#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
‘শুনো মেয়ে আজ যদি আমায় ফিরিয়ে দাও তাহলে আজ তোমার এই ব্যআরইস্টআর বান্ধবীর সামনে তোমায় তুলে নিয়ে বিয়ে করবো কেউ কিছু করতে পারবে না।”
জাবিন আর মেঘ অবাক চোখে ইশানকে দেখছে। একটু আগেই তো ভালোভাবে বলল আমায় বিয়ে করবেন। আর এখন হুট করে তুমি তে গিয়ে থ্রেট দিচ্ছে। জাবিন অবাক হয়েই বললো,,
“আপনি এখানে কেন?”
“তুমি যেখানে আমিও সেখানে।
“তারমানে আপনি আমায় সবসময় ফলো করেন।’
“ফলো করি না একটু খোঁজ খবর নিই এই আর কি!”
“আমি যে এখানে সেটা কে বলেছে?”
” দু’দিন আগে তোমার চাচার ব্যাপারে শুনলাম। সরি তোমায় জানাইনি। সেখানে গিয়েছিলাম সব ঘটনা শুনলাম শুনে খারাপ লাগলো। কিন্তু তুমি ফোন দিতে বারন করেছো নাম্বার ব্লক লিস্ট এ ফেলেছো তাই ফোন দিইনি। আজ নাকি হেয়ারিং তাই এখানে চলে এলাম।”
‘আপনার কি মনে হয় এখন আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হবো।”
“বুড়ি হচ্ছো সে খেয়াল আছে বিয়ে করবে কবে?”
“সে কথা আপনার না ভাবলেও চলবে এখন মেঘ চল।”
মেঘ এতক্ষন দু’জনের কথা শুনছিল। ও কিছু বলবে তার আগেই জাবিন মেঘের হাত ধরে চলে গেল। ইশান পেছন থেকে ডাকলো কিন্তু জাবিন শোনার মানুষ না। মেঘ একবার ইশানের দিকে তাকালো আবার সামনে তাকালো। গাড়িতে বসতেই জাবিন গাড়ি স্টার্ট দিল। আয়মান চৌধুরী মেঘের জন্য ফ্ল্যাটের সাথে একটা গাড়িও দিয়েছিল। ঐটাই ওরা চারজন ইউস করে। সবাই ড্রাইভ ও পারে। বসতেই মেঘ বলল,,
“এখন কি সমস্যা জাবিন এখন তো সেই সমস্যাও নেই। সবথেকে বড় কথা তুই ও তো ইশান ভাইয়াকে পছন্দ করিস।”
জাবিন কিছু বললো না একমনে ড্রাইভ করতে লাগলো। মেঘ বলল,,
“জাবিন আমি কিছু বলছি তোকে?”
“এই টপিক রাখ!”
“দ্যাখ জাবিন!”
“মেঘ প্লিজ আমার কিছু ভালো লাগছে না। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।”
“অনেক তো হলো এখন নিজের দিকে তাকা। ইশান ভাইয়া ভালো ছেলে তোকে সুখে রাখবে আর তোকে তো ভালোবাসে এটাই সবথেকে বড় কথা।”
“শোন মেঘ একটা পরিবার একজন কে ঘিরে থাকে না। সবাই কে নিয়েই পরিবার। ”
“কি হয়েছে জাবিন তোকে কি ইশান ভাইয়ার পরিবার থেকে কেউ কিছু বলেছে?”
জাবিন গাড়ি থামিয়ে দিল। আর বলল,,
“তোদের থেকে আমি কিছু লুকাই নি আজ ও লুকাবো না। মিস্টার ইশান কে ফেরানোর জন্য শুধু একটা কারন না । আরেকটা কারন ও আছে সেটা ওনার মা ইশান যখন বাড়িতে জানায় তখন উনি আমার সাথে দেখা করতে আসেন। আর এসে বলেন আমার মতো অনাথ মেয়েকে যে নাকি চাচাচাচির কাছে মানুষ হয়েছে তাকে উনি কিছুতেই ছেলের বউ করতে পারবেন না।তার একটাই ছেলে তাকে নিয়ে তার অনেক আশা কোন সম্রান্ত পরিবারে ওনার ছেলেকে বিয়ে করাবে। উনি বারবার বলে গেছে আমি যেন ইশানের কথায় রাজি না হই। আর তার কথা না বলি কারন উনি ছেলেকে কষ্ট দিতে চান না তাই তিনি মানা করবে না। আমি যেন রাজি না হই। আমাকে ভিলেন বানিয়ে উনি ভালো থাকবেন।সেদিন মনে হয়েছিল এতিম হওয়া যেন কোন অপরাধ। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। যেই মানুষ টা যে আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে সেই কলেজ থেকে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে তাকে কিভাবে ফেরাবো খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আমি অসহায়। ওনাকে যতবার আমি ফিরিয়ে দিই ততবার বুক চিরে আসে দীর্ঘশ্বাস দু চোখে নোনা পানির বর্ষন চলে। যদি আমরা বিয়েও করি ওনার মা কখনো খুশি হবে না। মা বাবার দোয়া ছাড়া কোন সন্তান কি কখনো সুখী হতে পারে।”
জাবিন কাঁদছে মেঘ অসহায় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ এতদিনে বুঝলো ব্যাপারটা কি । ওর কান্না থামার অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর জাবিন থামলো। তখন মেঘ বলল,,
“এখন বাসায় যাবি নাকি শোরুমে?”
“বাসায় যাই আজ ভালো লাগছে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তোকে বাসায় নামিয়ে আজ আমি শোরুমে যাই।
“ঠিক আছে !”
মেঘ ওকে নামিয়ে বাকি দুজনকে ফোন দিয়ে বলল,,
“গার্লস তাড়াতাড়ি শোরুমে আসেন। একটা মিশনে যেতে হবে তার প্ল্যান করতে হবে।”
“ওকে বস!”
মেঘ শোরুমে গেল সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। তারপর বসতেই হির আর লিয়ার দেখা পেল। ও ওদের সব জানালো নেক্সট কি করবে সেটাও বললো।
_________________
বিকেলের দিকে মেঘ বাড়ি ফিরলো। আয়মান চৌধুরী কে এই সময় বাড়িতে দেখে অবাক হলো। ও আয়মান চৌধুরী কে জিজ্ঞেস করল,,
“আব্বা কি হয়েছে এই সময় বাড়িতে?”
“আসলে মায়মুনা অসুস্থ হয়ে পরেছিল তাই এসেছি।”
“কি!!! মা অসুস্থ আপনি আমায় বলেন নি কেন? কি হয়েছে মায়ের?”
“আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনাকে হয়তো কেউ ফোন করেছে আমার মাথায় ছিল না।”
“আব্বা আপনিও না এ বাড়িতে আপনি আর আজান ছাড়া সেরকম কে আছে? যাই হোক মায়ের কি হয়েছে ?
“দূর্বলতা থেকে অজ্ঞান হয়ে গেছিল ঠিক মতো ওষুধ খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“ওহ আচ্ছা!”
মেঘ ওপরে গেল একবার মাকে দেখে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার মায়ের রুমে গেল। মায়মুনা চৌধুরী চোখ বন্ধ করে ছিলেন। মেঘ একটু একটু করে এগিয়ে গেল। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মেঘ চলে যেতে নিল। তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
“মেঘ!”
মেঘ আরো একবার নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো। সে ঘুরে বলল,,
“কিছু লাগবে মা?”
“একটু বসবে আমার কাছে?”
মেঘ বসলো তখন তিনি বলল,,
“মুনকে খুব মনে পরছে ও কি আসবে?”
“জানি না আমি মাত্র ফিরলাম বাড়িতে! আপনার এখন কেমন লাগছে?
“বেশ ভালো লাগছে! এতক্ষন খুব একা লাগছিল।”
মেঘের নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও বলল,,
“আমি কি থাকবো নাকি অন্য কাউকে পাঠিয়ে দেব।”
“পাঠিয়ে দিলে ভালো হয়!”
কথাটা শুনে মেঘের মুখ থেকে আপনাআপনি হাসি গায়েব হয়ে গেল। ও বলল,,
“যে মানুষটি কে প্রয়োজনের জন্য শুধু ব্যবহার করা হয়। সেই মানুষটাকে ব্যবহার করা না করাই ভালো। একটু কষ্ট হবে হয়তো। কিন্তু মানুষটা বারবার ভাঙবে না। কারন টা মানুষ টাকে ওপরে যতটা শক্ত দেখায় ভেতরটা ততটাই ক্ষতবিক্ষত।”
মেঘ চলে গেল। মায়মুনা চৌধুরী শুধু চেয়ে রইলেন। পাশেই তার প্রতিচ্ছবি একজন কে দেখলো। সে হেসে বলতে লাগলো,,
“মায়মুনা চৌধুরী মা হিসেবে খুবই ব্যর্থ একজন মানুষ। এই ব্যর্থতা সে কাকে দেখাবে। চোখের সামনে তার মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে, না পাচ্ছে না সে দিচ্ছে। আচ্ছা ও তো একটা কথা বলেছিল সব দেখা আর সব শোনা সত্যি হয় না। সেই সত্যির ও আলাদা গল্প থাকে। আচ্ছা কোনদিন যদি এটা দেখা যায় যার জন্য মেঘকে কষ্ট দিচ্ছো সেটা মেঘ করেই নি। সেদিন কি করবে মায়মুনা চৌধুরী কি করে মুখ দেখাবে তুমি।”
মায়মুনা চৌধুরী কানে হাত দিলেন। উনি এগুলো শুনতে চান না। তখনি আয়মান চৌধুরী ভেতরে আসলেন। মায়মুনা চৌধুরী নিজেকে স্বাভাবিক করলেন।
___________________
মেঘ পরের দিন সকালে শোরুমে গেল। এটাই তার জীবনের প্রথম পেশা ছিল। যেদিন কোর্টে কোন কাজ না থাকে সেদিন সে শোরুমে আসে। কালকের পর মেঘ আর ওর মায়ের সাথে দেখা করেনি। রাতেও নিজের রুমে খেয়ে নিয়েছে সকালেও কোনরকমে খেয়ে শোরুমে চলে গিয়েছে। হুট করেই টিভিতে একটা খবর দেখতে পেল,,
“ব্রেকিং নিউজ,,
চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর বিশিষ্ট আয়মান চৌধুরীর একটি গোডাউন থেকে মাল চুরি হয়েছে। আজকেই বিদেশে মালগুলো এক্সপোর্ট হওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে এক তৃতীয়াংশ মাল চুরি হয়ে গেছে। সকালেই শ্রমিকরা এই খবরটা জানিয়েছে। ঘটনাটা কাল রাতে ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করছে দেখা যাক বিষয়টা কতদূর কিন্তু এদিকে চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর সকল ইমপ্লোয়িরা বিক্ষোভ করছে কারন আয়মান চৌধুরী দুই মাস যাবত তাদের কোন বেতন দিচ্ছেন না। শ্রমিকরা বলছেন বেতন যাতে এখন না দিতে হয় এই জন্য ইচ্ছে করে আয়মান চৌধুরী এঘটনা ঘটিয়েছে। এখন কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা সেটা পুলিশ তদন্ত করছে পুলিশ শিঘ্রই কিছু জানাতে পারবেন বলে আশা করছে সবাই।”
খবরটা দেখতে পেতেই মেঘ ছুটল আয়মান চৌধুরীর কাছে। মেঘ ফোন করে জেনে নিল কোথায় আছে আয়মান চৌধুরী। তিনি অফিসে আছেন সকাল বেলা খবর শুনেই শাফিয়ান চৌধুরীকে নিয়ে অফিসে এসেছে জিয়ানকে আজ সাথে আনেনি। খবর পেয়ে ধূসর আর এহসান খান ও এসেছেন অফিসে। মেঘ গাড়ি থেকে নামতেই দেখল অফিসের সামনে ভীর সে কোন রকমে অফিসে ঢুকলো। ও যেতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেল ও ওনাদের রেখে আয়মান চৌধুরীর কাছে গেল। আয়মান চৌধুরী আর শাফিয়ান চৌধুরী অসহায় হয়ে বসে আছেন। এহসান চৌধুরী আয়মান চৌধুরী কে শান্তনা দিচ্ছে। মেঘ দৌড়ে আয়মান চৌধুরীর কেবিনে ঢুকলো সবাই একপ্রকার চমকে উঠলো। মেঘ সোজা আয়মান চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাড়ালো মেয়ের সামনে তিনি বোধহয় আরও অসহায় বোধ করলেন। মেঘ উনার হাত ধরলো তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“আম্মা এসব কি করে হলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে এই বিষয়টার কথা আমি ভাবছি না ভাবছি আমার ইমপ্লোয়িদের কথা এর আগেও আমাদের কম্পানিতে এরকম চড়াই উৎরাই এসেছে। আমরা সকলে একসাথে পেরিয়েছি । আমাদের মালিক শ্রমিকের সম্পর্ক তো ভালো ছিল। তাহলে আজ কেন তারা আমার হাত ছেড়ে দিল আমার বিরুদ্ধে গেল।”
মেঘ ওনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওনার হাত ধরে বলল,,
“আব্বা চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।মনে রাখবেন,,,আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক।
-সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৭৩
তখন ধূসর বলল,,
“হ্যা আব্বা চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।যিনি মুসিবত দিয়েছেন তিনিই সাহায্য করবেন।”
তখন এক ইমপ্লোয়ি দৌড়ে কেবিনে এসে বলল,,
“স্যার বাইরে সবাই ভাঙচুর শুরু করে দিয়েছে।”
তখন মেঘ বলল,,
“আপনি সকল ইমপ্লোয়িদের হল রুমে আসতে বলুন আমি বা আব্বা সবার সাথে কথা বলব। এরকম টা বাড়তে থাকলে সমস্যাও বলবে ঠান্ডা মাথায় তাদের বোঝাতে হবে আমাদের ব্যাপারটা।”
“ওকে ম্যাম” বলে লোকটা চলে গেল। তখন শাফিয়ান চৌধুরী বলল,,
“মেঘ তুমি কি করবে আর তাদের বলবেই বা কি। তুমি বিজনেসের কি বুঝো। এরকম টা প্রায় কম্পানিতেই হয়ে থাকে।”
“প্রায় কম্পানিতে হলেও আমাদের কম্পানিতে এরকম টা প্রথম হলো। এর আগে অনেক সময় এসেছে ইমপ্লোয়িদের দুই মাস বা তার বেশি সময় পরে বেতন দেওয়া হয়েছে কই তারা তো এর আগে বিক্ষোভ করেনি। এই বার করেছে নিশ্চয়ই কারন আছে। আপনার সমস্যা হলে আপনি বাড়ি চলে যান এদিকটা আমরা সামলে নেব।”
এ কথা শুনে শাফিয়ান চৌধুরী রেগে ওখান থেকে চলে গেল দুদিনের মেয়ে তাকে বিজনেস শেখাচ্ছে। মেঘ কিছু বলবে তার আগে আয়মান চৌধুরীর ফোনে একটা কল এলো তিনি ধরবেন কি ধরবেন না বলে ফোন ধরলো আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। তিনি কানে নিয়ে বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম কে?”
“সালাম শুনে ভালো লাগলো কিন্তু উত্তর দিতে ইচ্ছে হলো না। কারন আমি তোর শান্তি চাই না অশান্তি চাই।”
“আশরাফ!”
নামটা শুনেই মেঘ তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে লাউডস্পিকারে আর রেকডিং অন করলো। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি করলো সবাই অবাক চোখে দেখে গেল। ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,,
“হ্যা আমিই! ইস! নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তাই না। তো কেমন লাগছে ,তোর ওই অসহায় মুখটা যদি দেখতে পেতাম তাহলে বেশি শান্তি লাগতো।”
“তারমানে তুই-ই সবকিছু করেছিস?”
“তোর মনে এখনো সন্দেহ হচ্ছে নাকি?”
“এসব করে কি পাচ্ছিস তুই!”
“শান্তি বহুত শান্তি! আর তোকে শেষ করার প্রথম পদক্ষেপ।আসলে কি বলতো আজ তোর মাল বিদেশে পৌঁছে যেত। সেখান থেকে তোকে টাকা দিতে তুই ইমপ্লোয়িদের দিয়ে দিতি। সব কতো সহজ হতো। কিন্তু তোর জীবনে সব এই সহজে হওয়া আমার পছন্দ নয় তাই। আসলে কাল রাতে লোক দিয়ে আমি তোর মালগুলো সরিয়েছি। তারপর নিজের লোকদের দারা তোর ইমপ্লোয়িদের মধ্যে ছড়িয়েছি যে তুই ইচ্ছে করে এসব করেছিস তাদের কে বেতন না দেওয়ার বাহানা আরকি। আজ তোর ডিল ক্যানসেল হবে। তুই যে লোন নিয়েছিস সেটাও শোধ করতে পারবি না। তুই পথে বসবি সেটাই তো আমি চাই। তোকে দেখবো আর চোখ জুড়াবো।”
অবশেষে মেঘ এবার মুখ খুলল আর বলল,,
“আশরাফ কাকু আপনাকে অনেকদিন হলো দেখি না আপনার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে।”
মেঘের কথা শুনে আশরাফ চমকালো তিনি মেঘ কে চেনে তাই বলল,,
“আরে মেঘ যে তা তুমি কি তোমার আব্বার পাশেই নাকি?”
“আমি তো সবসময় আব্বার আশেপাশেই থাকি এ আর নতুন কি?”
“ওহ আচ্ছা! খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হবে মেঘ।”
“মাল গুলো কোথায় কাকু?”
“ওগুলো আর পাবে না । আমি সব নদীতে ফেলে দিয়েছি। তোমরা চাইলেও সেগুলো পাবে না।
“আশরাফ কাকু সবকিছুর জন্য শুকরিয়া। আপনাকে আমার এতো ভালো লাগে যে কি বলবো কাজ শেষ হওয়ার আগেই সব আপনি আমাদের জানিয়ে দেন। এতে আমাদের কাজটা অনেক সহজ হয়। আমরা এতক্ষন চিন্তা করছিলাম কে করলো কিভাবে করলো আপনি আমাদের চিন্তামুক্ত করলেন এই জন্য শুকরিয়া। আর হ্যা নতুন করে আবার পালানোর জন্য রেডি হন। আল্লাহ হাফেজ নিজের খেয়াল রাখবেন।”
মেঘ ফোনটা কেটে দিলো। ওপাশে আশরাফ থম মেরে বসে রইলেন। উনি কি এখন সব জানিয়ে ভুল করলেন। কিন্তু উনি তো আয়মান চৌধুরীর মুখে ভয় দেখতে চেয়েছিলেন রাতে তার নাম শুনলেই কেঁপে উঠে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে উল্টো তিনি ভুল করে ফেলেছেন। তিনি নিজের ওপরই নিজে রেগে ঘরে থাকা সবকিছু ভাঙচুর করতে লাগলো। এদিকে মেঘ ফোন রাখতেই ধূসর বলল,,
“এই হলো ব্যারিস্টারের মাথা। আমাদের তো এরকম কিছু মাথায়ই আসতো না।”
“মেঘই তো আমার ভরসা ধূসর!”
আয়মান চৌধুরীর কথায় মেঘ হেসে বলল,,
“আমি আগেই আশংকা করছিলাম ওনাকে কারন সবকিছু এত কোয়েন্সিডেন্ট কি করে হতে পারে।”
তখন এহসান খান বলল,,
“ওর কি ক্ষতি করেছি আমরা একদম পেছনেই পরে গেছে। ওর জন্য তো কতগুলো বছর নষ্ট হলো আমাদের। তবুও কেন এখনো,,
‘বাবা সেটা তো আশরাফ নামক মানুষটাই বলতে পারবে আপনাদের দুজনের সাথে তার কিসের শত্রুতা। তবে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না তখন নাহয় ওনার মুখ থেকেই শোনা যাবে। আব্বা এখন হল রুমে যান এখন আমাকে দরকার নেই আপনিই বুঝিয়ে বলুন। তবে আমি আপনার পেছনেই আছি।
ওরা চারজন হল রুমে চলে গেল। শাফিয়ান চৌধুরী ওখানেই ছিল। আয়মান চৌধুরী হল রুমে যেতেই সবাই চিৎকার শুরু করল তা দেখে আয়মান চৌধুরী মাইক হাতে নিয়ে বলল,,
“আপনাদের কে আমি কিছু বলতে চাই আপনারা শান্ত হন আমার কথাটা শুনুন।”
কেউ বোধহয় কোন কথাই শুনতে পেল না। তা দেখে ধূসর মাইক নিয়ে বলল,,
“আপনারা শান্ত হোন উনি থাকবেন না চলে যাবেন এভাবে চিৎকার করছেন কেন উনার কথা শুনুন চিৎকার করলেই কি আপনারা টাকা পাবেন। শান্ত হোন আর উনার কথা শুনুন।”
ধূসরের চিৎকার এতটাই জোরে ছিল যে সকলে চুপ হলো। ধূসর অনেক রেগে গেছে মেঘ ওর হাত ধরে রাখলো।আয়মান চৌধুরী মাইক নিয়ে বলল,,
“আপনাদের কে আমি যদি ধোঁকা দিতে চাইতাম তাহলে আমি এখানে আসতাম না। আপনাদের কেন এরকম মনে হলো আমি আপনাদের ধোঁকা দেব আপনাদের টাকা না দেওয়ার বাহানা করবো। এর আগে আমাদের কম্পানিতে অনেক রকম চড়াই উৎরাই এসেছে আমরা একসাথে সব পেরিয়ে এসেছি। সবকিছু এতবছর ধরে ঠিক চলছিল তাহলে হঠাৎ করে একরম চিন্তা আসার কারন কি?”
সবাই চুপ কারন উনি যা বলেছে সব সত্যি বলছে। উনি আবার বলতে লাগলো,,
“আমি জানি আপনাদের মাঝে আমার ব্যাপারে এমনি এমনি এরূপ মনোভাব উদয় হয় নি কেউ ইচ্ছে করে করেছে । আমি যে এরকম কিছু করি নি তার প্রমান দিচ্ছি,,
আয়মান চৌধুরী সবাইকে একটু আগের রেকর্ডটি শোনালেন সব কিছু শোনার পর সকলে অবাক ওখানে পুলিশ ও ছিল। ধূসর এগিয়ে গিয়ে আশরাফ এর কথা জানালো তারা আশরাফ কে ধরা জন্য ওপরে খবর পাঠালেন। আয়মান চৌধুরী আবার বলতে লাগলো,,
“এখন সবকিছু এমন ভাবে ঘটেছে আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না। কিন্তু আমার এখন আপনাদের কে প্রয়োজন। এই মুহূর্তে আপনাদের বেতন দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। ”
তখন একজন বলে উঠল,,
“কয়েকদিন আগে এতো জাঁকজমক ভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারলেন আর এখন বলছেন টাকা নেই। তখন কোথা থেকে পেয়েছেন টাকা।”
“আমার মেয়ের বিয়ের জন্য আগে থেকেই আমি টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু তখনতো জানতাম না আমাদের এরকম পরিস্থিতিতে পরতে হবে। তাহলে নিশ্চয়ই তেমনটা করতাম না। আজকে মাল ডেলিভারি হলে তারা সব টাকা আমাদের দিয়ে দেবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু তারা পুরো মাল ডেলিভারি না হলে টাকা দেবে না।এই ডিলের জন্য একটা লোন নেওয়া হয়েছে। এই ডিলের টাকা পেলে লোন এবং আপনাদের বেতন পরিশোধ করার কথা ছিল। এই ডিলটা কম্পিলিট না করলে আমাদের ডিলটা ক্যানসেল হয়ে যাবে। লোন পরিশোধ না করলে আমরা পথে এসে পরবো। ডিলটার যতটুকু বাকি আছে সেটুকুর জন্য আমি বিদেশের এই ডিলের মালিকের সাথে কথা বলেছি তিনি আমাকে সাতদিন সময় দিয়েছেন। আপনাদের সাহায্য একান্ত প্রয়োজন।”
তখন একজন বলল,,
“টাকা না পেলে আমরা আপনাদের কোন কাজ করবো না।”
‘আমি তো সব পরিস্থিতিই আপনাদের বললাম দয়া করে সাহায্য করুন!”
কয়েকজন সাহায্য করতে চাইলেও বেশিরভাগ লোক বলল টাকা না দিলে কাজ করবে না। তারা চলে গেল। আয়মান চৌধুরী ভেঙে পরলেন। তারা সবাই বাড়ি চলে গেল। আয়মান চৌধুরীর খবর শুনে সকলে চৌধুরী বাড়িতে এসেছে। আশা চৌধুরী আয়না চৌধুরী মুনের শুশুরবাড়ি থেকে সবাই উপস্থিত। সকলে শান্তনা দিচ্ছে কেউ টাকার কথা বলছে না। এহসান খান পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে। বাকিরা সবাই চুপ হয়তো টাকা দিতে পারবে না বলে নাহলে পারলেও দেবে না বলে। হুট করে জিয়ান বলে উঠলো,,,
‘বিশ লাখ টাকা কি মুখের কথা নাকি? এখন এতোগুলা টাকা কিভাবে পাবো। এখন সবাইকে টাকা না দিলে কেউ কাজ ও করবে না। কাজ না করলে সাত দিনের মধ্যে সব কি করে হবে । ডিল ক্যানসেল হয়ে গেলে লোন পরিশোধ করতে পারবো না। আর লোন পরিশোধ না করলে আমাদের পথে বসতে বেশি সময় লাগবে না।”
নানানজনে নানা কথা বলতে লাগলো। মেঘ স্থির হয়ে আব্বার হাত ধরে বসে আছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,
‘আম্মা আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি!”
মেঘ মাথা নাড়লো , তিনি মাথা রাখলেন। সকলে অবাক তিনি মেঘকে বলতে লাগলো,,
“আম্মা আমার এখন আমার টাকাগুলো চাই তারসাথে আরো বেশি টাকা চাই। আপনি ব্যবস্থা করুন। আপনি হলেন এই স্বার্থপর দুনিয়ার নিঃস্বার্থ বিশ্বস্ত বন্ধু।”
~চলবে,,
#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে মেঘের মুখে হাসি ফুটে উঠল মেঘ বলল,,
“আমি তো এই কথা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আব্বা। আপনি চিন্তা করবেন না আব্বা এক ঘন্টার মধ্যে আপনার টাকা পৌঁছে যাবে।”
“আমি আপনাকে বলেছিলাম না যখন আমার প্রয়োজন হবে তখন আমি চেয়ে নিব। এখন আমার টাকাগুলো সত্যি প্রয়োজন আম্মা। ভাগ্যিস তখন এই কথাটা বলে আপনার কাছে গচ্ছিত রেখেছিলাম নাহলে আজ কি হতো আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন।এই জিনিসটা হয়তো আমি অফিস থেকেই আপনাকে বলতে পারতাম কিন্তু আমি দেখলাম কে আমার বিপদের বন্ধু। জীবনে খারাপ সময়টাও আসা জরুরি মানুষ চেনার জন্য। এই যে সকলে আমায় এত শান্তনা দিল অথচ কেউ টাকার কথা বললো না এহসান ছাড়া। মায়মুনা নিজের গয়না বিক্রি করে টাকা দিতে বলল অথচ শাফিয়ান বললো না ভাইয়া আমার একাউন্টে যতটাকা আছে তুলে নাও। জিয়ান একটু আগে কতোকিছু বললো অথচ বললো না কাকাই চিন্তা করো না আমার একাউন্টের সবটাকা তুলবো বন্ধুদের কাছে থেকে ধার করবো যতোটা পারি। মুন একজন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বড় আপা দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও দুলাভাই এর জন্য কিছু বলছে না চুপ করে আছে আর আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। আর আয়না সে তো অন্য লেভেলের সে তো দেবেই না উল্টো আপনার ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলছিল। কিন্তু আপনি আমার হাত ধরে কতক্ষণ যাবৎ বসে আছেন কখন আমি বলবো আপনি টাকা তোলার ব্যবস্থা করুন। মানুষ চেনার মোক্ষম সময় বিপদের সময় এই জন্যই আমাদের সকলের খারাপ সময়ের জন্য পারলে কিছু টাকা জমা রাখা উচিৎ। কারন এই স্বার্থপর দুনিয়ায় টাকা ছাড়া কেউ কারো না আম্মা। খারাপ সময়ে কিছু সংখ্যক লোক আপনাকে শান্তনা দেবে কিন্তু তারা সাহায্য করতে পারলেও সাহায্য করবে না। এই যে আমার ইমপ্লোয়িরা এত বছর আমার সাথে কাজ করেছে অথচ এই খারাপ সময়টায়ই তারা আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে সাতটা দিন চেয়েছিলাম আমাকে সাহায্য করতে বলেছিলাম কিন্তু কি হলো সবই টাকার খেলা। এই জন্যই তো আপনাকে আমি এত ভরসা করি এই স্বার্থপর দুনিয়ায় কেউ কারো না আম্মা। কিন্তু আপনি আমার এই স্বার্থপর দুনিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু।
“আব্বা এখন আপনি শান্ত হয়ে রেস্ট করুন আমি জাবিনকে বলে দিয়েছি মেসেজ করে ও টাকা নিয়ে আসবে।”
“আপনি আমার কাঁধে আর আমি আপনার কাঁধে মাথা রাখলে এতো সুখ সুখ কেন লাগে আম্মা।”
“কারন আপনি আমায় ভালোবাসেন এই জন্য!”
“শুধু এই জন্য না আম্মা আরেকটা কারন আছে সেটা হলো আমরা একেঅপরের কাঁধে নিজেকে সবথেকে নিরাপদ মনে করি আর একেঅপরের প্রতি সর্বাধিক ভরসা করি।”
মেঘের হাসি আরো প্রশস্ত হলো এখন আয়মান চৌধুরীও হাসছেন। ওরা এতটাই আস্তে আস্তে কথা বলছে যে কেউ কোন কথা শুনতেই পেল না। হুট মায়মুনা চৌধুরী বললো,
“তোমরা দুজন এই অবস্থায় ও হাসছো?”
তখন আয়মান চৌধুরী চোখ খুলে বললেন,,
“টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে এখন তোমরা সবাই রিল্যাক্স হও।”
“কি! টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে কখন কে দিল?”
“সেটা পরে দেখতে পাবে। আজান!!”
“জি বাবা?”
“যাও মেঘের রুমে থেকে মেঘের ইয়ারফোন টা নিয়ে এসো। আর হ্যা যাদের কাজ আছে তারা এখন বাড়ি ফেরত যেতে পারে। আমার সবাইকে দেখা শেষ।”
“কিন্তু টাকা টা দিচ্ছে কে সেটা তো বলবে?”
“যখন টাকা আসবে তখন বলবো। আজান তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও। আর হ্যা এখন কেউ কোন কথা বলবে না আমি আমার আম্মার কাঁধে একটু রেস্ট নিতে চাই।
আজান দৌড়ে ওপরে গেল। ইয়ারফোন নিয়ে ফেরত আসলো। আয়মান চৌধুরী মেঘের ফোন নিয়ে কিছু একটা করতে লাগলেন তিনি ইয়ারফোনের একটা নিজের কানে আরেকটা মেঘের কানে গুঁজে দিয়ে বলল,,
“আমরা সময়টা একটু সেলিব্রেট করা যাক উইথ সূরা রহমান।”
মেঘ হাসলো তার আব্বার বাচ্চামো দেখে। আয়মান চৌধুরী চোখ বুজে মেঘের কাঁধে মাথা রেখে আছেন। মূলত কারো কথা শুনতে সে রাজি নয়। মেঘ ফোনে কিছু একটা করতে লাগলো। বাকি সবাই বাবা মেয়েকে দেখতে লাগলো। ধূসর নিজেও কিছুটা হতভম্ব এরকম অবস্থায় ঠিক কি করা উচিৎ ও বুঝতে পারছে না। কেউ কোন কথা বললো নিজেদের কাজ করলো নাহলে অপেক্ষা করতে লাগলো উত্তরের আশায়। প্রায় এক ঘন্টা পর জাবিনের কল এলো তখন ইয়ারফোনটা বাপমেয়ের কানেই ছিল মেঘ ফোন ধরে সালাম দিল। আয়মান চৌধুরী বললেন,,
” মামনি ভেতরে আয়!”
এটা যেন সকলকে আরো অবাক করলো। ফোনেও একসাথে কথা বলে কেউ। জাবিন এই প্রথম এই বাড়িতে এলো। আয়মান চৌধুরী সোজা হয়ে বসলেন মেঘ উঠবে তখন জাবিন এলো ড্রয়িংরুমে একটা ব্যাগ নিয়ে জাবিন এসেই বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম ভালোবাবা! কেমন আছো?”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম!আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস আয় বোস।”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো! এই যে তোমাদের ব্যাগ আমি গেলাম কাজ আছে। তারওপর তোমাদের দুই বাপ মেয়ের চক্করে দুপুরের খাওয়া হয় নি খুদা লাগছে।”
মেঘ উঠে জাবিন কে একহাতে জরিয়ে ধরে বলল,,
“আহ হা এত রাগ করিস কেন চল তোকে আজ রেস্টুরেন্টে খাওয়াবো তোর ফ্রেবারিট আইটেম।”
“এখন প্লিজ মজা করিস না!”
“সত্যি দারা আমি দুই মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।”
মেঘ চলে গেল। আয়মান চৌধুরী জাবিনকে বসতে বলল তখন তিনি বলল,,
“আয় বোস না ও আসুক তারপর বের হবি না হয়।”
“তোমার মেয়ের কখন যে কি হয় তা বলা মুশকিল।”
তখন ধূসর বলল,,
‘তা জাবিন এই দুলাভাই কে কি চোখে পরছে না।”
“আরে ভাইয়া তেমন কিছু না কেমন আছেন আপনি?”
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”
“তা তুমি এখন এখানে?”
“আপনার বউয়ের দৌলতে। সে বলল এখনি টাকা নিয়ে আসতে তাই আসলাম।”
এটা যেন ড্রয়িংরুমে একটা বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো। মায়মুনা চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগে আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“তোমার সবার প্রশ্নের উত্তর পরে দিচ্ছি আগে মেঘ আর জাবিন যাক তারপর।”
তখন শিফা বলল,,
“আপনি নীল শোরুমের ম্যানেজার না?”
“জি আমিই সেই!”
“আপনার সাথে মেঘ আপুর কি সম্পর্ক না মানে সেদিন ও কিছু একটা করছিলেন একসাথে আপনারা।”
“হির আর লিয়াকে দেখেছেন নিশ্চয়ই আমি ওদের মতোই মেঘের বেস্টফ্রেন্ড।”
ততক্ষনে মেঘ চলে এলো একটা বোরকা হিজাব আর নিকাব পরে। এসেই বলল,,
‘হির আর লিয়াকে ফোন করে দিয়েছি ওরা আসবে এখন চল। আর আব্বা আপনি খাবার খেয়ে নিয়েন আসছি আর ধূসর সরি আজ সময় দিতে পারছি না। আজ রাতে আমি বাড়ি ফিরবো না আব্বা চিন্তা করবেন না। আজ চার বান্ধবী আড্ডা দেব। আর আপনি এদিকটা সামলে নিয়েন।
এটুকু বলে মেঘ আয়মান চৌধুরীর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,,
“কিছু অল্প গল্প দিয়ে ,,কিছু সত্য দিয়ে কিন্তু পুরোটা না তবে বেশিরভাগ টা যেন সত্যও থাকে। শুধু তার জন্য বাদ দিয়ে। !”
বলে দূরে এসে বলল,,
“আল্লাহ হাফেজ!”
বলেই মেঘ জাবিনকে নিয়ে চলে গেল। বাকি সবার মাথার ওপর দিয়ে গেল। তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
“মেঘ টাকা পেল কোথায়? ও তো কিছু করে না তাহলে এতোগুলা টাকা কোথায় পেল?”
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“আমি জানি তোমাদের এই বিষয়ে অনেক প্রশ্ন আছে আমি সবার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। মায়মুনা তুমি এর আগে আমায় বলেছিলে না মেঘ আমার থেকে টাকা নেয় না কেন? এর উত্তর হলো মেঘ অনার্স এ উঠার পর থেকে নিজের পড়াশোনা, না শুধু পড়াশোনা না ওর যাবতীয় খরচ ও নিজেই বহন করে। অনার্স এ ভর্তি হওয়ার পর ওর ইচ্ছে হচ্ছিল নিজে কিছু করার এ বিষয়ে আমার সাথে কথা বলে পরে ওর মাথায় একটা আইডিয়া আসে লেডিস শোরুম দেবে। আমিও সম্মতি দিই তখন ও আমার থেকে দশ লাখ টাকা ধার নিয়ে ওর শোরুম চালু করে। তখন আমার টাকার সমস্যা ছিল না তাই দিয়ে দিই। অনার্সে উঠে ও আলাদা ফ্ল্যাটে এই জন্যই থাকতো কারন ভার্সিটি শেষ করে ও শোরুমে যেতো। এরপর থেকে নিজের সততা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে নিজের প্ররিশ্রমে নিজের শোরুম বড় করেছে এবং নাম করেছে। দেখা গেলে সেও একজন বড় বিজনেস ওমেন। অবশ্য টাকাটা আমাকে আরো আগেই দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই বলেছি যখন দরকার হবে তখন চেয়ে নেব। ভাগ্যিস তাকে ঐ কথা বলেছিলাম নাহলে কি যে হতো আল্লাহ ভালো জানেন। আমার ভাগের টাকা সবসময় ও আলাদা করে রাখতো, না জানি কখন আমার টাকা লাগে। ওর শোরুম থেকে যতটাকা লাভ হতো ও ওর লকারে বা ব্যাংকে জমা রাখতো। আজ তো ও আমার ধার পরিশোধ করলোই সাথে আরো দশ লাখ টাকা আমাকে বেশি দিল হয়তো ধার হিসেবে নয়তো এমনিই। আর হ্যা মুনের বিয়ের শপিং করার জন্য যে নীল নামের শোরুমে গিয়েছিলে সেটাই মেঘের শোরুম আর জাবিন ওর বেস্ট ফ্রেন্ড মেঘের অবর্তমানে জাবিন ওটা দেখাশোনা করে।”
এগুলো শুনে সবাই যেন অবাকের চরম শিখরে পৌঁছে গেল। ধূসর এই বিষয়ে জানতো না তাই বেশ অবাক হলো। তবে ওর যে শোরুম আছে সেটা বোঝার উপায় নেই। যাক তার বউ লাখে এক তাই তো এরকম। নিজের বউয়ের ওপর গর্ববোধ হচ্ছে এখন। আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“এহসান তোর টাকার দরকার পরবে না। মেঘ পুরো টাকাটাই দিয়েছে। আর জিয়ান সবসময় এতো কথা না বলে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হয় ।শাফিয়ান ইমপ্লোয়িদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করো আজ রাতের মধ্যেই তারা যেন তাদের বেতন হাতে পায় আর কাল থেকে কাজ শুরু করে। সব থেকে বড় কথা সবাইকে ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য।আমি এখন ফ্রেশ হতে ওপরে যাচ্ছি মায়মুনা খাবার বাড়ো খেয়ে অফিসে যাবো। আর ধূসর তোমরা খেয়ে দেয়ে তারপর যাবে ফ্রেশ হয়ে আসো আমরা একসাথে খাবো।”
আয়মান চৌধুরী ওপরে চলে গেলেন। বাকি সবাই যে যার রুমে গেল ফ্রেশ হতে গেল। মেঘের ব্যাপারেও চিন্তা করতে লাগলো।
________________
“কিরে তুই এই সময় বেরিয়ে এলি কেন?”
“এখন ওখানে থাকলে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো আব্বা সামলে নেবে।”
‘তুই একটা লোকই একটা শোরুম চালাস তাও কেউ জানেনা এমন কি তুই একজন নামকরা ব্যারিস্টার সেটাও কেউ জানে না। হুয়াই ম্যান হুয়াই।”
“আমার ভালো লাগে তাই। যাক আজ নিজেকে ফ্রি লাগছে কতোদিন ধরে আব্বার আমানত রাখছিলাম। আমানতের বোঝা মাথায় নিয়ে চলাচল করা অনেক টাফ।”
“হুম লিয়া হির আর নীলকে কোথায় আসতে বলেছিস।”
‘আমাদের শোরুমের পাশে যে রেস্টুরেন্ট ওটায় আজ সারা বিকেল আমরা পাঁচজন ঘুরবো। অনেকদিন হলো নীলকে নিয়ে কোথাও বের হওয়া হয় না। নীল কয়েকদিন ধরে বলছিলোও তাই ভাবলাম আজকেই যাই এমনিতেও বাড়িতে থাকলে আজকের বিষয়টা নিয়ে বেশি আলোচনা হতো।”
“ধূসর ভাইয়া তো ছিল?”
“ওনার সাথে পুরশুদিন ডেট ফিক্সড হয়েছে আমরা ঘুরবো সেদিন।”
“বাবাহ ধূসর ভাইয়ার নিষ্ঠুর মেয়েটা সেদিন কি কোন স্পেশাল কিছু করবে নাকি?”
“সেটা সিক্রেট বলা যাবে না।”
____________________
খাবার টেবিলে ধূসরের মাথার মধ্যে একটা কথা চলছে জিজ্ঞেস করবে কি করবে না বলে অনেকক্ষন যাবৎ নিজের সাথে যুদ্ধ করছে । আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকাচ্ছে আবার নামিয়ে ফেলছে আয়মান চৌধুরী ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“ধূসর কিছু বলবে?”
“আসলে আব্বা একটা কথা মাথায় অনেকক্ষন যাবৎ ঘুরছে না মানে মেঘের শোরুমের নাম নীল কেন? আমার জানা মতে আমাদের পরিচিতদের মধ্যে এই নামের কেউ নেই। তাহলে?”
“আসলে তখন একটা নামের দরকার ছিল তাই দিয়েছে। যখন ও নাম খুঁজছিল তখন ওর কাছে নীল নামের একটা ছোট পুতুল ছিল।যার নাম ও নিজে দিয়েছিল তাই ওটায় ঠিক করে নাম তাছাড়া কোন কারন নেই।”
“ওহ আচ্ছা!”
আয়মান চৌধুরী সকলকে সত্যি ঠিকই বললেন কিন্তু কেউ ধরতেই পারলো না। ধূসর ও এটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালো না। ওরা খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পরলো নিজেদের কাজে।
এদিকে মেঘ আর জাবিন বসে আছে রেস্টুরেন্টে। কিন্তু আর তিনজনের দেখা নেই । অতঃপর তিনজনের দেখা পাওয়া গেল হির আর লিয়া দু’জনেই কালো বোরকা কালো হিজাব নিকাব পরেছে আর নীল কালো রঙের শার্ট কালো প্যান্ট মুখে মাস্ক আর কালো ক্যাপ পরেছে। এটা শুধু আজ নয় যেদিন ই ওরা পাঁচজন একসাথে বের হয় সেদিন এই একইরকম দেখা যায়। মেঘের সাথে বের হলেই নীল ক্যাপ আর মাস্ক পরে। ওরা আলাদা কেবিনের মতো ভেতরে বসেছিল ওরা যেতেই নীল মেঘের কোলে উঠে বলল,,
“আম্মু কতদিন পর আমরা একসাথে বের হলাম। তুমি জানো আমি কতো””””’ কি যেন ফিল করছিলাম হিরু মামনি বলে কি যেন?”
নীলের কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,
“বোর ফিল হবে হয়তো!”
“হ্যা ওটাই হিরু মামনির যখন কিছু ভালো লাগে না তখন বলে কি বোর ফিল করছি।”
“আহ হা নীল কতবার বলবো ওভাবে হির কে বলবে না। আর হির তুই কিছু বলিস না কেন?’
তখন হির বলল,,
“আমার তো ভালোই লাগে তাই বলি না।”
“এই তোদের জন্যই তো ছেলেটা দিন দিন দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে।”
“আহ আম্মু আমি দুষ্টু না আমি মিস্টি বাচ্চা।”
তখন জাবিন বলল,,
“হইছো ভাই আমার খিদা লাগছে তোরা পরছোস সারা পল্টনের কথা নিয়া।”
“তোকে না গাড়ি থেকে চকলেট খাওয়ালাম।”
“চকলেট খেলে কি পেট ভরে। আর খাওন আসে না কেন সেই কখন না অর্ডার দিলি!”
তখন লিয়া বলল,,
“আফামনি আপনারে তো দেখতে দেখা যায় পাটকাঠি কিন্তু আপনি এতো পেটুক কেন?’
“একদম আমাকে পেটুক কবি না নাইলে এহনি লাত্থি মাইরা ফালাই দিমু নিচে।”
‘বহুত দিন পর আবার গ্ৰামের ভাষা বললি ভাল্লাগলো।”
তখন মেঘ বলল,,
“আরে তোরা থাম এটা বাড়ি না এটা রেস্টুরেন্ট। আর জাবিন ঐ যে তোর স্পেশাল কাচ্চি এসে গেছে।”
সবাই চুপ হলো। খাবার আসার পর সকলে খাওয়া শুরু করলো। মেঘ নীলকে খাওয়াচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে ওরা একটা পার্কে গেল। সেখানের পরিবেশটা সুন্দর। নীল মেঘের হাত ধরে হাঁটছে। হুট করে নীল বলল,,
“আম্মু আইসক্রিম খাবো!”
“এখন না একটু আগেই খাবার খেলে এখন আইসক্রিম খাওয়া যাবে না। তারওপর তোমার না সমস্যা আছে গলায় ডক্টর এই সাতদিন আইসক্রিম খেতে নিষেধ করেছে ভুলে গেছো?
“না আমি খাবো!”
“জেদ করো না নীল!”
“আমি খাবো আম্মু, হিরু, লিয়ু ,জাবিন মামনি তোমরা কিছু বলো না ।”
তখন চারজনেই একসাথে বললো,,,
“এখন আইসক্রিম খাওয়া যাবে না।”
এটা শুনে নীল ধপ করে পার্কের ঘাসের মধ্যেই বসে পরলো। আর কিছু বললো না। ওরা চারজনই ওর চারদিকে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘের খুব হাসি পাচ্ছে। জাবিন বলল,,
“নীল উঠো এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে। আচ্ছা তোমাকে তো আমরা সবসময় আদর করি তুমি যা চাও সব দিই। কিন্তু এখন তো তোমার গলায় সমস্যা দুদিন আগেই ঠান্ডা লেগেছিল তাই না তাহলে। একদিন আইসক্রিম না খেলে কিছুই হবে না।”
“আমি খাবো আইসক্রিম!”
তখন মেঘ বলল,,
“তুমি উঠবে কি না বলো?”
“না আইসক্রিম না এনে দিলে উঠবো না।”
“ওকে বেশ !”
বলে মেঘ ও ঘাসের উপর বসে পরলো। ওর দেখা দেখে জাবিন লিয়া আর হির ও বসে পরলো। চারজনে বসে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। কারন ওকে মাঝখানে রেখে বসেছে চারজন। নীল অসহায় চোখে বলল,,
“তোমরা বসলে কেন?”
“আরে আমরা তো এখানে সবাই এসেছিলাম সময় কাটানোর জন্য তুমি বসে পরলে তাই আমরাও বসলাম। আর হ্যা তুমি আইসক্রিম পাবে না। আইসক্রিম খাওয়ার কথা ভুলে যাও।”
“তোমরা এমন কেন?”
“কেমন?”
“ছোট বাচ্চার ওপর জুলুম করছো তোমরা তার ছোট একটা আবদার পুরন করতে পারছো না।”
“তোমার সব আবদার আমরা পূরন করি তো যেখানে তোমার ক্ষতি হয় সেটা আমরা কেন পূরন করবো। যখন তোমার গলা ব্যাথা হয় তখন তুমি কতটা কষ্ট পাও দেখো না তুমি!
“আমার জেদ মানবে না বলে তোমরাও বসে গেলে এখানে!”
“হুম বসলাম তো! সবসময় সব জেদ রাখতে হয় না বুঝলে নীলবাবু।’
“আচ্ছা আইসক্রিম খাবো না এখানে বলে লাভ ও হবে না। ঐ তো হাওয়ার মিঠাই ওটা খাবো। আমার তো হাওয়ার মিঠাই এতোগুলা খুব পছন্দের। এটা তো আগে দেখিই নি নাহলে আইসক্রিম এর কথা বলতাম না। হুদাই কাহিনী হলো।”
নীলের কথা বলার ভঙ্গি দেখে সকলে হাসলো। মেঘ নীল কে টাকা দিল নীল দৌড়ে হাওয়ার মিঠাই কিনতে গেল। ও যেতেই মেঘ বলল,,,
“নীল একদম নীলির মতো হয়েছে যখন নীলির কোন আবদার থাকতো আমাকে বলতো আমি যদি না মানতাম তাহলে এভাবেই বসে পরতো মাটিতে। খুব হাসি পেতো জানিস।”
“হুম নীল যেন পুরাই নীলির কার্বন কপি।”
নীলির কথা ভেবে মেঘের একটু মন খারাপ হলো। হুট করেই মনে হলো ওর পাশে কেউ বসেছে তখন ও আস্তে আস্তে করে বলল,,
“নীলি তোর ছেলেটা একদম তোর মতোই হয়েছে। জেদী ও হয়েছে তোর মতোই আবদার পূরণ না হলে মাটিতে বসে পরে। তোর মতোই হাওয়ার মিঠাই আর আইসক্রিম পাগল।”
তখন বোধহয় সে হাসলো নীলের আগমনেই যেন অবয়ব টা নিঃশেষ হলো ওখান থেকে। ওরা পাঁচজন অনেক ঘুরলো মজা করলো। রাত তখন দশটা নীল ঘুমিয়ে গেছে ওরা চারজন ঘুমানোর বন্দোবস্ত করছে তখন ধূসর ফোন দিল। তা দেখে মেঘ ওদের ঘুমাতে বলে বেলকনিতে গেল ফোন দিয়ে সালাম দিল ,,
“আসসালামু আলাইকুম!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম! তো মাই ডিয়ার বউ এখন কি করছে?”
“তেমন কিছু না এমনি আপনি কি করছেন!”
“আমিও তেমন কিছু না! খেয়েছো?
“হুম আপনি!”
“আমিও খেয়েছি। মেঘ একবার ছাদে যাও তো!”
“কেন?”
“এমনিই যাও তারপর বলছি!”
মেঘ ছাদে গেল আপাতত ছাদের একপাশে লাইট জ্বলছে ছাদের একপাশে ছোট ফুলের বাগান আছে। মেঘ ছাদে গিয়ে বলল,,
“এসে পরেছি! এখন বলেন?
“আসলে তোমায় নিয়ে চন্দ্রবিলাস করতে ইচ্ছে করছিল তাই তোমায় ছাদে উঠতে বললাম আমিও এখন ছাদেই বসে আছি।”
“আচ্ছা!”
“যদিও আমাদের দূরত্ব আছে কিন্তু আমরা একই খোলা আকাশের নিচে আছি। যদিও দুইজন দুই জায়গায় আছি কিন্তু একই চাঁদ দেখছি ব্যপারটা সুন্দর না।”
“হুম ব্যাপারটা সুন্দর!”
“তোমায় পাশে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করতে পারলে আরো ভালো লাগতো। তবে চিন্তা নট খুব তাড়াতাড়িই ইচ্ছে টা পূরন হবে ইনশাআল্লাহ।”
“ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনার ইচ্ছে তাড়াতাড়ি পূরন করুক!”
“আমিন মিসেস ধূসর এহসান শুভ্র! তো মিসেস রাতের আকাশ কেমন লাগছে??
“মাশাআল্লাহ বরাবরের মতই সুন্দর। রাতের নিস্তব্ধতা আমাকে খুব করে টানে । আমি মাঝে মাঝেই বাড়ির ছাদে উঠে রাতের আকাশ দেখতাম। কারন চাঁদ তো সবসময় থাকতো না।”
“আমায় তো কোনদিন ফোন দাও নি!”
“মাঝে মাঝে আপনি নিজেই আপনার সেরা সঙ্গী। নিঃসঙ্গ মানে একাকীত্ব নয়। মাঝে মাঝে নিজের সাথে নিজের সময় কাটানো উচিত নিজেকে বোঝার জন্য নিজেকে জানার জন্য। নিজের মনের শান্তির জন্য।”
“বুঝতে পেরেছি ম্যাডাম কিন্তু, তুমি কিন্তু শোরুমের ব্যাপারটা আমাকে বলো নি?”
“বলার প্রয়োজনই হয় নি কখনো আর তাছাড়া আপনি কখনো জিজ্ঞেস ও করেন নি। আর এটা যখন শুরু করেছিলাম তখন আপনার সাথে আমার যোগাযোগ হতো না বললেই চলে আপনি দেশে ছিলেন না। যদিও হতো মাসে একদিন তখন তো সবকিছুর খবর নিতে নিতেই কথা শেষ।”
“আমায় ছাড়া অনেককিছুই করে ফেলেছো জীবনে। আচ্ছা মেঘ আমি তোমার জীবনে আসার পর তুমি আমাকে কখনো খুব খারাপ ভাবে পাশে চেয়েছো কিন্তু আমাকে পাও নি এরকম কখনো হয়েছে।”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“বলো না আমার কেন জানি মনে হয় তুমি আমাকে ছাড়াই অনেক কিছু নিজে একা একাই ফেস করেছো? তখন তুমি তোমার পাশে আমাকে চেয়েছো কিন্তু আমি বোধহয় তোমার পাশে থাকতে পারি নি।”
“আপনার এমনটা কেন মনে হয়!”
“জানি না কিন্তু মাঝে মাঝে তোমার ঐ চোখে আমি কিছু দেখতে পাই বোধহয়, তুমি বলো না।”
মেঘ চুপ করে রইল। ধূসর বলল,,
“কি হলো বলো না!”
মেঘ মনে মনে বলল,, “হ্যা ধূসর একটা সময় আপনাকে খুব খারাপ ভাবে চেয়েছি কিন্তু পাই নি। সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিল আমার। কিন্তু এটা আপনাকে বলা যাবে না।”
মেঘ একটা বড় শ্বাস নিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,,
“ধূসর আমরা কিন্তু চন্দ্রবিলাস করতে ছাদে এসেছি কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন। এটা কিন্তু ঠিক না। আচ্ছা আপনার ছাদে কালো গোলাপ এর গাছ আছে?
“কালো গোলাপ দিয়ে কি করবে?”
“আপনার জন্য সাদা পাঞ্জাবির সাথে আমি একটা সাদা কোটি মানে মুজিব কোট কিনেছি ওটা কাল পাঠাবো আপনি সেই কোটের ছোট পকেটে একটা কালো গোলাপ নিয়ে আসবেন।”
“তুমি বলেছো যখন তখন তো আনতেই হবে বাড়িতে গাছ থাক আর না থাক তবে আমার ছাদে কিন্তু কালো গোলাপ গাছ আছে।’
“তাহলে তো ভালোই!”
“তোমার সাদা শাড়িটা কাল আমিও পাঠিয়ে দেব। পুরশুদিন তাহলে দু’জনের দেখা হচ্ছে।”
“ইনশাআল্লাহ! আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এখন ছাদে থাকা ঠিক হবে না। আমি নিচে যাচ্ছি আর হ্যা আপনি এখন ঘুমিয়ে পড়ুন কাল সকালেই তো আবার হাসপাতালে যেতে হবে।”
“বাব্বাহ নিষ্ঠুর মেয়েটা আমার কথা ভাবছে ভাবা যায়?”
“তাই তো বলি এখনো আপনি আমায় নিষ্ঠুর মেয়েটা বললেন না কেন?”
“আমার মুখে নিষ্ঠুর মেয়ে শুনতে ভালো লাগে নাকি!”
“খুব! আচ্ছা রাখছি আল্লাহ হাফেজ!”
“আরে রাখছো কেন শুনো?”
“কি ?”
“ভালোবাসি! শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে তোমায় ভালোবাসি! আল্লাহ হাফেজ!
বলেই ধূসর ফোন রেখে দিল। মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
“মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র! মাঝখানে আর মাত্র একটা দিন তারপর এই ধূসর রাঙা মেঘ এই নিষ্ঠুর মেয়েটা আপনাকে ভালোবাসি বলবে। অনেক তো হলো নিজের মনের শান্তির জন্য প্রকাশহীন ভালোবেসে নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি পেলাম এখন নাহয় একটু প্রকাশ্যে ভালোবাসলাম। আপনার মনের শান্তির জন্য।
~চলবে,,