ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-১০

0
1008

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_১০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেয়েটার কথা শুনে মেঘ হাসলো। তা দেখে মেয়েটার বোধহয় আরো বেশি রাগ হলো মেয়েটা রেগে বলল,,

“আমি আপনাকে নিষ্ঠুর বললাম তবুও হাসছেন?”

“হাসছি কারন আপনি রেগে গেছেন।”

“মেঘ একদম রাগাবি না আমায়?”

“আমি কোথায় রাগালাম ম্যাডাম আপনিই তো রেগে যাচ্ছেন।”

এ কথা শুনে মেয়েটা মেঘের হাতে থাপ্পড় মারলো তা দেখে মেঘ আউচ বলে আওয়াজ করলো। মেয়েটা আরো দুটো দিল তা দেখে মেঘ বলল,,

“মারছিস কেন জাবিন ব্যাথা পাচ্ছি তো?”

“ব্যাথা যাতে লাগে তাই তো মারছি! আমার সাথে মজা করা তাই না এবার বোঝাবো এই জাবিনের সাথে মজা করার ফল আর কি বললি আমার বেতন কেটে নিবি তোর সাহস থাকে তো কেটে দেখা।”

“আর আমার আম্মা ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দেন। আমি তো মজা করছিলাম তুই একটা কেন দশটা গ্ৰাউন ফ্রিতে দে আমি কিছুই বলবো না। হাজার হোক তুই ম্যানেজার বলে তার ওপর আসল মালিকের অবর্তমানে মালিকও তো আছিস এখানের।”

জাবিন নামক মেয়েটা মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,

“মজা করছিলাম কেমন আছিস তুই? প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এখানে আসছিস না কোন সমস্যায় পরেছিস নাকি।”

মেঘ মেয়েটাকে ছেড়ে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুই কেমন আছিস? বেরুবো কি করে এখন কাজিন রা সবাই আমাদের বাড়িতে। বাড়ি থেকে বের হলে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাছাড়া আমি যে কে সেটা কেউ জানে না তাই বাইরে আমার কোন কাজ থাকার কথা না বলেই জানে সবাই। তাই বাইরে বের হওয়া টাফ। আপুর বিয়েটা হয়ে যাক তারপর থেকে আবার রেগুলার দেখাশোনা করবো। সরি রে তোর খুব চাপ যাচ্ছে।

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আমার আবার চাপ কিসের আমার তো একটাই ডিউটি কিন্তু তুই এই শোরুম চালাস সাথে একজন নামকরা লয়ার। তাকেও সময় দিস আবার আমাদের ও এতকিছু কিভাবে মেইনটেইন করিস। এতো ধৈর্য্য কোথা থেকে পাস। কি করে ধৈর্য্যধারন করতে পারিস তুই। আমি হলে কবেই হাল ছেড়ে দিতাম।

“আমি মেইনটেইন করি না তো হয়ে যায় আল্লাহ তায়ালা যেন আমার কাজ সহজ করে দেন।
“আল্লাহ তায়ালা মানুষের ওপর তার সাধ্যাতীত কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।
সূরা বাকারা- ২৮৬
তাছাড়া আমি ধৈর্য্য ধারণ করবো না কেন আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য্যধারন কারীকে ভালোবাসেন। তিনি বলেছেন,,
“ধৈর্য্য মানুষকে ঠকায় না,
বরং উত্তম সময়ে শ্রেষ্ঠ উপহার দেয়।
সূরা যুমার – ১০

“হইছে আমার জ্ঞানী ম্যাডাম। এবার কফি খাওয়া যাক। অনেকদিন দুই বান্ধবী আড্ডা দেওয়া হয় না।”

“এখন সময় নেই আমার ডাক পরলো বলে পরিবারের সাথে এসেছি বুঝতেই পারছিস। আমি তো এমনিই ঘুরে দেখছিলাম সব ঠিক আছে কি না।”

“তুই কি একাউন্টস চেক করবি?”

“একাউন্ট চেক করার কি আছে তুই আছিস তো। তুই থাকতে আমার আবার কিসের দরকার।”

“যত হোক তুই মালিক সব তো দেখতেই হবে তাই না। শোন একটা সময় কাছের মানুষেরাও ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকে‌।”

“তুই যদি এই শোরুমটাও এখন নিয়ে নিস কিছুই বলবো না। কারন আমি এখন এটা ছাড়াও চলতে পারবো। কোন ক্রাইসিসে পরে এটা করেছিলাম তুই জানিস। এখান থেকে একটা মোটা টাকা আসতো তাই। তখন টাকার খুব দরকার ছিল। হ্যা হয়তো আব্বার থেকে নেওয়া যেত কিন্তু আমি আমার কাছের মানুষের জন্য আব্বার থেকে টাকা নিতে পারতাম না। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যেতাম।”

জাবিন মেঘের কাঁধে হাত রাখলো। আর বলল,,,

“আমি জানি তুই কে? কেন করিস কিসের জন্য করিস এগুলোর সাফাই আমাকে দিতে হবে না। আর মুখোশের আড়ালে কে কি করতে পারে এটা তোর থেকে কে ভালো জানে।”

“জাবিন ম্যাম আপনাকে ডাকছে তাড়াতাড়ি চলুন?”

একটা মেয়ের কথায় ওদের কথা থেমে যায় জাবিন বলল,,,

“কেন ডাকছে আর কি হয়েছে?”

“একটা মেয়ে পাখির ঝামেলা করছে ওকে তো ঝাড়ছেই তার সাথে ম্যানেজার কে ডাকছে।”

“ওহ আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলো!”

জাবিনের সাথে মেঘ ও গেল হাজার হোক মালিক বলে কথা। মেঘ গিয়েই দেখতে পেল একটা মেয়ে পাখির গালে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উঠিয়েছে মেঘ গিয়ে খপ করে হাতটা ধরে ফেলল। পাশেই ওর পরিবারের সকলে দাড়িয়ে আছে। মেঘ মেয়েটার হাত ছেড়ে বলল,,

“কি হয়েছে আপনি ওনাকে মারতে চাইছিলেন কেন?”

“সেটা ঐ দুই টাকার মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করুন?”

“আপনার ব্যবহার ঠিক করুন। সে কোন দুই টাকার মেয়ে না। সে এখানে কাজ করে বলে আপনি যা নয় তাই বলতে পারেন না। তারাও মানুষ তাদেরও আত্মসম্মান বোধ আছে। এখন ঝামেলা না করে বলুন আপনি কোন কারনে ওনার গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিলেন।”

আপনাকে কেন বলবো এই শোরুমের ম্যানেজারকে ডাকুন?
তখন জাবিন বলল,,

“আমিই ম্যানেজার আমাকে বলুন?”

“আপনারা এত ইরেসপন্সিবল রুড বিহেবিয়ার সেল্সম্যান কিভাবে রাখেন?”

“কেন সে কি করেছে?”

“কি করে নি তাই বলুন এই ঘড়িটা আগে থেকেই ভাঙা ছিল আমি বাইরে গিয়ে দেখি ভাঙা তাই আবার এখানে নিয়ে এসেছি মেয়েটা বলে কি না আমি নাকি ইচ্ছে করে ভেঙে নিয়ে এসেছি। অন্য একটা ঘড়ি নেওয়ার জন্য। ”

“ওকে আপনার কথা শুনলাম তাই বলে আপনি গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিলেন। এখন পাখি তুমি বলো?”

“আপনার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি।”

“আমি কিছু বলি নি আর হ্যা আমি আমার ইমপ্লোয়িদের ভালোভাবেই চিনি। আর হ্যা আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি শুধু আপনার কথা শুনে পাখির ওপর চোটপাট করবো তাহলে আপনি ভুল। আমি দু পক্ষেরই কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেব। ওকে পাখি এখন তুমি বলো?”

তখন পাখি নামক মেয়েটা বলল,,

“ম্যাম আমি ঠিক মতো চেক করেই দিয়েছি তখন ঘড়িটা ভাঙা ছিল না। আর ম্যাম তো বলেছে কাস্টমার কে কোন কিছু দেওয়ার আগে ভালোভাবে চেক করতে।তাই আমিও ভালোমতো চেক করেই দিয়েছি। কারন যদি সব ঠিক থাকে তাহলে আমাদের এখানে বিক্রিত জিনিস ফেরত নেয়া হয় না।এখন উনি বলছে এটা ভাঙা তাকে অন্য একটা ঘড়ি দিতে। আমি ভালো মতোই বললাম এটা ভাঙা ছিল না । কিন্তু উনি আমাকে নানা ভাবে অপমান করতে লাগে আমি নাকি ভেঙে রেখেছিলাম যাতে আমার নাম না হয় তাই আমি তার দোষ দিচ্ছি। তাই রেগে আমি বলি আপনি নিজে ভেঙে অন্য ঘড়ি নেওয়ার জন্য এসেছেন আর উনি তখনি আমার ওপর হাত উঠাতে নেয়। ম্যাম আপনি তো আমাকে ভালোমতোই চেনেন।”

মেঘ পাখির দিকে তাকালো সে যে মিথ্যা বলেছ না তার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তারপর মেয়েটার দিকে তাকালো মেয়েটা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হাত ও বারবার নারাচ্ছে মনে হচ্ছে বেশ টেনশনে আছে। মেঘ যা বোঝার বুঝে গেল। তখন মেঘ বলল,,

“মিস জাবিন আপনাদের এখানে সি সি টিভি ক্যামেরা আছে না?”

“জি ম্যাম আছে আমাদের শোরুমের সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।

“যান উনি থাকা সব কয়টা ফুটেজ চেক করুন । তাহলেই বোঝা যাবে কে মিথ্যে বলছে কে সত্যি।

তারপর মেঘ জাবিনের কাছে গিয়ে কানে কানে বলল,,

“বাইরের টাও চেক করবি মেয়েটা মিথ্যা বলছে বোঝা যাচ্ছে তাছাড়া পাখি মিথ্যা বলার মানুষ না।”

“হুম আমি যাচ্ছি। তুই ওকে সামলা পাখি যে ইমোশনাল মেয়ে অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে রেখেছে।”

“হুম!”

জাবিন চলে গেল । তখন মেঘ দেখলো এখানে বেশ ভালো জটলা হয়ে গেছে সাথে ওর পরিবার ও আছে ও শায়লা কে বলল,,

“তোমরা কেনাকাটা বাদ দিয়ে এখানে কেন?”

“তুই এতক্ষন কোথায় ছিলি আমরা তো মেয়েটার চিৎকারে এখানে এসেছি।’

“যাও এখন শপিং করো আর বাকিরা আপনারা নিজেরা নিজেদের কাজ করুন এখানের কর্তৃপক্ষ এটার সমাধান করবে।”

তখন ওখানে থাকা একজন বলল,,

“যাবো কেন আমরাও দেখি এই শোরুমের এত নাম কিন্তু তারা কিরকম সার্ভিস দেন। এই যে এরকম ঘটনা যদি কাল আমাদের সাথে ঘটে তাহলে কি করবো। যদি তারা মিথ্যা বলে আমাদের নষ্ট জিনিস দেয় আর যদি বদলাতে না চায়।”

তখন মেঘ শান্ত স্বরে বলল,,

“তাহলে আপনারা মেনে নিচ্ছেন এখানের সেল্সম্যান এর ভুল তাই তো?”

“আমি কখন বললাম?”

“বলেন নি কিন্তু কথায় আঙুল টা তার দিকেই তুলে রেখেছেন। আপনারা সাধারণ মানুষ কি মনে করেন তো বলুন শপিং করতে এসে যা ভুল হয় সব সেল্সম্যান দের ভুল হয় তাই না। ওকে আপনারা অপেক্ষা করুন আরেকটু পরেই সত্যমিথ্যা প্রমান হয়ে যাবে।”

তখন শিফা বলল,,

“আপু তুমি এতো কথা বলছো কেন? এটা কি তোমাকে বলা হয়েছে নাকি। তুমি এখানে এতো মাতব্বরি করছো কেন?”

“শোন শিফা যা ভুল তা ভুলই বুঝতে পেরেছিস তোদের মতো অন্যায় দেখলে আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক এখানে থেকে না গেলে।”

এটা দেখে সকলে মেঘ কে নিয়ে কিছু কানাঘুষা করলো কিন্তু ওর এতে কিছু যায় আসে না। ও পাখির কাছে গেল । তা দেখে পাখি বলল,,

“বিশ্বাস করো আপু আমি চেক করেই দিয়েছিলাম।”

মেঘ আস্তে করে বলল,,

“আমি আমার পাখিরানীকে ভালো মতোই চিনি। তাই বলতে হবে না হুম। চিন্তা করো না তোমার মেঘ আপু আর জাবিন থাকতে তোমাকে কেউ মিথ্যেবাদী বলে পার পাবে না। কিন্তু আজ ইমোশনাল মেয়েটা কাঁদল না কেন? আয় হায় আমাদের পাখি দেখি স্ট্রং হয়ে গেছে। কিন্তু আমার যে ঐ কান্না করা মেয়েটাকেই ভালো লাগে। এখন একটু কাঁদবেন আমার জন্য।”

মেঘের বলার ভঙ্গিতে পাখি হেসে একটু অভিমান করেই বলল,,

“আপু !! এটা কিন্তু ঠিক না।”

“এটাই ঠিক!”

সবাই মেঘ আর পাখিকে অবাক চোখে দেখছে । মেয়েটা হাসছে এখন অথচ তাকে নিয়ে কতকিছু হলো বা হচ্ছে। তখনি জাবিন এলো ল্যাপটপ নিয়ে সে প্রথমে মেঘকে দেখালো মেঘ দেখলো। দেখেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। তারপর জাবিন গিয়ে সবাইকে দেখালো যেখানে মেয়েটা পাখির সাথে কথা বলে হাতে ঘড়ি পরে চেক করলো তারপর পাখির হাতে দিল পাখি তখনি ওটা প্যাকেট করে দিল। তারপর এখান থেকে বেরিয়ে মেয়েদুটো কি যেন কথা বললো তারপর ঘড়িটা জোরে মাটিতে আছাড় মারলো দুটো। তারপর ঘড়িটা আবার তুলে এখানে নিয়ে এলো। এগুলো বাইরের ক্যামেরায় ধরা পরেছে। এটা দেখে জাবিন বলল,,,

“তো এখন কি বলবেন মিস!”

মেয়েটা হাত কচলাতে লাগলো। মেয়েটা কিছু বলছে না দেখে জাবিন একটু চিৎকার করেই বলল,,

“কি হলো বলছেন না কেন একটু আগে তো খুব খই ফুটছিল যে আমাদের এখানের মেয়ে ভালো না ইরেসপন্সিবল রুড বিহেবিয়ার এখন কি বলবেন আপনি এতগুলো মানুষের সামনে ওকে অপমান করলেন ।ওরা কাজ করে বলে কি ওদের মান সম্মান নেই। আপনারা যে বয়সে বাবার টাকায় ফুটানি করছেন ও সে বয়সে কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে। সি ইজ রেসপেক্টেড পার্সন মোর দেন ইউ।”

মেয়েটা কিছু বলছে না তা দেখে পাখি এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“কি হলো বলছেন না কেন? আমাকে এভাবে অপমান করে আপনার কি লাভ হলো। দেখুন না একটু আগে সবাই কি বলছিল যেন ভুল টা আমারই। কিন্তু এখানে ভুল টা তো আমার নয়। আর এখানে থাকা প্রত্যেকটা ইমপ্লোয়ি খুব অনেস্ট এখানে যখন কাজে রাখা হয় সবাইকে একটা কথা হয়। আমাকে কি বলা হয়েছিল জানেন বলা হয়েছিল,তোমাকে বিশ্বাস করি নাকি না করি সেটা বড় কথা নয়। তুমি আমায় বিশ্বাস করো তো যদি আমায় বিশ্বাস করো তাহলে কাজটা তুমি পাবে। এটা শুধু তোমার কাজের জায়গা নয় এটা তোমার বাড়িও বলতে পারো। আর এখানের যে বাকি সদস্যরা আছে এরা হলো তোমার পরিবার। এখন তোমার বাড়ি তুমি কিভাবে চালাবে এটা তোমার ওপর নির্ভরশীল তবে তোমার কাজের সাথে তোমার এবং তোমার বাড়ির মানসম্মান জরিয়ে আছে। এখন তুমি বলো তুমি কি তোমার মানসম্মান হাড়াবে না বাড়াবে এটা তোমার একান্ত বিষয়। সেদিন থেকে আমরা সবাই আমাদের বাড়ির মানসম্মানের দিকটা সর্বদা খেয়াল রাখি। কারন আমরা মনে করি এটা আমাদের বাড়ি সব থেকে বড় কথা আমরা আমাদের ম্যামকে বিশ্বাস করি। আর আপনি সেই বাড়ির সম্মান হানি করলেন কিন্তু কেন?

শুধু মেয়েটা না সকলে মনোযোগ দিয়ে পাখির কথা শুনলো। এখানের সবার ব্যবহার মুগ্ধ করার মতো। কিন্তু আজকে পাখির কথা শুনে মনে হলো এখানের মালিকের জন্যই এরা এমন। মেয়েটা বলল,,

” আসলে ঘড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো এই ঘড়িটার চেয়ে অন্য ঘড়িটা আমায় বেশি ভালো লাগবে। কিন্তু সব ঠিক ঠাক থাকলে বিক্রিত জিনিস ফেরত নেয়া হয় না এখানে এটা আমি ভালো করেই জানি তাই ইচ্ছে করেই এটা ভাঙি যাতে এখানে এসে আমি ঐ অন্য ঘড়িটা নিতে পারি। আমি ভেবেছিলাম তুমি ভয় পেয়ে আমাকে সাথে সাথেই দিয়ে দেবে আমি বুঝতে পারি নি ব্যাপারটা এতদূর গড়াবে। যেহেতু মিথ্যাটা বলেছি তাই ওটায় ঠিক রাখতেই রুড আচরন করি।”

তখন জাবিন বলল,,

“আপনি এটা আমাদের আগে জানাতে পারতেন শুধু শুধু এতকিছু ঘটালেন। আর হ্যা কাজে রাখার সময় তাদের এটাও বলা হয় অন্যায়ের সাথে আপস না করতে সেটা যত বড় কাস্টমারই হোক না কেন? যাই হোক ওকে সরি বলুন!”

“তখন এত কিছু মাথায় ছিলো না তাই । আই এম সরি রেইলি সরি ।”

তখন পাখি বলল,,

“ইটস্ ওকে। তবে এরপর থেকে মাথায় রাখবেন আপনার ভুলের জন্য যেন কারো ক্ষতি না হয়। এখন আসতে পারেন। আপনার জন্য সবাই কেনাকাটা না করেই দাড়িয়ে আছে।”

“জি।”

মেয়েটা চলে গেল তখন মেঘ বলল,,

“তো দেখে নিয়েছেন এখানের সার্ভিস কেমন এমনি এমনিই এই শোরুমের এত নাম হয় নি। এদের সততার জন্যই এরা এতো দূর পৌঁছে গেছে। এখন যান নিজেদের কাজ করুন।”

সবাই চলে গেল। মেঘ ওর পরিবারের কাছে গিয়ে বলল,,

“কেনাকাটা শেষ না আরো বাকি আছে?”

“বাকি আছে!”

“ওকে চলো করে নেওয়া যাক।”

মেঘরা চলে গেল জাবিন বা পাখি কিছুই বললো না। আরো ঘন্টাখানেক লাগিয়ে ওরা শপিং করলো। সবার শপিং শেষ মেঘ ওর মা ফুপু আর কাকিমনির জন্য ও শপিং করেছে। শুধু মেঘ নিজের জন্যই কিছু কেনে নি। বোধহয় নিজেদের শপিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে কেউ খেয়াল করে নি। এরপর থেকে আজান মেঘের সাথেই ছিল। আজান মেঘ কে বলল,,

“আপু আমি আর ভুলেও মেয়েদের সাথে শপিং করতে আসবো না?”

“কেন?”

“আজ এসে শিক্ষা হয়ে গেছে। তবে তোমার সাথে একা এসেছিলাম এর আগে তুমি আমায় শপিং করিয়ে দিয়েছিলে নিজেও কিনেছিলে ওভাবে আসবো তোমার সাথে।”

মেঘ আজানের মাথার চুল ঝাঁকিয়ে দিল। তখন আজান বলল,,

“সবাই কেনাকাটা করলো তুমি করবে না।”

“করবো তবে আজ না । যেখানে আমার ভাই কিছু কেনেনি সেখানে আমি কি করে কিনি বলতো। তাছাড়া আমার গুলো বিয়ের আগের দিন দিয়ে আসবে। কাউকে দেখাবো না।”

“তুমি কি অর্ডার দিয়েছো অনলাইনে?”

“হুম দিয়েছি তো!”

“তুমিই ঠিক কাজ করেছো!”

এখন কাউন্টারে গিয়ে বিল দেওয়ার পালা। জাবিন ১০% ছাড় দিয়েছে ওদের এটা দেখে তো ওরা ভিশন খুশি হলো কিন্তু কেন ছাড় দিল ওরা বুঝলো না। মেঘ যাওয়ার আগে জাবিন কে বলল,,

“তাহলে মিস গ্ৰাউনটা বিয়ের আগের দিন পাঠিয়ে দিয়েন। আজ আর নিলাম না। তবে ভয় পাইয়েন না আপনার মাইনে কাটবো না।”

এ কথা শুনে জাবিন মুচকি হাসলো। মেঘ পাখির সাথেও কথা বলেছে মাঝে। ওরা বেরিয়ে গেল। সবার খিদে পেয়েছিল বলে মুহাজিদ একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে সবাইকে খাওয়ালো। তারপর সবাই বাড়ি চলে গেল। বাড়ি ফিরতেই সবাই সবার জিনিসপত্র বাড়ির সকলকে দেখালো । আজান বিরবির করে বলল,,

“এই মেয়েরা বোধহয় নিজেদের শপিং করতে বা দেখাতে ক্লান্ত হয় না।”

মেঘ নিজের হাতের প্যাকেটগুলো আজানের কাছে দিয়ে বলল,,

“এখানে মা ,বড় ফুপি ছোট ফুপি আর কাকিমনির জন্য শাড়ি আছে তুই এদের দিয়ে দে।

“ঠিক আছে!”

আজান গিয়ে সকলকে দিল সবাই একসাথেই ছিল। ওনারা নিজেদের শাড়ী দেখলেন অনেক সুন্দর হয়েছে। আয়না চৌধুরী শাড়ীটা বের করে বলল,,

“মাশাআল্লাহ শাড়ীটা তো অনেক সুন্দর হয়েছে দেখেছো নিশ্চয়ই এটা মুন , শায়লা বা জায়মা কিনেছে। দেখেছো ওরা নিজেদের শপিং করতে যেয়ে আমাদের জন্যও কিনে এনেছে।”

তখন শায়লা বলল,,

“খালামনি এগুলো আমরা কিনি নি আমরা তো আমাদের শপিং নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।”

“তাহলে কে কিনেছে?”

তখন মেঘ বলল,,

“আজান পছন্দ করে কিনেছে ওর তো কোন কাজ ছিল না তাই ।

এ কথা শুনে আজান মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ চোখ দিয়ে কিছু বললো। আজান কিছুই বললো না। মেঘ ওপরে চলে গেল। শায়লা আর জায়মা বলল,,

“এই মেঘ কিছু কেনে নি?”

তখন আজান বলল,,

“না আপুর টা বিয়ের আগের দিন আসবে! অনলাইনে অর্ডার দিয়েছে।”

কেউ কিছু বললো না। মেঘ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বসতেই ফোন বেজে উঠল ও ফোন কানে নিয়ে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। তা সারাদিনে কি নিষ্ঠুর মেয়েটার আমার কথা একবারও মনে পরেনি? আমাকে নিয়ে একটুও ভাবো না তুমি।

“মনে পড়ার বা ভাবার কথা ছিল নাকি নাকি মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র?”

“আমি তোমার জামাই লাগি মনে পড়ার কথা কি আবার সবসময় মনে করবে সবসময় ভাববে আমার কথা এটা তোমার জন্য ফরজ।”

“যেখানে ভুলি নি সেখানে মনে পড়ার কথা আসবে কোথা থেকে মিস্টার। মনে করলেই যে তাঁর সাথে কথা বলতে হবে এমন কোন কথা নেই। নিরবে নিভৃতে তাকে নিয়ে ভাবা যায়।”

“এই তো ভাবার ছিড়ি কোনদিনও আগ বাড়িয়ে ফোন দিয়েছো?”

“কারন কোন দিন আগে বাড়িয়ে ফোন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে নি সর্বদা সঠিক সময় আপনিই ফোন দিয়েছেন?”

“কথার জালে ফাসাচ্ছো?”

“না ফ্যাক্ট বলছি।”

“প্রমান দাও তুমি আমায় নিয়ে ভেবেছি বা ভাবো?”

“প্রমান দেওয়ার কিছু নেই আপনি আপনার মতো ভাবুন।”

“নিষ্ঠুর মেয়ে!”

“হুম এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই তো ভালোবাসেন ,আগলে রাখেন, কেয়ার করেন!”

“তো আমার বউ আমি ভালোবাসবো ,আগলে রাখবো কেয়ার করবো তাতে তোমার কি?”

“আমার কিছুই না! সব তো আপনার বউয়ের। যাই হোক হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন?

“হুম এসে ফ্রেস হয়ে তোমাকে কল করলাম! কি করছো তুমি?”

“বসে আছি! বাড়ির সবাই কেমন আছেন?

“সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।”

কেউ কোন কথা বললো না হুট করে ধূসর বলল,,

“মেঘ!”

“হুম!”

“ভালোবাসি! নিজের খেয়াল রেখো আসছি। আল্লাহ হাফেজ।

মেঘ কিছু বলবে তার আগেই ধূসর ফোন রেখে দিল। সে জানে মেঘের থেকে কোন জবাব আসবে না। কিন্তু সে যদি জানতো আজ মেঘ জবাব দেবে তাহলে সারারাত অপেক্ষা করতো। মেঘ বলল,,

“আমিও আপনাকে ভালোবাসি ধূসর। ভিশন ভালোবাসি। আপনি জানেন জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমি কখনো চা বা কফি খেতে গিয়ে জ্বিভ পোড়াইনি ধূসর কিন্তু আপনার কথা ভেবে অন্যমনস্ক হয়ে আমার জিভটা পুরিয়েছি। এর পরেও কি আপনি বলবেন আমি নিষ্ঠুর। কিন্তু মুখের কথা মুখেই রইল মুখ ফুটে আর বলা হলো না।”

_______________

দুদিন পর সকালে মেঘের মামা বাড়ির সকলে এসে হাজির। মেঘের তিন মামা নানা নানী নেই। মেঘ এখনো নিচে নামে নি। তাই জানেও না যে ওনারা এসেছেন। মেঘ নিচে নামতেই মামা বাড়ির সকলকে দেখে অবাক হলো। মেঘ সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো
হুট করে মেঘের মেজো মাইনুল হাসান মেঘ কে ডাকলো । মেঘের বাবা আর মেঘের মেজো মামা সোফায় বসে আছেন ও ওখানে গিয়ে মাঝখানে বসে পরলো। মেঘ বলল,,

“হুম মামা বলুন?”

“তোমার বাবার থেকে কিছু শুনেছো?”

“আব্বা আমায় কিছুই বলেন নি?”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“বলার সুযোগ হয় নি তবে আজ বলতাম!”

তখন মেঘ বলল,

“তেমন কথা বলার থাকলে এখানে বলার দরকার নেই চলুন বাইরে যাই। এখানে অনেকেই আছে।”

“হুম বাইরে যাওয়াটাই বেটার হবে।”

ওরা তিনজন একসাথে উঠলো তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“তোমরা আবার কোথায় যাচ্ছো। মেজো ভাইয়া তুমি না মাত্র এলে খেয়ে নাও।”

“তুই সবাইকে খেতে বসা আমরা কিছুক্ষণ পর আসছি।”

মেঘ আয়মান চৌধুরী আর আশরাফ চৌধুরী বেরিয়ে গেলেন। ওরা বাগানে গেল। মেঘ বলল,,

“হুম এখন বলুন?”

“আশরাফ দেশে ফিরেছে?”

“কি!!!!! কবে?”

“আরো তিনদিন আগে?”

“আব্বা এটা আমাকে আগে বলা উচিৎ ছিল!”

“বললাম তো এতকিছু মাঝে খেয়াল ছিল না।”

“এটা আপনার সামান্য বিষয় মনে হয় যে মনে ছিল না। কারো কিছু হয়ে গেলে তখন সে দেশে ফিরেছে মানেই কিছু না কিছু করার চেষ্টা করবে। চারদিন পরেই আপুর বিয়ে আপনি বুঝতে পারছেন বিষয়টা কি? ”

তখন মাইনুল হাসান বললেন,,

“এটাই তো বেশি চিন্তা বিয়েতে না কোন গন্ডগোল করে।’

“এখন সে কোথায়? জানেন কিছু মামা!”

“জানি না জানতাম ও না যদি না এয়ারপোর্টে আমি নিজ চোখে তাকে দেখতাম তাকে ধরবো তার আগেই হাওয়া। পরে সোর্স লাগিয়ে জানতে পেরেছি। যে সে সত্যিই দেশে ফিরেছে।”

“আব্বা জেনেছেন কবে ?”

“দুদিন আগে!”

“বাহ ভালো তো!”

“আম্মা রাগ করবেন না!”

“রাগ করার মতো কথা শুনলে রাগ করবো না আব্বা তবে এখন রাগ করলে চলবে না। কি করলে আশরাফ কে ধরতে পারবো সেটার প্ল্যান করতে হবে। আপুর বিয়েতে আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না। এই দিনটার জন্য আপু অনেকদিন অপেক্ষা করেছে। এখন বিয়েতে কিছু হলে সামলাবো কি করে।”

“এমন ও তো হতে পারে এই বিয়েতে সে কিছু করবে না। হয়তো বিয়ের পর প্ল্যান কিছু করার প্ল্যান করেছে।”

কারো কথায় তিনজনেই চমকে পেছনে ফিরলো। দেখলো দু কদম পেছনেই ধূসর দাঁড়িয়ে। ধূসরকে দেখে মেঘ বলল,,

“আপনিও জানেন?”

“জানতাম না আব্বা জানিয়েছে কাল রাতে আর সকালে আসতে বলেছে।”

‘বাহ সবাই জানে আর আমিই জানি না। প্ল্যান পরে করছি আগে আব্বা আপনাকে বলি আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না। মেঘের খুব অভিমান হয়েছে।সবাই জানে শুধু আমিই জানি না। আর ধূসর আপনিও। কেউ কথা বলবেন না।”

বলেই মেঘ চলে গেল তখন আয়মান চৌধুরী অসহায় কন্ঠে বলল,,

“ধূসর এটা ঠিক করলে এমনিই আগুন ছিল তুমি তাতে তুমি ঘি ঢেলে দিলে। এখন এই আগুন নেভাবো কি করে? ওর অভিমান অনেক গভীর হয়‌। তার ওপর এটা আমাদের সবার সেফটির ব্যাপার রাগ আর অভিমান দুটোই করেছে।”

তখন মাইনুল খান বললেন,,

“আমি কিন্তু এর আগে পিছে নেই। আমার এখানে দায় নেই বললাম।”

“তুমিই যতো নষ্টের গোড়া তোমার ওকে বলার কি দরকার ছিল যে আমি জানি।”

“এখানে থাকবে না মেয়ের অভিমান ভাঙাবে!”

“হুম! ধূসর চলো আজ শুশুর আর জামাই মিলে মেঘের অভিমান ভাঙাবো।”

এ কথা বলে তিনজনেই একসাথে হেসে উঠলো। মেঘ ভেতরে যেতেই মেঘের শায়লা ওকে বসিয়ে রেখেছে সোফায় শায়লা কি যেন বলছে মেঘ শুনছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। তখন মেঘের বাবা ধূসর আর ওর মামা ঢুকলো। আয়মান চৌধুরী মেঘের পাশে বসলেন মেঘ কিছুই বললো না। ধূসর সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। সকাল সকাল মেয়ের জামাই এসেছে দেখে মায়মুনা চৌধুরী একটু ব্যস্ত হয়ে পরলো ধূসর মানা করলো। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আম্মা আসলে আপনাকে বলতে চেয়েও বলতে পারি নি। আপনি প্লিজ রাগ করবেন না।”

মেঘ এখনো কিছু বললো না উঠে চলে যেতে নিল। তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ ধূসরকে নিয়ে খেতে বসো?”

“আপনি ওনাকে খেতে দেন আমি এখন খাবো না। ”

তখন ধূসর বলল,,

“মা আমি খেয়ে এসেছি এখন খাবো না। আর মেঘ তুমি খেয়ে নাও।”

‘আমার কথা আপনার চিন্তা করতে হবে না। আপনার শুশুরকে বলুন খেয়ে নিতে। আমি খাবো না।”

“তা তো বলবোই তোমাকেও তো খেতে হবে।”

“আম্মা প্লিজ খেয়ে নেন কাল রাতে কিন্তু আপনার মাথা ব্যাথা করছিল আজ না খেলে অসুস্থ হয়ে পরবেন।”

“খাবো না।”

“খাবেন না কেন আপনার তো সকালে ওষুধ খেতে হবে আপনি কি ভুলে গেছেন আপনার রেগুলার ওষুধ খেতে হচ্ছে। আমি আপনাকে খায়িয়ে দিচ্ছি।”

“আমি খাবো না!”

বলেই মেঘ ওপরে চলে গেল। বাড়ির বাকি সবাই অবাক চোখে মেঘ কে দেখলো এ কোন মেঘ। তাছাড়া ধূসরকে অনেকেই প্রথম দেখছে। তারাও অবাক মাইনুল খান হাসছেন তা দেখে ধূসর মাইনুল মামাকে বলল,,

“মামা এটা ঠিক না আমাদের দুজনকে ভিলেন বানিয়ে আপনি হাসছেন?”

“আহ হা ভাগ্নেজামাই বললাম না এতে আমার হাত নেই।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আগে মেয়েকে খায়িয়ে নেই তার পর তোমাকে দেখছি মাইনুল। তোমার খবর আমি করেই ছাড়বো।”

ধূসর মায়মুনা চৌধুরী কে বললেন মেঘের খাবার বেড়ে দিতে মায়মুনা চৌধুরী খাবার বেড়ে দিলে ধূসর আয়মান চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,,

“আব্বা চলুন!”

আয়মান চৌধুরী আর ধূসর ওপরে চলে গেল। তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“মেজো ভাইয়া কি হয়েছে বলো তো এর আগে মেঘকে এরকম করতে কখনো দেখি নি। তাছাড়া তোমরা তিনজন তো ভালো মতোই গেলে আসার পর থেকেই মেঘ গম্ভীর হয়ে গেল।”

“মেয়ের অভিমান দেখেছিস কখনো মায়মুনা অবশ্য দেখবি কিভাবে কখনো ও তো তাকাস নি ওর দিকে।তোর মেয়ে তার আব্বা আর জামাই এর ওপর অভিমান করেছে। তাইতো তার আব্বা আর জামাই গেল অভিমান ভাঙাতে। এখন খেতে দে খিদে পেয়েছে।”

এ কথা শুনে কমবেশি সবাই অবাক হলো।

______________

মেঘ ল্যাপটপে কি কাজ যেন করছিল । মেঘের বাবা আর ধূসর রুমেয় ঢুকে গেল। মেঘ দেখেও না দেখার ভান করলো । আয়মান চৌধুরী মেঘের পাশে গিয়ে বলল,,

“আম্মা আমাদের ওপর রাগ করে নিজে না খেয়ে থাকবেন না।”

“মেঘ প্লিজ এখন বাচ্চামো করলে চলবে চুপচাপ খেয়ে নাও।”

মেঘ চোখ তুলে তাকালো মেঘের চোখ ছলছল করছে। তা দেখে আয়মান চৌধুরী আর ধূসর একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মেঘ বলল,,

“আমায় এতো ভালোবাসলেন কেন আব্বা। সবার মতো অবহেলা করলেও তো পারতেন। আপনাদের এই অধিক ভালোবাসা আমার মনে এত ভয় কেন সৃষ্টি করে আব্বা। ”

ধূসর আর আয়মান চৌধুরী একসাথে বলল,,

“কি হয়েছে মেঘ?”

“এই যে আপনাদের ওপর রাগ করেছি দেখে কাউকে পরোয়া না করে আমার কাছে এলেন। কেন এতো ভালোবাসলেন আপনারা। আমার ভয় আমি আপনাদের হাড়িয়ে ফেলবো না তো। সে যে আপনাদের দুজনেরই ক্ষতি চায়। আমি চাইনা আপনাদের হারাতে। যখন শুনলাম সে ফিরে এসেছে তখন বাবার সেই এক্সিডেন্টের চেহারা ভেসে উঠেছিল। আব্বার শ্বাসকষ্ট হওয়ার চেহারা ভেসে উঠেছিল। ধূসরের সেই কান্না মনে পরেছিল এক মুহুর্তের জন্যে খুব ভয় পেয়েছিলাম। আপনারা জানালেন না কেন? এটার জন্য আমি রাগ করি নি আব্বা আমি জানি আমার আব্বা সেরকম কোন বাঁধা না থাকলে জানাতোই‌। কিন্তু আমি আপনাদের নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম। আমি একটু একা থাকতে চাচ্ছিলাম। আপনারা যাতে আমার ভয় না টের পান কিন্তু আপনারা দুজন তো নাছোড়বান্দা আমার পেছনে হাত ধুয়ে লেগে গেলেন। আমি আপনাদের থেকে লুকাতে পারলাম না।”

আব্বা আমি আপনাদের ভিশন ভালোবাসি আপনাদের হারাতে চাই না আব্বা তাকে যতো তাড়াতাড়ি পারেন ধরে ফেলুন আব্বা। তার শাস্তির ব্যবস্থা আমি নিজ হাতে করবো আব্বা। তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই আপনার মেয়ে এই প্রফেশনে এসেছে। আমি আবার সেই ভয় পেতে চাই না।”

মেঘ আয়মান চৌধুরীকে জরিয়ে ধরলো। ধূসর মনোযোগ দিয়ে পুরো কথা শুনলো। তাকে ভালোবাসার কথা বললো যদিও যৌথভাবে বলেছে কিন্তু বলেছে তো। ধূসর বলল,,

“শুনো মেঘ যা হয়েছে তা আর কখনোই ঘটবে না। কারন এখন আয়মান চৌধুরী একা নন সাথে ধূসর আছে সব থেকে বড় কথা মেঘ তার সাথে আছে। আমরা সবাই মিলে তাকে ধরে ফেলবো । তাকে আর আমাদের ক্ষতি করতে দেব না। তুমি ভয় পেয়ো না। মেঘের সাথে ভয় একদম যায় না।”

“ধূসর ঠিক বলেছে যার শরীর এক, কিন্তু তিন সত্তা তার মুখে ভয় মানায় না।”

“তিন সত্তা?”

“আব ধূসর কিছুই না এখন বলো মেঘকে খাওয়াবে কে? আমি নাকি তুমি?”

“আপনিই খায়িয়ে দেন আমি চোখ ভরে আপনাদের দুজন কে দেখি। এটা দেখাও একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি সত্যি অভিমান করেছে।

“মেঘ অভিমান করে না তার লাইফে অভিমান ভাঙানোর মানুষ নেই।”

মেঘের কথা শুনে ধূসর বলল,,,

“আগে ছিল না এখন আছে মিসেস কাসফিয়া আয়মান মেঘ। একবার সত্যি সত্যি অভিমান করেই দেখুন না। অভিমান ভাঙানোর জন্য এই ধূসর এহসান শুভ্র কি কি করে শুধু দেখবেন।”

“এখন চুপ থাকুন আব্বা খাওয়ান!”

আয়মান চৌধুরী মেঘকে খায়িয়ে দিল। ধূসর পানি এগিয়ে দিল। খাওয়া শেষ করে ওষুধ খায়িয়ে দিল। ধূসর বলল,,

“ম্যাডাম এখন নিচে যাবেন কি না বলুন! নিচে গিয়ে দেখুন সবাই কি বলছে আমার নামে নিশ্চয়ই বলছে ছেলেটা বউ পাগলা।”

এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী আর মেঘ হেসে উঠলো। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,,

“তুমি তো বউ পাগলাই নাহলে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য কেউ কাঁদে!”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী এবারও হাসলো ধূসর মাথা চুলকালো। মেঘ হাসি থামিয়ে বলল,,,

“শুকরিয়া আমার মন ভালো করার জন্য! এখন আর কোন ভয় নেই আপনারা দুজন যে সাথে আছেন। সারাজীবন এভাবেই পাশে থাইকেন আমার। নাহলে এই ধূসর রাঙা মেঘ কুয়াশার মাঝে হাড়িয়ে যাবে চিরতরে।

তখন দুজন একসাথে বলল,,,

“জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকবো এভাবে মেঘের পাশে।”

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে