ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-০৮

0
1030

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আয়মান চৌধুরী কথাটা শেষ করে আবার বলল,,

“আমার মেয়েটাকে একটু ভালোবাসলে কি তোমাদের খুব ক্ষতি হতো। এই মেয়েটা একা একা কতটা কষ্ট করেছে কেউ খবর রেখোছো রাখোনি। অথচ আমি ওকে বেশি ভালোবাসি বলে নিজেদের সাথে ওর তুলনা করছো। আবার জিজ্ঞেস করছো কেন ভালোবাসি। এই যে আমি ওকে ভালোবাসি এই জন্যই ও বেঁচে আছে নাহলে আরো আগেই ও থাক অনেক কথা হয়েছে আমি আর কিছু বলতে চাই না। বড় আপা এক গ্লাস পানি দাও।”

সবাই মাথা নিচু করে আছে। আশা চৌধুরী পানি নিয়ে এলেন উনি সোফায় বসে খেলেন। তখন আজান গিয়ে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“বাবা আমি যদি কাসফিয়া আয়মান মেঘের আব্বাকে একটু আব্বা ডাকি তাহলে কি সে রাগ করবে।”

এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,,

“সে একদম রাগ করবে না। তবে এরজন্য তোমাকে কাসফিয়া আয়মান মেঘের অনুমতি নিতে হবে। হাজার হোক তার একমাত্র আব্বা আমি ।”

“আব্বা তো একটাই হয় আবার দুটো হয় নাকি হুম।”

আয়মান চৌধুরী ছেলের কথা শুনে হাসলো। তখন মুন এগিয়ে এসে বলল,,

“সরি বাবা আসলে আমি তখন যাই হোক সরি আসলে?”

“এখন কি তুমিও আমায় আব্বা ডাকতে চাও?”

“না কারন এখন বাবা থেকে আব্বা বললে বাবা নামক মানুষ টা আমার কাছে অন্য হয়ে যাবে। আমার কাছে ঐ বাবা সম্বোধনেই সব আমার ভালোবাসা আমার শ্রদ্ধা। ”

“শুনে ভালো লাগলো। তবে বাবাকে যে সম্বোধনেই ডাকা হোক না কেন সেই বাবাই সব ছেলেমেয়েদের কাছে তাদের সুপার হিরো। সম্বোধনে কি আসে যায় আসল তো মানুষটাই।”

“হুম!”

“বাবা তোমায় একটু জরিয়ে ধরি।”

“হুম!”

মুন বাবাকে জরিয়ে ধরলো অনেক বছর পর মুন এভাবে জরিয়ে ধরলো। সেই ছোটবেলায় ধরেছিল। বাবাকে জরিয়ে ধরতে পারা কিন্তু সহজ কাজ নয়। আজান ও জরিয়ে ধরলো। এই মুহুর্তটা তাদের বেস্ট মুহুর্তের মধ্যে একটা। মায়মুনা চৌধুরীর চোখে পানি এসে গেল।

_______________

মেঘ রুমে এসে হাত মুখ ধুয়ে বের হলো খুব কষ্ট হচ্ছিল ভালোই হয়েছে আব্বা উপরে আসতে বলল নাহলে সবাই এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে ফেলতো তার আব্বার কষ্ট যে তার সহ্য হয় না। আচ্ছা তার আব্বা কি তার বিদায়ের কথা ভেবে ওরকম নাকি এমনিই ইমোশনাল হয়ে পরেছিল। মুখ ধুয়ে এখন আর কান্না পাচ্ছে না সে কান্না টাকে গিলে ফেলেছে। ও বিরবির করে বলল,,,

“না আব্বার মুড বোধহয় ঠিক নেই যাই আব্বার মুড ঠিক করে আসি কালকের খবরটাও তো দিতে হবে। রাতে দেব না এখন দেব। যাই এখনি বলে আসি আব্বা খুশি হবে।”

ভেবেই রুম থেকে বের হলো তার ওপর থেকে দেখতে পেল মুন আর আজান ওর বাবাকে জরিয়ে ধরে আছে। ব্যাপার টা ঠিক মাথায় ঢুকলো না তবে ও বেশ খুশি হলো। বাবার মুখে হাসি দেখে ও আর নিচে নামলো না। শরীর টা ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমানো যাক। বাকিটা রাতে করে নেবে। ও রুমে গিয়ে সূরা রহমান ছাড়লো তারপর শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লো।

______________

ধূসর রা বাড়ি ফিরেছে সকলে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। আজ যেহেতু সবাই বাড়ি তাই ফ্যামিলি টাইম সবাই মিলে আড্ডা দেবে। সবাই বসে পড়লো সবার প্রথমে নোলক বলল,,

“তো আমার বাড়ির সদস্যগন আমার ভাবির বাপের বাড়ি আই মিন ভাইয়ার শুশুরবাড়ি কেমন লাগলো?”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“ভালোই তো মানুষ গুলোও ভালো তবে মেঘের ছোট ফুপু উনি আমাদের থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। তাছাড়া মনে হলো মেঘের সাথে মেঘের মায়ের সম্পর্ক স্বাভাবিক না। উনি যখন মেঘ বলে ডাকলো মেঘ একপ্রকার চমকে উঠেছিল বোধহয় হুট করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে মেঘ নামটাও শুনেনি।

তখন রোহিনী বলল,,

“শুধু মায়ের সাথে না বোনের সাথেও সম্পর্ক স্বাভাবিক না। ওর বোন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমাদের সাথে মেঘের এত সখ্যতা কেন? সব বলার পরে বলল মেঘ নিজের ফ্ল্যাটে থাকতো দেখে জানে না। এ কেমন বোন নিজের বোনের খবর রাখে না।”

“আচ্ছা তাদের ব্যাপার তারা বুঝে নেবে আমাদের ভেবে লাভ নেই তবে সেরকম কিছু হলে আব্বা আমাদের বলতেন। ”

ধূসরের কথা শুনে দিলরুবা খানম বললেন,,

“হুম সেটাই! তা ধূসর তুই সত্যিই ওখানে গিয়ে বাড়ি যাস নি তো।”

“তোমার কি মনে হয়?”

“তোকে বিশ্বাস নেই।’

“কেন এখন কি সব বিশ্বাস তোমার বউমাকে করো
নাকি । ওকে ফাইন তাকে জিজ্ঞেস করো আমি সে বাড়ির ভেতরে গিয়েছি নাকি।”

“ওকে পরে কথা হলে জিজ্ঞেস করে নিব। ও এখন ওর মতো থাকুক।”

ধূসর মিথ্যে বললো না কিন্তু ওর কথার মানে কেউ বুঝতেই পারলো না ও বলল বাড়ির ভেতরে গিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে কারন ও বাড়ির ভেতরে যায় নি। এটা বলে নি বাড়ি গিয়েছে কি না। ধূসর রা কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে নিজের চলে রুমে গিয়ে ধূসর একটা ছবি বের করে বলল,,

“তোকে কাল খুব মনে পরছিল রে ঐ বাড়ির দিকে তাকিয়ে বোধহয় তোর হাসি শুনতে পেলাম প্রথমে। কি হাসি খুশি থাকতাম আমরা তুই কোথায় তোকে কি আমরা কোনদিন পাবো না। জানিস মাকে কিন্তু বলি নি আমি ওখানে গিয়েছিলাম নাহলে মা যে কষ্ট পেত। তুই কোথায় হাড়িয়ে গেলি তোকে যে আমি খুব মিস করি। ফিরে আয় না আমাদের কাছে। আচ্ছা তুই ঠিক আছিস তো সবাই তো বলে তুই নেই কিন্তু আমার তো বিশ্বাস হয় না তোকে ভিশন ভালোবাসি পিচ্চি!

________________

” খবর শুনছো ঐ জামানকে তো ধরে ফেলেছে পুলিশ, এখন কি হবে যদি তোমার নাম বলে দেয়?”

এ কথা শুনে বস নামক লোকটি বোধহয় মজার কিছু শুনলো সে হাসতে লাগল আর বলল,,

“আমার নাম বলে কি হবে সে কি আমাদের দেখেছে কোনদিন না দেখে নি। আর আমার নাম বলার আগেই আমি তাকে ছাড়িয়ে আনবো। তুমি বেস্ট লয়ার কে হায়ার করো যত টাকা লাগে লাগুক তাকে বের করার ব্যবস্থা করো। কারন সে হলো আমাদের তুরুপের তাস। তার মাধ্যমে আমি কতো টাকা ইনকাম করেছি তা তোমার ধারনার বাইরে।”

” তাকে এই মুহূর্তে বের করা কঠিন। কারন তার ওপর অনেক বড় বড় অভিযোগ আনা হয়েছে অবৈধ ওষুধ তৈরি, মানুষের ক্ষতি করা মেরে ফেলা, ভুলভাল ওষুধ দেওয়া সব রকমের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।”

“আচ্ছা তা কাল কোর্টে কোন লয়ার অপজিটে থাকবে? সেসব জানো নাহলে কাল ঐ লয়ার কে সরিয়ে ফেলো,,

” জানি না কে থাকবে সেটা জানতে পারি নি সেটা সিক্রেট রাখা হয়েছে। এটা সেই লয়ার নিজেই করেছে যাতে সে সুরক্ষিত থাকে। আমার মনে হয় তার কাছে জামানের বিরুদ্ধে কোন সলিড প্রমান আছে। নাহলে সে নিজেকে কেন আড়াল করবে। যদি আমরা জেনে তার ক্ষতি করে দিই আর ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি হচ্ছে যে কোনো কূল কিনারা পাচ্ছি না। আজই ধরেছে আর কালই কোর্টে নেবে। এটা আগে থেকেই প্ল্যান করা মনে হচ্ছে যাতে আমরা কিছু না করতে পারি।”

“তাহলে তো মুশকিল ধরা পড়ার একটা চান্স আছে ? কি করা যায় নিজেকে বাঁচাতে ওকে যদি পুরোপুরি ফাঁসিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ভালো হয়।
আর সে আমার নাম বলবেও না কারণ সে জানে আমার নাম সামনে আসলে তার পরিবার শেষ আর সে যে তার পরিবার কে অনেক ভালোবাসে‌। দরকার পরে সে নিজেই সমস্ত কিছু নিজের ওপর চাপিয়ে নেবে চাপিয়ে যাতে নেয় এই জন্য আমি আজ রাতে তার সাথে লুকিয়ে দেখা করবো। আমার কেউ কিছু করতে পারবে না।”

“যদি ধরা পড়ো?”

“আমাকে ধরা সহজ নয় তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। তুমি যাও গিয়ে তোমার কাজ করো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে কাল কি তুমি যাবে কোর্টে?”

“না গেলে দেখবো কিভাবে জামানের কি হলো আর লয়ার টা কে? অবশ্যই যাবো। এখন তুমি যাও।

লোকটা যেতেই সে কুটিল হাসলো।

________________

আয়মান চৌধুরী মেঘের রুমে এলো ঘরটা অন্ধকার মেঘ ফ্যান ছেড়ে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে বোধহয় ঘুমিয়ে পরেছে ফোনে এখনো সূরাটা চলছে বোধহয় শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পরেছে তিনি গিয়ে সূরাটা অফ করে মেঘের কপালে চুমু খেয়ে বের হলেন। উনি গিয়ে ওনার বেলকনির চেয়ার টাতে বসে মেঘের ছোটবেলার কথা মনে করলেন মেঘ একদম ওনার মায়ের মতো হয়েছিল দেখে সে সবসময় মেঘকে গিয়ে আম্মা বলতো মেঘ ও খিলখিল করে হাসতো মেঘকে কেউ শিখিয়ে দেয় নি আব্বা বলতে সে নিজ থেকেই আব্ বা আব্বা আমার আব্বা বলতো আধো আধো বলিতে তখন আয়মান চৌধুরী যেন নিজের সেরা সুখ পেতেন। কারন তিনি তার বাবা কে অনেক সম্মান করতেন আব্বা বলতেন আপনি বলে সম্বোধন করতেন। তাই মেঘকে সে আপনি বলে সম্বোধন করতো নিজের আম্মার মতো মেঘ ও তার দেখাদেখি আপনি সম্বোধন করতো এভাবেই শুরু হয় বাবা মেয়ের একে অপরের আপনি সম্বোধন। ভাবতে ভাবতে তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল কিন্তু ভাবনার জগতে একটু আগাতেই তার হৃদয় ভরাকান্ত হয়ে গেল কাজের আর পরিবারের মধ্যে তিনি একটু করে মেঘকে ভুলতে বসেছিলেন সেদিন ওভাবে মেঘ না বললে হয়তো মেয়েটার সাথে তার এত সখ্যতা তৈরি হতো না। তিনিও মেঘের খবর রাখতো না। তিনি বিরবির করে বলল,,

‘মেঘ আম্মা আমারে মাফ করে দিয়েন আগের জন্য। ভুল শুধরানোর জন্য শুকরিয়া আম্মা।”

তিনি আগের কথা ভাবতে লাগলেন,,
মেঘের তখন পাঁচ বছর দুপুরে বাড়ির সবাই বোধহয় খেয়েছে আর মেঘ কে ওর মা খাবার জন্য প্লেটে খাবার বেরে দিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। কারন মেঘ আরো আগে থেকেই নিজ হাতে খাবার খায়। কেউ নেই ড্রয়িংরুমে শুধু আয়মান চৌধুরী সোফায় বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। মেঘ গুটি গুটি পায়ে আব্বার কাছে গিয়ে বলল,,

“আব্বা আপনি কি ব্যস্ত ?”

মেয়েকে দেখে তিনি ফোন কানে রেখেই বললেন,,

“আর দুই মিনিট।”

আয়মান চৌধুরী দুই মিনিটের জায়গায় দশ মিনিট লাগিয়ে দিলেন মেঘ তখনো ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। ফোন রেখে ঘুরতে মেঘ কে নজরে এলো সে বলল ,,

“মেঘ আম্মা দাঁড়িয়ে আছেন কেন এতক্ষন? কিছু বলবেন”

“আপনি তো ব্যস্ত ছিলেন আব্বা তাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

তার মনে পরলো কথার মাঝে দুই মিনিট বলেছিল কিন্তু দশমিনিট হয়ে গেছে এতক্ষণ ও এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল কাজটা ঠিক করেন নি তিনি। তিনি মেয়েকে ধরে সোফায় বসালেন আর বললেন,,

“ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন কেন?”

“আসলে আব্বা আজ খেলতে গিয়ে হাত কেটে গেছে আপনি একটু আমায় খায়িয়ে দেবেন। মাকে বলেছিলাম উনি বললেন উনি ব্যস্ত খায়িয়ে দিতে পারবে না। অবশ্য তাকে বা আপনাকে বলতাম না কিন্তু হাত খুব জ্বলে আব্বা আমার ভীষণ কষ্ট হয় তাই আপনি যদি,,”

মেঘের প্রতি মায়মুনা চৌধুরীর অবজ্ঞা অবহেলা আয়মান চৌধুরী আগেই টের পেয়েছিলেন কিন্তু এটা যে এতটা রুপ ধারন করেছে উনি বুঝতে পারেন নি। কি এমন কাজ পরলো যে মেয়ের হাত কেটে গিয়েছে খায়িয়ে দিতে পারলো না। তিনি মেয়েকে কোলে বসিয়ে ভাত মেখে খাওয়াতে লাগলেন । খাওয়া শেষ করে মেঘ বলল,

“আচ্ছা আব্বা আমাকে কেউ মুন আপুর মতো ভালোবাসে না কেন মা ও তো মুন আপুকে কতো ভালোবাসে এর আগে মুন আপুর হাত কেটে গিয়েছিল মা খায়িয়ে দিল। হাত কেটে গিয়েছিল বলে বাড়ির সবাই কতো আদর করলো কাকাই তো চকলেট ও এনে দিল। তাহলে আমার বেলায় উল্টো কেন আমি কি করেছি আব্বা আমায় কেন কেউ ভালোবাসে না।”

মেয়ের কথা শুনে তিনি বুঝতে পারলেন তার ভুল হয়ে গেছে মেয়েটাকে এভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ হয় নি।
তবে তার মেয়ে যে বুঝদার হয়ে গেছে সেটা সে বুঝে গেছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘আমি তো আপনাকে ভালোবাসি আম্মা এরপর থেকে কিছু হলে আর কাউকে না বলে আমায় বলবেন । অফিসে থাকলে ফোন করে বলবেন। বুঝেছেন আম্মা।”

“বুঝেছি আব্বা আর কাউকে বলবো না শুধু আপনাকেই বলবো। আমিও আপনাকে ভালোবাসি আব্বা খুব ভালোবাসি।”

এরপর থেকেই শুরু হলো বাবা মেয়ের পরিবারের মাঝে থেকেও আলাদা পথচলা। মেঘ সবসময় আর কাউকে কিছু না বলে শুধু আব্বাকেই বলতো। এরপর থেকেই হয়ে উঠলো একেঅপরের সঙ্গী। কতো রাজ আছে তাদের মধ্যে এটা শুধু তারাই বলতে পারবে। এই জন্যই তো যখন সবাই মেঘকে খুনি বলল তখনও সে তার মেয়েকেই আগলে রেখেছিলেন। কারন তিনি জানেন মেঘ কিছুই করে নি‌। এরপর থেকেই শুরু হলো বাবা মেয়ের অদ্ভুত সম্পর্ক বন্ধুত্বের গাঢ় বন্ধন। সবকিছু ভেবে তিনি হাসলেন আর বললেন,,

“আপনাকে খুব ভালোবাসি আম্মা আপনি হলেন আমার এই স্বার্থপর দুনিয়ার নিঃস্বার্থ বিশ্বস্ত বন্ধু। আমি আপনাকে হারাতে চাই না আম্মা সবসময় আমার কাছে রাখতে চাই আম্মা। কিন্তু কি করার আম্মা প্রকৃতির নিয়ম। সবাই যে আপনাকে হারানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে আম্মা।কিন্তু আপনি আমার থেকে কখনো হারায়েন না আম্মা এই #ধূসর_রাঙা_মেঘ রহস্যময় মেয়েটাকে বিলীন হতে দিয়েন না। আপনি আপনার লক্ষ্যে স্থির থাইকেন আর নিজেকে সামলিয়ে রাইখেন। আমি আপনাকে ভিশন ভালোবাসি আম্মা।

আয়মান চৌধুরী কে দেখে পেছনে মায়মুনা চৌধুরী ও রুমে ঢুকলেন এতক্ষন দাঁড়িয়ে আয়মান চৌধুরী কে দেখছিলেন কিন্তু আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে তিনি চমকে গেলেন । এসব তিনি কি বলছেন হুট করেই তার মেঘের জন্য কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার জন্য তিনি কি বেশি নিষ্ঠুর হয়েছেন। না এসব মেঘের জন্য সে কি ভাবছে সে একজন খুনি তার জন্য সহানুভূতি মানায় না। কিন্তু ভেতর থেকে হয়তো আওয়াজ আসলো ,,

“যে নেই তার জন্য তুমি কষ্ট দিচ্ছো তাকে আর যে আছে তাকে আরও কষ্ট দিতে দিতে এই মেয়েটিকেও কষ্টের অথৈ সাগরে ফেলে দিয়েছো আজ তোমার মেয়েকে দেখছো তোমার মেঘ ডাকায় সে চমকে উঠেছিল তার চোখ ছলছল করছিল। তার চোখে মুখে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার আকুতি দেখো নি। সে তো কখনো তোমায় কখনো বিরক্ত করে নি তোমায় ভালোবাসে বলে তোমার বলায় জেনেও নিজের ক্ষতি করেছে তোমার মনে নেই চিংড়ি মাছের ঘটনা যার জন্য আজ ও তুমি না চাইতেও মেঘের দুর্বলতা মনে রেখোছো। আর আজ সবার সামনে বলেও ফেললে,,

মায়মুনা চৌধুরী বিছানায় বসে পরলো তার ভিশন কষ্ট হচ্ছে মেঘের অসহায় চোখে মুখে দুঃখের ছাপ সেই লাল লাল কান্না ভেজা মুখ অসহায় চোখ মুখে হাসি ফোটানোর ব্যর্থ চেষ্টা। মেঘের সেই মুখটা মনে পরলেই তার বুক ভার হয়ে আসে সে তো মা যতোই হোক সে একজন মা। তিনি চোখ বন্ধ করে নিল,,

মেঘের তখন বারো বছর মুন বায়না করলো তার চিংড়ি মাছ খেতে ইচ্ছে করছে তাই মেয়ের বায়না রাখতে মায়মুনা চৌধুরী শুধু চিংড়ি মাছের আইটেম করলেন। এদিকে যে মেঘের চিংড়ি মাছে এলার্জি সেটা বোধহয় জেনেও ভুলে গিয়েছিলেন। বাড়িতে তেমন কেউ ছিল না সবাই নিজের কাজে মেঘ আর মুন স্কুল থেকে ফিরে খেতে বসলো সব চিংড়ি মাছের আইটেম দেখে মেঘ বলল,,

“মা আর কিছু রান্না করেন নি?”

“না!”

“আমাকে একটা ডিম ভেজে দিবেন?”

“যা আছে তাই দিয়েই খাও । এখন তোমার জন্য আলাদা করে আবার ডিম ভাঁজতে হবে কেন?”

“আসলে মা? আচ্ছা খাবো না আমি গেলাম।

“আসলে নকলে ছাড়ো আর একদম ঢং দেখাবে না দিনদিন তোমার অভদ্রতা বেশি বেরে যাচ্ছে। এই নাও চিংড়ি মাছ তরকারি তোমার প্লেটে বেড়ে দিলাম খাও কোন কথা না চুপচাপ খাবে দেখছো না মুন চুপ করে খাচ্ছে।”

এ কথা শুনে মেঘ ছোট করে বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

বলেই মেঘ ভয়ে ভয়ে খেতে লাগলো আসলে চিংড়ি মাছে তার বেশিই এলার্জি ভুলেও একটু পাতে পরলেই পাঁচ মিনিট পর থেকে চুলকাতে প্লাস সারা শরীর চাকা চাকা লাল হয়ে দাগ হয়ে যাবে। ও কোন রকমে খেল কয়েক লুকমা খেল তারপর ভাত পাতে রেখেই হাত ধুয়ে ওপরে চলে গেল মেঘের মা দেখেও কিছু বললো না। ঘরে গিয়ে মেঘের পাগল পাগল অবস্থা ও এলার্জির ওষুধ খুঁজতে লাগলো এদিকে খুব কষ্ট হচ্ছে শরীর যেন ব্যাথায় আসাড় হয়ে আসছে। ও না পেরে ফ্লোরে বসে পরলো বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো চোখ দিয়ে পানি পরছে। না খেয়ে থাকলেও বোধহয় ভালো হতো। রুমের পাশে দিয়ে তখন মায়মুনা চৌধুরী যাচ্ছিল মেঘকে বসে থাকতে দেখে তিনি না চাইতেও এগিয়ে আসলো কারন মেঘ ফ্লোরে বসার মেয়ে না । রুমে ঢুকতেই কান্নার আওয়াজ পেল তিনি আরো এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“কি হয়েছে তোমার এভাবে ফ্লোরে হবে আছো কেন?”

মেঘ তখনি অসহায় চোখে মায়মুনা চৌধুরীর দিকে তাকালো মেঘের মুখ দেখে তিনি চমকে উঠলো জায়গায় জায়গায় লাল চাকা চাকা হয়ে গেছে চোখে মুখে দুঃখের ছাপ। মেঘ কষ্ট করে উঠে দাড়ালো আর মুখ দিয়ে ব্যর্থ হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বলল,

“আসলে চিংড়ি মাছে তো এলার্জি কিন্তু এলার্জির ওষুধ টা খুজে পাচ্ছি না। শরীর টা ভিশন চুলকাচ্ছে ব্যাথা করছে আর জ্বলছেও আপনার কাছে কি ওষুধ আছে তাহলে একটু এনে দিবেন প্লিজ আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে প্লিজ এটুকু করুন আর কিছু করতে বলবো না প্লিজ।”

মায়মুনা চৌধুরী মেয়ের কথা শুনে চোখ ছলছল করে উঠলো তখনই দৌড়ে রুমে গিয়ে ওষুধ নিয়ে এলেন ততক্ষনে মেঘ বিছানায় শুয়ে পরেছে উনি আসতেই মেঘ ওষুধ খেয়ে নিল আর বলল,

“শুকরিয়া!”

মেঘ আর কিছু বললো না চোখ বন্ধ করে ফেললো তখন মেঘের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো।তা দেখে তার সেদিনের মতো মনে হয়েছিল সে নিষ্ঠুর মা কি করে সে ভুলে গেল তার মেয়ের চিংড়ি মাছে এলার্জি। ভালো না বাসলো এটুকু তো মনে রাখতে পারতো একটু ডিম ভেজে দিতে পারতো‌। উল্টো বকাঝকা করে তাকে খাওয়ালো মেঘ তো খেতে চায় নি। সে একপ্রকার জোর করেই খায়িয়েছে। এরপর থেকে মেঘের জন্য চিংড়ি মাছ টার কথা মনে রাখে। মায়মুনা চৌধুরীর চোখ থেকে মেঘের জন্য আজ দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। কিন্তু সে চোখ মুছে নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। সে চায় না ঐ নিষ্ঠুর মেয়েটা কে ভালোবাসতে।

______________________

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসলো সেই মুহূর্তের পর আজানের সাথে মেঘের দেখা হয় নি। তাই মেঘ কে দেখেই বললল,,

“মেঘ আপু?”

“হুম বল!”

“তোমার আব্বা কে যদি আব্বা ডাকি তুমি কি রাগ করবে?”

“তা হুট করে আব্বা ডাকতে ইচ্ছে হলো কেন আর আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস কেন?”

“হুট করেই ইচ্ছে হলো তাই আর বাবাকে বলেছিলাম বাবা বলেছে তোমার থেকে অনুমতি নিতে।”

“ওহ আচ্ছা তবে শোন যদি তুই যে নামে ডেকে কমফোর্টেবল সেই নামে ডাকবি। এখানে বাবা , আব্বা, আব্বু এগুলো ম্যাটার করে না। সম্বোধনে কি আসে যায় মূলত তো সেই মানুষ টা। তুই যদি বাবা ডেকে কমফোর্টেবল ফিল করিস তাহলে সেটাই ডাকবি আগে যেরকম ডাকতি। আর যদি আব্বা ডেকে কমফোর্টেবল ফিল করিস তাহলে তাতেই ডাকবি তোর ইচ্ছে। তবে কি মন থেকে যে ডাকটা আসে সেটাই বেস্ট। এখন বল কি ডাকতে চাস।”

“তাহলে আব্বা ক্যানসেল তখন আবেগী হয়ে বলেছিলাম। আমি তো বাবাই ডাকবো এটাই ফাইনাল। ওকে ড্যাডি!”

মেঘের কথা শুনে সবাই শুনলো আয়মান চৌধুরী খুশি হলেন। তবে আজানের ড্যাডি শুনে আয়মান চৌধুরী একটু আজানের দিকে তাকালো আর বলল,,

“ড্যাডি কি তাহলে তোমার মন থেকে আসলো আজান বাবা।”

“ভুলে মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে সরি বাবা!”

“ওকে !”

“আব্বা খাওয়ার পর আপনার সাথে কিছু কথা ছিল খাওয়া শেষ করে স্টাডি রুমে আসবেন।”

“আপনি কি বলবেন আমি জানি সে ব্যাপারে সমস্যা নেই আম্মা আমি নিজে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো সব বারের মতো।

” ঠিক আছে আব্বা!”

____________________

পরদিন,,

ফজরের আজান কানে আসতেই চোখ খুললো মেঘ ঘুম থেকে ওঠার দোয়া পরে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে ফজরের নামাজ পড়ে নিল। সবার জন্য দোয়া করলো আজকের দিনটার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলো। এরপর উঠে নিজের সব কাগজপত্র ঠিক করে নিল । কি কি পয়েন্ট করেছে আবারও চেক করলো। সাতটার দিকে গোসল করে রেডি হলো তারপর নাস্তা করে আটটার দিকে কালো বোরকা কালো হিজাব আর নিকাব পরলো তখন ওর বাবা ওর রুমে এলো আর বলল,,

“আম্মা আপনি রেডি?”

“জি আব্বা!”

“সব গুছিয়ে নিয়েছেন তো?”

“জি আব্বা চলুন!”

আয়মান চৌধুরী মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“আজও আপনি জিতবেন ইনশাআল্লাহ্। ”

ইনশাআল্লাহ আব্বা সব গুছিয়ে নিয়েছি এইবারও আমার জয় হবে। আপনি শুধু দোয়া করবেন সব যেন সহজ হয়। তাকে আমি সর্বচ্ছো শাস্তি দিব বাবা কারন সে আমার আব্বার ক্ষতি করতে চেয়েছিল আপনাকে ভুল ওষুধ দিয়েছিল আমি যদি না বুঝতাম তাহলে এতদিনে আপনার অবস্থা আরো খারাপ হতো আব্বা।”

“সঠিক সময় অন্য ডক্টর দেখিয়েছেন বলেই তো আমি ঠিক আছি আম্মা। ইনশাআল্লাহ রোকন ওর কৃতকর্মের শাস্তি পাবে। এখন চলুন যাই আপনার দেরি হয়ে যাবে।”

“হুম!”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী নিচে নামলো মেঘের হাতে ফাইল। কেউ মেঘের লয়ার হওয়া নিয়ে কিছু জানে না। সবাই ভাবলো হয়তো ইন্টার ভিউ দিতে যাচ্ছে। কেউ কিছু বললো না। ওরা কোর্টে পৌঁছালো মেঘ গাড়ি থেকে নেমে দেখলো ধূসর আগেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ওদের জন্য। আয়মান চৌধুরী নামলেন না বেস্ট অফ লাক বলে চলে গেলেন। ধূসরের কাছে যেতেই ধূসর বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম ব্যারিস্টার ম্যাডাম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন?”

‘এই তো পাঁচ মিনিট! ভেতরে যাওয়া যাক।”

“হুম চলুন! আর হ্যা বেস্ট অফ লাক মাই ডিয়ার ওয়াইফি।”

“শুকরিয়া মাই ডিয়ার হাজবেন্ড!”

অতঃপর দশটায় কোর্টের কার্যক্রম শুরু হলো। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো রুকনুজ্জামান প্রথমেই সব স্বীকার করলেন যে তিনি এ কাজের সাথে জড়িত। এমন কি মেইন কালপ্রিট উনি নিজেই। এ কথা শুনে মেঘ অবজেকশন দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। সকলে অবাক কারন এমন কি রুকনুজ্জামান নিজে। অতঃপর মেঘ কোর্টের কাছে সেদিনের ভিডিও ক্লিপ দেখালো আর বলল মেইন কালপ্রিট কে ধরার জন্য। এই কেসটা মেঘ সহজেই জিতে গেল। এদিকে কোর্টের ভেতরে একজন এর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো তার ইচ্ছে করছে এখনই মেঘকে উরিয়ে দিতে কিন্তু পসিবল না। সে বুঝতে পারল সেদিন রাতে আর কেউ না এই ছিল । সে রাগে আগেই কোর্ট ছেড়ে চলে গেল মেঘকে সে দেখে নেবে।তবে অবাক করা বিষয় ধূসর এর আজ কিছুই করতে হয় নি। কারন রুকনুজ্জামান নিজেই স্বীকার করেছে। কাজটা এত সহজ হবে মেঘ বা ধূসর কেউ ভাবতে পারে নি। এদিকে সবাই মেঘ কে শুভেচ্ছা জানালো। মেঘ নিজেও একজন নামকরা লয়ার এখনো কোন কেস হারে নি ইয়াংস্টার দের কাছে কাসফিয়া আয়মান মেঘ একজন আইডল। অনেক কঠিন কেস ও মেঘ জিতে গেছে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। ধূসর মেঘকে বাড়ি পৌঁছে দেবে । গাড়িতে উঠতেই ধূসর বলল,,,

‘আরো একটা জয় নিজের ঝুড়িতে নেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা।”

“শুকরিয়া!”

“চলো আজ আমাকে বিড়িয়ানি ট্রিট দেবে!”

“আমার টাকা বেশি হয়েছে নাকি আপনাকে ট্রিট দেব! সমস্যা নেই চলুন আমার হাজবেন্ড আপনাকে ট্রিট দেবে।”

বলেই মেঘ মুচকি হাসলো তা দেখে ধূসর বলল,,

“বেশি ধুরন্ধর মেয়ে তুমি তোমাকে টেক্কা দেওয়া কার সাদ্ধ । আমি ট্রিট চাইলাম আর বিলটা তুমি আমার ওপরের ঝাড়লে একদিন বাগে পাই সবকিছুর শোধ নেব পই পই করে।”

“হুম নিয়েন!”

“অবশ্য তোমার জামাই এর টাকার অভাব নাকি চলো তোমার জামাই -ই বিল দেবে।”

“একটা কাজ করলে কেমন হয় আমরা রেস্টুরেন্টে না গিয়ে যদি আমি রান্না করি আপনার জন্য!”

“ওকে তাহলে প্ল্যান ক্যানসেল আমি আমার বউয়ের হাতে রান্না বিড়িয়ানিটাই খাবো আমার বউয়ের রান্নার হাত মাশাআল্লাহ ,কিন্তু এখন কিভাবে এখন তো আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে তিনদিন যাই নি।”

“রান্না করে আমি নিজে যাবো আপনাকে দিতে এবার খুশি।”

“খুশি মানে খুব খুশি! আমি তোমাকে ভালোবাসি।

“ছন্দটা দারুন না। সত্যি ছন্দটা দারুন ! ধূসর এহসান শুভ্র তাই না।”

“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা!”

“এই যে আপনি সব বার আমাকে নিষ্ঠুর বলেন । আমি যদি আপনাকে নিষ্ঠুর বলি আপনার কেমন লাগবে?”

“তুমি বলবে কেন আমাকে কি নিষ্ঠুর নাকি তুমি নিষ্ঠুর এই জন্যই তো তোমায় নিষ্ঠুর বলি।”

“এই আমাকে নিষ্ঠুর বলেন একসময় যদি আপনি নিষ্ঠুরতার প্রমান দেন তখন কি বলবো। কাছের মানুষেরা যখন নিষ্ঠুরতার প্রমান দেয় তখন মেনে নিতে পারি না আমি।

ধূসর মেঘের দিকে তাকালো মেঘ স্থির হয়েই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ও কেন এরকম বলল। ধূসর আলতো করে বলল,,

“এই ধূসর এহসান শুভ্র তোমায় কথা দিচ্ছে কখনো সে নিষ্ঠুর হবে না আর না কোন নিষ্ঠুরতার প্রমান দেবে । আমি তোমায় ভালোবাসি মিস কাসফিয়া আয়মান মেঘ।”

মেঘ কিছু বলবে তার আগেই মেঘের ফোনে একটা ফোন এলো ও মুচকি হেসে ফোনটা ধরলো ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেল না। ততক্ষনে বাড়ি এসে গেছে ধূসর মেঘের কথা বলা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলো। সব শেষে মেঘ বলল,,

“সমস্যা নেই আপনার জিনিস আপনার কাছে বিকেলে পৌঁছে যাবে আমি নিজ হাতে আপনাকে খাওয়াবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।”

মেঘ ফোন রাখলো তখন ধূসর বলল ,,

” কাকে নিজ হাতে খাওয়াবে?”

“আজ আমার জীবনের দুইজন ইম্পোর্টেন্ট মানুষ আমার কাছে বিরিয়ানি খেতে চেয়েছে তার মধ্যে সেও একজন। আপনার সাথে হাসপাতালে দেখা হবে আসছি আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ!”

মেঘ গাড়ি নেমে ভেতরে ঢুকলো এদিকে ধূসর ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটার কথা মাঝে মাঝে সে বোঝেনা। একটু আগে কি বলছিল তার মানে কি মেঘ তাকে নিয়ে ভয় পায় ওর কি কাছের মানুষদের নিয়ে ভয় কখন না তারা নিষ্ঠুরতার প্রমান দেয়‌। তাই কি ও ওর ভালোবাসা প্রকাশ করে না। ওকি ভালোবাসা প্রকাশ করতে ভয় পায় নাকি ভালোবাসতে। আরেক ইম্পোর্টেন্ট মানুষটাই বা কে যাকে ও নিজ হাতে খাওয়াবে।

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে