ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-০৬

0
1008

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৬ (বোনাস পর্ব)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ হোটেলে ফিরে দেখলো ধূসরকে কেউ গান পয়েন্ট এ রেখেছে এটা দেখার জন্য ও একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। ও “ধূসর” বলে চিৎকার দিয়ে দৌড় দিল। আর ধূসরের কাছে গিয়ে ওকে সরিয়ে নিল। ধূসর তো হুট করে এমন দেখে অবাক হয়ে গেল। সাথে লোকটাও এদিকে মেঘের মুখটা শুকিয়ে গেছে তা দেখে দু’জনেই একসাথে দু’জনের দিকে তাকিয়ে হুট করেই হেসে উঠলো মেঘ কিছুই বুঝতে পারছে না। এতে হাসির কি আছে। লোকটা বন্দুক নামিয়ে ফেলেছে তখন ধূসর বলল,,

“রিল্যাক্স মেঘ ও আমাকে গুলি করতো না। ও তো আমার বন্ধু আমার সাথে মজা করছিল।”

“এটা কি রকম মজা ধূসর!”

“সত্যি অনিক এটা কি রকম মজা তোর জন্য আমার বউটা ভয় পেয়ে গেছিল।”

তখন অনিক বলল,,

“সরি ভাবি আসলে পুলিশ মানুষ তো তাই। আর বন্দুক ধরবোনা কেন বলুন তো আমার খোঁজ খবর নেয় একদম নেয় না জিজ্ঞেস করুন আপনার জামাইকে!”

মেঘ অনিককে কিছু বললো না শুধু বললো,,

“আমি রুমে গেলাম ধূসর আপনি কথা শেষ করে আসুন।”

বলেই মেঘ চলে গেল । ধূসর কিছু বললো না অনিকের সাথে কথা শেষ করে রুমে চলে এলো। মেঘ ফ্রেশ হয়ে ফোনে কিছু দেখছিল ধূসর আসতেই ফোনটা রেখে দিল। আর বলল,,

“আপনাদের পুরোনো বাড়িতে কখন যাবেন?”

“দুপুরের খাবার খেয়ে!”

“উনি আপনার কেমন বন্ধু? না মানে আগে দেখি নিতো?”

“আমার স্কুল থেকে বন্ধু। তবে অনেক বছর পর দেখা হলো এমনি নাম্বার ছিল একে অপরের কাছে। মাঝে মাঝে কথাও হতো।”

“ওহ আচ্ছা উনি কি এই হোটেলেই উঠেছে?”

“না একটা কাজে এসেছিল এখানে একজনের সাথে দেখা করতে কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমার সাথে দেখা হয়ে গেল।”

“ওহ আচ্ছা!”

“তোমার কাজ ঠিকমতো হয়েছে?”

“হুম!”

মেঘ ওর আব্বার কাছে ফোন দিয়ে কথা বলল এদিকে ধূসর ওর পরিবারের সাথে। দুপুরে খাওয়ার পর ওরা বের হলো হোটেল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটা বাড়ির সামনে থামলো গাড়ি বাড়িটা দেখে ও একপ্রকার চমকে গেল তার ধূসর কে জিজ্ঞেস করল,,

“এইটা আপনাদের বাড়ি ছিল?”

“হুম এটাই আমাদের বাড়ি আমার দাদু এই বাড়িটা বানিয়েছিলেন।”

কথা টা শুনে মেঘের চোখ চিকচিক করে উঠলো সাথে ঠোঁটের কোনে হাসিও ফুটে উঠলো। ওরা গাড়ি থেকে নামলো বাড়িটার বোধহয় দেখাশোনা করা হয়। দুতলা বাড়িটা একদম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কিন্তু ধূসর ভেতরে ঢুকলো না বাইরে থেকেই দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো কারন ওর মাকে বলে এসেছে ও এ বাড়িতে আসবে না। মেঘ ধূসরকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো ধূসরের চোখ ছলছল করছে তা দেখে মেঘ বলল,,

“ধূসর!”

“হুম!”

“বাড়িতে ঢুকবেন না?”

“না মাকে বলে এসেছি এ বাড়ির আশেপাশেও আসবো না। কিন্তু মন যে মানলো না এই বাড়িতে কতো মধুর স্মৃতি কতোশত ভাইবোনদের খুনশুটি দাদুভাই এর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো। সবথেকে প্রিয় জিনিসটাই আমরা এই বাড়ি থেকে হাড়িয়ে ছিলাম ।”

“কি হাড়িয়েছিলেন ধূসর?”

“আব কিছুনা চলো এখন যাওয়া যাক তোমায় নিয়ে আজ সারা বিকেল ঘুরবো।”

“চলুন না বাড়ি ফিরে যাই এখন ঘুরতে হবে না।”

“তুমি এতো নিষ্ঠুর কেন আমি তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে চাইলাম আর তুমি বাগড়া দিলে এটা ঠিক না।”

“এখানে থেকে কি করবো সব কাজ তো শেষ!”

“তো কি হয়েছে আমি আছি তো তোমার সাথে। একটু দয়া করো আর তুমি জানো না স্বামীর কথা শোনা স্ত্রীর কর্তব্য। তাছাড়া জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা সে ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন না যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৪৭)।”

“হুম বুঝতে পেরেছি মহাশয় আমি এমনিতেও আপনার সাথে থাকতাম ওটা তো এমনি বলেছি আপনাকে কিন্তু আপনি তো উল্টো আমায় জ্ঞান দিচ্ছেন।”

“তো কোথায় ঘুরবে?”

“আপনি যেখানে বলেন!”

“ওকে চলো আজ আমার পছন্দের কিছু জায়গা তোমায় ঘুরাবো।

“হুম চলুন।”

সারা বিকেল ওরা ঘুরলো সন্ধ্যায় গিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে হোটেলের বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো। তখন হুট করে ধূসর বলল,,

“মেঘ আমাদের প্রথম দেখা হওয়া তোমার মনে আছে?”

‘হুম! আমি আপনাদের বাড়ির পাশের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছিলাম তখন আমি সবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলাম । বাড়ি থেকে কলেজ দূরে হওয়ায় আব্বা সেখানে উনার এক পরিচিত বন্ধুর ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে দিয়েছিলেন। আর আমি সহজে কারো সাথে মিশতে পারতাম না তাই একা একটা ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন। সেদিন আপনি রাস্তায় ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ক্রিকেট খেলছিলেন বলটা একদম আমাদের গাড়ির কাচে লেগে আমাদের গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায় সেদিন আপনি এগিয়ে এসে সরি সরি বলছিলেন সেখানেই আপনার সাথে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল।”

“না ভুল বললে আমি সেদিন তোমায় প্রথম দেখি নি এর আগেও আমি তোমায় দেখেছিলাম।”

“জানি না কিন্তু আপনাকে আমি সেদিনই প্রথম দেখেছিলাম। কিন্তু আপনি আমাকে প্রথম কোথায় দেখেছিলেন?

“হয়তো বা কিন্তু তোমাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম শপিং মলে তোমার আব্বার হাত ধরে হাঁটতে। তোমার পরনে নীল রঙের একটা সিম্পল গ্ৰাউন আর সাদা রঙের হিজাব । তোমায় কি স্নিগ্ধ লাগছিল কি বলবো সেদিনই ধূসর এহসান শুভ্র কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে থমকে গেছিল। অবশ্য তাড়াতাড়ি করে নিজের দৃষ্টি সংযত করে নিয়েছিলাম তারপরে তোমার কথা ভুলেও গেছিলাম। তারপর কয়েক মাস পর তোমাকে দেখলাম যেখানে তুমি আমায় প্রথম দেখলে।”

“ওহ আচ্ছা!

“তো কাল কখন রওনা হচ্ছি?”

“যে সময় ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম সে সময়ই রওনা দেব।”

“আচ্ছা তবে এবার তো মা নেই সকালের নাস্তা কে বানিয়ে দেবে।”

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“কেন আপনি বানাবেন!”

“আমি ওতো ভালো রান্না পারি না তার থেকে বরং আমরা কোন রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করে নেব।”

“ঠিক আছে চলুন এখন রুমে যাওয়া যাক সব গুছিয়ে নিই আর তাড়াতাড়ি শুয়ে পরবো।’

“হুম।”

__________________

সকাল সকাল চৌধুরী বাড়িতে আয়মান চৌধুরী উৎসব লাগিয়ে দিয়েছে। মায়মুনা চৌধুরী এক প্রকার বিরক্ত হয়েই বললো,,

“কারা আসবে সেটা বলো না যার জন্য আজ উৎসব লাগিয়ে দিয়েছো? অফিসেও গেলে না।

“আমার স্পেশাল মেহমান ওনারা বারোটার দিকেই এসে পরবে। তুমি রান্না করো আর হ্যা সব বেস্ট হওয়া চাই হাজার হোক বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা।”

“এতো এক্সাইটেড তো তুমি মুনের শুশুরবাড়ি থেকে আসার সময় ও হওনি।”

‘তো কি হয়েছে যাও নিজের কাজ করো গিয়ে। আর হ্যা আজ মেঘ ফিরবে ভুলেও ওর সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করবে না।”

“যেখানে ওর সাথে আমি কথা বলি না সেখানে আমাকে এসব বলে লাভ কি!”

“কিছু না যাও।”

_________________

ধূসর রা প্রায় ঢাকায় পৌঁছে গেছে তখনি মেঘের ফোনে ফোন এলো ও কানের কাছে নিয়ে যা শুনলো তাতে ইমার্জেন্সি ওকে যেতে হবে ও ফোন নামিয়ে বলল,,

“ধূসর আমাকে ””” এই রোডে নামিয়ে দেবেন আমার একটা জরুরি কাজ আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

“হুম আপনি বাড়ি গিয়ে রেস্ট নিবেন আগেই হসপিটালে যাবেন না।”

“আজ হসপিটালে যাবো না কিন্তু তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে আজ বাড়িতে গিয়েই দেখতে পাবে।”

“সারপ্রাইজ! ওকে!”এই তো আমার গন্তব্য এসে পরেছে।”

ধূসর গাড়ি থামালো মেঘ নেমে আল্লাহ হাফেজ বলে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লো। আর চলে গেল ধূসর তার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“এটা মেয়ে না কি! সারপ্রাইজ এর কথা বললাম মুখের কোন রিয়াকশন নেই ! ওকে সারপ্রাইজ বলল শুধু যাই হোক সারপ্রাইজ টা পেয়ে সে চমকাবেই চমকাবে। এবার আমি যাই ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিতে হবে।”

ধূসর গাড়ি নিয়ে চলে গেল। এদিকে মেঘ ধূসরের আড়াল হতেই এক প্রকার দৌড়াচ্ছে । যে করেই হোক এখন ওদের কাছে পৌঁছাতে হবে নাহলে যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে।

________________

বারোটার দিকে ধূসর বাদে ধূসরের পুরো পরিবার মেঘদের বাড়ি পৌঁছে গেল। আয়মান চৌধুরী বন্ধুকে দেখেই জরিয়ে ধরলেন। বাড়ির ভেতরে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন সকলে তো এক প্রকার অবাক হয়েছে কারন ও বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কি সুন্দর। মায়মুনা চৌধুরী সৌজন্যতার খাতিরে ওনাদের সাথে কথা বলছেন আবার আয়মান চৌধুরীর ওপর রাগান্বিত হলেন উনি আগে জানলে কি আসতে মানা করতো। আয়না চৌধুরী তো হা হয়ে দেখছে। পরিবেশ বেশ উৎসব মুখর তখনি আজান ঢুকলো বাড়িতে তার আজ স্কুল নেই ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল বন্ধুদের সাথে। এসে নোলক কে দেখেই চিৎকার দিল ,,

“আরে নোলক আপু আসসালামু আলাইকুম কেমন আছো তুমি?”

নোলক হেসে সোফা থেকে উঠে আজানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“আরে নিউ ভাইয়া আস্তে বলো ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো! তুমি তো সেদিন আমায় বললে না আমাদের বাড়িতে আজ আসবে।”

“আরে আমি তো জানতাম না তাই না! চলো আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোমার আলাপ করিয়ে দিই।”

নোলক সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিল। নোলকের পরিবারের সকলেই এসেছে রিমঝিম সহ এদিকে আজানের সাথে নোলকের এত সখ্যতা আয়মান চৌধুরী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারছে না। সবার সাথে কথা বলে আজান ওপরে যেতে নিল তখন মুন ওর কাছে এসে বলল,,

“তুই ওনাদের আগে থেকে চিনিস?”

“না শুধু নোলক আপুকে চিনি ওনার সাথে কিছুদিন আগেই আলাপ হয়েছে।”

“কিভাবে?”

“সেটা সিক্রেট তোমাকে বলা যাবে না।”

বলেই আজান চলে গেল। নিচে এহসান খান বলল,,

“আয়মান মেঘ মামনি কখন আসবে ধূসর তো বললো ও ঢাকায় আসার পর নেমে গিয়েছে কি যেন কাজ আছে!”

“হ্যা হুট করেই একটা কাজ এসে পরেছে সেখানে গিয়ে আমায় ফোন করেছিল এই এলো বলে তা ধূসর বাড়ি ফিরেছে।”

“হ্যা ও বাড়িতে ঢুকলো আর আমরা এলাম।”

“ও আসবে না? ওকে তো বলেছি আসতে”

“হুম আসবে একটু রেস্ট নিয়ে আমরা বললাম ওকে তাহলে আমর অপেক্ষা করি কিন্তু ধূসর নাকচ করে দিল বলল তোমরা যাও আমি আসছি।”

আসলে ধূসর ক্যামিক্যাল গুলো ভালোভাবে রেখে তারপর আসবে। আয়মান চৌধুরী বলল,,

“ওহ আচ্ছা! মেঘ কে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছি এই এলো বলে।”

তখনি মেঘ কে দেখা গেল দরজা দিয়ে ঢুকতে সবার আগে ধূসরের মায়ের নজর গেল সেদিকে তিনি বললেন,,

“ঐ তো মেঘ এসে পড়েছে,,

বলতে বলতে উনার নজর গেল মেঘের হাতের দিকে তিনি উত্তেজিত হয়ে মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,

“এ কি মেঘ তোমার হাতে কি হয়েছে হাতের ব্যান্ডেজতো রক্তে পুরো ভিজে গেছে।”

তিনি তাড়াতাড়ি মেঘকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলেন এদিকে আয়মান চৌধুরী মেয়ের কাছে আসবে তার আগে ধূসরের পুরো পরিবার মেঘের কাছে এলো। আয়মান চৌধুরী গরম পানি আর ফাস্ট এইড বক্স আনতে বললেন। মেঘ চুপচাপ বসে আছে ও যে শকড বোঝাই যাচ্ছে। ওগুলো এনে দিতেই দিলরুবা খান মেঘের ব্যান্জেজ খুলতে লাগলেন তখন নোলক বলল,,

“ভাবি তুমি এত কেয়ারলেস কেন? একটু নিজের খেয়াল রাখতে পারো না।”

তখন ধূসরের ভাবি বলল,,

“ও যে কেয়ারলেস সেটা আজ নাকি সবসময় এমন নিজের খেয়াল একটুও রাখে না ওকে সবসময় মাইরের ওপর রাখা উচিৎ। মা আগে ওকে দুটো দিন গালে তাহলে যদি ঠিক হয়।”

এদিকে মেঘ তো পুরো শকড তারমানে এই সারপ্রাইজ এর কথাই বলেছিল ধূসর সবার বকা খেয়ে মেঘ ছোট করে বলল,,

“তোমরা সবাই আমাকে বকছো কেন? বাবা আর দিশান ভাইয়া দেখো না আপনাদের বাড়ির মহিলাগন আমাকে বকছে।”

তখন দিশান বলল,,

“মেঘ এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না । কারন দোষটা তোমার নিজের একটু খেয়াল রাখতে পারো না।”

“ভাইয়া আপনি ও!”

“হ্যা আমিও !”

“এখন বাবাই ভরসা কারন আমার আব্বা তো কিছু বলবে না।”

তখন এহসান খান বলল,

“সত্যি তোমরা সবাই ওকে বকছো কেন? এমনিতেই মেয়েটা ব্যাথা পাচ্ছে তারওপর তোমরা বকছো এটা ঠিক না।”

“এই না হলে আমার বাবা!”

তখন দিলরুবা খানম বলল,

“তুমি চুপ থাকো একদম কথা বলবে না যেন ওনার মেয়েকে বকছি না মারছি আর উনি আরো ব্যাথা পাচ্ছে।”

তখন মেঘ গাল ফুলিয়ে বলল,

“রিমঝিম কোথায় তাদের কেউ আসতে বলো আমাকে বলতে তারা দুজন আবার বাদ যাবে কেন?”

তখন রিমঝিম পেছন থেকে বলল,,

“ছোট মা আমরা দুজন এখানে আসলে বড়দের মাঝে ঢুকতে পারি নি।”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“বড়রা একটু সাইড দেন আমার মেয়েদের আসতে দেন তাদের একটু দেখি।”

সবাই মেঘের কথায় হেসে সাইড দিল । ওরা দুজন সামনে এলো দিলরুবা খানম মেঘের হাতে ব্যান্ডেজ করছে তা দেখে রাম আর ঝিম দু’জনে একসাথে বলল,,

“ছোট মা তুমি এত কেয়ারলেস কেন? ছোট বাবা আসলে বলে দেব?”

“নাও এনারাও শুরু হয়ে গেল।”

এ কথা শুনে সবাই হাসলো এদিকে সকলে অবাক সাথে মুগ্ধ চোখে মেঘ আর ধূসরের পরিবারকে দেখছে মেঘের প্রতি তাদের ভালোবাসা সকলকে মুগ্ধ করেছে। মায়মুনা চৌধুরী তো অবাক চোখে দেখতে লাগলেন ওনার চোখ জ্বালা করছে কিন্তু কেন? কেউ মেঘকে এত আদর করছে দেখে নাকি সে মেঘের প্রতি যে অবহেলা করেছে তার জন্য। উনি ওখান থেকে চলে গেলেন কেউ না দেখলেও আয়মান চৌধুরী ঠিকই দেখলেন। উনি বেশ খুশি কারন উনি তার মেয়েকে যোগ্য ছেলের হাতে এবং যোগ্য পরিবারের কাছে দিতে পেরেছেন। খুশিতে ওনার চোখ ভরে উঠলো তার সাথে মেঘের জন্য মেঘের ফুপি শায়লা এরাও ভিশন খুশি। কারন মেয়েটা শুধু দুঃখ আর অবহেলায় পেয়েছে এখন যদি সব ছেড়ে সুখের মুখ দেখে। মেঘ বলল,,

“শেষ এখন আমাকে ছাড়েন একটু ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর আপনাদের সাথে বসছি। কিন্তু আপনারা কখন এসেছেন?

তখন আয়মান চৌধুরী বলল,,

“এই তো কিছুক্ষন আগে।”

সবার সাথে কুশল বিনিময় করে মেঘ ওর বাবার সামনে গিয়ে বলল,,

“আব্বা একটু আমার সাথে আসেন তো?”

আয়মান চৌধুরী মেয়ের সাথে মেঘের রুমে গেলে মেঘ গিয়ে ওর আব্বাকে গিয়ে জরিয়ে ধরলো আর ফিসফিস করে বলল,,

“জানেন আব্বা আজ অনেক চোখ জ্বালা করছিল কিন্তু এদের দেখে নিমিষেই সব উধাও হয়ে গেছে। আমি জানি আমাকে ঐ অবস্থায় দেখে আপনার কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু আপনি যান নি আমার নতুন পরিবার কে সুযোগ দিয়েছেন কিন্তু আমার কাছে তো আপনি সবার আগে আপনার এই অসহায় চাহনি আমার একটুও ভালো লাগে নি। আপনার মেয়ে যেখানেই থাকুক না কেন আপনার যখন ইচ্ছে হবে তখন যাবেন মেয়েকে দেখবেন।”

তখন তিনি মেয়েকে ছেড়ে মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,

“আপনি কি আমার চোখ দেখে বললেন আম্মা। আমি আপনার কাছে যাই নি কারন আমি একটা সুন্দর পরিবার কে দেখছিলাম একজনের জন্য সকলে কিভাবে উদ্বেগ হয়। কিন্তু আম্মা এটা কিভাবে হলো।”

“হাত কেটেছিল পুরশুদিন রাতে আপনাকে বলিনি টেনশন করবেন দেখে । আর আজ আসার পরে একটা কাজ করতে গিয়ে পুরোনো জায়গায় আবার আঘাত লেগেছে তাই রক্তক্ষরণ সমস্যা নেই আব্বা আমি ঠিক আছি।”

“ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!

“ঠিক আছে আব্বা!”

~ চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে