে মজার পাত্র হয়েছে বটে কিন্তু তার কিছু যায় আসে না। ধূসর আজ মেঘের জন্য শপিং করতে যাবে মেঘদের নিতে এসেছে। জায়মা ,শায়লা মুন বাড়ির মেয়েরা সবাই যাবে। মেঘ ও তৈরি হয়ে নিচে নামলো। অতঃপর শোরুমে যেতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পরলো মেঘের কাছে আসার জন্য তা দেখে মেঘ হাসলো। মেঘ সবার সাথে কথা বলল ধূসরের সাথে পরিচয় ও করিয়ে দিল। অতঃপর জাবিনের সামনে দাঁড়িয়ে ধূসর বলল,,,
“তো শালিকা বিয়ে তাহলে আমার বন্ধুকেই করলে? এখন তো তোমায় আর শালিকা না ভাবি বলতে হবে তাই না মেঘ!”
তখন জাবিন বলল,,
‘ভাইয়া একদম মজা করবেন না আমি আপনার বন্ধুর বউ পরে হয়েছি আগে আপনার শালিকা হয়েছি তাই আগেরটাই বলবেন!”
‘ওকে সরি তোমাদের বিয়েতে থাকতে পারি নি।”
“সরি বলতে হবে না মেঘ বলেছে আপনি ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন! এখন বলুন বউয়ের জন্য কোনটা নিবেন!”
“হুম দেখি কোনটা আর কি নেওয়া যায় তবে রঙটা শুভ্র রঙের হবে।”
এ কথা শুনে মেঘ হাসলো অতঃপর ধূসর মেঘের জন্য হালকা কাজ করা লেহেঙ্গা নিল। তার সাথে হালকা গর্জিয়াজ হিজাব আর নিকাব। আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। অতঃপর সবার শপিং শেষ করে ওরা চলে এলো।
___________________
বিয়ের দিন,,
সকাল থেকে আয়মান চৌধুরীর আর মেঘের মনটা ভিশন খারাপ। আয়মান চৌধুরী মেয়ের বিয়ের সব কাজ দেখে দেখে করছে যদিও অনুষ্ঠান বড় নয় তবুও যেটুকু হবে সেটুকুতেই সে কোন ত্রুটি রাখতে চান না। সে ব্যস্ত সময় পার করছে যাতে তার কষ্ট টা কম হয়। এদিকে মেঘ সকাল থেকেই আব্বার পিছু পিছু ঘুরছে। বিয়ের দিন মেয়ে বাবার পিছু পিছু ঘুরছে দেখে সবাই একবার করে কানাঘুষা করছে। মেঘ হুট করেই আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে ফেলল। তা দেখে আয়মান চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,
” কি হয়েছে আম্মা?
“খুদা লাগছে তো আমার আজকে আপনার খায়িয়ে দেওয়ার কথা ছিল কাল রাতে না কথা হলো ছাদে। ভুলে গেলেন। সকাল থেকে শুধু কাজই করছেন এদিকটা হির আর লিয়া দেখে নেবে বলেছে না। এখন চলুন খাবেন আর আমাকেও খাওয়াবেন।”
“সরি আম্মা ভুলে গেছিলাম!”
“আপনি ভুলে যান নি আব্বা আপনি মূলত কষ্ট লুকাতে চাইছেন।”
‘লুকাতে চাইলে কি হবে আপনার থেকে তো কোনদিন কিছু লুকাতে পারবো না।”
“হুম কারন আমার স্পেশাল পাওয়ার আছে।”
বলেই মেঘ হাসলো তা দেখে আয়মান চৌধুরী ও হাসলো। তিনি মেয়েকে নিয়ে ড্রাইনিং এ চলে গেল। আয়মান চৌধুরী খাবার নিয়ে মেঘের সামনে ধরলো। মেঘ হেঁসে তা গালে নিল তারপর নিজে ভাত মাখিয়ে তার আব্বাকে খায়িয়ে দিলো। সবাই মুগ্ধ চোখে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখলো। মায়মুনা চৌধুরীর চোখে পানি চলে এলো কিন্তু তিনি আগানোর সাহস পেলো না।
অতঃপর সেই কাঙ্খিত সময়টা এসেই গেল। আজ মেঘের তিন বান্ধবীই মেঘের সাথে আছে। নীলকে ওদের ফ্ল্যাটেই ফাহিমের কাছে রেখে এসেছে। মেঘকে তিন বান্ধবী মিলে সাজিয়ে দিল। বর আসার সময় হয়ে এসেছে তাই হির,জাবিন আর লিয়া নিচে গেল। আয়মান চৌধুরী মেয়ের হাত ধরে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। ধূসররা এসেছে শুনে তিনি নিচে নামলো। সকলকে স্বাগতম জানালো। ধূসর বসতেই হির লিয়া আর জাবিন ধূসরের সামনে শরবতের নামিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো তা দেখে ধূসর বলল,,
“কি ব্যাপার শালিকারা এভাবে তিন জনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে পরলে কেন?”
তখন হির বলল,,
“ভাইয়া এর আগে মুন আপুর বিয়েতে কি ডিল হয়েছিল বলুন তো!”
ধূসর হেসে বলল,,
‘সেটা তো অনেকদিন আগের কথা পুরোনো জিনিস ভুলে যাওয়া ভালো তোমার বান্ধবী বলেছিল একবার তাই আমি বউকে রেখে পুরোনো সব ভুলে গেছি।”
তখন লিয়া বলল,,
“ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না। আপনি বলেছিলেন আপনি আমাদের গেটের টাকা দেবেন!”
তখন জাবিন বলল,,
‘হ্যা যদিও আমি ছিলাম না কিন্তু ওরা বলেছে আপনার সাথে ডিল হয়েছে।”
তখন ধূসরের পাশে থেকে ইশান বলল,,
“এই ধূসর এক টাকাও দিবি না। তারা গেট ধরলো না কেন?”
তখন জাবিন বলল,,
“ধরা তো হতোই শুধু মেঘ বারন করেছে দেখে তাছাড়া ভাইয়া বলেছিল গেট না ধরলেও টাকা দেবে। ভাইয়া এবার কিন্তু আপনি আপনার কথার খেলাপ করছেন?
তখন অনিক বলল,,
“আচ্ছা ধূসর যখন বলেছে তাহলে ধূসর পঞ্চাশ টাকা দে ওনারা তিনজন এসেছে একজনের দশটাকা করে তাই পঞ্চাশ টাকা বেশি হয়ে যাবে। ত্রিশ টাকা দে!
তখন হির বলল,,
“ঐ মিয়া আমাদের কি ভিখারি মনে হয় হুম! পঞ্চাশ টাকা তো ছাড় পনেরো হাজার দিতে হবে।”
“এতো দিনে দুপুরে ডাকাতি করছে ভাই!”
“ডাকাতি করলে ডাকাতি এখন ধূসর ভাইয়া বলুন দেবেন কি না নাহলে মেঘকে ডাকবো সেও আমাদের সাক্ষীদের মধ্যে একজন সে আসলে কিন্তু ডাবল দিতে হবে।”
হিরের এমন কথায় ধূসর হাসলো পকেট থেকে টাকা বের করে হিরের হাতে দিল আর বলল,
“ধূসর এহসান শুভ্র কিছু ভুলে না এই নাও শালিকারা!”
হির হাতে নিয়ে টাকা গুনলো সেখানে দশ হাজার টাকা আছে! হির আবারো হাত পাতলো ,,
তা দেখে অনিক বলল,,
“আবার কি?”
“জুতা চুরির টাকা দেন দুলাভাই?”
তখন ধূসর বলল,,
“জুতা তো পায়েই আছে তাহলে দেব কেন?”
“টাকা না দিলে আর থাকবে না বুঝছেন!”
তখন ইশান বলল,,
“তাহলে আগে চুরি করে নেন তারপর দেখা যাবে।”
“না মেঘ বলেছে ওর জামাই সবজায়গায় টাকা দেবে তাই আমরা যেন কিছু না করি।”
তখন ধূসর বলল,,
“বউ যখন বলেছে তাহলে তো দিতেই হবে।”
তখন ইশান বলল,,
‘আরে ভাই বউয়ের নাম করে যদি তোর বাড়ি লিখে নেয় তাও দিবি নাকি শালা বউ পাগলা । আমাদের কোনদিন একবার বলায় কাচ্চি খাওয়াসনি আর বউয়ের বান্ধবীদের টাকা দিয়েই যাচ্ছিস।”
“দশটা না পাঁচটা না একটাই মাত্র বউ আর তার তিনটা মাত্র বান্ধবী এইটুকু দেব না। তুই চুপ থাক তোর বউ ও এখান থেকে ভাগ পাবে বুঝেছিস তোর লাভ আছে এখানে চুপ থাক।”
“বউয়ের লাভ হবে ভেবে বন্ধুর লস দেখবো। আমি তোর মতো না বউ পাগল না আমার কাছে বন্ধু আগে বুঝলি।”
‘তুমি কেমন তা আর বলতে হবে না সব জানা আছে তোমার বউকে নিয়ে কতো পাগলামি করো আমি জানিনা বুঝি। বিয়ের দিন বউকে জরিয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদছিলা আমি জানি না নাকি। আমাকে দেখাতে আইছে, বন্ধুর জন্য বিয়ে একদিন পিছাইছিলা পিছাউ নাইতো আইছে আমারে বন্ধু দেখাইতে।”
ধূসরের এমন কথায় সবাই হেসে উঠল। জাবিন বেশ লজ্জা পেল আর ইশান কে মনে হয় চোখ দিয়েই গিলে খাবে। ইশান ও ক্যাবলা কান্ত বনে গেল। সবাই বেশি কিছু সময় হাসি মজা করলো। অতঃপর মেঘ কে আনার কথা বলা হলো মেঘ তিন বান্ধবীর সাথে সিড়ি দিয়ে নামছে। মেঘের তিন বান্ধবী গ্ৰাউন পরেছে সাথে ম্যাচিং হিজাব আর নিকাব। ওদের চারজন কে একসাথে দেখতে ভিশন সুন্দর লাগছে। আর ধূসর সে তো এক দৃষ্টিতে নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রঙের লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং হিজাব নিকাব মাথায় সাদা পাথরের প্রিন্সেন্স মুকুট। মেঘ ধূসরের দিকে তাকালো ধূসর শুভ্র রঙের কাজ করা পাঞ্জাবি ওপরে শুভ্র রঙের কোটি আর শুভ্র রঙের পায়জামা পরছে। আর ওর দিকেই তাকিয়ে মেঘের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল সাথে ধূসরের ও। ধূসর এগিয়ে গিয়ে মেঘের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মেঘ ও মুচকি হেসে ধূসরের হাত ধরলো। ইয়াংস্টারা সবাই হৈ হৈ করে উঠলো। ধূসর মেঘের হাত ধরে ওদের জন্য বরাদ্দকৃত ছোট্ট স্টেজ এ বসে পরলো। যেহেতু বিয়েটা আগেই হয়েছে তাই সেরকম কিছু করতে হবে না। কিন্তু ধূসরের ইচ্ছে হয়েছে সে আবার কবুল বলবে তাই এহসান খান আর আয়মান চৌধুরী একজন কে এনেছেন। মেঘ আর ধূসর বসে আছে তাদের ঘিরে সকলে কথা বার্তা বলছে এমন সময় আজান এলো একটা চিঠি হাতে নিয়ে। সে ধূসরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“ভাইয়া তোমাকে একজন দিতে বলেছে চিঠিটা নাও পড়ো!”
ধূসর খুশি মনে চিঠিটা খুলল আর খুলেই তার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল । এদিকে সবাই ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসরের মতিগতি কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ধূসর একবার মেঘের দিকে তাকালো একবার চিঠির দিকে।
~চলবে,,
#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩০ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
ধূসর চিঠিটা নিয়ে একবার মেঘের দিকে আবার চিঠির দিকে তাকাচ্ছে। মেঘ ধূসরের ভাবগতি দেখে বলল,,
“কি হয়েছে আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন আর চিঠিতে কি আছে?”
তখন ধূসর গম্ভীর স্বরে বলল,,
“তুমিই দেখে নাও!’
ধূসরের এহেন আচরণে সবাই ভয় পেয়ে যায় কি আছে এমন চিঠিতে। ধূসর মেঘের দিকে চিঠিটা এগিয়ে দিল। মেঘ চিঠিটা নিয়ে পুরো হা হয়ে গেল ও একবার ধূসরের দিকে তাকালো আবার চিঠির দিকে। এদিকে দু একজন বাদে কেউ বুঝতে পারছে না । চিঠিটা দেখে মেঘ হাসলো আসলে সত্যি বলতে চিঠিটা তার ভালো লেগেছে। তা দেখে ধূসর বলল,,
‘তুমি হাসছো?”
‘এত সুন্দর অনুভূতি মাখা চিঠি হাসবো না আমার তো বেশ লেগেছে আপনিও এত সুন্দর করে আমাকে ভালোবাসি বলেন নি হুম!”
‘তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে ভয় পেয়ে যেত আর বলতো আমি কিছু জানি না। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না। আর তুমি কি হুম ওহ হো আমি তো ভুলেই গেছি তুমি মেঘ অদ্ভুত একজন নিষ্ঠুর মেয়ে একটা।”
তখন ইশান বলল,,
“এই তোরা কি নিয়ে কথা বলছিস? চিঠিতে কি আছে? দে দেখি আমার কাছে আমিই সবাইকে পরে শোনাচ্ছি আমার মতো সব পাবলিক চিঠিতে কি আছে তা জানার জন্য অপেক্ষা করে আছে।”
বলেই ইশান চিঠিটা নিয়ে পরতে শুরু করল প্রথমে জোরে জোরে পরতে যেয়েও চিঠির মধ্যে কি আছে সেটা দেখে আস্তে আস্তে পরতে লাগলো যাতে যারা সেখানে আছে তারা শুনতে পারে। চিঠিটা হলো,,
“ধূসর রঙের মেঘ,
প্রিয় শব্দটির মাঝে যেমন আগলে আছে ভালোবাসা। আমার মনের মধ্যেও ঠিক তোমার নামের আড়ালে এক টুকরা সতেজ ভালোবাসা রয়ে গেছে। তোমার মুখের হাসি আর রাখালের বাজানো বাঁশিই হবে আমার প্রেমের প্রথম কাব্য। গোধূলি যখন নিরবিচ্ছিন্ন, তখন আমাদের প্রেমের বসন্ত। নিরবতা আর উষ্ণতাকে মনে মেখে হোক না আমাদের প্রেম লগ্নের শুরু। কটকটা রং আর ফকফকা বাতাস যদি পারে আমাদের এক করতে, তবে ঝড়ো দমকা হাওয়া কি পারবে উষ্ণ প্রেমে বর্ষা হতে। কিছু সুবাস মনের আড়ালে থেকে যায়। যার প্রতিটা স্পর্শ তোমার রন্ধ্রে মিশে আছে। এতে আমার কি দোষ বলো, তুমিই তো নেশা কাতর বিন বাজিয়েছো। আজ মাতাল আমি শুধু তোমার প্রেমেই পড়তে চাই। তোমাকে প্রতিনিয়ত দেখি, তোমায় দেখার আকুলতার প্রতিটা নিশ্বাস আমার মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে ফেলে। প্রথমবারের দেখা আর পরের বারের হাসাকেই নিত্য দিনের সঙ্গী করে আজকের এই পত্র লেখা।
রজনী বা চামিলী কোনটাই আজ পাইনি,
প্রথম পত্রে ভালোবাসা পরের পত্রে কামিনী।
নিরন্তর ভালবাসা ও শুভকামনা রেখে আজ সমাপ্ত। প্রতিপত্রের অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
মেঘের প্রেমে পড়া কেউ
সবটুকু পড়া শেষ করে ইশান বলল,,
“আরেব্বাস ভাবিকে প্রেমপত্র দিয়েছে তাও আবার আজকে ভাবা যায়। এই জন্যই তো বলি ধূসর বাবু এরকম কেন করছে তার মানে আমাদের ধূসর জেলাস।”
তখন ধূসর বলল,,
“আমি মোটেও জেলাস নই আমার বউ এত্ত সুন্দর আর এত সুন্দর ব্যক্তিত্বে যে কেউ প্রেমে পরবে। এবার জানতে হবে ব্যাটা কে এই চিঠি দিছে আমার বউকে বিয়ের দিনে চিঠি দেয় ব্যাটার কত্ত বড় সাহস।”
এ কথা শুনে হির আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারে না ও উচ্চস্বরে হেঁসে উঠল সাথে জাবিন আর লিয়া। হিরের হাসি শুনে ধূসর বলল,,
“কি হলো শালিকা তুমি এভাবে হাসছো কেন?”
তখন মেঘ বলল,,
“আমি জানি কেন হাসছে?
‘কেন?”
“কারন আপনাকে জ্বালানোর জন্য আর আমাকে ভয় দেখানোর জন্য হির এই চিঠিটা লিখেছে তাও আবার বা হাত দিয়ে যাতে আমি না বুঝতে পারি। কিন্তু সে তো জানে না তাকে রন্দ্রে রন্দ্রে চিনি আমি। আর ভয় সেটা আমার সাথে যায় না।”
“ধরে ফেললি তো আমি তো, বা হাত দিয়ে লিখেও কিছু হলো না ধ্যাৎ।
তখন ধূসর বলল,,
“হির আপু এটা কি রকমের মজা।”
‘আর বলবেন না ধূসর ভাইয়া একটু মজা করলাম। অবশ্য মেঘকে আমি আগেই বলেছিলাম ওর বিয়েতে কিছু না কিছু করবোই। কিন্তু ভাইয়া আপনি কিন্তু জেলাস হয়েছেন সেটা আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন।”
‘আমি মোটেও জেলাস না ঠিক আছে।”
তখন অনিক বলল,,
“প্রেম করেন নাকি যে এতো আবেগ অনুভূতি ঢেলে চিঠি লিখেছেন। যে কেউ মুগ্ধ হবে।”
তখন হির হেসে বলল,,
“প্রেম করি না ওগুলো আমার সাথে যায় না। তবে চিঠিটা আমি না আজরিনা জ্যামির একজন অব্যক্ত পাঠক মেঘের ব্যক্তিত্বের প্রেমে পরে মেঘকে চিঠি লিখেছিলেন তাই লেখিকা সেটা আমার মাধ্যমে মেঘকে জানিয়ে দিলেন।”
“ওহ আচ্ছা!”
তখন মেঘ বলল,,
‘অনেক হয়েছে এখন এ টপিক বাদ।”
“আচ্ছা আচ্ছা!”
সবাই অন্য কথায় মজে গেল। ধূসর গাল ফুলিয়ে বসে আছে মেঘের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত তা দেখে মেঘ ধূসরের কানে কানে বলল,,
“মেঘের জীবনে যদি সত্যিকারের কোন ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে সেটা ধূসর এহসান শুভ্র। সে তাকে অনেক ভালোবাসে । যদি সত্যিই এমন চিঠি লিখে কেউ মেঘের সামনে দাঁড়ায় তবুও সে ধূসর এহসান শুভ্ররই থাকবে। মৃত্যু ছাড়া ধূসরের কাছ থেকে কেউ মেঘকে কেড়ে নিতে পারবে না। যদি ধূসর না চায় তো। কিন্তু ধূসর যদি মেঘকে ছেড়ে দিতে চায় তাহলে সেটা অন্য ব্যাপার।”
তখন ধূসর হেসে দিল সব অভিমান শেষ। ও বলল,,
“এই ধূসর এহসান শুভ্র যাই হয়ে যাক না কেন মেঘকে কখনো ছাড়বে না। মেঘ তার এক আকাশ ভালোবাসা।”
অতঃপর ধূসরের কথা অনুযায়ী আবার কবুল বলার বন্দোবস্ত করা হলো। ধূসরের কবুল শেষ এখন মেঘ বলবে মেঘের ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। মেঘ কবুল বলবে তখনি ফাহিমের গলা শোনা গেল মেঘ বলে ডাকছে। মেঘ জাবিন হির আর লিয়া চমকে সদর দরজায় তাকালো ফাহিম দৌড়ে আসছে। মেঘ ততক্ষনে স্টেজ থেকে উঠে পরেছে মেঘ, লিয়া হির আর জাবিন ফাহিমের দিকে এগিয়ে গেল। লিয়া বলল,,
‘কি হয়েছে আপনার সব ঠিক আছে? এভাবে এখানে কেন আপনি!”
ফাহিম জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,,
“তোমাদের ফোন কোথায় সবার? সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি।”
তখন মেঘ বলল,,
“কি হয়েছে ফাহিম ভাইয়া নীল ও,”
‘নীলকে কতগুলো লোক নিয়ে গেছে ফ্ল্যাট থেকে আমি চেষ্টা করেও তাদের আটকাতে পারি নি।”
এ কথা শুনে চার বান্ধবীই দুই পা পিছিয়ে গেল। মেঘের চোখে পানি চলে এলো। এদিকে বাকিরা কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। আয়মান চৌধুরী আর ধূসর এগিয়ে এলো। ধূসর এসে বলল,,
“আরে মিস্টার ফাহিম যে আপনি দেশে কবে ফিরেছেন? এত লেট করলেন কেন বিয়েতে আসতে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই যাচ্ছিল !”
মেঘরা চার বান্ধবী মাথা নিচু করে আছে হয়তো কান্না আটকানোর চেষ্টা। আয়মান চৌধুরী মেঘের কাছে এলেন হয়তো উনি আন্দাজ করতে পারছেন কিছু একটা হয়েছে। মেঘের কাছে এসে তিনি মেঘের কাঁধে হাত রাখলো মেঘ অসহায় চোখে তার দিকে তাকালো আর জরিয়ে ধরে আস্তে আস্তে বলল,,
“আব্বা আমি শেষ রক্ষা করতে পারি নি আব্বা নীলকে ওরা নিয়ে গেছে আব্বা। এবার আমি কি করবো নীলিকে কি জবাব দেব আমি কিভাবে বাঁচবো আব্বা।”
মেঘ সকলের সামনে কেঁদে উঠলো। হুট করে এমন হওয়ায় সবাই চমকে গেল। মেঘ কাঁদছে কিন্তু মেঘ তো কাঁদার মেয়ে না। বিশেষ করে ধূসর অবাক চোখে মেঘকে দেখছে। মেঘের তিন বান্ধবীর চোখেই পানি। ততক্ষনে ইশান এলো জাবিনের কাছে জাবিন তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলল সব শুনে ইশান ও অবাক হয়ে গেল। আয়মান চৌধুরী নিজেকে অসহায় বোধ করলেন। তিনি মেঘের মাথায় হাত রেখে বলল,,
“আম্মা আমরা নীলকে খুঁজে বের করবো নীলের কিছুই হবে না।”
মেঘ ওর বাবাকে ছেড়ে দিল আর ধূসরের সামনে গিয়ে বলল,,
“আমাকে যেতে হবে ধূসর! আমার জীবনের আরেক ইম্পোর্টেন্ট একজন মানুষ হয়তো আমার অপেক্ষা করছে।
ধূসর মেঘের হাত ধরলো। ধূসর বলল,,
“আজ তো আমাদের বিয়ে আজ না গেলে হয় না।”
“আজ যদি তাকে হারিয়ে ফেলি তাহলে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলবো ধূসর। কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।আপনার মনে আছে সিলেটে চা বাগানের চুড়ায় দাড়িয়ে আপনাকে কি বলেছিলাম।”
ধূসর চোখ বন্ধ করলো আর ওর কানে মেঘের আওয়াজ আসলো।
“যদি কোনদিন আপনার এবং অন্য জিনিস দু’টোর মাঝে কাউকে বেছে নিতে হয় আর আমি আপনাকে রেখে যদি অন্যটা বেছে নিই তাহলে মনে করবেন তখন সেই সময়টা সে বেশি ইম্পোর্টেন্ট। তবে হ্যা আপনি আমার জীবনের সবসময়কার জন্য ইম্পোর্টেন্ট মানুষ ক্ষনিকের জন্য নয়।”
ধূসর চোখ খুলে মেঘের হাত ছেড়ে দিল আর বলল,,
“তোমার যেখানে ইচ্ছে যাও তবে ফিরে এসো আমার নীড়ে আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।”
“ধন্যবাদ ধূসর অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!”
মেঘ দৌড়ে ওপরে গেল সেই সাথে তার তিন বান্ধবীও। একটু পরেই মেঘ নিচে চলে আসলো ওদের হাতে ব্যাগ।মেঘ যতটা সম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে ও কাউকে ফোন করে কিছু একটা বলছে। যে যেমন ড্রেস পরেছিল তেমনটাই আছে। মেঘের তাড়াতাড়ি হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ওর হেলদোল নেই। মেঘ ধূসর কে পাছ করে গিয়ে একবার ধূসরের দিকে তাকালো। ধূসর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘ দৌড়ে গিয়ে ধূসরকে জরিয়ে ধরে বলল,,
“আপনার ধূসর রাঙা মেঘ আপনাকে অনেক ভালোবাসে ধূসর। আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটা আপনাকে অসম্ভব ভালোবাসে। সে আপনাকে কখনো হারাতে চায় না ধূসর। আপনি তার এক পৃথিবী ভালোবাসা। সবশেষে বলবো ভালোবাসি আপনাকে ভিশন ভালোবাসি ধূসর।”
ধূসর জমে গেল তার নিষ্ঠুর মেয়েটা সবার সামনে তাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বললো এ যে তার কল্পনার বাইরে। হির, লিয়া,ফাহিম আর জাবিন মেঘকে ঘুরতে দেখে দাঁড়িয়ে পরেছে। মেঘকে দেখে ওরা হাসলো। মেঘ ধূসরকে ছেড়ে দৌড় শুরু করলো। মেঘের পেছন দিয়ে বাকিরা যাবে তখন সদর দরজা থেকে তখন আওয়াজ আসলো ,,
“মেঘ একে খুঁজতে যাচ্ছো?”
সামনে তাকাতেই মেঘ চমকে উঠলো। আকাশ মাহমুদ নীলের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কোলে নিয়ে আসছে।
মেঘের পা আপনা আপনি থেমে গেল। সাথে বাকিরাও থেমে গেল। পুরো বাড়ির পরিবেশ টা যেন থমকে গেল আকাশ মাহমুদের প্রবেশে আর ধূসর এতক্ষন মেঘের বলা কথার মধ্যে ঘোরে ছিল। এখন সেই ঘোর থেকে বেড়িয়ে সে তো অবাক চোখে আকাশকে দেখছে। নীল কাঁদছে। আকাশের পেছনে আরো তিনজন ঢুকলো। নীল হুট করে সামনে তাকিয়ে মেঘকে দেখতে পেল ও দেখেই মেঘকে চিনে ফেলল আর বলল,,
“আম্মু! আম্মু!”
আম্মু শুনে সকলেই বেশ অবাক। মেঘের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তা দেখে আকাশ মাহমুদ বলল,,
“আম্মু বাহ্ ভালো তো!”
তখন মেঘ বলল,,
“আকাশ মাহমুদ নীলকে ছেড়ে দে নাহলে তোর জন্য ভালো হবে না।”
“বাহ ছেলেটার নাম বোধহয় নীল! আমি ভুলেই গিয়েছিলাম নামটা।”
তখন ধুসর বলল,,
“আকাশ ভাইয়া এসব কি আর আপনি বাচ্চা ছেলেটার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আছেন কেন?”
“সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে ধূসর! তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই তবে মেঘের সাথে আছে এসব থেকে দূরে থাকো।”
তখন ধূসর বাঁকা হেসে বলল,,
“শত্রুতা নেই কিন্তু এখন যে শত্রু বানিয়ে নিলেন। মেঘের শত্রু মানে আমার শত্রু ছেলেটাকে ছেড়ে দিন। নাহলে সত্যি সত্যি আপনার সাথে খারাপ হবে তখন কিন্তু আমি দায়ী থাকবো না।”
“একদম না কেউ এক পা এগোবে না নাহলে এই ছেলেটার মাথা উড়িয়ে দেব।”
আকাশ নীলকে নামিয়ে এক হাত শক্ত করে ধরলো। আর একটা থাপ্পর মারল। নীল আওয়াজ করে কাঁদছে আর বলছে,,
‘আম্মু আমার ব্যাথা লাগছে আমার খুব ব্যাথা করছে। আংকেল টা আমার আমায় খুব কষ্ট দিয়েছে আম্মু আমাকে মেরেছে তুমি জানো! হিরু মামনি লিয়ু মামনি জাবিন মামনি তোমরা কোথায়?
নীলের কথা শুনে চার বান্ধবীরই কান্না পেল।তখন মেঘ চিৎকার করে বলল,,
“আকাশ আমার ছেলেকে ছেড়ে দে নাহলে সত্যি এখন খারাপ হয়ে যাবে।”
মেঘ এগিয়ে এলো তা দেখে আকাশ একটা ফাঁকা গুলি করলো। এদিকে আমার ছেলে শুনে সকলে অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো। ধূসর সে তো বোধহয় থমকে গেল। মেঘ হির লিয়া,ফাহিম জাবিনের দিকে তাকালো ওরা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ও চোখ দিয়ে ওদের কিছু ইশারা করলো ও আস্তে আস্তে আকাশের তিনজন লোকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ফাহিম একজনের পেছনে গিয়ে তার পায়ে লাথি মারলো। লোকটা আহ আওয়াজ করলো সবাই পেছনে তাকাতেই জাবিন হির আর লিয়া বাকি দুজনের হাত থেকে বন্দুক নিয়ে নিল আর তাদের দিকে ধরলো এদিকে আকাশ পেছনে তাকাতেই মেঘ দৌড়ে এসে নীলের হাত ছাড়িয়ে নিল আকাশ এদিকে ঘুরবে তখনি নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে দিল। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটলো যে কেউ কিছু ঠাহরই করতে পারলো না। আকাশ মাহমুদ সামনে ঘুরেই রেগে মেঘের গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিল। তখন ধূসর এসে আকাশ মাহমুদকে ঘুষি মারলো আকাশ মাহমুদ নিচে পরে গেল ধূসর গিয়ে আকাশ মাহমুদ কে ইচ্ছে মতো ঘুষি মারতে লাগলো আর বলতে লাগলো,,
“তোর সাহস হলো কি করে আমার মেঘ বালিকার গায়ে হাত তোলার। তোর এত সাহস আমার ছেলেকে কষ্ট দিস তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো। আমার ছেলেকে আমার সামনে থাপ্পড় মারিস।”
মেঘ থাপ্পড় খেয়ে পিছিয়ে গেল। কিন্তু ধূসরের কথা শুনে মেঘ ঘোরের মধ্যে চলে গেল। ধূসর কি বলছে ওর ছেলে । মেঘ নীলকে কাঁদতে দেখে নীলকে গিয়ে জরিয়ে ধরলো। নীল আম্মুর কোলে উঠে একটু শান্ত হলো। ধূসর তো মেরেই যাচ্ছে! তখন আকাশ মাহমুদ বলল,,
“কি বলছিস তোর ছেলে নীল তোর ছেলে নয়।”
ধূসরের হাত আপনা আপনি থেমে গেল। তা দেখে আকাশ মাহমুদ হেসে উঠলো। মুখের রক্ত থু দিয়ে ফেলে বলল,,
“নীলের বয়স জানিস পাঁচ বছর কয়েকদিন পর ছয় বছর হবে। তাছাড়া নীল যদি তোর ছেলেই হতো তাহলে মেঘ কেন তোকে জানালো না। তাছাড়া তোদের বিয়েই তো হলো ছয় বছর হবে। তোর মেঘ সবার থেকে লুকিয়েছে দ্যাখ গিয়ে কার সাথে কি করেছে,,
এ কথা শুনে ধূসরের মাথা গরম হয়ে উঠলো। ও আকাশকে আরো জোরে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো ও বলল,,
“মেঘ যখন ওর ছেলে বলছে মানে ও আমার ছেলেও বুঝতে পেরেছিস তোর কাছে থেকে আমার মেঘকে জানতে হবে না।”
অনিক ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যা তা নাহলে ওকে মেরে ফেলতেও পারি আমি! আমি জানিনা। ওকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
অনিক আকাশকে দেখে প্রথমে অবাক হলেও ইশান ওকে বলে ফোর্সকে আনতে। কারন তখন ইশান বলেছিল আকাশ খারাপলোক। তাই ও ফোর্সকে কল করেছিল। অনিক গিয়ে আকাশকে ধরলো। ইশান আর ফাহিম মিলে বাকি তিনজনকে বেঁধে ফেললো। হিররাও সাহায্য করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিকের ফোর্স চলে এলো আর সবাইকে ধরল তখন আকাশ মাহমুদ বলল,,
“মেঘ এবারের মতো বেঁচে গেলে তোমরা! আমি তোমাদের ছাড়বো না। যেমনটা নীলিমার সাথে করেছি তেমনটা নীলের সাথেও হবে তুমি কি ভেবেছো আমাকে জেলে আটকে রাখতে পারবে , না পারবে না এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো।”
মেঘ শক্ত করে নীলকে জরিয়ে ধরে আছে। আকাশ মাহমুদ আর তিনজন লোককে নিয়ে গেল। মেঘ বুঝতে পারলো আজ শুধু নীলকে মারা আকাশ মাহমুদের উদ্দেশ্য ছিল না মেঘের সাথে ধূসরের একটা ঝামেলা করার জন্যও এসেছিল তাই তো ওভাবে মেঘের নামে ধূসরকে উশকে দিচ্ছিল। মেঘ গিয়ে সোফায় বসলো। হির লিয়া জাবিন ও গেল ওখানে। হির পানি নিয়ে গেল। তা দেখে মেঘ বলল,,
“নীলবাবু মাথা তুলো দেখো তোমার চার সুপার ওমেন সব দুষ্টু লোকদের ভাগিয়ে দিয়েছে এখন কেউ তোমাকে ব্যাথা দেবে না।”
নীল শক্ত করে মেঘকে জরিয়ে ধরলো।তা দেখে হির বলল,,
“নীল বোধহয় অনেক ভয় পেয়েছে আজ!”
তখন মেঘ বলল,,
‘নীলবাবু তুমি না কতো স্ট্রং এইটুকু তবে ভয় পেলে চলে তুমি না বড় হয়ে আর্মি হবে শত্রুদের ডিসকাও ডিসকাও করে মেরে ফেলবে। আজ তুমি সামান্য ছোট বন্দুক দেখে ভয় পেলে দিস ইজ নট ফেয়ার।”
মেঘের কথায় নীল মাথা তুলল আর মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল,
“আম্মু তোমাকে ঐ পচা লোকটা মেরেছে তাই না। তুমি ও আমার মতো ব্যাথা পেয়েছো?”
নীলের এমন কথা শুনে মেঘের চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরলো। মেঘ নীলের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,
“ধুর বোকা ছেলে বড়দের এইটুকুতে ব্যাথা লাগে না।”
“আব্বু না থাকলে তো তোমাকে আরো মারতো। আব্বু দেখি তোমার মতো সুপার ওমেন না না ম্যান সুপারম্যান।”
এই বলেই নীল ধূসরের দিকে তাকালো। ধূসর নীলের দিকেই তাকিয়ে আছে। নীলের কথায় ধূসর এগিয়ে এসে বলল,,
“তুমি আমায় চিনো?”
“হুম চিনি তো তুমি জানো এতদিন তোমার সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আম্মু বলেছিল তোমার সাথে দেখা হলে তারপর থেকে আমরা একসাথে থাকবো।”
“হুম থাকবো তো বাবা!”
তখন নীল লিয়াকে বলল,,
‘দেখেছো লিয়ু মামনি ফাহিম বাবাইয়ের মতো আব্বুও খুব স্ট্রং। তুমি জানো ঐ পচালোক গুলো যখন আমাকে তুলে আনতে গিয়েছিল তখন বাবাই তাদের সাথে মারামারি করেছিল। আমি দেখছিলাম কিন্তু হুট করেই লোকগুলো বাবাইকে ফেলে আমাকে নিয়ে দৌড় দেয়।”
তখন ইশান হিরের থেকে পানি নিয়ে নীলকে বলল,,
“নীল আমার বাবাই টা নাও পানি খাও!”
তখন নীল পানি খেয়ে বলল,,
“আরে ইশান বাবাই তুমিও এখানে আছো? দেখো সবাই এখানে ছিল আর আমাকে একা রেখে এসেছিল।”
তখন মেঘ নীলকে বলল,,
‘আসলে কি বলো তো নীলবাবু তোমাকে আমরা সবাই সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই এরকম হলো। চলো ওপরে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিই অনেক ঘেমে গেছো তো।”
তখন নীল বলল,,
“হিরু মামনি, লিয়ু মামনি আর জাবিন মামনি তোমরা আজ ভালো মেরেছো ঐ পচা লোকগুলোকে আমি দেখেছি।”
হির মেঘের কোল থেকে নীলকে নিয়ে বলল,,
“নীলবাবু ওসব পরে হবে চলো আমরা ওপরে যাই। মেঘ তুই থাক সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তো।”
হির নীলকে নিয়ে চলে গেল বাকিরা নিচেই রইলো। তখন ধূসর ইশান কে বলল,,
“তুই ওকে চিনিস ইশান আমাকে জানাস নি!”
“আমি আগে জানতাম না কয়েকদিন আগে জেনেছি। ”
তখন মেঘ বলল,,
‘যা প্রশ্ন করার আমাকে করুন। আর ধূসর ধন্যবাদ আমাকে ভুল না বোঝার জন্য।আমাকে এতটা বিশ্বাস করার জন্য।”
তখন ধূসর হেসে বলল,,
“ভালোবাসার মানুষ টাকে যদি বিশ্বাসই না করতে পারলাম তাহলে কিসের ভালোবাসলাম। যাই হোক এবার বলো নীল কে?তোমার ছেলে যে নয় সেটা আমি ভালোমতোই জানি। প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও আকাশ মাহমুদের কথায় বুঝেছি।
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“নীলিমার ছেলে আমার দায়িত্ব আমার ভালোবাসার এক অংশ আমার নীল।”
“আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু নীলিমা কে? আকাশ মাহমুদ তো তার কথাই বলেছিল তাকে শেষ করে ফেলেছে। কি হয়েছিল তার?
ধূসরের প্রশ্ন শুনে মেঘের কান্না পেল। মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে আয়মান চৌধুরী মেঘের কাছে এসে মেঘকে একহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বলল,,
“আম্মা সবকিছু খোলাসা করার সময় হয়ে গেছে।”
মেঘ চোখ বন্ধ করলো ওর চোখ থেকে একফোঁটা পানি গরিয়ে পরলো। ও বলতে শুরু করল,,
“সময়ের ব্যবধানে এক অদ্ভুত লগ্নে অদ্ভুত ভাবে তার সাথে আমার পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে আমার সেরা বন্ধু হয়ে উঠে। আমরা ছিলাম একেঅপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। দুজনে বেশিরভাগ সময় একসাথেই কাটাতাম। এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়ে আমরা পাঁচ বান্ধবী একসাথে একই কলেজে ভর্তি হই সেখানেই প্রনয় ঘটে সোহেল মাহমুদ খান আর নীলিমার। সোহেলের নীলিমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি বেড়ে যায়। তাই ওরা বিয়ে করে নেয়। বিয়ে বছর দুই ঘুরতে না ঘুরতেই অনার্স প্রথম বর্ষের শেষের দিকে ওদের ঘর আলো করে নীল আসে। ওদের দিন ভালোই চলছিল। আকাশ মাহমুদ ছিল সোহেল মাহমুদ খানের ভাই। সোহেল মাহমুদ বাবা সব সম্পত্তি সোহেল মির্জার একার নামে করে রেখেছিল আর নীল হবার পর সোহেল মাহমুদ খান সব নীলের নামে করে দেয়। এটা আকাশ মাহমুদ প্রথমে জানতে না পারলেও পরে জানতে পারে। কয়েকদিন পর সোহেল একটা দুর্ঘটনায় মারা যায়। নীলি খুব ভেঙে পরেছিল কিন্তু ওর শুশুরবাড়ির লোক ওকে সাহস যুগিয়ে ছিল হঠাৎ একদিন রাতে প্রায় এগারোটায় ও আমায় ফোন দেয়,,
অতীত,,
“মেঘ কোথায় তুই তাড়াতাড়ি আয় কেউ আমাদের মারতে চায়!”
তখন মেঘ ব্যস্ত হয়ে বলল,,
“কি বলছিস! কোথায় তুই?”
“আমি রাস্তায় নীলকে নিয়ে দৌড়াচ্ছি বাবা আর মা একটা অনুষ্ঠানে গেছে বাড়িতে কেউ ছিল না। আকাশ আমাদের মারতে চাইছিল আমি জানালা দিয়ে পালিয়ে এসেছি তুই তাড়াতাড়ি আয়! ওরা বোধহয় আমার পিছু নিয়েছে।”
‘কোন রাস্তায় আছিস আসছি!”
জানিনা তবে বোধহয় আমাদের বাড়ির ডান দিকের রাস্তা দিয়ে এসেছি। তুই তাড়াতাড়ি আয় আমি মরতে চাই না আমি নীলকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
“আচ্ছা ঠিক আছে আসছি আমি টেনশন করিস না। তোর কিছু হবে না আমি আসছি।
মেঘ তখন ফ্ল্যাটে থাকতো ও তাড়াতাড়ি করে গাড়ি নিয়ে বের হয় প্রথমে ওর আব্বাকে আর পরে জাবিনদের ও ফোন করে জানায়। মেঘ তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যায় ঐ রাস্তায় ও নীলি বলে ডাকতে থাকে। তখন নীলির দেখা পাওয়া যায় ও দৌড়ে মেঘের দিকে আসছে। মেঘ সেদিকে দৌড়ে যায় নীলির কাছে যাবে তার আগে একটা গুলি এসে লাগে নীলির পিঠে। নীলি নীলকে আগলে নিচে পরে যায় মেঘ দৌড়ে ওখানে যায় তখন নীলি বলে,,
“নীলকে বাঁচা ওকেও মেরে ফেলবে আকাশ ওকে ছাড়বে না। ওর এত লোভ যে নীল কে মেরে সবকিছু হাতাতে চায়। আমি লুকিয়ে সব শুনেছি।”
‘কি বলছিস!”
‘তুই পালা ওকে নিয়ে আমার যা হয় হোক নীলের যেন কিছু না হয় তুই লুকিয়ে পর ওরা এদিকেই আসছে। মনে রাখিস নীলের দায়িত্ব সব তোর। নীলের যদি কিছু হয় আমি কোনদিন তোকে ক্ষমা করবো না মেঘ।”
‘তোকে এভাবে ফেলে আমি কোথাও যাবো না।”
নীলি নীলকে মেঘের কাছে দিল আর বলল,,
“লুকিয়ে পর ওরা এসে গেছে । আমার যা হয় হোক নীলের যেন কিছু না হয়।”
সত্যি আকাশ মাহমুদ দল নিয়ে হাজির । তা দেখে মেঘ নীলকে নিয়ে দৌড় দিল। আকাশ মাহমুদ ও দৌড় দিল। মেঘ কিছুদূর গিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পরলো। রাতের অন্ধকারে ওরা বুঝতে পারলো না । ওরা এদিক সেদিক খুঁজলো পেল না। আকাশ মাহমুদ নীলিমার দিকে এগিয়ে গেল তা দেখে মেঘ ভয় পেল ও লুকিয়ে ওদের পেছনে গেল। আকাশ মাহমুদ নীলির ওখানে গিয়ে নীলিকে একটি লাথি মেরে বলল,,
“কি ভেবেছিস তোর ঐ বান্ধবী মেঘ তোর ছেলেকে বাঁচাতে পারবে ? তোর ছেলেকে তো নিয়ে গেল এখন তোকে কে বাঁচাবে?”
তখন নীলি বলল,,
‘আমার ছেলের তুই কিছুই করতে পারবি না। ও এমন একজনের কাছে আছে সি ইজ এ সেভিয়ার। এতদিন যেভাবে আমাকে আগলে রেখেছিল সেভাবে আমার ছেলেকেও আগলে রাখবে। তুই আমার নীলের কিচ্ছু করতে পারবি না।”
এ কথা শুনে আকাশ মাহমুদ হাসলো আর বলল,,
“আচ্ছা সেটা দেখা যাবে তবে সেটা দেখার জন্য তুই বেঁচে থাকবি না।”
বলেই আকাশ নীলিমাকে তিনটা গুলি করলো তা দেখে মেঘ কেঁদে উঠলো। আওয়াজ যেন না হয় এই জন্য মুখ চেপে ধরলো তখন নীল কেঁদে উঠলো হয়তো সে বুঝতে পেরেছে সে আজ এতিম হতে চলেছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজে সকলে সেদিকে এলো ঠিক তখনি আয়মান চৌধুরী জাবিনদের নিয়ে আর পুলিশ নিয়ে হাজির তা দেখে আকাশ মাহমুদ তার দলবল নিয়ে পালালো। মেঘ ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে নীলির কাছে গেল। রক্তমাখা মুখ বুকে জরিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
~চলবে,,