ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-২১+২২

0
1002

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

দিন যায় দিন আসে তবুও কি স্মৃতি থেকে আমাদের কিছু স্মৃতি মুছে ফেলা যায়,না যায় না। বরঞ্চ যে স্মৃতিগুলো মুছে ফেলতে চাই সেই স্মৃতিগুলোই বেশি তাড়া করে বেড়ায়। মেঘ শুয়ে শুয়ে তার কিছু স্মৃতি মনে করছিল। কিছুক্ষণ আগেই আয়মান চৌধুরী আর ধূসর ওকে রেস্ট করতে বলে বাইরে গেছে। তখনি ধূসরের পরিবার কে দেখা গেল। রিম আর ঝিম বাদে। দিলরুবা খানম মেঘের পাশে গিয়ে বসলো মেঘ কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ খুললো। তখন দিলরুবা খানম জিজ্ঞেস করল,,

“মেঘ মা এখন কেমন লাগছে?”

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনারা কেমন আছেন?”

“তোমাকে এই অবস্থায় রেখে আমরা কি ভালো থাকতে পারি।”

“আমার তেমন কিছু হয় নি মা দেখুন আলহামদুলিল্লাহ আমি ঠিক আছি আর আপনাদের সাথে কথাও বলছি।”

“কাল এতকিছু হলো আর আজই বলছো তেমন কিছু হয় নি। তুমিও না ভাবি!”

নোলকের কথায় মেঘ হাসলো। আর বলল,,

“অসুস্থতা আর কষ্ট জীবনের অংশ। এমন কোন লোক নেই যার কষ্ট নেই বা অসুস্থ হয় নি। তাহলে তাছাড়া আমি এখন সুস্থই তো।”

“তোমাকে তর্কে হারানো আমার কাজ নয় ভাবি।”

তখন রোহিনী বলল,,

“খেয়েছো কিছু?”

“খাবো! ঐ যে আর একটু স্যালাইন আছে তারপর ওটা শেষ হলেই খেতে পারবো।”

“সবাইকে স্যালাইন দিলে পানি খাওয়ার জন্য কতো আকুতি করে আর তুমি একদম ঠিক ভাবে শুয়ে আছো। কাল রাতে জ্ঞান ফেরার পর বা আজ সকালেও এত বেলা হলো তুমি একটুও পানি ও চাইলে না।”

ধূসর এর এহেন কথায় মেঘ একটু হতভম্বই হলো বটে। মেঘ বলল,,

“তাহলে আপনি বলছেন আমার পানি চাওয়া উচিৎ ছিল।”

“উচিৎ তো ছিলই কারন সবাই চায়।”

“শুনুন সবাই আর আমি এক না বুঝলেন। মানুষের নাকি নিষিদ্ধ জিনিসে কিউরিওসিটি বাড়ে সেখানে ঐদিকে তাকাতেও ইচ্ছে করে না। আর রইল পানি খাওয়ার ব্যাপারটা আমার মনে হয় তারা হসপিটালে আছে স্যালাইন চলছে দেখে নিজেকে বেশি অসুস্থবোধ করে ভয় পায় আর ভয় পেলেই তো গলা শুকিয়ে যায়। গলা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে উনারা পানি চায়। কিন্তু আমি তো আমিই ,,

মেঘ আরো কিছু বলবে তার আগে ধূসরই বলে,,

“হ্যা তুমি তো তুমিই তোমার সাথে সবার তুলনা চলে না। তুমিই তোমার তুলনা। আর আমি তো ভূলেই গেছিলাম তোমার সাথে ভয় যায় না তার জন্য গলাও শুকায় না। সরি ভুল হয়ে গেছে পানির কথা বলেছি বলে।”

“মা দেখছেন আপনার ছেলেকে আমাকে কিভাবে ভ্যাঙাচ্ছে।”

“আহ হা ধূসর হচ্ছে টা কি?’

“ঐ যে শুরু হয়ে গেল মায়ের কাছে নালিশ দেওয়া। আর আমার মা ও তার বউকে পেয়ে ছেলেকে ভুলে যায়। ধূর আমি এখানে থাকবো না আমি গেলাম তোমরা থাকো মা মেয়ে।

বলেই ধূসর গাল ফুলিয়ে চলে গেলো। তা দেখে সবাই হেসে উঠল মেঘ শুধু মুচকি হাসলো। ওরা কিছুক্ষণ কথা বলল স্যালাইন শেষ হলে দিলরুবা খানম নিজ হাতে মেঘকে স্যুপ খায়িয়ে দিল। তখন দেখা মিললো মেঘের তিন বান্ধবীর। নীল এখন স্কুলে তাই তিনজন এ একসাথে এসেছে। ওরা এসে কুশল বিনিময় করলো। কিছু নিয়ে ডিসকাশন ও করলো। কিছুক্ষণ থেকেই চলে গেল। দুপুর বারোটার দিকে সবাই মেঘকে দেখে চলে গেছে। তখন দেখা মিলল মায়মুনা চৌধুরী আর আশা চৌধুরী এর। ধূসর ওনাদের রেখে বাইরে চলে গেল। আশা চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,

“মেঘ কেমন লাগছে এখন?”

“এই একই প্রশ্নের উত্তর আর ক’জন কে দেব বলোতো সকাল থেকে যেই আসছে একই প্রশ্ন।”

“কারন তুই অসুস্থ তুই কতোটা সুস্থবোধ করছিস সেটা কেউ জানে নাকি তাই সবাই জিজ্ঞেস করছে।”

‘সবাই কোথায় জিজ্ঞেস করল মা মানে মায়মুনা চৌধুরী একবার ও জিজ্ঞেস করেন নি।”

হুট করে এমন কথায় মায়মুনা চৌধুরী চমকে উঠলো। মেঘ কি চাইছে সে তার খোঁজ করুক। তিনি নিজেকে সামলে বলল,,

“সবাই তো বলছেই তাই আমি আর কিছু বলি নি।”

“ওহ আচ্ছা!”

এই ছোট আচ্ছার মাঝে কত কথা লুকানো সেটা কি কেউ জানে। এই আচ্ছার মাঝেও রয়েছে মেঘের দীর্ঘশ্বাস মেঘের অধিকার বোধে করা প্রশ্ন। কিন্তু এই ছোট ওহ আচ্ছার মাঝেই তা বিলীন হয়ে গেছে। মেঘ বলল,,

“মুন আপু কি শুশুরবাড়ি চলে গেছে ফুপি।”

“হুম আজ সকালেই গেছে!”

“আর আজান?”

“ও আসতে চেয়েছিল কিন্তু স্কুলের একটা ইম্পোর্টেন্ট অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে তাই স্কুলে গেছে যাওয়ার সময় তোর সাথে দেখা করে যাবে।”

“ওহ আচ্ছা!”

“হুম তোর আর ধূসরের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে মায়মুনা। দুপুর তো হয়েই এলো।’

“ওহ আচ্ছা! উনি আসুক তারপর না হয় একসাথে খাবো এমনিতেও ক্ষুদা লাগেনি।”

তখন মায়মুনা চৌধুরী বললো,,

“কার সাথে কি খারাপ করেছো যে তোমাকে মারার জন্য তোমাকে গুলি করলো।”

এ কথা শুনে মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“খারাপ করলেই যে মানুষ আপনার ক্ষতি করবে এমন টা নয়। মাঝে মধ্যে ভালো করলেও ওটা মানুষের সহ্য হয় না। কারন সব মানুষ তো আর সিধাসাদা ভালো মানুষ নয়। এই পৃথিবীতে দুই রকমেরই মানুষ আছে। কিছু মানুষ ভালো করতে চায়না আর কিছু মানুষ খারাপ। যারা মানুষের ক্ষতি চায় তাদের কাজে বাগড়া দিলে যে আপনার ক্ষতির সম্মুখীন হতেই হবে।”

“তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো?”

‘সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে তাছাড়া ভেবেছেনই বা কবে। যাই হোক ফুপি তোমরা খেয়ে এসেছো?”

“হুম খেয়েই এসেছি।”

“আচ্ছা!”

তখনি মেঘের মেজো মামা মাইনুল হাসান ধূসরকে সাথে নিয়ে মেঘের কেবিনে ঢুকলো। আশা চৌধুরী টুল ছেড়ে দিলেন। মাইনুল হাসান সেখানে বসলেন। মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম মামা। তা তুমিও সবার মতো একই প্রশ্ন করবে কেমন আছি?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। না যাও করতাম তোর কথা শুনে করবো না।”

“তা এখানে কেন তোমার কাজ রেখে?”

“বারে আমার মা টা হসপিটালে আর আমি তাকে দেখতে আসবো না।”

“হুম তা তো বটেই তা আর কেউ আসে নি নাকি আসার প্রয়োজন মনে করে নি।”

“আসলে কি বলতো আমাদের রক্তে বোধহয় মায়া মোহাব্বত কম। মায়মুনা কে দেখিস না। ”

“তাদের মধ্যে তুমি ব্যতিক্রম হলে কিভাবে?”

“আর বলিস না খারাপ মানুষের মধ্যে এই একজন আমি ভালো মানুষ ফেঁসে গেছি।”

এ কথা বলেই মাইনুল হাসান আর মেঘ হাসলো। মায়মুনা চৌধুরী ভাইয়ের এহেন কথায় ভরকালো আর চোখ ছোট ছোট করে মাইনুল এর দিকে তাকালো। তখন মেঘ বলল,,

“তুমি খারাপ মানুষের মধ্যে ফেসে গেছো আর আমি ভালো মানুষের মধ্যে। সব ভালোমানুষদের মধ্যে এই এক খারাপ আমি ফেসে গেছি।”

এই কথায় যে কি ছিল সেটা মাইনুল হাসান টের পেলেন। বাকিরা একটু থম মেরে গেলো।উনি মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,

“দুনিয়াতে আসাই হচ্ছে ফেসে যাওয়া বুঝলি।”

“ঠিক বলেছো মামা।”

তখন ধূসর বলল,,

“মামা তোমরা কিসের কথা বলছো বলো তো?”

“তেমন কিছু না কিছু তিক্ত সত্যি!”

তখন মায়মুনা চৌধুরী বলল,,

‘ধূসর ঐ ব্যাগে তোমাদের জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নিও তোমরা। আজ আসি!”

ধূসর মেঘের দিকে তাকালো মেঘের কোন হেলদোল নেই। তাই দেখে ও বলল,,

“ঠিক আছে চলুন আমি নিচ পর্যন্ত দিয়ে আসি।”

‘সমস্যা নেই!”

“আমারও সমস্যা নেই চলুন তো।”

ধূসর চলে গেল আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী কে নিয়ে। ওরা যেতেই মাইনুল হাসান বলল,,

“এভাবে আর কতোদিন?”

“খুব বেশিদিন নয় মামা এই তো আর কয়েকটা দিন।”

“আর তার কথা বলছি না আমি তোর কথা বলছি এভাবে আর কতোদিন কষ্ট করবি?”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“আমি তো বেশ আছি ।কষ্ট মানুষের জীবনের অংশ ।দৈনন্দিন জীবনে মাঝে মাঝে কষ্টে পড়তে হয়। এটা জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই কষ্টের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বেশ দৃঢ়। অবশ্য কারো কারো জীবনে কষ্টটা বিলাসিতার মতো। আবার কারো ক্ষেত্রে অসহনীয়। তবে আল্লাহ কাউকে সাধ্যতীত বোঝা চাপিয়ে দেন না।

তবে কষ্টের মাধ্যমে কিছু লাভ আছে।
প্রিয়নবী (সা.) হাদিসে বলেন, ‘আল্লাহ যার ভালো চান তাকে দুঃখ কষ্টে ফেলেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৪৫)

হাদিসে রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘যদি কারো উপর কোনো কষ্ট আসে, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তার গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দেন; যেমনভাবে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৮৪)

মানুষের প্রতিটা কষ্টের সঙ্গে সুখ মিশে আছে। ধৈর্যশীল মানুষ সেই সুখের অপেক্ষা করেনআল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অবশ্যই কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে অন্য দিকে স্বস্তি আছেই। ’ (সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬)

এর মানে বোঝো তো কাল ওরকমটা হওয়ায় একটা স্বস্তি আছে এই যে ধূসরের আমার প্রতি এতটা গভীর ভালোবাসা দেখা গেল এই বিপদে দেখাও গেল কারা আমার আপন আর কারা পর।

মেঘের কথা শুনে মাইনুল হাসান হাসলো আর বলল,,

“তোর সাথে তর্কে জেতা মুশকিল।”

“আমি কোথায় তর্ক করলাম আমি তো সত্যি কথা বললাম এতেই তর্ক হয়ে গেল।”

“থাক আমার মা বুঝতে পেরেছি তোকে দেখে তো অসুস্থ মনে হচ্ছে না। ধূসর বলল সকাল থেকে বকবক করেই যাচ্ছিস কিন্ত তুই তো এতো বকবক করার মানুষ না।”

“সেরকম মানুষ না হলে কি হবে মামা সবাই তো আমার জন্যই এখানে আসছে তাদের সাথে কথা বলা এখন আমার জন্য ফরজ।”

“হুম বুঝেছি তা তোর আব্বা কোথায়?”

‘আব্বা একটা কাজে গেছে মূলত আমি পাঠিয়েছি!”

“আচ্ছা। এখন কি করবি তাহলে?

“সুস্থ হয়ে নিই আগে! ধূসরের প্রত্যেকটা চোখের পানির হিসেব নেব। আমার আব্বার চোখের পানির হিসেব নেব। অনেক হয়েছে অনেক ছাড় দেয়া হয়ে গেছে এবার আর আমি ওদের ছেড়ে দেব না। একবার হাতে পাই সব কটা কে শাস্তি দেব।”

“হুম আমি ফোর্স লাগিয়েছি কিন্তু কিছুতেই হাতে আসছে না একদম নিজের বিলে ঢুকে পরেছে । আর এখন নিজের বিল থেকে বের হবে না। এখন শান্ত হয়ে রেস্ট কর।”

“হুম!”

“আচ্ছা তুই থাক আমি বাইরে আছি।”

মাইনুল হাসান বাইরে চলে গেল। ধূসর আসছিল ওনাকে দেখে ধূসর থামলো। তারপর দুজনে একটা জায়গায় বসলো। মাইনুল হাসান জিজ্ঞেস করল,,

“তা কখন মেঘকে নেবে তোমাদের হসপিটালে?”

“বিকেলে নিয়ে যাবো!”………….মামা!”

‘হুম!”

“মেঘের সাথে ওর মায়ের সম্পর্ক কেমন? আসলে আমার মনে হয় না তাদের সম্পর্ক অন্যান্য মা মেয়ের সম্পর্কের মতো সহজ ,,না মানে,,

“আমি বুঝতে পেরেছি তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো। আসলে তুমি খেয়াল করেছো কি না জানি না যেহেতু তুমি মেঘের হাজবেন্ড তাই তোমাকে বলছি। মা মেয়ের স্বাভাবিক সম্পর্ক যেমন হয় ওদের মাঝে সে সম্পর্কটা নেই। শুধু ওদের না কিছু সংখ্যক মানুষ বাদে আর কারো সাথে মেঘের সম্পর্ক সহজ নয়।”

“এরকম টা হওয়ার কারন?’

“কারনটা না হয় মেঘই বলবে তোমায় কোন একদিন?”তবে হ্যা মেঘের জীবনে হয়তো আমিও তাদের মতো একজন হয়ে যেতাম যেমন টা বাকিরা আছে। সত্যি কথা বলতে আমি একদম চুপচাপ একজন মানুষ কেউ আমার সাথে কথা বলতে না এলে আমি এগিয়ে কারো সাথে যেতাম না। তখন মেঘের মাত্র সাত বছর সবাই আমাদের বাড়িতে গেছে। আমাদের বাড়ির সামনে বেশ অনেকটা জায়গা আছে সবাই সেখানে খেলছিল বাচ্চা রা এমন কি আমার দুই ভাই ও বাচ্চাদের সাথে মজা করছিল। আমি একটা গাছের নিচে বসে ওদের কে দেখছিলাম হুট করেই পাশে তাকিয়ে দেখলাম মেঘ ও আমার মতো বসে সবাইকে এক দৃষ্টিতে দেখছে। আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে এই ছোট্ট বাচ্চা মজা না করে চুপচাপ বসে সবার আনন্দ দেখছে। আমাকে তাকাতে দেখে মেঘ হুট করেই বলল,,

“সবার আদর পেতে গেলে বোধহয় সুন্দর হতে হয় তাই না মামা! তারওপর বাড়ির মাঝের সন্তান বোধহয় সবার মাঝখান দিয়েই বেরিয়ে যায় কেউ দেখেও না।”

ছোট ওই বাচ্চার মুখে এমন কথা আমার ভেতরটা খুব করে নাড়িয়ে দিয়েছিল সাত বছরের বাচ্চাও বুঝে গেছে আদর পেতে হলে সুন্দর হতে হবে। কারন মুন সুন্দর ছিল সবাই মুনকে বেশি আদর করতো ভালোবাসতো আর সে ছিল দূর্বাফুলের মতো অবহেলায়। তখন মুনের ছোট ভাই ছিল। সে হয়েছিল মাঝের সন্তান, নতুন এলে সবাই পুরোনোকে ভুলে যায় এই কথার মতো মেঘকেই যেন সবাই ভুলে যাচ্ছিল। আমি ছিলাম মাঝের সন্তান তাই আমি বুঝি বড় আর ছোটর মাঝে মাঝের সন্তান গুলো বোধহয় মেঘের কথা মতো মাঝখান দিয়েই বেরিয়ে যায়। সেদিন প্রথম কাউকে আগ বাড়িয়ে বলেছিলাম মেঘ আমার সাথে যাবে আমরা দুজনে অনেক মজা করবো। পাশেই একটা মেলা হচ্ছিল আমি ওকে কোলে নিয়ে সেই মেলা দেখতে নিয়ে গেছিলাম। সেই থেকেই মেঘের সাথে হয়ে উঠে সবার অগোচরে আলাদা একটা সম্পর্ক। আমার এই মেয়েটা খুব কষ্ট নিয়ে একা একা বড় হয়েছে যখন ওর সাথে কেউ থাকতো না খেলার জন্য তখন ও ঘাসের ভেতর চোখ বন্ধ করে কয়েন লুকাতো আবার নিজেই সেই কয়েন খুঁজতো এটা ছিল তার প্রিয় খেলা। ধূসর আমার মেয়েটাকে অনেক ভালোবেসো যতটা ভালো বাসলে ওর তিক্ত অতীত ভুলে যায়।

সব শুনে ধূসরের চোখ ছলছল করে উঠলো। তার মেঘ বালিকা এতটা কষ্টে বড় হয়েছে। কতটা একা ফিল করলে মানুষ কয়েন নিজেই লুকিয়ে আবার নিজে খুঁজে। ধূসরের সব কিছু আবার মনে করতেই একটা খটকা লাগলো। মেঘের সাত বছরে ওদের ভাই , ও মামাকে কিছু বলবে তার আগেই মামা বলল,,

“আচ্ছা আজ আসি একটা কাজ পরে গেল। নিজের আর মেঘের খেয়াল রেখো। আর হ্যা মেঘকেও বলে দিও।”

বলেই তিনি উঠলেন হয়তো জরুরি কাজ। ধূসর ভাবতে ভাবতে কেবিনে এলো। মেঘ ঘুমিয়ে পরেছে। ধূসর মেঘের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,

“খুব ভালোবাসবো তোমায় মেঘ বালিকা যেখানে তোমার মন খারাপ থাকবে না। তুমি থাকবে আমার এক আকাশ ভালোবাসা যেখানে থাকবে শুধু সুখ আর সুখ।”

___________________

মেঘ ঘুম থেকে উঠেই দেখলো ধূসর সব গুছিয়ে ফেলেছে। ওকে উঠতে দেখে ধূসর বলল,,

“উঠে গেছো মেঘ বালিকা!”

‘হুম!”

ধূসর ওকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে খায়িয়ে দিল। তারপর নিজে খেল। মেঘ ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে ধূসরও ওর দিকে তাকিয়ে আছে । তা দেখে মেঘ বলল,,

“আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

“তুমি এত সুন্দর কেন মেঘ?”

“আমি আর সুন্দর হ্যা সুন্দর কারন আপনার দৃষ্টি সুন্দর। আমাকে ভালোবাসেন দেখে তাই।”

“আর আমি ?”

“আপনি তো সুন্দরই!”

“হুম আমি তো সুন্দর। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা একজন সুন্দর মনের অধিকারী এবং সুন্দর আদর্শবান নেককার স্ত্রী আমাকে দিয়েছেন। তুমি জানো একটা উত্তম জীবন সঙ্গী আল্লাহর দেওয়া বিশেষ নেয়ামত।

“হুম আপনিও আমার জীবনের বিশেষ নেয়ামত। যার জন্য এই আমি কতোটা বদলে গেছি। এই মেঘ এত বড় শহরে নিজেই নিজেকে হাড়িয়ে আবার নিজেই খুঁজতো এটা বড় হবার পর তার প্রিয় খেলা। কিন্তু আপনি আমার জীবনে আসার পর জীবনটা অন্যরকম হয়েছে। এই বিশেষ নেয়ামতকে কিভাবে অস্বীকার করবো বলুন,

সূরা আর রহমান। এই সূরায় জ্বীন ও মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, “অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?” এ আয়াতটি ৩১ বার রয়েছে।

বরং এই শুধু এই নেয়ামতের জন্য না সকল নেয়ামতের আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ।

“হুম আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লিহাল। চলো নার্স এখন রেডি করে দিক আমরা এখন বেরুবো।

“আমাকে যাওয়ার সময় একটা হাওয়ার মিঠাই কি দেবেন?”

“তুমি আর হাওয়ার মিঠাই খাবে?”

“কেন খেতে পারি না আমার ভিশন পছন্দের বলতে গেলে আমার ভালোবাসা!”

“আচ্ছা দেব।”

“ওখানে নিয়ে আমাকে নিয়ম করে খোলা আকাশ দেখাবেন এটা আপনার দায়িত্ব।”

“ঠিক আছে! আর কিছু ম্যাডাম!

“না এতেই আমি সন্তুষ্ট!

“ওকে ম্যাডাম আমি যাচ্ছি নার্স এসে তোমায় চেন্জ করিয়ে দেবে।”

ধূসর চলে গেল। নার্স ওকে চেন্জ করিয়ে দিল। মেঘ রেডি তখন ধূসর আর আয়মান চৌধুরীর সাথে আজান এলো। বোনকে এ অবস্থায় দেখে কান্না করলো। এই ছেলেটিও ওকে ভিশন ভালোবাসে। সবাইকে নিয়ে ধূসর রওনা হলো। মেঘের এক হাত আয়মান চৌধুরী নিয়ে বসে আছেন। মেঘ ওষুধের জন্য আবারও ঘুমিয়ে পরেছে একটু আগেই বলছিল ওর খারাপ লাগছে তাই ধূসর কোন রিস্ক নেয় নি। ধূসর ওদের হসপিটালের সব থেকে বেস্ট কেবিন মেঘের জন্য রেখেছে। মেঘকে কেবিনে দেওয়া হলো ধূসর সব দায়িত্ব নিয়েছে মেঘ এখন অনেকক্ষন ঘুমাবে বলে ধূসর আয়মান চৌধুরী আর আজান কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। ধূসর ওকে রেখে পেশেন্ট দেখতে গেল। হসপিটালের সবাই বুঝেছে মেঘ ধূসরের স্পেশাল কেউ। সন্ধ্যার খানিক পরেই মেঘ ঘুম থেকে উঠলো ধূসর নামাজ পরে মাত্র মেঘের কেবিনে এলো। এসে মেঘ কে চেক করলো আর জিজ্ঞেস করলো এখন সব ঠিক লাগছে কি না। ধূসর কাকে যেন ফোন করে কি বলল তার কিছুক্ষণ পর একজন এসে ধূসর কে দুটো হাওয়ার মিঠাই দিয়ে গেল।ধূসর মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,

“নিন ম্যাডাম আপনার পছন্দ, আপনার ভালোবাসা!

তা দেখে মেঘ হেসে বলল,

“এখন হাওয়ার মিঠাই?”

“আসার সময় তো আপনার খারাপ লাগছিল। তুমি ঘুমিয়ে গেছিলে বলে কেনা হয় নি তাই এখন নিয়ে এলাম। আমার কথা আমি রাখলাম!

“কথা দিয়ে কথা রাখা মানুষ গুলো অসম্ভব সুন্দর!”

মেঘের কথায় ধূসর হাসলো আর বলল,,

“আর আমার ধূসর রাঙা মেঘ অসম্ভব সুন্দর !”

মেঘ হাসলো দুজনে একসাথে হাওয়ার মিঠাই খেল।

__________________

দেখতে দেখতে কেটে গেল তিন চার দিন আজ মেঘকে রিলিজ করে দেবে। এ কয়েকদিন ধূসর আর মেঘ অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছে ধূসর সময় পেলেই মেঘের সাথে এসে গল্প করতো। মেঘকে নিয়ম করে খোলা আকাশ দেখাতো‌। এ কয়েকদিন মেঘ যে ধূসর এর বউ এটা সবাই জেনে গেছে। এমন কেয়ারিং হাজবেন্ড দেখে অনেকে তার মতো মানুষ কে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়েছে। আয়মান চৌধুরী রোজ এসে মেয়েকে দেখে গেছে। ধূসরের পরিবার ও আসতো। ধূসর আর একয়েকদিন বাড়ি যায় নি। নাওয়া খাওয়া সব এখানেই। আয়মান চৌধুরী আর আজান এসেছে ওকে নিতে ধূসর চেয়েছিল ওদের বাড়িতে নিতে কারন ওখানে কে দেখবে না দেখবে সেই চিন্তায় ও সে আছে। আয়মান চৌধুরীর ভরসায় সে মেঘকে ছাড়লো কারন তাদের ভালোবাসা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। তাছাড়া এখন মেঘকে খান বাড়িতে নেওয়া শুভনীয় দেখায় না। ধূসরের পরিবারও মেঘকে বিদায় দিতে এসেছে। মেঘ রেডি হয়ে বসে আছে পাশেই আজান আর আয়মান চৌধুরী। সামনে ধূসরের পরিবার মানে দিলরুবা খানম আর এহসান ধূসরও আছে। আয়মান চৌধুরী বলল,,

“মেঘ তো অসুস্থ বিয়ের বাকি বেশি দিন নেই পনেরো দিনের মতো তাহলে বিয়েটা কি আগের ডেটেই হবে নাকি পিছিয়ে দেব।”

তখন ধূসর বলল,,

“পিছিয়েই দিতে হবে কারন মেঘের ক্ষতটা বেশ গভীর এটা পুরোপুরি ভাবে সারতে বেশ দেরি হবে।”

“তোমরা যা বলবে তাই! মেঘ আম্মা আপনার কি মতামত?

“ধূসর যা বলে আমার কোন আপত্তি নেই। পনেরো দিন পরে হলেও সমস্যা নেই!”

“না আব্বা মেঘ যাই বলুক না কেন আমি রিস্ক নিতে চাই না। বিয়েটা ঘরোয়া হলেও বেশ মানুষ জন থাকবে।”

“আচ্ছা তাহলে এখন থেকে আর একমাস পরেই নাহয় অনুষ্ঠান টা হবে।”

“আচ্ছা এটা এখন বাদ দিই মেঘ সুস্থ হোক তারপর আমরা আবার গিয়ে ডেট ফিক্সড করে আসবো।”

“এটা ঠিক হবে।”

এহসান খানের কথায় সম্মতি দিল। সবাই কথা বলে বেরিয়ে গেল ধূসর মেঘের হাত ধরে নিয়ে আসছে পেছনে। ধূসর বলল,,

“অপেক্ষাটা দীর্ঘ হলেও ক্ষতি নেই যদি আমার মেঘবালিকা ঠিক থাকে।”

“আপনার মেঘ বালিকা এখন আর বালিকা নেই মহিলা হয়ে গেছে।”

“নিষ্ঠুর মেয়েটা একটু সুস্থ না হতেই নিজের নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছে আমি ভালোবেসে নাম দিচ্ছি আর উনি সেটার মজা নিচ্ছে।”

“মজা কথায় আমি তো সত্যি কথা বলছি আমার বয়স কতো আপনি জানেন?”

“তোমার সাথে কথা বলাই বেকার!”

ধূসর গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরলো তা দেখে মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“এই নিষ্ঠুর মেয়েটার পাশে থাকা এই পুরুষটিকে সে ভিশন ভালোবাসে বলে দিয়েন তাকে মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র।”

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“আব্বা চলেন না ফুচকা খাই!”

“আম্মা আপনার শরীর তো বেশি ভালো না আজ থাক না !”

“না আব্বা আমি খাবো।”

“আচ্ছা গাড়ি থেকে নামা যাবে না আমি নিয়ে আসছি গাড়িতে।”

“আচ্ছা! আর হ্যা আমারটায় বেশি ঝাল দিয়ে আনবেন। আপনারটায় একটু কম ঝাল দিয়ে আনবেন আপনি তো বেশি ঝাল খেতে পারেন না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আর কিছু?”

‘এই আজান তুই কি খাবি?”

“তোমরা দুই বাবা মেয়ে ফুচকা খাবে আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো নাকি আমি অন্যটা খাবো না আমিও ফুচকা খাবো।”

আজানের এহেন কথায় আয়মান চৌধুরী আর মেঘ হাসলো। আয়মান চৌধুরী ফুচকা আনতে গেলেন। উনি যেতেই আজান বলল,,

‘তোমাদের সাথে কোথাও গেলে অনেক লাভ হয়। জানো?”

“কেন?আমরা কি করি?”

“তোমাদের কাছে থেকে ভালোবাসা শেখা যায়। দু’জনে এমনভাবে কথা বলো একে অপরকে এমন ভাবে প্রিটেন্ট করো যেন দু’জনে বন্ধু।”

“আমরা তো বন্ধুই দেখিস না আব্বা বলে আমরা হলাম একেঅপরের বিশ্বস্ত বন্ধু।”

মেঘ অদ্ভুত দৃষ্টিতে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকালো। ও মুগ্ধ চোখে ওর বাবাকে দেখছে। এই লোকটা না থাকলে যে ওর কি হতো। আয়মান চৌধুরী একটা লোককে দিয়ে দুই প্লেট আর ওনার হাতে এক প্লেট ফুচকা নিয়ে এলেন। তিনি তার হাতেরটা মেঘের হাতে দিয়ে বলল,,

“এই যে আম্মা আপনার ফুচকা উইথ আপনার ঝাল এবং আমার ভালোবাসা।”

মেঘ ওর আব্বার কথায় হাসলো। আয়মান চৌধুরী বাকি দুই প্লেট লোকটার হাত থেকে নিলেন একটা আজানকে দিল আরেকটা নিজে নিলেন। মেঘ ওর বাবার প্লেট থেকে একটা ফুচকায় একটু টক দিয়ে আয়মান চৌধুরীর সামনে ধরলো। আয়মান চৌধুরী মুচকি হেসে সেটা খেলেন। উনি মেঘকেও খায়িয়ে দিলেন আজানের দিকে তাকাতেই আজান গাল ফুলিয়ে বসে আছে তা দেখে দু’জনেই হেসে আজানকেও খায়িয়ে দিলেন। দূর থেকে কেউ কেউ বোধহয় এই দৃশ্যটা দেখতে পেল তা দেখে আপনা আপনি সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। তিনজনেই হাসছে হুট করে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“এভাবেই হাসবেন আম্মা সবসময়!”

‘ইনশাআল্লাহ আব্বা!”

ফুচকা খাওয়া শেষ করে তিনি ছেলে আর মেয়ের জন্য আইসক্রিম নিয়ে এলেন অবশ্য তার জন্যও নিয়ে এলেন। তিনজনে আইসক্রিম খেয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে। এ কয়েকদিনে মেঘদের বাড়ি পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আশা চৌধুরী চলে গেছে মেঘ ও বাড়িতে ছিল না আয়মান চৌধুরী তেমন ভাবে কোন কিছুতে ছিল না। আয়মান চৌধুরী মেঘকে ডেকে তুলল। সে বাবার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে গেল। মায়মুনা চৌধুরী, জাহানারা চৌধুরী আর আয়না চৌধুরী ড্রয়িংরুমে ছিল। মেঘ যেতেই জাহানারা চৌধুরী এগিয়ে আসলো কি মেঘের খোঁজ খবর নিল। মেঘ আয়না চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গেল আর মুচকি হেসে বলল,,

“শ্রদ্ধেয় ছোট ফুপি কেমন আছেন? আপনাকে তো একবার ও হসপিটালে যেতে দেখলাম না এটা কোন কথা আমরা তো একই রক্ত তাই না।”

মেঘের এহেন আচরণে আয়না চৌধুরী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তিনি নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“তোকে দেখতে যেতে হবে এতটা দুর্দিন এসে গেছে আমার! রক্ত তো কি হয়েছে?’

“আপনার দুর্দিন না আসলে কি হবে ফুপি দেখতে যেতে পারতেন মরেছি কি না আমাকে ঐ অবস্থায় দেখে একটু হলেও শান্তি লাগতো তো তাই না। ইস ফুপি আপনিও না মিস করে গেলেন।”

মেঘের আচরনে উনি আজ ভিশন অবাক কারন এর আগে মেঘ কোনদিন এভাবে কারো সাথে কথা বলে নি।তখন দেখা মিললো জনাব শাফিয়ান চৌধুরীর তিনি অফিস থেকে ফিরলেন। কারন আয়মান চৌধুরী আসতে বলেছেন তিনি আসতেই মেঘ বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম কাকাই? কেমন আছেন?

মেঘের এমন তরো কথায় তিনি একপ্রকার চমকে উঠলো। তিনি বোধহয় ভাবেন নি মেঘ ওনাকে এরকম বলবে। সাধারণ কথাই জিজ্ঞেস করেছে তবুও যেন অন্যরকম। তিনি বললেন,,

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো?”

“বেঁচে আছি বেশ আছি আলহামদুলিল্লাহ। এতদিন তো আপনাকে দেখলামই না। অবশ্য দেখবো কিভাবে আপনি তো অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলেন বোধহয়। কারন আব্বা তো অফিসে বেশি যায় নি তো নিয়ম করে।”

আজ যেন সকলের অবাক হওয়ার দিন। এরকম মেঘ সবার অপরিচিত। আয়মান চৌধুরীর মুখে মুচকি হাঁসি। তখন মায়মুনা চৌধুরী বললো,,

“মেঘ এটা কি ধরনের ব্যবহার!”

“আসলে মা আচ্ছা যাই হোক আব্বা চলুন আমি রেস্ট নিব। আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসুন।”

মেঘ মায়মুনা চৌধুরী কে পুরো ইগনোর করে সামনের দিকে এগুলো। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দু’জনের মুখেই তৃপ্তির হাসি। আজান এর আগামাথা কিছুই বুঝতে পারে নি।

___________________

ধূসর ফোন দিলো মেঘ হবে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলো। মেঘ মুচকি হেসে ফোন ধরে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! বাড়ি পৌঁছেছেন ম্যাডাম!”

“হুম কিছুক্ষণ আগে মাত্র ফ্রেশ হয়ে বসলাম!”

‘কেন তোমার তো আরো আগে বাড়ি যাওয়ার কথা।”

“রাস্তায় আব্বা আমি আর আজান মিলে ফুচকা খেয়েছি আইসক্রিম খেয়েছি তারপর এসেছি।”

“বাহ ভাই বাহ তুমি অসুস্থ ভুলে গেছো নাকি!”

“সত্যি আমি অসুস্থ নাকি কই মনে হচ্ছে না তো!”

“মেঘ ফাজলামো রাখো!”

“কোথায় রাখবো আপনার মাথায় নাকি আমার মাথায়।”

মেঘকে খুব খুশি লাগছে যেহেতু মজা করছে। তারমানে মেঘের মনটাও এখন ভিশন ফুরফুরে। ভেবেই ধূসরের মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও বলল,,

“তো ম্যাডাম আজ দেখছি ভালো মুডে আছেন মজা করছেন বাহ!”

“আসলে আমি বেশ মুডি মানুষ কিনা তাই ক্ষনে ক্ষনে মুড চেন্জ হয়!”

“কথা টা শুনে মজা পেলাম তো। কারন আপনার মুড তো একটাই ছিল শান্ত চুপচাপ।”

“ভালো থাকার জন্য যদি একটু মুড চেন্জ করতে হয় তাহলে ক্ষতি কি? তাছাড়া আমার হাসিখুশির মধ্যে যে আরেকজনের হাসিখুশি জরিয়ে আছে নিজের জন্য না হলেও তার জন্য হাসিখুশি থাকতে হবে তো ধূসর এহসান শুভ্র।”

ধূসর হাসলো আর বলল,,

“মেঘ তোমার কাছে ভালোবাসা কি?”

“উম ভালোবাসা সে তো আমার থেকে অনেক দূরে!”

“হেয়ালি ছাড়ো আর বলো ?”

“সরি বলবো না! মুড নেই!”

“এটা কোন কথা !”

“এটাই কথা এখন আপনি বলুন আপনার অনুভূতি আপনার ভালোবাসা আই মিন ভালোবাসা কাকে বলে?”

“আমি তোমার থেকে শুনতে চেয়েছি মেঘ।”

“আমিও আপনার থেকে শুনতে চেয়েছি ধূসর!”

“কথার জালে কিভাবে ফাঁসাতে হয় সেটা তোমার থেকে কেউ শিখুক ব্যারিস্টার কি না!”

“হুম এখন বলুন,,

“ভালোবাসা তাই না! ভালোবাসা একটা অদ্ভুত শব্দ যা মনের কিনারায় খুব যত্নে থাকে। আমার কাছে ভালোবাসা হলো ,তাকে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অপেক্ষার নাম ভালোবাসা। তাকে সবটুকু দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করা ভালোবাসা। তার সাথে সারাজীবন পথ চলার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা রাখা তার নাম ভালোবাসা। তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে স্বপ্নের আরেক সুখের পৃথিবী সাজানো হচ্ছে ভালোবাসা। তার কষ্টে দুঃখবিলাস করতে চাওয়া ভালোবাসা। সবশেষে ভালোবাসা আল্লাহর দেওয়া একটি বিশেষ উপহার যা সবার জন্য আমাদের মনে সৃষ্টি হয় না। আর ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যাকে নিয়ে কোটি কোটি বই লিখেছেন আগেকার যুগের লেখকেরা এবং প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছে সবাই। ভালোবাসার রুপ পরিবর্তনশীল। আগেকার যুগের ভালোবাসা আর এখনকার যুগের ভালোবাসার তফাৎ আছে তবে তা শুধু প্রকাশের, ভালোবাসার কোন তফাৎ নেই। তবে সবথেকে পবিত্র ভালবাসা হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা তাদের পবিত্র সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালা সেই পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই আমাদের তকদির আর আমাদের জীবন সঙ্গী নির্ধারন করে রেখেছেন। এবং আমাদের জীবনসঙ্গীর জন্য আমাদের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ আকবর।

মিসেস আমি তো বললাম এবার আপনি বলুন এতসুন্দর করে আপনাকে ভালোবাসার কথা বললাম তবুও কি আপনার মুড হয়নি।”

মেঘ কি বলবে ধূসরের কথার মাঝে এতটাই ডুবে গিয়েছিল যে ধূসরের কথা শুনতেই পাচ্ছে না। ধূসর বলল,,

‘হ্যালো মেঘ হ্যালো!

“হ্যা হুম শুনছি তো!”

‘আমি তো বললাম এখন তুমি বলো!”

“একদিনে এত ভালোবাসা দেখানো ঠিক না ভালোবাসার মিষ্টতায় ডায়বেটিক না হয়ে যায় আজরিনা জ্যামির পাঠকদের।”

ধূসর হাসলো আর বলল,,

“আচ্ছা তাহলে থাক অপেক্ষায় রইলাম আপনার উত্তরের!’

“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ!”

“কেন আরেকটু কথা বলি না।”

‘কে যেন ফোন দিচ্ছে।”

‘আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ নিজের খেয়াল রেখো।’

‘আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন আপনার আল্লাহ হাফেজ।”

মেঘ ফোনটা কেটে দিল। তখন নীলের ফোন আসলো। এতক্ষন নীলই ওকে ফোন দিচ্ছিল মেঘ সালাম দিল ওপাশ থেকে নীল সালামের উত্তর দিয়ে বলল,,

“আম্মু তুমি এতদিন আসো নি কেন আমার আছে?তুমি জানো না তোমার সাথে দেখা না হলে আমার ভালো লাগে না।”

‘আসলে নীলবাবু আপনার আম্মু তো একটু অসুস্থ তাই দেখা করতে পারে নি সরি!”

“কি!!তুমি অসুস্থ মামনিরা তো আমায় বললো না আমি আসবো তোমাকে দেখতে। কি হয়েছ তোমার ? এখন কেমন আছো?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আর নীল বাবু আসতে হবে না আমিই দু’দিন পর তোমার কাছে যাবো।”

“তুমি কিন্তু একদিন ও আমাকে তোমার বাড়িতে নাও নি!”

“এনেছিলাম তো তুমি তখন একটু খানি ছিলে তোমার মনে নেই।”

“আচ্ছা তাই নাকি! আমি তোমার বাড়ি যেতে চাই।”

‘আনবো তো খুব তাড়াতাড়ি তারপর থেকে আমরা একসাথে থাকবো।”

‘সত্যি!”

‘হুম তিন সত্যি তোমার আরেকটা পরিবারের সাথে দেখা করিয়ে দেব।”

“বাবার সাথে?নাকি আব্বুর সাথে?”

“তোমার বাবা কোথায় নীলবাবু?”

‘আকাশের তারা হয়ে গেছে তো!”

“তাহলে বাঁচলো কে?”

“আব্বু! সত্যি তুমি আব্বুর সাথে দেখা করাবে কিন্তু আব্বু তো আমাকে চেনে না।”

“আমি পরিচয় করিয়ে দেব তো তবে তোমার আব্বুর সাথে তোমার আরেকটা সম্পর্ক আছে অন্য একদিন বলবো।”

“হুম !আমার ভিশন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে আম্মু!”

“বাড়িতে কেউ নেই?”

“আছে তো হিরু মামনি কিন্তু সে তো রুম আটকিয়ে বসে আছে । আমি ডাকলাম দরজা খুললো না।”

“কখন থেকে?”

“এই তো আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে এলো তারপর হিরু মামনির ফোন এলো কথা বলার পর রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিল। আর খুললো না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি।”

“আল্লাহ হাফেজ!”

“হুম আল্লাহ হাফেজ!”

মেঘ ফোন রেখে হির কে ফোন দিল। পাঁচবার দেওয়া হয়ে গেছে ও ফোন ধরেনি। মেঘ ও নাছোড়বান্দা ফোন করেই যাচ্ছে। অবশেষে ষষ্ঠ বারে হির ফোন ধরলো। হির কোন কথা বলছে না তাই মেঘই বলল,,

“হির!”

ওপাশ থেকে শান্ত স্বরে আওয়াজ আসলো ,,

“হুম!”

“কি হয়েছে তোর দরজা আটকে বসে আছিস কেন?”

“আজ আমার বোন আই মিন সৎ বোনের বিয়ে অথচ আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি আমার বাবা। আমি তো জানতামই না আজ তার বিয়ে বাবা হুট করে বলল টাকা লাগবে কিসের জন্য বলতেই তখন বললো কথা টা। আমার দ্বিতীয় মা নাকি বলতে বারন করেছে তাই বলে নি যদি আমার জন্য আবার বিয়ে ভেঙে যায়। এই কথাটা শুনে মেঘ বিশ্বাস কর আমার একটুও খারাপ লাগে নি জানিস কেন? তারা সবাই আমার মন থেকে উঠে গেছে আর এমন বাজে ভাবে উঠে গেছে যে তাদের নাম শুনতেও কেমন যেন লাগে। এতক্ষন নিজেকে সময় দিচ্ছিলাম নিজের জীবনের হিসাব মিলাচ্ছিলাম। আসলে আমি তাদের জীবনে কোথায় আছি। যখন মা বাবার ডিভোর্স হয় তখন কিন্তু আমার মা আমার কথা ভাবে নি তিনি আমাকে তার সাথে নিতে চান না এতে নাকি তার নতুন সংসারে অশান্তি হবে। কোন উপায় না পেয়ে বাবা আমায় রাখে সব ঠিক ছিল আমি আর আমার বাবা কিন্তু দাদির জোরাজুরিতে যখন নতুন বিয়ে করলো তখন বুঝতে পারলাম আমার এই দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নেই। ছোট বাচ্চার কথাটা কেউ ভাবলোই না তার জীবন হয়ে বিতৃষ্ণা ভরা। দুজনেই নতুন সংসার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত তাদের মাঝখান দিয়ে হির নামক মেয়েটা হাড়িয়ে গেল অথচ তাদের খেয়ালই হলো না। ডিবোর্সের মাধ্যমে কি শুধু দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক শেষ হয়, না হয় না সেই ডিভোর্সের মাধ্যমে হাড়িয়ে যায় কতো হির রা এই খোঁজ কজন রাখে। নতুন মায়ের কাছে একটু আদর পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতাম সে তার মেয়ে কে ভালোবাসতো পরের মেয়েকে ভালোবাসবে কেন? এভাবেই অনাদরে অবহেলায় বড় হয় সেই ছোট্ট হার একটা সময় হয়ে উঠে বেপরোয়া ইন্টার পর্যন্ত কোনরকম সে তার বাবার সংসারে থাকতো কিন্তু তারপর বলে দেওয়া হলো ও বাড়িতে থাকতে হলে টাকা রোজগার করতে হবে। ব্যস তবে থেকে শুরু হলো হির নামক মেয়েটার স্ট্রাগল। মাঝে নতুন কলেজে উঠে তার সাথে দেখা হলো চারটা পরীর । তাদের মাঝে তখন সে থাকতো পৃথিবীর সব খুশি তারা আমার কাছে ঢেলে দিত। অনার্সে উঠার পর যখন পরিবারের মধ্যে সব তিক্ততা ঘিরে ধরলো লুকিয়ে আমাকে জোর করে একটা নেশাখোর এর সাথে বিয়ে দিতে চাইলো তার সৎ মা। সেদিনই সে রেগে বাড়ি ছেড়েছে আর তাকে আশ্রয় দিল সেই চার পরীর মধ্যে থেকে একজন। তারপর থেকেই সেই হিরের নতুন পথ চলা।

হির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেঘ শুধু জানতো সে ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে আর জোর করে বিয়ে দেওয়ার জন্য চলে এসেছে এতটা ডিটেল্স সে জানতো না।আজ জানলো প্রানপ্রিয় বান্ধবীর জন্য চোখ দিয়ে দু ফোঁটা নোনাপানি গড়িয়ে পরলো। মেঘ বলল,,

“এখন ঠিক আছিস?”

“তোকে সব বলে খুব হালকা লাগছে আজ যেন বুকের ভেতর থেকে পাথর নেমে গেল। আর হ্যা তুই টেনশন করিস না আমি কাঁদি নি একটুও। আমি কাঁদবো কেনো তাদের ভেবে যারা আমার জীবনে এক্সিট-ই করে না। তাছাড়া যেখানে আমার রব আমাকে ছেড়ে দেন নি আমার বন্ধুরা আমাকে ছেড়ে দেয় নি সেখানে আমি অন্যদের কথা ভেবে কেন কাঁদবো। তুই জানিস মেঘ তুই আমার শক্তি আমার আইডল!”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“আইডল! কিন্তু আমি সেরকম কিছু না ঠিক আছে!”

“ভালোবাসার আরেক নাম ধূসর রাঙা মেঘ !”

“ভালোবাসি আমার নীলবাবুর হিরু মামনিকে তাকে বলে দিয়েন মিস মুমতাহিনা হির!”

“আমিও ভালোবাসি ধূসর ভাইয়ার নিষ্ঠুর মেয়েটাকে তাকে বলে দিয়েন মিস কাসফিয়া আয়মান মেঘ সরি মিসেস ধূসর এহসান শুভ্র!”

বলেই হির হাসলো মেঘ ও হাসলো। বন্ধুত্বের দারুন একটা মুহুর্ত এটা। বন্ধুর সাথে কথা না বলে যদি মনটাই হালকা নায় হয় তাহলে কিসের বন্ধু। আর বন্ধুরাও কখনো মন খারাপ করে থাকতেই দেয় না। হির হাঁসি থামিয়ে বলল,,

“শুকরিয়া মেরে দোস্ত মেরে জিন্দেগিমে আনে কে লিয়ে। মেরা খেয়াল রাখনে কি লিয়ে। মেরা মুসকুরাহাট কো ফিরছে লানে কি লিয়ে। ওর মুঝে ইতনা প্যায়ার কারনে কি লিয়ে। ”

মেঘ হাসলো আর দুষ্টু হেঁসে বলল,,

“দেখো বাঙালি দেখো এই দিন দেখার জন্য তোমরা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে জীবন দিয়েছিলে।”

হির গাল ফুলিয়ে বলল,,

“তোকে ধূসর ভাইয়া একদম ঠিক বলে নিষ্ঠুর মেয়ে।সবাই যখন এতো সুন্দর করে তোকে ভালোবাসার কথা বলে ওমনে তোর বাগড়া দিতে হয়। নিষ্ঠুর মেয়ে একটা।”

মেঘ এবার একটু জোরেই হাসলো আর বলল,,

“এর কারন আছে এত সুন্দর একটা উপাধি নিষ্ঠুর মেয়ে ! যদি একটু নিষ্ঠুরই না হলাম তাহলে এই নামের কি স্বর্থকতা কি হলো বল!”

‘তোকে বলে লাভ নেই।”

“তো এখন মিস মুমতাহিনা হির এর মুড কেমন?”

“ঝাক্কাস !”

“তাহলে দেখেন আপনার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে “নীল ইব্রাহাম!” সে এখন আইসক্রিম খাবেন এখন তাকে নিয়ে আইসক্রিম খেয়ে আসুন।”

“টাকা কে দেবে? আমি ফকির হয়ে গেছি দোস্ত!”

“বিকাশ চেক কর!”

হির খুশি মনে বিকাশ চেক করলো দুই মিনিট পর সেখানে পাঁচশত টাকা এলো। হির হেসে বলল,,

‘শুকরিয়া এই টাকা দিয়ে শুধু আইসক্রিম না আমরা দুজন কাচ্চি খাবো!”

“আচ্ছা ঠিক আছে ! তোর যা ইচ্ছে হয় তাই খেয়ে নে। আচ্ছা রাখছি আল্লাহ হাফেজ!”

“আল্লাহ হাফেজ!”

ফোন রাখতেই হির আর মেঘের মুখে বিস্তর হাসি দেখা গেল। মেঘ জানে হিরের টাকা আছে তবুও দিল কারন এতে হির আরো খুশি হবে। না দিলেও হির কিছু বলতো না। কিন্তু বন্ধুর মুখে যদি আরেকটু হাসি ফুটে উঠে তাহলে ক্ষতি কি? মেঘ বিছানায় শুয়ে পরলো এখন একটা শান্তির ঘুম দেবে। মেঘ কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।

রাতে ডিনার শেষ করে মেঘ রুমে এলো তার কিছুক্ষণ পর মায়মুনা চৌধুরী মেঘের রুমে এলো। তা দেখে মেঘ বলল,,

“কিছু বলবেন?’

“তেমন কিছু না আসলে তোমার আব্বা বলল তোমার সাথে রাতে থাকতে যদি কিছু প্রয়োজন পরে।”

“না লাগবে না আমি মানিয়ে নেব। আর হ্যা অন্য কারো কথায় আমার কাছে আসতে হবে না। যেদিন মন থেকে আসতে পারবেন সেদিন আসবেন! তবে দেরি না হয়ে যায়।”

“তোমার কথার মানে বুঝতে পারলাম না।”

“কোনদিন বুঝতে এসেছেন যে এই নতুন আমাকে বুঝতে পারবেন। যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন আমি এখন ঘুমাবো।”

মায়মুনা চৌধুরী কিছুক্ষন মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল তখন আয়মান চৌধুরী বাইরে থেকে এসব দেখে বলল,,

“ইউ ডিজার্ভ দিস মায়মুনা।”

তিনি মেয়ের রুমে আসলেন মেঘের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন তখন আজান আসলো মেঘের সাথে থাকতে। মেঘ হাসলো আজান সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। আর বলল,,

“যা লাগবে আমাকে বলবে ঠিক আছে!”এখন তুমি একটা সূরা শোনাও আমি ঘুমাবো। অবশ্য ঘুমের আগে সূরা মূলক পরলে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ইনশাআল্লাহ্। তুমি এটাই শোনাও সূরা মূলক-এর ফজিলত :

হযরত উসমান (রাঃ) যখন কবরের পাশ দিয়ে
যেতেন তখন কান্নায় উনার দাড়ি ও বুক ভেসে যেত। লোকে জিজ্ঞাসা করত ,আপনি জান্নাত ও জা*হা*ন্না*মের বর্ণনাও এত বেশী কান্নাকাটি করেন না, এর কারণ কি ?
তিনি বলেন, আমি হুজুর (সাঃ) এর নিকট
শুনেছি কবর আখেরাতের প্রথম মন্জিল।
যে ব্যক্তি এখানে নাজাত পেল, তার জন্য সমস্ত মন্জিল আছান বা সহজ । আরো শুনিয়াছি কবর হতে ভয়ংকর দৃশ্য আমি আর কোথাও দেখি নি। যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মূলকের আমল করবে সে কবরের আ*জা*ব থেকে মুক্তি পাবে।
(তিরমিজি-২৮৯০, মুসতাদরাকে হাকেম)।
.

★হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত
আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন; ” কোরআন শরীফে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে না দেয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। সূরাটি হলো– তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মূলক অর্থাৎ সূরা মূলক…।
(আবু দাউদ-১৪০২, তিরমিজি-২৮৯১, ইবনে মাজাহ-৩৭৮৬, মুসনাদে আহমদ-২/২৯৯)।

এটা তো তুমিই বলেছিলে এখন এটাই শোনাও!”

মেঘ মুচকি হেসে সূরা পাঠ করতে লাগলো। সূরা শেষ করে দেখলো আজান ঘুমিয়ে গেছে তাই ও নিজেও ঘুমিয়ে গেল।

____________________

দেখতে দেখতে কেটে গেল পনেরো দিন। আজ সবার জন্য একটা ইম্পোর্টেন্ট দিন থাকলেও মেঘের কাছে অন্যরকম । আজ ধূসরদের পরিবার ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে আসবে। অথচ মেঘ এটা জানে না। সকাল সকাল সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। আয়মান চৌধুরী প্রথমে উঠেই আগে মেঘকে খুঁজেছে কারন আজকে ধূসররা আসবে সেটা মেঘকে জানানো হয় নি। কিন্তু মেঘ এত সকালেও বাড়িতে নেই এটা দেখে তিনি অবাক হলো কারন মেঘ কোথাও গেলে ওনাকে বলে যায়। তাহলে আজ! উনি টেনশন পরে গেলেন। এদিকে ধূসররা এগারোটা কিংবা বারোটার মাঝেই পৌঁছে যাবে। উনি ফোন করলেন ফোনটাও ধরছে না। পরে ওনার আজকের দিনটার কথা মনে পড়লো।তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আর ওকে কল করা বন্ধ করলো।

বারোটার দিকে ধূসররা সবাই চলে এলো শুধু ধূসর বাদে সে পরে আসবে। এদিকে মেঘ একটা মাঠের এক কোনে বসে ছিল। হুট করে ফোনটা বেজে উঠলো ও ফোন দেখলো ওর আব্বা ফোন দিয়েছে মেঘ ফোনটা ধরলো কারন এই সময় তার আব্বা কখনো দরকার ছাড়া ফোন দেয় না। মেঘ ধরে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম আব্বা!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম আম্মা আপনি এখন কোথায়?”

“একটা কাজে আছি বলুন কোন দরকার?”

“হ্যা আপনার এক কাকু এসেছে কিছু সমস্যা হয়েছে কয়েকটা কাগজে সাইন লাগবে!”

আয়মান চৌধুরীর কথার মানে মেঘ বুঝতে পারল সে উঠে দাড়িয়ে বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে আব্বা তবে কয় মিনিটের মধ্যে আসতে পারলে ভালো হয়।”

“আট দশমিনিট এর মধ্যে আসতে পারলে ভালোই হয়।”

“আসলে আব্বা আমার একটা কাজ আছে বাড়ির ভেতরে না গিয়ে বাইরে থেকে চলে যাবো।”

“না আম্মা ভেতরে আসেন বাইরে থেকে যেতে হবে না। আমরা সবাই বাড়িতেই আছি।”

“আচ্ছা আব্বা! আল্লাহ হাফেজ!”

“আল্লাহ হাফেজ তাড়াতাড়ি আসেন আম্মা আমাদের একসাথে অনেক সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

“আসছি আব্বা!”

মেঘ ফোন রেখে ধূসরকে ফোন দিল । আর একটা দোকানে গিয়ে বলল,,

“একটা চকবার আইসক্রিম দেন।”

~ চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে