#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১৯ (স্পেশাল পর্ব)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
নতুন সকাল, নতুন দিন, নতুন আশা সব কিছু সময়ের ব্যবধানে নতুন হলেও পুরোনো রয়ে যায় শুধু ভালোবাসা। মানুষ টা সঠিক হলে আর ভালোবাসাটার পরিবর্তন হওয়া হয় না। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সেই ভালোবাসাই থাকে বরঞ্চ দিনকে দিন একে অপরের প্রতি ভালোবাসাটা আরো প্রখর হয় আরো বাড়তে থাকে।
আজ অনেকদিন পর এভাবে শান্তি ঘুমালো মেঘ। ধূসরের সাথে কথা বলে এসে দেখে তার তিন বান্ধবী ঘুমায় নি। অনেকদিন পর একসাথে হওয়ায় বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে। ফজরের আজান কানে আসতেই সবাইকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করে নিয়েছে। হির একটু ঘুম কাতুরে তাই সে নামাজ পরে ঘুমিয়ে গেছে নীলের পাশে। বাকি তিনজন একসাথে বাইরে হাঁটাহাঁটি করছে। হুট করে মেঘ বলল,,
“আজ তোদের কোন কাজ আছে?”
তখন জাবিন বলল,,
“আজ তো ছুটির দিন শোরুমের তাই আমার নেই। লিয়াদেরও তেমন কোন কাজ নেই আমার জানামতে?”
কিন্তু সেটা দিয়ে তুই কি করবি?”
“আজ তোকে দেখতে আসবে জাবিন দুপুরে রেডি থাকিস তুই তো আর দেখে বিয়ে করবি না। তোর পরিবার ও নেই আমরাই তোর পরিবার দিন কে দিন বুড়ি হচ্ছিস। বিয়ের বয়স সেই কবেই পার হয়ে গেছে। তাই আমরা সবাই মিলে একটা ছেলে ঠিক করেছি তোর জন্য?”
মেঘের কথা শুনে আপনা আপনি পা থেমে গেল জাবিনের ও অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেঘদের দিকে তাকালো। আর বলল,,
“তোরা কি বলছিস এগুলো?”
“মেঘ ঠিক বলছে তুই কোন কথা বলবি না।”
লিয়ার কথায় জাবিনের অসস্থি বাড়ছে। ও কিছু হারানোর আশংকা করছে। ও বলল,,
“কিন্তু?”
“কিন্তু কিছু না আমি তাদের সাথে কথা বলেছি তারা আজ আসবে ।”
মেঘের কথায় তখন জাবিন রেগে বলল,,
“আমার সাথে এই নিয়ে আগে কথা বলেছিস। আমাকে না জিজ্ঞেস করে তুই কেন কথা দিলি। একবার প্রয়োজন বোধ ও করলি না আমার মতামত নেওয়ার। এতিম হয়েছি তো কি হয়েছে সবাই আমার ওপর নিজেদের আধিপত্য দেখাবে আমার কোন মতামত নেই। তোদের সাহস হলো কি করে আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে। হ্যা তোরা আমার বন্ধু তাই বলে আমি তোদের এই অধিকার আমি দিইনি আমার লাইফে হস্তক্ষেপ করতে। তোর ফ্ল্যাটে থাকি বলে আর তোর শোরুমে কাজ করি বলে তুই যা ইচ্ছে তাই করতে পারিস না। এটা ঠিক করিস নি একদম ঠিক করিস নি।”
মেঘ স্থির চোখে জাবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। লিয়া অবাক চোখে জাবিনকে দেখছে কি এমন বলল যে মেঘকে এরকম ভাবে বলতে পারলো। জাবিন জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিল। মেঘ আর লিয়া চুপ করে আছে। মাথা ঠান্ডা করার পর ওর মনে পরলো এতক্ষন রাগের মাথায় ও মেঘকে কি বলেছে। ও মেঘের দিকে তাকাতে পারছে না। ও মেঘের দিকে তাকালো তা দেখে মেঘ মুচকি হাসলো। কি ছিল সেই মুচকি হাসিতে জাবিনের জানা নেই তবে ওর মনে হচ্ছে মেঘ কে ও ভিশন কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। জাবিনের খুব কান্না পেল। ওর চোখ ছলছল করে উঠলো মেঘ তখনো স্থির চোখে দাড়িয়ে আছে। জাবিন মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,,
“প্লিজ আমাকে মাফ করে দে আমি তখন রাগের মাথায় ওসব বলেছি। আমার ঠান্ডা মাথায় তোদের সাথে কথা বলার উচিৎ ছিল। তুই তো জানিস রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আমি তোকে হার্ট করতে চাই নি মেঘ। আমি কখনো তোকে এগুলো বলতেও চাই নি।এখন রাগের মাথায় এসব বলে ফেলেছি মাফ করে দে প্লিজ।”
মেঘ জাবিনকে ছাড়িয়ে বলল,,
“কিন্তু জাবিন জানিস তো রাগের মাথায়ই মানুষ সত্যি কথা বলে! সত্যিই তো তোর মতামত জানা উচিৎ ছিল আমরাও না একটু বেশি বেশি সত্যিই আমাদের তোর লাইফে হস্তক্ষেপ করা সাজে না। সব থেকে বড় কথা এটা আমাদের অধিকার ও নয় যে আমরা চাইলে আমাদের বান্ধবীর জীবনে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো।
এ কথা শুনে জাবিন আরো কান্না করতে লাগলো। এই মুহূর্তে লিয়ার কি করা উচিৎ জানা নেই। মেঘ জাবিনের গালে হাত রেখে বলল,,
“আরে কাঁদছিস কেন? এখানে যা বলেছিস সব তো সত্যিই বলেছিস তাহলে কাঁদছিস কেন? আমি মেঘ সবাই ভাবে আমি পারফেক্ট আমার দ্বারা কোন ভূল হতেই পারে না। কিন্তু দ্যাখ ভুল করেই ফেললাম। সরি রে আমার জন্য এখন তুই কাঁদছিস। তবে হ্যা আমার ফ্ল্যাটে থাকছিস এটার জন্য তোর তুই মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে আমাকে দিস তাহলে ভারাটিয়া হয়ে থাকছিস আর আমার শোরুমে কাজ করিস এতে কি হয়েছে কাজ তো কাজই সেটা ছোট হোক বড় হোক। এর মানে এই না তোর ওপর আধিপত্য খাটাবো তবে যেটা চেয়েছিলাম সেটা সম্পূর্ণ বন্ধুত্বের খাতিরে কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম এটা আমাদের অধিকারের বাইরে।
“মেঘ প্লিজ আমার কথা শোন প্লিজ মাফ করে দে আমি ওতশত ভেবে কিছু বলিনি যা মুখে এসেছে তাই বলেছি।”
“আরে তুই কেন মাফ চাইছিস মাফ তো আমাদের চাওয়ার কথা। তাছাড়া আমরা তো জানি তুই কেমন তাহলে।”
“তোরা যাকে বলবি তাকেই বিয়ে করবো তবুও এরকম ভাবে আমার ওপর রাগ করে থাকিস না। হুট করে কথাটা শুনে কি হলো বুঝলাম না তাই রাগের মাথায় তখন।”
“তোর রাগ হলো কারন তুই ইশান ভাইয়াকে তোর লাইফ পার্টনার হিসেবে চাস তার পরিবর্তে অন্যজনকে তার জায়গায় বসাতেই তোর ভিশন রাগ হলো আর রাগের মাথায় নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কেই কথা শুনালি। আমরা পরীক্ষা করতে চাইছিলাম বিয়ের কথা শুনে তোর রিয়াকশন কেমন হবে তাই দেখলাম কিন্তু তুই তো আমাকে পুরো ধুয়ে দিলি। আর রাগ করিনি আমি কেন রাগ করবো তুই কে অধিকার দেওয়ার বন্ধুদের ওপর বন্ধুদের অধিকার এটা বন্ধুত্ব হওয়ার পর থেকেই। সবথেকে বড় কথা অধিকার দিতে হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয় সেটা তিন জন আমরা আগেই নিয়ে নিয়েছি
“সত্যি তো রাগ করিস নি?”
“আমি তো জানি আমার পেটুক বান্ধবী বেশি হম্বিতম্বি করে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই পারে না। আমি এটাও জানি তার রাগ উঠলে সে কি বলে নিজেও জানে না। মূলত সে রাগ করতো না কেউ তার রাগ ভাঙানোর থাকতো না এই জন্য। এইটুকু কারনে কি এখন আমরা সম্পর্ক ভেঙে দেব। আমাদের সম্পর্ক এতো ঠুনকো নয় সামান্য এর জন্য আমরা সম্পর্ক ভেঙে দেব। আমি তোদের সাথে আর নিজের সাথে কখনো বৈষম্য করা নি কারন বৈষম্য কখনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারে না।শোন আমরা এমন এক সময়ে দাড়িয়েছি যে এখন যে সম্পর্কই থাকুক না কেন অল্পতেই ভেঙে যায়। আর ইগো এমন ভাবে প্রতিস্থাপন করা থাকে যে অধিকাংশ মানুষ ইগোর জন্য সম্পর্ক নষ্ট করে। তারা ভাবে আমি যদি আগ বাড়িয়ে কথা বলি তাহলে তার ইগো হার্ট হবে। এই ইগো কে সবাই আত্মসম্মান বলে মনে করে। কিন্তু কাছের মানুষের কাছে যদি একটু ইগো কে সাইডে রেখে কথা বলা যায় তাহলেই সম্পর্কটা রয়ে যায়। কিন্তু ঐ যে তাদের মাঝখানে ইগোর জন্য সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য দু কদম আগে বাড়ানো যাবে না। তাহলে তোমার আত্মসম্মান থাকবে না। সেটা বন্ধুতের ক্ষেত্রে হোক কিংবা ভালোবাসার।
লিয়া আর জাবিন হা করে কথা শুনছিল তখন পেছন থেকে হিরো বলল,,
“কথাটা তুই ঠিক বলেছিস ঐ ইগোই যে ৮০% মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পেছনে ঐ বেটায় দায়ী। এর জন্যই আমার উপাধি হয়েছে ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে।”
তখন মেঘ বলল,,
“উঠে পড়েছিস?”
“কি করবো বল জাবিন ষাড়ের মতো চিল্লাচিল্লি করছিল যে আমার ঘুম টা ভেঙে গেল তাই চলে এলাম আর কি?”
“কিন্তু আমরা তো আস্তে আস্তে কথা বলছিলাম আর এখান থেকে তোর কানে কথা পৌঁছানো সম্ভব নয়। কারন আপনি ভিশন ঘুম কাতুরে।”
‘আসলে কি হয়েছে বল তো তোরা তিনজন আমায় রেখেই চলে এলি আসলে পেটুক তো শুধু জাবিন না আমিও আছি যদি তোরা আমায় রেখে কিছু বানিয়ে খেয়ে নিস তাহলে আমি তো আর ভাগ পাবোনা তাই নিজের ভাগ নেওয়ার জন্য চলে এলাম। কিন্তু তোরা তো এখানে খাচ্ছিস না ঝগড়া করছিস আর এই মাথা মোটা জাবিন তোকে কত কি শোনালো তুই দেখে কিছু বললি না আমি হলে ওর চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতাম।”
এ কথা শুনে জাবিন ওর দিকে তাকালো। লিয়া আর মেঘ মুচকি হাসলো মেঘ বলল,,
“অপমান করে , রাগারাগী করে বা মারামারি করে কিছু করা যায় না যতটা বুঝিয়ে বলা সম্ভব ততটা বোঝাতে হবে তো নাহলে ইগো এসে সব খেয়ে ফেলবে। আর এই সাধারণ বিষয়টার জন্য আমি আমার গুটিকয়েক থাকা প্রিয়জনদের হারাতে চাই না। তাছাড়া আমি তো জাবিনকে চিনি আর বুঝিও তাহলে।”
“হইছে আমার খিদা লাগছে কে রান্না করবি করে ফেল আমি কিছু করবো না আজকে। আর নীল ও একটু পর উঠে পরবে।”
“আমি তো ভাবলাম নীলের হিরু মামনিকে দিয়েই সব করাবো।”
“আমি করবো না এখন আমার কথা না শুনলে নীলের মতো এই ঘাসেই বসে পরবো বলে দিলাম।”
“তা আমার আম্মা আপনার বসতে হবে না আমরা তিনজন করে নেব।”
জাবিনের কথা শুনে হির হাসলো। ওর বিশ্বজয়ের হাসি দেখে তিনজন ও হেসে ফেলল। জাবিন মেঘ কে জরিয়ে ধরলো এই মেয়েটা তাকে এত বুঝে কেন। ওদের দেখাদেখি বাকি দুজন ও জরিয়ে ধরলো। তারপর ভেতরে গেল। নাস্তা বানালো নীল কে ঘুম থেকে তুলে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করলো। মেঘ সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো।
________________
“তো ডক্টর শুভ্র আজকাল দেখি ভালো ছুটি কাটাচ্ছেন?”
অন্য ডক্টরের কথায় হাসলো ধূসর। ও হেঁসে বলল,,
“আর বলবেন না বউ এর কাছে আবদার রেখেছিলাম তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো তাই আর কি!”
“ওহ আচ্ছা তা সেদিন যে এসেছিল সেটাই ভাবি নাকি?”
“হুম!”
“তাই তো বলি ডক্টর শুভ্র যে নাকি কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না সে একটা মেয়ের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যাই সেদিনের কথা বিশ্বাস হয় নি আপনি বিয়ে করেছেন তবে এখন করলাম যে আপনি বিয়ে করেছেন। তা ভাবি খুব ভালোবাসে তাই না?
ধূসর হাসলো আর বলল,,
“হুম ভালো তো খুব বাসে কিন্তু প্রকাশহীন নিভৃতে !”
“মানে?
“মানে কিছু না তো কাল কিন্তু সব আপনাকেই ম্যানেজ করতে হবে।”
“সমস্যা নেই আমি এদিক সামলে নেব। আপনি বরং ভাবিকে সামলান!”
“আপনার ভাবিকে সামলাতে হবে না সে নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট পারলে আমাকে সামলিয়ে রাখে।”
“বাহ ভালো তো!”
“আচ্ছা আপনি থাকুন আমার একটা পেশেন্ট দেখতে যেতে হবে।”
বলেই ধূসর কেবিন থেকে চলে গেল। লোকটা ধূসরের দিকে তাকিয়ে রইল।
__________________
মেঘ বাড়ি এসে দেখল তেমন কেউ যায় নি শুধু ধূসরদের পরিবার ছাড়া। মেঘ ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হলো। তারপর বড় ফুপির কাছে গেল। মেঘ বড় ফুপির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। আশা চৌধুরী বললো,,
“জানিস মেঘ যখন শুনলাম তুই টাকাগুলো দিলি আর তোর একটা শোরুম আছে। তখন জানিস কি যে খুশি হয়েছিলাম। কারন তুই কিছু একটা করছিস। কারন মেয়েদের আপন বলতে কিছুই হয় না। যখন বাবার বাড়িতে থাকতাম তখন সব বাবার থাকতো। আর এখন যখন শুশুরবাড়ি গেলাম তখন সব তাদের। আমার বলতে কিছু নেই। এই জন্য সব মেয়েদের উচিত নিজের জন্য হলেও কিছু করা। অন্তত অসহায় চোখে কারো দিকে তাকাতে হবে না। কারো কাছে চাইতে হবে না।”
মেঘ সব শুনে বলল,,
“আব্বা কে সাহায্য করতে পারো নি বলে এই কথা বলছো যে ফুপা সাহায্য করতে দেয় নি।”
“না এটা তার জন্য বলছি না এটা এক চিরন্তন সত্য। যে মেয়েদের নিজের বলতে কিছু হয় না। বিয়ের আগে বাবার বাড়ি বিয়ের পর হয় শুশুরবাড়ি এখানে মেয়েদের নিজের বাড়ি বলতে কিছু আছে, না এখানে নেই। সব মেয়ের একটু হলেও সাবলম্বী হওয়া উচিত। তোর জন্য আমার গর্ব হচ্ছে বুঝলি।”
“আমার শোরুম আছে শোনার পর আমার পরিবারের রিয়াকশন কেমন ছিল একটু বলো তো শুনি?”
“সবাই যেন মাত্র টুপ করে আকাশ থেকে পড়ল। কিন্তু তোর আব্বার মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। তবে জানিস তো মানুষ শত ভালো কাজ করলেও ছোট একটা বিষয় ভুল পেলে সেটা নিয়ে মানুষ সমালোচনা করবেই।”
“মানে কেউ কিছু বলেছে নাকি?’
“সবাই যাওয়ার পর আয়না বলছিল তোর শোরুম থেকে শপিং করলো তাহলে টাকা কেন নিল। কিন্তু তুই যে দশ পার্সেন্ট ছাড় দিয়েছিস সেটা বললো না। পরে আমিও বলে দিয়েছি ও কেন সব ফ্রি তে দেবে। মেঘ কি ওগুলো ফ্রিতে এনেছে। সেগুলোও তো কিনেই এনেছে। তাহলে ফ্রি কেন দেবে। তারপর আর কিছু বলে নি।
“ঠিক বলেছো ফুপি। তবে একটা কথা সবার মনে রাখা উচিত জীবনে তুমি তখনি এগোতে পারবে যখন পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ আলাদা রাখতে পারবে। আচ্ছা ছোট ফুপি আমায় নিয়ে এত সমালোচনা করে উনি কি বোঝেনা নাকি জানেনা,,আবু হাতিম ইবনু হিব্বান আল বুসতী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
জ্ঞানীদের উপর আবশ্যক হল অপর মানুষের মন্দচারী থেকে নিজেকে পূর্ণভাবে মুক্ত রাখা, নিজের দোষ-ত্রুটি সংশোধনার্থে সর্বদা নিমগ্ন থাকা। যে ব্যক্তি অপরেরটা পরিত্যাগ করে নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনে সদা ব্যস্ত থাকে, তার দেহ-মন শান্তিতে থাকে। পক্ষান্তরে যে অন্য মানুষ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করে, তার অন্তর মরে যায়, আত্মিক অশান্তি বেড়ে যায় এবং তার অন্যায় কর্মও বৃদ্ধি পায়।
[রওযাতুল উক্বালা, পৃ/১৩১]।
ছোট ফুপির দিনকে দিন অন্যায় বেড়েই যাচ্ছে। এমন না হয় ওনাকে আমি ক্ষমা করতে না পারি।
মেঘ অন্যমনস্ক হয়ে শেষের দুই বিকৃত বলল তখন বড় ফুপি বলল,,
“কি বলছিস মেঘ আয়না কি অন্যায় করেছে ?”
“তেমন কিছু না ভালো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও ঘুমাবো।”
মেঘ চোখ বন্ধ করে নিল। আশা চৌধুরী কিছু বললেন না। এদিকে বাইরে দাঁড়িয়ে কেউ একজন মেঘের কথা শুনলো কিন্তু বুঝতে পারলো না। সে চলে গেল ওখান থেকে।
_______________
অতঃপর একদিন পর ধূসর আর মেঘের কাঙ্ক্ষিত দিন এসেই পড়লো। তিনটায় মেঘকে পিক করে নেবে ধূসর তেমনতাই কথা হয়েছে। ধূসর রেডি হলো ছাদ থেকে মেঘের কথা মতো গোলাপ পকেটে গুজলো। মুচকি হেসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো মেঘকে নিতে!
এদিকে মেঘ সাদা শাড়ি পরে রেডি সে সুন্দর করে হিজাব আর নিকাব বাঁধলো। হাতে ধূসরের দেওয়া ব্রেসলেট ফুলহাতা ব্লাউজ এর সাথে কুচি দিয়ে শাড়ি পরেছে। সব কিছু সাদা এক কথায় মেঘকে শুভ্র মেঘের টুকরো লাগছে। ধূসর এসে মেঘকে ফোন দিল মেঘ ফোন তুলে সালাম দিয়ে বলল ড্রয়িংরুমে বসতে ও দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আসছে। ধূসর ড্রয়িংরুমে আসলো মায়মুনা চৌধুরী ,মুন, আশা চৌধুরী ,আয়না চৌধুরী শিফা আর শিফার মা মিলে কথা বলছিল। ওনারা এখনো যাননি। ধূসর যেতেই সকলকে সালাম দিল,,
‘আসসালামু আলাইকুম!”
মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। এসো বসো তা ধূসর হঠাৎ এখানে? কেমন আছো তুমি?
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনারা কেমন আছেন?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“আসলে হঠাৎ না আমি আর মেঘ বের হবো একটু তাই ওকে নিতে এসেছি।”
“ওহ আচ্ছা তুমি একটু বসো শরবত বানিয়ে আনছি।”
“না মা তার দরকার হবে না। আমি কিছু খাবো না।”
তখন আয়না চৌধুরী বলল,,
“আগে তো একদমই আসতে না। এখন তো দেখছি সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই এখানে আসো?”
ধূসর হাসলো এই মহিলাকে তার চেনা শেষ। ধূসর মুচকি হেসে বলল,,
“কি করবো বলুন ছোট ফুপি বউটাই যে এখানে থাকে। সপ্তাহ তো দূর প্রতিদিন আসা উচিত আমার বউটা যে অনেক আদরের আমার। আগে বউ মানা করতো তাই আসতাম না এই আর কি!
এ কথা শুনে আয়না চৌধুরী নিজেই লজ্জা পেল। বাকি সবাই মিটিমিটি হাসছে। তখন মেঘ শাড়ির কুচি ধরে সিড়ি দিয়ে নামছে। ও নেমেই বলল,,
“তো মিস্টার যাওয়া যাক। সরি দুই মিনিট লেট হলো!”
ধূসর এগিয়ে গেল। এদিকে সবাই মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অনেক সুন্দর লাগছে মেঘকে মূলত দুজনকেই অনেক সুন্দর লাগছে দু’জনেই যে শুভ্র রঙ পরেছে। ধূসর মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,
ওহ মাই ডিয়ার মেঘ বালিকা তোমাকে আজকে সত্যি এক টুকরো মেঘ লাগছে মাশাআল্লাহ কারো নজর না লাগুক।”
“আপনার হয়েছে এখন চলুন! ”
তখন মুন বলল,,
“মেঘ তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ!”
“শুকরিয়া আপু!”
“তো কোথায় যাচ্ছিস তোরা কোথাও ইনভাইটেড নাকি।”
“না আজকে একটু রিক্সাবিলাস করতে যাচ্ছি আপু!”
ধূসরের কথায় সবাই অবাক হলো। ধূসর মেঘের হাত ধরে বলল,,
“আজ আসি আপু মেঘ এসে না হয় আপনাদের গল্প বলবে। আল্লাহ হাফেজ।”
ধূসর মেঘকে নিয়ে চলে গেল। বাকি সবাই শুধু দেখে গেল অবশ্য ওদের প্রশংসা ও করলো। মেঘ বাইরে আসতেই দেখতে পেল একটা রিক্সা দার করানো রিক্সাওয়ালার পরনে সাদা ফুতুয়া আর সাদা লুঙ্গি মেঘের মনে পরলো সেদিনের কথা তা দেখে মেঘ বলল,,
“রিক্সাটাও সাদা রঙ করে নিয়ে আসতেন?”
“সরি ওটা সম্ভব হয় নি!”
“ধুর আমি এমনিই বলছিলাম উঠুন তো!
ধূসর আর মেঘ রিক্সায় উঠলো। মেঘ ব্যাগ থেকে একটা মাক্স বের করে ধূসরকে পরিয়ে দিল। তা দেখে ধূসর বলল,,
“বাহ নিষ্ঠুর মেয়েটা এত পসেসিব! অন্য মেয়েরা যাতে আমাকে না দেখে সেই জন্য মাক্স এনেছে।”
“আমার মতে কিছু কিছু বিষয়ে সবার স্বার্থপর হওয়া ফরজ।”
“আচ্ছা তো কোথায় যাবেন ম্যাডাম!”
“একটা নির্জন লেকের ধারে যেখানে সামনে পানি মাথার ওপর সবুজ গাছ খোলা আকাশ ঠান্ডা বিশুদ্ধ বাতাস। আমি বলছি উনি চলতে থাকুক।
“আচ্ছা ঠিক আছে।
রিক্সা চলতে শুরু করলো। ধূসর আর মেঘ নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে কিছুক্ষণ পর মেঘ ধূসরের হাত জরিয়ে ওর কাঁধে মাথা রাঠলো। ধূসর ও হেসে মেঘকে এক হাত দিয়ে আগলে ধরলো। প্রায় বিশ মিনিট পর ওরা একটা লেকের ধারে এলো জায়গা একবারে শান্ত মেঘ যেমনটা বলেছিল ঠিক তেমনটাই। ওরা নামলো লেকের ধারে একটা বেঞ্চ পাতা। মেঘ সেখানে গিয়ে বসলো ধূসর ও সেখানে গিয়ে ওর পাশে বসলো। ধূসর বলল,,
“তো এরকম জায়গার হদিস পেলেন কোথায় মিসেস?”
“এই জায়গায় আমি প্রায়ই আসি নিজেকে শান্ত করতে বলতে পারেন মানসিক শান্তি পেতে। আমি প্রকৃতি ভালোবাসি এই জায়গায় আসলেও মনটা একদম শান্ত হয়ে যায়।”
“ওহ আচ্ছা!”
তখনি একটা ছোট পিচ্চি ছেলে হাতে একটা চিরকুট আর লাল গোলাপ নিয়ে ধূসরের কাছে এসে বলল,,
“এগুলো আপনার জন্য!”
ধূসর ওগুলো নিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো মেঘ নেই। ছেলেটিও দিয়ে চলে গেছে। ও আশেপাশে তাকালো মেঘকে কোথাও পেল না। ও চিরকুট খুলল সেখানে লেখা,,
আমার গল্পের ভালোলাগার শব্দ সে,
আমার একান্ত বিশ্বস্ত বন্ধু সে!
আমার মোনাজাতে চাওয়া জান্নাতের সঙ্গী সে,
রবের পক্ষ থেকে পাওয়া বিশেষ নেয়ামত সে!
আমার ভেতরে যতনে রাখা শুভ্র রঙ সে,
আমার আবেগ অনুভূতির অস্তিত্ব সে!
আমার অপরিবর্তনীয় ভালোবাসা সে,
আমার প্রকাশহীন নিভৃতে ভালোবাসা সে!
~ আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটা
এই চিরকুট পরে ধূসর এর মুখে আপনা আপনি হাসি ফুটে উঠল। আর বলল,,
“চিরকুট টা যে লিখেছে ধূসর রাঙা মেঘ সে!
তখনি ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে একটা বেলুন আর একটা চিরকুট নিয়ে ধূসরকে দিল ধূসর মুচকি হেসে চিরকুট খুলে পরতে লাগলো,,
“একটা সময় খুব করে চাইতাম বসন্ত ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া বেশে প্রাশন্তির আবেশ নিয়ে আমার জীবনে কারো আগমন হোক। যার হাতে হাত রেখে চলবো সারাটা জীবন যে জীবন রাঙানোর তাগিদ দেবে। অতঃপর বসন্তের মতোই আপনার আগমন ঘটলো এই ছোট মেঘের জীবনে। এই রঙহীন ধূসর রাঙা মেঘ এর জীবনে আসলো শুভ্র রঙের অদ্ভুত রঙিন করা মানুষ টা। জানেন সেই মানুষটি আপনি। আগের ধূসর রাঙা মেঘ ছিল বড্ড বেরঙিন! কিন্তু আপনার আগমনে সেই ধূসর রাঙা মেঘ হচ্ছে দিনদিন বড্ড রঙিন।”
: ~ ধূসর রাঙা মেঘ
ধূসর এবার আশেপাশে তাকালো। একটু দূরেই অনেক গুলো রঙিন বেলুন নিয়ে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে ধূসর মেঘের কাছে গেল। মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
মন কেমনের বৃষ্টি সে!
আমার দেখার দৃষ্টি সে!
ধূসর এহসান শুভ্র সে!
“আপনি আমার জীবনের এমন একজন প্রিয়জন যার প্রতিক্ষায় রোজ নিয়মিত বসে থাকি। আপনি কি জানেন এই নিষ্ঠুর মেয়েটা আমি আপনার জন্য কতোটা আকুল আকাঙ্ক্ষা রাখি। আপনি কি জানেন আপনার অগোচরে এই আমি আপনাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন আঁকি। আমি যে আপনারই মনের মাঝে থাকি এটা বোঝার নেই আমার বাকি।পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের ভালোলাগার কিছু অনুভূতি রয়েছে যে অনুভূতি গুলোর মাধ্যমে মানুষ নিজের ভালো লাগা বা ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকে। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের ভালোলাগার অনুভূতি গুলো তাদের প্রিয় জনদের জন্যই হয়। প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে প্রিয় জনদের জন্য একটি টান বা মায়া তৈরি হয় যেখান থেকে তাদের প্রতি ভালো লাগা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। ভালো লাগার অনুভূতি থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। আপনি হলেন আমার সেই ভালোলাগা শেষ পর্যন্ত ওটা কথায় গিয়ে থেমেছে জানিনা।
হযরত আলী (রা) বলেন,,
ভালোবাসা সবাইকে নিবেদন করো; তবে তাকে সর্বাধিক ভালোবাসো, যার অন্তরে তোমার জন্য তোমার চেয়েও অধিক ভালোবাসা বিদ্যমান”
আপনাকে এতদিন প্রকাশহীন ভাবে ভালোবাসলাম অথচ আপনি কি করলেন নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি দিলেন শুধু মুখে প্রকাশ করি না বলে। আজ এই নিষ্ঠুর মেয়েটা তার অনুভূতি আপনাকে জানাবে,,
এই নিষ্ঠুর মেয়েটা আপনাকে অনেক,,
মেঘ আর কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই একটা গুলি এসে মেঘের পিঠে লাগলো। সাদা শাড়িটা যেন মুহুর্তেই লাল বর্ন ধারন করলো। হাতের বেলুন গুলো এলোমেলো ভাবে আকাশে উড়তে লাগলো।ধূসর এতক্ষন অদ্ভুত ভালোলাগা নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল। হুট করে এমন হওয়ায় ও হতভম্ব হয়ে গেল। মেঘ পরতে নিল তখন ধূসর ওকে ধরে ফেলল তখন মেঘ কাপাকাপা কন্ঠে বলল,,
“এই নিষ্ঠুর মেয়েটা আপনাকে ভিশন ভালোবাসে ধূসর। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি, খুব খুব ভালোবাসি।”
~ চলবে,,
#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
ধূসর হসপিটালের করিডরে বিধস্থ অবস্থায় বসে আছে তাকে দেখে মনে হচ্ছে অনুভূতিহীন মানব। ধূসর এক দৃষ্টিতে তার শুভ্র পাঞ্জাবি তে লাগা মেঘের রক্তের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাইকে খবর দেওয়া হয়েছে কিন্তু কেউ এখনো হসপিটালে এসে পৌঁছায় নি। ধূসরের এই সময়টা খুব অসহ্যকর অসহনীয় লাগছে, না ভালো লাগছে, তাকে এক অন্যরকম রোবট মানব লাগছে। হয়তো ভেতরে ভেতরে খুব অসহায় লাগছে। ধূসর একটু পর কি যেন বিরবির করে বলছে ,
“নিষ্ঠুর মেয়েটা আজ আমাকে ভালোবাসি বলেছে। যার সাক্ষী ছিল খোলা আকাশ দখিনা বাতাস আর নিরব পরিবেশ। সব তো ঠিকই ছিল তবে শেষে এমনটা কেন হলো।”
“নিষ্ঠুর মেয়ে তুমি সত্যিই নিষ্ঠুর মেয়ে। তুমি যদি নিষ্ঠুর মেয়ে না হও তাহলে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কেন করেছো। এই যে নিষ্ঠুর মেয়েটা আমায় ভালোবাসো নাকি ভালোবাসলে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারে কেউ বুঝি। তুমি তো বলেছিলে সারাজীবন আমার পাশে থাকবে। না না আমার মেঘের কিছু হবে না ও আমার কাছে ঠিক ফিরে আসবে। আমি না ওকে ভালোবাসি ওও তো আমাকে ভালোবাসে। তাহলে আমরা আলাদা হবো কেন আমরা সবসময় একসাথে থাকবো। এখনো কতকিছু করা বাকি আজ তো ফুচকা খাওয়াও হলো না। এই সবকিছু তো আমাদের একসাথে পূরন করতে হবে। মেঘ তুমি তো অনেক স্ট্রং তুমি ফিরে এসো আমার কাছে। এইবার নিষ্ঠুরতার প্রমান দিও না। ভালোবেসে ফিরে এসো আমার হয়ে তোমার ধূসরের কাছে।
ধূসর আপনমনেই সব বিরবির করছে। এই হসপিটালের যারা ওকে চেনে সবাই খুব অবাক হয়েছে। ধূসর এহসান শুভ্র একটা মেয়েকে কোলে করে এনে পাগলের মতো চিৎকার করছিল। আবার আলাদা মেয়ে ডক্টর খুঁজছিল যাতে অন্য পুরুষকে মেঘের ট্রিটমেন্ট করতে না হয়। সেখানের ডক্টর বলেছিল ওকেই হ্যান্ডেল করতে কিন্তু ও জানিয়েছে পারবে না। ও মেঘকে এই অবস্থায় দেখতে পারবে না। এমনিতেই ওর হাত পা কাঁপছে। ও ওর মেঘ বালিকা কে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চায় না। অতঃপর একজন ভালো মেয়ে ডক্টর পেয়ে যায়।
সে নিজে হতভম্ব হয়ে থাকলেও চারপাশে তার মেঘ বালিকার সবকিছু খেয়াল রেখেই করছে। গুলি লাগার পর ধূসরের প্রায় পাগল পাগল অবস্থা কি করবে এই সময় গাড়ি পাবে কি না। ও চিৎকার করে সেখানে কাঁদছিল মেঘকে জরিয়ে ধরে আর বলছিল
“মেঘ কিছুই হবে না তোমার! আমি তোমার কিছুই হতে দেব না যাই হয়ে যাক না কেন তুমি ফিরবে আমার কাছে। নিজেকে স্ট্রং রেখো কিছু হবে না একটু সহ্য করো প্লিজ আমি এখনি তোমায় হসপিটালে নিয়ে যাবো।আমি তোমায় খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে হারাতে চাই না।প্লিজ নিষ্ঠুর হইয়ো না ফিরে এসো আমার কাছে। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
এত কষ্টের মাঝেও মেঘের মুখে যেন অদ্ভুত রকম তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছিল।যতক্ষন পর্যন্ত মেঘের জ্ঞান ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত ও কেবল ধূসরকেই দেখে গেছে। ও গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছিল।তখন আশেপাশে থাকা কিছু লোক একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। ও তাড়াতাড়ি করে সবথেকে কাছের হাসপাতালে মেঘ কে আনে।কারন মেঘের অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল যেহেতু ও নিজে ডাক্তার তাই এই বিষয়ে ও ভালো জানে দেরি করলে যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে। ধূসর নিজের মতো ভাবছিল। তখনি আয়মান চৌধুরী দৌড়ে হসপিটালে আসেন। তার পেছনেই ধূসরের পরিবার ভেতরে মেঘের অপারেশন চলছে। ধূসর তাদের বোধহয় দেখেই নি কোন হেলদোল নেই। ধূসর আছে নিজের মতো। ধূসরের অবস্থা দেখে সবাই যেন আরো ভেঙে পড়লো। দিলরুবা খানম ছেলের পাশে বসে ছেলের হাত ধরে বলল,,
“ধূসর এসব কি করে হলো মেঘ ও ,
উনি আর কিছু বলার আগেই ধূসর তাড়াতাড়ি করে বলল,,
“কিছু হবে না মেঘের ও ফিরে আসবে আমার কাছে দেখো।”
দিলরুবা খানম ছেলেকে জরিয়ে ধরলো এবার আর ধূসর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারলো না। কারন ধূসর এতক্ষন কাঁদার জন্য একটা কাঁধ খুঁজছিল। ধূসর কেঁদে উঠল ছোট বাচ্চাদের মতো ও বলতে লাগলো,,
“কেন এমন হলো মা আমার মেঘ, তুমি জানো কত রক্ত পরছিল ওর সাদা শাড়ি একদম রক্তে লাল হয়ে গেছিল। আমার পাঞ্জাবি দেখছো এগুলো সব ওর রক্ত আমরা তো ভেবেছিলাম আজ আমরা ঘুরবো ফিরবো অনেক সুন্দর সময় কাটাবো। কিন্তু এটা কি হয়ে গেল মা কেন হলো? তুমি জানো ঐ নিষ্ঠুর মেয়েটা আজ আমায় ভালোবাসি বলেছে আরো কতো আবেগমাখা চিরকুট দিয়েছে। আজ মেয়েটা আমায় ভালোবাসি বলেছে মা আর দেখো না আজকেই এরকমটা হতে হলো। কেন করলো কি ক্ষতি করেছিল মেঘ। গুলিটা মেঘের না লেগে আমার লাগলে বোধহয় এতটা কষ্ট হতো না মা। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে মা। তুমি জানো ও চোখ বন্ধ করার আগে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কি অসহায় সেই চাহনি । মা কেন এমন হলো। আমার খুব ভয় হচ্ছে মা আমি ওকে হারিয়ে না ফেলি। তুমি জানো সিলেটে ও আমাকে বলছিলো আমি যেন ওকে হারাতে না দিই । খুব যত্ন করে আগলে রাখি ওকে যেন আমার জীবনের নিষ্ঠুর মেয়েটা না হতে দিই ও আমার হাত ধরে সারাজীবন চলতে চায় মা। আমার ভিশন ভয় হচ্ছে মা।প্লিজ দোয়া করো মেঘের যেন কিছু না হয় মা। সত্যি মেঘের কিছু হবে না তাই না মা বলোনা তুমি?
“মেঘের কিছু হবে না নিজেকে সামলা ধূসর। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই ওকে সুস্থ করবে।”
ধূসর আরো কান্না করতে লাগলো। ছেলেরা নাকি শত কষ্ট পেলেও কাঁদে না কিন্তু ধূসর তো তার স্ত্রীর জন্য মাকে জরিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। ওর কান্না দেখে ওখানে থাকা প্রায় সবারই চোখে পানি এসে গেল।নোলক আর রোহিনী তো কাঁদছেই। ধূসরের অবস্থা দেখে আয়মান চৌধুরী ধপ করে বসে পরলেন সেখানে থাকা বেঞ্চে। এহসান চৌধুরী বন্ধুর হাত ধরে শান্তনা দিতে লাগলেন। আয়মান চৌধুরী কেঁদে উঠলেন আর বললেন,,
“আমার আম্মা আমার মেঘ এহসান তুই দেখতে পাচ্ছিস। মেয়েটা তো আজীবন কষ্টও পেয়ে গেল এখন সুখ একটু করে ওর জীবনে ধরা দিতে শুরু করেছে।এর মধ্যে এটা কি হলো এহসান আমার মেয়েটার কিছু হলে আমি কি করবো এহসান কাকে আম্মা বলে ডাকবো। তুই জানিস সেদিন আমি ওকে বলেছিলাম না “আম্মা আপনার সাথে আমার খুব তাড়াতাড়ি সাময়িক বিচ্ছেদ হতে চলেছে।”তখন আমার মেয়ে আমাকে কি বলেছিল জানিস “আব্বা সাময়িক বিচ্ছেদেই এতো কষ্ট পাচ্ছেন। তখন এই ইহকালে একেবারের জন্য বিচ্ছেদ হবে তখন কি করবেন। ঐ কথাটা শুনে আমি থমকে গিয়েছিলাম জানিস তুই আমি তো ওকে ছাড়া ভাবতেই পারি না।আমি ওকে খুব ভালোবাসি আমি ওকে হারাতে চাই না এহসান ও যে আমার সবচেয়ে কাছের বিশ্বস্ত বন্ধু।
তখনি সেখানে চৌধুরী বাড়ির সকলে এলেন। মায়মুনা চৌধুরীর চোখেও আজ পানি দেখা গেল হাজার হোক মা তো। ঐ বাড়িতে থাকা সকালেও এসেছে আয়না চৌধুরী বাদে। সবাই এসে মেঘের অবস্থা জিজ্ঞেস করল কিন্তু তেমন কিছু কেউ বলতে পারলো না। মায়মুনা চৌধুরী ঠাঁই বেঞ্চে বসে আছে। ধূসর এখনো মায়ের কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে চোখ দিয়ে নিরবে পানি পরছে একটু পরপর হাতের কনুই দিয়ে মুছছে তাকে দেখে পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চা লাগছে ।ছেলের কান্নায় তার কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু এখন সেও যদি ভেঙে পরে তাহলে তার ছেলে আরো ভেঙে পরবে। চৌধুরী বাড়ির সকলে ধূসর নামক মানবটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এটাকেই বোধহয় প্রকৃত ভালোবাসা বলে। তার কিছুক্ষণ পর লিয়া আর হিরকে দৌড়ে আস্তে দেখা গেল।ওরা আসতেই নোলক সব জানালো দু’জনেই নিঃশব্দে কাঁদছে। অতঃপর ডক্টর বের হলেন তা দেখে ধূসর ওর দৌড়ে ওনাদের সামনে গিয়ে বলল,,,
“ডক্টর আমার মেঘ কেমন আছে ও ও ঠিক হয়ে যাবে তো? গুলি বের করেছেন কতটা রক্তক্ষরন হয়েছে?”
“আরে ডক্টর শুভ্র রিল্যাক্স আমাকে তো কিছু বলতে দিন। আপনি যেহেতু ডক্টর আপনি তো জানেন এইরকম কেসে পেশেন্টের কি অবস্থা হয়। তবে হ্যা আপনার মেঘ কিন্তু অনেক স্ট্রং তাই ঠিক আছে। আউট অফ ডেন্জার । গুলি বের করে দিয়েছি ইনশাআল্লাহ কয়েক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে। তবে ওনাকে এক্সট্রা কেয়ারে রাখতে হবে। বাকিটা আপনি দেখে করে নেবেন কারন এই বিষয়ে আমার থেকে আপনি বেস্ট আসছি।
ডক্টরের কথা শুনে সবার বুকের ভেতর থাকা পাথরটা যেন সরে গেল। এবার ধূসর নিশ্চিন্ত। এদিকে লিয়া জাবিন কে সব আপডেট দিল কারন ও নীলকে রেখে এখন আসতে পারবে না আর নীলকে জানাতেও পারবে না । মেঘকে কেবিনে দেওয়ার পর সবাই একবার করে দেখে এলো। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে কাঁদলেন কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে এলো। সবার শেষে ঢুকলো ধূসর। ধূসর গিয়ে মেঘের পাশে থাকা টুল এ বসলো। তারপর মেঘের হাতে একটা চুমু খেয়ে বলল,,
“শুনতে পাচ্ছো নিষ্ঠুর মেয়ে তাড়াতাড়ি চোখ খুলো তোমার চোখদুটো দেখার জন্য তোমার জামাই ছটফট করছে। সাধে কি তোমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলি আমার সুখ একটুও ও সহ্য হয় না তোমার। যেই তুমি আমায় ভালোবাসার অনুভূতি বলতে লাগলে আমি একটু সুখ সুখ অনুভুতি অনুভব করছিলাম ওমনি আমার সুখে বাগড়া দিয়ে গুলি খেয়ে নিলে। একবার সুস্থ হও এর সবকিছুর শোধ তুলবো আমি।
নিজের বোকা বোকা কথাগুলো বলে ধূসর একা একাই হাসলো । আর বলল,,
“ভালোবাসি আমার ধূসর রাঙা মেঘ কে। ভালোবাসি আমার নিষ্ঠুর মেয়েটাকে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও কারন তোমাকে আমি এই অবস্থায় সহ্য করতে পারছি না। আর হ্যা তুমি সুস্থ হলে আমরা আজকের আমাদের প্ল্যান করা মুহুর্ত সব পূরন করবো। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও আমার মেঘ বালিকা।”
_____________
প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর রাত এগারোটার দিকে মেঘের জ্ঞান ফিরলো। আপাতত হাসপাতালে ধূসর ছাড়া আর কেউ নেই। আর সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তবে ধূসর বেশ অবাক হয়েছে মায়মুনা চৌধুরী একটা টু শব্দ ও করে নি। বলেও নি আমি থাকি। ধূসর ও কিছু বলেনি তবে মনে মধ্যে কিছু একটা কিন্তু রয়েই যায়। লিয়া আর হির আর মেঘের বড় ফুপি থাকতে চেয়েছিল মেঘ তাদের মানা করেছে দরকার নেই। আয়মান চৌধুরী জোর করে থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু উনি নিজেই অসুস্থ হয়ে যান কয়েকদিন পর পর তাই ধূসর ওনাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাকিদেরও সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে এমনিতেও রাতে এত জনের থাকার পারমিশন নেই। দুজন থাকতে পারবে কিন্তু ধূসর একাই থাকবে বলে জানিয়েছে কাল সকালে না হয় সবাই আসবে দেখা করতে। মেঘের জ্ঞান ফিরেছে শুনে ধূসর তাড়াতাড়ি মেঘের কেবিনে গেল। হাতে ক্যানেলার স্যালাইন চলছে এক ব্যাগ করতো দিতে হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই সেটা শেষ হয়েছে।মেঘ চোখ বন্ধ করে ছিল ধূসর এসে মেঘ কে ডাকলো,,
“মেঘ!”
মেঘ চোখ খুলে ধূসরকে দেখলো তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,,
“এতক্ষনে আসার সময় হলো আমার জ্ঞান ফিরেছে আরো পাঁচ মিনিট আগে!”
মেঘের এমন কথায় ধূসর হাসলো। এই সময়েও এমন কথা কেউ বলতে পারে কিনা ওর জানা নেই। ধূসর হেসে বলল,,
“সরি ডক্টরের সাথে কথা বলছিলাম। এখন কেমন আছো কেমন লাগছে এখন!”
“আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো। আব্বা কোথায় তিনি ঠিক আছেন ওনাকে জানিয়েছেন আমার কথা।
“হুম জানিয়েছি আব্বা ঠিক আছেন। তিনি এসেছিলেন শুধু তিনি না সবাই এসেছিল আমার পরিবার তোমার পরিবার লিয়া হির সবাই এসেছিল।আমি সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।”
“কেউ থাকতে চাই নি এখানে?”
“হ্যা চেয়েছিল তো আমার মা, তোমার আব্বা, লিয়া হির!”
“আর কেউ?”
“হ্যা তোমার ফুপি!”
মেঘ হয়তো অন্য কিছু আশা করছিল ও স্থির মুখেই বলল,,
“ওহ আচ্ছা! আচ্ছা মা এসেছিলেন!”
“হুম এসেছিল তো কেন?”
“এমনিই আপনি বলুন আপনার কেমন লাগছে এখন।”
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রসঙ্গ পাল্টালো। ধূসর বলল,,
“তুমি জানো আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম সেই সময় আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে হাড়িয়ে ফেলবো।”
“যেখানে আপনার মতো ডক্টর জামাই আছে সেখানে আমার কি হতে পারে বলুন তো!”
“পিঠে খুব ব্যাথা?”
“কই না তো একটু!”
“তুমি এমন কেন মেঘ?”
“কেমন?”
“খুব নিষ্ঠুর! আর স্ট্রং যে নাকি এরকম অবস্থায় ও বলছে একটু।”
“তা আজ নিষ্ঠুর মেয়েটা কে ওখানে ছেড়ে দিলেই পারতেন নিষ্ঠুর মেয়েটা বিলীন হয়ে যেত এই পৃথিবীর বুক থেকে কেউ কেউ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতো। যাই হোক বেঁচে যেহেতু গেছি তাহলে এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই সহ্য করতে হবে মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র।”
ধূসর অসহায় চোখে মেঘকে দেখছে মেয়েটার মুখে অদ্ভুত হাসি এ হাসির মানে সে জানেনা। ধূসর মেঘের হাত ধরে বলল,,
“আমি এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই সারাজীবন সহ্য করতে চাই। আর হ্যা এই জীবন থাকতে আমি তোমায় ছাড়ছি না যাই হয়ে যাক না কেন এই নিষ্ঠুর মেয়েটা শুধু আমার।”
“হুম এত কিছু করেও নিষ্ঠুর মেয়েটা তার উপাধি চেন্জ করতে পারলো না নিষ্ঠুরই রয়ে গেল তাই না।”
“হুম এত কথা বলছো কেন? চুপচাপ ঘুমাও নাহলে শরীর আরো বেশি খারাপ করবে।”
“নিষ্ঠুর মেয়েটা আজ তো আপনাকে ভালোবাসি বললো আপনি হার্ট অ্যাটাক করেন নি তো দেখেছেন বলেছিলাম না আপনি ওতটাও দুর্বল নন। তবে হার্ট অ্যাটাক না করে ভালোই করেছেন আজ হার্ট অ্যাটাক করলে দু’জনেই এখন আল্লাহর কাছে থাকতাম।”
“মেঘ এবার বেশি বলছো কিন্তু। কি আজেবাজে বলছো। তবে হ্যা যে আজকে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তোমাকে আঘাত করেছে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে আর আমি দেব সেই শাস্তি। একবার শুধু জানতে পারি।”
মেঘি এই প্রসঙ্গে কথা বলবে না বলে বলল,,
“ওসব বাদ দিন!আপনি খেয়েছেন কিছু? মুখটা তো একদম শুকিয়ে গেছে। আপু শুনুন আমার পাগল ডক্টরের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসুন।”
ওখানে থাকা নার্সটা হেসে চলে গেল। তখন ধূসর গাল ফুলিয়ে বলল,,
“তুমি আমাকে পাগল বললে?”
“তো কি করবো বলুন আজ তো আমায় নিয়ে আপনি পাগলের মতোই ছুটছিলেন গাড়ি থামানোর কত চেষ্টা। আমায় নিয়ে চিৎকার করে পাগলের মতো কাঁদছিলেন। তো পাগল বলবো না। আচ্ছা আপনি কেন আমায় এত ভালোবাসলেন। জানেন আপনার ঐ রুপ দেখে ভেতরে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। শুধু আল্লাহর কাছে এটাই চাইছিলাম আমি এই পাগল ডক্টরের জন্য হলেও যেন বেঁচে যাই।কারন এখন আমার কিছু হলে আমার পাগল ডক্টর ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে। আমি শুধু আপনার জন্য আজ বাঁচতে চেয়েছিলাম মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র।”
মেঘের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। ধূসর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,,
“হুস একদম কাঁদবে না। তোমাকে ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট কারন নেই শুধু এটা জানি আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমি আমার জীবনের বিরাট বিশেষ এক অংশ।যাকে আমি কোন মূল্যেই হারাতে চাই না। নির্জন ধূসর আকাশের শুভ্র মেঘ তুমি। আর হ্যা অনেক কথা বলছো এবার চুপ একটাও কথা না।”
ততক্ষনে নার্স ধূসরের খাবার নিয়ে এলো তখন মেঘ বলল,,
“আচ্ছা একটাও কথা বলবো না আপনি খেয়ে নিন।”
“ঠিক আছে।”
ধূসর খাচ্ছে আর মেঘের দিকে তাকাচ্ছে। আর মেঘ সে তো এক দৃষ্টিতে ধূসরকেই দেখছে। দেখতে দেখতেই মেঘ ঘুমিয়ে পড়লো। কারন ওকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ধূসর খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে মেঘের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,
“তোমার অনুভূতি প্রকাশ আমাকে এতটাই মুগ্ধ করছিল যে অন্যসব দেখার সময়ই পাই নি। যদি আশেপাশে তাকাতাম তাহলে হয়তো এটা ফেস করতে হতো না। তুমি যে আমায় খুব ভালোবাসো সেটা আমি আগে থেকেই জানি তবে তোমার মুখে ভালোবাসি শোনার বড্ড লোভ ছিল আমার আজ পুর্ন হলো। আমি যে তোমায় প্রতিনিয়ত প্রতিদিন ভিলোবাসি বলি এর থেকে তোমার এত বছরের প্রকাশহীন ভালোবাসার আজকের প্রকাশটা আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার থেকেও গভীর এবং সুন্দর অনুভূতি। এই দিনটা আর ঐ মুহুর্তটা আমি কখনো ভুলবো না। তবে আজকের দিনটা আরো সুন্দর হতে পারতো যদি না এরকম হতো যাই হোক আমরা আমাদের জীবনে এমন দিন আবারো সেলিব্রেট করবো।”
___________________
“তুমি কি করছিলে এত কষ্ট করে তোমাকে সব খবর দিলাম তবুও মেঘ কিভাবে বেঁচে গেল। তোমার বন্দুকে কি একটাই গুলি ছিল। পুরো ছয়টা দিয়ে ওকে ঝাজড়া করে দিতে পারলে না।
“আরে সেখানে তো ঐ ছেলেটিও ছিল তাই একটাই গুলি করতে পেরেছি। ”
“ওকেও মেরে দিতে পারতে এতো সুনশান জায়গায় কেউ টের পেত না।”
“তোমাকে কে বলেছে ওরা একা ছিল ওখানে আরো কয়েকটা বাচ্চা ছিল ওদের মধ্যে একজন আমাকে দেখে ফেলেছিল তাই তো তাড়াতাড়ি সরে পরতে হলো।”
“কি বলছো তোমাকে দেখে ফেলেছে?”
“না তেমন ভাবে দেখতে পায় নি বোধহয়।”
“আচ্ছা যেভাবে গা ঢাকা দিয়ে আছো সেভাবেই থাকো। নাহলে এতদিন পার পেয়ে গেলেও এবার পার পাবে না। কারন আয়মান চৌধুরীর ধূসর এরা কেউ তোমাকে ছাড়বে না।”
“সেটা দেখা যাবে ওরা আমায় ছাড়ে, না আমি ওদের ছাড়ি।’
“সাবধানে থেকো আর হ্যা আমাকে এই কদিন কোন ভাবেই কল দেবে না। শুধু নতুন প্ল্যান করলে মেসেজ এ জানিয়ে দেবে।”
“ঠিক আছে!”
এ পাশের লোকটা রাখতেই অপর পাশের লোকটা বলে উঠলো,,
“মেঘ তোর কই মাছের জান নাকি তোর বাবার মতো। যাই করি না কেন তোরা দুজন মরিসই না। কিন্তু এবার আর তোদের মারবো না। এবার সব কিছু কেড়ে নেব।”
______________
সকাল হতেই মেঘ দেখলো ধূসর ওর হাতের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছে তা দেখে মেঘ মুচকি হাসলো। সকাল হতেই আয়মান চৌধুরী চলে এসেছেন উনি বোধহয় সকাল হওয়ার অপেক্ষাই করছিলেন। ততক্ষনে ধূসরের ঘুম ভেঙে গেছে ও ফ্রেশ হয়ে এসে মেঘের পাশে বসলো ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো। আয়মান চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে মেঘের কেবিনে ঢুকলো। আয়মান চৌধুরীর মেয়েকে এ অবস্থায় দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। মেঘ তার আব্বার অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম আব্বা!”
ধূসর টুলটা ছেড়ে দিল। আয়মান চৌধুরী তাতে বসে বললেন,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম আম্মা এখন কেমন লাগছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন আব্বা?”
“আমার মেয়েকে দেখতে পেয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আম্মা।”
“কাল কি আপনি কেঁদেছিলেন আব্বা? আপনার চোখ মুখ এমন কেন লাগছে খেয়েছেন কিছু?
“হুম সকালে খেয়ে এসেছি। আর কাল কাঁদি নি একটুও আমি জানি তো আমার আম্মা আমার কান্না একদম সহ্য করতে পারে না।”
“একদম মিথ্যা কথা বলবেন না আব্বা। আমি জানি আপনার মেয়েকে এই অবস্থায় রেখে আপনার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। ধূসর আপনি প্লিজ আব্বা আর আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসুন।”
ধূসর বাবা মেয়েকে রেখে চলে গেল। ও যেতেই আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“আম্মা আপনি সবকিছু বুঝতে পারেন কিভাবে?”
“যেভাবে আপনি আমায় আম্মা ডাকেন। আচ্ছা আর কেউ আসবে না বাড়ি থেকে? মানে মা!
“আমি জানি না কাউকে বলে আসিনি সকাল হতেই চলে এসেছি রাতে ধূসর ফোন করে জানিয়ে ছিল আপনার জ্ঞান ফিরেছে। আর আপনার মা তার খবর জানি না কিছুই।
“আচ্ছা আব্বা আমি কি ওনার মেয়ে হতে পারি নি! যে আমার জন্য একটু সহানুভূতি ও জাগে না ওনার মনে?
“না আম্মা আপনি ঠিকই তার মেয়ে হতে পেরেছেন কিন্তু সে আপনার মা হয়ে উঠতে পারে নি। ”
“আচ্ছা আব্বা ও টপিক বাদ দেন। শুধু শুধু মন খারাপ করে লাভ নেই। আপনারা আছেন তো আমার জন্য।”
“হুম মোটকথা ধূসর ও তার পরিবার আপনার জন্য আছে। কাল তো আপনি দেখেননি আপনার জন্য সে ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদছিল। আপনাকে নিয়ে তার ভয় প্রকাশ করছিল। তার হাহাকারে ছিল আপনাকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত পথ চলার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। ধূসরের মতো কেউ আপনাকে এতটা ভালোবাসতে পারবে না।আপনি ভিশন লাকি আম্মা যে ধূসরের মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছেন।
কথাটা শুনে মেঘ মুচকি হাসলো তখন ধূসরের আগমন ঘটলো আর বলল,,,
“না আব্বা বরং আপনার মেয়ের থেকে আমি ভিশন লাকি যে ওর মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছি।”
“সত্যি কথা বলতে তোমরা দুজনেই লাকি এবার ঠিক আছে।”
“হুম আব্বা ঠিক আছে। নিন খেয়ে নিন।”
“তুমিও বসো!”
“আমি তো বসবোই নাহলে আপনার মেয়ে ধমকে বলবে এক কথা কয়বার বলতে হয় খেতে পারেন না।”
দুই জামাই শুশুর হাসতে লাগলো। ধূসরের কথা শুনে মেঘ ছোট ছোট চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে মেঘ বলল,,
“আমি বাড়ি যাবো কবে?”
“আপাতত চার দিন হসপিটালেই থাকতে হবে। তবে আজ আমি তোমাকে আমার হসপিটালে শিপ্ট করবো।”
“আমার হসপিটাল ভালো লাগে না আমি বাড়ি যাবো।”
“মোটেও না এবার তোমার কথা চলবে না। আমি যা বলবো তাই হবে।”
“ধূসর প্লিজ! আব্বা কিছু বলুন না।”
“আপনার সুস্থতাই আমার জন্য সবকিছু এখন তাই আমি কিছু বলছি না। বাসায় নিলে সমস্যা বেশি হবে। এখানে থাকলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
“আব্বা আপনিও!”
“হুম আমিও!
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন খেয়ে নেন।
ধূসর আর আয়মান চৌধুরী খেয়ে নিলেন ওনাদের খাওয়া শেষ হলে মেঘ বলল,,
“অনেক তো হলো আলো আঁধারের খেলা এবার মুখোমুখি হওয়ার সময় এসে গেছে আব্বা।”
“হুম অনেক ছাড় দেওয়া হয়ে গেছে এবার আর না। সকলেই সকলের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পাবে। সে আপন হোক বা পর।”
তখন ধূসর বলল,,
“আমি যদি ভুল না হই তাহলে এবারও জনাব আশরাফ হক এটা ঘটিয়েছে।”
“এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিয়ে বলতে পারছি না যে সেই কান্ড ঘটিয়েছে তবে যেই হোক না কেন খুব তাড়াতাড়ি তার পতন নিশ্চিত।”
~চলবে,,