ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-১৫+১৬

0
994

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আকাশ মাহমুদের কথাটা শুনেই মেঘের অস্থিরতা বেড়ে গেল। বোধহয় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মেঘের সেই রাতের কথা মনে পরতে লাগলো। সেই সামনের মানুষটার আর্তনাদ বাচ্চার কান্না রক্ত ওর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। হির আর লিয়া মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে ওকে জরিয়ে ধরলো। হির বলল,,

“রিল্যাক্স মেঘ কিছুই হবে না সেদিনের মতো। তুই না স্ট্রং । শুনেই এতো ভেঙে পারছিস কেন? তোকে ভেঙে পড়ায় মানায় না। তুই মেঘ তোর অস্তিত্ব সবার থেকে আলাদা। কিছুই হবে না শান্ত হ।”

মেঘ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা। লিয়া মেঘকে ছেড়ে পানি নিয়ে এলো। হির এখনো মেঘকে জরিয়েই ধরে আছে। হির ওকে সোফায় বসালো। ও একবার চোখ বন্ধ করে নিল আবার খুললো । মেঘ নিকাব উঠিয়ে পানি খেল। লিয়া আর হির ওর দিকে অসহায় তাকিয়ে রইল। হির এক হাত ধরে আছে আর লিয়া আরেক হাত। মেঘ একবার দু’জনের দিকে তাকালো আর বলল,,

“আমি যতোই স্ট্রং হই না কেন? ঐ দিনের কথা মনে করলে আমি এখনো কেঁপে উঠি।”

তখন লিয়া বলল,,

“সেই রাতটা ছিল আমাদের ছয় জনের জীবনের এক কালো রাত। তার সবথেকে ভুক্তভোগী ছিলি তোরা দুইজন। একজন রক্তাক্ত হয়েছে আরেকজন দেখেছে কিন্তু কিছু করতে পারে নি শুধু একজন কে জরিয়ে ধরে বসে ছিল। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় সেদিন সে হয়েছিল। আর আমরা তিনজন তো পরে গিয়েছিলাম।”

“যা হয়েছে হয়েছে এবার আর আমি কিছু হারাবো না। এখন প্ল্যান শোন আকাশ মাহমুদ অন্তত আমাদের মুখ ঢাকা অবস্থায় চিনতে পারবে না‌। আমাকে চিনলেও তোদের কে একদম চিনবে না। কারন তোদের সম্পর্কে তার ধারনা নেই। আর হ্যা আব্বার সাথে কথা বলতে হবে। আর শোন আমাদের মাঝে কি হয়েছে বা কি হলো কাউকে বলবি না।”

বাড়ির ভেতরে অনেকেই ছিল। তিনজনের এরকম দেখে অনেকে অবাক হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিয়ে বাড়িতে তো পাত্তা দেয় নি। ওদিকে ওপর থেকে এসব কিছু মায়মুনা চৌধুরী আর দিলরুবা খানম দেখেছেন। দিলরুবা খানম নিচে আসলেন তখন মেঘরা কিছু কথা বলছিলেন। উনি এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“মেঘ মা অসুস্থবোধ করছো নাকি?”

হুট করেই মেঘ চমকালো ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“না মা তেমন কোন ব্যাপারনা আমি ঠিক আছি!’

“না ওপর থেকে দেখলাম তুমি হয়তো অসুস্থ বোধ করছো। লিয়া পানিও নিয়ে এলো হির তোমাকে জরিয়ে ধরেছিল।”

“না মা আসলে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল তাই। আমি ঠিক আছি। নোলকরা কোথায়?

“ওরা তো স্টেজের ওখানে সবাই!”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“তোমরা তিনজন এখানে কেন?”

“ঐ এমনি! এখনি বাইরে যাবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

দিলরুবা খানম চলে গেলেন। মেঘরা তিনজনে বাইরে বের হলো আয়মান চৌধুরী কে খুঁজতে লাগলো। আয়মান চৌধুরী ও বোধহয় ওদের কে খুঁজছিল। এত সবার মাঝে সবার দৃষ্টি তিনজন একই গ্ৰাউন পরিহিত মেয়েদের দিকে তিনজনকেই যে আলাদা সুন্দর লাগছে। বিয়ে বাড়িতে ক্যাপ এটা আরো সবাই কে আকৃষ্ট করেছে। আয়মান চৌধুরী ওদের দেখে এগিয়ে এলো। ওরা চারজন একটু দূরে গেল সবার থেকে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“যার ভয় পাচ্ছিলাম সে না এসে আরেকজন হাজির আম্মা। আকাশ মাহমুদ এখানে এসেছে মুজাহিদ এর এক ভাইয়ের বন্ধু!”

তখন মেঘ শক্ত গলায় বলল,,

“হুম শুনেছি সে এসেছে? আপনার সাথে কথা বলেছে আব্বা!”

“হুম পরিচয় করিয়ে দিয়েছে মুজাহিদ কারন ও নতুন মুখ কি না। কিন্তু আমার মনে হয় তার এ বাড়িতে কোন প্ল্যান করেই এসেছে।”

‘সে দেখতে এসেছে আমাদের কাছে তার হিরের ক্ষনি আছে কি না।”

তখন হির বলল,,

“ভালোবাবা সব কিছু স্বাভাবিক করতে হবে যাতে সে কোন সন্দেহ করতে না পারে সবথেকে বড় কথা সে নেই এখানে।”

“সে সব ঠিক আছে কিন্তু তোমরা জানো কি না ধূসরের পরিচিত সে আর মনে হলো অনেক ভালো সম্পর্ক।”

“কি বলছেন আব্বা?”

“ঠিকই বলছি ধূসর তার সাথে কথা বলেছে অনেকক্ষণ যাবৎ আমি ওকে দেখেই আপনাদের খুঁজছিলাম কিন্তু আপনাদের পেলাম না।”

“ওহ শিট এখন ধূসর না বলে দেয় তার বউয়ের প্রফেশন কি যদি জানতে পারে তাহলে সে আরো সতর্ক হয়ে যাবে।”

“সবথেকে বড় কথা হলো আকাশ মাহমুদ আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসছিল। মনে হচ্ছিল বিশ্ব জয়ের হাসি।”

তখন ধূসর এগিয়ে আসলো ওদের দেখে। কারন তারা যে কিছু নিয়ে খুব টেনশনে আছে তা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে। ধূসর এগিয়ে এসে বলল,,

“মেঘ কোন সমস্যা?”

ধূসরের কথায় সবাই যেন এক প্রকার চমকে উঠলো। মেঘ বলল,,

“না কেন?’

“না তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে তোমরা টেনশনে আছো?”

“না তেমন কোন ব্যাপার নেই আমরা এমনিই কথা বলছিলাম।”

“ওহ আচ্ছা আব্বা আপনাকে মুহাজিদ ভাইয়ার বাবা ডাকছেন।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“হুম যাচ্ছি আসলে মেঘদের একটা কথা জানাতে এসেছিলাম একটা ব্যাপার নিয়ে।”

আয়মান চৌধুরী চলে গেলেন। হির আর লিয়াও ধূসরকে দেখে চলে গেল। ধূসর মেঘের হাত ধরে স্টেজের দিকে গেল। কারন নোলকরা সবাই ওখানেই আছে। মেঘ যেতেই জায়মা বলল,

“কি রে মেঘ কোথায় ছিলি তোরা দুলাভাই তোকে খুঁজছিল একটা মাত্র আপন শালি না তুই!”

“শালি হলেও তার সাথে আমার সেরকম সম্পর্ক নেই যে আমাকে উনি খুঁজবেন।”

এ কথা শুনে মুহাজিদসহ সকলেই একটু থতমত খেয়ে গেলেন মেঘ এরকম কিছু বলবে কেউ ভাবতেই পারে নি। তখন মুহাজিদ বলল,,

“আসলে কি ছোটআপু সবাইকে দেখছি তোমাকে দেখছিলাম না তাই আর কি?”

“ওহ আচ্ছা!”

“কেমন আছো তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”

তখন পাশ থেকে একটা ছেলে বলল,,

‘ভাইরে ভাই এটা তোর শালি না কিরে মনে হচ্ছে আগুনের গোলা। এরকম কেন রে ভাই।”

তখন পাশ থেকে একজন বলল,,

“আচ্ছা দুলাভাই তো শালিকে জিজ্ঞেস করল সে কেমন আছে। শালি কিন্তু দুলাভাই কেমন আছে সেটা জিজ্ঞেস করল না।”

তখন মেঘ বলল,,

“সে নিশ্চয়ই ভালো আছে দেখেই বিয়ে করতে এসেছে না হলে তো আসতো না তাইনা।”

এ কথা শুনে মুহাজিদদের কাশি উঠে গেল। আর সকলে তো হা হয়ে মেঘ কে দেখতে লাগলো। ধূসর ওর পেছনেই ওর খুব হাসি পাচ্ছে। এই কারনেই সে এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে এত ভালোবাসে কারো সাথে আলগা পিরিত দেখানোর টাইম নাই। তখন পেছন থেকে বলল,,

“এরকম নিষ্ঠুর হলে হয় নাকি। এরকম মেয়েকে বিয়ে করলে তো তার জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে। কথায়ই বোঝা যাচ্ছে কিরকম?

আকাশ মাহমুদের কন্ঠস্বর শুনে মেঘ চমকে উঠলো কন্ঠ টা ভয়ঙ্কর না হলেও মেঘের কাছে লাগলো। সে নিজেকে সামলিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো সেই মুখটা দেখে সে স্থির চোখে তার দিকে তাকালো আর বলল,,

“সেটা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না ভাইয়া। কারন যে আমার জীবনসঙ্গী সে আমার এই গুলো সহ্য করেই আমাকে ভালোবাসে।”

“কি!! তোমার বিয়ে হয়েছে?”

আকাশ মাহমুদের কন্ঠস্বরে অবাকতা সাথে উচ্চস্বরে ক্ষিপ্ততা এটা দেখে সবাই অবাক হলো। মেঘের নিকাবের নিচে হাসিটা প্রসস্ত হলো। সে পাশ থেকে ধূসরের হাত ধরে বলল,,

“এই যে এই মানুষটাকে দেখছেন এই মানুষটা ছয় বছর ধরে এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই সহ্য করে তাকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ভালোবাসে।”

ধূসর কি বলবে ওতো মেঘের এহেন আচরণে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘ আরো বলল,,

“আমাদের দুজনকে ভালো মানিয়েছে না দেখুন আমরা আজ একই রঙের ড্রেস পরেছি। বলুন মাশাআল্লাহ আবার না নজর লেগে যায় কারো।

ওখানে থাকা আকাশ মাহমুদ ছাড়া আর সবাই বলল,,

“মাশাআল্লাহ!”

জায়মারাই সবাই বলেছে ওদের দেখে মুহাজিদের সাথে বসা ছেলে গুলোও বলল। হুট করে এতজন মাশাআল্লাহ বলাতে সবার নজর সেদিকেই গেল। ধূসরের কেন যেন লজ্জা লাগছে। মেঘের কোন হেলদোল নেই। মেঘ মুহাজিদদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘শুকরিয়া আপু ভাইয়ারা!”

তাদের মেঘের ক্যারেক্টার টা খুব পছন্দ হয়েছে। তারা হাসলো। মেঘ ধূসরের হাত ধরে ওখান থেকে চলে গেল। কারন এখানে সবাই ওর অপরিচিত আর অপরিচিতদের সাথে কমফোর্টেবল না‌। আর তাদের সাথে মধু মিশিয়ে কথা বলার প্রয়োজন বা ইচ্ছা কোনটাই নেই। মেঘ অহেতুক মজা করাও পছন্দ নয়। সেই গুলোই তারা শুরু করছিল তাই মেঘ কাঠিন্যতার দ্বারা ওটাকে এগুতে দিল না। ধূসরকে নিয়ে ও একটা নির্জন জায়গায় এলো ধূসর তো অবাক সাথে মুগ্ধ চোখে মেঘকেই দেখে যাচ্ছে। ও মেঘ কে বলল,,

“ভাবা যায় নিষ্ঠুর মেয়েটা আমাকে নিয়ে সবার সামনে কথা বলল আবার আমার ভালোবাসা নিয়েও।”

“যা সত্যি তাই বলেছি এই যে আপনি আমায় প্রতিনিয়ত প্রতিদিন ভালোবাসা প্রকাশ করেন। নাকি শুধু মুখে প্রকাশ করেন মনে মনে ভালোবাসেন না।”

“আমি তা কখন বললাম?”

“না এমন ভাবে বললেন যেন আমি মিথ্যে বলে এসেছি।”

“মিথ্যা কেন বলবে এই কাশফিয়া আয়মান মেঘ কখনো মিথ্যা বলে না। কিন্তু এই মেয়েটা আমায় কেন ভালোবাসি বলে না।”

“সেটা সিক্রেট! সবথেকে বড় কথা আমার বলার দরকার নেই আপনি যদি আমার ভালোবাসা অনুভব করেন তাহলে বুঝবেন ভালোবাসা আছে আর যদি অনুভব করেন ভালোবাসা নেই তাহলে নেই। এটা একান্তই আপনার ওপর নির্ভর করে।”

এটুকু বলেই মেঘ চলে গেল। ধূসর মুচকি হেসে বলল,,

“তোমার ভালোবাসা অনুভব করি বলেই তো এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে ভালোবাসি। যদি অনুভব না করতাম তাহলে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ভালোবাসা প্রকাশ করা হতো না। একপাক্ষিক সবকিছুই একটা সময় ফিকে হয়ে যায়। একপাক্ষিক মানুষটাও একপাক্ষিক ভাবে একা একা সব করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পরে। তোমার এই প্রকাশহীন ভালোবাসাই আমার কাছে ভালোবাসার গহীন অনুভব।”

ধূসর হেসে সেখান থেকে চলে গেল। এদিকে আকাশের মাথায় আগুন জ্বলছে। ও মুজাহিদ এর কাছে জিজ্ঞেস করল,,

“মুজাহিদ ওটা তোমার শালির বয়ফ্রেন্ড নাকি?”

“না ভাইয়া ওটা ওর হাজবেন্ড। ছয় বছর আগে ওদের আকদ করেছিলেন বাবা। অবশ্য এটা আমরাও জানতাম না কয়েকদিন আগে জেনেছি।”

“ওহ আচ্ছা!”

আকাশ চলে গেল ও ভাবতে লাগলো পাঁচ বছর আগে মেঘের সাথে শেষ বার দেখা হয়েছিল। কিন্তু কই সে তো জানতো না ওর বিয়ের কথা । তারমানে কি সেও জানতো না। জানলে তো অন্তত জানা যেত নাকি সব কিছু মেঘ ইচ্ছে করেই লুকিয়েছে।

ওদিকে মুনের যেহেতু আগেই বিয়ে হয়েছে তাই এখন বিদায়ে বেশি সময় নিবে না। বিদায়ের ঘন্টা চলে এসেছে। এখন মুনের বিদায় হবে। আকাশের অবস্থাও ভালো না। যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হবে। এমনিতেও রাত হয়েছে। তাই মুজাহিদের বাবা তাড়াতাড়ি করতে বললেন। অতঃপর মুন সকলকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মেঘ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল মুনের নজর গেল ওর দিকে মুন গিয়ে মেঘকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মেঘের কোন হেলদোল নেই। ও স্থির ও মুনের পিঠে একহাত রাখলো। কিন্তু মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে কোন রোবট সবাই কমবেশি কাঁদছে কিন্তু মেঘের কোন হেলদোল নেই। সকলে মেঘকে হয়তো মনে মনে উপাধি দিয়েছে নিষ্ঠুর। মেঘ মুনকে সামলিয়ে এগিয়ে এলো জিয়ান ওকে গাড়িতে বসিয়ে দিল। ওরা চলে গেল কিন্তু যাওয়ার আগে আকাশ মাহমুদ অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল এটা মেঘের চোখ এড়ায় নি।সবাই ভেতরে গেল ওখানে বাঁধলো আরেক বিপত্তি। আজান এতক্ষন কিছুই না এখন কাঁদছে। মেঘকে দেখে ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আজানের এরূপ কাজে মেঘের কেন যেন হাসি পেল। আজান বলল,,

“আপু তুমি প্লিজ আমায় ছেড়ে এভাবে চলে যেও না‌। মুন আপুর সাথে তো আমার সেরকম সম্পর্ক ছিল না। তাও কষ্ট হচ্ছে। তুমি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে আপু আমায় চকলেট কে দেবে? আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যাবে কে? আমার সব আবদার পূরণ করবে কে? তুমিই তো আমার সুপার ওমেন। আপু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। একটু আগে ফুপি বলছিল মুন চলে গেল কয়েকদিন পরে তুমিও চলে যাবে। আপু তুমি চলে গেলে আমার ভিশন কষ্ট হবে আপু। আমি থাকবো কি করে তোমায় ছাড়া।

মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো ভাইয়ের ভালোবাসা দেখে। হয়তো এবাড়ির কেউ এভাবে ভালোবাসেনি বলে। সবাই ড্রয়িংরুমেই ছিল আজানের কান্নার জন্য সবাই ভেবেছিল মুনের জন্য কাঁদছে কিন্তু এখানে তো উল্টো। মেঘ আজান কে সোফায় বসালো আর ও নিচে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো সকলে অবাক মেঘ আজানের চোখের পানি মুছিয়ে হাত ধরে বলল,,,

“তোর মুন আপুর জন্য এই জন্য কষ্ট হচ্ছে কারন আমরা ভাই-বোন। একই মায়ের পেট থেকে জন্মগ্ৰহন করেছি। আমাদের রক্তের সম্পর্ক। ফুপি ঠিকই বলেছে আমিও চলে যাবো কয়েকদিন পর। কিন্তু এতে কি তোর জীবন থেমে থাকবে থাকবে না তো। তুই কি ভাবছিস তোর আর আমার একেবারে বিচ্ছেদ হবে কিন্তু না আমাদের একেবারের জন্য বিচ্ছেদ হবে না। যে বিচ্ছেদ হবে সেটা সাময়িক। এই বিচ্ছেদ সব ভাইবোনের হয় কারন এটা প্রকৃতির নিয়ম। এটা নিয়ে এতো দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। এই যে তোর ছোট ছোট আবদার এগুলো আমার কাছে করিস দেখেই আমি পূরন করি কিন্তু তুমি যদি আমাকে না বলে আব্বা কে বা অন্য কাউকে বলতে তিনিও তোর এই আবদার পূরণ করতো। তাছাড়া যখন আমি থাকবো না তখন হুট করেই তোর কারো কাছে আবদার করতে ইচ্ছে হবে না। নিজেই নিজের সকল আবদার পূরণ করতে শুরু করবি।। হুম এটা ঠিক আমার জন্য বা তোর জন্য আমার কষ্ট হবে। কিন্তু এটা ধীরে ধীরে প্রশমিতও হবে। জীবনের সুন্দর সম্পর্কের মধ্যে মধুর সম্পর্ক হচ্ছে ভাইবোনের সম্পর্ক। এখন কান্নাকাটি বন্ধ কর এতো কান্নাকাটির কিছু হয় নি। এত বড় ছেলে সবার সামনে কাঁদলে মানুষ কি বলবে তুই বল। তাছাড়া আমি যখন এ বাড়িতে আসবো তোর জন্য চকলেট আইসক্রিম সব নিয়ে আসবো ঠিক আছে।”

মেঘের কথা শুনে আপনা আপনি আজানের কান্না থেমে গেছে। আজান পুরো কথাই মনোযোগ শুনে বলল,,

“সব ঠিক আছে কিন্তু তুমি আমায় ভালোবাসো কি না সেটা বললে না।”

“সব ভাইবোনেরাই একে অপরকে ভালোবাসে এটা বলার কি আছে?”

‘তবুও আমি আলাদাভাবে শুনতে চাই।”

“আমি বলতে চাই না এখন উঠো।”

“আপু তুমি খুব নিষ্ঠুর!”

এ কথা শুনে মেঘের যেন হুট করেই ভিশন হাসি পেল। ও ধূসরের দিকে তাকালো । ধূসর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘ হাসলো আজানের গাল টিপে বলল,,

“এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই কিছু লোকের এত ভালোবাসতে হলো কেন বুঝলাম না।”

সকলে মেঘের কথা আর কাজে অবাক। বাইরে বৃষ্টি শুরু হলো। আয়মান চৌধুরীর মনটা ভিশন খারাপ ছিল কিন্তু মেঘের কথা শুনে মনটা ভালো হয়েছে কারন এ বিচ্ছেদ একেবারের জন্য নয় এটা সাময়িক বিচ্ছেদ। সবার মন একটু ভালো হলো। তখন লিয়া এলো তাড়াতাড়ি করে ওরা মেঘের কাছে গিয়ে কানে কানে বলল,,

‘জাবিন ফোন ধরছে না ওর কোন খোঁজ পাচ্ছি না!

মেঘ চিৎকার করেই বলল ” কি!!এটা তুই এখন বলছিস।”

‘আমিই তো জানতাম না । এখন ফোন করছি ধরছে না। আমার এখন ভয় করছে।

“আচ্ছা রুমে চল।”

কেউ কিছু বলবে তার আগেই মেঘ আর লিয়া রুমে চলে গেল। মেঘ রুমে গিয়ে বলল,,

“শোরুমে ফোন দিই দেখি কি বলে?”

“আচ্ছা!”

মেঘ কথা শেষ করে বলল

“ওরা বলল জাবিন বিকেলেই চলে গেছে।”

“সাথে কি সেও গেছে?”

“জানিনা এই জন্যই তো এখন বেশি চিন্তা!”হির কোথায়?”

“বাইরে কারসাথে যেন ফোনে কথা বলছে। ঐ তো হুট রে জাবিনের কথা বললো। ফোন করে দেখতে বলল। এতকিছুর মধ্যে ওর কথা মনে ছিল না।

এদিকে হির তাড়াতাড়ি বাড়িতে ঢুকলো। তা দেখে ধূসর বলল,,

“কোন সমস্যা হয়েছে নাকি হির ? মেঘ আর লিয়াও তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে গেল। কিছু বলতেই পারলাম না। ”

হির থেমে বলল,,

“না ভাইয়া তেমন কিছুই না। ”

হির না দাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে ওপরে উঠে গেল। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,,

‘ধূসর কিছু হলে তো বলতোই থাক ওরা ওদের মতো এখন রুমে যাওয়ার দরকার নেই তোমার। ”

আয়মান চৌধুরী মুখে এটা বললেও তার চিন্তা হচ্ছে। কারো কিছু হয় নি তো? ওরা যেভাবে আচরন করছে তাতে কিছু তো হয়েছেই। হির তাড়াতাড়ি করে রুমে ঢুকে বলল,,

‘জাবিনের সাথে কথা হয়েছে ?”

তখন লিয়া বলল,,

“না হয় নি । আমরা বোধহয় বেশি ভাবছি ও বোধহয় কোথাও ঘুরতে গেছে তাকে নিয়ে। আর ফোনটা ধরছে না এমন তো নয় ফোন বন্ধ। হয়তো ওকে নিয়ে ব্যস্ত আছে।

“হতে পারে আচ্ছা আমরা আরেকটু অপেক্ষা করি। হুদাই টেনশন নিয়ে লাভ নেই।”

তখন মেঘ বলল,,

“ঠিক বলছিস। আচ্ছা চল ফ্রেশ হয়ে নে আর চেন্জ কর বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কখন বাড়িতে যাবি ঠিক নেই। ফ্রেশ হয়ে তারপর জাবিনকে দেখছি।”

‘আচ্ছা ঠিক আছে।”

ওরা তিনজন ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। তিনজনেই থ্রিপিচ পরে মাথায় ওরনা দিয়ে নেমে এলো। তিনজনেই সোফায় বসলো ওদের দেখে মনে হচ্ছে সব ঠিক আছে কিছুই হয় নি। সবাই ফ্রেস হতে চলে গেছে ।
ধূসরও ফ্রেশ হতে চলে গেল। মেঘ বলল,,

“এখন জাবিনকে ট্রাই কর?”

“হুম!”

হির জাবিনকে ট্রাই করলো। এখন তো ফোন নট রিচেবল বলছে। হির বলল,,

“ফোন নট রিচেবল বলছে।”

তখন মেঘ বলল,,

“জাবিন তো এতো ইরেসপন্সিবল না। ও জানে ওকে ফোনে না পেয়ে আমরা টেনশন করবো।
এদিকে বাইরে কতো বৃষ্টি হচ্ছে। জাবিন তো এমন নয় ফ্ল্যাট ছাড়া কোথাও গেলে বলে যায় তাহলে আজ কি হলো।”

“চাচার সাথে দেখা করতে যায় নি তো? একটা ফোন দিই!”

“না ফোন দিস না যদি ওখানে না যেয়ে থাকে তাহলে জাবিনকে আরো খারাপ কথা শোনাবে এমনিতেও কম কিছু বলে নি।”

‘মেঘ ঠিকই বলেছে লিয়া। দারোয়ান চাচাকে একটা ফোন দিই?

“হুম দে!”

হির দারোয়ান চাচাকে ফোন দিল ফ্ল্যাটে জাবিন নেই । মেঘ আর লিয়া ওর দিকে তাকিয়ে ছিল ও মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। ওদের টেনশন বেড়ে গেল। মেঘ বলল,,

“ওকে আমি ফোনে দেখছি কোথায় ও। ওর নাম্বারটা ট্রেস করা যায় কি না!”

মেঘ ফোনে কিছু দেখতে লাগলো কিন্তু ওর কোন কিছু পাচ্ছে না ওর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। ফোন আপাতত বন্ধ তাই ট্রেস হচ্ছে না। লিয়া আর হির ও ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ততক্ষনে সকলে ফ্রেশ হয়ে নিচে এলো। আয়মান চৌধুরী ওদের দিকে এগিয়ে গেল। ওদের কে বলল,,

“আম্মা কোন সমস্যা?”

“না আব্বা তেমন কোন ব্যাপার না আসলে জাবিনকে ফোনে পাচ্ছি না।”

“কখন থেকে আর কোথায় ও?”

“জানিনা আব্বা ফোন নট রিচেবল বলছে ! ফ্ল্যাটেও নেই।”

“তাহলে তো চিন্তার বিষয়? আচ্ছা আম্মা আকাশ মাহমুদ তো আজ অদ্ভুত ভাবে হাসছিল ও কিছু করে নি তো।”

এ কথা শুনে তিনজনেই দাড়িয়ে গেল এটা তো ওদের মাথায়ই ছিল না। মেঘ বলল,,,

“লিয়া হির চল রেডি হই বেরুতে হবে।”

আয়মান চৌধুরী কিছু বললেন না। তিনিও বেশ চিন্তায় পরে গেল। ততক্ষনে ধূসরও চলে এলো। তখনি মেঘের ফোনে একটা ফোন এলো ফোনটা জাবিনের। মেঘ তাড়াতাড়ি করে ফোন ধরলো,,,মেঘ কিছু বলবে। তার আগেই ওপাশ থেকে জাবিন বলল,,

“মেঘ তোরা কোথায়? তাড়াতাড়ি আয় ওরা মা বাবার মতো আমাকেও মেরে ফেলবে । তোদের সাহায্য দরকার মেঘ ওরা আমার মা বাবাকে মেরে ফেলেছে এখন আমাকেও মারতে চাইছে।”

“তুই কোথায় জাবিন?”

“জানিনা দৌড়াতে দৌড়াতে কোথায় এসে পরেছি। তুই প্লিজ তাড়াতাড়ি আয়। ওরা ?”

“হ্যালো হ্যালো জাবিন শুনতে পারছিস শিট?”
হির লিয়া আমাদের এখনই যেতে হবে তাড়াতাড়ি গাড়ি বের কর আমি ওপর থেকে আসছি?

মেঘ দৌড়ে ওপরে গেল লিয়া আর হির দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। বাকিরা এক প্রকার শকড মেঘ একটা ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে আসছে। নিচে আসতেই ধূসর মেঘকে বলল,,

“কোথায় যাচ্ছো এই বৃষ্টির মধ্যে?”

“এখন বলার সময় নেই শুধু শুনে রাখুন এখন আমার যাওয়াটা খুব দরকার ।

মেঘ দৌড়ে বেরিয়ে গেল। বাকি সবাই থম মেরে গেল মেঘ এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় গেল আয়মান চৌধুরী বুঝলেন খারাপ কিছু হয়েছে।

________________

এই বৃষ্টির মধ্যে মেঘ যতো স্পিডে পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। আর বিরবির করে বলছে,,,

“আমি ওর মতো তোকে হারাতে পারি না। আমি তোকে হারাতে দেব না জাবিন।”

হির ফোন দিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করছে ফোনটা একবার বন্ধ আবার খুলছে তাই লোকেশন ট্র্যাক করতে সময় লাগছে। পাঁচ মিনিট পর ওর লোকেশন ট্র্যাক হলো। ততক্ষনে ওরা প্রায় কাছাকাছি পৌছে গেছে। ওরা পৌঁছাতেই দেখল একটা খোলা মাঠ সেখানেই নিচে বসে জাবিন । এটা দেখে ওরা তিনজনেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে জাবিনের কাছে যায়। জাবিন বসে বসে কাঁদছে মেঘরা গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। জাবিন ও ওদের পেয়ে কেঁদে দিল আর বলতে লাগলো,,

“ওরা আমার মা বাবাকে মেরে ফেলেছে। এখন আমাকেও মারতে চাইছে।”

তখন হির বলল,,

“কি হয়েছে খুলে বল?”

“আজ বিকেলে ভাইয়া (চাচাতো ভাই)ফোন দিয়ে বলল ও বাড়িতে যেতে। আমিও সন্ধ্যার পর গেলাম আর গিয়েই জানলাম চাচা সম্পত্তির জন্য মা বাবাকে মেরে ফেলেছে। ওদের মারার পর জানতে পারলো আমার নামে সকল সম্পত্তি তাই লোভে পরে আমাকে ওনারা লালনপালন করলেন সব সম্পত্তির মালিক যাতে ওরা হয় তাই ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলেন। কিন্তু ভাইয়া রাজি না সেই কথা বলতেই ভাইয়া ডেকেছিল সে একজন কে পছন্দ করে। এটা জানতে পেরে আজ চাচা রাগারাগি করে ভাইয়া বাড়ি থেকে চলে যায় তখন চাচা চাচিকে বলছিল সব । বাইরে থেকে আমি সব শুনেছি। ওরা জানতে পেরে গেছে আমি বাইরে ছিলাম তাই চাচা কিছুলোককে আমাকে মারার জন্য ধাওয়া করেছে। আমি ছুটে পালিয়ে এসেছি।”

মেঘ জাবিনকে ছেড়ে দিল। আর বিরবির করে বলতে লাগলো,,

“আবার সেই সম্পত্তি এই সম্পত্তি কি একটা মানুষের থেকে বেশি হয়ে গেল। সম্পত্তির জন্য আর কতো মানুষ তাদের জীবন হারাবে।

তখনি পেছন থেকে কারো আওয়াজ আসলো,,,

“বাহ এ দেখি আরো তিনজনকে নিয়ে এসেছে। তোকে তো মারবোই জাবিন তারসাথে এদেরকেও। ”

ওরা চারজন এই পেছনে ঘুরলো। জাবিনের চাচাসহ আরো চারজন লোক। হুট করে মেঘের সেই রাতেই কথা মনে পরলো। ও জোরেই বলল,,

“হির,লিয়া, জাবিন আজ যেন একটাও এখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে না পারে।’

একজন ওর দিকে এগিয়ে আসলেই ও ওটাকে মারতে লাগলো। ওকে দেখে বাকিরাও এলো তখন জাবিন , লিয়া আর হির ওদেরকে আটকিয়ে মারতে লাগলো। কারন ওরা চারজনই ফাইট করতে পারদর্শী। অবস্থা বেগতিক দেখে জাবিনের চাচা পালিয়ে গেল। বাকি চারজন ও কোন মতে পালিয়ে গেল। মেঘ লিয়াকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর বলল,,

“জাবিন আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমার মাথায় শুধু একটা কোথায় চলছিল কখন তোর কাছে পৌঁছাবো। তোকেও না আমি নীলির মতো হাড়িয়ে ফেলি। আজ তোর কিছু হলে আমি নিজেকে কি করে ক্ষমা করতাম তখন নীলি আমায় বলতো আমি লুজার ওর মতো তোকেও বাঁচাতে পারি নি।”

তখন হির বলল,,,

“জাবিন নীল কোথায়?” ও তো তোর সাথেই ছিল তাই না।”

এ কথা শুনে মেঘের মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। ও জাবিন কে ছেড়ে বলল,,

“জাবিন নীল কোথায়? ওর কিছু হলে আমি নীলিকে কি জবাব দেব।”

মেঘের মাথাব্যাথা শুরু হলো। ও হায়পার হয়ে গেছে । জাবিন কথা বলছে না দেখে ও জাবিনকে ঝাঁকিয়ে বলল,,

“কিরে কথা বলছিস না কেন? নীল কোথায় ও তো তোর সাথেই ছিল তাই না।”

জাবিন ছোট করে বলল,,

“ও আমার সাথে নেই!”

এটা শুনে বাকি তিনজনেই থমকে গেল। মেঘ মাটিতে বসে পরলো। যার জন্য এত কিছু করলো তাকে কি ও হাড়িয়ে ফেলল ও চিৎকার করে বলল,,,

“না আমি এভাবে হারতে পারি না। আমি নীলকে হারাতে পারি না। ওর দায়িত্ব আমার ওপর ছিল। আমি নীলিকে কি জবাব দেব। ওর কিছু হলে আমি মরে যাবো জাবিন। নীলাকে এই মুখ দেখাবো কি করে। নীলি যে অনেক আশা নিয়ে আমাকে ওর দায়িত্ব দিয়েছিল। ওকে বাঁচানোর জন্যই আমার কাছে দিয়েছিল। আমি কি না ওকে হাড়িয়ে ফেললাম সবাই ঠিকই বলে আমার দারা ভালো কিছু হতেই পারে না।”

জাবিন মেঘকে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,

“আগেই নিজেকে দোষারোপ করিস না। আগে আমার পুরো কথাটা শোন। নীল সেফ আছে ভালো আছে। ওকে আমি ফ্ল্যাটে ঘুম পারিয়ে রেখে এসেছিলাম। কারন ওকে ওখানে নেওয়া সম্ভব ছিল না।”

কথাটা শুনে মেঘ কান্নার মাঝেই হাসতে লাগলো। তা দেখে বাকি তিনজনের মুখেই হাসি ফুটে উঠল। এই অনুভূতিটাও না অদ্ভুত। চারজনে ভিজে একাকার। মেঘ জাবিনকে ছেড়ে খোলা মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। বৃষ্টি অনেকটাই কমেছে নেই বললেই চলে। মেঘ ওর পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেল বোধহয় ও বিরবির করে বলতে লাগলো,,

“নীলি তুই দেখেছিস তোর ছেলে একদম ঠিক আছে। তোর ছেলের কিছু হয় নি। আমি হারি নি নীলি আমি ওকে হারাই নি। জানিস আজ পাঁচ বছর পর সেই ঘটনার পর আকাশ মাহমুদের সাথে দেখা হয়েছিল। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম জাবিনের ফোন পেয়ে আমি ভেবেছিলাম সে নীলের খোঁজ পেয়ে গেছে। কিন্তু সে পায় নিরে তোর ছেলের খোঁজ পায় নি সে।”

তখন হির বলল,,

“হুম এখন সব ঠিক আছে। জাবিন তো একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করে দিচ্ছিল। এই মেঘ অনেক বৃষ্টিতে ভেজা হয়েছে এখন ওঠ। ভুলে গেলি নাকি তোকে বাড়ি ফিরতে হবে আবার ও বাড়িতে সবাই তোর অপেক্ষা করছে।”

মেঘ উঠে পরলো। জাবিনের গালে হাত রেখে বলল,,,

“তুই চিন্তা করিস না জাবিন কেউ তোর কিছু করতে পারবে না। তোর চাচা তার উচিত শিক্ষা পাবে। তার ব্যবস্থা আমি নিজ হাতে করবো। একদম কাদবি না সব ঠিক হয়ে যাবে।”

ওরা চার বান্ধবী একে অপরকে জরিয়ে ধরলো। তারপর চারজনে ফ্ল্যাটে চলে গেল। মেঘ তাড়াতাড়ি করে ফ্ল্যাটে ঢুকে একটা রুমের সামনে দাঁড়ালো। আস্তে করে দরজা খুললো সেখানে পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে ঘুমিয়ে আছে। মেঘ আস্তে আস্তে তার কাছে গিয়ে কপালে একটা চুমু দিল আর বলল,,

“ভালোবাসি আমার সোনা বাঁচ্চা টা আমার নীল।”

বাইরে থেকে তিন বান্ধবী দেখলো। সবাই ভেজা দেখে আর ভেতরে ঢুকলো না। মেঘ বের হয়ে আসলো।আর বলল,,

“আসি এখন নিজেদের খেয়াল রাখিস?”

“আরে ড্রেস চেঞ্জ করে যা। নাহলে জ্বর আসবে তো?”

“না এখন আর দরকার নেই বাড়ি যেতে সময় লাগবে না। ওখানে সবাই আমার অপেক্ষা করছে বাড়ি গিয়ে একেবারে গোসল করে নেব।”

জাবিনের হুট করে নজর গেল কপালে মেঘের কপালটা হালকা কেটে গেছে । এতক্ষণ অন্ধকারের মাঝে কাটা জায়গা নজরে পরে নি। জাবিন বলল,,

“তোর কপাল কাটলো কখন?”

“কোথায়? ও ঐ একটু কিছু হবে না। আসছি!

মেঘ চলে যেতে নিল তখন জাবিন বলল,,

“একটু ওষুধ লাগিয়ে যা!”

“বাড়ি গিয়ে একবারে লাগাবো।”

মেঘ চলে গেল। বাকিরা শুধু চেয়েই রইলো এই মেয়েটাকে বুঝতে পারলেও পুরোপুরি এখনো বুঝে উঠতে পারে নি।

_______________

রাত এগারোটায় মেঘ বাড়ি ফিরলো। ড্রয়িং রুমে আসতেই ওর আব্বা ধূসর আর ধূসরের পরিবারকে দেখতে পেল। ওকে দেখেই সবাই এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করল কোথায় গিয়েছিল এত রাত হলো কেন? মেঘ আস্তে ধীরে জবাব দিলো ওর বান্ধবী জাবিন একটা সমস্যায় পরেছিল তাই ওরা গিয়েছিল। ও ভেজা গায়ে দেখে সবাই ওপরে পাঠিয়ে দিল। মেঘ রুমে গিয়ে গোসল করে বের হলো। ধূসর রুমেই ছিল মেঘ বিছানায় বসেই টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে লাগলো। তখন ধূসর এসে মেঘের থেকে টাওয়াল নিয়ে ওর মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো মেঘ কিছুই বলল না। কপালে হালকা কেটে ছিল গোসল করার পর সেটা বোঝা যাচ্ছে না।জাবিনের কথা শুনে হাত দিয়েই আগে মুছে ফেলেছিল রক্ত তাই এখনও ধূসর দেখেনি। মাথা মুছিয়ে ধূসর বলল,,,

“তোমার হেয়ার ড্রায়ার নেই?”

“কেন?’

“এই রাতে ভেজা মাথা নিয়ে ঘুমিয়ে জ্বর বাঁধানোর ইচ্ছে আছে নাকি। কে জানে কতক্ষন বৃষ্টিতে ভিজেছো?

“হুম আছে ঐ তো ঐ ড্রয়ারে যদিও বেশি ইউজ করি না আমি দেখেন ঠিক আছে নাকি নষ্ট হয়ে গেছে।”

ধূসর ড্রয়ার থেকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে মেঘের চুল শুকালো। তারপর মেঘ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,,

“তোমার জন্য খাবার এনে রেখেছি খেয়ে নাও!”

“আপনারা খেয়েছেন?

“হুম আমার ফুপুশাশুড়ি সবাইকে খায়িয়েছে! তুমি খেয়ে নাও।

“আপনি খায়িয়ে দিন হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“পারবো না । জাবিনকে সাহায্য করার জন্য গিয়েছিলে এটা বলে গেলে আমি যেতে দিতাম না। দরকার হলে আমি নিজেও যেতাম।”

মেঘ বুঝতে পারলো বাবুর অভিমান হয়েছে। তাই মেঘ বলল,,

“অভিমান হয়েছে বুঝি?”

“একটুও ও না! আমি কে যে তোমার ওপর অভিমান করবো নিষ্ঠুর মেয়ে একটা।”

মেঘ হেসে বলল,,,

“আপনাকে নিই নি কারন কাজটা আমিই সলভ করতে পারবো তাই। আর তখন তাড়াতাড়ি ছিল এতকিছু বলার সময় ছিল না।সেসব বাদ দিন এখন বলুন খায়িয়ে দিবেন কি না?”

“না দেব না।”

“ঠিক আছে আপনাকে আমি সওয়াব দিয়ে সাহায্য করতে চাইলাম আপনি নিলেন না। না নিলেন আমার তাতে কি আপনার লস।”

“মানে?”

“মানে হলো একটা হাদিস আছে ,,__ স্ত্রীর জন্য তুমি যা’ই খরচ করো না কেন, সেটার জন্য তুমি প্রতিদান পাবে, এমনকি (ভালোবেসে) স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়ার কারণেও তুমি সওয়াব পাবে।”
~সহীহ বুখারীঃ ৬৭৩৩

“হইছে আর হাদিস শোনাতে হবে না এদিকে আসো খায়িয়ে দিচ্ছি।”

মেঘ হেসে ধূসরের দিকে এগিয়ে গেল। ধূসর ওকে খায়িয়ে দিতে লাগলো।‌ আর বলল,

‘তুমি জানো আমি কতো টেনশনে ছিলাম। ওভাবে বেরিয়ে যাওয়ায় ইচ্ছে তো করছিল আমিও যাই কিন্তু আব্বা মানা করলো।”

“সরি এরকম টা আর হবে না!”

“পাক্কা!”

“একদম পাক্কা।”

ওদের খাওয়া শেষ হলে ওরা শুয়ে পরলো। ধূসরের অভ্যাস যেদিন মেঘ থাকবে সেদিন মেঘকে বুকে নিয়ে শুবে আজও ব্যতিক্রম নয়। মেঘ ধূসরের বুকে শুয়ে সবকিছু চিন্তা করতে লাগলো। আজ তার জীবনের অন্যতম একটা খারাপ সময় গেছে। ও ঘুমানোর চেষ্টা করলো। একটা সময় ঘুমিয়েও পরলো।

অতঃপর সকাল আজ মুহাজিদদের বাড়িতে যেতে হবে সকলকে,,,

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

নতুন দিনের সূচনা। নতুন দিন কি শুধু নতুন হয়েই আসে, না শুধু নতুন হয়েই আসে না। পুরোনো দিনকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে আসে। নতুন আশা নতুন ভরসা নিয়ে আসে সেই সাথে দোয়া একেঅপরের সাথে থাকা ভালোবাসা নিয়ে আসে। মেঘ সকালে ফজরের নামাজ পড়ে বাগানে গেল। সকালের ঠান্ডা আবহাওয়ায় মেঘের ঠান্ডা লাগছে। হালকা জ্বর এসেছে বোধহয় কিন্তু সে প্রকৃতিবিলাশে ব্যস্ত কালকে রাতের সেই জাঁকজমকপূর্ণ বাড়িটা আজ কেমন নিস্তব্ধ। কোথাও কেউ নেই শুধু স্টেজ আর প্যান্ডেলটা। বাড়ির পেছনে একটা রাস্তা আছে ও আস্তে আস্তে খালি পায়ে ঐ রাস্তাটা ধরে হাটতে লাগলো। সকালের সতেজ হাওয়া মেঘের মনটাকে সতেজ করে তুললো। হুট করেই কালকে রাতের কথা মনে পরলো। ও একবার চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। একটু হাঁটাহাঁটি করে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। ধূসর নামাজ পরে আবার ঘুমিয়েছে তাই এখনও ঘুমে। বাড়ির কেউ এখনো নিচে নামে নি। ও গিয়ে ওর কিছু ফাইল নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। আর ওগুলো দেখতে লাগলো। আটটার দিকে ধূসর ঘুম থেকে উঠলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল। সবাই ততক্ষনে নিচে এসে বসেছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ধূসর মেঘ কোথায়?”

‘ও তো রুমে নেই আমি ভাবলাম নিচে এসেছে!”

“তাহলে বোধহয় বেলকনিতে। কারন মেঘ নিচে আসে নি। আমি সেই সাতটায় নিচে এসেছি।”

“আমি ওদিকে খেয়াল করি নি বোধহয় বেলকনিতেই।”

“মেঘ কিছু বলেছে ও বাড়িতে যাবে কি না?”

“আমায় কিছু বলেনি আব্বা?’

তখন সামনে থেকে কেউ বলল,,

“আমি যাবো আব্বা! সমস্যা নেই!”

“আচ্ছা ঠিক আছে। লিয়া হির ওরা যাবে না ওদের কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করুন।”

‘না আব্বা ওরা যাবে না।”

‘ঠিক আছে।”

তখন মেঘের ফোনে ফোন এলো ও ফোন ধরে বলল,,

“ওদিকের কাজ কতো দূর?”

ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,,

” আপনি যেমনটা বলেছিলেন ম্যাম ওনাদের কে এরেস্ট করছি। আর তাড়াতাড়ি কোর্টে নেওয়ার বন্দোবস্ত করছি।”

“ধন্যবাদ এত তাড়াতাড়ি সব কিছু করার জন্য। তাদের এক্সট্রা খাতিরদারি করবেন কিন্তু।”

“জি ম্যাম আপনি যেমনটা বলেন।ওকে আল্লাহ হাফেজ!”

“আল্লাহ হাফেজ।”

মেঘ ফোন রেখে মুচকি হাসলো। জাবিনের চাচাকে আজ পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। এখন শুধু শাস্তি দেওয়ার পালা। মেঘ ফোন রাখতেই আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“তো এখন ব্রেকফাস্ট করা যাক।”

সবাই ব্রেকফাস্ট করলো। খাওয়া শেষে মেঘ ফোন নিয়ে বাইরে চলে এলো। জাবিনকে ফোন দিল জাবিন ফোন রেখে ওয়াশরুমে গিয়েছিল তাই নীল ধরে সালাম দিল,,

‘আসসালামু আলাইকুম আম্মু!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো ব্লু পিন্স?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। জাবিন কোথায়?”

“মামনি তো ওয়াশরুমে!”

“ওহ আচ্ছা ব্রেকফাস্ট করেছেন?’

“হ্যা লিয়ু মামনি খায়িয়ে দিয়েছে!

“হির কোথায়?”

“হিরু মামনি তো ঘুমায় ?”

“হিরু আর লিয়ু কি আপনাকে বলেছি না ওভাবে না বলতে।”.

“আরে ওটাই তো কতো সুন্দর লাগে বলতে সহজ ও তো। আচ্ছা বাদ দাও জাবিন মামনি চলে এসেছে। নাও কথা বলো।”

জাবিনকে ফোন দিয়ে নীল চলে গেল। এখন স্কুলের জন্য বেরুবে তাই। মেঘ জাবিনকে সব জানালো। জাবিন খুশি হলো সাথে দুঃখও পেল। কারন ছোটবেলা থেকে ও ওনাদেরকেই আপন ভেবে এসেছে কিন্তু এই আপন মানুষ গুলোই পেছন থেকে ছুড়ি মেরেছে।মেঘ ফোন রাখতেই পেছনে ধূসরকে দেখল মেঘ একটু চমকালো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,

“এভাবে মূর্তির মতো কে দাঁড়িয়ে থাকে? আমি তো ভয়ই পেয়েছিলাম।”

“বাব্বাহ কাশফিয়া আয়মান মেঘ আবার ভয় ও পায় ভাবা যায়!”

“শুনুন ভয় সবাই পায় কেউ দেখায় কেউ দেখায় না।”

“তুমি তো আবার সব প্রকাশহীন রাখতেই পছন্দ করো তাই ঠিক বোঝা যায় না। আচ্ছা ঠিক আছে চলো!

“কোথায়?’

“শপিং এ তুমি তো শুধু বিয়ের দিনের জন্য শপিং করেছো ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য তো শপিং করো নি।”

“তো কি হয়েছে আমার নতুন জামা আছে আরো।”

“তোমার কালো রঙের কোন জামা আছে?”

“না নেই!”

“তাহলে চলো তুমি তো সবসময় সাদা আর ধূসর রঙের ড্রেস পরো আজ তুমি আর আমি কালো রঙ পরবো।”

“কোন দুঃখে?”

“আমার ইচ্ছে হলো তাই।”

“আমরা বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি শোক সভায় না।’

“কেন সরকার কি বলেছে শুধু কালো রঙ শোক সভাতেই পরতে হবে বিয়ে বাড়িতে পড়া যাবে না।”

“বড্ড কথা বলেন আপনি। আমরা অন্য রঙ পরবো কালো না। ওটা আমি রোজ পড়ি বোরকা আজ আমরা হালকা নীল রঙের ড্রেস পরবো।”

“হুম এটাও আমাদের দুজনকে মানাবে ভালো। রেডি হও শপিং এ যাবো তো।”

“চলুন!”

ওরা রেডি হয়ে শপিং এ গেল। ধূসর ওর পছন্দ মতো হালকা নীল আর সাদা রঙের কম্বিনেশনে একটা গ্ৰাউন পছন্দ করলো। তা দেখে মেঘ হালকা নীল আর সাদার কম্বিনেশনে পাঞ্জাবি পছন্দ করলো। দু’জনে শপিং শেষ করে বাড়ি ফিরলো। তখন আবার ধূসরের ইমার্জেন্সি এলো ও হাসপাতালে চলে গেল। ধূসর মেঘ কে বলল আয়মান চৌধুরীর সাথে চলে যেতে ও গিয়ে পরে জয়েন হবে। বিকেলে সবাই মুনের শুশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা পৌছে গেল সবাই ওনাদের ভালোভাবেই রিসিভ করলো। মেঘের দৃষ্টি একজন কে খুঁজছে। সবশেষে পেয়েও গেল। আকাশ দূরে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। মেঘ ওর কাছে গেল সবাই বিয়ে বাড়িতে এসে নিজেদের মতো ঘুরতে লাগলো তাই মেঘকে কেউ খেয়াল করেনি। আকাশ ফোনে কথা বলা শেষ করে ঘুরে কাউকে কে দেখেই চমকে উঠলো তা দেখে মেঘ বলল,,

“আমায় দেখে চমকালেন বুঝি মিস্টার আকাশ মাহমুদ?”

আকাশ নিজেকে সামলিয়ে নিল। ও কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলো এটা মেঘ তাই ও বলল,,

“না ঐ একটু তা মেঘ কেমন আছো?”

“ভালো না থাকলে আসতাম নাকি।”

“বাহ বেশ ভালো উত্তর তা শুনলাম বিয়ে করেছো তাহলে আমাকে বিয়ে করতে কি সমস্যা ছিল আগে।”

“সবাই কি আর আমাকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। আমার জীবনসঙ্গী হওয়ার জন্যও আলাদা যোগ্যতা দরকার। আপনিই তো বলতেন আমি ডিফারেন্ট তাহলে।

“তোমার তেজ দেখি এখনো কমে নি আগের মতোই রয়েছে। নীলিমাও তো এমন তেজ দেখাতো কিন্তু পরিশেষে কি হলো মৃত্যুকে কতো যত্নে আলিঙ্গন করে নিল।”

মেঘ হাসলো সেই হাসিতে কি আছে। দীর্ঘশ্বাস নাকি তাচ্ছিল্যতা কিন্তু এটা তো আকাশ দেখতে পাচ্ছে না। নিকাব দিয়ে মুখ যে ঢাকা। মেঘ কিছু বললো না। আকাশ বলল,,

“আমি বুঝলাম না এক চালচুলুহীন মেয়ের জন্য তুমি আমার সাথে লড়াই করছো।”

“নীলিমা কোন চালচুলুহীন মেয়ে নয় ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।”

“হ্যা হ্যা ঐ বেস্টফ্রেন্ড তা তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর ছেলে কোথায় শুনি। সেদিন একটুর জন্য মিস হয়ে গেছিল। নাহলে সেদিনই সব ক্ষতম করে দিতাম।”

“আপনার ভাগ্য ভালো আপনি এতদিন দেশে ছিলেন না। লুকিয়ে ছিলেন নাহলে?”

“নাহলে কি করতে ঐ ****** বাচ্চা কে মারার জন্য কি করতে?”

মেঘ রেগে আকাশের করার ধরে বলল,,

“এই আকাশ মাহমুদ একদম আমার নীলিকে গালি দিবি না। নাহলে তোর জিহ্বা কেটে ফেলে দিব বলে দিলাম।”

মেঘ নিজেকে সামলিয়ে আকাশের করার ছেড়ে দিল কারন এটা বিয়ে বাড়ি। মেঘ রাগে কাঁপছে ও জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিল। ইচ্ছে করছে আকাশ কে খুন করে ফেলতে। কারন নীলি শুধু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল না ওর বোন কম মা ও ছিল। ওকে সবসময় আগলে রাখতো। আকাশ হাসছে মেঘের অবস্থা দেখে বলল,,

“কেন বললে কি করবে অবশ্য তোমার দোর কতটুকু জানা আছে আমার।”

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“সামনের জন কে কখনো দূর্বল ভাবা উচিত নয় এটা হারের লক্ষন বহন করে। আর সবথেকে বড় কথা আপনি তো আমার নীলিকে বলেন নি আপনি তো আপনার পিতা মাতাকে লানত করলেন। মূলত তাদেরকেই গালি দিলেন।”

“এই মেঘ মুখ সামলে কথা বল!”

মেঘ হাসলো তারপর বললো,,

আপনি বোধহয় জানেন না ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পিতা-মাতাকে গালি দেয়া কাবীরাহ গুনাহ। সহাবা কিরাম প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কেউ কি তার পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কোন ব্যক্তি অন্যের পিতাকে গালি দেয় প্রত্যত্তরে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। কেউ বা অন্যের মাকে গালি দেয় জবাবে সেও তার মাকে গালি দেয়। (ই.ফা. ১৬৫; ই.সে. ১৭১)

(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬৪)

এখন বুঝলেন তো অন্য কাউকে গালি দেওয়া প্রকৃতপক্ষে নিজেকে গালি দেওয়া। ”

আকাশ মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। এক কথায় কারো মুখ বন্ধ করতে হয় সেটা মেঘের কাছ থেকে কেউ শিখুক। আকাশ তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“তুমি যতোই চেষ্টা করো না কেন নীলির ছেলেকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না।”

“আগে তাকে পেয়ে দেখান তারপর দেখবো।”

“এতবেশি উড়ো না ঝড়ে পরে যাবে।”

“সেটা দেখা যাবে। আপনি ইচ্ছে করে ও বাড়িতে গিয়েছিলেন তাই না। আমি খোঁজ নিয়েছে মুহাজিদ ভাইয়ের কাজিনের তেমন কাছের বন্ধুও না যে আপনাকে বিয়েতে নিতে হবে। এক প্রকার জোর করেই গিয়েছেন। আর হ্যা আজ থেকে এক মাস আগে আপনি দেশে ফিরেছেন। আর এসে সব কিছু ঠিক করার পর আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন আপনি কি মনে করেছিলেন আমি আপনার মেসেজ বুঝতে পারবো না। আপনার কি মনে হয় আমি আগের মেঘ আছি।”

মেঘের কথা শুনে আকাশ থতমত খেয়ে গেল ও কি করে জানতে পারলো। আকাশ বলল,,

“তুমি সবকিছু জানলে কিভাবে?”

‘সেটা আপনার জানতে হবে না। এখন আসি আমার হাজবেন্ড এলো বলে।”

মেঘ ওখান থেকে চলে গেল। ধূসর এসে পরেছে মেসেজ দিয়েছে মেসেজ টা দেখেই মেঘ আকাশকে ঐ কথা বলে চলে গেল। মেঘ মুনের সাথে দেখা করতে গেল। তখন ধূসর ও গেল। মুন জিজ্ঞেস করল,,

“এই মেঘ সবাই সেই কখন এসেছে তুই কোথায় ছিলি?”

“এক পুরোনো পরিচিত একজনের সাথে দেখা হয়েছিল তাই পুরোনো হিসেব নিয়ে কথা বলছিলাম তাই।”

মুনের সাথে কথা শেষ করে ওখান থেকে এলো তখন পাশ থেকে মুনের ফুপুশাশুড়ি বলল,,

“তা মেঘ তোমার হাজবেন্ড আসে নি? না মানে একটু দেখতাম আর কি কেমন?

মেঘ ওনার কথার বুঝতে পেরে ধূসরের হাত ধরে বলল,,

“আন্টি এই যে উনি ডক্টর ধূসর এহসান শুভ্র আমার হাজবেন্ড। কাল তো আপনার ছেলের সাথে কথা হয়েছে। কেন আপনাকে বলে নি।”

“আসসালামু আলাইকুম আন্টি!”

ধূসরের সালামে মহিলা বোধহয় একটু থতমত খেল। উনি সালামের উত্তর নিয়ে চলে গেল তাড়াতাড়ি করে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“উনার আবার কি হলো?”

“কিছু না চলুন খাবার খাওয়ার জন্য আব্বা ডাকছে।”

“তা ঠিক আছে কিন্তু আমার মনে হয় কিছু একটা তো আছে। কারন উনি আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।”

“চলুন তো?”

‘বলো না!”

“আচ্ছা বেশ কয়েকদিন আগে উনি ওনার ছেলের জন্য আমার বিয়ের কথা বলতে গিয়েছিলেন। তাই আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি আমার বিয়ে হয়েছে তাই আপনাকে আলাদা করে দেখতে চাইলো যে আমার মতো কালো মেয়ের হাজবেন্ড কে এখন বুঝতে পেরেছেন।

ধূসর মেঘের হাত ধরে কাছে এসে বলল,,

“শুনো মেয়ে তুমি কালো নও তুমি মায়াবী। তুমি সদ্য ফোটার ন্যয় আমার একান্ত ফুল। আমার সুহাসিনী আমার মনহরিনী, আমার ভালোবাসা, আমার একান্ত অনুভূতি। আমার ভালোবাসাকে কালো বলবে না মেয়ে আমার ভালোবাসা এক অন্যরকম শুভ্রতা।”

ধূসরের কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

“আমি বলিনি অন্যদের কথা বললাম যাই হোক চলুন আব্বা ডাকছে তো।”

ওরা সবাই একসাথে খেল। আকাশের তো ধূসর আর মেঘকে একসাথে দেখে আগুন জ্বলছে বুকের ভেতর। সেই কতো বছর পরে মেঘের চেহারা দেখলো।
সবাই মুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো।

__________________

পরদিন সকালে ধূসররা সবাই বাড়ি যাবে। তাই মেঘের মনটাও খুব খারাপ। কারন এরা সবাই ওকে খুব ভালোবাসে। এ কয়েকদিন ওদের সাথে ছিল। সকালে নাস্তা শেষ করে সবাই ড্রয়িংরুমে বসলো। মেঘ দিলরুবা খানম এর হাত ধরে বললেন,,

“মা থাকুন না আর কয়েকদিন?”

“আবার আসবো তো এখন তো কয়েকদিন থাকলাম তোমার বাবার আর দিশানের অফিসে কাজ আছে।”

“তারা এখান থেকে অফিস করবে?”

“তা হয় না মা। আবার আসবো তো তোমায় নিতে।”

এ কথা শুনে মেঘ লজ্জা পেল। ওর অবস্থা দেখে দিলরুবা খানম হাসলেন। মেঘের গালে হাত রেখে বললেন,,

“এখন আর আমাদের মেয়েকে ঘরে তুলতে দেরি করবো না।”

তখন রোহিনী হেসে মেঘের ঘাড়ে হাত রেখে বলল,,

“হ্যা মা এখন তাড়াতাড়ি করুন আমার বোনটাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলুন।”

তখন রিমঝিম একসাথে বলে উঠল,,

“ইয়েইইই ছোট মা খুব তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে যাবে। তারপর আমরা সবাই একসাথে থাকবো।”

মেঘ হেসে হাঁটু গেড়ে বসে ওদেরকে জরিয়ে ধরলো। মূলত ও লজ্জা পাচ্ছে। সেটা আর কেউ না বুঝলেও ধূসর ঠিকই বুঝলো। ও হেসে বলল,,

“আরে তোমরা থামো তোমাদের মেয়ে তো লজ্জা পাচ্ছে।”

তখন এহসান খান বলল,,

“হ্যা আয়মান বল কবে আমাদের মেয়েকে আমরা ঘরে নেব। অনেক অপেক্ষা করেছি।”

তখন আয়মান চৌধুরী হেসে বলল,,

“এত তাড়া কিসের নিবি তো?”

“এখন আমরা আর দেরি করতে চাই না।”

আয়মান চৌধুরীর চোখ ভিজে উঠলো। সবে তো একজন কে বিদায় দিল এখন আবার সবথেকে প্রিয় মেয়েকে দিতে হবে। মেঘ বোধহয় বুঝতে পারল ও গিয়ে আয়মান চৌধুরীর হাত ধরলেন। তা দেখে আয়মান হাসলেন আর বললেন,,

“আম্মা আপনার সাথে খুব তাড়াতাড়ি আমার সাময়িক বিচ্ছেদ হতে চলেছে।”

এটা শুনে মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো। সবারই একটু খারাপ লাগলো এই কথায় কি ছিল জানা নেই। হুট করে সবার মুখ থেকে হাঁসি গায়েব হয়ে গেল। মেঘ কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,,

“এই সাময়িক বিচ্ছেদেই এতো কষ্ট পাচ্ছেন আব্বা। কিন্তু কখনো যদি এমনটা হয় এই ইহকালের জন্য আমাদের একেবারে বিচ্ছেদ হলো তখন কি করবেন।”

কথাটা শোনার মাত্রই উনি চমকে উঠলো। এ কেমন কথা। মেঘ দূরে গিয়ে ওনার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। আয়মান চৌধুরী খুব শক্ত করে মেয়ের হাত চেপে ধরলেন। মেঘ বুঝতে পারলো আর বলল,,

“আব্বা সেরকম কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ।”

আয়মান চৌধুরী সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তো এহসান তোরা কবে চাচ্ছিস সেদিনই তোদের মেয়েকে তোদের হাতে তুলে দেব।”

এ কথা টা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেল। এহসান বলল,,

“মেঘ বলেছে অনুষ্ঠান করবে না সব ঘরুয়া ভাবে হবে। সবে তো মুনের বিয়ে হলো তাহলে আমরা একমাস পর মেঘকে নিয়ে যাবো ঠিক আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

সবাই মিলে ওদের বিয়ের কথা বলতে লাগলো। মেঘ ওখান থেকে উঠে রুমে গেল। ধূসর ও ওকে দেখে রুমে গেল। কিছুক্ষণ পর সবাই রেডি হওয়ার জন্য ওপরে গেল। ধূসর রুমে গিয়েই বলল,,

“মেঘ মন খারাপ?”

“কই নাতো!

“এই যে সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে!”

“সবাইকে কোথায় আব্বা কে আর আজানকে!”

“মানে?”

মেঘের হুস ফিরলো কথায় কথায় কি বলছিল। ও বলল,,

“আরে তেমন কিছু না। আপনি বাড়ি যাবেন তো গোছগাছ করেছেন?”

“কাল রাতেই না গুছিয়ে দিলে।”

“মেঘ!”

‘হুম!”

“তুমি খুশি নও একমাস পর আমি আর তুমি একসাথে থাকবো।”

“আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে?”

“বোঝা যাচ্ছে না ধূসর রাঙা মেঘ কি না।”

“যদি বলি খুশি নই তাহলে রেখে যাবেন নাকি আমাকে?”

“না যাবো না এই দিনটার জন্য কতো অপেক্ষা করেছি এখন অপেক্ষা শেষ।”

“তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

“আমার মনের শান্তির জন্য!”

ধূসর মেঘের গালে দু হাত দিয়ে ধরে বলল,,

“মেঘ আমি বোঝাতে পারবো না আজ আমি কতোটা খুশি । তোমায় এখন একেবারের মতো পাবো। কতো দিন তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি এই দিনটার জন্য।আমার জীবনের বেস্ট দিনের মধ্যে এটা একটা কারন এই দিনটা আমার জন্য খুশি নিয়ে এসেছে।”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“রেডি হোন আর বাড়ি যান এখন সবাই প্রায় রেডি।”

“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা দিলে তো আমার খুশি থামিয়ে। নিজে তো নিজের কোন কিছু প্রকাশ করোই না আবার আমার খুশি প্রকাশ করাতে বাগড়া দিচ্ছো।”

“আচ্ছা বলুন শুনছি!”

“বলবো না এখন নিষ্ঠুর মেয়ে কোথাকার!”

“আচ্ছা সরি বলুন!”

“না বলবো না সরো আমি এখন রেডি হবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না । কেউ যদি না চায় তাহলে জোর করতে হয় না।”

“নিষ্ঠুর একটা!”

মেঘ মুচকি হাসলো। ধূসর তা দেখে মুখ বাঁকিয়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেল। শার্ট প্যান্ট পরে বেরিয়ে এলো। মেঘ চিরুনি এগিয়ে দিল। ধূসর চুপচাপ নিল। সেন্ট এগিয়ে দিল ঘড়ি এগিয়ে দিল। সবকিছু এগিয়ে দিল। ধূসর কিছুই বললো না। সবশেষে মেঘ বলল,,

“সেদিনের ইচ্ছের কথা ভুলে গেলেন নাকি মিস্টার?”

“এই ধূসর এহসান শুভ্র কিছু ভুলে না। কয়েকদিন ছুটি কাটালাম ব্যস্ত থাকবো। ব্যস্ততা কমলেই বলবো।”

“হুম!”

“শাড়িটা আমিই কিনবো?”

“পাঞ্জাবি আমি কিনবো কি?”

‘তোমার ইচ্ছে! তোমার জামাইকে তুমি কিনে দিবে কি না আমি কি জানি কিন্তু আমার বউকে আমি কিনে দেব।”

“ঠিক আছে তাহলে আমিও আমার জামাইকে দিব খুশি।”

“হুম ঠিক আছে।”

সবাই রেডি হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে। দিশান ধূসর কে ডাক দিল। ধূসর মেঘের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,

“সাবধানে থেকো আমি জানিনা আমার অগোচরে কি কি করে বেড়াও । নিজের খেয়াল রেখো।”

“আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন!”

“হুম চলো।”

মেঘ নিচে গেল সবাইকে ভালোমতো বিদায় দিল। ড্রয়িং রুমে আসতেই ওর আব্বার দেখা পেল ও ওর আব্বার কাছে গিয়ে বলল,,,

“আব্বা আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি?”

“অবশ্যই আম্মা!”

মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো। আয়মান চৌধুরী চুপ করে আছেন উনি বুঝতে পারলেন মেয়ের মন খারাপ । বাকি সবাই বাবা মেয়েকে দেখছে। কিছুক্ষন পর মেঘ উঠে রুমে চলে গেল। সবাই কিছুটা অবাক হল।

তিন-চার দিন পর মেঘ দাঁড়িয়ে কোর্টের সামনে জাবিন আসবে তাই। ওরা আসলো মেঘ সহজেই জাবিনের বাবা মায়ের মৃত্যু যে ওর চাচা করেছে এটা প্রমান করে দিল। মেঘ আরো একটা জয় পেল। কোর্ট থেকে বেরিয়ে জাবিন মেঘকে ধরে কান্না করলো। ওরা নিজেদের সামলিয়ে দাড়াতেই হুট করে একটা ছেলে এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,

“আমাকে বিয়ে করবেন মিস?

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে