ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-১১+১২

0
1060

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“আব্বা নিচে চলুন আজ আমি আপনাকে খায়িয়ে দেব।”

“আমি সকালে খেয়েছি আম্মা ওষুধ ছিল যে সকালে। আপনি তো নিচে নামেন নি তাই দেখতে পান নি।”

তখন ধূসর বলল,,

“তাহলে আপনারা দুজন আপুর বিয়ের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন ভাবছেন?”

“আপনি বিয়ে ইনজয় করুন আমি আর আব্বা দেখে নেব।”

“আচ্ছা তবে আমার কোন সাহায্য লাগলে অবশ্যই বলো কিন্তু।”

“হুম। এখন নিচে যাওয়া যাক। কিন্তু আব্বা আপনি ওনাকে আজ ডেকেছিলেন কেন?

“এমনিই ডেকে ছিলাম। তাছাড়া মাইনুল দেখা করতে চেয়েছিল তাই।”

“ওহ আচ্ছা!”

মেঘ প্লেট নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর তিনজনে একসাথে নিচে নামলো। তিনজনেই কথা বলতে বলতে আসছে। সকলে দেখছে কারন মেঘের যে এত ভালো হাজবেন্ড হয়েছে সেটা বোধহয় কিছু মানুষের হজম হচ্ছে না। আয়মান চৌধুরী সোফায় বসলেন মেঘ ওনার পাশে বসলো তার পাশে ধূসর বসলো। মেঘ ফিসফিস করে ধূসরকে বলল,,

“হাসপাতালে যাবেন না?”

“হুম যাবো তো!”

“তাহলে যাচ্ছেন না কেন?”

“কেন তোমার সমস্যা হচ্ছে!”

“দেখছেন না আমার মামাতো আর ছোট ফুপাতো বোন গুলো কেমন আপনাকে গিলে খাচ্ছে। নিজেরা তো যিনার গুনাহ করছে আপনাকেও ভাগিদার বানাচ্ছে।”

“আমি কিন্তু তাকাই নি।”

“তাতে কি আপনি তাকান নি। কিন্তু এমন ভাবে সেজে শুশুড়বাড়ি এসেছেন কেন?”

“শুশুড়বাড়ি আসবো সেজে আসবো না। যাই হোক তুমি কি জেলাস নাকি। ভাবা যায় নিষ্ঠুর মেয়েটা আমাকে নিয়ে কতো পসেসিব। সুবহানআল্লাহ।

“হুম এখন হয়েছে এখন যান হাসপাতালে যান।”

“হুম মামার সাথে একটু কথা বলেই যাচ্ছি।”

ধূসর উঠে মাইনুল এর কাছে গেল। মাইনুল হাসান এর সাথে ধূসরের আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক। মাইনুল হাসান পেশায় একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। তাছাড়া তিনি মামাদের মধ্যে সবথেকে বেশি মেঘ কে ভালোবাসে। মেঘকে অনেক ভাবে সাহায্যও করে। কিছুক্ষণ পর ধূসর মাইনুল হাসান এর সাথে কথা বলে এসে আয়মান চৌধুরী কে বলল,,

“আব্বা আসছি এখন হাসপাতালে যাবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যেও আর মেঘ আম্মা ওকে এগিয়ে দিয়ে আসেন।”

“হুম!”

মেঘ উঠে দাঁড়ালো ধূসর আর মেঘ একসাথে চলতে শুরু করল ধূসর হুট করেই মেঘের আঙুলের মাঝে নিজের হাতের আঙুল গুলো ঢুকিয়ে দিল। মেঘ কিছু বললো না। গাড়ি পর্যন্ত গিয়ে বলল,,

“জানেন মিসেস ধূসর এহসান শুভ্র আজ আমার নিষ্ঠুর মেয়েটা আমাকে যৌথভাবে ভালবাসি বলেছে! ঐ অনুভুতি টা কিভাবে যে ব্যক্ত করবো বুঝতে পারছি না।”

“যৌথ ভাবে ভালোবাসি বলেছে বুঝি কিন্তু আলাদাভাবে আর একক ভাবে তো বলে নি তাই এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।”

“এভাবে বলো কেন মেয়ে? ভালোবাসি বলেছে সেটা যৌথভাবে হোক আর এককভাবে হোক বলেছে তো। এতেই আমি খুশি। তবে একটা জিনিস ভাবছি যেদিন নিষ্ঠুর মেয়েটা আমায় একক ভাবে নিরবে নিভৃতে ভালোবাসি বলবে সেদিন না খুশির ঠেলায় হার্ট অ্যাটাক করি।”

“আপনি ওতটাও দুর্বল নন মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র।”

” কি জানি যদি দূর্বল হয়ে পড়ি । একথাটা দ্বারা তুমি কি বোঝালে তার মানে সে বোঝালো আমায় একদিন না একদিন এককভাবে ভালোবাসি বলবে। এই জন্যই তো তোমায় এতো ভালোবাসি মেঘ বালিকা মুখে না বললে কি হবে ভালোবাসি আসলে তো তুমি আমায় ভালোবাসো।”

“হুম অনেক হয়েছে এবার যান।”

“এই তুমি আমায় জান বললে আহা !”

“এই আপনার কি হয়েছে বলুন তো কি আবোল তাবোল বলছেন আমি য আকার ন যান বলেছি। বুঝতে পারছেন আপনার জ আকার ন বলিনি।”

“ওই একই হলো জান বলেছো তো?

“আবার!”

“ওকে বাবা যাচ্ছি জামাইকে তাড়ানোর জন্য একেবারে তাড়াহুড়ো করছে।”

“দুদিন পরেই আসবেন তো আবার। শুনুন আমি যে আপনাকে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি গিফট করেছিলাম না সেটা নিয়ে আসবেন!”

“কেন?”

“মানুষ পাঞ্জাবি কি করতে আনবে পড়ার জন্য তাই না।”

“হুম!”

“তাহলে তুমি আমার দেওয়া শুভ্র রঙের গ্ৰাউনটা পরবে !”

“শুভ্র রঙের গ্ৰাউন পরবো কিন্তু আপনার টা না বোনের বিয়ে উপলক্ষে জাবিন একটা গ্ৰাউন গিফট করেছে ওটা পরতে হবে। না পরলে আমার খবর করে ছাড়বে।”

“আচ্ছা সমস্যা নেই। ও মাই আল্লাহ তুমি আমার সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস পরবে। এটা তো বুঝতেই পারি নি। আমি ওটা নিয়ে আসবো।”

“আপনি বাচ্চা নন ধূসর এরকম টিনেজার মতো বিহেব করছেন কেন? ”

“তুমিও তো করছো? মানুষ টিনেজার বয়সে প্রেম করলে ম্যাচিং করে পরতে চায়। আর তুমি তো এখন বড় হয়েছো তাহলে।”

“আমার ইচ্ছে হয়েছে দু’জনে শুভ্র রঙের ড্রেস পড়বো তাই। ”

“তোমার ইচ্ছের সাথে যে আমার একটা ইচ্ছে যে যুক্ত হলো!”

“মানে ?

“মানে তোমার শুভ্র রঙের কথা শুনে আমার ইচ্ছে করলো আমি শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরবো আর তুমি শুভ্র রঙের শাড়ি হিজাব নিকাব পরবে তারপর একসাথে রিক্সায় ঘুরবো।”

“তাই নাকি তা রিক্সাওয়ালা মামাকে একটা শুভ্র রঙের শার্ট আর লুঙ্গি কিনে দিয়েন। আরো ভালো লাগবে।”

“সেসব তুমি বাদ দাও এখন বলো কবে আমার ইচ্ছে পূরন করবে তোমারটা আপুর বিয়ের দিনই করবো ইনশাআল্লাহ।”

“আপনি যেদিন বলেন সেদিন আমার কোন কাজ না থাকলে ইনশাআল্লাহ। তবে আপনার ইচ্ছের সাথে আমারও আরেকটা ইচ্ছে যুক্ত হয়েছে সেদিন আমি আর আপনি ফুচকা খাওয়ার কম্পিটিশন করবো।

“ওকে ডান তাহলে আপুর বিয়ের পরপরই ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ।”

“ওকে ইনশাআল্লাহ !”

“আচ্ছা আসছি আল্লাহ হাফেজ আর সাবধানে থেকো নিজের খেয়াল রেখো। আর হ্যা সব ছেলেদের থেকে দূরে থেকো যদিও তুমি দূরেই থাকবে তবুও বলছি।”

“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ!”

ধূসর টুপ করে মেঘের গালে চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠে পরলো। আর হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল মেঘ এখনো ওখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। যখন বুঝতে পারল ধূসর ওকে চুমু দিয়েছে তখন গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো। আর বলল,,

“মন কেমনের পিওন যখন কড়া নেড়েছিল মন দুয়ারে, ভালোবাসি বলে উঠেছিল ঝড় আর ভাসিয়েছিল আমায় প্রেমের জোয়ারে।”

______________

দুদিন পর,,

সকালে বাইরে ডেকোরেটর এর লোকেরা কাজ শুরু করে দিয়েছে। মুনের ইচ্ছে ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান টা যেন গ্ৰ্যান্ড ভাবে হয় এই জন্য ওয়েডিং প্ল্যানার ও এনেছে। বাড়ির ভেতরেই কথা বলছে নাকি আর বাকি সদস্যদের সঙ্গে। যদিও এই বাড়িতে গান বাজনা হলুদের অনুষ্ঠান কিছুই হবে না। কারন আয়মান চৌধুরী এগুলো নিষেধ করেছেন গান বাজনা হারাম তাই এগুলোর ভেতর দিয়ে যাবে না সে। এই নিয়ে বাড়ির কেউ কিছু বলে নি। ড্রয়িং রুমে যে যার মতো আড্ডা দিচ্ছে। আয়মান চৌধুরী কয়েকদিন অফিসে যাবে না তাই সব দায়িত্ব এখন জিয়ান আর শাফিয়ান চৌধুরীর ওপর। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী বসে ছিল তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,,

“আম্মা আপনার সাথে কথা আছে?”

“জি আব্বা!”

“জাবিনদের দাওয়াত দিয়েছেন?’

“না আব্বা!”

“এটা কেমন কথা আম্মা সবার বন্ধুরা ইনভাইটেড থাকবে তাহলে আপনার কেন নয়।”

“আমি যেমন এ বাড়িতে আলাদা। তেমন ওরাও আলাদা। তাছাড়া ওরা হচ্ছে আমার কাছে সবথেকে স্পেশাল।”

” কিন্তু আমি যে ওদের দাওয়াত দিয়ে ফেলেছি আম্মা!”

“ওহ আচ্ছা তাহলে এখন আমায় কেন বলছেন আব্বা। ওরা তো আসছেই আপনি তো দেখছি দিনদিন আমাকে ছাড়া অনেককিছুই করছেন। ”

“আহ হা আম্মা এখন কি আপনি এটা নিয়েও রাগ করবেন?”

“না আমি তো ওদের দাওয়াত দিতাম না তুলে নিয়ে আসতাম। তাছাড়া ওরা এই এই ব্যাপারে সবাই জানে। আমি দাওয়াত না দিলেও ওদের আসতে ভুল হবে না। আমার বন্ধুরা স্পেশাল না !”

আয়মান চৌধুরী হাসলো তা দেখে মেঘ ও হাসলো। মেঘ একটু ওপরে গেল ওপরে যেতেই মেজাজ গেল গরম হয়ে, শিফার হাত ধরে একটা ছেলে টানছে বাজে ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে ও গিয়েই ছেলেটাকে ছাড়িয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। আর চিৎকার করে বলল,,

“আপনার সাহস হলো কি করে আমার বোনের হাত ধরার।”

শিফা অনেক ভয় আছে। কোনদিন যা করেনি আজ তাই করলো ও ভয়ে মেঘকে জরিয়ে ধরল আর বলল,,

“আপু প্লিজ বাঁচাও এই ছেলেটা আমার সাথে অসভ্যতামি করছে।

মেঘ শিফার মাথায় হাত দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে পাশে দাঁড় করালো। তখন ছেলেটা গালে হাত দিয়ে বলল,,

“হেই ইউ তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে থাপ্পর মারার?”

“যেভাবে আপনার সাহস হলো আমার বোনের হাত ধরার।”

বলেই ছেলেটা মেঘের দিকে এগিয়ে এসে ওকে ধরতে চাইলো তখন মেঘ আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলল,,

“মেঘের গায়ে হাত দেওয়া ওতো সোজা নয়। আর মেঘের পছন্দও নয়। মেঘ না চাইলে সেটা সম্ভব ও নয়।”

“তোকে এবার কি করবো আমি নিজেও জানি না। তোকে তো এবার আমি ,,,

বলেই ছেলেটা তেরে এলো মেঘ ও কম নাকি ইচ্ছে মতো ছেলেটাকে পেটাতে লাগলো। এদিকে ছেলেটার চিৎকারে বিয়ে বাড়ির সকলেই এদিকে এলো। সবাই দেখে তো অবাক মেঘ একটা ছেলেকে ইচ্ছে মতো পেটাচ্ছে। আয়মান চৌধুরী মেঘকে থামালেন মেঘের চোখ মুখ রেখে লাল হয়ে গেছে । আয়মান চৌধুরী মেঘকে জরিয়ে ধরে বললেন,,

“আম্মা শান্ত হন ছেলেটাকে ওভাবে মারছেন কেন?”

“আব্বা ওকে আমার সামনে থেকে সরান নাহলে ওকে কি করবো আমি নিজেও জানি না ইচ্ছে করছে ওকে এখানেই মেরে দিই।”

তখন ছেলেটা উঠে বলল,,

“আজ যা করলে এটা ভালো করলে না মেয়ে এরজন্য তোমাদের সবাইকে পস্তাতে হবে। আমার গায়ে হাত দেওয়া বিয়ের সব কাজ এখনি বন্ধ করবো এই বাড়ির মেয়ের খুব শখ না গ্ৰ্যান্ডভাবে বাড়ি সাজিয়ে বিয়ে করার আমিও দেখবো এবার কি করে হয়। এই সবাই কাজ বন্ধ করে দাও। যেটুকু সাজানো হয়েছে সেটুকুও খুলে ফেলো। এখন ওয়েডিং প্ল্যানার আর কাজ করার লোক কোথায় পাবে তোমরা এখন গ্ৰ্যান্ডভাবে কিভাবে করবে কোন ওয়েডিং প্ল্যানার কে বললেও কমপক্ষে একমাস বা পনেরো দিন আগে বলতে হয় এই মাত্র বিয়ের দু’দিন বাকি এই দুই দিনে এ কি করে করবে। কালকেই তো গায়ে হলুদ। এই সবকিছুর জন্য তুমি দায়ী।

“আব্বা একে সরান নাহলে।

“যাচ্ছি যাচ্ছি!”

ছেলেটা রেগে মারখাওয়া চেহারা নিয়ে চলে গেল। মেঘ বুঝতে পারলো ছেলেটার ওয়েডিং প্ল্যানার এর সাথে কাজ করতো অথবা নিজেই ওয়েডিং প্ল্যানার। এসবের ভাবতে ভাবতে মুন ওকে বাবার থেকে ছাড়িয়ে একটা চড় মেরে বলল,,

“ফুপি ঠিকই বলে তোর দ্বারা ভালো কোন কাজ হয় না। কি দরকার ছিল ঐ লোকটাকে এভাবে মারার ঐ লোকটাই বিয়ের সকল কাজ করার জন্য কাজ করছিল‌। এখন কিভাবে সব হবে কে নেবে বিয়ের কাজের দায়িত্ব। তোর জন্য আমার বিয়ের গ্ৰ্যান্ড ভাবে বিয়ে করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এই সবকিছুর দায় তোর। এইভাবেই সব কাজ তোর জন্য খারাপ হয়। তুই আসলেও একটা খারাপ।

মেঘ বোনের চড় আমলে নিল না কারন সে ভিশন রেগে আছে ওর চড় খেয়ে আরো রেগে গেল আর চিৎকার করেই বললো,,

“সব কিছু আমার জন্য হয়েছে মেনে নিলাম তোমাদের জানা উচিৎ মেঘ এমনি এমনি কোন কাজ করে না। ঐ লোকটা শিফার সাথে অসভ্যতামি করছিল বাজে ভাবে ছুচ্ছিল। ওটা ভালো হচ্ছিল বুঝি। শিফার দিকে তাকিয়েছিস মেয়েটা কাঁদছে সেটা তোদের চোখে পরছে না তাই না।”

এবার সবাই শিফার দিকে তাকালো সত্যি মেয়েটা কাঁদছে সবাই শান্ত হয়ে গেল। তখন মেঘ নিজের বাবার দিকে তাকালো আয়মান চৌধুরী মেঘের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। মেঘ বুঝতে পারলো তার বাবা চিন্তায় আছে কি করে বড় মেয়ের বিয়ে পারফেক্ট ভাবে করবে। মেঘ বলল,,

“আব্বা চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ে কিছু হতে দেবে না। আপুর বিয়ে আপুর মনের মতোই হবে।”

“কিভাবে হবে ভুতে এসে করবে নাকি? তোকে সাধে খারাপ বলি আমি আমি তো তোর ভেতরটা দেখতে পাই। তোর ভেতরটা কুচকুচে কালো। অন্যের খুশি তোর সহ্য হয় না কিন্তু সেটা তো আর কেউ দেখতে পায় না। তোর জন্য মুনের বিয়েতে বাধা এলো এখন এই একদিনের মধ্যে এতকিছু কিভাবে করবে। বড় ভাইয়ার তো নাক কাটা যাবে সবার সামনে এতগুলো লোক এত বড় বিসনেস ম্যানরা আসবে। তোকে ভাইয়া এতো ভালোবাসে তুই এই প্রতিদান দিলি।”

আয়না চৌধুরীর কথায় মেঘ কিছু বললো না কাউকে ফোন করলো আর বলল,,

“আধ ঘন্টা সময় দিলাম এর মধ্যে তোদের দুজন কে আমার বাড়ি দেখতে চাই আর হ্যা আধা ঘন্টার এক মিনিট বেশি হলে একটার ও হাড্ডি ঠিক থাকবে না।”

বলেই মেঘ ফোন কেটে দিল আর ওখান থেকে নিজের রুমে গেল। বাকি সবাই অবাক চোখে দেখলো। মুন গিয়ে শিফার থেকে ক্ষমা চাইলো কারন লোকটাকে ও নিজে হায়ার করেছিল । মেঘকে এভাবে বলায় ওর খারাপ লাগলো কিন্তু ও মেঘের কাছে ক্ষমা চাইবে না। হয়তো ওর ইগোতে লাগবে। জাহানারা চৌধুরী নিজের মেয়েকে সামলাচ্ছেন। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“মুন মেঘের সাথে এভাবে কথা বলা উচিৎ হয় নি তোমার। এটা মনে রেখো তোমার বিয়েটা যেন ঠিকভাবে হয় এই জন্য মেঘ ও আলাদাভাবে সব দেখে নিচ্ছে। মেঘ কে একটা কথা জানাতে দেরি হয়েছিল বলে মেঘ আমার রেগে গিয়েছিল তখন কি বলেছিল জানো এটা আপুর বিয়ে এই বিয়ের জন্য আপু কতো কিছু ভেবে রেখেছে আর তুমি এখন বলছো এটা তোমার কাছে সামান্য বিষয় মনে হয়েছে। সে তোমার বিয়েতে সব পারফেক্ট চায়। একদম তোমার মনের মতো আর তুমি তাকেই কি না থাপ্পড় মারলে আর সবার সামনে অপমান করলে। ও বললো না কিছু হবে না সব ঠিক হবে তাহলে ও সব ঠিক করেই করবে। তুমি দেখে নিও তোমার বিয়ের অনুষ্ঠান তোমার সপ্নের থেকেও আরো সুন্দর করে করবে।”

আয়মান চৌধুরী চলে গেলেন। মাইনুল হাসান ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারল না। মায়মুনা চৌধুরী মুনকে কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু সে আর কিছু বললো না। এদিকে মেঘের খুব রাগ হচ্ছে ও শুয়ে পড়লো আর ভাবতে লাগলো সত্যিই কি সে খারাপ। তখন ওর কানে কানে কেউ বলল,,,

“না মেঘ তুমি খারাপ নও। তোমার জীবনে যা যা ঘটেছে এতে তোমার কোন হাত নেই। তুমি তো রহস্যঘেরা মানবী তোমাকে ওরা চিনতে পারে নি। আর তুমি না চাইলে চিনতেও পারবে না। তুমি হচ্ছো ধূসর রাঙা মেঘ যে নিজে না চাইলে সামনের জন তোমাকে চিনতে পারবে না। তুমি যেমন ভাবে তাদের সামনে ধরা দেবে বা দেখাবে তারা তোমাকে তেমনটাই দেখবে। তুমি এমন এক মানবী যে তোমার আব্বার সামনে এক ধূসরের সামনে আরেক আর তার কাছে তুমি তার কাছে অন্যরকম এক মেঘ। যে মেঘের না আছে কষ্ট না আছে ভয় আছে শুধু ভালোবাসা।

___________

কিছু সময় পর দুজন বোরকা হিজাব নিকাব আর মাথায় ক্যাপ পরিহিতা মেয়ে দৌড়ে ঢুকলো চৌধুরী বাড়িতে সবাই বেশ চমকালো কারন সবাই ড্রয়িংরুমেই ছিল। একটু আগের বিষয়টা নিয়ে ডিসকাস করছিল। তাই একটু চমকে গেছে মেয়ে দুটো নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে দৌড়াচ্ছিল আয়মান চৌধুরী কে ওরা দাড়িয়ে পরলো । আয়মান চৌধুরী কে দেখে বলল,,

“ভালোবাবা মেঘের রুমে কোন দিকে?”

“আমার রুমে যেতে হবে না! আমিই এসেছি কিন্তু তোরা দুজনে দুই মিনিট লেট । এখন আমার কি করা উচিৎ।”

মেঘের কথায় মেয়ে দুটো একসাথে বলে উঠল,,

‘আমার কোন দোষ নেই সব দোষ ওর!”

“যার দোষই হোক এখন বল কি শাস্তি দেব।

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আহ হা আম্মা কি হচ্ছে। ওরা হয়তো কাজ করছিল তাই দেরি হয়ে গেছে।”

“শুকরিয়া ভালোবাবা তোমার মেয়ে তো মনে করে আমরা সারাদিন অকাজে বসে থাকি।”

” আচ্ছা বাদ দে তোরা বোধহয় অনেক তাড়াতাড়ি করে এসেছিস মায়মুনা ওদের শরবত দাও। আর তোরা বোস।”

“ছিলাম তো ভালোই তা তোমার মেয়ের তো আমাদের সুখ সহ্য হয় না। সকালের খাবার খেয়ে ঘুমাচ্ছিলাম কাল অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে তাই পুরিপূর্ন হয় নি। আর ম্যাডাম ঘুমে বাগড়া দিয়ে ডেকে পাঠালেন।”

“তোদের কি মনে হয় আমি অকাজে তোদের ফোন দিয়েছি।”

“যাই হোক ভালোবাবা কেমন আছো তুমি অনেক দিন পর দেখা হলো।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস? তা হির ম্যাডামের কি ঘুম ভাঙে নি কোন কথা বলছে না।”

তখন হির নামক মেয়েটা বলল,,

“আর বলো না ভালোবাবা মেঘের ফোন পেয়েই তো লিয়া আমাকে তুলল কিন্তু ঘুমের রেশ টা বোধহয় কাটেনি। মাথাটা কেমন ঝিম মেড়ে আছে।”

তখন লিয়া বলল,,

” মেঘ কি বলেছে সেটা মনে নেই আধা ঘন্টার মধ্যে না আসলে আর আস্ত রাখবে না।

“এই তোরা দুটো চুপ থাকবি আসার পর থেকে শুধু বকবক করেই যাচ্ছিস। কাজের কথায় আসা যাক। কয়েকদিনের জন্য ঘুমের চিন্তা ঝেড়ে ফেল। এখন ওপরে চল কথা আছে। আর আব্বা কড়া করে তিন মগ কফি পাঠিয়ে দিয়েন আমার রুমে।

বলেই মেঘ ওপরে গেল লিয়া আর হির ওর পেছন পেছন চললো। আয়মান চৌধুরী যা বোঝার বুঝে গেলেন। উনি মায়মুনা চৌধুরী কে কফির সাথে ওদের জন্য হালকা খাবার পাঠাতে বললেন। ওরা কে জিজ্ঞেস করতেই আয়মান চৌধুরী সবাইকে বললে মেঘের বন্ধু। মেঘের বন্ধু ও আছে এটা বোধহয় কেউ ভাবতে পারলো না। কারন এর আগে মেঘের বন্ধুদের নিয়ে কথা হয় নি এমন কি কেউ কখনো বাড়িও আসে নি। এদিকে মেঘ ওদের নিয়ে রুমে ঢুকতেই লিয়া বলল,,

“তুই আপুর বিয়েতে দাওয়াত দিস নি তোর কথা শুনবো না।”

“তোদের আবার দাওয়াত দিতে হয় নাকি। কালকে গিয়ে নিয়ে আসতাম আমি নিজেই আমি জানি তো আব্বা তোদের দাওয়াত দেবে। কিন্তু যাই হোক আপুর বিয়ের সকল কাজ তোদের করতে হবে। যে ওয়েডিং প্ল্যানার ছিল তার সাথে আমার ঝামেলা হয়েছে তাই সবাইকে নিয়ে চলে গেছে। এখনো বিয়ের সব কাজ বাকি। এখন বল তোরা পারবি কিনা?

“জিজ্ঞেস করছিস নাকি থ্রেট দিচ্ছিস। যেভাবে বলছিস মনে হচ্ছে থাক বাদ দে তুই তো লেডি হিটলার।”

“কাজটা করতে পারবি না তাই বল আমি কিন্তু আব্বাকে বলে দিছি সবকিছু ঠিক হবে। এখন তোরা বল কাজটা করতে পারবি কি না যদিও সময় কম !

“সে আর বলতে বন্ধুর দুঃসময়ে যদি পাশে না থাকি তাহলে কিসের বন্ধু কিন্তু এত কম সময় এত সবকিছু প্ল্যান করবো কিভাবে? ”

“সমস্যা নেই আমি হেল্প করবো তোদের।”

“তাহলে ডান কোন সমস্যা হবে না। আমি ফোন করে সবকিছুর ব্যবস্থা করছি। এখনো বেশ খানিকটা সময় আছে হয়ে যাবে। শুধু ডেকোরেটর এর টা সময় বেশি লাগবে। প্ল্যান তিনজনে মিলে করে ফেলবো।”

“সবকিছু পারফেক্ট হওয়া চাই। আপুর ড্রিম ওয়েডিং বলে কথা‌।”

“হুম!”

এক ঘন্টা পরেই সব হাজির মুনের বিয়ের জন্য সব তোড়জোড় চলছে। বাকি সবাই অবাক এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে সব হচ্ছে। লিয়া আর হির আর মেঘ সবার সাথে কথা বলছে কি হবে না হবে নিয়ে। ওরা এতক্ষন সব প্ল্যান করছিল এই বিষয়ে মেঘের ভালো আইডিয়া আছে। তাই সমস্যা হলো না। কিছুক্ষণ পর মুন এলো মেঘের কাছে আর বলল,,

“মেঘ!”

“আরে আপু এখানে কি করছো তুমি তো বিয়ের কোনে এখন থেকে নিজের রুমে থাকবে।”

‘সরি!”

“কিসের জন্য?”

“আজ সকালে যা হলো আমি বুঝতে পারি নি রাগের বসে।”

“এখন না হয় রাগের বসে আপু কিন্তু এতবছর সব কি রাগের বসে করছিলে। আমার অবহেলা করা, সবার সামনে ছোট করা, তোমার বন্ধুদের সামনে হাসির খোড়াক বানানো।”

এ কথা শুনে মুন চুপ মেরে গেল। মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললল,,

“যা হয়েছে বাদ দাও আমার কথা মাথায় এনো না। মেঘের এসব বিষয়ে কিছু যায় আসে না। আমি কিছু মনে করি নি সকালের ব্যাপারটায়। আমাকে নিয়ে না ভেবে তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো।”

মেঘ চলে গেল। মুন মেঘের যাওয়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল।

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

দুপুরে সবার খাওয়া হয়ে গেছে। এদিকে হির আর লিয়া একমনে কাজ করছে সাথে সবাইকে কাজ বুঝিয়েও দিচ্ছে। এখনো অবদি খায় নি তারা। ওদের জন্য মেঘ ও অপেক্ষা করছে শেষ মুহূর্তে না পেরে ওদের দুজনকে এনে টেবিলে বসিয়ে দিল আর প্লেট হাতে ধরিয়ে বলল,,

“তোদের কে কাজের দায়িত্ব দিয়েছি দেখে না খেয়েই কাজ করতে হবে নাকি। খিদে পেয়েছে আমার! এখন চুপচাপ বসে খা কোন কথা বলবি না।”

তখন লিয়া বলল,,

“আরেকটু বাকি ছিল এরপরে তো আসতামই।”

“আচ্ছা বাকিটুকু খেয়ে করা যাবে। এই কই যাস!’

লিয়া আর হির উঠে যাচ্ছিল ।তা দেখে মেঘ ও কথাটা বলে উঠলো। তখন হির বলল,,

“হাত ধুতে যাচ্ছি। হাতে যে ময়লা তুই তো আর খায়িয়ে দিবি না হাত ধুয়ে খেতে হবে তো।”

“তোরা কি চাচ্ছিস আমি খায়িয়ে দেব।’

তখন লিয়া বলল,,

“দিলে ভালোই হয় হাত ধুতে হবে না। এমনিতেও আলসেমি লাগছে।”

“আচ্ছা বোস খায়িয়ে দিচ্ছি।”

“না থাক দরকার নেই। তুই তো শুধু জাবিনকে আর ওকে খাওয়াবি আমাদের দুজনকে কি তোর চোখে পরবে।”

“আরে রাগ করিস না ভাই ওকে তো সবসময় খায়িয়ে দিই সেদিন তো জাবিন একাই বাড়িতে ছিল তাই আবদার করেছিল। তোরা দুজন তো ছিলিসনা। তাই দিতে পারি নি। অভিমান করে না প্রিয়রা চল আমি তোদের দুইজনকে খায়িয়ে দিচ্ছি। কিন্তু এর জন্য আমার রুমে চল। এখানে সম্ভব নয়।”

“ওকে!”

বলেই হির আর লিয়া ওপরে চলে গেল। মেঘ হেসে দুই প্লেটে তিনজনের খাবার বেড়ে নিল তারপর সেগুলো ট্রে তে তুলল। মায়মুনা চৌধুরী ওখানেই দাড়িয়ে ছিলেন মেয়ের সব কথাই শুনেছে। তিনি এগিয়ে এসে বলল,,

“তোমাদের আরো কিছু লাগবে আমি সাহায্য করবো?”

“আর তেমন কিছু লাগবে না । শুধু পানি নিতে হবে। আমি আবার এসে নিয়ে যাবো।”

“আমি দিয়ে আসছি তোমার আর নামতে হবে না। এমনিতে অনেক বেলা হয়ে গেছে খাও নি তো?”

“আপনি কবে থেকে আবার আমার খেয়াল রাখতে শুরু করলেন। আমি কখন খাই না খাই আপনি এর আগে খেয়াল করেছেন। হুট করে খেয়াল কেন রাখছেন। আপনি জানেন কি না জানি না হুট করে অপত্যাশিত ভালোবাসা কেয়ার আমার হজম হতে চায় না। এই নিয়ে আমার কাছের মানুষদের বিস্তর অভিযোগ। কারন অপত্যাশিত ভাবে অন্যের কেয়ার মানে যারা কোনদিন আমার কথা ভাবে নি আর কাছের মানুষদের অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখলে আমি আমার মনে হয় তারা স্বার্থের জন্য এরকম করছে।”

মায়মুনা চৌধুরী ওর কথা শুনে একটু থমকে গেলেন। সত্যিই তো তিনি তো এর আগে খেয়াল করেন নি তাহলে আজ কেন? তিনি কি মেয়েটার ওপর দুর্বল হয়ে পরলেন। তিনি নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“আমি ওতশত বুঝি না আমি শুধু তোমাকে সাহায্য করতে এসে ছিলাম।”

“ঠিক আছে পানি নিয়ে চলুন।”

মেঘ খাবার নিয়ে আসছে সাথে মায়মুনা চৌধুরী পানি নিয়ে যাচ্ছে। তিনি পানি দিয়েই চলে গেলেন এদিকে লিয়া আর হির হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় বসে ফোন স্কল করছে এখন হাত ধুলেই কি আর না ধুলেই কি তার বান্ধবী তাকে খায়িয়ে দিবে। মুখের হিজাব নিকাব খুলে বসেছে। এতক্ষন নিচে ছিল বলে ওগুলো খুলেনি অনেক লোক ছিল যে। মেঘ ওদের খায়িয়ে দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে তিন বান্ধবী বসলো হির আর লিয়ার এখন উঠতে ইচ্ছে করছে না। হুট করে লিয়া বলল,,

“তোর নামে বিচার আছে জাবিন দিয়েছে তুই নাকি ওর মাইনে কেটে দিবি বলেছিলি। সে আমার আর হিরের কাছে কতো হম্বিতম্বি করলো ফোন দিয়ে যদিও খুব হাসি পাচ্ছিল। কিন্তু হাসতে পারি নি।’

“ঐ একটু মজা করছিলাম।”

“বাসায় এসে সব বলেছে।”

“তোরা দুজন তো এখানে সে এখন কার কাছে আছে?”

“শোরুমে দিয়ে এসেছি জাবিনের কাছে আছে। আচ্ছা মেঘ বিয়েতে জাবিন আসবে না ওকে নিয়ে।”

“ওকে আনাটা কি ঠিক হবে । আকাশ মাহমুদ যখন ফিরে এসেছে তখন আমার ওপর নিশ্চয়ই লোক লাগিয়েছে। এখন বিয়েতে আনলে যদি আমার সাথে দেখে সিওর হয়ে যাবে যে সেই যাকে তারা খুঁজছে। আমি কিছুতেই এই রিস্ক টা নিতে চাই না।”

“এভাবে আর কতোদিন একদিন তো এর শেষ হবেই।”

“যদি ও আমাদের সাথে থাকতো তাহলে এই সময়টা আসতো না আইনি ব্যবস্থা নিয়ে কিছু না কিছু করে ফেলতাম। কিন্তু ও তো আমাদের সাথে বেইমানি করে চোখ বন্ধ করে নিল। এই জন্যই তো এতো লুকোচুরি। আকাশ মাহমুদ কে ধরতে পারলেও শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয় এখন কারন ও আর কোন বাজে কাজে জড়িত বলে জানা যায় নি। ওর শুধু তাকে চাই তার মাধ্যমে ও রাজা হতে চায়।”

কথাগুলো বলতে বলতে মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো। হার আর লিয়ারও মন খারাপ হলো। মেঘ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,,

“হুম এখন বল কাজ কতোদূর?”

“আমাদের কাজ প্রায়ই শেষের দিকে সব বুঝিয়ে বলে দিয়েছি এখন কাজ ঠিকভাবে করে কি না এটাই দেখতে হবে। তাছাড়া কিছু জিনিস আজ আসে নি কাল আসবে। বিয়ের আগেই সব হবে ইনশাআল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ!”

_________________

হির আর লিয়া নিচে চলে এলো। মেঘ ও প্লেট রেখে গিয়ে দেখলো আয়মান চৌধুরী বসে আছেন ওর ঘরে । সে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“আব্বা কিছু বলবেন?”

“সরি আম্মা তখন আমি ,,

“কিছুই বলতে হবে না আব্বা আমি চিনি আমার আব্বা কে?”

“আমার কি আপনার ওপর অন্যায়ভাবে হাত উঠানোর জন্য মুনের গায়েও হাত তোলা উচিত ছিল আম্মা।”

“একদম না আব্বা আপনি যা করেছেন ঠিক করেছেন। আপু অনেক রেগে গিয়েছিল কারন সে তার বিয়ের জন্য অনেক কিছু ভেবে রেখেছিল হুট করেই তার স্বপ্নটা এক নিমেষে ভেঙে যায়। তাহলে তার রাগ উঠবে না আব্বা।”

“তবুও,”

“তবুও কি আব্বা! আজ বাদে কাল আপনার বড় মেয়ের বিয়ে আজ যদি তাকে আপনি মারতেন তাহলে সারাজীবনের মতো আপুর কাছে আপনি আর আমি অপরাধী হয়ে থাকতাম। সে আপনার দিকটা বুঝতো না। তার মাথায় একটা কথাই থাকতো তার বিয়ের আগে আপনি তার গায়ে হাত তুলেছেন শুধু আমার গায়ে হাত তোলার জন্য। এটা সে মেনে নিতে পারতো না। আসন্ন ঘৃনা যাতে আমাকে বা আপনাকে না পোহাতে হয় এই কারনেই আপনি আপুর গায়ে হাত তুলেন নি। এতে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা মুর্ছা যায় নি। বরং এতে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমি নিশ্চিত আপনি তাকে পরে আমার নামে কিছু বলেছেন নাহলে সে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে আসতো না। আজ আপু আমার কাছে তখনকার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। হাত তুললে ক্ষমা তো দুর আমার মুখদর্শন করতে চাইতো না।”

“ধন্যবাদ আম্মা আপনি এভাবে না বললে হয়তো আমার মনটা শান্ত হতো না। আম্মা এর আগে কি মুন আমার অগোচরে আপনাকে এমন কিছু করতো।”

“পুরোনো কথা ভুলে যান আব্বা আপনার মেয়ের বিয়ে একটু ইনজয় করুন।”

“আর আয়না ওকে কি?”

“শুনুন আব্বা সবসময় মুখের ওপর জবাব দিতে পারলেই যে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে তেমন টা নয়। সবথেকে যোগ্য জবাব তখনি হবে যখন মুখে কিছু না বলে কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দেবে। এই জন্যই ফুঁপিকে আমি আজ কিছু বলি নি আর আপনি বলেন নি কারন আমি বলেছি সব ঠিক হবে তাই। আপনি জানতেন আমি কাজের মাধ্যমেই তার কথার উচিত জবাব দেব।ওনার সাথে কথা বলে আপনি মুখ নষ্ট করতে চাননি। তাছাড়া উনি কথা শোনার মানুষ না। এর আগেও বহুবার আপনি আমার বিষয়ে তাকে বলেছেন কিন্তু তিনি শুনেন নি এটা আপনার দোষ নয় তার দোষ। নিজেকে দোষী ভাববেন না। একদিন সেও তার যোগ্য জবাব পাবে। এখন এসব বাদ দিন না।

“আচ্ছা সেসব বাদ দিলাম এখন বলুন তো আপনি এতো তাড়াতাড়ি সবকিছুর ব্যবস্থা কি করে করলেন।”

“হির আর লিয়া কে আব্বা?”

“কেন আপনার বান্ধবী!”

“আমার বান্ধবী ছাড়া তারা কি কাজ করে?”

“ওরা তো হিয়া ওয়েডিং প্ল্যানার আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর ,,ওহ হো আমি তো ভুলেই গেছিলাম ওরা ওয়েডিং প্ল্যানার। বিভিন্ন বিয়ে ও বিভিন্ন ইভেন্টগুলোর জন্য কাজ করে। আসলে মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। মুন ঐ নমুনাকে না বললে আমি ওদের কেই বলতাম। যেহেতু মুন বলেছে তাই এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাইনি।”

“হুম আব্বা ওরা ছিল বলেই কাজটা সহজ হলো নাহলে আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হতো না। সে আমি যতো বড় লয়ারই হই না কেন? ভাগ্য ভালো এখন ওদের কাছে কোন কাজ নেই। নাহলে চাইলেও করাতে পারতাম না। আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া যে সব সহজভাবে করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।’

“হুম আম্মা আলহামদুলিল্লাহ।”

________________

বিকেলে ধূসর দের পরিবার এলো। কিন্তু আজ দিলরুবা খানম আর এহসান খান আসতে পারে নি। তারা কাল আসবে। এদিকে রিমঝিম তো খুব খুশি ছোট মার কাছে আসতে পেরে। ধূসর গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। সবাইকে বরাদ্দকৃত রুমে দেওয়া হলো। ধূসর থাকবে মেঘের রুমে। ধূসর মেঘের রুমে এসেই চার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর মেঘ ধূসরের জন্য শরবত নিয়ে এসে এই অবস্থা দেখে বললো,,

“ওহ হ্যালো আমার বিছানায় এরকম ভাবে ফ্রেশ না হয়েই হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছেন কেন?”

তখন ধূসর দুষ্টু হেসে বলল,,

“আমার বউয়ের বিছানা আমি হাত পা ছড়িয়ে শুবো তোমার তাতে কি?”

” আমার কিছু না হলেও আপনার বউয়ের অনেককিছু। এখন উঠুন!”

“অনেক বছর পর বউয়ের রুমে আসলাম একটু দেখে নিই আরাম করে?”

“দুদিন আগেও না এসেছিলেন?”

“তখন তো দেখতে পাইনি শুশুরমশাই ছিল যে।’

“হুম ভালো এখন ফ্রেশ হয়ে শরবতটুকু খেয়ে নিন।”

“তুমি বানিয়েছো?

“না আপনার শাশুড়িআম্মা।”

“আচ্ছা তাহলে খেয়ে নিই শাশুড়িআম্মা কষ্ট করে আমার জন্য বানিয়েছে।”

“আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন হাসপাতাল থেকে এসেছেন না !”

“ওকে বাবা যাচ্ছি।”

ধূসর ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর শরবতটুকু অর্ধেক খেয়ে মেঘের দিকে এগিয়ে দিল। এর মানে সে জানে এখন বাকি শরবতটুকু মেঘের খেতে হবে। এটা নতুন নয় এতে সে অভ্যস্থ সেও বিনা বাক্যে খেয়ে নিল কারন ধূসরকে বলে লাভ নেই ওকে খায়িয়েই ছাড়বে। ধূসর বলল,,

“হির আর লিয়া কি বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছে নাকি?”

“হুম!”

“চলো নিচে যাই তোমার বাড়িটা তেমনভাবে দেখা হয় নি।”

“রিমঝিম ভাবি নোলককেও নিই সাথে।”

“আমি একান্ত ভাবে তোমার সাথে ঘুরতে চেয়েছি মেয়ে!”

“এত লোকের মাঝে একান্ত ঘোরা মোটেও শুভনীয় নয় মিস্টার।”

“তাহলে চলো তোমাকে ফুচকা খায়িয়ে নিয়ে আসি!”

“এখানেও আমি সবাইকে নিয়েই যাবো।”

“এতো নিষ্ঠুর কেন মেয়ে তুমি? আমার সুখ তোমার সহ্য হয় না কেন?”

“কারন আমি নিষ্ঠুর তাই। একান্তে সময় কাটানোর জন্য অনেক সময় বাকি আছে মিস্টার। আপাতত বিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ বাকি। তাছাড়া আমি বলেছি হির আর লিয়া কে সাহায্য করবো। দেখি ওরা কোথায় আছে। ”

“জাবিন আসবে না?”

“হয়তো আসতে পারে নাও পারে সিওর হয়ে কিছু বলতে পারছি না।”

“তোমার মতো তোমার বান্ধবীও নিষ্ঠুর আমার বন্ধুটাকে কতো অপেক্ষা করাচ্ছে।”

“এতে আপনার বন্ধুরও দোষ আছে। আপনার বন্ধুর কি দরকার ছিল জাবিনকে না বলে ওর চাচাকে বলার। যে জাবিন আর সে একেঅপরকে পছন্দ করে।আপনি জানেন এতে জাবিনের কতোটা অপমানিত হতে হয়েছে। মেয়েটার মা বাবা নেই চাচার কাছেই মানুষ। তার চাচা তার ছেলের সাথে জাবিনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। কিন্তু আপনার বন্ধু এমন ভাবে সব উপস্থাপন করেছে যেন তারা রিলেশনশিপ এ ছিল। কিন্তু বাস্তবে এটা মূল্যহীন এমন কিছু ঘটেই নি আর জাবিন তো এ ব্যাপারে কখনো এগোয়নি। ওর চাচা আর চাচি ওকে কতো মেন্টাল টর্চার করেছে জানেন। এতো দিন লালনপালন করলো অথচ এই প্রতিদান দিলি অন্যছেলের সাথে ইশশ কি বাজে ভাষায় গালিগালাজ করেছে। শেষে কাউকে বিয়ে করবে না জানিয়ে আমার ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে। যদিও মাঝে মাঝে ওখানে যায়।”

“ভালোবাসার মানুষটিকে হালাল ভাবে পেতে চেয়েছে এটা কি ইশানের দোষ।”

“এটা দোষের নয় তবে না জেনে শুনে হুট করে কিছু করা দোষের। ঈশান ভাইয়া আগে জাবিনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারতো। তাহলে হয়তো এত কিছু ঘটতোই না। যাই হোক ইশান ভাইয়াকে বলবেন জাবিনকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে নিতে কারন এখানে চিড়ে ভিজবে না।”

“আমার বন্ধুও কম কিসে সে বিয়ে করলে তাকেই করবে।”

“ওকে দেখা যাক কি হয় তবে ইশান ভাইয়ার সাথে বিয়ে হলে আমি খুব খুশি হবো। কারন ওর কাকাতো ভাইকে আমার একদম পছন্দ নয়।”

“আপনার বান্ধবী একটু সদয় হলেই সব হবে।”

“হয়েছে এখন বাদ দিন নিচে চলুন নাস্তা করে নিন। আপনার শাশুড়িমা বারবার বলে দিয়েছেন। তাড়াতাড়ি নিচে যেতে।”

“ওকে চলো সব বাদ দিলাম ।”

ধূসর মেঘের হাত ধরে নিচে হাঁটা ধরলো। ড্রয়িংরুমে গিয়ে হাত ছেড়ে দিল কারন সবাই ওখানে আছে। সোফায় বসে পরলো । ধূসর মেঘের মামা আর বাবার সাথে কথা বলছিল। সেই ফাঁকে মেঘ বাইরে চলে গেল লিয়াদের কাছে। ওরা সব দেখছিল। হুট করে মেঘ পেছন থেকে বলল,,

“ধাপ্পা!”

হির আর লিয়া দু’জনেই চমকে উঠলো। কারন ওরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিল হুট করে অত্যাশিত ভাবে এরকম করলে যে কেউ চমকে যাবে। মেঘ হাসছে তা দেখে লিয়া বলল,,

“ভালো হয়ে মা মেঘ ভালো হয়ে যা ভালো হতে পয়সা লাগে না। এভাবে কেউ করে এখনি হার্ট অ্যাটাক হচ্ছিল।”

হির গিয়ে ধাম করে মেঘের পিঠে একটা কিল দিল আর বলল,,

“আমিও লিয়ার কথায় একমত ভালো হয়ে যা।”

তখন মেঘ হেসে বলল,,

“আরে ভাই পয়সা লাগে না দেখেই তো তোদের সাথে ভালো হচ্ছি না। তোরা জানিস না ফ্রি এর জিনিস আমার পছন্দ না।”

“তা তোর জামাই এসেছে তুই তোর জামাই ছাড়া এখানে কেন? দুলাভাই আসতে দিল অবশ্য দুলাভাই তো পারলে তোকে তার সাথে বেঁধে রাখে।”

“হুম সোফায় বসে গল্প করছে সেই সুযোগে এলাম।”

তখন হির বলল,,

“সবাই বিয়ে করে নিয়েছে আমিই এক সিংগেল মানুষ তার একটা জামাই নাই। আমার জামাই কি কচ্ছপের পিঠে করে আসতেছে দোস্ত।”

“হুম সবাই বিয়ে করে তো ধুমছে সংসার করছে তাই না মেঘও আর আমিও।

“তোর জামাইকে বল তাড়াতাড়ি বিদেশ থেকে আসতে তুই বুড়ি হয়ে গেলি।”

“তুই তো কচি খুকি তাই না আমার তো তাও জামাই আছে শুধু সংসারটাই করছি না।”

মেঘ হুট করেই সিরিয়াস হয়ে বলল,,

“হির মজা বাদ দে এখন বল বিয়ে কবে করছিস এভাবে জীবন চলে না। জাবিনের বিষয়টা আলাদা কিন্তু তুই এভাবে আর কত?”

তখন হির বলল,,

“এই ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়েকে কে বিয়ে করবে? এখনকার সমাজের ধারনা যেখানে তার মা বাবা ঠিক করে সংসার করতে পারলো না সেখানে আমি কি করে সংসার করবো। এই সমাজটা দিন দিন দূষিত হয়ে যাচ্ছে। একটু দোষ হলেই হয় শুধু আঙুল দিয়ে তাদের দেখাতে ছাড়ে না আজকের সমাজ। আমি তাকেই বিয়ে করবো তার আমার পরিবার নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই সে শুধু আমায় ভালোবাসবে আমায় আগলে রাখবে আমায় সম্মান করবে।”

মেঘ হিরের গালে হাত রেখে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি তোর জীবনে এমন কেউ আসবে।”

“আসলে তো ভালোই হয় তোদের আমার বিয়েতে লেগপিস খাওয়ার আশা পূরন হয়। কিন্তু আমি ভাবছি বিয়েতে অনুষ্ঠান করবো না। টুপ করে বিয়ে করে টুপ করেই সংসার শুরু করবো। আরে সব প্ল্যান করে ফেললাম তো কিন্তু আমার জামাই কই ভাই? ”

এ কথা শুনে মেঘ আর লিয়া হাসলো কিন্তু হিরের বুক চিরে আসলো দীর্ঘশ্বাস। সে সেসবে পাত্তা না দিয়ে পেছনে ধূসরকে দেখে বলল,,

‘মেঘ ঐ দ্যাখ দুলাভাই এসে পরেছে।”

ধূসর এগিয়ে আসতেই হির বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম। কি দুলাভাই বউকে মিস করছিলেন বুঝি?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! আমি মিস করলে কি হবে শালিকারা তোমাদের নিষ্ঠুর বান্ধবীর কি আমার কথা মনে পরে। আমাকে দেখলেই শুধু পালাই পালাই করে।”

তখন মেঘ বলল,,,

“মোটেও না আপনি কথা বলছিলেন দেখে এসেছি।”

“হুম তোমায় চিনতে একটুও ভুল হয় না মেয়ে। তো শালিকারা দিনকাল কেমন চলে?”

তখন লিয়া বলল,,

“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলছে! আপনি বলুন দুলাভাই আপনার কেমন চলছে?

“আমারও ভালোই চলছে। আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসি!

“আরে কোথায় যান আপনার বউকে নিয়ে যান আপাতত তার এখানে কোন কাজ নেই বরং সে আমাদের কাজে এসে আমাদের কাছে বাগড়া দিচ্ছে।

“আমি কোথায় বাগড়া দিলাম শুনি?”

“আরে ভাই আমরা মনোযোগ দিয়ে একটা কাজ করছিলাম তুই এসে গল্প শুরু করে দিয়েছিস।”

“যা থাকবোনা এখানে এরপর থেকে একদম আমার কাছে আসবি না তোরা।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। তোর কাছে যাবো না তোর কোলে গিয়ে বসে থাকবো।”

“হু সর আমি গেলাম!”

মেঘ ভেতরে চলে গেল । ধূসর সেদিকে তাকিয়ে বলল,,

“শালিকারা তোমাদের বান্ধবীর এতো তাড়াতাড়ি মুড সুয়িং কেমনে হয়?’

“সেটা তো আপনার বউ ভালো বলতে পারবে। এটা আমরাও জানি না।”

বলেই হির আর লিয়া হাসলো আর অন্যদিকে চলে গেল। ধূসর ও ভেতরে চলে গেল। সব ইয়াংস্টার রা ছাদে আছে। তাই মেঘ রোহেনী নোলকদের নিয়ে ছাদে গেল। শায়লা ওদের দেখে এগিয়ে আসলো জায়মা ও তাই ওরা গল্প করতে লাগলো। এদিকে শিফা মেঘ কে দেখে এগিয়ে এসে বলল,,

“মেঘ আপু একবার এখানে আসবে তোমার সাথে কথা ছিল।”

মেঘ শিফার কাছে গেল। শিফা ওকে নিয়ে ছাদের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালো আর ওর হাত ধরে বলল,,

‘আজকে যা কিছু হলো সবকিছুর জন্য শুকরিয়া আপু। আর এতগুলো বছরের সব ভুলের জন্য সরি।”

“সকালে যা হলো তাতে একটা মেয়ে হয়ে এরকমটা করা আমার দায়িত্ব ছিল। এর জন্য শুকরিয়া বলতে হবে না। আর দ্বিতীয় টা তা হুট করে এমন সরি বলার কারন।”

“এতগুলো বছরের তোমায় ছোট হলেও অনেক কিছু শুনিয়েছি তা করা একদম উচিৎ হয় নি আমার।”

“আজকে তোমায় সাহায্য করেছি বলে তোমার এরকম টা মনে হচ্ছে তাই না।”

“আসলে ব্যাপারটা তা না। ছোটবেলার ঐ এক্সিডেন্টের পর থেকে আমার মনে হতো তুমি কোন ভালো কাজ করতেই পারো না যে খুন করতে পারে তার পক্ষে অনেককিছুই করা সম্ভব। তাছাড়া কাকিমনি সবসময় তোমায় খুনি বলতো আমি খুব ভয় পেতাম তোমাকে। তাই তুমি যাতে আমার থেকে দূরে থাকো তাই ওভাবে অপমান করতাম তোমায়।”

মেঘ চোখ মুখ শক্ত করে বলল,,,

“আমি খুন করি নি বুঝতে পেরেছো তুমি। আমার সামনে থেকে চলে যাও। আমি যেন এখন তোমায় না দেখি আমার সামনে।”

মেঘের কথায় কি ছিল জানা নেই। শিফা ঐ কথায় খুব ভয় পেয়ে যায়। ও তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে যায়। এদিকে হুট করেই মেঘের মাথাব্যাথা শুরু হয় পুরোনো কিছু মনে পরতে থাকে। ওর চোখ লাল হয়ে গেছে ও বিরবির করে বলতে থাকে ,,

“আমি খুন করি নি আমি খুনি নই ! আমি ওকে খুন করি নি।”

তখনি নোলক এসে মেঘের ঘারে হাত রেখে বলল,,

“ভাবি সেই কখন থেকে ডাকছি তোমায় শুনতে পাচ্ছো না ? ভাবি!”

মেঘ নোলকের দিকে তাকালো। তাকিয়ে আঁতকে উঠল মেঘের চোখটা অনেক লাল। ও বলল,,

“ভাবি কি হয়েছে তোমার? তোমার চোখ এত লাল কেন? শরীর খারাপ লাগছে।”

“না না নোলক আমি ঠিক আছি ঐ একটু মাথা ব্যথা করছে আমি নিচে গিয়ে ওষুধ নিচ্ছি। আর হ্যা এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলো না অযথাই টেনশন করবে।”

মেঘ ছাদ থেকে চলে গেল। নোলক কিছু বললো না কিন্তু ধূসরকে ঠিকই মেসেজ পাঠিয়ে দিলো। আর ও গিয়ে শায়লাদের সাথে গল্প করতে লাগলো। মেঘ রুমে এসে নিচে বসে পরলো ঘরটা অন্ধকার। ওর চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল বিরবির করে বলতে লাগলো,,

“আমি কিছু করি নি? আমি তোকে কিভাবে কিছু করতে পারি আমি তোকে খুব ভালোবাসতাম। তুই কাঁদলে আমিও কাদতাম কারন তোর কান্না আমার সহ্য হতো না। আমি তোকে খুব ভালোবাসি এখনো। তাহলে কিভাবে আমি তোকে আঘাত করতে পারি। আমি মারি নি তোকে আমি খুন করি নি।আমি খুনি নই। কিন্তু একটা আক্ষেপ তো আছেই আমি কেন তোকে বাঁচাতে পারলাম না। আমি তোর হাতটা ধরে নিলে এসব কিছুই হতো না। আমি তোকে খুব ভালোবাসি আমি তোকে মারি নি।”

আরো কিছু বলবে তার আগেই কেউ ওর রুমে এসে লাইট অন করে দিল হুট করে এমন হওয়ায় মেঘ চমকে উঠলো। ও তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিল এদিকে ধূসর ওকে নিচে দেখে তাড়াতাড়ি করে ব্যস্ত হয়ে বলল,,

“কি হয়েছে মেঘ মাথা ব্যাথা কি খুব করছে নিচে বসে আছো কেন?”

মেঘ উঠে দাঁড়ালো আর বলল,,

“তেমন কিছু না ঐ একটু!”

“তুমি কি কেদেছো মেঘ ?”

এই কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই মেঘের চোখ দিয়ে পানি পরতে চাইলো কিন্তু মেঘ সেটা গিলে ফেলল। ও ধূসরের সামনে কাঁদতে চায় না। ও বলল,,

“ও কিছু না এমনিই মাথাব্যাথা করছিল তো তাই।”

ধূসর বুঝতে পারল অন্য কোন কারন আছে শুধু মাথাব্যাথার জন্য কাঁদবে এমন মানুষ মেঘ নয়। ও ঘাটালো না‌। শুধু বলল,,

“এখানে আসো শুয়ে পরো আমি মাথা ব্যাথার বাম লাগিয়ে দিচ্ছি।”

মেঘ বিনা বাক্যে শুয়ে পরলো ধূসর বাম এনে ওর মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে বাম লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,,

“এই যে তোমার জামাই তোমার সেবা করছে দেখবে তাড়াতাড়ি তোমার মাথা ব্যাথা গায়েব।”

মেঘ কিছু বললো না। চুপ করে শুয়ে রইলো। কিছু বলছে না দেখে ধূসর বলল,,

“মেঘ আমি জানি তুমি শুধু মাথাব্যাথার জন্য কাদছিলে না । তোমায় আমি খুব ভালোমতোই চিনি। কেন কাদছিলে যদি আমায় বল,,

আর কিছু বলতে না দিয়ে মেঘ বলল,,

“কারন জিজ্ঞেস করবেন না ধূসর আমি বলতে পারবো না। শুধু এটুকু মনে রাখবেন আপনার মেঘ বালিকার গোপন কিছু দুঃখ আছে। যার ভাগীদার সে আপনাকে করতে চায় না। তবে আপনি আপনার মেঘ বালিকার জীবনে অদ্ভুত প্রেমময় সুখ যার সাথে সে সকল সুখ পেতে চায়। যার হাত ধরে জীবনের শেষ পর্যন্ত চলতে চায়।”

ধূসর সব শুনে কিছুটা অবাকই হলো কিন্তু বললো না কিছক্ষন পর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা আমি জানিনা তোমার জীবনের সেই গোপন কিছু দুঃখ গুলো কি? তবে আমি চাই আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তোমার সেই দুঃখ মুছিয়ে ফেলতে। জানিনা দুঃখ গুলো মুছে ফেলা সম্ভব কি না হয়তো হ্যা নয়তো না। তবে আমি চেষ্টা করবো আমি যখন তোমার সাথে থাকি তখন সেই কষ্ট যেন তোমায় ছুঁতে না পারে। জীবনের সব সুখ তোমায় দিতে চাই আমি। আমিও তোমার সাথে জীবনের শেষ পর্যন্ত চলতে চাই। সবশেষে বলবো ভালোবাসি তোমায় খুব ভালোবাসি। ”

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে