#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেঘের এমন প্রশ্নে কিছু মানুষের আত্মা যেন চমকে উঠলো। সবথেকে বেশি ধূসরের পরিবার। তারপরে মেঘের পরিবার। কারন তাদের এ বিষয়ে ধারণা নেই।আশরাফ হক অবাক চোখে মেঘকে দেখলো। তিনি বলল,,
“তুমি কিভাবে জানলে? যে এহসান এর মেয়ে ছিল। তোমার তো জানার কথা নয় তাছাড়া এহসান ও তো তোমায় জানায় নি?
মেঘ হেসে বলল,,
“মিস্টার আশরাফ হক আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন এটা কোর্ট এখানে কোন পার্সোনাল পোগ্রাম হচ্ছে না। তাই সেসব পরে। তবে একজন লয়ার হয়ে হিসেবে আপনাকে জানা আমার প্রয়োজন আপনার ব্যাপারে জানতে গিয়েই জেনেছি। এখন বলুন তাকে কিভাবে মেরেছেন?”
এহসান খানের পরিবার সবাই আশরাফ হক আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। আশরাফ হক কিছু বলছে না দেখে মেঘ আবারও বলল,,
“কি হলো বলুন চুপ করে থাকলেই আপনি পার পাবেন না। আপনি কিন্তু কোর্টের মহামূল্যবান সময় নষ্ট করছেন! কি ক্ষতি করেছিল নাইনে পড়ুয়া মেয়েটা যার জন্য তাকে আপনার মারতে হলো। সে তো আপনার কোন ক্ষতি করেনি তাহলে কেন তারসাথে ওরকম করেছেন?
আশরাফ হক এবার মুখ খুললেন তিনি বললেন,,
“কারন সে এহসানের আদরের মেয়ে ছিল। তাকে মেরে ফেললে এহসান একদম ভেঙে যাবে। যেমন টা মেঘকে শেষ করলে আয়মান ভেঙে যাবে। অবশ্য আমি সবাইকেই শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আমি যেভাবে এতো ভালোবাসার পরেও শিরিন কে পাই নি। তেমন ভাবে এত ভালোবাসার পরেও এহসান কেন তার মেয়ের সাথে থাকবে। ওদের সুখ আমার সহ্য হয় না। তাই একদিন ওর মেয়ে যে গাড়ি করে স্কুলে যায় সেই গাড়ি ব্রেক ফেইল করে দিই। আর গাড়িটা একটা খাদে গিয়ে পরে। আমি সেদিন সফল হয়েছিলাম ওর কারন মেয়েটা সেদিন মরে গিয়েছিল। তারপর ওরা ওখান থেকে চলে আসে জানি না কোথায় নাহলে ওর পরিবার কে এক এক করে সবাইকে মেরে ফেলতাম।”
এ কথা শুনে এহসান আর ধূসর দাঁড়িয়ে গেল। ধূসর দৌড়ে গিয়ে আশরাফ হক কে দুই টা ঘুষি মারলো। আর কলার ধরে বলল,,
“তুই আমার বোনকে মেরেছিস আমরা ভাবতাম ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। কিন্তু তোর জন্য আমার বোন মরে গেছে আমার আদরের বোনকে তুই মেরেছিস আমি তোকে ছাড়বো না। তোর জন্য আমাদের পরিবার এখনো কাঁদে।”
হুট করেই রুমটা গরম হয়ে উঠে। মেঘ ভাবতেই পারে নি ধূসর এরকম কিছু করবে। মেঘ ধূসরের হাত ধরে বলল,,
“ধূসর কি করছেন কি? এটা কোর্ট ছাড়ুন ওনাকে উনি ওনার কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পাবে।”
প্রিয়তমার স্পর্শে ধূসর শান্ত হলো। ও আশরাফের কলার ছেড়ে দিল। ও বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“আমি দুঃখিত মহামান্য আদালত!মাথা ঠিক ছিলো না।”
তখন জজ বলল,,
‘প্রথমবার বলে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। এরপর থেকে এটা মাথায় রাখবেন। এখানে বিশৃঙ্খলা করা নিষিদ্ধ।”
“জি!”
ধূসর গিয়ে ওর বরাদ্দকৃত জায়গায় বসে পরলো। দিলরুবা খানম কাঁদছেন। এহসান চৌধুরী এক হাত দিয়ে তাকে ধরে আছেন। ধূসরের চোখ থেকেও এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। মেঘ তাকিয়ে দেখলো। অতঃপর জজের নিকট তার সকল প্রমান পেশ করা হলো। কোর্ট আশরাফ হক কে শাস্তি স্বরুপ মৃত্যুদন্ড দিল। মেঘ একবার আশরাফ হকের দিকে তাকালো আর ভাবলো তার জীবনের কি ছিল আগে আর এখন কি আছে পুরো জীবনটা এমনিই এমনিই গেল। মেঘ আশরাফ হকের দিকে এগিয়ে গেল। তা দেখে সবাই অবাক হলো। মেঘ আশরাফ হকের কাছে গিয়ে বলল,,
“কি বলেছিলাম না শাস্তি ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হন দেখলেন তো সেই দুই টাকার লয়ারের কাছে হারতে হলো। আসলে কি বলুন তো,,
-আল্লাহ যদি আপনার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার মতো কেউ নেই।
[সূরা ইউনুস : ১০৭]
এই আয়াত দ্বারা কি বুঝলেন আপনি যতোই চেষ্টা করুন না কেন আল্লাহ তায়ালা যার সাথে থাকেন কেউ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যেমনটা হাজার বার আমার ক্ষতি করতে চেয়েও আপনি পারেন নি। আমার ফুপি আর কাকাই কে আপনার দিকে টেনেছেন। এর সব দায় আপনার ওপর পরবে। শুধু তারা তাদের অন্যায়ের দায় নেবে না এটা আপনাকেও বহন করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন
“যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহ্বান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে । এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না । আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে । এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না ।
_________[মুসলিমঃ ২৬৭৪; আবু দাউদঃ ৪৬১৯]
ওকে তো সব দায় নেওয়ার ও প্রস্তুতি গ্ৰহন করুন। আচ্ছা আর কিছু বলবো না হ্যাপি জার্নি!
তখন আশরাফ হক রেগে বলল,,
“তুমি কি ভেবেছো এতকিছু করে তুমি আর তোমার পরিবার পার পাবে, না পাবে না। কারন, না থাক বললাম না তোমার জন্য সারপ্রাইজ থাক।”
পুলিশ আশরাফ হক কে নিয়ে চলে গেল। বাকি সবাই কোর্ট থেকে বেরিয়ে গেল। মেঘ ওর কোর্টের চেয়ারে বসে বসে কিছু ভাবছে বোধহয় আশরাফ হকের কথাগুলো। তখন মিস্টার শেখ আসলো ওর কাছে আর বলল,,
‘অভিনন্দন মিস!”
তখন মেঘ হেসে বলল,,
“শুকরিয়া! তবে কি জানেন তো সত্যের সবসময় জয় হয়। আমাদের লয়ারদের কাজ সত্যের সাথে থাকা।কিছু টাকার জন্য মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া উচিৎ নয়। আশাকরি আপনি বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলেছি!
মিস্টার শেখ হাসলো আর বলল,,
“কি করবো বলুন তো আজ সোজা পথে চলার থেকে বাঁকা পথে চললে মানুষ তার গন্তব্যে আগে পৌঁছে যেতে পারে আর সহজেই।”
মেঘ হাসলো আর বলল,,
“গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য নিজের ঈমান বিক্রি করে দেবেন নাকি! অবশ্য আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সেটা আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। যাই হোক পথ আপনার আপনি জানেন কোন পথে আপনি যেতে চান। এর দায় আপনার, অন্যের নয়। যাই হোক আসছি!
“যে মেঘকে নিয়ে নিয়ে এত কথা হলো সেই মেঘ কি আপনি মিস K.A.megh?
মেঘ হাসলো তা দেখে তিনি বুঝতে পারলো। সেই মেঘই এই মেঘ। সে বলল,,
“আমায় বিয়ে করবেন আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে। কথা দিচ্ছি আমি আজ থেকে সব সময় সত্যের পথে চলবো ইনশাআল্লাহ্।”
“সত্যের পথে চলুন তবে আমার জন্য নয় আপনার রবের জন্য! কারন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও সম্পদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি।”
~সহীহ মুসলিমঃ ২৫৬৪
যারা সৎ পথে চলবে তারা তাদের প্রতিদান পাবে তারা অসৎ পথে চলবে তারাও তাদের খারাপ প্রতিদান পাবে। সবথেকে বড় কথা আমি বিবাহিত আর আমার হাজবেন্ড আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমিও তাকে ভালোবাসি। আসছি আল্লাহ হাফেজ!”
মেঘ আর না দাঁড়িয়ে পেছনে ঘুরলো ধূসর ওর পেছনেই ছিল মেঘের দেরি হচ্ছে বলে ও এসেছিল। মিস্টার শেখ এর প্রশ্ন শুনে ও দাড়িয়ে পরে তবে মেঘের উত্তর শুনে তার মুখে আপনাআপনি হাঁসি ফুটে উঠে। মেঘ ধুসরকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলল,,
“ধূসর আপনি ঠিক আছেন?”
তখন ধূসর বলল,,
“হুম তো চলো যাওয়া যাক। বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে তোমার!”
“হুম!”
মেঘ বাইরে এলো তখন প্রেস মিডিয়ার লোক ওকে আটকে ধরলো এটা সম্পর্কে ওর তেমন ধারনা ছিল না।এমনটা দেখে ও আর ধূসর দু’জনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও আসার পথে ওর মুখের নিকাব বেঁধে নিয়েছে। ও দুই একটা উত্তর দিয়ে ওখান থেকে চলে গেল আর এটাও বলল ও আর কোন প্রশ্নের উত্তর দেবে না।
গাড়ির কাছে গেল সবাই ওখানেই অপেক্ষা করছে। দিলরুবা খানম মেঘকে দেখেই জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠল। মেঘ তাকে আগলে নিল।আর বলল,,
“মা একদম কাঁদবেন না যা হয়েছে হয়েছে!”
“ঐ লোকটা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে এটা আমরা জানতামই না। তুমি আজ না বললে জানতেই পারতাম না। ও আমার নীলাশাকে মেরে ফেলেছে।”
মেঘ অবাক হয়ে ওনাকে ছেড়ে বলল,,
“নীলাশা?”
দিলরুবা খানম মাথা নেড়ে বলল,,
“হুম আমার মেয়ে আমার নীলাশা! আমার মেয়ের নাম নীলাশা খান ছিল।”
এ কথা শুনে মেঘের মাথা ঘুরতে লাগলো। ও এক পা পিছিয়ে গেল। ও বলল,,
“আব্বা পানি খাবো একটু পানি দিন!”
আয়মান চৌধুরী মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি করে পানি দিল। মেঘ পানি খেল সবার দিকে তাকালো। নিজেকে সামলিয়ে দেখলো ধূসরের চোখে পানি চিকচিক করছে তা দেখে মেঘ বলল,,
“আপনারা সবাই চৌধুরী বাড়ি যান আমি আর ধূসর পরে আসবো। আর যা হয়েছে তা নিয়ে কেউ মন খারাপ করবেন না। এটা জীবনের একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয় এটা মনে করে নিজেদের সামলান।”
সবাই মেঘের কথামতো চলে গেল। মেঘ ধূসরের হাত ধরে গাড়িতে উঠালো নিজে ড্রাইবিং সিটে বসলো। ধূসর কোন কথা বলছে না ওর ধ্যান অন্য দিকে। মেঘ একটা লেকের পাড়ে গাড়ি থামালো। ধূসর কে নিয়ে নামলো। ওখানে বেঞ্চ আছে মেঘ ধুসরকে নিয়ে সেখানে বসলো। মেঘ বলল,,
“ধূসর!
ধূসর আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। ও মেঘকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠল। তা দেখে মেঘের ও চোখে পানি এলো। ধূসর বলতে লাগলো,,
“কেন এমন হলো মেঘ! কেন মানুষের আক্রোশের তোপে পরে আমার বোনকে মরতে হলো। কেন আমার পরিবার টা এলোমেলো হয়ে গেলো। তুমি জানো আমি আমার বোনকে আমি খুব ভালোবাসতাম। আমার মা আজও নীলাকে মনে করে কাঁদে। ওর স্মৃতি থেকে বাঁচতে আমরা সিলেট ছেড়ে ঢাকায় আসি। ওখানে পুরো বাড়িটা জুরে নীলার স্মৃতি ছিল। ও বাড়িতে ওর স্মৃতি গুলো আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাই আমরা ওখান থেকে চলে আসি। সেইবার সিলেটে তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম। আমরা নীলার জন্যই চলে আসি। যখন পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা দিই তখন ওর কথা মনে পরে সকলের মুখের হাসি গায়েব হয়ে যায়। তুমি জানো আমি ওকে পিচ্চি বলে ডাকতাম।ও আমাকে যখন ছোট ভাইয়া বলতো তখন মনটা প্রশান্তিতে ভরে যেতো। আমার কাছে আবদার করতো আবদার না রাখলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো যতক্ষন না পর্যন্ত তার আবদার পূরণ না হতো সে পর্যন্ত সে কিছুই করতো না। আমাদের দুই ভাইয়ের চোখের মনি ছিল পিচ্চি। প্রথম বোন কি না। রোজ নিয়ম করে ওর জন্য চকলেট নিয়ে আসতাম ও খুশিতে হাত তালি দিতো। একদম বাচ্চা ছিল সেদিন আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে স্কুলে চলে গেল কিন্তু আর ফিরলো না। সেদিন সবাই পাগলের মতো খুঁজছিল ওকে তখন শোনা যায় খাদে আমাদের গাড়ি পরে আছে। আমরা সবাই সেখানে যাই শুধু গাড়িটাই পাই নীলাকে আর পাই না। ওখানে নদী ছিল সবাই বলে লাশটা হয়তো নদীর স্রোতে চলে গেছে। নীলার স্কুল ব্যাগ দেখে সবাই ওকে মৃত ঘোষণা করে। তুমি জানো সেদিন আমি পাগলের মতো চিৎকার করে কাঁদছিলাম আমার পিচ্চির জন্য। আমার মা অজ্ঞান হয়ে পরেছিল সবাই খুব ভেঙে পরেছিল। সেই দিনটা ছিল আমাদের জন্য অভিশপ্ত। আমরা ভাবতাম ওটা নরমাল এক্সিডেন্টে ছিল কিন্তু সেটা তো এক্সিডেন্ট ছিল না। ওকে খুন করা হয়েছিল আর আমরা কেউ জানতেই পারি নি। ওর কথা মনে হতেই তোমার বুক চিরে আসে দীর্ঘশ্বাস। ওর কথা আমরা মনে করতে চাইনা কারন সবাই খুব কষ্ট পায়। তাই তোমাকেও কোনদিন বলা হয় নি।তুমি জানো ওর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন আমি বাড়ি থাকতাম না সারদিন নিজের মতো একা কাটাতাম। আমি আমার বোনকে খুব ভালোবাসি মেঘ আমি খুব করে চাই আমার পিচ্চি আমার কাছে ফিরে আসুক। ও ফিরে আসলে আমি ওকে খুব আগলে রাখবো হারাতে দেব না।
ধূসর বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। মেঘের চোখ দিয়েও পানি পরছে। মেঘ ধুসরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,,
“শান্ত হন ধূসর! আমি জানি এখন আপনার কেমন লাগছে। নিজেকে সামলান।”
“আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না মেঘ!”
মেঘ ধূসরকে ছেড়ে দিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল,,
“আমার দিকে তাকান ধূসর! আপনার যেমন আমার কষ্ট সহ্য হয় না তেমন আমারও আপনার কষ্ট সহ্য হয় না। প্লিজ আমার জন্য হলেও নিজেকে সামলান।”
ধূসর মেঘের দিকে তাকালো আর ওর কথা শুনে চোখ মুচলো। মেঘ তখন বলল,,
“আমার কোলে মাথা রেখে আকাশ দেখবেন ধূসর!”
ধূসর বেঞ্চ শুয়ে মেঘের কোলে মাথা রাখলো। মেঘ ধূসরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,,
“আমার কথা মনে দিয়ে শুনুন ধূসর,,
কিছু মানুষকে আমরা জীবন থেকে হারাতে চাইনা, তবুও তারা হারিয়ে যায়।কিছু সম্পর্ক আমরা ধরে রাখতে চাই, তবু সেসব সম্পর্ক আমাদের মুঠো গলে বের হয়ে যায়! যেমন টা আপনার পিচ্চি আপনার থেকে হাড়িয়ে গেছে। আবার হুট করেই আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কিছু সম্পর্কে জড়িয়ে যাই।কিছু সম্পর্ক হয় ক্ষনিকের বাতাসের মতো এসে ছোঁয়া দিয়ে আবার চলে যায়, পাখির পালকের মতো ফেলে যায় অনুভূতি গুলো । যেমন টা আমার সাথে আপনার সম্পর্ক পাখির পালকের মতো অনুভূতি ছরিয়ে রয়েছে আমাদের মনে। সবথেকে বড় কথা আমরা যেমনটা চাই সবসময় তা হয়না। আপনার সাথে আমার সম্পর্ক টা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই জুরে গেছিল। আমি ভাবতেও পারিনি আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। যদিও আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল না। যা হয়েছে তা আমাদের অতীত, অতীত ভুলে বর্তমানে সুখী থাকুন। যে অতীত মনে করলে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। সেই অতীত মনে না করাই উত্তম। আপনার অতীত নিয়ে ভাববেন না আপনার বর্তমান নিয়ে ভাবুন আমি আপনার পরিবার সবাই আপনার কাছে আছে।
ধূসর চুপচাপ মেঘের কথা শুনলো সবশেষে মেঘ ধূসরের কপালে একটা চুমু দিল। ওর মনটা হুট করেই ভালো হয়ে গেল। ধূসর কিছুক্ষণ পর বলল,,
“তুমি আমার উত্তম স্ত্রী। কারন একজন উত্তম স্ত্রীই পারে হৃদয় বাগের ফুটন্ত ফুল দিয়ে স্বামীকে সাজাতে এবং ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে স্বামীর সব দুঃখ-বেদনাকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিতে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
“জীবন আনন্দদায়ক,আর সবচেয়ে মধুর আনন্দ হচ্ছে একজন উত্তম স্ত্রীর সাহচর্য।
[সহিহ মুসলিম: ১৪৪৭]
মেঘ হাসলো আর বলল,,
“জীবনে তাই হোক না কেন? বউয়ের প্রশংসা করা ভুলবেন না আপনি?”
“আমার বউটাই যে এরকম কি করবো বলো। তার প্রশংসা করে একটা উপন্যাস লিখলেও কম পরবে। আমার ভালোবাসা কি না সে! এই যে নিষ্ঠুর মেয়েটা আমাকে আবার ভালোবাসি বলবে?”
মেঘ ধূসরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র বলুন তো ভালোবাসি বলা সহজ না কঠিন?”
তখন ধূসর হেসে বলল,,
“আমার কাছে তো সহজ!এখন তোমার কাছে কিরকম সেটা আমি জানি না।”
“আপনার কাছে সহজ কারন আপনি রোজ নিয়ম করে আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করেন। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে ভালোবাসি বলা কঠিন। তবে সেটা বন্ধুত্বের জন্য বলা সহজ হলেও যাকে আপনি সত্যিকারের ভালোবাসেন তাকে বলা কঠিন। কেন আপনার মনে নেই যেদিন প্রথম আপনি আমাকে ভালোবাসি বলেছিলেন সেদিন আপনার হাত পা কাঁপছিল আর ভালোবাসি বলার পরে দৌড়ে চলে গেছিলেন। কারন এই ভালোবাসি শুধু দু’টো শব্দ নয়। সামনের মানুষটার প্রতি তার আশা, ইচ্ছে ,আকাঙ্ক্ষা জরিয়ে সারাজীবন ভালোবেসে একসাথে চলার প্রয়াশ। আর সবথেকে বড় কথা একটা মেয়ের জন্য ভালোবাসি বলা ওতো সহজ নয় সে যখন ভালোবাসি বলে তার ভয় থাকে সামনের মানুষটার সাথে সারাজীবন চলতে পারবে তো মানুষ টা সারাজীবন তাকে এমনই ভালোবাসবে তো। আর সবথেকে বড় কথা একবার যখন একজন মেয়ে ভালোবাসি বলে দেয় তখন সে সেই সব কিছু থেকে রিলিফ পায় আর ভাবে এই ভালোবাসি শব্দ টা আর বলতে হবে না তার। আমি তো ভেবেছিলাম আর বলতে হবে না কিন্তু আপনি তো আমায় সেই কঠিন পরিস্থিতিতে আবার ফেলে দিলেন।”
ধূসর মেঘের কোলে থেকে উঠলো আর ওর মুখোমুখি বসলো। ওর গালে হাত রেখে বলল,,
“তোমায় কথা দিচ্ছি মেঘ বালিকা তোমার আমাকে নিয়ে ভয়ের কোন কারন নেই। আমি যেমনটা আছি তেমনটাই থাকবো আর তোমাকে সবসময় খুব ভালোবাসবো আর পাশেও থাকবো। ওপরের সবকিছু ঠিকই ছিল তবে মেয়েদের ভালোবাসি নিয়ে তুমি বানিয়ে বললে ভালোবাসি বলবে না বলে। ভালোবাসা মানে ভালোবাসো কোন জেন্ডার দেখে হয় না। তবে জানো কি ভালোবাসার প্রকাশ করলে সেই সম্পর্ক মিষ্টতা বাড়ে। তাছাড়া ভালোবাসা প্রকাশ করা রসুল (সা) সুন্নত ও বটে এখন ঝটপট ভালোবাসি বলে ফেলো তো!”
“আমি তো প্রকাশ করি আমার আচরণ দিয়ে মুখে কেন প্রকাশ করতে হবে শুনি। আমি পারবো না!
“নিষ্ঠুর মেয়ে বলো না!”
“যা বলার গুলি খাওয়ার দিনই বলে দিয়েছি আর পারবো না!”
“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা!”
মেঘ হাসলো কি অমায়িক হাসি। মেঘ হেসে বলল,,
“আপনারই তো বউ! এখন চলেন আপনার মুড ঠিক হয়েছে এখন গিয়ে মাকে সামলান আপনি।”
“আজ চলে যেতে হবে বলে পার পেলে নাহলে তোমায় দিয়ে বলিয়ে ছাড়তাম।
“আচ্ছা তাই নাকি আপনি বললেই আমি বলতাম। আমাকে দিয়ে জোর করে আজ পর্যন্ত কেউ কিছু করতে পারে নি।”
“তুমি যে নিষ্ঠুর তাই!”
“হুম ভালো!”
.’মেঘ!
“হুম!”
‘শুকরিয়া সবকিছুর জন্য আর সবথেকে বড় শুকরিয়া হলো আমার জীবনে আসার জন্য। ভালোবাসি নিষ্ঠুর মেয়েটাকে ,ভালোবাসি আমার মেঘবালিকা কে। ভালোবাসি আমার উত্তম স্ত্রীকে ।”
তখন মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
“তাকে বলে দিয়েন তার মেঘবালিকাও তাকে ভিশন ভালোবাসে আর হ্যা তার নিষ্ঠুর মেয়েটাও তাকে ভিশন ভালোবাসে ধূসর এহসান শুভ্র।”
“ভাঙবে তবুও মচকাবে না।”
মেঘ হাসলো তারপর দুজনে গাড়ি করে বাড়ি চলে গেল। সকলে চৌধুরী বাড়িতে আছে। মেঘ যেতে বলেছে তাই। মেঘরা ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে বসলো। মেঘ বলল,,
“আব্বা সবাইকে নিয়ে খেয়েছেন?”
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“না এখনো খাওয়া হয় নি!”
‘এত বেলা হয়েছে ভাবি তুমি রিমঝিম কে খায়িয়ে দাও। আর সবাই খেতে বসো। বড় ফুপি তুমি খাবার বাড়ো তোমাকে মায়মুনা চৌধুরী সাহায্য করবে। আর কাকিমনি তুমি বসে থাকবে নাকি যাও গিয়ে ফুপিকে সাহায্য করো। আমার শুশুরবাড়ি থেকে লোক এসেছে না খেয়ে থাকবে নাকি।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মেঘ এই কথা গুলো বলল আয়মান চৌধুরী তা দেখে হাসলো। চৌধুরী বাড়ির সবাই না চাইতেও উঠলো। আয়মান চৌধুরী এহসান খানকে বলল,,
“তোর মেয়ে শুনেছিস কি বলছে যা ফ্রেশ হয়ে আয়!”
মেঘ সবাইকে বলে ফ্রেশ হতে পাঠানোর জন্য সক্ষম হলো। কিন্তু একজন রয়ে গেল সে হলো দিলরুবা খানম মেঘ সবাইকে যেতে বলে বলল এদিকটা সে দেখে নেবে। সবাই যেতেই মেঘ দিলরুবা খানম এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,,
‘কেন খাবেন না আপনি? কতো বেলা হয়ে গেছে জানেন!”
“হোক! মেঘ তুমি আমাকে জোর করো না আমার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না!”
“আমি যদি খায়িয়ে দিই তবুও আপনার খেতে ইচ্ছে করবে না।”
এ কথা শুনে দিলরুবা খানম মেঘের দিকে তাকালো। তখন মেঘ বলল,,
“নাকি আমার হাতে খেতে আপনি দ্বিধাবোধ করছেন?”
তখন দিলরুবা খানম বললেন,,
“মেঘ টেনে মারবো এক চড় ব্যারিস্টার হয়েছো বলে তোমায় মারতে পারবো না এমন কোন কথা নেই।”
এমন কথায় মেঘ হাসলো আর বলল,,
“মেয়েরা অন্যায় করলে মায়েরা মারবেই তো এতে আবার দেখতে কেন হবে মেয়ে ব্যারিস্টার কি না। যাই হোক শুনুন মা যদি নীলাশা কখনো জানতে পারে তাকে ভেবে আপনারা নিজেদের কষ্ট দিয়েছেন তখন কি তার কষ্ট হবে না। সে ভিশন কষ্ট পাবে। তাকে নিয়ে কাঁদবেন না বরং তার সুন্দর মুহুর্তগুলো ভেবে হাসবেন। দেখবেন কষ্ট অনেক টাই কমে যাবে। তাছাড়া আপনার এক মেয়ে নেই তো কি হয়েছে আমি আছি না আপনার ছেলে মেয়েরা আছে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন দেখে আপনার ছেলেমেয়েদের কি ভালো লাগবে।তারাও তো কষ্ট পাবে। কষ্ট পাবেন না মা সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন না না থাক দরকার নেই আমি তো আপনাকে আমার হাত দিয়ে খায়িয়ে দেব।”
মেঘের কথা শুনে দিলরুবা খানমের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়েছে। ওনার মনটা ভালো হয়ে গেল। ততক্ষনে বাকিরা এসে পরেছে। মেঘ দিলরুবা খানম কে খায়িয়ে দিল মায়মুনা চৌধুরী সেটা দেখতে লাগলো তার ভেতরটা পুরে যাচ্ছে। খাওয়া শেষে ড্রয়িংরুমে বসতেই মেঘের একটা ফোন এলো ও কানের নিয়ে ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে বলল,,
“এটা কি করে হলো? আমি এখনি আসছি!”
~চলবে,,,
#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেঘ ফোন রাখতেই ধূসর জিজ্ঞেস করল,,
“এখন আবার কোথায় যাবে?”
“ফ্ল্যাটে যাবো একটা কাজ আছে।”
“কোন সমস্যা তাহলে আমিও যাই!”
“না তেমন সমস্যা নেই। এমনিতেও আজ বেশ ধকল গেছে বাড়ি গিয়ে রেস্ট নিন। সন্ধ্যার আগেই পারলে চলে আসবো আব্বা। নাহলে সন্ধ্যার পরে।
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“ঠিক আছে!”
মেঘ ওপরে গিয়ে দুই মিনিটে বোরকা হিজাব নিকাব পড়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। ধূসর চেয়েও কিছু বলতে পারলো না। অতঃপর ধূসররাও কিছুক্ষন কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
_______________
এদিকে মেঘ তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাটে পৌঁছালো। দৌড়ে নীলের রুমে চলে গেল। নীল হাত ধরে গোমরা মুখে বসে আছে জাবিন মুখ দিয়ে ধুচ্ছে ইচ্ছে মতো। হির আর লিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। মেঘ গিয়ে বলল,,
“নীল বাবু এটা কি করে হলো? পরে গেলে কিভাবে?
তখন নীল গোমরা মুখে বলল,,
“এখন কি তুমিও বকবে আম্মু। আমি ইচ্ছে করে পরেছি নাকি।”
“তাহলে এটা কি করে হলো?”
“আমি তো দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম হুট করে ব্যালে না ব্যালা কি যেন বলে? লিয়ু মামনি বলো না!
তখন মেঘ হেসে বলল,,
“ওটা ব্যালেন্স হবে!”
“হ্যা হ্যা ঐটাই ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পরে গেলাম নিচে ওখানে একটা কাঁচের টুকরো ছিল ওটা ঢুকে গেলো আমার হাতে। তুমি জানো কতো রক্ত পরেছে।”
মেঘ তখন বলল,,
“তো মাই ডিয়ার বান্ধবীরা আপনারা কোথায় ছিলেন?”
তখন হির বলল,,
“আমি তো জানতামই ও বাগানে গেছে আমি তো কাজ করছিলাম ঘরে। ওনার চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে বাগানে গিয়ে দেখি মহাশয় হাত ধরে বসে আছে এগিয়ে গিয়ে দেখি রক্তের মাখামাখি।”
“আম্মু তুমি জানো হিরু, লিয়ু আর জাবিন মামনি আমায় কতো বকেছে? আমি জানতাম নাকি ওখানে কাঁচের টুকরো থাকবে।”
“নিজের খেয়াল না রেখে এদিক ওদিক গেলে বকবে না তোমায়। তাছাড়া তুমি হির কে না বলে গেছো কেন যদি আরো বড় বিপদ হতো।
“সরি আম্মু এমনটা আর করবো না প্রমিস!”
“এই তো সোনা ছেলে! আচ্ছা সেসব বাদ দাও এখন তোমাকে আর কেউ বকবে না, এখন বলো ব্যাথা কমেছে?”
“হুম আর এইটুকুনি আছে!”
“আচ্ছা তুমি ঘুমাও এখন দেখবে ব্যাথা গায়েব হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা মাথায় হাত বুলিয়ে দাও আম্মু!”
মেঘ হিরদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তোরা খেয়েছিস!
“না খাবো এখন নীলকে খায়িয়ে ওষুধ খায়িয়ে দিয়েছি।”
“আচ্ছা যা তোরা খেয়ে নে নীলকে ঘুম পাড়িয়ে আসছি আমি!”
“আচ্ছা!”
ওরা চলে গেল মেঘ নীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর নীল ঘুমিয়ে পরলে মেঘ কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হলো। ততক্ষনে তিনজনের খাওয়া শেষ। জাবিন বলল,,
” বাগানে কাঁচের টুকরো থাকবে কেন আজব ওটার জন্য আমাদের নীল ব্যাথা পেল।”
“আরে হয়তো ভুলে পরে ছিল তাছাড়া এই বিল্ডিং এর সবাই জানে বাচ্চারা সবাই বাগানে খেলে এরকম ইরেসপন্সিবল এর মতো কেউ কাজ করবে না। তবে তোরা ফোন দিস নি কেন? নীলই তো ফোন দিয়ে আমায় বলল আম্মু আমার হাত অনেক খানি কেটে গেছে তাড়াতাড়ি আসো। আমি তো একপ্রকার ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।”
মেঘের কথায় তখন হির বলল,,
“আরে আজ তোর ওপর অনেক ধকল গেছে। তাই বিরক্ত করতে চাই নি।
“নীলের ব্যাপারে আমি কখনো বিরক্ত হই না। এরপর থেকে যেন মনে থাকে ছোট কিছু হলেও আমাকে জানাবি। দেখেছিস কতোখানি কেটে গেছে।”
“আচ্ছা বলবো! আর কংগ্ৰাচুলেশন দোস্ত আজকের কেসটা তুই জিতে গেছিস।”
“শুকরিয়া!”
“আচ্ছা তুই বলেছিলি না ধূসর ভাইয়ার বোনের কথা ওটার কি হলো?”
“কিছু না ওটার কথা বাদ দে! এখন বল,
তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো ওরা বেশ চমকে উঠলো। দ্বিধাদন্ড নিয়ে লিয়া দরজা খুললো তখন বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো,,
“সারপ্রাইজ!”
লিয়া খুশিতে কেঁদেই দিলো। কারন ফাহিম এসেছে লিয়ার হাজবেন্ড। লিয়ার কান্না দেখে ফাহিম ভেতরে ঢুকে লিয়াকে জরিয়ে ধরে বলল,,
“আরে মেয়ে কাঁদছো কেন? আমি আসায় খুশি হওনি বুঝি আচ্ছা তাহলে চলে যাই।”
তখন লিয়া শক্ত করে ফাহিম কে জরিয়ে ধরে বলল,,
“আপনি খুব খারাপ ফাহিম! খুব খারাপ, দুদিন ধরে ফোন ধরছেন না কেন? আপনি জানেন কতো টেনশনে ছিলাম।”
“আরে বউ তোমায় সারপ্রাইজ দিতে হতো তো তাই।”
এতক্ষন তিন বান্ধবী চোখ ছোট ছোট করে ওদের দেখছিল। হুট হির জোরে কাশি দিয়ে বলল,,
“এখানে অনেক বাঁচ্চা পুলাপাইন আছে তাই রোমান্স একটু সামলে করুন দুলাভাই!”
হিরের কথা শুনে লিয়া আর ফাহিম তাড়াতাড়ি করে নিজেদের ছাড়িয়ে দাঁড়ালো। ওরা তিন বান্ধবী হাসলো ফাহিম মেকি হাঁসি দিয়ে বলল,,
“সরি সরি সালিকা! বাহ সবাই দেখি এক জায়গায় কেমন আছো তোমরা। এখানে আসার জন্য দুঃখিত। আসলে বাড়িতে গিয়েছিলাম সেখানে থেকে বলল লিয়া ফ্ল্যাটে এসেছে বউ কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তর সইছিল না তাই চলে এলাম তোমরা কিছু মনে করো না ঠিক আছে।”
তখন মেঘ হেঁসে বলল,,
“কিছু মনে করি নি ভাইয়া। আর আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ! আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”
“কি রে লিয়া দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা শরবত কর!”
তখন লিয়া মুখ ভার করে বলল,,
“পারবো না আমি!”
তখন ফাহিম হেঁসে বলল,,
“বউয়ের অভিমান হয়েছে বুঝি কিন্তু তোমার জামাইয়ের তো গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে সে খেয়াল কি রাখো হুম!”
লিয়া কিছু না বলে চলে গেল কিচেনে তা দেখে সবাই মিটিমিটি করে হাসলো। তখন ফাহিম বলল,,
“তা তোমাদের প্রিন্স কোথায়?”
তখন হির বলল,,
“আর বলো না ভাইয়া দোলনায় দোল খেতে গিয়ে পরে গিয়ে হাত কেটে গেছে তাই এখন ঘুমাচ্ছে।’
“ওহ আচ্ছা! তোমরা যা করেছিলে না বিয়ের সময় ভয় পেয়ে গেছিলাম এখনো সেদিনের কথা ভাবলে কেমন যেন লাগে। নীলকে লিয়ার ছেলে বলে কি ঘোলটাই খায়িয়েছিলে। মনটা একেবারে খান খান হয়ে গেছিল। যাকে ভালোবাসি সে অন্য বাচ্চার মা। ভাগ্যিস মেঘ বলেছিল নাহলে সেদিনই হার্ট অ্যাটাক করতাম।”
তখন মেঘ হেসে বলল,,
‘ওটা হিরের প্ল্যান ছিল। আসলে হুট করে নীল আপনার সামনে পড়াতে। ও বুঝতে পারছিল না কি করবে। তাই আপনার সাথে মজা করেছে।”
তখন হির বলল,,
“চান্দু তোমার বিয়ের ডেট ফিক্সড হোক তারপর দেখবে তোমার কি হাল হয়। সব ভেবে রাখা আছে। আমার তো ধূসর ভাইয়ার কথা ভেবে এখনি হাসি পাচ্ছে।”
“এই হির তুই কিছুই করবি না।”
“সেটা পরে দেখা যাবে এখন চুপ থাক।”
তখন ফাহিম বলল,,
“কতটুকু কেটেছে নীলের হাত?
“বেশি না আবার কমও না মাঝামাঝি আছে।”
হিরের কথায় ফাহিম হাসলো আর বলল,,
“নীলিমা অনেক লাকি তোমাদের মতো বান্ধবী পেয়ে। এই যে সে এখন এখানে নেই তবুও তোমরা চারজন কি সুন্দর নীলকে আগলে রেখেছো নিজের ছেলের মতো। নিজের মা না থাকলে কি হবে। চার চারটা মা আছে ওর কাছে। আই প্রাউড অফ মাই বউ।”
তখন জাবিন বলল,,
“আহ হা এখানেও বউয়ের প্রশংসা আর আমরা কি?”
“আরে শালিকা রাগ করে না বউ কে সবসময় আগে রাখতে হয় তাতে বউ খুশি হয়। তোমাদের নিয়েও আমার গর্ব হয় বুঝতে পারলে।”
তখন লিয়া এলো আর বলল,,
“আলগা ভালোবাসা একদম দেখাবেন না। নিন শরবতটুকু খেয়ে নিন।”
“বউ বানিয়েছে না খেয়ে পারি।”
ফাহিম অর্ধেক খেয়ে লিয়ার দিকে এগিয়ে দিল। লিয়া জানে এর মানে তাই কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিল। তখন মেঘ লিয়াকে বলল ফাহিমের সাথে বাড়ি চলে যেতে। এতদিন পর জামাই এসেছে একটু মান অভিমানের পালা শেষ করে একে অপরের সাথে সময় কাটাক। কিছুক্ষণ পর নীলকে দেখে লিয়া ফাহিমের সাথে চলে গেল। তখন হির বলল,,
“কবে আমার জামাই হবে এভাবে হুট করে এসে সারপ্রাইজ দেবে আমিও লিয়ার মতো অভিমান করবো! কবে আসবে আমার জামাই।”
এ কথা শুনে মেঘ আর জাবিন হাসলো। তখন মেঘ বলল,,
“আসবে কি এসে গেছে ঐ চার তলার নাজিম ভাই আছে না। উনি তোকে পছন্দ করে তুই হ্যা বললেই বিয়ে পাকা।”
“ঐ ক্যাবলা কান্তকে কে বিয়ে করবে আমি কখনো না। তাছাড়া ওনার মারে দেখছিস দেখতেই রিনা খানের মতো কুচুটি মহিলা। তুই ধূসর বাইরে জিগা ইশান ভাই ছাড়া আর কোন সিঙ্গেল পোলা আছে নাকি ওনার বন্ধু নাইলে তার সাথে মুই বিয়া করুম।”
‘আছে একটা পুলিশ নাম অনিক। অবিবাহিত! চলবো নাকি!”
“আমার মতো মেয়েরে নিলেই চলবো। নাম হুইনাই ভাল্লাগছে! তারওপর আবার পুলিশ খাপে খাপ পন্চুর বাপ।”
বলেই তিন বান্ধবী হেসে উঠলো। এই হিরটা না সবসময় উল্টো পাল্টা বলে সবাইকে হাসায়। কে জানে ভেতরে কেমন থাকে। মেঘ কিছুক্ষণ থেকে সন্ধ্যার আগেই চলে গেল।
___________________
মেঘ বাড়ি আসার পর দেখলো সব শুনশান যেন কোথাও কেউ নেই। মেঘ ফ্রেশ হয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করলো। তারপর আয়মান চৌধুরীর রুমে গেল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,
“আব্বা আসবো?”
“হুম আসেন!”
মেঘ ভেতরে ঢুকল। আয়মান চৌধুরী বোধহয় ওর অপেক্ষায় করছিল। ও ভেতরে দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“আম্মা চলেন একটু চন্দ্রবিলাস করে আসি ছাদ থেকে!”
মেঘ বুঝতে পারলো আয়মান চৌধুরীর মন খারাপ তাই সে বিনা বাক্যে আব্বার সাথে চললো। মায়মুনা চৌধুরী কেবল দেখে গেল। ছাদে একটা দোলনা আছে তারা দুজনে সেখানে বসলো। আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“আম্মা আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি?”
মেঘ মাথা নাড়ালো। তা দেখে তিনি মাথা রাখলো। আর বলল,,
“আম্মা আপন জনেরাই কেন বারবার আঘাত করে ?”
তখন মেঘ বলল,,
“কারন আপন জনেরাই যে দূর্বলতা জানতে বা দেখতে পারে তাই।”
“আমার ভাই বোন হয়ে কিভাবে পারলো এমনটা করতে আম্মা সেদিন যদি আপনার কিছু হতো তাহলে আমি কি নিয়ে বাচতাম। একজন কে তো আগেই হাড়িয়েছি যদি আপনাকেও হারাতাম !
“কিছু হয় নি আব্বা আমি ঠিক আছি তো!”
“হুম কিন্তু আপনাকে যে সাময়িক বিদায় দেওয়ার সময় এসে গেছে আম্মা। আপনি যাওয়ার পর এহসান আপনাদের বিয়ের কথা বলছিল। পনেরো দিন পর ডেট ফিক্সড করা হয়েছে।”
“এই জন্যই কি আমার আব্বার এত বেশি মন খারাপ।”
“হুম!”
“শুনেন আব্বা আমাদের জীবনের যা কিছু ঘটে সব হলো আবহাওয়ার মতো। আমাদের খুশি,সুখ, দুঃখ কষ্ট , বিজয়, জয় সব হাওয়ার মতো যা আসে আমাদের ছুঁয়ে চলে যায়। কোনটাই দীর্ঘসময় ধরে আমাদের সাথে থাকে না। জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত এক একটা চমৎকার মুহুর্ত। তাই যেটা যেমন আছে আমাদের তেমনটাই উপভোগ করা উচিৎ। আমার জীবনে যখন দুঃখ ছিল তখন কি শুধু দুঃখই ছিল তখন আপনি ছিলেন মামা ছিল যাদের দ্বারা আমি একটু হলেও খুশি থাকতাম। আজ আপনার খারাপ লাগছে কিন্তু দেখে নিয়েন বিয়ের দিন পর্যন্ত সবথেকে বেশি খুশি আপনিই থাকবেন।”
“আম্মা আপনার কথায় জাদু আছে মনটা হুট করেই ভালো হয়ে গেল।”
“আব্বা কানামাছি খেলবেন?”
‘হুম!”
“আচ্ছা সবাইকে ডেকে নিয়ে বাগানে চলেন।”
মেঘ এক এক করে সব ইয়াংস্টারদের নিয়ে গেল। সবাই প্রথমে অবাক হলেও রাজি হয়ে গেল। আশা চৌধুরী ও যোগ দিল জাহানারা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী দূর থেকে দেখতে লাগলো। আয়মান চৌধুরীর চোখে কাপড় বাঁধা হয়েছে সকলে বেশ ইনজয় করছে সকলের মুখে হাঁসি । মেঘ একসময় দাঁড়িয়ে ওর আব্বার হাসি দেখতে লাগলো। এখন মুন আশা চৌধুরী, আজান জিয়ান শিফা সবার মুখে হাঁসি সবার হাসি দেখে নিজের মুখেও হাসি ফুটে উঠল। মূলত এই খুশির জন্যই এখন কানামাছি খেলা। হুট করে আয়মান চৌধুরী মেঘকে ধরে ফেলল আর বলল,,
“আম্মা আপনাকে ধরে ফেলেছি।”
মেঘ হাসলো। আয়মান চৌধুরী নিজের চোখের কাপড় খুলে মেঘের চোখে বেঁধে দিল। অতঃপর ওরা অনেকক্ষন খেলল মেঘ বলল,,
“চলো অনেক খেলা হয়েছে আর না ডিনার করে নাও সবাই।”
সবাই মেঘের কথামতো ডিনার করার জন্য গেল সবাই মেঘকে ধন্যবাদ জানালো। একসাথে ডিনার মেঘ ওপরে আসলো। তখন মেঘের ফোনটা বেজে উঠলো মেঘ দেখলো ধূসরের ফোন ও ধরে সালাম দিল।
“আসসালামু আলাইকুম!
‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। তা আমার মেঘবালিকা এখন কি করে?”
‘ডিনার শেষ করে রুমে আসলো আর আপনার ফোন এলো এখন সে আপনার সাথে ফোনে কথা বলছে। আপনি কি করেন?
‘হসপিটালে আছি একটা ইমার্জেন্সি এসে পরেছিল।”
“ওহ আচ্ছা ডিনার করেছেন?”
“হুম মাত্র শেষ করে তোমায় ফোন দিলাম!”
“ওহ আচ্ছা!”
‘আমাদের বিয়ের আর পনেরো দিন বাকি কিছু বুঝতে পারলে!’
“এতে আবার বোঝার কি আছে আব্বা বলেছে তো!”
‘আরে তুমি বোঝোনি আমার কথা।”
“ডাবল মিনিং করে কথা বললে বুঝবো কিভাবে বলেন।”
‘তুমি সবার কথা বুঝতে পারো খালি আমার বেলায় নিষ্ঠুরতা দেখাও। নিষ্ঠুর মেয়ে একটা।”
“আচ্ছা বাবা সরি এখন বলুন!”
‘পনেরো দিন পরে তুমি একেবারের জন্য আমার হবে।”
“আমরা এতদিন পর ছিলাম নাকি।”
“তোমার সাথে কথা বলাই বেকার!”
‘তাহলে ফোন দিয়েছেন কেন?”
“তুমি আসলেও নিষ্ঠুর!”
“হুম ভালো!”
“আচ্ছা এ টপিক বাদ শুনো?”
“হুম বলেন?”
“তুমি তোমার শপে জেন্টস এর জিনিসপত্র রাখতে পারো নি। নাহলে আমি আমার বউয়ের শোরুম থেকে ফ্রি তে শপিং করতে পারতাম।”
“এ্যা উনি বললেই যেন আমি ফ্রি তে দিয়ে দিতাম।”
‘দিতে না বলছো?”
“না!”
“এই হলো ছেলে আর মেয়েদের ভালোবাসার পার্থক্য আমার যদি তোমার মতো শোরুম থাকতো তাহলে সব তোমায় ফ্রিতে দিয়ে দিতাম। দরকার পরলে শোরুমটাও।”
“নেই দেখেই বলছেন থাকলে বলতেন না। শুনুন জীবনে তাই হোক না প্রফেশন আর পার্সোনাল কখনো মিক্সড করবেন না তাহলে কোন জায়গায়ই টিকতে পারবেন না। আর সফল ও হতে পারবেন না।”
“হুম বুঝেছি আমার বউ। আচ্ছা এখন বলো তো এই যে আজ এত কিছু হলো খারাপ লাগছে না।”
তখন মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
“খারাপ লেগেছিল কিন্তু নিজেকে একটু সুখী করতে ভুলে গেছি হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর একটা উক্তি আছে,,
“ভুলে যাওয়াই ভালো।
পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ কারা জানো?
যারা দ্রুত সব ভুলে যেতে পারে তারা। যারা কিছুই ভুলতে পারে না তারা দারুণ অসুখী।
“বাহ বেশ বললে তো! আচ্ছা আমিও ভুলে গেলাম এখন যাও।”
“আচ্ছা আপনি আকাশ মাহমুদ কে চেনেন কিভাবে?”
‘তুমি চেনো নাকি তাকে!”
‘ঐ একটু! বলুন না।”
“উনিও একজন ডক্টর! বিদেশ যাওয়ার পর
দেখা হয়েছিল ওনার সাথে। আমরা একই ভার্সিটি তে পরতাম। তারওপর উনার সাথে কাজ ও করেছি। আমার থেকে দুই বছরের সিনিয়র।”
“কি উনি ডক্টর!”
‘হ্যা তুমি এমন ভাবে বলছো যেন উনি ডক্টর হতে পারে না।”
“তেমন কিছু না যদি কোনদিন মনে করেন আপনার এই আকাশ মাহমুদ আপনার ক্ষতি করতে চায় তাহলে কি করবেন?”
“উনি কি করে কারো ক্ষতি করবেন উনি খুব ভালো মানুষ আমাকেও একবার একটা এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচিয়ে ছিল। আমার ওপর একটা ক্যামিক্যাল পরতে যাচ্ছিল উনি সেটা দেখেন আমাকে সরিয়ে নিয়েছেন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি ঘুমাবো।”
‘রাগ করলে নাকি? আচ্ছা কিন্তু তুমি হঠাৎ এ কথা বললে কেন?”
‘না না রাগ করবো কেন? এখনকার সময়ে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না সকলেই ভালোর মুখোশ পরে চলাচল করে। আচ্ছা বাদ দিন এমনিই বলেছি।”
‘ওহ আচ্ছা!
“রাখছি!
“আরে শুনো তো!”
“হুম শুনছি!”
“আমি প্রেমে পরেছিলাম সেই বাবার হাত ধরা ছোট্ট মেয়েটিকে। হাড়িয়েছিলাম তার চোখের মায়াতে। মুগ্ধ হয়েছিলাম তার কাঠিন্যতায়। নিষ্ঠুর মেয়ে বলে উপাধি দিয়েছিলাম অবলীলায়।সে ও কি আমার প্রেমে পরেছিল সে কি আঁটকে ছিল আমাতে? হুট করে জানতে ইচ্ছে করছে ভিশন, সেও কি আমায় ভালোবাসে ভিশন!
মেঘ হাসলো! দুনিয়া এপাশ থেকে ওপাশে যাবে তবুও নিয়ম করে ধূসরের ভালোবাসি প্রকাশ থামবে না। মেঘ হেসে বলল,,
“হুমায়ূন স্যার আরেকটা উক্তি ছিল কি জানেন,,
মানুষ জীবনে একবার হলেও ভয়াবহ ভাবে
কারো প্রেমে পড়ে! আর এই প্রেমের মোহ জীবনেও কাটেনা!”আচ্ছা রাখছি আল্লাহ হাফেজ!”
ধূসর হাসলো মেঘ ফোন কেটে দিয়েছে। ধূসর বলল,,
“মেয়ে তুমি যতোই ভালোবাসি বলা থেকে পালাও কিন্তু এমনভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করো মুগ্ধ না হয়ে থাকায় যায় না।
“আমি মুগ্ধ হয়েছি তোমার ওই মুচকি হাসিতে, আমি মায়ায় পড়েছি তোমার ওই চোখেতে,, আমি ভালোবেসেছি তোমার ব্যক্তিত্বকে!
~চলবে,,