ধূসর রাঙা মেঘ পর্ব-০৩

0
1057

#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ ফোনটা রাখতেই মেঘের বড়ফুপি ঢুকলো রুমে খাবার নিয়ে। মেঘ কে দেখে মুচকি হেসে বলল,,

“মেঘ এই যে তোর খাবার আজান বলল তুই নাকি নিচে যাবি না এখন।”

“হুম তুমি তো নিচে কত লোক এদের সামনে খেতে অস্বস্তি লাগে। আর কতজন চোখ দিয়ে পারলে গিলে খায়। আব্বা থাকলে হয়তো নিচে যেতাম।”

“হুম বুঝেছি এখন কথা না বলে খেয়ে নে আসছি।”

“সবাই খেয়েছে?”

“হুম!”

“ফুপি তুমি কি খুব ব্যস্ত?”

“কেন?”

“একটু খায়িয়ে দেবে!”

“কেন দেব না দারা হাত ধুয়ে নিই।”

মেঘের ফুপি হাত ধুয়ে মেঘের জন্য ভাত মাখাতে লাগল। তা দেখে বলল,,

“ধন্যবাদ ফুপি আমার কথা রাখার জন্য। তবে জানো কি কিছু জিনিস খুব করে চাইলেও পাওয়া যায় না। আবার কিছু জিনিস অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে খুব সহজেই পাওয়া যায়।”

“কেন তুই কি ভেবেছিস আমি খায়িয়ে দেব না।”

‘একটুর জন্য ভেবেছিলাম তোমার হয়তো জরুরি কাজ আছে এখন খায়িয়ে দিতে পারবে না।”

“আমার আম্মা আমার কাছে আবদার করছে আর আমি রাখবো না।”

“তুমি আর আব্বা আমাকে এত সুন্দর করে আম্মা ডাকো কেন?”

“কারন তোর মাঝে যে আমরা আমাদের আম্মাকে পাই। আম্মার মৃত্যুর পরের দিনই তো তুই হলি। একদম আম্মার মতো চোখ আম্মার মতো গায়ের রং। আব্বাও তোকে অনেক আদর করতো।”

“আমার মনে দাদুভাই থাকলে হয়তো আমার জীবনটা আরো সহজ হতো। দাদুভাই এর ভয়েও অন্তত কেউ কিছু বলতো না।”

‘হুম অনেক হয়েছে এখন হা কর ।”

মেঘ হা করলো ওর ফুপি ওকে খায়িয়ে দিতে লাগলো।লাস্ট লোকমা টা দেবে তখনি শায়লা ঢুকল আর বলল,,

“বাহ ভাই বাহ কি দৃশ্য আর মা তোমার হলো বড় মামী ডাকছে। তুমি নাকি সেই কখন ওপরে এসেছো মহারানীর খাবার দিতে তাড়াতাড়ি নিচে যেতে বলেছে।”

“হুম শেষ।”

বলেই তিনি হাত ধুয়ে প্লেট নিয়ে নিচে চলে গেল। তখন মেঘ বলল,,,

“আপুর সাজানো শেষ?”

“হুম শেষ এখন তিনি জামাইকে দেখাচ্ছে কেমন লাগছে। ওরা গাড়িতে আসছে। বিয়েতো হয়েই গিয়েছে আর এই কয়েক বছরে কতবার দেখা হয়েছে তাও ঠিক নেই মুনের কি শখ সাজতে হবেই।

“আপু সাজতে ভালোবাসে তাই বাদ দাও না।

“তুই রেডি হয়ে নে।”

“আমার আবার রেডি হতে কি লাগবে ঐ সিম্পল নরমাল গ্ৰাউনটা আর হিজাব ব্যস।”

“হুম। আপনি তো আবার প্রাকৃতিক সুন্দরী প্রসাধনীর দরকার হয় না।”

“হুম এখন বলো তোমার জামাই আসবে না। নাকি এসেছে দেখিনি আমি।”

“এসেছে কোথাও হয়তো আড্ডা দিচ্ছে জিয়ানের সাথে ওতো আজকে অফিস যায় নি।”

“আব্বা ফিরেছে?”

“হুম একটু আগে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি তৈরি হয়ে নিই। আর তুমি ও হও।”
_________________

মুনের শুশুরবাড়ির সকলে এসে পড়েছে মুনের শুশুরশাশুড়ি মুনের জামাই আর ননদ এই তাদের ছোট পরিবার। তাদের সাথে ছেলের ফুপি, ফুপা আর ফুপাতো ভাই আর ফুপাতো বোন এসেছে। ওনারা আসতেই সবাই ওনাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পরলো। খাওয়া দাওয়ার পাট চুকতেই সবাই বলল বিয়ের ডেট নিয়ে কথা বলবে। যেহেতু আগেই আকদ হয়েছিল এখন শুধু তারা উঠিয়ে নিয়ে যাবেন আনুষ্ঠানিক ভাবে। ওদের বিয়ে বিশ দিন পর ঠিক করা হলো। মুনের হাজবেন্ড এর নাম মুজাহিদ আহমেদ। ওদের ও বিজনেস আছে মুজাহিদ এখন বাবার সাথে বিজনেস দেখছে তাই তো সব সামলাতে সামলাতে দেরি হয়ে গেল মুনকে ঘরে উঠাতে প্রায় তিন বছর মুজাহিদ বিদেশের বিজনেস দেখছিল। হুট করে মুজাহিদ এর মা বললেন,,

“তা মুনকে আর আপনাদের মেয়েদের ডাকুন কাউকে দেখলাম না। নাকি আজ ও প্রথমবারের মতো লজ্জা পাচ্ছে সবাই ।”

তখন মুনের কাকিমনি বললেন,,

“ঐ একটু আর কি আমি সবাইকে ডাকছি।”

উনি সবাইকে ডাকতে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর সবাই আসলো। মুনকে ওর শাশুড়ি ওনার পাশে বসালেন। আর সবাই সোফায় বসলো মেঘ গিয়ে ওর বাবার পাশে বসলো। মেঘের বাবা আস্তে আস্তে বলল,,

“আম্মা আমার ওপর রাগ করেন নি তো?”

“না আব্বা কোন রাগ করি নি। তবে আমার মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।

“কি আম্মা!”

“বিয়েতো হয়েই গেছে এখন শুধু উঠিয়ে নেবে তাহলে ওনারা এতজন এসেছেন কেন আর ডেট টাও উনারা আগে ঠিক করে রেখেছেন বললো তাহলে ফোন করেও তো ডেট জানিয়ে দিতে পারতো।”

“আমিও তো এটাই ভাবছি বিশেষ করে মুজাহিদ এর ফুপির ফ্যামিলি নিয়ে ওর ফুপি তোমার মায়ের সাথে আর ছোট ফুপির সাথে বেশ আলাপ করছে। তোমার মা নাকি তোমাকে নিচে থাকতে বলেছে এটা শুনে আমি বেশ অবাক হয়েছি। আর এটা নিয়ে তোমার ছোটফুপিও কোন কিছু বলে নি।”

“আপনি জানলেন কিভাবে?”

“আমার সেকেন্ড ভার্সন মিস্টার আজান চৌধুরীর থেকে!”

এ কথা শুনে মেঘ মুচকি হাসলো সাথে ওর বাবাও। তখন মুজাহিদের বাবা বলল,

“কি কথা হচ্ছে বাবা মেয়ের মধ্যে আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে এখানে আপনারা ছাড়া আর কেউ নেই।”

“তেমন কোন ব্যাপার না এমনিই কথা বলছিলাম।”

“ভাইসাহেব আপনার কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে চাচ্ছি।”

“আরে বলুন না কি বলবেন আমরা আমরাই তো ?”

“আসলে আমি ওতো ঘুড়িয়ে কথা বলতে পারি না সরাসরিই বলছি। আমরা জানি এতদিন মুনের জন্য আপনারা মেঘের বিয়ের কথা ভাবেন নি। আমার ভাগ্নে আপনার মেয়ে মেঘকে পছন্দ করে আমাদের ও মেঘ অনেক পছন্দের তাই আমরা চাইছি আমার ভাগ্নের সাথে মেঘের বিয়েটা দিতে আপনি কি বলেন।”

এ কথা শুনে মেঘ আর ওর বাবা যেন আকাশ থেকে পড়লো। আর দু’জনে একসঙ্গে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তারপর মায়মুনা চৌধুরীকে দেখলেন। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী দু’জনেই রেগে যাচ্ছে কিন্তু আয়মান চৌধুরীর যেন রাগটা একটু বেশিই হচ্ছে। তা দেখে মেঘ ওনার হাতের ওপর হাত রাখল তিনি মেয়ের দিকে তাকাতেই মেঘ শান্ত হতে বলল তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“আপনি ঠিক বলেছেন মুনের বিয়ের জন্য আমরা মেঘের বিয়ের কথা ভাবি নি। তবে মুনের মতো আমি মেঘেরও আকদ করে রেখেছি সত্যি বলতে মেঘ ছয় বছর যাবত বিবাহিত।”

কথাটা যেন ড্রয়িংরুমে বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো সকলে যেন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। তখন মুজাহিদের ফুপাতো ভাই বলল,,

“কি বলছেন আংকেল কই এত বছরে আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকবার দেখা হয়েছে মেঘের হাজবেন্ড কে তো দেখলাম না। আর কেউ তো বললো না ও বিবাহিত তাছাড়া ওর নাকে নাকফুল হাতে চুড়ি এগুলোও তো কখনো দেখলাম না। তাছাড়া আয়না ফুপি মানে আপনার বোন উনি তো কিছুই বললো না। উনি তো জানতেন আমরা মেঘের ব্যপারে কথা বলতে আসবো।

এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী যেন আরো রেগে গেলেন। কিন্তু শান্ত স্বরে বলল,,

“আসলে মেঘের বিয়ের ব্যাপারটা আমরা পরিবারের কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানে না।এমন কি আমার বোনেরাও না। তাছাড়া ইসলাম শরীয়তের কোথাও এগুলো নেই নাকফুল ,চুড়ি পড়া তাই আমার মেয়ে সেসবের ধার ধারে না। আর মেঘের হাজবেন্ড কয়েকবছর বিদেশে ছিল আর ওরা মুনের বিয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। মুনের বিয়ে হয়ে গেলে আমি মেঘের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবো। সমস্যা নেই মুনের বিয়েতে তারা উপস্থিত থাকবেন। যাই হোক ভাইসাহেব আপনাদের আগে উচিত ছিল মেঘের সম্পর্কে জানা।”

“আমরা দুঃখিত প্লিজ আপনারা কিছু মনে করবেন না।মুনের থেকে আগে জেনে নেওয়া উচিৎ ছিল।”

“হুম।”

“আজ তাহলে উঠি!”

“আচ্ছা ঠিক আছে। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।”

ওনাদের এত অস্বস্তি হচ্ছিল বলে ওনারা চলে গেলেন বিষয় টা সেনসেটিভ বলে আয়মান চৌধুরীও কিছু বললেন না। সবাই চলে গেলে আয়মান চৌধুরী মায়মুনা চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলল,,

“তুমি জানতে মেঘের সাথে ঐ ছেলেটার বিয়ে কথা বলবে! তুমি সবসময় মেঘ কে বলো অনুষ্ঠানে না আসতে আর আজ যেচে পড়ে ওকে বলেছে নিচে আসতে। এর কারণ কি?”

মায়মুনা চৌধুরী চুপ করে আছে । তা দেখে আয়মান চৌধুরী আরও রেগে গেল আর চিৎকার করে বলল,,

“কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন তুমি জানতে কি না বলো।”

ওনার চিৎকার শুনে মায়মুনা চৌধুরী সহ ওখানে থাকা সবাই কমবেশি চমকে উঠলো। মায়মুনা চৌধুরী ছোট করে বললেন,,,

“আমি এসব জানতাম না উনারা শুধু বলেছিল মেঘ ও যাতে উপস্থিত থাকে তাই বলেছিলাম মেঘ কে। কিন্তু ওনারা আসার পরে ছোট আপা আমাকে জানিয়েছে আমি বলবো বলবো করেও তাদের জানানোর সুযোগ পাই নি। আমি সত্যি এ ব্যাপারে কিছু জানতাম না।

আয়মান চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“ওকে সরি চিৎকার করার জন্য । তুমি মুনের ফুপুশাশুড়ির সাথে এত কথা বলছিলে তাই আমি ভেবেছিলাম তুমি আগে থেকেই সব জানো। আই এম ভেরি সরি।”

“হুম!”

“আয়না তুই তো আমার মেয়েকে চোখে দেখতে পারিস না তার জন্য হঠাৎ করে বিয়ের কথা চিন্তা করলি ভাবা যায়।তারওপর তুই জানিস মেঘ বিবাহিত এখানে তো তোর মান সম্মান বাঁচাতে মিথ্যা বলতে হলো।

আয়না ভয়ে ভয়ে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকালো আর ছোট করে বলল,

“আসলে আমি ভেবেছিলাম ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল মেঘের বিয়ের পর হুট করেই ছেলের পরিবার হাওয়া হয়ে গেল। এখনো দেখা নেই তাই আমি ভেবেছিলাম মেঘ ও তো বড় হয়েছে বয়স হয়েছে বিয়ের জন্য । যদি বিয়ে হয় খারাপ কি ছেলে তো ভালোই। তাছাড়া এই যুগে তোমার কালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে? হাজার হোক রক্ত তো তাই। ভালো না ভাবতে চাইলেও ভাবতে হয়।

“বাহ আমার মেয়ের ভালো চেয়ে উদ্ধার করেছিস তুই।আর কি বললি কালো এই কালো মেয়েটার জন্য আমার পর রাজপুত্র এর মতো চেহারার কেউ আমার মেয়ের জন্য কেঁদেছিল। আমার মেয়ের জীবনের দ্বিতীয় পুরুষ যে নাকি আমার মেয়ের জন্য কেঁদেছিল।

এ কথা শুনে ইয়াংস্টার রা যেন সকলে কিংকর্তবিমূর হয়ে গেল। এই কালো মেয়েটার জন্য রাজপুত্র এর চেহারার মতো কেউ কেঁদেছিল। ওরা যেন ভাবতেই পারছে না। মেঘ ওর বাবার হাত ধরে বলল,,

“আব্বা অনেক হয়েছে শান্ত হন একটু।”

“কি করে শান্ত হবো বলেন আপনি। ওর সাহস হলো কি করে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার।”

এবার আয়না চৌধুরী বেশ চেচিয়েই বলল,,

“তা কোথায় তোমার রাজপুত্র যে নাকি বিয়ে করার কয়েকদিন পরেই হাওয়া হয়ে গেছে নাকি সে ভেবেছে এই কালো মেয়েকে বিয়ে করে ভুল করে ফেলেছে তাই পালিয়ে গিয়েছে।”

“না জেনে একদম কথা বলবি না আয়না তারা আমাদের বাড়িতে আসে না মানে এই না আমাদের সাথে তাদের সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই। সঠিক সময় এলে ঠিকই এসে পরবে।”

“কেন আসে না কেন তুমি কি কোন ফকিরের সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছো নাকি যে আমাদের মতো বড়লোকদের সাথে চলতে লজ্জা পাবে।”

এ কথা শুনে মেঘ জোরে চিৎকার করে বলল,,

“এনাফ ইজ এনাফ”

চিৎকার টা এতোই জোরে ছিল যে সবাই চমকে উঠলো। এমন কি আয়মান চৌধুরী নিজেও । মেঘের খুব রাগ হচ্ছে রাগ সামলাতে ও নিচে বসে পরলো আয়মান চৌধুরী বুঝতে পারলো রাগটাকে কন্ট্রোল করার জন্য বসেছে তাই কিছু বললো না। মেঘ একটা বড় দীর্ঘশ্বাস নিল তারপর শক্ত কন্ঠে বলল,,

” কিছু বলছি না মানে এই না কিছু বলবো না। ওনাদের সম্পর্কে কিছু বলবেন না ওনাদের ব্যাপারে কতটুকু জানেন যাদের কখনো দেখেনি নি তাদের সম্পর্কে কিভাবে বলছেন আপনি। আমার কোন বিষয়ে তো আপনি থাকেন নি। এমন কি আমার বিয়ের সময় আমার আব্বা আর মামারা ছাড়া আমার পাশে কেউ ছিল না।সবাই সবার ব্যস্ততা দেখিয়েছেন কেউ থাকেন নি আমার বিয়েতে। তাহলে কিভাবে পারলেন আপনি আমার আব্বা বা আমার সিদ্ধান্ত না নিয়ে ওনাদের সাথে কথা বলতে।”

এ কথা শুনে বড়রা সকলে মাথা নিচু করে ফেলল আসলেও কেউ ছিল না সেদিন। এমন কি ইয়াংস্টার রা এই বিষয়টা কোন গুরুত্ব দেয় নি । তখন জিয়ান বলল,,

“সত্যি কাকাই মেঘের বিয়ে হয়ে গেছে।”

“কেন তখন তো তোমাকে বলেছিলাম তুমি বলেছিলে তোমার কাছে তোমার কলেজের ট্যুর ইম্পোর্টেন্ট তুমি বিয়েতে থাকতে পারবে না। তোমার সাথে আমার বড় কন্যা মুন ও গেল তার বোনের থেকে তখন ট্যুর টা ইম্পোর্টেন্ট ছিল। শিফাকে নিয়ে জাহানারা তোমাদের মামার বাড়ি চলে গেল। বড় আপা যে কিনা আসতে চেয়েছিল কিন্তু তখন তারা বিদেশে ছিল বলে আসতে পারে নি। আর আয়না তো সোজা নাকচই করে দিল আসতে পারবে না। মেঘের মামা রা শুধু ছিল আমার সাথে মেঘের বিয়েতে তাছাড়া মেঘের মা আর শাফিয়ান ছিল না থাকার মতো এই তো আমার মেয়ের বিয়ে হলো ঘরুয়া ভাবে। বাহ তোমাদের দেখি কারো মনেই নেই আমার মেয়ের বিয়ের কথা।

একথা শুনে সবার মুখ আরো ছোট হয়ে গেল।তখন জিয়ানের বাবা শাফিয়ান বলল,,

“আসলে ভাইয়া মেঘের বিয়ের পর তো ওনারা আর আসেন নি আর আমাদের ও বাড়ির কারো সাথে তেমন আলাপ বা দেখা হয় নি এর জন্য জিয়ান হয়তো ভুলে গেছে। তুমি কিছু মনে করো না।”

আয়মান চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগে মেঘ উঠে বাবার হাত ধরে বলল,,

“আব্বা আপনার মেয়ের জামাইকে এখন কচ্ছপের পিঠ থেকে নেমে ঘোড়া ছুটিয়ে আসতে বলুন। সকলে যে তাকে দেখার অপেক্ষা করছে।”

এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,

“আমার মেয়ের জামাই ঘোড়া ছুটিয়ে আগেই চলে এসেছে এখন শুধু তার বউ বললে এখানে এসে হাজির হবে।”

সকলে মেঘের আর ওর বাবার কথার কোন মানেই বুঝতে পারল না। তখনি একটা লোক এলো বলল,,

“এখানে কাসফিয়া আয়মান মেঘ আছে?”

তখন মেঘ এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“জি আমিই কাসফিয়া আয়মান মেঘ।”

” আপনি একটা পার্সেল নিয়ে যেতে বলেছিলেন।”

“জি আপনি একটু দাঁড়ান আমি নিয়ে আসছি।”

তখন আজান বলল,,

“আপু আমি নিয়ে আসছি ঐ গুলোই তো দুপুরে বললে?”

“হ্যা ওগুলো আলাদাভাবে প্যাকেট করে রেখেছি টেবিলের ওপর।”

“আচ্ছা।”

আজান চলে গেল কিছুক্ষণ পর একটা বক্স নিয়ে ফেরত আসলো মেঘ লোকটার হাতে বক্স দিয়ে বলল,,

“বক্সটার ওপরে নাম লেখা আছে তার হাতেই দিবেন আর কারো হাতে না। দরকার পড়লে তার জন্য অপেক্ষা করবেন কিন্তু তার হাতেই দিবেন। ”

“ওকে ম্যাম ধন্যবাদ!”

লোকটা চলে গেল তখন মেঘ বলল,,

“এই আজান আইসক্রিম খেতে যাবি।”

‘চলো কিন্তু আর কাউকে নেবে না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

তখন মেঘ একটু জোরেই বলল,,

“আব্বা আমি আর আজান একটু বাইরে যাচ্ছি সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

মেঘ এমন ভাবে সব করলো যেন কিছুই হয়নি। ও বাড়ির বাইরে চলে গেল। আয়মান চৌধুরী বলল,,

“এরপর মেঘের বিয়ের ব্যাপারে যেন আর কোন কথা না শুনি। এখন সবাই সবার কাজে যাও।”

সকলে ঠিকই চলে গেলেন কিন্তু সবার মনে প্রশ্ন ঠিকই রয়ে গেল।

________________

“আপু তুমি একবার ভাইয়ার সাথে কথা বলিয়ে দেবে আমি এখনো ভাইয়ার সাথে কথা বলি নি। আর যখন তোমাদের বিয়ে হলো তখন তো আমি অনেক ছোট ছিলাম। আমার তো মনেই ছিল না যে তুমি বিবাহিত। ভাইয়াকে একটা ফোন দাও।

এ কথা শুনে মেঘ মুচকি হাসলো আর বলল,,

“তুই চাইলে শুধু কথা না দেখাও করিয়ে দিতে পারি। যা এখনই আব্বার থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে আয়। কিন্তু আব্বা ছাড়া কাউকে বলবি না কোথায় যাবো।

“এই যাবো আর আসবো”

আজান দৌড়ে চলে গেল তখন একজন এসে বলল,,

“আরে ম্যাম আপনি এখানে?”

“আরে আপনি এখানে আমি তো ছোট ভাইকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে এসেছিলাম। আর আমাকে ম্যাম বলবেন না প্লিজ আমি বয়সে আপনার থেকে ছোট।”

“ছোট হলে কি হবে কাজ তো উপরের করেন তাই না। আপনার উপকার আমি কোনদিন ও ভুলবো না। আপনি না থাকলে আমার মেয়েটাকে কখনো নিজের করে পেতাম না। মেয়েটা শুধু অবহেলাই পেত।

“আপনার মেয়ে আপনার কাছে আছে আপনার ভালোবাসার জন্য। এই যে আপনার মেয়ের প্রতি আপনার সীমাহীন ভালোবাসা। তা কোথায় আপনার মেয়ে।”

“ঐ তো পার্কে খেলা করছে । তা আপনার ভাই কোথায়।”

“এক জায়গায় যাবো তো তাই গাড়ির চাবি আনতে গিয়েছে বাসা থেকে।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে আমি আসি।”

“জি ধন্যবাদ!”

___________________

আজান দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো দেখলো ওর বাবা সোফায় বসে আছে। দৌড়ে বাড়িতে ঢোকায় সবাই একপ্রকার ভয় পেয়েছে। ও গিয়ে সোজা ওর বাবার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে লাগলো। তা দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আজান কি হয়েছে এভাবে দৌড়ে এলে কেন মেঘ কোথায়? মেঘের কিছু হয় নি তো?

উনি মেয়েকে নিয়ে ভয় পেল। আজান বড় করে শ্বাস নিল আর বলল,,

“আব্বা চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ে ঠিক আছে। আপনার মেয়ে আমাকে গাড়ির চাবি নিতে পাঠিয়েছে আমিও পিচ্চি ছেলের মতো দৌড়ে এসেছি। ”

“হঠাৎ করে মেঘের টোনে কথা বলছো আসলে কি চাইছো তুমি।”

“দেখলাম আব্বা আর আপনি করে বললে কেমন লাগে খারাপ না ভালোই লাগে যাই হোক এখন গাড়ির চাবি দাও!”

“কেন কোথায় যাবে।”

তখন আজান ফিসফিস করে আয়মান চৌধুরীর কানের কাছে গিয়ে বলল,,

“আপু আর আমি দুলাভাই এর সাথে দেখা করতে যাবো।”

আয়মান চৌধুরী হেসে বললেন,,

“সত্যি!”

“হুম সত্যি!”

“আমার রুমে গিয়ে দেখো টেবিলের ওপর রাখা আছে।”

আজান দৌড়ে ওপরে গেল তখন মুন বলল,,

“মেঘ ড্রাইভিং শিখল কবে?”

“আরো অনেক আগেই শুধু ড্রাইভিং না মেঘ অনেক কিছুই জানে।”

আজান নিচে এসে বলল,,

” দেরি হলেও টেনশন করো না বাবা। আমরা সাবধানে যাবো আবার সাবধানে চলে আসবো।”

তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“কিন্তু যাচ্ছো কোথায় তোমরা!”

“একজনের সাথে দেখা করতে আপুর পরিচিত আসছি আল্লাহ হাফেজ।”

__________________

“মা আজকে কেন জানি মনে হচ্ছে আমার সাথে ভালো কিছু ঘটবে। ”

“হঠাৎ এই কথা কেন বলছিস। তা এই সময় বাড়িতে কোথা থেকে উদয় হলি।

“আসলে,,”

“কারন একটু আগে ভাবি ফোন দিয়েছিল যে বল ভাইয়া আমি ঠিক বললাম।”

“সত্যি মেঘ ফোন করেছিল?”

“হুম ঐ নিষ্ঠুর মেয়েটা আমায় ফোন দিয়েছিল। বলল ওর ছোটভাই নাকি আমার সাথে দেখা করতে আসবে। তাই তো বাড়ি আসলাম নোলককে নিতে।

“তাহলে ওদের বাড়ি আসতে বল ধূসর। কতোদিন হলো মেয়েটাকে দেখি না।

“না না মেঘ বলেছে বাড়ি আসবে না। ক্যাফেতে যেতে বলেছে। আর হ্যা তার ননদ কেও নিয়ে যেতে বলেছে। তুমি বরং ওদের বাড়িতে গিয়ে ওকে দেখে এসো।

” ইয়েইইই এই না হলে আমার ভাবি! ভাবি যে আমাকে এত ভালোবাসে কি বলবো।”

‘হুম মহারানী এখন গিয়ে রেডি হন ওরা চলে এলো বলে।”

“এই এই নোলক আস্তে যা পড়ে যাবি।”

“তোমার মেয়ে শুনলে তো পাগল একটা।”

“ধূসর!”

“হুম!”

“মেঘকে কবে ঘরে তুলবি?”

“আরো একবছর আগেই তুলতাম কিন্তু মুন আপুর বিয়ের জন্য আটকা রয়ে গেছে যাই হোক বড় মেয়ের আগে তো ছোট মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যায় না। তবে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে বাবা অসুস্থ ছিল কয়েক বছর । কয়েকমাস যাবৎ একটু ভালো হলো। এবার আর সমস্যা নেই। অবশ্য সব ঠিক থাকলে আমরা আরো আগেই মেঘকে ঘরে তুলতাম তাই না মা।”

ধূসর এর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“ঠিক বলেছিস সেদিন ওমনটা না হতো, তোর বাবা না অসুস্থ হতো, না আমরা দেশ ছেড়ে যেতাম।”

“মা তুমি আর টেনশন করো না যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন থেকে সব ঠিক হবে।”

“ইনশাআল্লাহ সবকিছু ঠিক হবে।”
________________

“ভাইয়া কখন আসবে আপু আমরা তো এসে পড়লাম!

“আরে আসবে তো সবুর কর?”

“আসলে কি বলো তো এক্সাইটেড লাগছে খুব!”

“আজান এখন অনেক বড় হয়েছিস ক্লাস এইটে পড়িস। এখন বাচ্চামো করলে চলবে।”

“আহ হা আমি বড় হইনি এখনো অনেক ছোট।”

“হুম বুঝলাম মহাশয় এখন বলুন কি খাবেন?”

“ভাইয়া আসুক তারপর খাবার অর্ডার করবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে !”
__________________

“আরে ডক্টর শুভ্র স্যার আপনি আমাদের রেস্টুরেন্টে কি সৌভাগ্য। সাথে কে আপু নাকি?”

একজনের কথায় ডক্টর শুভ্র বলল,,

“জি!”

“কফি খেতে এসেছেন বুঝি আসুন আমাদের এখানে কাপলদের জন্য আলাদা টেবিল আছে।”

ডক্টর শুভ্র এবার রেগে বলল,,

“আপনাদের সমস্যা কি বলুন তো। মস্তিষ্ক এত বিকৃত কেন যে ছেলে মেয়ে একসাথে এলে কাপলই হতে হবে। ভাইবোন ও তো আসতে পারে। আপু বলতে কি বুঝিয়েছেন আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড রাইট কিন্তু দুঃখিত তখন বুঝতে পারি নি। কারন এটা আমার বোন তাই ভাবলাম আমার বোনকে আপনি আপু বলেছেন কিন্তু এখানে তো বিষয়টাই উল্টো করে ফেলেছেন। চিন্তাধারা বদলান।”

“সরি স্যার বুঝতে পারি নি আই এম রেইলি সরি।”

“ইটস্ ওকে এরপর থেকে এটা মাথায় রাখবেন। এখন যান আমরা আমাদের মতো বসে পড়বো।”

“জি স্যার!”

এতক্ষন মেঘ আর আজান ওনাদের দেখছিল হুট করে আজান বলল,,

“আপু এই লোকটা একদম এ্যাংড়ি ইয়ংমেন! তবে যা বলেছে একদম সত্যি বলেছে এইজন্য ভাল্লাগছে এরে।”

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে