#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
সবাই চলে গেছে মেঘ ও ঘুমিয়ে পরেছে অতিরিক্ত কান্নার ফলে ওর মাথাব্যথা করছিল। তার ওপর ধূসরের দেওয়া ওষুধের ফলে তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পরেছে। সবাই চলে যাওয়ার পর মায়মুনা চৌধুরী এলেন মেঘের রুমে। আস্তে আস্তে মেঘের দিকে এগুতে লাগলেন। ইচ্ছে তো করছে মেয়েটাকে একটু আদর করতে কিন্তু তার যে অধিকার নেই। তারওপর মেয়েটা যদি জেগে যায়। তিনি মেঘের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো। এই মেয়েটাকেই সে অবহেলা করতো অথচ এই মেয়েটাকেই চাইলে সে সবথেকে আদুরে রাখতে পারতো।কারন মেঘ ছিল ছোটবেলা থেকেই বাধ্য মেয়ে। তিনি কিছুক্ষণ কান্না কাটি করে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে চলে গেল। মেঘ ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারলেও পুরোটা বুঝতে পারল না। ও ওপাশ হয়ে শুলো।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে কেউ খাচ্ছে না। জাহানারা চৌধুরী,জিয়ান আর শিফা একপ্রকার ট্রমার মধ্যে আছে। ওরা কেউ বসতে চাইছিল না আয়মান চৌধুরীই জোর করে ওদের নিয়ে এসেছে। মেঘ এখনো নিচে নামে নি আজান ডাকতে গেছে। হুট করেই জিয়ান বলল,,
“কাকাই একটা কথা ছিল?”
জিয়ানের কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“তুমি কি শাফিয়ানের ব্যাপারে কিছু বলতে চাও?”
জিয়ান একটা ঢুক গিলল আর বলল,,
“না তেমন কিছু না তাকে নিয়ে কিছু বলবো না। কারন যে অন্যায় করেছে তার অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিৎ।আসলে আমি চাচ্ছিলাম বিদেশের বিজনেস টা দেখতে আমি ,মা আর শিফা বিদেশ চলে যাই।”
“পালাতে চাইছো?”
একথা শুনে জাহানারা বেগম আতকে উঠলো। না তারা তো এটা চাই না বাকিরা চমকে উঠলো। জিয়ান ছোট মুখ করে বলল,,
“পালাবো কেন কাকাই?”
“পালাচ্ছোই তো এই যে এই পরিস্থিতি থেকে তোমরা পালাতে চাইছো। শুনো পরিস্থিতি একটু কঠিন হয়ে পরলেই ওখান থেকে সরে আসতে নেই বরং শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আমি জানি তোমার জাহানারা আর শিফার জন্য এই পরিস্থিতিটা অন্যরকম। এমনকি আমি সহ হাজার হোক ভাই তো সবথেকে আমি ওকেই ভালোবাসি কিন্তু ও কি করলো আমার ভালোবাসার মূল্য রাখতে পারলো। এখানে তোমাদের তিনজনের কোন দায় নেই তোমরা কেন যাবে। তোমরা চলে গেলে আমরা সবাই ভিশন একা হয়ে পরবো জিয়ান। তোমরা আমাদের পরিবার আমরা সবাই একেঅপরের সাথে থাকতে চাই। যা হয়েছে তা একটা খারাপ স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও। নতুন করে নতুন ভাবে জীবন শুরু করো কারন জীবন একটাই, একে উপভোগ করো পরিবারের সাথে।”
তখন জাহানারা চৌধুরী বললেন,,
‘কিন্তু ভাইয়া আপনাদের এই অবস্থার জন্য আমরাও একটু হলেও দায়ী। আমাদের দেখে আপনার শাফিয়ানের কথা মনে পরবে সাথে তার কৃতকর্মগুলোও।”
“পরিবারের থেকে দূরে গিয়ে কেউ কখনো ভালো থাকে না জাহানারা। তুমি তো আমাকে বড় ভাই হিসেবে মানো এই ভাইয়ের কথা রাখো। তাছাড়া জিয়ান শিফা দু’জনেই আমার ছেলেমেয়েই বলতে পারো। তাছাড়া বিজনেস দেখবে কে আমার তো বয়স হচ্ছে আমি সব জিয়ানের হাতে ছেড়ে রেস্ট নিতে চাই।”
“কাকাই তুমি?”
“কোন কথা না জিয়ান!এখন চুপচাপ খাও!
“মেঘ আসবে না কাকাই?”
“হুম আজান ওকে ডাকতে গেছে।”
তখনি আজান আর মেঘ কে দেখা গেল সিড়ি দিয়ে নামতে ওরা এসেই ওদের বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে পরলো। বাকি সবাই চুপ সবাই মেঘের দিকে তাকালো। ওর কোন হেলদোল নেই। ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে মায়মুনা চৌধুরী ওকে খাবার বেড়ে দিল। ও চুপচাপ খেতে লাগলো সকলেই খাচ্ছে সবাই মেঘকে আড় চোখে দেখছে। সবার খাওয়া শেষ হলে মেঘ বলল,,
“আজকের ঘটনাটা নিয়ে সবার অপিনিয়ন কি? আর লয়ারের মধ্যে কিন্তু একজন আমি নিজেই। আর বিশেষ করে কাকিমনি আপনি বলুন কাকাই এর শাস্তি হওয়া উচিত নাকি ক্ষমা করে,,
মেঘ আরো কিছু বলবে তার আগেই জাহানারা চৌধুরী বলল,,
“মেঘ তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী আর বাস্তববাদী ও তোমাকে আবেগী মানায় না। খুন বুঝো তো সেই মানুষ টা একটা না দুটো খুন করেছে। প্রথমটা তো আনাফ আর দ্বিতীয় টা তোমাকে তোমার ভেতরে দুরন্ত মিস্টি সত্তাকে। মেঘ মানুষ অন্যায়ভাবে কাউকে খুন করে তাকে কোন মূল্যেই ক্ষমা করা উচিৎ নয়। এর শাস্তি দেওয়া উচিৎ কঠিন শাস্তি। আমি জানি তুমি হয়তো আমাদের কথা ভেবে বলছো কিন্তু বিশ্বাস করো তুমি ওকে শাস্তি দিলে আমি বেশি খুশি হবো। তার খুব লোভ এই টাকার লোভে সংসার স্ত্রী বাচ্চাদের কে কখনো সময় দেয়নি। ছেলেমেয়ে দুটো কিভাবে বড় হয়েছে সে বলতেই পারবে না। আমি জানি না বাকিদের কতটুকু সত্য তবে তোমার কাকাই আমার কাছে ভালোমানুষ নন। আর ছিলও না কখনো। কারন ভালো মানুষ কখনো তার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারে না। আমার দেখা নিষ্ঠুর মানুষ সে। তাকে আমি ঘৃনা করি। সে বাইরে কি করে সেটাও আমার অজানা না জানি আর কার সে ক্ষতি করেছে। তুমি দেখলে সেই নিষ্ঠুর লোকটার জন্য এতগুলো কথা বললাম আমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও পড়লো না। আমি চাই সে তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাক সে বুঝুক টাকা-পয়সা সব নয় জীবনে ভালোবাসার ও দরকার আছে। লোভ করে কেউ কোনদিন সুখী হতে পারে নি।”
সবাই জাহানারা চৌধুরীর কথা শুনে অবাক শাফিয়ান চৌধুরী ওনার গায়ে হাত তুলেছে এটা কেউ জানতোই না। জাহানারা চৌধুরী কে দেখে কখনো মনে হয় নি।তারা সবার সামনে সুখী দম্পতি ছিল তার মানে সব অভিনয়। মেঘ উঠে কাকিমনি কে জরিয়ে ধরে বলল,,
“চিন্তা করো না কাকিমনি আল্লাহ তায়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। শুধু আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আর ভরসা রাখো শেষ টা সুন্দর হবে ইনশাআল্লাহ।”
তখন শিফা বলল,,
“একটা মানুষ খারাপ হলেও বোধহয় একটা বাবা খারাপ হয় না তাই না মেঘ আপু?”
মেঘ শিফার কাছে গিয়ে বলল,,
“হুম কারন একটা মেয়ের কাছে বাবা হচ্ছে তার জীবনের প্রথম পুরুষ যে তার কাছে সবথেকে নিরাপদ।বাবারা যেমনই হোক না কেন সব বাচ্চাদের কাছে তাদের বাবা সুপার হিরো। আর মেয়েদের বাবার প্রতি আলাদা টান থাকে। তুমি কাকাই এর সাথে তেমন মেশো নি তবুও তার সাথে তোমার অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাবা সত্তাটাই এমন। কারো কারো জীবনে বাবার সাথে কখনো ফ্রি হয়ে কথা বলা হয়ে উঠেনা, জরিয়ে ধরাও হয়ে উঠেনা। দূর থেকে দেখতেও বাবাকে ভালো লাগে ঐ যে বাবার সাথে এক অদ্ভুত টান অদ্ভুত ভালোবাসা আছে।”
তখন আজান বলল,,
“মেঘ আপু তোমার কাছে বাবা মানে কি?”
মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
“বাবা মানে আমার আব্বা! আমার প্রশান্তি আর যাকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখলেও কম মনে হবে তাই তাকে নিয়ে কিছু না বলাই উত্তম।”
মেঘের কথায় আয়মান চৌধুরী হাসলেন।
বাকি সবাই মেঘের এই দুই বাক্যেই মুগ্ধ হয়ে গেছে। আয়মান চৌধুরী মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ গিয়ে ওর আব্বা কে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,
“আপনি আমার সবকিছু আব্বা!”
“আপনিও আমার সবকিছু আম্মা। আমার সাহস, আমার ভরসা,আমার বিশ্বস্ত বন্ধু,আমার প্রশান্তি আমার আম্মা আর,
“হয়েছে আব্বা আর কতো!”
“আপনাকে নিয়েও একটা উপন্যাস লিখলেও আমার শেষ হবে না আম্মা!”
“হুম এখন হয়েছে ছাড়ুন নতুন কেস নিয়ে স্টাডি করতে হবে।”
আয়মান চৌধুরী মেয়েকে ছেড়ে দিলেন। তখন জিয়ান বলল,,
“বাবাকে তাঁর যোগ্য শাস্তিই দিও মেঘ কারন তিনি আমার মায়ের সাথে অন্যায় করেছে।”
“পুরশুদিন কেসটা কোর্টে উঠবে বোধহয় ,তোমরা যাবে তো সবাই!”
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“না গেলে সব জানবো কিভাবে? তাছাড়া আয়না আশরাফ এর প্রিয়তমা কি করে হলো সেটাও তো আমরা জানি না তাই না।”
“সব জানতে পারবেন আব্বা শুধু কেসটা কোর্টে উঠুক।”
“হুম!”
“আচ্ছা আমি ওপরে গেলাম!”
মেঘ চলে গেল সবাই যে যার মতো চলে গেল। মেঘ গিয়ে কাজ করতে লাগলো তার কিছুক্ষণ পর মায়মুনা চৌধুরী মেঘের রুমে গেল। মেঘ ওনার উপস্থিতি টের পেয়ে ও ঘুরলো না। এমন ভাব যেন কেউ আসেই নি ওর রুমে। মায়মুনা চৌধুরী কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,,
“মেঘ!”
মেঘ তার দিকে ঘুরলো তার শীতল চাহনি সে বলল,,
“কিছু বলবেন?”
” আসলে,,,
“বলুন আর একটু তাড়াতাড়ি বলবেন আমার অনেক কাজ আছে!”
মায়মুনা চৌধুরী বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস করে বলল,,
“আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না। আমি তো তোমার মা-ই আমার দ্বারা ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ মাফ করে দাও!
মায়মুনা চৌধুরী মেঘের কথা শুনে হাসলো। কি আছে এই হাসিতে না পাওয়া মায়ের ভালোবাসা নাকি জীবনের প্রতি ধিক্কার নাকি মায়ের ওপর করা অভিযোগ। মায়মুনা চৌধুরী অদ্ভুত চোখে মেঘের হাসি দেখলো। মেঘ বলল,,
“বলুন তো কোনটার জন্য আপনাকে মাফ করবো আমাকে অবহেলা করার জন্য ,নাকি ভালোবাসা না দেওয়ার জন্য, নাকি সবার সামনে আমার অপমানিত হওয়া দেখেও চুপ করে দেখার জন্য। নাকি আমাকে খুনী বলার জন্য । নাকি আমার শৈশব নষ্ট করার জন্য নাকি আমার হাসি আমার দুষ্টুমি শেষ করার জন্য। বলুন তো কোনটার কোনটার জন্য আপনাকে ক্ষমা করবো। আর কি বললেন মা-ই তো। শুনুন জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়না। মায়েরা তার সন্তান যেমনই হোক না কেন কোনদিন অবহেলা করে না। তাদের অনেক দায়িত্ব থাকে সন্তানের প্রতি আপনি আমার কোন দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার পছন্দ অপছন্দ আপনি জানেন, না জানেন না। আর আজ যদি সত্যি টা সামনে না আসতো তাহলে কি করতেন আপনি সারাজীবন এভাবেই চলতো। মা হয়েছেন দেখে কি আপনি সব করতে পারেন, না পারেন না। সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে কিন্তু আপনি তা পার করেছেন। কোন মা তার সন্তানকে খুনী বলে? কোন মা তার সন্তানকে সারাজীবন অবহেলা করে। কোন মা আপনার মতো মিসেস মায়মুনা চৌধুরী।
মেঘের দৃষ্টি স্থির কিন্তু মায়মুনা চৌধুরীর চোখে পানি মেঘ যা বলেছে সব সত্যি। মেঘের কথায় তার কান্নার বেগ বেড়ে গেল। তিনি কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,,
“আমাকে কি সব ভুলে একটু কাছে নেওয়া যায় না। আমার ভিশন কষ্ট হচ্ছে মেঘ তুমি এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করো প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।
মেঘ আবারো হাসি মুখে বলল,,
“আনাফের মৃত্যুর পর সব ভুলে আপনি কি আমাকে কাছে নিতে পারতেন না। এক সন্তান হাড়িয়েছে তো কি হয়েছে আরেকজন কে তো মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারতেন। আপনি জানেন আমার রোজ মৃত্যু হতো। সেদিন আনাফের সাথে আমার হাসি আমার দুষ্টুমি আমার শৈশবের ও মৃত্যু হয়েছিল। শুধু মাত্র আপনার জন্য। কি করে ভুলে যাবো আমি বলুন একটা বাচ্চার জন্য তার শৈশব কি আপনি জানেন তো। সে অতীতে কোন সময়টাতে যেতে এটা সবাইকে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলে শৈশবে ফিরে যেতে চাই অথচ আমি অতীতে যেতেই চাই না। কারন আমার অতীত আমার জন্য মধুর কিছু বয়ে আনেনি যা ছিল সব তিক্ততা। আপনাকে ক্ষমা করে সব ভুলে গেলে কি আমি আমার শৈশব ফিরে পাবো নাকি আমার ভালোলাগা আমার হাসিখুশি শৈশব। যদি বলেন সব পাবো তাহলে আপনাকে ক্ষমা করে দেব যান।”
মায়মুনা চৌধুরী অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ এতদিন তাও ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলতো যেটুকুই বলতো কিন্তু আজকের মেঘ আলাদা হয়তো অসুস্থ অবস্থায় ঐ কথাটা বলেছিল বলে।মেঘ বলল,,
“নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।” (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
এটার মানে বুঝতে পারছেন তার মানে এখন আপনি যে কষ্ট টা পাচ্ছেন সেটা আমার জন্য নয় আপনি এটা ডিজার্ভ করেন। এখন আপনি আসুন।
“মেঘ আমার কথা তো শুনো?”
“দুঃখিত এখন শুনতে পারছি না আপনি আসুন আমার কাজ আছে! আর হ্যা আমাদের সম্পর্ক যদি ঠিক হওয়ার থাকে তাহলে এমনিতে ঠিক হবে। তবে আমার তরফ থেকে কিছু আশা করবেন না। আল্লাহ হাফেজ। গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
মায়মুনা চৌধুরী চলে গেলেন মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মন দিল। এখন এটা নিয়ে না ভাবলেও চলবে।
_____________________
একদিন পর,,
অতঃপর আজকে আশরাফ হক, আয়না চৌধুরী ও শাফিয়ান চৌধুরীর কেস কোর্টে উঠবে। মেঘ একটু টেনশনে আছে যতই হোক পরিবারের লোক নিজের রক্ত। মেঘ ফজরের নামাজ পরেই গোসল করেছে মনটা একটু অশান্ত হয়ে আছে। মেঘ সবকিছু আগে চেক করলো তাদের বিরুদ্ধে সব প্রমান রেডি। যেগুলো এত বছর ধরে আগলে রেখেছিল। সকাল হতেই আয়মান চৌধুরী মেঘের রুমে এসেছেন। তা দেখে মেঘ বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম আব্বা! এই সময় এখানে?
“ওয়ালাইকুমুস সালাম! আপনাকে শুভকামনা জানাতে এলাম। ইনশাআল্লাহ এবারও আপনার জয় নিশ্চয়ই হবে।”
“ইনশাআল্লাহ আব্বা সব ঠিকই হবে আব্বা। আপনার কি খারাপ লাগছে আব্বা?”
“খারাপ তো লাগবেই হাজার হোক ভাইবোন তবে ওরা যা করেছে তা সবকিছু ভুল করেছে। আচ্ছা আম্মা আপনি রেডি হন আমি আসছি!
“হুম!”
মেঘ নিজের মতো রেডি হয়ে নিচে নামলো আজকের পরিবেশ টা বেশ গুমোট। সবাই কোর্টে যাবে সকলে একসাথে খেয়ে নিল কিন্তু কার মধ্যে কোন কথা হলো না। ধূসর আসবে মেঘ কে নিতে । বাকি সবাই একসাথে যাবে। মেঘ একটু আগে যাবে। মেঘ খেয়ে নিকাব বেঁধে সব গুছিয়ে নিচে আসলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এলো। ধূসর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘকে দেখেই ধূসর বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম মিসেস!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম!”
‘বাড়ির সবাই ঠিক আছে?”
‘হুম আলহামদুলিল্লাহ! এখন চলুন যেতে যেতে কথা বলি।”
‘হুম!”
মেঘ আর ধূসর গাড়িতে উঠলো। ধূসরের পাশে মেঘ বস পরলো। ধূসর গাড়ি স্টার্ট করলো। হুট করে মেঘ বলল,,
“আপনাদের বাড়ির সকলে কোর্টে আসবে কি?”
“হুম আসবে !”……..মেঘ!
‘হুম!”
“খারাপ লাগছে?”
“না কারন তারা আমার আমার রক্ত হলেও কোনদিন আমার লাইফে এক্সিট করেনি। তবে আব্বার জন্য খারাপ লাগছে কারন আয়না চৌধুরী কে আব্বা তেমন ভালো না বাসলেও শাফিয়ান চৌধুরী কে আব্বা খুব ভালোবাসে।”
“হুম! দেখো সবকিছু ঠিক হবে।”
“ইনশাআল্লাহ!”
“নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।” (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
এই হাদিস টা ধূসরের মুখে শুনে মেঘ সেদিন রাতের কথা মনে করে হাসলো তা দেখে ধূসর বলল,,
‘হাসছো কেন?”
“কিছু না এমনিই !”
ওদের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথা হলো। কোর্টে এসেই মেঘ নিজের বরাদ্দকৃত অফিসে চলে গেল। অতঃপর সকলেই কোর্টে পৌঁছালো। আশরাফ হক,আয়না চৌধুরী আর শাফিয়ান চৌধুরীকে পুলিশ নিয়ে এলো। সবাই যেন দেখেও দেখলো না। কিন্তু মেঘ এগিয়ে গেল ওনাদের দিকে তা দেখে সকলে অবাক হলো। মেঘ গিয়ে শাফিয়ান চৌধুরী আর আয়না চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,
‘কি হলো অবাক হলে নাকি তোমরা? অবাক হওয়ার কিছু নেই শুধু তোমাদের কিছু কথা বলতে এলাম । কারন তোমাদের শাস্তিতো হবেই। আল কোরআন এ আছে,,
“পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না, আল্লাহ’কে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’লা কঠোর শাস্তিদাতা”
(আল-মায়িদাহঃ ২)
“তোমরা তো প্রাধান্য দাও কেবল পৃথিবীর এই (বৈষয়িক) জীবনটাকে অথচ পরকালীন জীবনটাই উত্তম এবং স্থায়ী— অনন্তকাল!
সূরা আল ‘আলাঃ১৬-১৭
এ দুটো আয়াতের মিনিং বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না তাই না। সমস্যা নেই তোমাদের বেশি শাস্তি দেব না যা তোমাদের প্রাপ্য তাই দেব হাজার হোক রক্ত কি না।”
আর আশরাফ হকের সামনে গিয়ে বলল,,
‘মিস্টার আশরাফ হক নিজেকে শাস্তি গ্ৰহন করার জন্য প্রস্তুত করুন। কারন আপনাকে আমি অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য ব্যাবস্থা করবো।”
তখন আশরাফ হক হেঁসে বলল,,
‘তুমি আমাদের সেরকম কিছুই করতে পারবে না। আমার লোক দ্বারা এখনকার বেস্ট লয়ার আমি হায়ার করেছি। তুমি তো দুদিনের লয়ার তার সামনে তুমি টিকতে পারবে না।”
“তা কে শুনি সেই লয়ার সবথেকে বড় কথা এখানে ছোট বড় কোন লয়ার দেখা হয় না। যা সত্য তাই প্রকাশিত হয়। আর সর্বদা সত্যের জয় হয়। তাই মতো বড় লয়ারই হোক না আমার কোন মাথাব্যথা নেই। কারন আমি জানি সত্যটা কি?”
“কিন্তু কি বলোতো মেঘ যখন সত্যের থেকে মিথ্যা বেশি ক্ষমতাশালী হয় তখন মিথ্যাটাই জয় পায়। তাছাড়া আমার লয়ার এখনকার বেস্ট লয়ার K.A.Megh . বুঝেছো তুমি তার সামনে টিকতে পারবে না আজ পর্যন্ত সে কোন কেস হারে নি।”
এ কথাটা শুনে মেঘ হাসলো খুব করে হাসলো। সকলে অবাক। মেঘ হাসি থামিয়ে বললো,,
“সিরিয়াসলি আশরাফ হক তোর লয়ার সে? তুই ওকে কখনো সামনা সামনি দেখেছিস।”
“সামনা সামনি না দেখলে কি হবে শুনেছি হি ইজ এ বেস্ট লয়ার ইন দ্যাট টাইম।”
“নো নো নোট হি? দিস ইজ সি! এন্ড আই এম K.A.Megh. ওরফে কাসফিয়া আয়মান মেঘ।
এ কথা শুনে যেন তিনজনের মাথায় বাজ পড়লো। মেঘ হেসে বলল,,
“তোর লোকদের কাছে থেকে খবর নিস নি সে কেসটা নেয় নি নাকি তোকে জানাতে ভুলে গেছে।আর হ্যা K.A.Megh কখনো অন্যায়ের সাথে যায় না। সে কেস নিলেও আগে সত্যতা যাচাই করে নেয় যে কেস টায় আসলে কে দায়ী।”
তখন একজন পুলিশ বলল,,
“ম্যাম এখন যান সময় হয়ে গেছে!”
“ওকে বেস্ট অফ লাক আশরাফ হক!”
মেঘ চলে গেল। তিনজনে অবাক চোখে ওর যাওয়া দেখলো তিনজনের কেউ বোধহয় এই জিনিস টা ভবতে পারে নি। অতঃপর সময় হলে সকলে কোর্টের ভেতরে চলে গেল। মেঘ ভেতরে ঢুকে তার ডিফেন্স লয়ার কে দেখলো তিনিও স্বনামধন্য একজন ব্যারিস্টার অতঃপর কোর্টের কাজ শুরু হলো। আগে শাফিয়ান চৌধুরী আর আয়না চৌধুরীর আনাফের মার্ডার কেস নিয়ে আলোচনা হবে পরে আশরাফ হকের টা। শাফিয়ান চৌধুরী আর আয়না চৌধুরীকে কাঠগড়ায় উঠানো হলো। কার্যক্রম শুরু হলো। মেঘ ওনাদের সাথে কথা বলার জন্য কোর্টের নিকট থেকে অনুমতি চেয়ে নিল। মেঘ ওনাদের সামনে দাঁড়ালো অতঃপর,,,
~চলবে,,,
#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২৬(বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“তো মিস্টার শাফিয়ান চৌধুরী প্রথমে আপনার কাছে প্রশ্ন! প্রশ্নটা হলো ছয় বছর বয়সি আনাফ চৌধুরী আপনার কি ক্ষতি করেছিল যে তাকে আপনার মারতে হলো?”
শাফিয়ান চৌধুরী মেঘের দিকে তাকালো আবার পরিবারের সকলের দিকে তাকালো। তারা সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তিনি শক্ত স্বরে বলল,,
“আমি মারি নি ওকে ? ও তো সিড়ি থেকে পরে গিয়েছিল!”
“এই মিথ্যা কথা বলার কারন এখন, তাও আবার কোর্টে দাঁড়িয়ে। দুদিন আগে আপনাকে পুলিশে ধরে নিয়ে এসেছে কই তখন তো কিছু বললেন না।”
তখন অন্য লয়ার বলল,,
“অবজেকশন মহামান্য আদালত! আমার সহযোগী লয়ার বোধহয় একটু বেশিই ভেবে ফেলছেন। তখন বলেন নি কারন হয়তো তখন বলার কোন পরিস্থিতি ছিল না।”
“ওহ আচ্ছা তাই নাকি! তাহলে মিস্টার শেখ আপনিই বলুন যদি আপনাকে কেউ মিথ্যা অভিযোগে গ্ৰেফতার করে তাহলে পরিস্থিতি তাই হোক না কেন আপনি কি চুপ করে থাকবেন অবশ্যই নয় তাই না। কারন পুলিশের হাতে গ্ৰেফতার হওয়া যেন তেনো ব্যাপার নয়। মহামান্য আদালত আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হোক। এবং আমাকে সকল প্রকার প্রশ্ন করতে দেওয়া হোক।”
তখন কোর্ট ওকে অনুমতি দিল। মেঘ আবারো শাফিয়ান চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,
“তো শাফিয়ান চৌধুরী আপনিই বলুন এর কারন?”
“আমি মিথ্যে বলছি না কারন আমি সত্যিই আনাফকে ফেলি নি!”
“ওহ আচ্ছা তাহলে আয়না চৌধুরী আপনি বলুন আপনি তো নিজ চোখে দেখেছিলেন তাকে ফেলে দিতে নাকি আপনি কিছুই দেখেন নি।”
তখন আয়না চৌধুরী বলল,,
“আমি কিছুই দেখি নি!”
“আচ্ছা মেনে নিলাম তো আপনাকে বলুন তো কিসের অভিযোগে পুলিশ গ্ৰেফতার করেছে?”
“জানি না শুধু জানি আমাকে ফাঁসানো হয়েছে!”
“আচ্ছা আপনাদের দুজনের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি আপনারা মিথ্যা কথা বলছেন তাও কোর্টে আপনাদের ভয় হচ্ছে না তাই না।”
“অবজেকশন মহামান্য আদালত। এবার কিন্তু আমার সহযোগী একটু বেশি করছেন। ওনারা যেহেতু বলছেন তাহলে নিশ্চয়ই কারন আছে।”
“কারন তো আছেই মিস্টার শেখ সেটা হলো নিজেদের বাঁচানোর জন্য। আর আমি যদি ভুল না হই তাহলে এটা আপনারই শেখানো। সমস্যা নেই আমি ওনাদের আর আপাতত কিছু জিজ্ঞেস করবো না। আমি একটা ভিডিও দেখাতে চাই সেটা দেখলেই দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি প্রমান হয়ে যাবে।”
কোর্ট অনুমতি দিল। মেঘ ভিডিও টা একজনের হাতে দিল সে জজ সাহেব এর হাতে দিল অতঃপর ভিডিও প্লে করা হলো তাতে দেখা যাচ্ছে। শাফিয়ান চৌধুরী আর আয়না চৌধুরী একটা ঘরে কথা বলছে।
শাফিয়ান চৌধুরীর কন্ঠ,,
“আয়না আমরা ঠিক করছি তো যদি মেঘ মরে যায় তাহলে আমাদের রাস্তা ক্লিয়ার হবে তাই না। ভাইয়া আর কিছু করতে পারবে না।
অতঃপর শোনা গেল আয়না চৌধুরীর কন্ঠ,,
“হুম আমরা যা করছি বেশ করেছি। ভাইয়া মেঘকে খুব ভালোবাসে তাই না। মেঘের কিছু হলে ভাইয়া পাগল পাগল হয়ে যাবে। তাছাড়া আশরাফ বলেছে মেঘ নাকি অনেক চালাক সববার নাকি মেঘের জন্যই ওর প্ল্যান ফ্লপ হয়ে যায়। ও মরলে ভাইয়ার অবস্থা করুণ হয়ে যাবে। তখন সবকিছু তোমার দায়িত্বে আসবে। তারপর আমরা একদিন বুদ্ধি করে সব সম্পত্তি আমাদের নামে লিখিয়ে নেব যা যা ভাইয়ার নামে আছে। যেভাবে বুদ্ধি করে আনাফ কে মেরেছি এবারও বুদ্ধি করে মেঘ কে মেরে ফেলবো কেউ কিছু জানতে পারবে না। মেঘের ছোটবেলায় তোর মনে নেই তুই আশরাফ এর কথা মতো আনাফকে সিড়ি থেকে ফেলে দিলি আর সব দোষ গিয়ে পরলো মেঘের ওপর। অবশ্য আমরা তো এটাই চাইছিলাম ভাইয়ার উত্তরাধিকার কোন ছেলে না আসুক। কিন্তু আনাফ এসে পরলো সেই জন্য বেচারাকে জীবন দিতে হলো। আজানকেও তো সরিয়ে দিতে চাইছিলাম কিন্তু বুঝিনা কি করে বারবার বেঁচে যায়। ওর ব্যবস্থা পরে করবো আগে মেঘের একটা ব্যবস্থা করে নিই।
“আশরাফ হক ঠিক মতো করতে পারবে তো!”
“এর আগে কতকিছু করেছে আর সামান্য মেঘকে মারতে পারবে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে আশরাফ হক কে মেঘের লোকেশন জানিয়ে দিও।”
‘আচ্ছা ঠিক আছে এখন যা আমি রেস্ট করি।”
ভিডিও শেষ বাকি সবার মুখে অবাকতার রেশ। একটু আগেই এরা দুজন মিথ্যা বলছিলো। মেঘ শক্ত হয়ে বলল,
“তো মিস্টার শেখ এখন কি বলবেন? ভুলেও আপনাদের ক্লাইন্টদের বাঁচানোর জন্য বলবেন না। এটা মিথ্যা কথা। যে ভিডিও এডিট করা হয়েছে কারন এর আই উইটনেস আছে সেটা ও চৌধুরী বাড়ির ছেলে মিস্টার আজান চৌধুরী! যে তাদের কথা তার ফোনে রেকর্ড করেছিল। এবং সেটা তার বোন মেঘকে দেখিয়েছিল যদিও সে এক্সাট ডেট টা জানতো না কবে তার ওপর অ্যাটাক হবে। তাই তাকে একটু আহত হতেই হলো।
আজানের জানার কথা শুনে সকলেই অবাক ।সেই জন্যই সেদিন আজানের কোন ভ্রক্ষেপ ছিল না সবাই অবাক হলেও আজান হয় নি। সে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল।
তখন জজ বলল,,
“তো মিস্টার শেখ আপনার আরো কিছু বলার আছে?
মিস্টার শেখ কি আর বলবে তিনি বলল,,
“না মহামান্য আদালত আমার কিছু বলার নেই!”
তখন মেঘ বলল,,
“কিন্তু আমার কিছু বলার আছে মহামান্য আদালত। কারন আমি জানতে চাই তাদের কিসের জন্য শুধু সম্পত্তির জন্য নাকি অন্যকিছুর জন্য সেই ছোট বাচ্চা কে মেরে ফেললো এবং আয়মান চৌধুরীর মেয়ে মেঘকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলো।”
কোর্ট অনুমতি দিল। মেঘ এগিয়ে গিয়ে বলল,,
“আয়মান চৌধুরী কি আপনাদের কোন কিছু থেকে বঞ্ছিত করেছিল যে আপনাদের এটা মনে হলো আয়মান চৌধুরী আপনাদের সম্পত্তি দেবে না। তার জন্য এরকম প্রদক্ষেপ নিতে হলো।
তখন শাফিয়ান চৌধুরী বলতে শুরু করল,,
“মিস্টার আয়মান চৌধুরী ছিল বাবার আদরের ছেলে। আমার থেকে তিন বছরের বড় ভাইয়া সবসময় ভাইয়াকে নতুন দেওয়া হতো আর আমাকে তার ইউজ করা। ভাইয়ার একটা সাইকেল থাকা সত্ত্বেও নতুন বড় সাইকেল কিনে দিলে আমি তা দেখে সাইকেল চাইলে আমাকে বলা হলো আয়মান চৌধুরীর পুরোনো সাইকেল চালাতে কারন ওটা নাকি ছোট ছিল আমার জন্য পার্ফেক্ট। নতুন ব্যাট চাইলে আয়মান চৌধুরীর পুরোনো ব্যাট দেওয়া হতো। এমন কি কখনো কখনো আয়মান চৌধুরীর টি শার্ট ও আমাকে দেওয়া হতো পড়ার জন্য। তাই আমার মনে একটা জিদ তৈরি হয় আমি আয়মান চৌধুরীর থেকে বেশি বড়লোক হবো তার আন্ডারে আমি থাকবো না। এটা কে বোধহয় বলে ব্যাক্তিগত আক্রোশ। কিন্তু যেখানেই যাই না কেন সব জায়গায় আয়মান চৌধুরীই বেস্ট ছিল।এমনকি জাহানারা ও তার ব্যপারে বলতো ভাইয়া কতো ভালো সবকিছু কত সুন্দর করে হ্যান্ডেল করে। এর জন্য ওকেও আমার সহ্য হতো না। আমি ওর গায়ে হাত তুলতাম এমনকি নিজের ছেলেমেয়ের প্রতিও কোন দায়িত্ব পালন করি নি। আমি আয়মান চৌধুরীর থেকে বেরুতেই পারছিলাম না। দিনে দিনে তার ওপর যেন বিতৃষ্ণা এসে গেল তাকে আমার সহ্যই হতো না মনে হতো এখনি মেরে দিই। তার এই এতো এতো ভালো আমার সহ্য হচ্ছিল না তাই। তাকে নিঃস্ব করতে চাইতাম তার থেকে সব কেড়ে নিজের করতে চাইতাম। এই সবকিছু আমার পক্ষে একা করা সম্ভব ছিল না। তখন দেখা হয় আশরাফ এর সাথে যে ভাইয়ার বন্ধু ছিল একসময় পরে সে তার শত্রু হয়ে উঠেছিল। আমি যে ভাইয়ার ওপর খুশি না এটা সে আন্দাজ করেছিল আমার সাথে দেখা হলে সে আমার থেকে সব জেনে নেয় এবং তখন আমাকে তার সাথে হাত মেলাতে বলে। তখন থেকেই আমরা বিভিন্ন প্ল্যান করতে থাকি। আর আয়নার টা আমি জানি না।”
সবাই সব শুনে চুপ। আয়মান চৌধুরীর চোখে পানি ছলছল করছে। তার ভাই তাকে কোনদিন ভালোবাসে নি। আজান তার বাবার পাশে বসেছে সে তার বাবার হাত ধরলো। মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“তো এবার আয়না চৌধুরী আপনি বলুন তার ওপর এতো আক্রোশের কারন। শুধু তার না মেঘের ওপর আপনার এতো আক্রোশ কিসের?”
আয়না চৌধুরী বলল ,,,
“মেঘের ওপর আমার তেমন আক্রোশ নেই তার শুধু একটাই অপরাধ যে আয়মান চৌধুরী তাকে বেশি ভালোবাসে। তার মেয়ের অপমান করলে তার মেয়ে কষ্ট পাবে। আর তা দেখে আয়মান চৌধুরী কষ্ট পাবে।আয়মান চৌধুরী আমার বড় ভাই কিন্তু সে আমার কোন ভালো টা করেছে। সে জানতো আমি স্কুল থেকেই আশরাফ কে পছন্দ করতাম এবং আশরাফ ও আমাকে পছন্দ করে । তার পরেও সে কেন বাবাকে বললো না আমার বিয়ে আশরাফ এর সাথে দিতে। সব জেনেও সে চুপ করে ছিল। আমার বিয়ে হয়ে গেল এমন একজন মানুষের সাথে তাকে আমি কোনদিন ভালোই বাসিনি আমি তো শুধু আশরাফ কে ভালোবাসতাম। একজন কে ভালোবেসে আরেকজন এর সংসার করা যায় নাকি। দিন যেতে লাগল লোকটা ভালো ছিল আমাকে খুব আগলে রাখতো একটা সময় তার ওপর আমি দূর্বল হয়ে পড়ি। তার পর আমার ছেলে মেয়ে হয়। কিন্তু একদিন আমি আশরাফ এর কথা তাকে জানাই সেই থেকে সে আমাকে অবহেলা করতে শুরু করে হয়তো তার স্ত্রী অন্য কাউকে ভালোবাসে সেটা তার সহ্য হয় নি। তারপর থেকে ভুল হলেই সে আমাকে আশরাফ কে নিয়ে গালিগালাজ করতো। যদিও কোনদিন আমার গায়ে হাত তুলেনি। তার বছর দুই পর আশরাফ এর সাথে দেখা হয়। আশরাফ নাকি আমার জন্য বিয়ে করেনি সে এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে এটাও বলে সে নাকি বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেছিল কিন্তু আয়মান চৌধুরী তাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে পুলিশ এ দিয়েছে। পুরোনো ভালোবাসা জেগে উঠলো। সব রাগ গিয়ে পরলো ভাইয়ার ওপর ।আমি সেই লোকটার এত অপমান সহ্য করতে পারছিলাম না তাই লোকটার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসি আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি আমি যেভাবে সংসারে সুখী হতে পারি নি। তেমন টা আয়মান চৌধুরীকেও সুখে থাকতে দেব না। আশরাফ এর সাথে যোগাযোগ ছিল ওর সাথে মিলে বিভিন্ন প্ল্যান করি যাতে ভাইয়াকে শেষ করে ফেলা যায়।
সব শুনে আয়মান চৌধুরী স্তব্ধ তখন তিনি দাঁড়িয়ে বলল,,
“আমি কিছু বলতে চাই মহামান্য আদালত! আমি চাই না আমার ভাইবোন আমার বিষয়ে কিছু ভুল ধারনা রাখুক।”
কোর্ট অনুমতি দিল। আয়মান চৌধুরী কাঠগড়ায় দাঁড়ালো তিনি তার ভাইবোনের দিকে তাকালো। তারা মুখ ফিরিয়ে নিল। তিনি মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ চোখ দিয়ে আশ্বাস দিল। তিনি বলতে শুরু করল,,
“আমার ভাইবোন যে অভিযোগ গুলো করছে তা কি আদৌ তে সত্য জানি না কতটুকু সত্য তবে আমি বলতে চাই যা আমার কাছে সত্য। আমার বাবার আদরের ছেলে ছিলাম সেটা ঠিক আছে। তবে নতুন সাইকেল নতুন ব্যাট নতুন জামাকাপড় সব আমি পরেছি আর শাফিয়ান কে পুরোনো দেওয়া হতো কারন আমরা তখন বড় লোক ছিলাম না। আমার বাবা একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাই সবকিছু নতুন দেওয়া সম্ভব ছিল না। যা প্রয়োজন শুধু সেটাই দেওয়া হতো। তবে আমার বাবা খুব করে চাইতো সবাইকে নতুন জিনিস দেওয়ার। এর থেকে যদি কারো ব্যক্তিগত আক্রোশ তৈরি হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই। তবে আমি আমার ভাইকে খুব ভালোবাসি। সে যদি মুখ ফুটে বলতো ভাইয়া আমি সব সম্পত্তির মালিক হতে চাই তাহলে অবশ্যই আমি তাকে দিতাম। কিন্তু সে মুখ ফুটে কিছু বলেই নি আমিও ভেবেছি আমার ভাই একজন বাধ্য ভাই সে তার ভাইয়ের সিদ্ধান্ত কে সম্মান করে। তার মতো ভালো ভাই এই দুনিয়াতে হয় না এটা ছিল আমার ভুল। যার জন্য এতকিছু হলো। আর আয়না তোর অভিযোগ আমি কেন আশরাফ এর কথা জেনেও তোর সাথে ওর বিয়ে দিই নি এর কারন আশরাফ ছিল একজন ড্রাগ এডিক্টেড তাছাড়া ও বিভিন্ন খারাপ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তাছাড়া ও এহসান এর বোন শিরিন কে ভালোবাসতো শুধু আমাকে শেষ করার জন্য আর নিজেকে বাঁচানোর জন্য তোকে মোহরা বানিয়েছিল। কারন আমি তার অপকর্মের কথা জেনে গিয়েছিলাম। এহসান ও নিজের বোনকে আশরাফ এর সাথে বিয়ে দেয় নি দেখে এহসান ও আশরাফের আক্রোশের রোষানলে পড়ে যায় যার জন্য সে তার জীবনে অনেক কিছু হাড়িয়েছে। ব্যাস এটুকুই বলার ছিল।”
আয়মান চৌধুরী কাঠগড়া থেকে নেমে পরলেন। সবাই সব শুনে স্তব্ধ প্রায়। সব শুনে শাফিয়ান চৌধুরী আর আয়না চৌধুরীও থমকে গেছে তারা ভাবতেই পারে নি তাদের অগোচরে এতকিছু হয়েছে। অতঃপর কোর্ট তাদের শাস্তি নির্ধারণ করলো। তারাও চুপচাপ মেনে নিল। আপাতত কোর্ট এক ঘন্টার মতো বিরতি দিল তারপর আশরাফ হকের কেস উঠবে। সবাই এখন মেঘের অফিসে প্রথমে সবাই আজানের ব্যপারটা নিয়ে কথা বললো। মেঘ বুঝতে পারল তার আব্বার মনের অবস্থা সে তার আব্বার হাত ধরে বলল,,
আব্বা সূরা ইউসুফ কত সুন্দর তাই না!
এটা আমাদের শেখায়;কাছের মানুষগুলো বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে,ভাঙা হৃদয় ভালোবাসা দিয়ে সারিয়ে তুলতে পারে,কষ্টের পর স্বচ্ছলতা আসে,দুঃখী হওয়া আর অকৃতজ্ঞ হওয়া সমান নয় এবং ধৈর্যশীল মানুষদের শেষ পরিণতি সুন্দর হয়! (সংগৃহীত)
মন খারাপ করবেন না আব্বা যা হয়েছে সেখানে আপনার কোন দোষ নেই। দোষ তাদের যারা আপনাকে ভুল বুঝেছে।”
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“আমি মানুষ টা নিজের ভাইবোনের চোখে এতটা খারাপ বুঝতেই পারি নি।”
‘আব্বা সেসব বাদ দেন। আজান কে বাহবা দেন আজানের জন্যই তো আজ সবকিছু সহজ হলো।”
তখন ধূসর বলল,,
“আজান এ সব করলো কিভাবে?’
তখন আজান বলল,,
“আপুর গুলি লাগার তিন দিন আগে আমি আমার রুমে যাচ্ছিলাম হুট করেই মেঘ আপুর নামে কিছু শুনতে পেলাম। মেঘ আপু আমাকে এর আগে বলেছিল আয়না ফুপি মেঘ আপুর ভালো সহ্য করতে পারে না। মেঘ আপুর নাম শুনে কোনকিছু না ভেবেই ভিডিও অন করি কারন পরে মেঘ আপুকে দেখাতে হবে তার নামে কি চুগলি করছে তারা। সব শুনে আমিই চমকে উঠি। সব শুনে আমি দৌড়ে ওখান থেকে চলে যাই। আমার কাঁপা কাঁপা অবস্থা তখন মেঘ আপু আমার কাছে আসে। আমি মেঘ আপুর দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে সব বলি। সব দেখে শুনে মেঘ আপু কাউকে কিছু জানাতে বারন করে। তাই কাউকে কিছু বলি নি।”
“আচ্ছা!”
___________________
অতঃপর আশরাফ হকের কেস উঠে। মিস্টার শেখ আগেই বুঝে গেছে সে আজ জিততে পারবে না। তাই সে আর মুখ খুলবে না। আশরাফ হক কাঠগড়ায় দাঁড়ালো। মেঘের জন্য আয়না চৌধুরী আর শাফিয়ান চৌধুরী কে সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মেঘ আশরাফ হক এর সামনে গিয়ে বলল,,,
“তো মিস্টার আশরাফ হক এখন বলুন তো আয়মান চৌধুরী ও এহসান খানের সাথে আপনার কিসের শত্রুতা? তার জন্য আপনি তাদের জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আর হ্যা ভুলেও মিথ্যা বলতে যাবেন না কারন আমি প্রমান নিয়েই কাজ করি।আপনি স্বীকার না করলেও আমি প্রমান করতে পারবো তবে আমি ডিটেলস এ আপনার থেকে শুনতে চাই।
আশরাফ হক একবার লয়ারের দিকে তাকালো তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তারমানে কোন আশা ভরসা নেই। আশরাফ হক বলল,,,
“স্কুল লাইফ থেকে আমি , আয়মান, এহসান রোকনুজ্জামান খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। কলেজে উঠে হুট করে আমি ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে পরি। আয়মান এহসান প্রথমে এই বিষয়ে জানতো না । পরে জেনেছে আমি যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। তারা আমাকে বারবার বলেছে সেখান থেকে ফিরে আসতে তারা সাহায্য করবে কিন্তু আমি শুনিনি। এরপর আমি ওদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করি। কিন্তু ওরা আমার ভালো চায় বলে আমার বাবার কাছে গিয়ে সব বলে দেয়। আমার বাবাও আমাকে সরে আসতে বলে ড্রাগ এডিক্টেড ছিলাম বলে বাবার সাথে রাগারাগী হয় তিনি আমায় ত্যায্যপুত্র করে। তখন সব রাগ গিয়ে পরে ওদের দুজনের ওপর। তখন থেকেই ওদের শেষ করার ইচ্ছে হয় কারন ওদের দুজনের জন্যই বাবা আমাকে ত্যায্য পুত্র করেছে। এদিকে টাকা না থাকায় ড্রাগ পাচ্ছিলাম না। টাকার জন্য একজন কে খুন করি তার থেকে টাকা পয়সা সব নিয়ে নিই তখন থেকেই শুরু হয় অন্ধকার জগতে পথ চলা। এক ভাই আমাকে সাহায্য করে আমি তার সাথে মিলে ড্রাগের ব্যবসা শুরু করি। এভাবেই দিন যাচ্ছিল কিন্তু একদিন ওদের দুজনের নজরে আমি আর আমার কর্মকাণ্ড পরি। ওরা পুলিশ কে খবর দেয়। আমি কোনরকম পালিয়ে অন্য জায়গায় যাই। ওরা আর আমাকে পায় না। আমি জানতাম না এহসান এর বাড়ি সিলেট ও ওর মামার বাড়ি ঢাকা থেকে পরতো। আমি এহসান এর বোন শিরিনের প্রেমে পরে যাই। আমি শিরিন এর ওপর নজর রাখতে শুরু করি শিরিন ও আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পরে তখন আমি অনার্স চতুর্থ বর্ষে পরি। আমি একদিন তাকে প্রপোজ করি ও বলে তার বাবা ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথা বলতে। ড্রাগসের ব্যবসা ভালোই চলছিল তাই আমি ওর বাবার সাথে কথা বলি। তখন এহসান আমার ব্যাপারে জেনে যায়। সে নাকচ করে বরং উল্টো পুলিশকে জানায়। তখন আমি আবার পালাই। ঢাকায় এসে আয়না আমার প্রতি দুর্বল দেখে আমি প্ল্যান করি আয়নাকে বিয়ে করলে আয়মান চৌধুরী বোনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারবে না। আবার আয়মান কে শেষ করতেও সুবিধা হবে। ওকে বলি ভালো হয়ে যাব তবুও যেন আয়না কে বিয়ে দেয় আমার সাথে। ওদিকে থেকে এহসান আমার ব্যাপারে সব জানিয়ে দিয়েছে এও বলেছে আমি শিরিন কে ভালোবাসি। আয়মান আমার সব প্ল্যান বুঝতে পেরে মেরে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। আমি কয়েকবছর জেল খাটি আর তখনই প্রতিজ্ঞা করি এহসান আর আয়মান এর পরিবার শেষ করে ফেলবো। জেল থেকে বের হয়ে এহসানকে খুজি আর পেয়েও যাই। আমি আয়নার খবর নিয়ে প্রথমে ওকে দলে নিই আর ও নিজেও বোকার মতো আমাকে বিশ্বাস করে আমার সাথে হাত মেলায়। শাফিয়ান কে দেখে মনে হতো ও আয়মান কে পছন্দ করে না তাই ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার দলে নিই। প্রথম চালটা আমি আয়মান চৌধুরীর ছেলে আনাফকে দিয়ে শুরু করি। আমার কথামতোই শাফিয়ান ওকে ফেলে দিয়েছিল। এহসান কে ছয় বছর আগে এক্সিডেন্ট করি কিন্তু ও বেঁচে যায়। তারপর ওরা বিদেশে চলে যায়। জেল থেকে বেরিয়ে তেমন টাকা ছিল না তাই বেশি ইফোর্ট করতে পারি নি। মানে এহসান কে ধরতে পারি নি। এরপর বারবার আমি আয়মান কে মারতে চাইতাম কিন্তু কোন না কোন ভাবে ও বেঁচে যেতো। আগে তো এমনিই বেঁচে যেত কিন্তু তার মেয়ে মেঘ বড় হওয়ার সাথে সাথে আমার ব্যাপারে সব জেনে যায় তাই সে বাঁচিয়ে নিতে শুরু করে। যার জন্য আয়মান চৌধুরী কে কোনভাবেই শেষ করতে পারছিলাম না। তাই মেঘকেই শেষ করার প্ল্যান করি যদিও তার ভাগ্যে ভালো তাই গুলি খেয়েও মরে নি।”
সব শুনে সবাই একপ্রকার বাকরুদ্ধ। আয়মান চৌধুরী আর এহসান খান আন্দাজ করলেও পুরোপুরি ভাবে সব জানতো না। ধূসর শুধু জানতো তাদের আশরাফ হক নামের একজন শত্রু আছে কিন্তু কিসের শত্রুতা তা জানা ছিল না। আজ জানলো হুট মেঘ বলল,,
“আপনার কথার সবকিছুই ঠিক আছে তবে আপনি তো এটা বললেন না এহসান খানের মেয়ে কে কিভাবে মেরেছেন?”
এ কথা শুনে ধূসরের পরিবার চমকে উঠলো। মেঘ জানলো কিভাবে?
~চলবে,,