ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-০৭

0
1014

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ ফ্রেস হয়ে ওরনা দিয়ে ভালোভাবে মাথা ঢেকে নিচে গেল। যদিও ওর একটু রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন ছিল কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়। মেঘ নিচে গিয়ে ওর আব্বার পাশে বসলো। এটা ওর অভ্যাস যেখানেই যাক না কেন আব্বার সাথে আব্বার পাশে গিয়েই বসবে। মেঘের বসা দেখে দিলরুবা খানম বললেন,,

“মেঘ মামনি এমনি তো সবসময় আব্বার কাছেই বসো আজ না হয় আমার এখানে বসলে এখানে আসো।”

এ কথা শুনে মেঘ একটু লজ্জা পেল। মেঘের বাবাও মেয়েকে যেতে বললেন মেঘ বিনা বাক্যে দিলরুবা খানমের পাশে গিয়ে বসে পরলো। মেঘ বলল,,

“সরি মা আসলে অভ্যাস তো সবসময় আব্বার পাশে বসা তাই আর কি?”

তখন দিলরুবা খানম,,

“সমস্যা নেই আমি বা আমরা কিছু মনে করি নি । আর সরি মামনি আজ বোধহয় আসা ঠিক হয় নি। এই যে আমাদের জন্য তুমি জার্নি করেও রেস্ট নিতে পারলে পারছো না।”

“মা প্লিজ সরি বলবেন না আমার সমস্যা হচ্ছে না এসবে অভ্যাস আছে।”

তখন রিম আর ঝিম এসে মেঘের কোলে গিয়ে উঠলো তা দেখে ওদের মা বলল,,

“রিমঝিম এটা কি হচ্ছে ছোট মা হাতে ব্যাথা পাবে তো। নামো মেঘের কোলে থেকে এখানে আসো।”

“আহ হা ভাবি থাকনা আমি একটুও ব্যাথা পাচ্ছি না। আর সমস্যাও হবে না।”

তখন কেউ আওয়াজ করে বলল,,

“তুমি যে নিষ্ঠুর মেয়ে! না তোমায় ব্যাথা লাগে, না করে ভয়, ব্যাথা পেলেও তো একটা টু শব্দ ও করবে না। রিম ঝিম মামনিরা তোমরা আমার এখানে আসো ছোট বাবা তোমাদের কোলে নেবে।”

ধূসরের কথা শুনে রিম ঝিম দৌড়ে গিয়ে ধূসরের কোলে উঠে পড়লো। এদিকে মেঘের পরিবারের সকলেই ধূসর কে দেখে অবাক বেশি হয়েছে শিফা, এতো সুন্দর ড্যাশিং হ্যান্ডসাম ছেলে মেঘের হাজবেন্ড। তবে এতে শায়লা আর ওর মা বেশ খুশি ভালো একটা ধূসর ওদের কোলে নিয়ে এগিয়ে এসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন আপনারা সবাই?”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমরা সকলে ভালো আছি তুমি কেমন আছো ধূসর?”

“আব্বা আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

“তা ধূসর শুশুরবাড়ি আসার সময় হলো তাহলে তোমার!”

‘কি করবো আব্বা আপনি আর আপনার মেয়ের কথা শুনেই তো কচ্ছপ এর পিঠ থেকে নেমে ঘোড়া ছুটিয়ে আসতে হলো।”

এ কথা শুনে মেঘ বলল,,

“আপনি এ কথাও ওনাকে বলেছেন আব্বা!”

“আরে আম্মা আপনিই তো বললেন বলতে তাই বলেছি।”

“হুম!”

তখনি মেঘের মা ড্রয়িং রুমে এসে বলল,,

“মেঘ ওনাদের নিয়ে এসো খাবার টেবিলে!”

এত বছর পর মায়ের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো মেঘ। ও মায়মুনা চৌধুরীর দিকে তাকালেন চোখটা ছলছল করে উঠলো মেঘ বুঝতে পারল ধূসরের পরিবারকে দেখে ওর মা বলেছে। ও নিজেকে সামলিয়ে নিল। আয়মান চৌধুরী সকলকে খাবারের জন্য তাড়া দিলেন। তখন ধূসর মায়মুনা চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম মা কেমন আছেন আপনি?”

এ কথা শুনে মায়মুনা চৌধুরী একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন । কিচেন থেকে সব শুনছিল এটাই যে তার মেয়ের জামাই উনি বুঝতে পারলেন। তিনি সৌজন্যতার খাতিরে হাসি টেনে বললেন,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। তা এই ছেলেকে কি ভুলে গিয়েছিলেন অবশ্য ভুলে যাওয়ার কথাই সেই কবে দেখা হয়েছিল অবশ্য ঠিক ভাবে দেখেছিলেন কি না সেটা বলতে পারছি না।”

এ কথা শুনে যেন মায়মুনা চৌধুরী আরও অপ্রস্তুত হলেন তিনি বললেন,,

“ব্যাপারটা তেমন না তুমি হাত মুখ ধুয়ে আসো খাবার খাবে, আমার কিচেনে একটু কাজ আছে আমি যাই।”

বলেই মায়মুনা চৌধুরী চলে গেলেন ধূসর বুঝতে পারল তার শাশুড়ি মায়ের অবস্থা তাই কিছু বললো না। তখন আজান বলল,,

“ভাইয়া তুমি কিন্তু আমায় দেখছোই না।”

“আরে ছোট ভাইয়া তোমার কাছে আসতে হলে তো একটু সময় নিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া আব্বা মায়ের সাথে আগে কথা বলতে হতো তো নাহলে যদি আমায় অভদ্র বলে তাহলে আমার কি মান সম্মান থাকবে হুম।”

“একদম থাকবে না।”

“তুমি খেয়েছো আজান?”

“না!”

“আচ্ছা যাও টেবিলে বসো আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।”

“ঠিক আছে।”

মেঘ ধূসরকে ওর ফুফুদের আর কাকিমনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আশা চৌধুরী ভালোভাবে কথা বললেও আয়না চৌধুরী মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলেন এতে অবশ্য ধূসরের কিছু যায় আসে না। সবাই চলে গেলে ধূসর মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,

“ঢাকায় এসেই মারামারি করেছো নাকি শুনলাম ব্যান্ডেজ রক্তে পুরো ভিজে গেছিল।”

“মারামারি করলেই আপনার কি এখন চলুন সবাই খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে।”

“হুম!

ধূসর চলল পেছনে মেঘ ও চললো বাড়ির সব পুরুষেরা আয়মান চৌধুরী বাদে অফিসে গেছে আর মেয়েরা পরে খাবে বলে ওপরে চলে গেছে। মায়মুনা চৌধুরী,আশা চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী শুধু নিচে আছেন তাদের খাবার পরিবেশন করার জন্য আর মেঘ ও তাই। আয়মান চৌধুরীর পাশের চেয়ারে ধূসর বসলো তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ তুমিও ওনাদের সাথে বসে পড়ো এমনিতে অনেক পথ জার্নি করে এসেছো।”

হুট করে মায়ের এমন আচরণ দেখে মেঘের কান্না পাচ্ছে। এটা সত্যি ভালোবাসা নাকি লোক দেখানো ধূসর এর পরিবারের জন্য। আয়মান চৌধুরী বোধহয় মেয়ের মনোভাব বুঝতে পারলেন কিন্তু কিছু বললো না। মেঘ নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“সমস্যা নেই মা আমি আপনাদের সাথে পরে বসবো।”

“এখন বসতে বলেছি এখন বসো।”

“না মা থাক না!”

আসলে মেঘের তো হাতে ব্যান্ডেজ ও এখন সবার সাথে কি করে খাবে। ওর একটু অস্বস্তি হচ্ছে দিলরুবা খানম হয়তো মেঘের অবস্থা বুঝতে পারল তাই তিনি বলল,,

“এই নোলক তুই যা ধূসরের পাশে বোস। মেঘ এখানে আসো আমি তোমাকে খায়িয়ে দিচ্ছি এই হাত নিয়ে কিভাবে খাবে।”

এই কথা শুনে আপনা আপনি মায়মুনা চৌধুরীর পা হাত পা থেমে গেল উনি একবার মেঘের দিকে তাকালো আবার দিলরুবা খানম এর দিকে। ওনার বুকটা হঠাৎ করেই জ্বলতে শুরু করলো কিন্তু কেন মেয়েটা এতো ভালোবাসা পাচ্ছে দেখে নাকি এতদিন মেয়ের প্রতি যে অবহেলা করেছেন তার জন্য। ওনার খুব কষ্ট হচ্ছে হুট করে উনি নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“হ্যা যাও তুমি ওনার কাছে বসো।”

মেঘ বিনা বাক্যে চেয়ারে বসে পরলো। দিলরুবা খানম মেঘকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে মায়মুনা চৌধুরী,আশা চৌধুরী ওনাদের দেখে খাওয়াচ্ছেন মায়মুনা চৌধুরী আড়চোখে মেঘদের ও দেখছে দিশান বসেছে মায়ের পাশে হুট করে দিশান বলল,,

“মা মেঘকে চিংড়ি মাছ দাও না এই চিংড়ি মাছের তরকারি টা অনেক মজা হয়েছে‌।”

এ কথা শুনে চারজন একসাথে বলে উঠল,,

“চিংড়ি মাছে মেঘের এলার্জি।”

হঠাৎ করে একসাথে কথাটা বলায় মনে হলো কেউ স্লোগান দিচ্ছে এদিকে দিশান পুরো আহম্মক বুনে গেল। আর যে চারজন বললো তারা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। সেই চারজন হলো আয়মান চৌধুরী, মায়মুনা চৌধুরী, ধূসর আর ধূসরের মা। মায়মুনা চৌধুরীর এহেন কথা মেঘ আর ওর বাবা চমকালো সাথে অবাক ও হলো। দিশান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,,

“সরি আমি জানতাম না।”

তখন মেঘ বলল,,

“ইটস্ ওকে ভাইয়া তবে আপনি যে আমার কথা বলেছেন আমি তাতে খুশি। এবার খান আপনারা আর মা আমার খাওয়া হয়ে গেছে এবার আপনি শুরু করুন।”

“তুমি তো সেরকম কিছু খেলেই না।”

তখন ধূসর বলল,,

“বাদ দাও মা ও ওরকমই খেতে পারে না এই জন্যই তো শরীরের এই হাল। ওজন কতো তোমার?

“একদম আমার ওজন নিয়ে কিছু বলবেন না। আমি ততটুকুই খাই যতটুকু আমার জন্য প্রয়োজন। এখন চুপ করে খান।”

“ওকে !”

মেঘ উঠলো না। কারন যাদের সাথে খেতে বসেছে তাদের সাথে না উঠে না আগে উঠাটা অভদ্রতা দেখায়।ও সবার খাওয়া শেষ করার অপেক্ষা করলো সকলের খাওয়া শেষ হলে সবার সাথে উঠলো। সবার বিশ্রামের প্রয়োজন ছেলেরা নিচে সোফায় বসলো দিলরুবা খানম মেঘের ফুপি আর মায়ের সাথে টুকিটাকি কথা বলছেন। মেঘ রিমঝিম রোহিনী আর নোলক কে নিয়ে নিজের রুমে গেল। নোলক রুমে গিয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ ভাবি তোমার রুম তো অনেক সুন্দর গোছানো!”

“শুকরিয়া নোলক!”

তখন রিমঝিম এর মা রোহিনী বলল,,

“তা মেঘ শুনলাম সিলেট গিয়েছিলে তা কেমন কাটলো সেখানে আমাদের ভাইয়া কি কি করলো।”

“কি করবে ভাবি তবে অনেকগুলো জায়গা ঘুরিয়েছে।”

“যে কাজটা করতে গিয়েছিলে সেটা হয়েছে!”

“হুম আলহামদুলিল্লাহ সব ভালোভাবেই হয়েছে।”

তখন রিম বলল,,

“ছোট মা আমি পানি খাবো।”

“দারাও আমি আনছি!”

তখন ঝিম বলল,,

“আমিও খাবো।”

তখন ওদের মা বলল,,

“হুম একজনের পানি খেতে ইচ্ছে হয়েছে তো আরেকজনের ও খেতে হবে।

তখন নোলক বলল,,

“আরে ভাবি ওরা টুইন একজনের যা হবে অপর জনের ও তাই হবে । আর পানি পান করে খায় না‌।

“সে তো আমি জানি তা নোলক তুমি কি পানি চাওয়ার সময় বলো পানি পান করবো পানি দাও তখন তো ঠিকই বলে ভাবি পানি খাবো পানি দাও।”

“আরে ভাবি তুমি ও না বাচ্চাদের সামনে প্রেজটিজ পান্চার করছো ওটা এমনি বলেছি। আসলে ঐ আর কি ভুল হয়ে গেছে।”

“হুম আর মেঘ তোমার যেতে হবে না আমি ওদের নিচে নিয়ে যাচ্ছি। ওখান থেকেই খাবে।

“না না ভাবি দরকার নেই আমি আনছি সবে তো এলেন!”

মেঘ নিচে চলে গেল বাড়ির বাকি মহিলাদের খাওয়া শেষ ও টেবিলে গিয়ে দু গ্লাস পানি ট্রে তে করে নিয়ে আসছিল মাঝ পথে আজানের সাথে দেখা আজান বলল,,

“আপু দাঁড়াও” বলে একগ্লাস পানি নিয়ে মুখে দেবে ওমনি মেঘ থামিয়ে বলল,,

“আজান দারা খাস না ”

আজান খেল না বলল,,

“কেন আপু কি হয়েছে?”

“তুই কি ভুলে গেছিস আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আনাস (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, “তিনি দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম ২০২৪)

“ওহ সরি সরি ভুলে গেছিলাম এবং শুকরিয়া।”

“হুম।”

আজান বসে পানি খেল । মেঘ আরেক গ্লাস পানি নিয়ে ওপরে গেল । তখন শায়লা এলো মুনকে নিয়ে নোলকদের সাথে কথা বলতে‌। সবাই আড্ডা দিচ্ছিল হুট করেই ধূসর রুমের সামনে থেকে বলল,,

“আসবো?”

তখন মেঘ বলল,,

“না এখানে সবাই আড্ডা দিচ্ছে আপনি পরে আসুন!’

“তাহলে তুমি বাইরে আসো কালকের ব্যাপারটা নিয়ে কথা ছিল।”

“আচ্ছা আসছি!”

ও উঠতে নেবে তখন শায়লা নোলক ওহ হো … বলল মেঘ সেসবের তোয়াক্কা না করে বাইরে চলে গেল। তখন শায়লা বলল,,

“আপনারা মেঘকে অনেক ভালোবাসেন তাই না।”

তখন রিমঝিম এর মা রোহিনী বলল,,

“মেঘ এতো কিউট ভালো না বেশে থাকাই যায় না। তবে হ্যা আমাদের পরিবারের সকলেই মেঘকে অনেক ভালোবাসে।”

“আমি যতদূর জানি আপনারা বিয়ের পরপরই দেশে ছিলেন না তাহলে আপনাদের ভেতর এত সখ্যতা কিছু মনে করবেন না এমনিই বললাম।”

মুনের কথায় রোহিনী হেসে বলল,,

“আসলে ওদের বিয়ের কয়েকমাস পর আমার শুশুরের এক্সিডেন্ট হয়। তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলাম। মা কাউকে এখানে রেখে যেতে চান না তাই সবাই মিলেই যাই। মেঘ আর আংকেল তো কয়েকমাস পরপরই যেতেন আমাদের সাথে দেখা করতে তাছাড়া আমরা দেশে আসার পর তো আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হতো মা কিছু রান্না করলেই মেঘ কে ফোন করতো মেঘ ও যেত আমাদের বাড়ি এই কারনেই এত সখ্যতা। আপনারা জানতেন না।

এ কথা শুনে মুন আমতা আমতা করতে লাগলো কারন ওরা কেউ মেঘের খোঁজই নেয় নি। মুন কোনরকমে বলল,,

“আসলে মেঘ পড়াশোনার জন্য বেশিরভাগ ওর ফ্ল্যাটে থাকতো তো তাই সেরকম ভাবে তেমন কিছু জানি না।”

“ওহ আচ্ছা।”

_______________

“তোমার ফোন কোথায়?”

“জানিনা!”

“মানে কি?”

“আসার পরে ফোনটা বের করি নি বোধহয় আমার ব্যাগেই পরে আছে।”

“সাধে কি তোমায় কেয়ারলেস বলি।”

“কেন ফোন দিয়ে কি করবেন?”

“খবর কিছু জানো তিন ঘণ্টা আগে রোকনুজ্জামান কে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। আমি একটু আগে অনলাইনে ঢুকলাম আর এই নিউজ চোখে পরলো। কিন্তু আমরা তো এখনো কিছুই করলাম না এরেস্ট ওয়ারেন্ট বের হলো কখন।”

“আমি বের করিয়েছি?”

“মানে?”

“আমার কাজ আমি দেরিতে করতে পছন্দ করি না কালকেই আমি আমার এসিস্ট্যান্ট কে ফোন করে সব জানিয়েছি আর বলেছি এরেস্ট ওয়ারেন্ট বের করে পুলিশ কে দিতে কারন পুলিশের কাছে এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছিল না বিধায় সব জেনে সেও চুপ করে ছিল। সেও অনেক দিন যাবৎ রুকনুজ্জামান কে ধরার জন্য চেষ্টা করছিল নাগাল পাচ্ছিল না। আমার সাথে এর আগেও তার কথা হয়েছিল।”

“আমায় কেন বললে না।”

“এটা আমার কাজ আপনার না তাই।”

“বউ লয়ার থাকলে ভিশন জ্বালা একটা কথা বললে সেটারও যুক্তি রেডি।”

“হুম আর হ্যা কালই রুকনুজ্জামান এর কেস কোর্টে উঠবে আর আমি এই কেস লড়বো। সব ফেবারে আছে এই কেসটা আমিই জিতবো ইনশাআল্লাহ্। তবে আপনাকেও লাগবে ক্যামিক্যাল গুলোর ব্যাখ্যা দিতে আর আপনি কিভাবে ওনার গোডাওনে ক্যামিকেল পেয়েছেন সেটার ভিডিও দেখাবেন। তবে হ্যা আপনি যে আমার সাথে ছিলেন এটা বলবেন না। আপনার জন্য আপনার মাধ্যমেই তাকে শাস্তি দেব এর জন্যই তো ধূসর নামটা ইউজ করেন না। কাল কোর্টে আপনার ফুল নাম বলবেন দেখবো রুকনুজ্জামান এর অবস্থা কি হয় আর আপনি তাদের ব্যাপারে কি জানেন সেটাও বলবেন এর মাধ্যমে জানা যাবে ওনার সাথে কে আছে যদি না বলে সেটা জানার জন্য কোর্ট ওনাকে রিমান্ডে নেবার আদেশ দেবে। সেটার ব্যবস্থা আমি করবো। তখন আরেকজন সম্পর্কে আমরা ধারনা পাবো।”

“ওকে! যাই হোক তুমি কিন্তু একজন দুর্দান্ত লয়ার!”

“শুকরিয়া ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট। আর কিছু বলবেন?

“রুপের সাথে তোমার কথা হয়েছে?”

“হুম তেমন কিছু বলে নি শুধু বলেছে লোকটা যেন তার কৃতকর্মের যোগ্য শাস্তি পায়। ও ওর বাবাকে ওর জীবন থেকে মুছে ফেলতে চায়। আমাদের সবার কাছে আমাদের বাবারা হিরো থাকে কিন্তু ঐ মানুষ টা যদি আমাদের সামনে ভিলেন হিসেবে সামনে আসে সেটা মেনে নিতে সবারই কষ্ট হয়। ওরও হচ্ছে এমনকি রুপ বলেছে কাল ও বা ওর পরিবার কেউ কোর্টে আসবে না। আমি যেন ওদের পরে জানিয়ে দিই কি হয়েছে। সবটা জানার পর ওর মা আর বোন ও একই কথা বলেছে।”

“ওনাদের জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু কিছুই করার নেই।”

“হুম আর কিছু বলবেন?”

“হ্যা বলবো তো আমি তোমাকে ভালোবাসি!”

“এটা তো পুরোনো কথা নতুন কিছু বলেন । যতবার দেখা হয় ততবার একই কথা বলেন অবশ্য যদিও শুনতে মন্দ লাগে না।”

বলেই মেঘ মুখ টিপে হাসলো। তখন ধূসর বলল,,,

“সাধে তোমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলি আমি এতো সুন্দর করে ভালোবাসি বলি আর তুমি বলছো মন্দ লাগে না।
খুব খারাপ করে ফেলেছি এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে ভালোবাসে। নেহাৎ আমি ভালো মানুষ তাই তোমাকে কিছু বলি না অন্য কেউ হলে না এতদিনে তোমার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলতো এই তোর মুখ নেই আমাকে ভালোবাসি বলতে পারিস না। এই যে আমি হাজার বার লক্ষবার তোকে ভালোবাসি বলি তোর মনে হয় না একবার এর জবাব দিই। তুই বুঝিস না এতে আমার কতো অভিমান হয়।”

এ কথা শুনে মেঘ হা করে থাকলো আর বুঝলো আসলে ধূসর ওর নিজের মনোভাব ই প্রকাশ করেছে যে তার ভিশন অভিমান হয়। মেঘ কিছুক্ষণ পর বলল,,

“আপনি কি ইনডিরেক্টলি আমাকে ভয় দেখালেন?”

“আরে কোথায়? আমি তো অন্যেদের কথা বললাম আমি তো জানি মেঘ কিরকম সে আমায় ভালোবাসে কি না। সে মুখে বলুক আর না বলুক আমি কিন্তু তার জীবনের সবসময় কার ইম্পোর্টেন্ট মানুষ ক্ষনিকের নয়। এটা সে আমায় নিজেই বলেছে। আমি কেন অভিমান করবো।

এ কথা শুনে মেঘ কিছু বললো না ধূসর এর দিকে এগিয়ে গিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,,

“এবার সব অভিমান শেষ তো হুম! যাই হোক কথা শেষ আমি গেলাম।”

আসলে মেঘের লজ্জা করছে ও দৌড়ে ছাদ থেকে চলে গেল। ওরা ছাদেই এসেছিল কথা বলতে এখানে কেউ নেই তাই। এদিকে কি হলো ধূসর ভাবতে লাগলো তারপর গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলল,,

“এই যে তুমি আমায় ভালোবাসো তবে মুখে বলো না এটাও আমাকে আলাদা ভালোলাগার অনুভূতি দেয়। তুমি যে লুকিয়ে ভালোবাসতেই পছন্দ করো । মুখের কথায় নয় কাজের দ্বারা নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করো। তোমার এই মুখে প্রকাশহীন ভালোবাসাই যে আমার খুব ভালো লাগে মেঘপরী।”

ধূসর হেসে নিচে গেল সবাই এখন নিচেই এখন সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। ধূসর আসতেই দিশান ওর কাছে গিয়ে বলল,,,

“কিরে কই ছিলি শুশুরবাড়ি থাকার ইচ্ছে আছে নাকি।”

“আমার শুশুরবাড়ি আমি থাকলেই কি!”

“তার মানে থাকার ইচ্ছে আছে তাহলে থেকে যা। আমি বাবা আর মাকে বলছি।”

“আরে ভাইয়া তুমিও না আমি মজা করছিলাম এখন থাকা যাবে না।”

“হুম!”

এদিকে আয়মান চৌধুরী দিলরুবা খানমকে বললেন,,,

“আপনারা কিন্তু মুনের বিয়ের দু’দিন আগেই আসবেন!”

“চেষ্টা করবো আয়মান ভাই তবে আমরা না আসলেও ধূসর,নোলক, রোহিনী রিমঝিম কে পাঠিয়ে দেব।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

দিলরুবা খানম মেঘকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“সাবধানে থেকো ইনশাআল্লাহ্ খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে।”

“জি মা আপনারাও সাবধানে যাবেন।”

সবাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল এদিকে মেঘ তো লজ্জায় ধূসরের সাথে কথা তো দূরে তাকায়ই নি। সবাই যেতেই আশা চৌধুরী বলল,

“মেঘের শুশুরবাড়ির সবাই কতো ভালো তাই না মায়মুনা?”

মায়মুনা চৌধুরী ছোট করে বলল,,

“হুম!”

“তা আয়না তোর কেমন লাগলো?”

তখন আয়না চৌধুরী মুখ বাঁকিয়ে বললো,,

“ভালোই তো মনে হলো দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়।”

বলেই তিনি চলে যেতে গেলেন। সবাই সবার মতো নিজের কাজে যেতে নিল সাথে মেঘ রুমে আসতে নিল তখন আয়মান চৌধুরী বলল,,

“মেঘ আম্মা একটু এখানে আসবেন?”

আয়মান চৌধুরী সোফায় বসে ছিলেন ওনার কথা শুনে সবাই ওনার দিকে ফিরলেন। মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাছে এলো মেঘ ওনার চোখের দিকে তাকালো ওর আব্বার চোখ ছলছল করছে তা দেখে মেঘ ওনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওনার হাত ধরে শান্ত স্বরে বলল,,

“কি হয়েছে আব্বা আপনি ঠিক আছেন?”

“কিছুই হয় নাই আম্মা!”

“তাহলে আপনার চোখ ছলছল করছে কেন আব্বা?”

“আমার কাঁধে মাথা রাখবেন আম্মা?”

মেঘ মাথা ঝাকালো আর উঠে আব্বার কাঁধে মাথা রাখলো। বাকি সবাই কিছুটা অবাক মুন এর কেমন যেন লাগছে ও ভাবছে,
“কই সে তো কোনদিন বাবার কাঁধে মাথা রাখে নি। না তার বাবা কোনদিন তাকে এভাবে বলেছে না মেঘের মতো এত সুন্দর করে আম্মা আর আপনি বলে সম্বোধন করে। আচ্ছা বাড়ির আর কেউ তো মেঘকে এতো ভালোবাসে না সবাই অবহেলা করে কিন্তু বাবা কেন মেঘকে এতো ভালোবাসে। তাও এমন ভালোবাসে যে কেউ হিংসা করবে। আমি তো বাড়ির বড় মেয়ে তার বড় মেয়ে সবাই বলে বড় মেয়েরা সবথেকে বেশি আদর পায় কিন্তু মেঘ তো আমার থেকেও বেশী আদর পায় সে তো বড় মেয়ে না। মেঘ ও তো কতো সুন্দর করে আব্বা ডাকে আবার আপনি বলে সম্বোধন করে তাহলে কি আমার ভালোবাসায় খামতি আছে বাবার প্রতি। নাকি অন্য কিছু যা আমরা কেউ জানি না।”

সকলে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আম্মা আপনি আমার কাঁধে মাথা রাখলে এতো সুখ সুখ লাগে কেন? জানেন আম্মা আজ নিজেকে স্বার্থক পিতা বলে মনে হচ্ছে। আমি আমার আম্মার জন্য সঠিক পাত্র ও সঠিক পরিবার নির্বাচন করতে পেরেছি। আমি ছাড়াও আমার আম্মা, আমার মেয়েকে কেউ এতো ভালোবাসছে খেয়াল রাখছে। আর এই যে বললেন না চোখ ছলছল করছে এটা যে সুখের আম্মা। কিন্তু আম্মা আমার যে এক অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে আম্মা। জানিনা কেন প্রত্যেক কন্যা সন্তানের পিতার জীবনেই বোধহয় এই সময় টা আসে আম্মা।”

মেঘ চুপ করে আব্বার কথা শ্রবন করতে লাগলো। শেষের কথা শুনে মেঘের খুব কষ্ট হচ্ছে। আয়মান চৌধুরী থেমে বলল,,

“আম্মা!”

“হুম!”

“আপনি কিছু বলবেন না!”

মেঘ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,

“না আব্বা! আমার চোখদুটো যে ভিশন জ্বালা করছে আব্বা! কিন্তু কেন আব্বা?

“কারন আপনি কাঁদতে চাইছেন আম্মা। আপনি কাঁদতে চাইছেন।”

“না আব্বা আমি কাঁদতে চাইছি না। এই মেঘের কাঁদা বারন। এই মেঘ ধূসর রাঙা মেঘ এর মধ্যে রয়েছে নানা ধাঁধা একে কান্না মানায় না আব্বা। ”

“আপনি এবার ঘরে যান আম্মা!”

মেঘ দেরি না করে তাড়াতাড়ি ওপরে গেল নাহলে সবাই মেঘের কান্না দেখে ফেলবে আর মেঘ চায় না এই বাড়ির কেউ তার কান্না দেখুক। সবাই বেশ অবাক হলো মেঘকে এভাবে যেতে দেখে । ও যেতেই মুন বলল,,

“বাবা তুমি তো কখনো আমায় এইভাবে কাঁধে মাথা রাখতে বলো নি কিন্তু মেঘ কে ?”

“কারন তুমি কোনদিন আমার কাঁধে মাথা রাখতে চাও নি। বলো তো কোনদিন ইচ্ছে হয়েছে আমাকে বলেছো?

মুন কোনদিন ও বলে নি আজ মেঘকে না দেখলে হয়তো তার ইচ্ছেও হতো না। ও নিজেকে সাইডে রেখে বলল,,

“মেঘ ও তো বলে নি আজকে?”

“আজ বলে নি কিন্তু আমার কাঁধে অনেকবার মাথা রেখেছে ও যখন বলে “আব্বা আমি আপনার কাঁধে মাথা রাখি” তখন ঐ সময়টা মনে হয় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ও আমার কাঁধে মাথা রাখলে আমার সুখ অনুভূত হয়। ওর যখন ইচ্ছে হয় তখনই বলে আব্বা আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি। আজ আমার ইচ্ছে হলো নিজের কাঁধে মেয়ের মাথাটা রেখে সুখ অনুভব করার জন্য তাই বললাম।

“আমাকে আম্মা ডাকো না কেন বাবা?”

“কারন তুমি আমায় মেঘের মতো এত ভালোবাসা শ্রদ্ধা দিয়ে বাবা ডাকো না তাই। তোমার কাছে বাবা ডাকটা একটা সম্বধোন কিন্তু মেঘের কাছে তার আব্বা ডাকটা তার আবেগ আমার প্রতি তার ভালোবাসা তার শ্রদ্ধা। তুমি আমায় তুমি করে বলো মেঘ আমায় আপনি বলে তোমাদের ফিলোসফি হলো আপনি ডাকটা পরপর লাগে তুমি ঠিক আছে এটা কাছের। কিন্তু কাছের মানুষদের আপনি ডাকার মাঝে কতোটা ভালোবাসা কতোটা শ্রদ্ধা মিশে থাকে সেটার গভীরতা তুমি জানো না। এই যে একটু আগে আমি আর মেঘ আপনি বলে সম্বোধন করলাম তোমার কোথাও মনে হয়েছে আমাদের মাঝে কিছু নেই আমরা পর নাকি আমাদের মাঝে ভালোবাসা নেই। এই এতো কিছুর জন্যই আমি মেঘ কে আম্মা ডাকি।”

এ কথা শুনে সকলের মাঝেই অন্যরকম একটা অনুভুতি কাজ করলো। মুন নিজেকে কিছুটা ধিক্কার দিল। সবাই ওখানেই ছিল মায়মুনা চৌধুরী আয়মান চৌধুরীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখন হুট করেই আজান বলল,,

“আচ্ছা বাবা তুমি আপুকে আমাদের থেকে এতো বেশি ভালোবাসো কেন?”

তখন আয়মান চৌধুরী মুচকি হেসে বলল,,

“এই বাড়িতে মেঘকে যে ভালোবাসার মানুষের বড্ড অভাব। এইটুকু ভালোবাসা না দিলে যে আমার আম্মা এতদিন বিলীন হয়ে যেত সকলের অগোচরে কেউ খোঁজ ও রাখতো না। এই যে দেখো মেঘ কতো ভালো আছে আসলে কি তাই। না একদম না আসলে তো,,

মানুষ যতটা হাসি দেখায় আসলেও কি তাদের মন ওতো খুশি থাকে!
যতটা সুখী দেখায় মানুষ আসলে তো দুঃখ তারা আড়ালে রাখে!

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে