#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
চৌধুরী বাড়িতে থমথমে পরিবেশ। মনে হচ্ছে কোথাও কেউ নেই। কিন্তু সবাই বাড়ির মধ্যেই আছে কিন্তু টু শব্দ করার সাহস পাচ্ছে না। চৌধুরী বাড়ি আর খান বাড়ির সকলে ড্রয়িংরুমে বসে আছে ঠিকই কিন্তু তাদের বাড়িতে কয়েক জনের মাথায় বন্দুক ঠেকানো দেখে বাকিরা সেই ভয়েই কোন শব্দ করছে না। মুন তার হাজবেন্ড কে নিয়ে আর আশা চৌধুরী আজকেই সকালে এসেছেন । সবার মুখে ভয় বিরাজ করলেও আয়মান চৌধুরীর মুখে ভয়ের রেশ মাত্র নেই। তিনি চুপচাপ বসে আছে সোফায়। উনি একটু আগেই মেঘকে ফোন করেছিলেন ফোন রাখতেই সামনের মানুষটা বলল,,
“এই তুই কি বললি মেঘ কে?”
“কেন মিস্টার আশরাফ হক আপনি কি বয়রা নাকি আপনার সামনেই তো সব কথা হলো নিশ্চয়ই শুনেছেন আমি আর আম্মা কি কথা বললাম।”
“তুই ওকে কিছু ইঙ্গিত দিলি নাকি আমিই বেশি ভাবছি।”
“সেটা আপনার ভাবনা কে জিজ্ঞেস করুন আশরাফ হক। সবার মাথা থেকে বন্দুক নামান রিমঝিম দাদুমনিরা তো ভয় পাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা আমার আম্মা আসছে সে এসবে খুবই ভয় পায় বলতে পারেন ফোবিয়া তাছাড়া তুই তো ভালো মতোই চিনিস মেঘ কে!”
“তোর মেয়ে আর ভয় হাসালি! কিন্তু তোর মেয়ে মেঘকে তুই সবার থেকে ভালোবাসিস জানতাম।তাই বলে তার নামে চল্লিশ পার্সেন্ট সম্পত্তি লিখে দিবি ভাবনার বাইরে ছিল এটা আমার। এখনো তোর ভাই আছে বোনেরা আছে তাদের ভাগ না দিয়েই চল্লিশ পার্সেন্ট সম্পত্তি মেঘের নামে লিখে দিয়েছিস।”
আয়মান চৌধুরী চুপ করে রইলেন উনি আশা চৌধুরী আয়না চৌধুরী আর শাফিয়ান চৌধুরীর দিকে তাকালো। আশা চৌধুরী আজকের অনুষ্ঠানের জন্য এসেছিলেন আয়না চৌধুরী আর যায় নি কোথাও। আশা চৌধুরীর চোখে উনি তেমন কিছু দেখতে পেলেন না কিন্তু আর দু’জনের চোখে সে যেন আগুন দেখতে পেল। সেই আগুন যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মেঘকে খুন করে ফেলবে। তা দেখে আয়মান চৌধুরীর যেন হাসি পেল। সবার মাঝে এখন হাসিটা বেমানান হলেও সে হাসছে এহসান চৌধুরী তেমন কিছু বলছে না। আশরাফ হক বললেন,,
“এই তোর হাঁসি পাচ্ছে এরকম সিচুয়েশনেও !”
“কিছু না এমনিই আচ্ছা আমি কি একবার ওপরে যেতে পারি ভয় পাস না আমি কাউকে ফোন করবো না। ফোন এখানেই রেখে যাবো সবথেকে বড় কথা আমি মেঘের রুমে যাবো।”
“মেঘের রুমে গিয়ে তুই কি করবি?”
“আমার একটা ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে ওটা খুব ইম্পোর্টেন্ট তাই ওটা মেঘের রুমে থাকে কারন ও নিয়ম করে আমাকে সেই ওষুধ দেয়। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে সব কিছু তো হারাবিই তার আগে না হয় তোর সাথে ভালোগিড়ি দেখালাম। যা তবে ভুলেও চালাকি করবি না।”
আয়মান চৌধুরী উঠে গেলেন আর মনে মনে বললেন,
“এখন আর কি চালাকি করবো যা করার তা তো করে ফেলেছি।”
কিছুক্ষণ আগে,,
ধূসরদের পরিবার আসলে সবাই তাদের কে নিয়ে আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পরে সকলেই আজ বাড়িতে ছিল। কেউ অফিস যায় নি। এদিকে আশা চৌধুরী আর মুন এসেছে সকালে। হুট করেই দশ বারোজন লোক ওদের বাড়িতে ঢুকে পরে সকলে তখন সোফায় বসে ছিল। ওনাদের দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“কে আপনারা ?”
তখনি পেছন থেকে আশরাফ হক বলেন ,,
“ওরা আমার লোক!”
কেউ কিছু বলবে তার আগেই সকলে বন্দুক বের করে তাক করে। আর চারপাশে ছরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আশরাফ হক তাদের কে সোফায় বসতে বলে তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“এসবের মানে কি আশরাফ?”
“আগে বোস ঠান্ডা মাথায় কথা বলি ! তবে হ্যা কাউকে আহত করার ইচ্ছে নেই। শুধু আমি যা বলবো তাই করবি নাহলে চৌধুরী বাড়িতে লাশ পরে থাকবে।”
“মানে?”
“পরে বলছি আগে বোস!”
ওনারা বসলেন । আশরাফ হক ওনাদের সামনে কাগজ রেখে বলল,,
“সাইন কর আয়মান?”
“এসব কিসের কাগজ আর আমি সাইন করবো কেন?”
আশরাফ হক পেপার্স গুলো হাতে নিয়ে ধরে হেসে বলল,,
“তোর স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি তুই সজ্ঞানে আমাকে লিখে দিচ্ছিস।”
“কখনো না!”
“এটা বললে যে হবে না। নাহলে এখানে একটা একটা করে সবার লাশ পরবে। আচ্ছা আজ তো তোর মেয়ের বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে এসেছে এহসান তা তোর মেয়ে কোথায় ক’দিন আগে বলেছিল না আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছে হয়েছে।”
“মেঘ একটা কাজে গেছে!”
“আচ্ছা ওকে দরকার ও নেই শুধু দেখা করার কথা বললাম এই যা। আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার সাইন করে দে এর পরে এহসান এর পালা।”
তখন দুজনে বলল,,
‘আমরা কিছুই করবো না।”
“রিমঝিম তোদের দুজনের খুব আদরের তাই না। আচ্ছা তাহলে ওদের দুজনকেই আগে উরিয়ে দিই কি বলিস!”
“না তুই এটা করবি না আর আমাদের দুজনের সাথে তোর কিসের শত্রুতা?”
“কিসের শত্রুতা সেটা এহসান তোর জানতে হবে না।এখন আয়মান সাইন করে দে নাহলে।”
আশরাফ হকের ইশারায় একজন গিয়ে রিমঝিম এর সামনে দাঁড়িয়ে বন্দুক তাক করে। তখন আয়মান বলল,,
‘শুধু আমার সাইন এ হবে না । কারন আমার সব সম্পত্তির চল্লিশ পার্সেন্ট সম্পত্তি মেঘের নামে করা। তাই মেঘ নাহলে চলবে না।”
এ কথা শুনে যেন চৌধুরী বাড়ির সকলের মাথায় বাজ পড়লো আয়না চৌধুরী ক্ষেপে বলল,
“ভাইয়া এটা তুমি কি বলছো তুমি ঐ মেয়েটাকে সম্পত্তি লিখে দিয়েছো?”
যখন শাফিয়ান চৌধুরী বললেন,,
“এবার আয়না ঠিক বলেছে তুমি আমাদের সাথে কথা না বলে ওকে সম্পত্তি দিয়ে দিলে এটা তুমি কি করে পারলে। তুমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারো না এগুলো আমাদের ও সম্পত্তি।”
তখন আশরাফ হক বলল,,
“এই তোমরা চুপ করো । যার সম্পত্তিই থাক এখন তো আমারই হবে। আয়মান তুই মেঘ কে ফোন কর। তবে হ্যা ভুলেও যেন মেঘ কিছু জানতে না পারে তোর মেয়ে হেব্বি চালাক।
আশরাফ হকের কথায় আয়মান চৌধুরী হাসলো তার আয়মান চৌধুরী মেঘকে ফোন দিল। আর সেসব কথা হলো।
______________
অতঃপর উনি তিন মিনিট পর নিচে নামলো। উনি এসে আবার ওনার জায়গায় বসে পরলেন। এহসান চৌধুরী ওনার পাশে বসে ছিল উনি আয়মান চৌধুরীর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,,
“এই তুই কি করছিস বলতো তুই যা বললি তা কি সত্যি আর মেঘকে তুই ,,
তখন উনিও ফিসফিস করে বলল,,
“যা হচ্ছে দেখতে থাক তবে আজকেই আশরাফের খুললাম খুললাম এর শেষ দিন হবে।”
আয়মান চৌধুরী বলেই হাসলেন এহসান চৌধুরীর সাথে যোগ দিলেন। এদিকে দিলরুবা খানম আর মায়মুনা চৌধুরী কিছু বুঝতে পারছে না। এদিকে সকলে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। তখন মেঘ আর ধূসরের দেখা পাওয়া গেল মেঘ আইসক্রিম খেতে খেতে আসছে ড্রয়িংরুমে এসে বলল,,
“আরে ভাই জামাই এর সাথে একটু আইসক্রিম খাচ্ছিলাম কিন্ত এটা বোধহয় আশরাফ কাকুর পছন্দ হয় নি। তাই খেতে খেতেই আসলাম।”
ধূসর সবকিছু দেখতে দেখতে আসছিল মেঘের কথা শুনে ধূসরের কাশি উঠে গেল। তখন আশরাফ হক বলল,,
“আমি এখানে আছি তোমায় কে বলল?”
“সেসব বাদ দেন কোথায় সাইন করতে হবে বলুন আমার কাজ আছে। ও মাই আল্লাহ বন্দুক আমি তো দেখিই নি। আপনি জানেন আমি বন্দুকে ভয় পাই আব্বা বলে নি আপনাকে।”
এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী আল ধূসর এর শুকনো গলায় কাশি উঠলো। তা দেখে মেঘ হাসলো। ও গিয়ে ওর আব্বার পাশে বসলো আর বলল,,
“কোথায় সাইন করতে হবে!”
আশরাফ হক কিছু না বলে পেপার্স গুলো এগিয়ে দিল। মেঘের এখনো আইসক্রিমটা হাতেই আছে। পেপার্স গুলো ওর সামনে দিতেই মেঘ ওর হাতে থাকা আইসক্রিম টা কাগজের ওপর ফেলে দিল। ও এমন ভান ধরলো যেন ও কিছু জানেই ও বলল,,
“ও সরি সরি আমি একদম বুঝতে পারি নি ।
বলেই আইসক্রিম টা হাত দিয়ে কাগজের ওপর ডলতে লাগলো। আইসক্রিম এর জন্য কাগজটা নষ্ট তো হলোই ছিঁড়েও গেল। এদিকে সকলে অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। আশরাফ হক রেগে চিৎকার করে বলল,,
“মেঘ তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি।”
“এটুকু তেই অবাক হচ্ছিস তাহলে এখন কি করবি?
মেঘ ওর বোরকা এর পকেট থেকে একটা বন্দুক বের করে ঠাস করে আয়না চৌধুরীর হাতে গুলি করলো। এমন ভাবে গুলি করলো যে গুলিটা হাত ছুয়ে বেরিয়ে যায়। আয়না চৌধুরী “আহ বলে বসে পরলো সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হলো যে কেউ কিছু ঠাওর ই করতে পারলো না। চৌধুরী বাড়ির সকলের চোখে বিষ্ময়। আয়মান চৌধুরী ও ভাবেন নি এরকম কিছু হবে। আশরাফ হক আয়না বলে চিৎকার করে আয়না চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গেল। এটা যেন আরো বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো। কিন্তু আয়না চৌধুরীর কাছে আগে মেঘ গিয়ে পৌঁছালো আর আশরাফ হক দৌড়ে আসছিল ও তাকে আটকিয়ে আয়না চৌধুরীর দিকে বন্দুক তাক করে বলল,,
“ইস খুব কষ্টে হচ্ছে তাই না নিজের প্রিয়তমাকে কষ্ট পেতে দেখতে। ইস কি ভালোবাসা।”
সকলে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে আশরাফ চৌধুরী চমকে উঠে মেঘের কথায়। তারপর মেঘ চিৎকার করে বলল,,
“এটুকুতেই তোর এত ভয় তাহলে বল সেদিন ধূসরের আর আমার আব্বার কেমন লাগছিল। তুই তো আয়না চৌধুরীর কাছে থেকে খবর নিয়ে তার কথা মতো কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আমায় গুলি করেছিলি আর আমি তো তোর এতো লোকের মাঝখানে তোর প্রিয়তমাকে গুলি করলাম তাও হাতে।”
আশরাফ হক রেগে চিৎকার করে বলল,,
“তোকে আমি ছাড়বো না মেঘ। তোরা দাঁড়িয়ে দেখছিস কি সবকটা কে শুয়িয়ে দে।
সবাই বন্দুক ওঠাবে তখন পেছন থেকে ধূসর বলল,,
“ভুলেও এ কাজ করতে যেও না তাহলে তোর লাশটাই আগে পরবে।”
তিনি পাশে তাকিয়ে চমকে উঠলো ধূসর একটা বন্দুক তার মাথায় ধরেছে। তখন মেঘ আয়না চৌধুরীর মাথায় বন্দুক টা চেপে ধরে বলল,,,
“তোর লোকদের বন্দুক নামিয়ে ফেলতে বল নাহলে তোদের দুজনের আমার হাতেই শেষ দিন হবে।”
এখানে কি হচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না। আশরাফ হকের ইশারায় সবাই বন্দুক নামিয়ে ফেলল। তখনি কতোগুলো লোক এসে তাদের সবাইকে ঘেরাও করলো এটা দেখে সকলে আরেক ধাপ অবাক। তখন মেঘ বলল,
“কিরে আশরাফ অবাক হলি নাকি আচ্ছা বেশ তোকে খুলেই বলি শোন আব্বা যখন বলল কাকু এসেছে তখনই বুঝতে পেরেছি তুই এসেছিস কারন একমাত্র তোকেই আমি কাকু বলি । আর বলল সাইন লাগবে তখনি বুঝতে পেরেছি তুই আমাদের সকল সম্পত্তি লিখে নিতে এসেছিস নিশ্চয়ই তোকে আব্বা বলেছে আমার নামে হয়তো সম্পত্তি আছে তা আব্বা কতো পার্সেন্ট বলেছেন,,
“চল্লিশ পার্সেন্ট!”
“আব্বা আরো বাড়িয়ে বলতে পারতেন তো ! নিজেকে একটু বেশি বড়লোক ভাবতাম!”
“ওটা এমনিই বলেছি তখন আম্মা মুখে যা এসেছে তাই বলেছি।”
“আচ্ছা পরে এটা নিয়ে কথা হবে। আচ্ছা যাই হোক তারপর শোন আব্বা কে বললাম না কয়মিনিটের মধ্যে আসতে পারলে ভালো হয় এটার ভেতর প্রশ্ন ছিল তারা কতজন আসতে পারে। আব্বা বলল আট দশ মিনিট মানে আট দশ জনের মতো। তারপর বললাম আমার কাজ আছে বাড়ির বাইরে থেকে আসতে পারব কিনা এর মধ্যে প্রশ্ন ছিল বাইরে কেউ আছে কি না নাকি সকলে ভেতরেই। তিনি বললেন বাইরে থেকে যেতে হবে না সবাই বাড়ির ভেতরে । মানে বাইরে তোর লোক নেই। তারপর আমি ধূসরকে ফোন দিলাম একটা আইসক্রিম কিনলাম সব ধূসরকে বললাম ও গার্ড নিয়ে এলো ওরা এতক্ষন বাইরে ছিল। ধূসরের ইশারায় বাড়িতে ঢুকলো এই হলো মূল কাহিনী।
তখন ধূসর বলল,,
“তোর সামনেই সব বলল আমার বউ কিন্তু তুই বুঝতেই পারলি না। অবশ্য বুঝবি কি করে তোর মাথা হলো ক্রিমিনাল দের মাথা আর আমার বউয়ের ব্যারিস্টারের মাথা। তাছাড়া আমার বউয়ের আর আমার শুশুরের কেমন সম্পর্ক এটা তারা দুজন ছাড়া কেউ জানে না।”
এ কথা শুনে শুধু আশরাফ হক না মেঘের পরও পরিবারই চমকে উঠলো। তখন আয়না চৌধুরী অসহায় মুখে বলল,,
“কি মেঘ ব্যারিস্টার ?”
“ইয়েস মাই ডিয়ার ডেভিল ফুপিশাশুরি! আগে জানলে বুঝি আরো সাবধানে সব কাজ করতেন।
তখন মেঘ আয়না চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলল,,
” তুমি কি ভেবেছিলে এই মেঘ তোমাকে কোনদিন ধরতে পারবে না। কোনদিন কিছু জানবে না। তুমি কি ভেবেছিলে তুমি সেদিন আমার ঘরের বাইরে থেকে বন্ধুদের সাথে ধূসরের সাথে বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবো সেই কথা শুনছিলে আমি জানি না। তোমার ঐ ছায়াও আমার চেনা। তবে সেদিন গুরুত্ব দিই নি বলে এগুলো হলো। তোমাকে এই আঘাত টা করলাম কারন তোমার জন্যই সেদিন আশরাফ আমাকে গুলি করেছিল। সমস্যা নেই বেশি কিছু হবে না। আর হ্যা এটা আমার লাইসেন্স করা বন্দুক তোমাকে মেরে ফেললেও কেউ কিছু বলবে না । অবশ্য আমার উপাধি তো এই বাড়িতে খুনী আছেই তোমাকে মেরে ফেলাই উত্তম নতুন কোন উপাধি লাগবে না। যদিও উপাধি টা তোমাদের জন্যই পেয়েছি।
সকলে আরেক ধাপ অবাক মেঘ এগুলো কি বলছে। ধূসরের পরিবারও অবাক ওরা তো মেঘের খুনী হওয়ার ব্যাপারে জানতো না। মায়মুনা চৌধুরী অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ বলল,,
“তুমি যদি আমার থেকে বড় না হতে তাহলে আজ তোমায় কষিয়ে দশটা থাপ্পড় মারতাম। আর যদি খুন করার অনুমতি থাকতো তাহলে তোমাকে খুন করতাম কারন তোমার আর শাফিয়ান চৌধুরীর জন্য আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি। আপনারা আমার ভাইকে খুন করেছেন আর খুনী বানিয়েছেন আমাকে।”
শাফিয়ান চৌধুরীর নাম শুনে সবাই চমকে উঠলো। আয়মান চৌধুরী নিজেও উনি জানতেন না এই বিষয়ে। আয়মান চৌধুরী নিজের মেয়ের কাছে গিয়ে বলল,,
“মেঘ আম্মা কি বলছেন শাফিয়ান আর আয়না ওরা কি করে আনাফকে মারতে পারে।”
মেঘের খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে সেই দিনটা মনে পরছে যা ও কখনো ভুলতে পারে না ওকে তাড়া করে বেড়ায়।মেঘ কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,,
“সরি আব্বা আপনাকে বলা হয় নি কারন আপনি শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি আনাফকে সিড়ি থেকে ফেলেছি কি না কিন্তু আপনি জিজ্ঞেস করেন নি আনাফ সিড়ি থেকে পরলো কিভাবে? সবাই ভেবেছিল ওটা এক্সিডেন্টে কিন্তু ওটা এক্সিডেন্ট ছিল না। ইচ্ছে করে সব করেছে ওনারা। আমি আর আনাফ সিড়ির ওখানে খেলছিলাম সিড়ির সামনে দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিলাম। হুট করে শাফিয়ান চৌধুরী আনাফকে ধাক্কা মারে আনাফ আমার সামনে দিয়ে সিড়ি থেকে পরতে থাকে তখন আমার পাশে আয়না চৌধুরী দাড়িয়ে ছিল। আমি আনাফকে ধরার জন্য সিড়ি নিয়ে নেমে যাই আর সেটায় সবাই দেখে আমাকে বলে আমি নাকি ইচ্ছে করে আনাফকে ফেলে দিয়েছি। ওনারা দুজনে ওখানেই দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে আমি দেখেছি সেই হিংস্র হাঁসি।সেই দশ বছর বয়সে আমি বুঝতে পারি নি তারা কেন এরকম করেছে।পরে বড় হবার পর বুঝতে পারলাম মূলত তাদের টার্গেট ছিল আনাফ মানে আপনার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকে মেরে আমাকে সবার সামনে খুনী প্রমান করা। আর সেটায় তারা সফল হয়েছে। আমি খুনী নই বলে হাজার চিৎকার করেও আমাকে কেউ বিশ্বাস করেনি আব্বা একমাত্র আপনি ছাড়া। আমি তো আনাফকে ভালোবাসতাম তাহলে আমি কি করে এটা করতে পারি কেউ বিশ্বাস করে নি আব্বা কেউ না। এরপর থেকেই শুরু হলো এই মেঘ নামক মেয়েটার জীবনে আরো অবহেলা।
আয়মান চৌধুরী মেয়েকে জরিয়ে ধরলো। মেঘের চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। সবাই একপ্রকার শক্ড এসব কেউ জানতো না। মায়মুনা চৌধুরী নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিল তখন জাহানারা চৌধুরী ওনাকে ধরলেন কারন ওনার পাশেই তিনি ছিলেন। সত্যি টা শুনে সেও শকড। উনি নিজেকে সামলিয়ে শাফিয়ান চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলল,,
“কেন করলে এরকম? কি ক্ষতি করেছিল আমার ছেলে আমার আনাফ। তোমাকেও তো আমি আমার ভাইয়ের মতো দেখতাম তাহলে কেন করলে। তোমার জন্য আমার মেয়েটাকে কখনো আদর করেনি ভালোবাসি নি। এমন কি মেয়েটার সাথে ভালো করে কোনদিন কথা বলিনি। কারন ওকে যে সারাজীবন ছেলের খুনী হিসেবেই ভেবেছি ও বারবার বলেছে আমি আনাফকে ফেলি নি আমি বিশ্বাস করি নি। এটাও বলেছে চোখের দেখা আর শোনা কথা কখনো কখনো সত্যি হয় না। আমি তবুও বিশ্বাস করি নি শুধু বিশ্বাস করেছিলাম তোমাদের দুজনকে যারা বলেছিলে মেঘ ওকে ইচ্ছে করে ফেলেছে কারন মেঘের থেকে আনাফকে বেশি ভালোবাসতো সবাই তাই হিংসার জন্য মেঘ ওকে ফেলে দিয়েছে। আমি তো তোমাদের কথা শুনে মেয়েটাকে জেলেও দিতে চেয়েছিলাম শুধুমাত্র মেঘের বাবার জন্য পারি নি। কি করেছিলাম আমরা সবাই যে তোমরা আমাদের এভাবে ক্ষতি করলে। আমার ঐ ছয় বছর বয়সী আনাফ কতটুকুই বুঝতো ওর তো কোন দোষ ছিলো না। তাহলে ওকে কেন তোমরা মারলে। যদি সম্পত্তির জন্যই সব করে থাকো তাহলে আমাদের দুজনকে বলতে আমরা তোমাদের সব দিয়ে দিতাম । কেন করলে এরকম তোমরা দুজনে। আয়মান প্লিজ তুমি আমার ছেলের খুনিদের কে পুলিশের দেওয়ার ব্যবস্থা করো। আমি এদের কে সহ্য করতে পারছি না।
বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শাফিয়ান চৌধুরী চুপ করে আছে। চোর ধরা পরলে তা হয় সেরকমই আছে। আয়না চৌধুরীও হাত ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আশরাফ হক কে ধূসরের লোক ধরে রেখেছে। মায়মুনা চৌধুরী কে ভেঙ্গে পরতে দেখে। আশা চৌধুরীর সাথে জাহানারা চৌধুরী গিয়ে ওনাকে সামলালেন কারন ওনার যে দায় ওনার স্বামীর জন্য আজ এই অবস্থা ওনাদের। তখন মেঘ বলল,,
“ধূসর আপনি প্লিজ পুলিশকে ভেতরে ডাকুন আমি ওনাদের সহ্য করতে পারছি না। আব্বা প্লিজ আমাকে রুমে দিয়ে আসুন এদের সবাইকে পরে দেখে নেব আমি। আশরাফ হক এর থেকে সব হিসেব নেব। আর বাকিদের থেকে সব হিসেব নেব। আর হ্যা আমাকে একটু একা ছেড়ে দিবেন প্লিজ।”
ধূসর পুলিশদের ভেতরে ডাকলো ওনারাও বাইরে অপেক্ষা করছিল। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে ওপরে গেলেন।ধূসর যেতে চাইলো মেঘের সাথে আয়মান চৌধুরী মানা করলেন অন্য কারনে। মেঘ শুধু বললো,,
” সবাই আজকের দিনটাই পেল সবকিছু করার জন্য আব্বা! এই দিনটা যে অভিশপ্ত। সব কষ্টের ভার এই একদিনে কিভাবে বইবো আব্বা!প্লিজ আব্বা আমাকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিন।
আয়মান চৌধুরীর চোখ ছলছল করে উঠলো ভেতরে ভেতরে তিনি ও শেষ হয়ে যাচ্ছে তার ভাই আর বোন এগুলো করেছে। কিন্তু আজকের মেঘ যে খুব ভাঙা এই শক্ত মেয়েটা যে এই দিনে ভিশন ভেঙে পরে। এই দিনটাই তো ও ওর জীবনের আরেকটি কালো দিন ছিল ওর অতীতে। মেঘ রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিল হুট করেই নিজেকে ভিশন অসহায় বোধ করছে ছোটবেলার তিক্ত স্মৃতি সব মনে পরছে তার সাথে সকাল থেকে একটা স্মৃতি তো ছিলই। আয়মান চৌধুরী দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। মেঘ ঘরের সবকিছু ফেলে দিল চিৎকার করে কাঁদছে সে। আর বলছে ,,
“এত কষ্টের ভার বহন করবো কিভাবে একদিনে? ইচ্ছে তো করছে নিজেকে শেষ করে ফেলতে। নীলি তুই দেখতে পাচ্ছিস এই নিষ্ঠুর মেয়ে মেঘ কাঁদছে।আজকের দিনটাই- ই তো আমি তোকে হাড়িয়ে ফেলেছিলাম।”
আয়মান চৌধুরী দরজার বাইরে থেকে মেয়ের আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছে তার চোখ দিয়ে পানি পরছে। সে আর সহ্য করতে না পেরে নিচে চলে গেল। আর নিচে গিয়ে ওনার ফোন নিয়ে একটা কল করে বলল,,
“কোথায় তোমরা তাড়াতাড়ি এসো তোমাদের আজ ভিশন দরকার যে ওর। তোমরা ছাড়া আজকে ওকে কেউ সামলাতে পারবে না। মেয়েটা আজকের দিনটা সহ্য করতে পারছে না। সবকিছু আজকেই হতে হলো। প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো।”
~ চলবে,,
#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আয়মান চৌধুরীর কথায় কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। তিনি কাদের কে ফোন করলেন আর আজকের দিনে এটা ছাড়া কি হয়েছে সেটাও কেউ বুঝতে পারছে না। মায়মুনা চৌধুরী কেঁদেই যাচ্ছে। একটু আগেই আশরাফ হক,আয়না চৌধুরী আর শাফিয়ান চৌধুরীকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। বাড়ির সবাই খুব অসহায় বোধ করছে। আয়মান চৌধুরী ফোন রেখে দিলেন। তখন ধূসর বলল,,
‘আব্বা আমি মেঘের কাছে যাই আমি নিশ্চয়ই ওকে সামলাতে পারবো। আর আপনি কাদের আসতে বললেন।”
আয়মান চৌধুরীর চোখ দিয়ে পানি পরছে তিনি এর আগে কোনদিন এতটা ভেঙে পরেন নি। কারন সবসময় তো তার মেয়ে স্ট্রং ছিল তাই সেও স্ট্রং ছিল। আজ সেই স্ট্রং মেয়েটাই ভেঙে পরেছে তিনি তো ভেঙে পরবেনই। আয়মান চৌধুরী চোখ মুছে বলল,,
“ধূসর তুমি ওকে সামলাতে পারবে সেটা আমি জানি। কিন্তু জানো কি কারো কারো জীবনে কিছু নির্দিষ্ট কষ্ট থাকে আর তা তার জীবনে থাকা কিছু নির্দিষ্ট মানুষগুলোর জন্যই সেই দুঃখ কাটাতে পারে। তাই তারা আসুক আজ তারাই মেঘ কে সামলিয়ে নেবে। কারন তোমার জন্য মেঘ হয়তো নিজেকে সামলে নেবে। কিন্তু সে তোমার সামনে তার কষ্ট টাকে লুকাবে তার সেই কষ্ট তোমার সামনে দেখাতেও পারবে না কারন সে তোমার সামনে কাঁদতে পারবে না সেই কষ্ট নিয়ে। জানো এই সময়ে ঠিক আমিও তেমন কিছু করতে পারি না খুব অসহায় হয়ে পরি। আমি সবসময় মেঘের পাশে থাকি অথচ মেয়েটা আজ আমাকে বলল আব্বা প্লিজ আমাকে একটু একা ছেড়ে দিন। আমার মেয়েটা সবসময় শান্ত থাকে অথচ আমার মেয়েটা আজই ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে চিৎকার করে কাঁদছে। আমি শুনলাম অথচ কিছুই করতে পারছি না নিজেকে এর আগে এত অসহায় কোনদিন লাগে নি ধূসর। নিজে সত্যিই খুব অসহায় বোধ করছি ধূসর। আমার মেয়েটা যে সকাল থেকেই খুব ভাঙা ছিল তার মধ্যে একটু আগের ঘটনা গুলো ওর অতীতের সব কিছু নাড়িয়ে দিয়েছে।”
আয়মান চৌধুরীর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। ওনার অবস্থা দেখে সকলেরই কান্না পেল। এমনিতেও একটু আগের বিষয়টা নিয়ে সকলেই আপসেট। তার ওপর আয়মান চৌধুরীর কথার আগামাথা কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। মেঘের জীবনে কি আরো কোন গভীর কষ্ট বা গভীর ক্ষত রয়েছে। এদিকে ধূসর ভাবছে সেদিন মেঘ বলেছিল সবার জীবনে কিছু গোপন দুঃখ থাকে। যা তারা কেউ কাউকে বলতে চায় না। এই কষ্টের ভাগিদার তারা কাউকে দিতে চায় না। ধূসর বলল,,
“মেঘের জীবনে কি আরো কোন গভীর কষ্ট বা ক্ষত আছে আব্বা?”
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“মেঘ হলো একটি দুঃখের সাম্রাজ্যের নাম। যেখানে কিছু মানুষ একটু কষ্টই সহ্য করতে পারে না। সেখানে মেঘ প্রতিনিয়ত দুঃখবিলাস করে। মেঘ কখনো কারো সামনে কাঁদে না কিন্তু নিরবে সে ঠিকই কাঁদে। সবাই ভাবে মেঘকে সবাই সামনাসামনি কতকিছু বলে কিন্তু মেঘ এসবের ধার ধারে না। কিন্তু তারা তো জানে না মেঘ রাতে গুনগুনিয়ে কাঁদে। তবে তার জীবনের দুঃখ গুলো তার খুবই ব্যক্তিগত আমি তার ব্যক্তি স্বাধীনতা বা কোন কিছু তে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তাই এটার উত্তর আমার কাছে আশা করো না।”
তখন মায়মুনা চৌধুরী বললো,,
“আমি একটু আমার মেয়ের কাছে যাই?”
“দরকার নেই মায়মুনা চৌধুরী। যে আজ পর্যন্ত মেঘের মা হয়ে উঠতে পারে নি। তাকে এই সময় যেতে হবে না। যেখানে ধূসরকে যেতে বারন করছি সেখানে তুমি তো কোন ছাড়। তুমি তো মেঘের থেকে অনেক দূরে।”
তখনি জাবিন, হির আর লিয়া দৌড়ে ঢুকলো। তিনজনেই দৌড়াচ্ছে বোঝা যাচ্ছে যে যেমন ছিল তেমন ভাবেই চলে এসেছে। শুধু জাবিন পরিপাটি ভাবে বোরকা হিজাব পরা হয়তো শোরুমে গেছিল। হির আর লিয়া নরমাল থ্রিপিস মাথায় শুধু কাপড় দিয়েছে তিনজনেই তাড়াতাড়ি সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। জাবিন কি মনে করে যেন আবার আয়মান চৌধুরীর কাছে গেল ওর চোখ দিয়েও পানি পরছে ও আয়মান চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলল,,
“ভালোবাবা চিন্তা করো না মেঘকে আমরা সামলিয়ে নেব।”
তখন আয়মান চৌধুরী বলল,,
“হুম তবে আজ তোমাদের কাঁধে মাথা রেখে তাকে একটু চিৎকার করে কাঁদতে দিও। অনেক দিন হয়ে গেছে মেয়েটা চিৎকার করে কাদেনা তার জন্য কষ্ট গুলোও কম হয় না।”
“মেঘের কিছু হবে না ভালোবাবা অনেক তো হলো আর কতো। আসছি চিন্তা করো না।”
জাবিন ওপরে চলে গেল। বাকিরা শুধু দেখেই গেল। এদিকে লিয়া আর হির মেঘের দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মেঘ খুলছে না। জাবিন ওখানে পৌঁছাতেই বলল,,
“কিরে এখনো ভেতরে ঢুকিস নি?”
‘কি করবো দরজা তো বন্ধ!”
“যা ভালোবাবার থেকে চাবি নিয়ে আয়। ভেতরে কি করছে না করছে জানিনা তো নিজের ক্ষতি না করে ফেলে সব ভুলে।”
হির দৌড়ে গেল আয়মান চৌধুরীর কাছে চাবি চাইলো। তিনি তো ভুলেই গেছিল তার মেয়ে দরজা আটকে দিয়েছে। তিনি ওপরে গিয়ে চাবি দিল। দরজা খুলতেই সবাই অবাক মেঘের ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঘরটা অন্ধকার লিয়া লাইট অন করলো। আর ঘরের অবস্থা দেখে তিনজনে আঁতকে উঠল। কারন ঘরে হালকা হালকা রক্তের ছাপ। দেওয়ালে একটা যায়গায় রক্ত বোধহয় মেঘ আজকে নিজেকে আহত করেছে হয়তো রেগে সেখানে ঘুষি মেরেছে কিন্তু মেঘ কোথায় মেঘ বিছানার বা পাশে শুয়ে আছে। ওরা দেখতেই তিনজনে ওদিকে গেল। জাবিন গিয়ে মেঘের মাথা টা নিয়ে জরিয়ে ধরলো মেঘ এখন আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। ও চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো চার বান্ধবীই কাঁদছে। মেঘ বলল,,
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। নিঃশ্বাস টাও যেন ভালোমতো নিতে পারছি না। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তোরা না এলে আমি কি করতাম নিজেও জানি না। কোনদিন যা করিনি আজ তাই করেছি আমি ঘরের জিনিসপত্র ফেলে দিয়েছি নিজেকে আহত করেছি।”
তখন হির মেঘের হাত ধরে বলল,,
“শান্ত হ মেঘ! তুই তো এরকম না। নিজেকে সামলা মেঘ।”
“কি করে সামলাবো নিজেকে? আমি সকাল থেকেই আজ খুব ডিসটার্ভ ছিলাম। আজকেই তো এমন হয়েছিল নীলি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছিল ওর রক্তাক্ত মুখ বারবার মনে পরছিল আর যেন ভেতর থেকে কেউ বলছিল তুই সেখানে থেকেও কেন বাঁচাতে পারিস নি ওকে। সে তো তার সন্তান কে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। তাহলে কেন? আজ কি হলো জানিস ঐ আশরাফ এসেছিল আমাদের বাড়িতে সব লিখে নিতে। সবার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ছিল। আজ সবাই সব সত্যি জেনে গেছে আমি আমার ভাইকে ধাক্কা মারি নি। আমি খুনি নই। এই কথাটা সেই ছোটবেলায় কতো বলেছি।কেউ বিশ্বাস করেনি।
তখন জাবিন বলল,,
“তোর জন্য কিছু হয় নি। কেউ তোকে বিশ্বাস না করুক আমরা তো করি। তোর ছোটবেলায় তা হয়েছে সেটায় তোর হাত নেই। তাই সেটা ভেবে একদম কষ্ট পাবি না।আর সেদিন তো তোর কোন দোষ ছিল না। তুই তো খুব ভয় পেয়ে গেছিলি তাছাড়া নীলকেউ তো বাঁচাতে হতো। তাছাড়া ওরা তো কাপুরুষের মতো নীলিকে পেছন থেকে আঘাত করেছিল তুই না থাকলে তো নীলকে সেদিনই মেরে ফেলতো আকাশ মাহমুদ। নীল তো তারই রক্ত আকাশ মাহমুদের ভাইয়ের ছেলে কিছু সম্পত্তির জন্য ওকে শেষ করে ফেলতে চায়। আচ্ছা সোহেল ভাইয়া এক্সিডেন্ট টা সত্যিই হয়েছিল নাকি আকাশ ইচ্ছে করে তার ভাইকে মেরে ফেলেছে। এখন তো মনে হচ্ছে আকাশ মাহমুদ সোহেল ভাইয়ের আপন ভাই না। তাহলে বল সোহেল ভাইয়ার বাবা সব কেন সোহেল ভাইয়া কেই লিখে দেবে। আবার সোহেল ভাইয়াও বোধহয় কিছু আঁচ করতে পেরেছিল নাহলে ছোট বাচ্চা নীলের নামেই কেন সব লিখে দেবে। কিছু তো গন্ডগল আছেই আমরা জানি না। নাহলে কেন ভাইয়ের ছেলের পেছনে লাগবে তাও সম্পত্তির জন্য।
তখন মেঘ চিৎকার করে বলল,,
“এই সম্পত্তি আর কত পরিবার কে শেষ করবে। আজ আমাদের পরিবারের জন্য এই সম্পত্তি দায়ী। নীল এখন এতিমের মতো আছে সেটাও কারন সম্পত্তি। জাবিন তার মা বাবাকে হাড়িয়েছে শুধু সম্পত্তির জন্য। এই সম্পত্তিই শেষ করে ফেলেছে তিনটা পরিবার।
কথা বলতে বলতে মেঘের কাশি উঠে গেল মেঘের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তা দেখে জাবিন বলল,,
“মেঘ শান্ত হ বড় বড় শ্বাস নে!”
“ওর প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে।”
হিরের কথায় লিয়া ভয় পেয়ে গেল ও পানি নিয়ে এলো। মেঘ বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ও শান্ত হলো। পানি খেয়ে নিল। ওর চোখে ঝাপসা দেখছে মাথা ঘোরাচ্ছে সকাল থেকে কিছু খায়নি এ পর্যন্ত শুধু ঐ আইসক্রিম টা একটু মুখে দিয়েছিল। ওর অবস্থা দেখে তিন বান্ধবী সব বুঝে গেছে। জাবিন বলল,,
‘যা হয়েছে হয়েছে এবার মেঘ শান্ত হ। হির খাবার নিয়ে আয় আজ মেঘ বোধহয় কিছু খায়নি?’
তখন মেঘ কাপাকাপা কন্ঠে আস্তে আস্তে বলল,,
“আমি কিছু খাবো না।”
“থাপ্পড় না খেতে চাইলে চুপ থাক।হির যা নিয়ে আয়। আর লিয়া দেখতো ফাস্ট এইড বক্স কোথায় হাতটা অনেক খানি থেঁতলে গেছে।”
হির লিয়া দু’জনের কাজে চলল। লিয়া ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। এটা মেঘের ঘরে সবসময় থাকে। জাবিন এখনো মেঘকে জরিয়ে ধরে ফ্লোরেই বসে আছে। হির নিচে গেল সকলেই মুখ ভার করে বসে আছে। আয়মান চৌধুরী হির কে দেখে দাঁড়ালো উনি কিছু বলবে তার আগে হির বলল,,
“ভালোবাবা মেঘ এখন ঠিক আছে শান্ত হয়েছে। কিছু খাবার দাও সকাল থেকে তোমার মেয়ে আজ কিছুই খায়নি বলে শরীর দুর্বল হয়ে পরেছে।”
মায়মুনা চৌধুরী দৌড়ে মেয়ের জন্য খাবার বেড়ে হিরের হাতে দিল। হির একবার তাকিয়ে খাবার টা নিয়ে যাচ্ছিল তখন ধূসর এসে বলল,
“হির খাওয়ার শেষে এই ওষুধ খায়িয়ে দিও।”
হির মুচকি হেসে চলে গেল। ওপরে যেতেই দেখলো ওরা এখন বিছানায়। মেঘ বিছানায় শুয়ে জাবিনের কোলে শুয়ে আছে। লিয়া হাতে ব্যান্ডেজ করছে। হাতের ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে। তিনজনে মিলে মেঘ কে উঠালো। হির জোর করে ওকে খায়িয়ে দিল। তারপর ওষুধ দিতেই ও বলল,,
“এটা কি?”
‘ওষুধ দেখতে পাচ্ছিস না?”
‘সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি কিন্তু কিসের ওষুধ!”
“জানিনা তোর ডক্টর জামাই দিছে!””
“ওনারা এখনো এই বাড়িতেই? যায় নি?”
“তোকে এই অবস্থায় ফেলে যাবে। সে তোকে ভিশন ভালোবাসে।”
“আচ্ছা তোরা এখানে এলি কেন?”
তখন জাবিন বলল,,
‘ভালোবাবা ফোন করেছিল।সে জানে আমরা ছাড়া তুই কারো সামনে কাঁদতে পারিস না। আর আজকের দিনে তো নাই-ই । ধূসর ভাইয়া আসলেও তুই হয়তো তার সামনে নিজেকে ঠিক রাখতে কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পেতি। তুই যাতে সহজে সব করতে পারিস আর নিজেকে সামলাতে পারিস তাই আমাদের কে ফোন করেছে। অবশ্য সকাল থেকে কতোবার তোকে ফোন দিয়েছি তুই ধরিস নি। যদিও কোন বছরই তুই সারাদিন কি করিস আমরা কিছুই জানি না। শুধু রাতে গিয়ে নীলকে জরিয়ে ধরে বসে থাকিস।”
‘আব্বার মতো কেউ আমাকে কোনদিন বুঝবে না। তবে হ্যা আরেকজন আছে যে আমাকে আব্বার মতো আগলে রাখবে সে হলো ধূসর এহসান শুভ্র। নিশ্চয়ই আমার কাছে আসতে চেয়েছিল আব্বা বারন করেছে।”
“হুম তা ঠিক! তো কাশফিয়া আয়মান মেঘ এখন কেমন লাগছে!”
“ফিলিং বেটার! আচ্ছা তোরা এখন যা আমি ঠিক আছি। আবার কাল দেখা হবে। যাওয়ার সময় আব্বা আর ধূসরকে আমার রুমে আসতে বলিস। ওহ হ্যা ধূসরের পরিবারকেও।”
“ঠিক আছে! রাতে গ্ৰুপ কল দিস আড্ডা দেব।”
ওরা তিনজন নিচে গেল। নিচে গিয়ে লিয়া বলল,,
“ভালোবাবা মেঘ এখন সম্পূর্ণ ঠিক আছে। আমরা আসছি। আর হ্যা তোমাকে আর ধূসর ভাইয়ার পরিবার কে যেতে বলেছে।”
আয়মান চৌধুরী ওদের দিকে এগিয়ে বলল,,
“সব কিছুর জন্য জন্য শুকরিয়া তোদের। তোরা না থাকলে যে কি হতো আমার মেয়ের?
তখন হির বলল,,
“তুমি ও না ভালোবাবা এতো ফর্মালিটি কেন করছো। তোমার মেয়ে হলে কি হবে সে আমাদের ও বেস্ট ফ্রেন্ড। উই আর ভেরি ভেরি সো মাচ বেস্টফ্রেন্ডস।”
হিরের ইংরেজি শুনে সবাই একটু হাসলো। তা দেখে হিরের ভালো লাগলো। ওরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
আয়মান চৌধুরী মেয়েকে দেখতে গেলেন এক এক করে সকলেই দেখতে গেল। আয়মান চৌধুরী মেয়ের ঘরে ঢুকে অবাক সব ছড়িয়ে আছে মেঘ এখন সেগুলো তুলছে। মেঘ ওর আব্বার অস্তিত্ব টের পেয়ে বলল,,
“আব্বা এসেছেন! আসলে তখন মাথায় কি চলছিল জানি না সব ফেলে দিয়েছি। তাই গুছিয়ে রাখছি!”
“আম্মা এখন ঠিক আছেন!”
“যার এতো ভালো আব্বা আছে এত ভালো বন্ধুরা আছে। আর হ্যা এতো ভালো জামাই ও তার পরিবার আছে সে কি করে বেঠিক থাকবে। ‘
পেছনেই ধূসরের পরিবার ছিল মেঘের কথা শুনে হাসলো। সকলে রুমে ঢুকলো। মেঘকে দেখে এখন স্বাভাবিক লাগছে। ও সবার সাথে কথা বললো মায়মুনা চৌধুরী ঘরের বাইরে থেকে সব শুনলো ঘরের ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। ধূসরের পরিবার ধূসর আর মেঘ কে রেখে চলে গেল। মেঘ বিছানায় বসে আছে ধূসর গিয়ে মেঘের হাত ধরে বলল,,
“আজ খুব কষ্ট পেয়েছো তাই না! খুব কষ্ট হচ্ছিল বুঝি হাতের অবস্থা কি করেছো দেখেছো?
মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
“হুম ঐ একটু আর হ্যা কষ্ট তো পেয়েছিলাম বটে এখন ঠিক আছি!”
“মেঘ তোমার আর তোমার সম্পর্ক ঠিক নেই সেটা আমি তোমাদের দেখেই বুঝতে পেরেছি। তবে সেদিন মামা হসপিটালে বলেছে আমাকে তোমাদের সম্পর্ক ঠিক নেই সেদিন সিওর হয়ে গেছি । তবে মামা মূল কারন টা আমায় বলেনি সে বলেছে তুমিই নাকি আমাকে জানাবে আজ সবটা জানতে পারলাম কেন এরকম সত্যি অতীতে যা হয়েছে সব খারাপ হয়েছে। আমি তোমাকে খুব করে জিজ্ঞেস করতে চাইতাম মেঘ কি এমন হয়েছিল। কিন্তু দেখো আজ সব ক্লিয়ার।
তখন মেঘ শান্ত স্বরে বলল,,
“না আপনি সবটা জানেন না আপনার কাছে সব ক্লিয়ার না। সেদিনের পর থেকে মা আমায় অবহেলা করে না। অবহেলা তো আগে থেকেই ছিল তবে সেদিনের পর যেনো আরো বেড়ে গেল। আপনি জানেন আমি আমার মায়ের আন ওয়ান্টেড বেবি।”
একথা শুনে ধূসর চমকে উঠলো। ও মেঘের দিকে তাকালো মেঘ স্থির চোখেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসরের চমকানো দেখে মেঘ হাসলো আর হেসে বলল,,
“আন ওয়ান্টেড বেবি মানে বুঝতে পারছেন না তো? আসলে আমি যখন মায়ের গর্ভে আসি তখন মা বেবি কনসিভ করতে চায় নি। এমন কি তিনি জানতেন ও না আমি তার পেটে আছি। আমি পেটে আসার পর নাকি মায়ের শরীরে সেরকম কোন পরিবর্তন আসে নি। আমার তখন পাঁচ মাস তখন মায়ের শরীরের পরিবর্তন ঘটে যেমন ভোমেট, টক খেতে ইচ্ছে করা আরো কিছু। তখন মা ডক্টরের কাছে গিয়ে সিওর হয় যে আমি তার পেটে। তিনি খবরটা শুনে খুব বেশি খুশি ছিলেন না। কিন্তু আব্বা খুব খুশি ছিল। তার খুশি দেখে যাও খুশি ছিলেন। মায়ের একটা শখ হয়েছিল যে আমি ছেলে হবো। মানে মায়ের ছেলের শখ হয়েছে। আমি হওয়ার আগেই নাকি মা খুশিমনে বাবার সাথে মিলে আমার নাম রেখেছেন মেঘ। মেঘ তো ছেলেদের নাম তাহলে আমার নাম মেঘ কেন ?ছোটবেলায় আব্বা কে একথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন আব্বা আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু মায়ের ছেলের ইচ্ছে পূরন হলো না আমি হলাম আমি মানে মেয়ে তার সাথে সবার থেকে একটু কালো। সবাই এটা নিয়ে মায়ের সাথে মজা করতো সত্যি আমি তাদের মেয়ে কি না কেন যেন মা এটা সহ্য করতে পারতো না। তখন থেকেই আমার জন্য তার মনে একটু অন্যরকম কিছু তৈরি হলো। ছোটবেলার প্রয়োজন এর জন্য মা আমাকে খাওয়াতেন। বড় হওয়ার সাথে সাথে তিনি তার থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। তবে হ্যা মুন আপু ছোট বেলায় খুব ভালোবাসতো আমায় কিন্তু ঐ সুখটাও বেশিদিন রইলো আমার চার বছর পর আনাফ এলো মুন আপু আমাকে ছেড়ে ওকে আদর করতো। তবুও আমি ঠিক ছিলাম কিন্তু কালো বলে তেমন কেউ আমার মিশতো না সবাই মুন আপু আর আনাফের সাথে থাকতে বেশি পছন্দ করতো। কিন্তু যত যাই বলি না কেন একা একা সবকিছু করাটা খুব টাফ জানেন তো। আপনি জানেন যখন আজান হলো তখন মা আমাকে ওর কাছে ঘেঁষতে দিত না। কারন মার মনে হতো আমি যদি আনাফের মতো আজান কে মেরে ফেলি। তবে সে চেয়েও রাখতে পারে নি আজান কে আমার থেকে দূরে আজান একা একাই এসে আমার সাথে ভাব করেছিল। আর এখনো তা রয়ে গেছে। মনে করেন আমাকে যদি মা আগে কনসিভ করতো আর আমি যদি কালো না হতাম তাহলে বোধহয় মায়ের ভালোবাসাটা পেতাম তাই না। মায়েরা তো এমন নয় তার বাচ্চা যেমনই হোক না কেন সবাই তার বাচ্চাকে খুব ভালোবাসে তাহলে আমার মা আমায় কেন ভালোবাসলো না। কারন প্রথমটা সে সহ্য করতে পারলেও দ্বিতীয় কারন টা তার ইগোতে লেগেছিল বোধহয়। নয়তো শয়তান খুব করে মায়ের ওপর চেপেছিল নাহলে মা হয়ে কেউ কি করে এমন করতে পারে। কোন মা তার সন্তানের দুঃখ সহ্য করতে পারে না। কিন্তু আমার মা অবলিয়ায় আমার দুঃখ দেখে গেছে।
মেঘের চোখ ছলছল করছে কিন্তু মেঘ একফোঁটা পানিও গড়িয়ে পরতে দিচ্ছে না হয়তো ঐ মা নামক মানুষটার জন্য সে কাঁদতে চায় না। ধূসর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত ভাবে। তা দেখে মেঘ বলল,,
‘আজ নিষ্ঠুর মেয়েটার অতীত দেখে আপনার খুব করুনা হচ্ছে তাই না।”
ধূসর মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,,
“না একটুও করুনা হচ্ছে না বরং কষ্ট হচ্ছে আমার মেঘ বালিকা এতটা কষ্টে বড় হয়েছে। তবে কি জানো নিষ্ঠুর মেয়েটাকে আমি খুব ভালোবাসি তার সাথে করুনা করা যায় না। শুধু ভালোবাসা যায়। জীবনে যাই কিছু হোক না কেন আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমার পাশে আছি সবসময় থাকবো।”
মেঘ ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল ,,
“আমি আমার অতীতের মতো আমার ভবিষ্যৎ চাই না।আমি খুব সুন্দর একটা ভবিষ্যত চাই।
“আপনার ভবিষ্যৎ,আপনার অতিতের চেয়েও উত্তম হবে! ইনশাআল্লাহ বিবিসাহেবা!
“শুকরিয়া তবে আমি আমার সন্তানের বেস্ট মা হতে চাই। তাদের খুব ভালোবাসতে চাই। আমি তাদের নিষ্ঠুর মা হতে চাই না।”
ধূসর মেঘকে ছেড়ে মেঘর গালে হাত রেখে বলল,,
“তুমি নিঃসন্দেহে একজন বেস্ট মা হবে। কারন তুমি বেস্ট মেয়ে তার সাথে বেস্ট স্ত্রী বুঝতে পেরেছো নিষ্ঠুর মেয়ে! তাছাড়া “নিয়তের উপরেই কাজের ফলাফল নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।”
(সহিহ বুখারী-৫০৭০)
তখন মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
“আপনিও বেস্ট ছেলে সেই সাথে বেস্ট স্বামী।’
“বলছো আমি বেস্ট! যাক সার্টিফিকেট পেয়ে গেলাম?
“কিসের সার্টিফিকেট?”
“আরো তুমি জানো না, নবী হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন “সেই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম!
“হুম!”আচ্ছা আপনি এবার আসুন আমি ঘুমাবো?”
“কি নিষ্ঠুর মেয়েরে বাবা কেমন করে বলছে !”
“তা সত্যি তাই বলছি!”শ্রেষ্ঠ মানুষ হলো সে”যার অন্তর পরিচ্ছন্ন ও মুখ সত্যবাদী।”
(ইবনে মাজাহঃ ৪২১৬!)
“ওকে বাবা এখন যাচ্ছি তুমি রেস্ট নাও।”
ধূসর মেঘের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেল। মেঘ শুয়ে পড়লো আর বলল,,
“সবার জীবনে বোধহয় কিছু লুকানো গোপন দুঃখ থাকে। যা যত কাছের মানুষই হোক না কেন বলা যায় না। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ,,
“মন ও মস্তিষ্কের খেলায় রোজ দগ্ধ হই আমি।
কে মুছাবে তোলপাড় করা বুকের এই কষ্ট আর গ্লানি।”
~চলবে,,