ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-১৩+১৪

0
999

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ চোখ বুজে শুয়ে আছে ধূসর এখন মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হুট করেই আজান নক করলো,,

“আসবো আপু?”

মেঘ চোখ খুলল কিছু বলবে তার আগে ধূসর বলল,,

“এসো আজান।”

আজান ভেতরে ঢুকে একটু থমকে গেল। ও ভাবতেই পারেনি ধূসর ভেতরে এভাবে মেঘের মাথা কোলে করে রাখবে। আজান কিছু বলবে তার আগেই ধূসর বলল,,

“আসলে আজান তোমার আপুর মাথা ব্যাথা করছিল।”

“ওহ আচ্ছা আপু কি ঘুমিয়ে পরেছে?”

তখন মেঘ বলল,,

“না এখন ঠিক আছি মাথা ব্যাথা নেই।”

বলেই মেঘ তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। আর বলল,,

“কি হয়েছে কিছু বলবি?’

“তোমাকে মুন আপু ডাকছে।”

“তুই যা আমি আসছি।”

“ঠিক আছে।”

বলেই আজান চলে গেল। তখন ধূসর বলল,,

“একটু ঘুমিয়ে নিতে পারতে তো।”

“আরে তেমন মাথা ব্যথা নেই। আপনি যান দুলাভাই দের সাথে গল্প করুন। আমি আসছি।”

“ঠিক আছে।”

ওরা দুজন একসাথে বের হলো মেঘ মুনের ঘরে ঢুকলো। আর ধূসর নিচে চলে গেল। মেঘ গিয়ে নক করল,,

“আপু আসবো?”

“হুম আয় তোর জন্যই অপেক্ষা করছি।”

“হুট করে আমাকে ডাকলে কিছু দরকার।”

“আয় বোস তারপর বলছি।”

মেঘ মুনের বিছানায় মুনের পাশে বসলো। ছোট একটা অ্যালবাম বের করলো। আর বলল,,

“আজ তোকে কিছু কথা বলবো অবশ্য কখনো বলতাম কি না জানি না। তবে মনে হলো বলা উচিৎ।”

“বলো না শুনছি তো!”

অ্যালবাম বের করে মুন একটা ছবি বের করলো। যেখানে একটা তিন বছরের বাচ্চা মেয়ে একটা ছোট বাচ্চার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সেই ছবিটা মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“এই যে এই ছবিটিকে দেখছিস এটা হলাম আমি আর দোলনায় যে বাচ্চা টা সেটা হলি তুই। তুই ভাবতে পারবি না তুই যেদিন হলি আমি কতোটা খুশি হয়েছিলাম। একটু পরপর আমি শুধু তোকে দেখতাম মাকে বলতাম তোর খিদে পেয়েছে কি না তুই খাবি কি না। আমি নাকি সবসময় তোর আশেপাশে থাকতাম। এই কথাটা বাবা বলেছিল। যখন আমার পাঁচ বছর হলো তখন আমি পুতুল খেলতাম আর পুতুল কে সাজাতাম আর বলতাম আমার ছোট বোনু বড় হলে তাকে আমি সাজিয়ে দেব। তুই আধো আধো বলিতে আমাকে আপু বলতি সেটা শুনে আমি খিলখিল করে হাসতাম। আমি তোকে নিয়ে খুব খুশি ছিলাম রে। তোকে আমি খুব ভালোবাসি এখনো শুধু সবকিছুর নিচে চাপা পরে গেছে। আমি তোকে ভালোবাসি মেঘ কোনদিন জাহির করতে পারি নি। আমি ভাবতেও পারিনি আমি তোকে হাড়িয়ে ফেলবো। মা যখন তোকে অবহেলা করতো আমার খুব কষ্ট হতো তবুও কিছু বলতাম না। কারন ঐ ঘটনার পর আমি থমকে গিয়েছিলাম। তুই কি করে করতে পারলি । আমার খুব রাগ হতো তোর ওপর কেন তুই ওরকম করতে গেলি। ঐ ঘটনার পর মা আমাকে বলেছিল তোর আশেপাশে যেন না যাই তোর সাথে কথা যেন না বলি তাহলে মা নাকি কষ্ট পাবে তোকে দেখলে নাকি মায়ের কষ্ট বেড়ে যায়। এই জন্য তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম। বারবার মনে হতো সবকিছুর জন্য তুই দায়ী। মায়ের চোখের পানি তোর জন্য তাকে হাড়িয়েছি আমরা তোর জন্য এই বিষয়গুলো আমায় খুব পীড়া দিত। এই জন্যই চেয়েও কোনদিন তোর সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারি নি। শুধু অবহেলাই করে গেছি।”

মুনের চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু মেঘ যেন স্থির ও স্থির হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুন ওর দিকে তাকাতেই মেঘ মুচকি হেসে বলল,,,

“তুমি কি বললে আমায় খুব ভালোবাসতে। না এটা ভুল আপু তুমি আমায় ভালোবাসলেও আমার থেকে বেশি তাকে ভালোবাসতে। সেই জন্যই অবহেলা করেছো। তুমি আমায় খুব ভালোবাসতে না যদি বাসতে তাহলে আমার সাথে এগুলো করতে পারতে না। তুমি তো আমায় সেই ঘটনার পর থেকে দূরে চলে যাও নি। সে আমাদের জীবনে আসার পর থেকেই দূরে সরে গেছো তুমি আর মা। যখন সে এলো তুমি তখন আমাকে সময় না দিয়ে তাকে সময় দিতে। আমার কথা তো তোমার মাঝে মাঝে মনেও থাকতো না। তোমরা সবাই ছিলে সুন্দরের পূজারী আমার মতো কালো মেয়েকে ভালোবাসতে হয়তো তোমাদের ইচ্ছে হতো না। যখন দেখলে সবাই আমার থেকে দূরে সরে গেছে তখন তুমি আব্বার মতো আমার হাত ধরতে পারতে। কিন্তু তুমি করো নি তুমি আমার থেকে তাকে বেশি ভালোবাসতে। এর জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই। তবে এটা সত্যি আমি তোমায় ভালোবাসি।”

সব শুনে মুনের যেন কান্না টা আরো বেড়ে গেল কারন এখানে ও যা বলেছে সব সত্যি। মুন মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“আমাকে মাফ করে দে আমি বুঝতে পারি নি । আমি তোকে এভাবে হাড়িয়ে ফেলবো। আমি তোকে খুব ভালোবাসি মেঘ। তোকে যতবার আঘাত করেছি অপমান করেছি ততবার আমার খারাপ লেগেছে কিন্তু কোনদিন তোকে বলতে পারি নি এই বোনটাকে মাফ করে দে।”

“আপু কাঁদছো কেন? কান্না থামাও । তোমার বিয়ে তো দুদিন পর তখন না হয় কেঁদো! এখন কাঁদছো কেন?

মুন মেঘকে ছেড়ে দিল মুন নিঃশব্দে কাঁদছে মেঘ মুনের গালে হাত দিয়ে বলল,,

“আপু এভাবে প্লিজ কেঁদো না কান্না থামাও তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার একটুও ভালো লাগে না। তোমার মনের শান্তির জন্য দিলাম মাফ করে এখন খুশি। প্লিজ কান্না করো না। তবে হ্যা মানুষ কে এতটা আঘাত দিও না যাকে ক্ষমা করতে গিয়ে দু বার ভাবতে হয়। তোমার ওপর আমার অভিযোগ নেই। আর হ্যা এই যে নতুন একটা পরিবেশ এ যাচ্ছো এখানে অনেক রকম মানুষ পাবে সবাই কিন্তু একরকম হবে না। সত্যতা না জেনে কখনো কাউকে দোষারোপ করবে না। সবসময় চোখের দেখা সঠিক হয় না। আর সব থেকে বড় কথা কি জানো যখন কাছের মানুষ তোমার দিকে আঙুল তুলবে তখন তোমার থেকে অসহায় আর কাউকে মনে হবে না। এখন আসছি নিজের খেয়াল রেখো।”

মেঘ উঠে যাবে তখন মুন বলল,,

“ধূসর তোকে অনেক ভালোবাসে তাই নারে। আমি চাই তোর সকল দুঃখ সে তার ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিক। সারাজীবন তোরা খুব ভালো থাক। আর পারলে এই অভাগা বোনের জন্যও দোয়া করিস।”

মেঘ ঘুরে মুচকি হাসলো কিছু বললো না। রুম থেকে চলে গেল। মুনের ঘরে থেকে বেরিয়ে আয়না চৌধুরীর সাথে দেখা হলো তা দেখে মেঘ বলল,,

“তা ফুপি বাড়ির সকল কাজ তো ভুতেই করছে দেখছি। তবে জানেন কি মানুষ যাকে নিচে ফেলতে চায় আল্লাহ তায়ালা তাকে ওপরে তুলে ধরে। সাবধান করছি আপনাকে! ভাববেন না কিছু সময় ছেড়ে দিই বলে সবসময় ছেড়ে দিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন,,
“ধ্বং*-স তার, যে মানুষকে সামনে অপ*মান করে!”,,
~সুরা হুমাযাহ-০১

আপনাকে দেখে সত্যিই আমার করুনা হয় জানেন। এই মেয়েটা ঠিকমতো সংসার করতে পারলো না। তার ছেলে মেয়ে গুলোও তার থেকে দূরে থাকে‌। মাঝে মাঝে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায় নিজে নিজে। নিজের বলতে তেমন কিছুই নেই। এই যে বিয়ে বাড়িতে এত কিছু অথচ আপনার ছেলে মেয়ে দুটো আপনার কাছে নেই পরে সুদূর লন্ডনে। যারা কি না আপনার সাথে ফোনেও কথা বলতে চায় না নিজের মতো বিয়েও করে নিয়েছে। এর থেকে বড় দুঃখ কি হতে পারে। এই যে ছেলেমেয়ের কাছে যান অথচ কেউ থাকেন আপনার আশেপাশে মাঝে মাঝে এখানে আসেন আমার আব্বা তো আপনার ধারেকাছেও যায় না। আমার আব্বার ও আপনার প্রতি করুণা হয় কারন নিজের বোন তো। এই জন্য কিছু বলে না।
এ কথা শুনে আয়না চৌধুরী”মেঘ” বলে চিৎকার করে উঠলো। তা দেখে মেঘ বলল,

“চিৎকার করবেন না চিৎকার করলে সত্যি কখনো মিথ্যা হয়ে যাবে না। এখনো পুরোপুরি কিছুই বলি নি। সমস্যা নেই পরে একদিন বলবো না হয়। আজ আসি কেমন আর হ্যা আমার থেকে দূরে থাকলে আপনার জন্য ভালো কখন কি হয় বলা তো যায় না। তখন তো আর এটা বলতে পারবেন না। “সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”

বলেই মেঘ ওখান থেকে চলে গেল এদিকে আয়না চৌধুরী রাগে ফেটে পরছে এতো বড় সাহস মেয়েটা তাকে এত কথা শুনিয়ে গেল। হুট করেই মেঘের মন অনেক টাই ভালো হয়ে গেল। ও নিচে গিয়ে ওর আব্বাকে গিয়ে বলল,,

“আব্বা চলেন একটু ঘুরে আসি। সামনের ঐ রাস্তা দিয়ে।”

“কি হয়েছে আম্মা মনে হচ্ছে খুব খুশি?”

“আজ যে সবার মুখের ওপর জবাব দিয়ে এসেছি।”

“আম্মা এখন আপনার জামাই এখানে উপস্থিত আছে তাকে নিয়ে না হয় ঘুরে আসুন। আমি আর আপনি পরে না হয় যাবো।”

“এখনি পর করে দিচ্ছেন আব্বা। তাহলে ঐ বাড়িতে যাওয়ার পর কি হবে আমার।’

“আহা আম্মা আপনি আমার কথার অন্য মানে বের করছেন। এখন দেখুন ধূসর এ বাড়িতে তাকে রেখে যদি আমি আর আপনি কোথাও যাই তাহলে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। তাছাড়া আপনার শুশুড়বাড়ির লোকজন ও তো আছে তাদের নিয়ে যান।”

“সেসব ঠিক আছে কিন্তু আব্বা এখন যে আপনার সাথে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল। আপনার সাথে একটু সময় কাটানোর ইচ্ছা ছিল।”

“আজ না আম্মা অন্য একদিন আবার হবে। তাছাড়া হির আর লিয়াও তো আছে।”

“হুম!”

“হির আর লিয়া কি রাতে থাকবে?”

“না আব্বা ওরা ফ্ল্যাটে চলে যাবে আবার না হয় সকালে আসবে।”

_______________

“এই যে মিস আর কতোদিন এই অবুঝ বালক টাকে অপেক্ষা করাবেন বিয়েটা করে নিন না। ”

“দেখুন মিস্টার ইশান আপনাকে এর আগেও বলেছি এখন ও বলছি আমি বিয়ে করবো না।”

“শুনো মেয়ে ভালোমতো বলছি কথা কানে যাচ্ছে না। একদিন কিন্তু তুলে নিয়ে আসবো। ”

“এ আইছে তুলে নিয়ে যাবে আপনি জানেন আমি কে আমি বেস্ট লয়ার কাসফিয়া আয়মান মেঘ এর বান্ধবী জাবিন আহমেদ। একদম কেস ঠুকে দেব। তারপর সারাজীবন জেলে বসে বিয়ের স্বপ্ন দেইখেন।”

“ভয় দেখাচ্ছেন?

“না তো যা করবো তাই বলছি। শুনুন মিস্টার ইশান এমনিতেও আপনার জন্য আমার লাইফটা এলোমেলো হয়ে গেছে আমি চাই না যেটুকু ঠিক আছে সেটুকুও এলোমেলো হয়ে যাক। আপনি দয়া করে আমাকে আর ফোন দিবেন না। সবথেকে বড় কথা আমি চাইনা আপনাকে।”

“কিন্তু আমি তো আপনাকে খুব করে চাই মিস জাবিন।”

“আপনি বড় ঘরের সন্তান আপনার মা বাবার আপনার ওপর এক্সপেক্টেশন আছে বিয়ে করে নিন আমার কথা ভুলে যান।”

“তোমাকে ভোলাই তো সম্ভব হচ্ছে না জাবিন। তুমি কেন বুঝতে চাইছো না আমি তোমাকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি আমি তোমাকে পেতে চাই তোমায় হাড়াতে চাই না। আমি তোমার কথা বাড়িতে বলেছি তারা রাজি তোমায় নিয়ে তাদের কোন সমস্যা নেই। প্লিজ জাবিন রাজি হয়ে যাও।”

এই প্রথম ঈশান জাবিনকে আপনি থেকে তুমি করে বলল জাবিনের ভিশন কান্না পাচ্ছে। কিন্তু সে যে নিরুপায়। ও বলল,,

“জানেন মিস্টার ইশান সবার জীবনেই একটা সময় আসে না সে এগুতে পারে না পেছাতে। তখন সময়টা এত অসহায় লাগে। শুনুন আমার জন্য অপেক্ষা করবেন না।”

“তোমার চাচার সাথে আমি কথা বলবো। ”

“তার দরকার নেই। আমাদের ভাগ্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের পৃথিবীতে আসার আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। মনে করুন আমি আপনার ভাগ্যে নেই তাই তো এতো জটিলতা। ফোন রাখছি দয়া করে আমাকে ফোন করে আমার দুঃখ বাড়াবেন না। আর হ্যা নাম্বার টা ব্লকলিস্টে ফেলে দিচ্ছি। অন্য নাম্বার দিয়ে কল করবেন না। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই জাবিন ফোন কেটে দিল। ওপাশে ইশান অশ্রুসিক্ত নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ বাদে বলল,,

“ভালোবাসার আর মানুষ পেলি না এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই তোকে ভালোবাসতে হলো। যে তোর ভালোবাসা দেখেও দেখে না। যদিও ওরই বা কি দোষ তোর পাকনামোর ফলটাও মেয়েটা ভোগ করছে এতদিন যাও ওর চাচাচাচি ওর সঙ্গে ছিল এখন তো ও একেবারে একা হয়ে পরেছে। এর জন্য তুই দায়ী। তোর সাথে যা হচ্ছে একদম ঠিক হচ্ছে।”

_________________

বাড়ি অনেক টাই সাজানো কমপ্লিট। বাড়িটা লাইটের আলোয় জ্বলজ্বল করছে। এদিকে মেঘ রিমঝিম কে নিয়ে সোফায় বসে ছিল সবাই মিলে গল্প করছে। হির আর লিয়া অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছে। রিমঝিম ওর মায়ের কাছে চলে গেল। হির আর লিয়া হুট করেই মেঘের দু পাশে বসে মেঘের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। মেঘ ও হাত দিয়ে তাদের আগলে নিল। মেঘ বলল,,

“খুব টায়ার্ড লাগছে?

লিয়া বলল,,

“হুম কালকেই একটা ইভেন্ট শেষ করে ফিরেছি রাতে ভালো ঘুম হয় নি। আজকের দিনটাও তেমন আরাম করতে পারি নি তাই একটু বেশি ক্লান্ত লাগছে।”

“আই এম ভেরি সরি মাই ডিয়ার বেস্টফ্রেন্ডস। আসলে ঐ ঘটনাটা না ঘটলে এরকম,,

তখন হির বলল,,

“টেনে মারবো এক চড় একদম সরি বলবি না। এটা কোন ব্যাপার না এরকম কাজ অনেক করেছি।”

“সত্যি সরি!”

“মার খেতে না চাইলে চুপচাপ বসে থাক একটু রেস্ট নিয়ে নিই। খুব ঘুম পাচ্ছে।

“তাহলে রুমে চল। রেস্ট নিবি!”

“না এখন চলে যাবো অনেক রাত হয়েছে। জাবিন ও সে তো একা রয়েছে।”

তখন লিয়া বলল,,

“কিন্তু এখন ড্রাইব করতে ইচ্ছে করছে না।”

“চল আমি তোদের দিয়ে আসি!”

“না এত মানুষ রেখে যেতে হবে না। তাছাড়া ধূসর ভাইয়াও তো আছে।”

এতক্ষন ওরা দুজন চোখ বুজেই কথা বলছিল ধূসর যে ওদের পাশে সেটা বোধহয় ওরা দেখে নি। বাকি সবাই মেঘদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ তেমন কারো সাথে মেশে না এমনকি ওর গায়ে হাত দেওয়াও পছন্দ নয়। কিন্তু এই দুটো মেয়ে ওর কাঁধে মাথা রেখেছে এটা বোধহয় কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। হুট করে ধূসর বলল,,

“সমস্যা নেই শালিকারা আমিও না হয় তোমাদের বান্ধবীর সাথে তোমাদের ড্রপ করে দিব।”

লিয়া আর হির একসাথে চোখ খুললো। সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে বললে চলে। হির আর লিয়া মাথা তুলল তখন মেঘ বলল,,

“খেয়ে নে তারপর যাবো আমরা!”

“না খাবো না আর তোর যেতে হবে না।”

“তুই চুপ কর আমি নামিয়ে দিয়ে আসবো মানে নামিয়ে দিয়ে আসবো। কোন কথা না তোরা দারা আমি ওপর থেকে আসছি।”

মেঘ ওপরে চলে গেল মাথায় ওড়নাটা ভালোভাবে জরিয়ে মাক্স আর ক্যাপ হাতে নিয়ে বের হলো। বের হতেই ধূসর বলল,,

“আমাকে নেবে না?”

“আপনাকে না নিলেও আপনি যাবেন এটা ভালো করেই জানি এখন চলুন।’

ওরা চারজন চললো তখন রোহিনী বলল,,,

“এটা হির আর লিয়া ছিল তাইনা নোলক?”

“হুম ভাবি বোধহয় খুব টায়ার্ড দেখে আমাদের খেয়াল করে নি নাহলে নিশ্চয়ই আমাদের সাথে কথা বলতো।”

“হুম আমারও তাই মনে হয় কিন্তু ওরা কি এই বিয়ের কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছে।”

এ কথা শুনে শায়লা বলল,,

“আপনারা চেনেন নাকি ওদের?”

“হুম ওরা তো মেঘের বন্ধু। সাথে হিয়া ওয়েডিং প্ল্যানার এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এটা ওদের দুজনের । অনেক বিয়ে ও অন্যান্য ইভেন্ট ভালো দক্ষতার সাথে করছে। ওদের তো ভালো নাম ডাক ও আছে। কেন আপনারা জানেন না ওদের ব্যাপারে।

এ কথা শুনে সকলেই অবাক হলো। এখন বুঝতে পারল সব কি করে হলো। তখন জায়মা বলল,,

“মুন তো প্রথমে হিয়া ওয়েডিং প্ল্যানার ওদের কেই কাজটা দিতে চেয়েছিল কিন্তু ওর বান্ধবী নিজের ভাইয়ের কথা বলে তাই মুন ঐ লোকটাকে কাজ দেয়। প্রথমেই যদি ওদেরকে কাজ দিত তাহলে এত কিছু হতোই না।”

তখন নোলক বলল,,

“কি হয়েছে আপু?”

এ কথা শুনে ও বাড়ির সকলেই একটু থতমত খেয়ে যায়। জায়মা নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“তেমন কিছুই না নোলক!”

এই বিষয়ে কেউ ঘাটালো না সবাই অন্য গল্পে মজে গেল। খুব সহজেই নোলক আর রোহিনী জায়মা শায়লাদের সাথে মিশে গেছে। দিশান ও ওদের হাজবেন্ড দের সাথে বেশ মিশে গেছে। তবে হির আর লিয়ার ব্যাপারটা প্রায় সবার কানেই পৌঁছে গেছে যে মেঘের বন্ধুরা কি করে।

_______________

ধূসর গাড়ি চালাচ্ছে পাশে মেঘ আর পেছনে হির আর লিয়া। ওরা দুজন চুপ করে বসে আছে। হুট করে ধূসর বলল,,

“সো বান্ধবীরা এতো চুপ কেন? নাকি আমি সাথে আছি বলে কথা বলতে কমফোর্টেবল ফিল করছো না।”

তখন হির বলল,,

“আরে ভাইয়া ব্যাপারটা তেমন না এনার্জি শেষ। খুব ঘুম পাচ্ছে।”

“ওহ আচ্ছা! তো হির বিয়ে কবে করছো?”

“এই তো ভাইয়া ছেলে পেলেই করে ফেলবো।”

“ওহ আচ্ছা তো লিয়া তোমার হাজবেন্ড আসবে কবে?”

“এই কয়েক মাসের মধ্যেই চলে আসবে বলছে।”

“আচ্ছা!”

“মুন আপুর বিয়ে তো হয়ে যাচ্ছে তা আপনি কবে আমার বান্ধবী কে ঘরে তুলবেন?”

“এই তো খুব শিঘ্রই।”

“যাক আলহামদুলিল্লাহ! কিরে মেঘ তুই কিছু বলছিস না কেন?

“কথা বলার স্কোপ পেলে না করবো। যাই হোক বাড়ি এসে গেছে।”

হির আর লিয়া নেমে পরলো লিয়া জিজ্ঞেস করল,,

“মেঘ তুই নামবি না? জাবিনের সাথে দেখা করে যাবি তো!”

“হ্যা নামবো তো তোরা যা আমি আসছি?”

ওরা চলে গেল মেঘ ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“কিছু বলবে?”

“তেমন কিছু না এখানে ওরা তিনজন মেয়ে থাকে তাই ভেতরের কি অবস্থা,,আপনার ভেতরে যাওয়া কি ঠিক হবে?”

“আমিও তোমাকে এটাই বলতে চাইছিলাম এভাবে ভেতরে যাওয়াটা ঠিক হবে না। তুমি যাও দেখা করে আসো আমি অপেক্ষা করছি।”

“শুকরিয়া বোঝার জন্য!”

মেঘ হেসে ভেতরে চলে গেল। ধূসর বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো। এই ফ্ল্যাটে মেঘ থাকতো আগে এখানে থেকেই পড়াশোনা করেছে কখনো মেঘের ফ্ল্যাটে ঢুকা হয় নি। এমনকি দেশে আসার পরেও মেঘ কয়েকবার এখানে একা থেকেছে কখনো ওর এই ফ্ল্যাটে ঢোকা হয় নি। শুধু বাইরে থেকেই দেখেছে। মেঘ প্রায় বিশ মিনিট পর এলো। আর এসেই বলল,,

“সরি সরি একটু বেশিই অপেক্ষা করালাম আসলে ও ছাড়ছিলই না। বায়না করছিল!”

“কে ছাড়ছিল না?”

“ঐ ন,,,, না মানে জাবিনরা অনেক দিন হলো সব বান্ধবীরা একসাথে আড্ডা দিই না তাই।”

“ওকে ওকে আমি কিছু মনে করি নি। চলো না লং ড্রাইভে যাই।”

“ওকে কিন্তু আমাকে কিন্তু ফুচকা খাওয়াতে হবে।”

“ওকে।”

ওরা লং ড্রাইভে গেল আসার পথে ধূসর একটা ব্রিজে থাকা ফুচকার দোকানে থামালো। মেঘ মাথায় ক্যাপ পরে বাইরে বের হলো। রাতের বেলা তাই অনেকেই ফুচকা খেতে এসেছে। ধূসর দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে এলো। মেঘ গাড়ির সামনের ওপরে উঠে আশেপাশে দেখছে। ধূসর কে দেখে ও বলল,,

“আপনিও গাড়ির ওপরে উঠে বসুন দেখবেন ভালো লাগবে।”

“ওখানে না বসে গাড়ির ভেতরে বসলেই তো হয়।”

“এখানে উঠে বসার আলাদা মজা আছে। আসুন আমার পাশে বসুন।”

মেঘের হাতে ফুচকার প্লেট দিয়ে ধূসর মেঘের পাশে বসলো দুজনে ফুচকা খাওয়া শেষ করে বাড়ি ফিরলো।

___________

আজ মুনের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান সেরকম না হলেও বাড়ির মেয়েরা আলাদাভাবে ছাদে মজা করবে বলে আবদার করেছে। এতে আয়মান চৌধুরী মত দিয়েছে। সকালে হির আর লিয়াও হাজির তার কিছুক্ষণ পর মেঘের জন্য রাখা গ্ৰাউনটা পাঠিয়ে দিয়েছে জাবিন। মেঘ কাল জাবিনকে বলেছিল হির আর লিয়ার জন্যও পাঠাতে তাই ওদের তিনজনের গ্ৰাউন পাঠিয়ে দিয়েছে । শুধু কালার ভিন্ন। হিরের টা হালকা নীল আর লিয়ার টা হালকা গোলাপী। আজ দিলরুবা খানম আর এহসান খান এসে পরছেন। আয়না চৌধুরীর নামমাত্র ছেলে মেয়েও চলে এসেছে। কিন্তু ধূসরের আজ বিকেল থেকে কি হয়েছে কে জানে সবসময় মেঘের পেছন পেছন চলছে। মেঘ বাগানে চলে গেল। ধূসর ও গেল। তা দেখে একসময় মেঘ দাঁড়িয়ে বলল,,

“কি সমস্যা এভাবে পেছন পেছন আসছেন কেন?”

“আমার ইচ্ছে তাই তোমাকে কি আমি ডিসটার্ভ করছি নাকি। তুমি তোমার কাজ করো না।”

“এই আপনার মতলবটা কি বলুন তো?”

ধূসর মেঘের দিকে এগিয়ে বলল,,

“আমার মতলব হলো এই ,,

বলেই মেঘের গালে হলুদ মাখিয়ে দিল। তা দেখে মেঘ চিৎকার দিয়ে বলল,,

“ধূসর!”

“যতই চিৎকার করো না কেন? আজ কি বলেছিলে সকালে আমি নাকি তোমায় হলুদ লাগাতে পারবো না। দেখো প্রুভ করে দিলাম এই ধূসর এহসান যা বলে তাই করে। তোমায় হলুদ দিলাম অথচ তুমি কিছুই করতে পারলে না।

মেঘের সামনে একটা টেবিলে একটা মগে পানি রাখা ছিল। মেঘ পুরো মগটা ধূসরের দিকে ছুরে দিল ও ভিজে গেল । মেঘ হেসে বলল,,

“এখন কেমন লাগছে বলুন? আপনি আমাকে হলুদ দিয়েছেন আমি আপনাকে পানি মেরেছি শোধ বোধ।”

“তবে রে এখন তোমাকে পানির হাত থেকে কে বাঁচাবে?”

বলেই ধূসর এক টেবিল থেকে এক মগ পানি উঠিয়ে নিল। মেঘ তো দৌড় দিল আর বলল,,

“ভালো হবে না ধূসর ওটা নামান এবার কিন্তু আপনি বাড়াবাড়ি করছেন। আমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করি নি।’

“বাড়াবাড়ির কি দেখেছো মেয়ে এবার দেখবে বাড়াবাড়ি কাকে বলে।”

মেঘ দৌড়াচ্ছে ধূসর ও দৌড়াচ্ছে। পুরো বাগান চক্কর দিচ্ছে দুজনে অনেকে কাজ ফেলে ওদের দুজন কে দেখছে। মেঘ একবারে দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল। ধূসর ও গেল। মেঘকে আর ধূসরকে দৌড়াতে দেখে সকলে একপ্রকার শকড। মেঘ দিলরুবা খানম এর পেছনে গিয়ে বলল,,

“মা বাচান আপনার ছেলে আমাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেবে?”

“মা সামনে থেকে সরো আজ তো তোমায় গোসল করিয়েই ছাড়বো মেঘ। আমাকে পানি মেরে ভিজিয়ে দেওয়া।”

“আমি কি সাধে আপনাকে ভিজিয়েছি আপনিই তো আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করছিলেন। আর আপনিই তো আগে আমাকে,,

এইটুকু বলে মেঘ থেমে পরলো কি বলতে যাচ্ছিল। তখন ধূসর দুষ্টু হেসে বলল,,

“কি করেছি বলো ,,

দিলরুবা খানম ধূসরকে ধমক মেরে বলল,,

“ধূসর কি হচ্ছে বাচ্চাদের মতো বিহেব কেন করছো এটা বিয়ে বাড়ি তাছাড়া তোমার শুশুরবাড়ি ভুলে গেলে নাকি।”

এতক্ষনে দুজনের হুস ফিরলো দুজনে কোথায় আছে। দুজনেই সবাইকে তাকাতে দেখে লজ্জা পেল। ধূসর মগটা নামিয়ে ফেলল। বাচ্চা ছেলের মতো ওপরে চলে গেল। তখন মেঘ মুচকি হাসলো কারন ধূসরকে খুব ইনোসেন্ট লাগছে। তখন নোলক বলল,,

“ভাবি তোমার গালে হলুদ এলো কোথা থেকে আমরা তো হলুদ মাখাই নি এখনো।”

তখন মেঘ আমতা আমতা করে বলল,,

“ঐ এমনি আমি আসছি।”

এই বলে মেঘ ওপরে গেল। এদিকে সবাই ভাবছে এটা মেঘ ছিল তো। তখন আয়মান চৌধুরী আর মাইনুল হাসান একসাথে ছিলেন আয়মান চৌধুরী বললেন,,,

“মাইনুল এটা আমার মেয়ে মেঘ তো? আমি তো বিশ্বাস-ই করতে পারছি না।”

তখন মাইনুল হাসান বলল,,

“মেঘ বরাবরই দুষ্টু ছিল শুধু সময়ের সাথে হাড়িয়ে গেছিল এখন ভালোবাসা পেয়ে ভেতরের সেই দুষ্টু মেঘ বাইরে বের হতে শুরু করছে। ”

“আমার মেয়েটা সবসময় হাসিখুশি ভালো থাকুক এই দোয়াই করি।”

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ নিচ থেকে সোজা নিজের রুমে ঢুকে দাঁড়িয়েছে মাত্র তখনি ওর গায়ে পানি এসে পরলো। মেঘ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ চোখ খুলে দেখলো ধূসর মগ হাতে হেঁসে দাড়িয়ে আছে । মেঘ হাত দিয়ে মুখ থেকে পানি মুছে বলল,,

“ধূসর এটা কি আপনি ঠিক করলেন?”

“আলবাৎ!”

“এটা ঠিক না!”

“কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে এটাই ঠিক।”

“তাহলে এখন আমি যা করবো সেটাও ঠিক হবে। কারন বাড়াবাড়িটা আপনিই করেছেন।

ধূসর ভ্রু কুঁচকে মেঘের দিকে তাকালো। ও বোঝার চেষ্টা করছে আসলে মেঘ কি করতে চাইছে। মেঘ জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল। তা দেখে ধূসর হা করে তাকিয়ে রইল। কোন কিছু না করেও কিভাবে যুদ্ধে জেতা যায় সেটা কেউ মেঘের থেকে শিখুক। এবার ধূসর থাকুক ভেজা গায়ে। যে পর্যন্ত না মেঘ বের হবে সে পর্যন্ত ধূসর কে এভাবেই থাকতে হবে। বদলাতেও পারবে না কারন গোসল না করা পর্যন্ত। এটাকে বলে পারফেক্ট শাস্তি। ধূসর বলল,,

“আচ্ছা ধুরন্ধর মেয়ে তুমি? এটাকে বলে ব্যারিস্টারদের বুদ্ধি। তাড়াতাড়ি বের হও তোমার জন্য সেই কখন থেকে ভেজা গায়ে দাঁড়িয়ে আছি।”

তখন ভেতর থেকে মেঘ মুখ বের করে বলল,,

“এটা আপনার শাস্তি এটা ঠিক আছে।”

“তোমাকে এখনি বের করছি।”

মেঘ দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় চেন্জ করে বাইরে বের হলো। কারন ধুসর অনেকক্ষণ ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে আছে। এরপরে বাড়াবাড়ি হলে জ্বর আসতে পারে।মেঘ বের হয়ে বলল,,

“এবার আপনি যান । আপনার তো গোসল করতে হবে। বাগানে দৌড়াতে গিয়ে তো ময়লা মাখিয়েছেন। হাতের হলুদ ও তো মাখিয়েছেন হাতের হলুদ তো হাতে থাকে নি শুধু গায়েও লেগে গেছে।

“হুম যাচ্ছি। এখন ভালোগিড়ি দেখাচ্ছে।”

“আমি তো ভালোই হুদাই ভালোগিড়ি দেখাবো কেন?”

“নিষ্ঠুর মেয়ে নিষ্ঠুরতার প্রমান দিয়ে বলছে আমি ভালো। দেখলে আমায় গোসল করতে হবে তাহলে আগে গেলে কেন? আমি কতোক্ষণ যাবৎ ভেজা শরীরে আছি তোমার কোন ভাবাবেগ নেই‌।”

“হুম এখন কি এখানেই দাড়িয়ে থাকবেন যান আমি আপনার জন্য কড়া কফি করে আনছি।”

ধূসর বাথরুমে ঢুকে পড়লো। মেঘ নিচে গেল ধূসরের জন্য কফি বানাতে। মেঘ ইয়াংস্টার সবাইকে জিজ্ঞেস করল কফি খাবে কি না। সবাই বলল খাবে। মেঘ সকলের জন্য কফি বানালো। বাইরে গিয়ে হির আর লিয়াকেও দিয়ে এলো। তারপর ওপরে গেল এক মগ কফি হাতে। কারন মেঘ এখন কফি খাবে না।ও যেতেই ধূসর বের হলো। ধূসর বলল,

“মাথা মুছিয়ে দাও !”

মেঘের ইচ্ছে হলো না ধূসরের কথা ফেলতে। তাই ও বিনা বাক্যে ধূসরের মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো। সেই সুযোগে ধূসর কফি খেতে লাগলো। হুট করেই ধূসর বলল,,

“শুনো মেয়ে তোমার মুখের গম্ভীরতার পেছনে এক সুন্দর কোমলমতি দুষ্টু মেঘ আছে। তা আজ কিছুটা বাইরে প্রকাশিত হলো। তোমার গম্ভীর মুখে থাকলেও তোমার কথায় আলাদা কোমলতা মাধুর্যতা আছে। তা আমাকে আকৃষ্ট করছে তোমার প্রতি বারবার।”

তুমি কি ঐ হাদিস টা জানো,আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোন আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না’।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)।

তোমার এই কোমলপ্রিয় আচরনে মুগ্ধ হয়েছি বারবার! আমার প্রতি এই কোমলতাই তো তোমার প্রকাশহীন ভালোবাসা।

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

” বাহ মহাশয় আপনি তো আমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলেন আজ হঠাৎ আমার কোমলতা নিয়ে বলছেন বাহ।”

“এটা তো এমনিই বললাম তুমি তো নিষ্ঠুর মেয়েই। শুনো একটু তোমাকে ভালো বলছি দেখে আবার আকাশে উড়ো না। এই হাদিস টা এমনিই বললাম আর তার আগের কথা গুলো এমনি মনে এলো তাই বললাম। এর মানে এটা নয় তুমি যে নিষ্ঠুর এটা ভুলে গেছি।”

“সারাজীবন আমাকে এই নিষ্ঠুর মেয়েই বলবেন। আমার আবার বেশি ভালোবাসায় সহ্য হয় না।’

এ কথা শুনে ধূসর একবার মেঘের দিকে তাকালো। মেয়েটা স্থির চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর এর কফি খাওয়া শেষ করে বলল,,

“মাগরিবের আজান দিতে কত সময় বাকি আছে।”

“বেশি নেই পনেরো বিশ মিনিট এর মতো। ”

“আচ্ছা তাহলে আমি আজানকে নিয়ে নামাজ পড়ে আসি মসজিদ থেকে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। দেখুন আজান কোথায়? আর হ্যা হির আর লিয়াকে পাঠিয়ে দেবেন ওপরে।”

‘ঠিক আছে।”

ধূসর নিচে চলে গেল। হির আর লিয়া কে পাঠিয়ে দিল। ওরা তিন বান্ধবী একসাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিল। আজ তেমন কোন কাজ নেই সব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে ওদের ম্যানেজমেন্টের লোকদের। আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাবে। বাকিটা কাল সকাল সকাল করে ফেলবে কাল নতুন ফুল ও আনতে হবে। কিছুক্ষণ পর হির আর লিয়া চলে গেল। ধূসর নামাজ পরে এসে আর ওপরে আসে নি। তাই মেঘই নামলো। সব ইয়াংস্টার রা ছাদে চলে গেছে শুধু মেঘ যায় নি। ও নিচে আসতেই দেখলো মাইনুল হাসান,ওর আব্বা ,ধূসরের বাবা আর অন্য মামাদের সাথে কথা বলছে। আর ধূসর দিশান, জায়মার হাজবেন্ড শায়লার হাজবেন্ড ওরা সবাই একসাথে কিছু কথা বলছে। ও এগিয়ে গেল তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আম্মা ওপরে যান নি সবাই তো ছাদে গেছে।”

“আব্বা আপনি ভালো করেই জানেন আমার এসব পছন্দ নয়। কালকের ব্যাপারটা কতো দূর এগুলো।”

“যেহেতু আপনি ওপরে যান নি তাহলে স্টাডি রুমে চলুন কথা বলি।”

“ঠিক আছে আব্বা!”

আয়মান চৌধুরী উঠবেন তখন ধূসর বলল,,

“আমিও যাব আব্বা?”

“না ধূসর দরকার নেই। তোমরা কথা বলো আমরা আব্বা আর মেয়ে কথা বলছি।”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী চলে গেলেন ধূসর মাইনুল হাসানের দিকে তাকালো উনিও অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন ওর দিকেই মানে হলো আমাকেও নেয় নি। ধূসর উঠে মামার সাথে কথা বলতে শুরু করলো বাকিরা কিছুটা অবাক হলেও কিছু বললো না। এদিকে আজান এলো মেঘকে খুঁজতে প্রথমে ওর মায়ের কাছে গেল আর বলল,,

“মা মেঘ আপুকে দেখেছো?”

“কেন?”

“আরে সব মেয়েরা তো ছাদে শায়লা আপু, জায়মা আপু, মুন আপু মেঘ আপুকে খুঁজছে। কিন্তু মেঘ আপুর দেখা পাচ্ছি না।”

“আমি দেখি নি তবে একটু আগে তোমার বাবার সাথে কথা বলতে দেখেছি।”

“ওকে তাহলে এখন আপুর সাথে বাবাকেও খুঁজি।তাহলে মেঘ আপুকে পেয়ে যাবো।”

আজান চলে যেতেই দিলরুবা খানম বলল,,

“মেয়ে হিসেবে এক মেঘকেই দেখলাম যে নাকি অনুষ্ঠান পছন্দ করে না। সবাই যেখানে আনন্দ করবে তখন ও দূর থেকে সবাইকে দেখবে। ছাদে সবাই কতো আনন্দ করছে আর তাকে দেখো কোথায় আছে কে জানে। ধূসর ও ড্রয়িংরুমে বসে আছে ওখানেও তো নেই। আচ্ছা আপা মেঘ কি আগে থেকেই এরকম।”

তখন আশা চৌধুরী বললেন,,

“না মেঘ আগে থেকে এরকম না ও ছিল আমাদের বাড়ির সবথেকে দুষ্টু বাঁচ্চা। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে এই যা। ”

“ওহ আচ্ছা কিছু কি হয়েছিল কারন একটা দুষ্টু বাঁচ্চা সেরকম কিছু না হলে এতোটা পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

এ কথা শুনে আশা চৌধুরী আমতা আমতা করে বলল,,

“আসলে এস.এস.সি পরীক্ষার পর থেকে তো পড়াশোনার জন্য একা থাকতো তাই হয়তো অভ্যেস হয়ে গেছে।”

ধূসরের মায়ের কেমন যেন লাগলো কথাটা কিন্তু তিনি কিছু জিজ্ঞেস করল না। অন্য কোথায় মজে গেল‌। এদিকে মায়মুনা চৌধুরী ভাবতে লাগলো ,,

“ঠিক বলেছেন আপনি একটা দুষ্টু বাঁচ্চা সেরকম কিছু না হলে তার দুষ্টুমি ভুলে যাবে না। এরকম কঠিন হয়ে যাবে না। একটা মেয়ে কতোটা কষ্ট পেলে ছোট বয়সেই হাসতে ভুলে যায়। শুধু হাসতে না সবকিছু ভুলে যায়। না না এ আমি কি ভাবছি কিন্তু এই সবকিছুর জন্য ও নিজেই দায়ী । এতে অন্তত কারো দায় নেই।”

__________________

“আব্বা আপনার কি মনে হয় কাল সে আসবে এই বাড়িতে?”

“আসতেও পারে আবার নাও পারে তবে গোপনে আসবে না অপেনে সেটা বলতে পারছি না।”

“সব গার্ডকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি আসলেও তেমন কোন সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের একবার মুজাহিদ ভাইয়াদের এখানে না আসা পর্যন্ত তাদের সেফটি দেওয়া প্রয়োজন। সে এমন ও করতে পারে মুহাজিদ ভাইয়াদের গাড়ি আটকে দিতে পারে। তার জন্য আপনার ফেস লস হয় সবার সামনে অপমানিত হন। যেমনটা সবার সামনে সে হয়েছিল।”

“হতে পারে ওর জন্য সবকিছুই সম্ভব। কিন্তু এই বিষয়ে ধূসর আমাদের সাহায্য করতে পারে।।”

“এটা আমিও ভেবেছি। আচ্ছা ধূসরকে ডাক দিই।”

মেঘ বের হয়ে ধূসরের কাছে গেল তখন আজান এলো আর বলল,,

“আপু তোমাকে সবাই ডাকে!”

“এখন আসতে পারবো না গিয়ে বলল আমি ত্রিশ মিনিট পর যাচ্ছি।”

“আরে সবাই অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে তো এখনই চলো না।”

“আজান এখন আমি একটু ব্যস্ত আছি পরে আসছি সবাইকে গিয়ে বল।”

‘ঠিক আছে!”

আজান চলে গেল। মেঘ ধূসরকে বলল ওর সাথে আসতে। ধূসর খুশি মনে চলে মেঘের সাথে। আয়মান চৌধুরী আর মেঘ সব বুঝিয়ে বললো। মেঘ কথা বলে ছাদে গেল ও যেতেই সকলে ঘিরে ও চুপ করে গিয়ে মুনের পাশে রিমঝিম কে নিয়ে সকলের আনন্দ দেখতে লাগলো। সবাইকে এতো হাসিখুশি দেখে ওর নিজের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। মুনকে আজ অনেক খুশি লাগছে সবার সাথে কি সুন্দর হেসে হেঁসে কথা বলছে। একটু পর পর ভিডিও কলে হাজবেন্ড এর সাথেও কথা বলছে। যেহেতু এখানে শুধু মেয়েরা থাকবে তাই সব ছেলেকে ছাদে আসতে নিষেধ করেছে। হুট করে মুনের নজর পরলো মেঘের দিকে ও মুগ্ধ চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মুনের চেহারা কতো সুন্দর ফর্সা হাসলে আরো সুন্দর লাগে। ও নিজেই চোখ ফেরাতে পারছে না। এই জন্যই তো ছোটবেলায় সবাই মেঘের থেকে ওর সাথে মিশতে চাইতো বেশি। কাকাই কাকিমনি এমন কি মামার বাড়ির লোকেদের মধ্যে মেজো মামা ছাড়া আর সবাই মুনকে বেশি আদর করতো। মেঘ এগুলোই ভাবছিল হুট করে মুন ওর কাছে গিয়ে পাশে বসে বলল,,

“কিরে মেঘ ওমনি করে মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”

“তোমাকে আজ অনেক খুশি লাগছে আপু তুমি কতো সুন্দর , হাসলে আরো সুন্দর লাগে। ”

“তোকেও আজকে খুব সুন্দর লাগছে এই সাদা থ্রি পিসে তুই জানিস তোর চেহারা টা কতো মায়াবী হাসলে আরো সুন্দর লাগে‌। আচ্ছা মেঘ কালো বোরকা ছাড়া তুই সবসময় সাদা রঙ আর ধূসর রঙ পড়িস কেন ?

তখন মুচকি হেসে মেঘ বলল,,

‘কারন আমি মেঘ তাই। মেঘের যে এই দুটো রঙই হয়। মেঘের শুভ্রতা ফুটিয়ে তুলে সাদা রঙ তখন মেঘ থাকে শান্ত কোমল। তাছাড়া সাদা রঙ দিয়ে সব রঙ তৈরি করা যায়। কিন্তু অন্য কোন রঙের সাথে রঙ মিশিয়ে সাদা রঙ বানানো যায় না। আর ধূসর রঙ সেতো রহস্যে ঘেরা সে তো ধোঁয়াশা কেউ বাইরে দেখে ভেতরে কি আছে বুঝতে পারবে না একদম আমার মতো। ”

“কি বললি আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না!”

“এতো বুঝতে হবে না তুমি তোমার বিয়েতে কনসেনট্রেট করো। রিমঝিম চলো মামনি আমরা মায়ের কাছে যাই।”

মেঘ রিমঝিম কে নিয়ে রোহেনীর কাছে চলে গেল।

__________

পরের দিন,,

আজ মুনের বিয়ে সকাল থেকেই সকল তোড়জোড় চলছে বিজনেস ম্যান আয়মান চৌধুরীর বড় মেয়ের বিয়ে তাতো আর যেনো তেনো বিয়ে না। গ্ৰ্যান্ড ভাবে বাড়িটা সাজানো হয়েছে স্টেজ ও পুরো ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। গেটের সামনে অনেক বড় লাভ শেপে করে ইংরেজি তে লেখা Moonjerin Chowdhury Wed’S Muhajid Ahmed..

বিয়ে বাড়িটা এতটাই ঝলমল করছে যে কেউ চমকে যাবে। সবার সাজা নিয়ে অনেক প্ল্যানিং থাকলেও মেঘের নেই। সে গোসল করে সেই হালকা কাজ করা গ্ৰাউন পরবে ক্রীম কালারের একটা হিজাব পরবে সাদা নিকাব দিয়ে মুখটা ঢেকে নেবে। এই একই রকম সাজ থাকবে লিয়া আর হিরের কিন্তু ওদের দুজনের সাথে যুক্ত হবে একটা সাদা রঙের ক্যাপ অবশ্য তাতে কাজ করাও থাকবে। হুট করেই সকাল থেকে মুনের আর মায়ের ভিশন মন খারাপ আজ এই বাড়ি থেকে মেয়েটা চলে যাবে। আয়মান চৌধুরীর ও খারাপ লাগছে বড় মেয়ে কি না। কিন্তু তিনি তার মন খারাপ কাউকে দেখাতে পারছে না। মেঘ ঠিকই বুঝতে পারল। মায়মুনা চৌধুরী অনেকক্ষণ মেয়ের কাছে বসে ছিলেন উনি চলে গেলেন। মেঘ আয়মান চৌধুরীকে হাত ধরে নিয়ে মুনের রুমে গেলেন। মুন তার বাবাকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। ও বাবাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাদলো। আয়মান চৌধুরীর চোখ থেকেও দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। মেঘ পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো তার খারাপ লাগছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। সে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো। আয়মান চৌধুরী কিছুক্ষন পর বের হলো। মেঘ দিলরুবা খানম এর কাছে গেল ওনাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে। আজ একবার ও খোঁজ নেওয়া হয় নি। দিলরুবা খানম বসে বসে একা একাই একটা কিছু হাতে নিয়ে কি যে বলছে মেঘ এগুলো না বাইরে থেকে কান পেতে শুনতে লাগলো,,,

“কোথায় তুই আমার সোনা বাচ্চা তুই আজ থাকলে তোর বিয়েটাও এত দিনে হয়ে যেতো বল। আচ্ছা তুই কি সত্যি নেই নাকি আছিস। তুই জানিস তোর মতো আমি আমার আরেকটা মেয়েকে পেয়েছি জানিস ওর নাম মেঘ এর আগেও তো তোকে বলেছি। তোর মতো আচরণ। কিন্তু জানিস মেয়েটা বেশ গম্ভীর কিন্তু ওর মাঝে একটা ছোট দুষ্টু মেঘ আছে। কাল ধূসরের সাথে একদম বাচ্চাদের মতো বিহেব করছিল। তুই কোথায় রে আজ তোকে খুব মনে পরছে আমার মিস্টি বাচ্চা। শুধু মনে হচ্ছে তুই থাকলে তোর ও এরকম ভাবে বিয়ে হতো।”

এটুকু বলেই তিনি থামলেন। মেঘ ঢুকবে কি ঢুকবে না বলে নক করছি ফেলল,,

‘মা আসবো?”

তিনি তাড়াতাড়ি করে জিনিসটা সরিয়ে রাখলেন। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,,

“আরে মেঘ আসো তোমাদেরই বাড়ি নক করার কি আছে?”

মেঘ ঢুকে বলল,,

“আমাদের বাড়ি হলে কি হবে মা এটা এখন আপনাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুম তাই আপনাদেরই রুম। তাছাড়া কারো রুমে ঢোকার আগে সকলের উচিত নক করে ঢোকা।”

“হয়েছে এখন আর জ্ঞান দিতে হবে না। বসো কিছু বলবে?

“না তেমন কিছু না আপনার সাথে তো আজ সেরকম কথা হয় নি তাই।”

“তা আমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে হলো বুঝি।”বিয়ে বাড়িতে এত মানুষ থাকতে আমার কাছেই কেন?

“গল্প করতে না মা গল্প শুনতে এসেছি। বিয়ে বাড়িতে সকলে থাকলে কি হবে মা আমার তো এখন আপনার সঙ্গ চাই।”

“সবাই সাজার বন্দোবস্ত করছে আর তুমি এখানে?’

“আমার সাজার দরকার নেই মা। আমি রোজ অনুষ্ঠানে যেরকম সেরকম ভাবেই সাজবো।”

“হ্যা হ্যা তোমার তো আবার সাজতে ভালো লাগে না। সত্যি কথা কি তোমার মতো এরকম মেয়ে আজ ও দেখি নি।”

“হি হি এই যে এখন দেখছেন। আচ্ছা মা আপনি একটু আগে কার সাথে কথা বলছিলেন?”

দিলরুবা খানম প্রথম কথা শুনে হাসলেও পরের কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলেন উনি নিজেকে সামলিয়ে বলল,,,

“তুমি এত বছর হলো আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছো কিন্তু তোমাকে বলা হয় নি। তোমার মতো আমাদের একটা পুতুল ছিল কিন্তু আমরা তাকে চিরতরের জন্য হাড়িয়ে ফেলেছি।”

“কবে ?কোথায়? কিভাবে?

“এটা সেই হাড়িয়ে ফেলা না মেঘ ও বেঁচে নেই মরে গেছে। চিরতরের জন্য হাড়িয়ে ফেলেছি।”

এটা শুনে মেঘ থমকে গেল। দিলরুবা খানম এর চোখ চিকচিক করছে কিন্তু তিনি কাঁদছে না। মেঘ ওনার মুখের দিকে তাকালেন তিনি যে কষ্ট পাচ্ছে সেটা সে মেঘকে বুঝতে দিচ্ছে না। মেঘ ওনাকে জরিয়ে ধরে বলল,,,

“সে নেই তো কি হয়েছে মা। আমি আছি তো।আমি আপনাদের মেয়ে হয়ে থাকতে চাই। তাকে ভেবে একদম কষ্ট পাবেন না। ইনশাআল্লাহ একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

“তাকে ভেবে যেন কষ্ট না পাই এই জন্যই তো তার স্মৃতির শহর ছেড়ে চলে এসেছি। আর তুমি তো আমাদের মেয়েই।

“মানে?”

” মানে কিছু না আজ মুনের বিয়ের জন্য একটু বেশিই মনে পরছিল তাই ওর কথা ভেবে নিজে নিজে কথা বলছিলাম। ”

“ওহ আচ্ছা! আচ্ছা মা তার নাম কি ছিল?

“যে মানুষ টা নেই তার নাম দিয়ে কি করবে মা। আচ্ছা পুরোনো কথা বাদ দাও।বেলা তো অনেক হয়েছে যাও তুমি গিয়ে গোসল সেরে নাও। আর ধূসর তো মেয়েদের থেকেও বেশি সময় নেয়। দেখো ও কি করছে। গোসলে ঢুকেছে নাকি বাইরে।”

“ঠিক আছে মা।”

মেঘ কিছু ভাবতে ভাবতে চলে গেল। দুপুর হয়ে গিয়েছে ধূসর কোথায় যেন গিয়েছিল মাত্র ফিরলো। বোধহয় হাসপাতালে কিছু ইমার্জেন্সি পরেছিল। যাওয়ার সময় মেঘকে পায় নি তাই বলে যাওয়া হয় নি। পরে অবশ্য ফোন দিয়ে বলেছিল মেঘ কিছুই বলে নি। মেঘ ও মাত্র গোসল শেষ করে একটা সাদা রঙের থ্রি পিস পরে তোয়ালে মাথায় পেঁচিয়ে বের হলো। তা দেখেই ধূসর বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,

“ঠিক যেন নবফুটন্ত স্নিগ্ধ সতেজ পদ্মফুল!”

হুট করে ধূসরের কথা শুনে চমকে উঠলো মেঘ। একটু লজ্জাও পেল। মেঘ লজ্জাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বলল,,

“আপনি কখন এলেন?”

“এই তো মাত্র ভাগ্যিস এখন আসলাম নাহলে তোমার স্নিগ্ধ এই মুখটা দেখতে পেতাম না।”

“হইছে এখন যান গোসল করে রেডি হন আজ যেমন মুন আপুর বিয়ে তেমন আপনার রিসিপশন কারন আজ আয়মান চৌধুরীর ছোট মেয়ের জামাইকেও দেখবে সবাই।”

“হুম আব্বা বলেছেন সকালে। এমনিই অনেক টা দেরি হয়ে গেছে আমি গোসলটা শেষ করি। তুমি আমার জামাকাপড় বের করে রাখো।”

“আচ্ছা!”

ধূসর বাথরুমে গেল। মেঘ এদিকে ধূসরের ব্যাগ থেকে নিজের দেওয়া পাঞ্জাবি আর প্যান্ট বের করলো। তার মতে ধূসরকে এই পাঞ্জাবি সবথেকে সুন্দর আর স্নিগ্ধ দেখায়। পাঞ্জাবি টাকে মেঘ ছুয়ে দেখছে। আর মুচকি হাসছে। মেঘ হেসে ওটাকে রাখলো। কিছুক্ষণ পর ধূসর আসলো তখন মেঘ বেলকনিতে ছিল। ধূসর ওগুলো পরে নিল। তার পর মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,

“কেমন লাগছে আমাকে?”

মেঘ ধূসরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,,

“মাশাআল্লাহ বরাবরের মতই সুন্দর!”

ধূসরের কাছে মেঘের হাসিটা অন্যরকম লাগলো। ও মেঘকে জিজ্ঞেস করল,,

“মন খারাপ মেঘ?”

“মন খারাপ হওয়ার কথা নয় তবুও হচ্ছে খুব করে মন খারাপ হচ্ছে কিন্তু কেন?”

“মানে?”

মেঘ হুসে আসলো কি বলছে ও আর কেন?মেঘ বলল,,

“মানে টানে কিছুই না চুল ঠিক করেন নি কেন?”

“কথা ঘোরাচ্ছো?”

“যদি বলি হ্যা!”

মেঘের কথায় কি ছিল ধূসরের জানা নেই। হয়তো সত্যি কথা বলল দেখে ও অবাক হয়েছে। ধূসর কথা পাল্টাতে বলল,,

“মাথা আচরিয়ে দাও তুমি শুধু বলো আমি নাকি বেশি সাজি। আজ তুমি সাজিয়ে দাও দেখি কেমন সাজাও?”

মেঘ ধূসরের হাত ধরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসিয়ে চিরুনি দিয়ে ধূসরের মাথা আচরাতে লাগলো। হুট করে মেঘের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে উঠলো আর হুট করে মেঘের মনটাও ভালো হয়ে গেল। মেঘ ধূসরকে বলল,,

“দেখুন কেমন লাগছে?”

ধূসর আয়নায় নিজেকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। কারন মেঘ ওকে মাঝখানে সিথি করে চুল সেট করে দিয়েছে। মেঘের মুখে দুষ্টু হাসি। তা দেখে ধূসর বলল,,

“আমার বউ যদি আমাকে এরকম ক্যাবলাকান্তের মতো লোককে দেখাতে চায় তাহলে আমার সমস্যা নেই। তবে নিজেকে আজ একটু বেশিই ইনোসেন্ট লাগছে কিন্তু আমি তো এতো ইনোসেন্ট না। নিজেই নিজের প্রেমে পরে গেলাম। মাশাআল্লাহ আমার বউ একদম পারফেক্ট চুল ঠিক করে দিয়েছে।”

মেঘের এমনিতেও ওর চেহারা দেখে হাসি পাচ্ছিল ওর কথা শুনে হেসে ফেলল আর বলল,,

“হুম একটু বেশিই ইনোসেন্ট। আজকাল আপনার আবদার বেড়েছে মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র। যাই হোক আমি দেখছিলাম আপনাকে মাঝখানে সিথি করে কেমন লাগে। এখন এদিকে ঘুরুন আমি ভালো করে চুল সেট করে দিচ্ছি।”

মেঘ সুন্দর করে ধূসরের চুল সেট করে দিল। একটা পারফিউম এগিয়ে দিল। এটা ধূসরের অনেক পছন্দের। ধূসর খুশি মনে নিল আর বলল,,

“মজা করো আর যাই করো হেসেছো তো আর এই হাসিতেই ধূসর এহসান শুভ্র খুন হয়ে যায়।”

“ওতো খুন হওয়ার দরকার নেই। এখন নিচে যান আমি রেডি হবো। হির আর লিয়া ও আসবে এখন।”

“ভালোবাসি নিষ্ঠুর মেয়ে!”

বলেই ধূসর চলে গেল। মেঘ মুচকি হাসলো আজকাল ধূসর আর অপেক্ষা করে না। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেই হাওয়া। মেঘ বলল,,

“আপনি আমার অপ্রকাশিত এক সুন্দর অনুভূতি। এই অনুভূতি কখনো শেষ হবে না। এই নিষ্ঠুর মেয়েটার প্রকাশহীন ভালোবাসাই আপনার জন্য শ্রেয়। কিন্তু এই নিষ্ঠুর মেয়েটাও আপনাকে,,,,

তখনি হির আর লিয়া এলো। ওরা তিনজন রেডি হয়ে নিল নিজেদের গেট আপে। লিয়ার আর হিরের দেখা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। সবাইকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে। এখন তিন বান্ধবী মিলে বিয়ে ইনজয় করবে। ওরা তিনজন একসাথে নেমে আসবে তখন মেঘ দেখলো ধূসরের ঘড়িটা ফেলে গেছে। মেঘ ঘড়িটা হাতে নিল তারপর তিন বান্ধবী নিচে এলো। যখন সিড়ি দিয়ে তিনজনে নামছিল সবাই সিড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল। কারন তিনজনকে গ্ৰাউনে অনেক সুন্দর লাগছে তার সাথে সবার সাদা কালারের নিকাব ক্রীম কালারের হিজাব। সাথে তিনজনেরই মাথায় কাজ করা সাদা ক্যাপ। যদিও প্রথমে মেঘের ক্যাপ পড়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু পরে একজনের কথায় পরতে হলো। একটু আগেই জাবিনদের সাথে ফোনে ভিডিও কলে কথা হয়েছ। মেঘ নিচে আসতেই আয়মান চৌধুরী এগিয়ে গেল। আয়মান চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল,,

“মাশাআল্লাহ আম্মা অনেক সুন্দর লাগছে।’

তখন হির আর লিয়া বলল,,

“আমাদের কে?”

“মাশাআল্লাহ আমার এই দুটো মেয়েকেও অনেক সুন্দর লাগছে। আপনাদের তিনজনকেই অনেক সুন্দর লাগছে।”

বাড়ির সকলেই নিচে এসেছে । যারা শপিং করতে গিয়েছিল সকলেই অবাক এই গ্ৰাউনটাই ওরা সব থেকে দামি হিসেবে দেখেছিল। আর শিফা তো কিনতেও গিয়েছিল ওটা নাকি বিক্রি হয়ে গেছিল তাই ও কিনতে পারে নি। কিন্তু এখন তো তিনটা এখানেই আছে। অবশ্য ওনারা বলেছিল অন্য কালার আছে কিন্তু শিফার এই সাদা কালারটাই চাই তাই আর কেনা হয় নি। মেঘের ক্যাপ পড়া নিয়েও অনেকে কানাঘুষা করছে কিন্তু এতে ওদের হেলদোল নেই। একজন বলছে পরতে মানে পরতে হবে। কোন ছাড়াছাড়ি নেই।ধূসর বাইরে ছিল ও মেঘকে এখনো দেখেনি ও প্যান্ডেলে স্টেজের ওখানে ছিল। দিলরুবা খানম মেঘের কাছে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিল ওকে কেমন লাগছে সেটাও জানালো। নোলক আর রোহিনীও। রিমঝিম আসতেই ওদের নিয়ে প্যানডেলের ওখানে যাবে তার আগে ধূসরই আসলো। ও ধূসরকে দেখে এগিয়ে গেল আর বলল,,

“ঘড়িটা ফেলে এসেছিলেন?”

ধূসর তো মেঘের দিকে তাকিয়েই শেষ। ধূসর কোন কথা বলছে না । তা দেখে মেঘ বলল,,

“শুনছেন তো আমার কথা? নাকি বয়রা হয়ে গেছেন?

“আমার কি আজ মেরে ফেলার ধান্ধা করেছো মেয়ে?”

“কি আবোল তাবোল বলছেন!”

“কিছুনা দাও ঘড়িটা!

মেঘ ঘড়ি দিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। ওপরে মুনকে সাজাতে লোক এসেছে সবাই ওখানেই আছে। মেঘ হির আর লিয়া কথা বলতে লাগলো। আয়মান চৌধুরী ধূসরকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। ধূসর ও হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলছে।

অতঃপর বর এসেছে বলে শোনা গেল এটা শুনে ধূসর মেঘ আয়মান চৌধুরী তিনজনেই স্বস্থির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মেয়েরা সকলেই গেট ধরেছে টাকা নিয়ে দর কষাকষি চলছে। এটাও মেঘ ,ধূসর, হির আর লিয়া কিছুটা দূর থেকে দেখছে হুট করে হির বলল,,

“ধূসর ভাইয়া আপনাদের বিয়ের সময় কিন্তু এত কথা চলবে না যা চাইবো তাই দিবেন।”

“আমাদের বিয়েতে অনুষ্ঠানই করবো না শালিকা এটা তোমার বান্ধবীর কথা আমার না। তোমরা লস খেয়েছো একে বান্ধবী বানিয়ে।”

“এটা কেমন কথা মেঘ তুই আমাদের হক মেরে দিলি এটা ঠিক করলি না।”

তখন মেঘ বলল,,

“তোরা জানিস আমার অনুষ্ঠান পছন্দ নয়। তাছাড়া আমি চাই ও না এভাবে গ্ৰ্যান্ডভাবে বিয়ে করতে। এত লোকের সমাগম আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। এর চেয়ে ওনারা আসবেন আমায় নিয়ে চলে যাবেন ব্যস। তোদের টাকা তোদের দুলাভাই এর কাছে থেকে নিবি।”

“দুলাভাই দেবেন তো?”

কথাটা বলতে বলতে হির এর চোখ গেল একজনের দিকে। ওদিকে গেট ও ছেড়ে দিয়েছে। গেট ছেড়ে দিয়েছে বলে ধূসর কথার উত্তর দেব বলেই এগিয়ে গেল। হির মেঘ আর লিয়ার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। তা দেখে লিয়া বলল,,

“কি রে এভাবে নিয়ে এলি কেন?”

“আকাশ মাহমুদ এসেছে বরযাত্রীর সাথে !”

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে