#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#পর্ব_২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“দুপুরে মেঘ খেয়েছে মায়মুনা?”
আয়মান চৌধুরীর প্রশ্নে মায়মুনা চৌধুরী একটু অপ্রস্তুত হন। তিনি বলল,,
“আমি জানি না আমি তো একটু খারাপ লাগছিল বলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।”
“কেমন মা তুমি অসুস্থ মেয়ের খবর নিতে পারো নি। একদম সস্তা এক্সকিউজ আমাকে দেবে না। আসলে তো তুমি ওর খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করো নি।”
“এবার তুমি বেশি বলছো আয়মান।”
“আমি বেশি বলছি না একদম! আমি একদম ঠিক বলছি।”
“আহা খাবার টেবিলে তোমরা ঝগড়া করছো কেন? বাবা তুমি তো জানো আপুর ব্যাপারে এ বাড়ির কারো কোন আগ্রহ নেই তাহলে বলছো কেন। জানে না মানে আপু খায় নি। তার আগে আমাদের দেখা উচিত আপু ঠিক আছে নাকি জ্বর আসে নি তো আবার। তুমি না বললে আপু অসুস্থ কি হয়েছে আপুর জ্বর এসেছে নাকি?
ছেলে আজানের কথায় আয়মান চৌধুরী মাথা নাড়ায় খুব একটা ভুল কিছু বলেনি। বাকিরা সবাই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তিনি বললেন,,
“কেন তোমায় কেউ কিছু জানায় নি?”
“না তো!”
“মেঘের এক্সিডেন্ট হয়েছে মাথায় আর হাতে চোট পেয়েছে।”
“কি আপু এক্সিডেন্ট করেছে।
“হুম তুমি বসো সবার সাথে খাও আমি দেখি মেঘ কি করে । আর মায়মুনা পাঁচ মিনিট পর মেঘের আর আমার খাবার মেঘের ঘরে পাঠিয়ে দিও।”
তখন আয়না চৌধুরী বলল,,
“তুমি এখন মেঘের জন্য খাবার টেবিল থেকে চলে যাচ্ছো। যেখানে কিনা তোমার পরিবার রয়েছে।”
“মেঘ ও আমার মেয়ে আমার পরিবার আমার আম্মা। তোমাদের সমস্যা কোথায় তোমরা খাও না।”
বলেই আয়মান চৌধুরী ওপরে উঠতে নিলেন তখন আজান বলল,,
“মা তোমার কি আপুর জন্য একটুও খারাপ লাগে না। তোমারই তো সন্তান আপু । একটু কি তাকে ভালোবাসা যায় না।”
তখন মায়মুনা চৌধুরী রেগে বললেন,,
“না ভালোবাসা যায় না কোন খু*নিকে ভালোবাসা যায় না। সি ইজ এ কিলার।এখন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও। আর যদি তোমার ও তোমার বাবার মতো ওকে নিয়ে আদিখ্যেতা করতে ইচ্ছে হয় তাহলে তুমি ও যেতে পারো।”
এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী বিরবির করে বললেন,,
“মায়মুনা এত অবহেলা করছো তো মেয়েটাকে একদিন এই মেয়েটার জন্য প্রচুর কাঁদবে তুমি। আমার কথা মিলিয়ে নিও। আর কি বললে সি ইজ এ কিলার। নো মায়মুনা নো সি ইজ এ নট কিলার। সি ইজ এ——
আয়মান চৌধুরী তাড়াতাড়ি ওপরে চলে গেলেন। আর সবাই চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো। দুপুরে সবাই খেতে বসেছিল। অফিসে কাজ কম থাকায় তিনি বাড়িতেই লাঞ্চ করতে এসেছে আর এর মেয়ের খোঁজ করতেই এসব।
( আয়মান চৌধুরীরা দুই ভাই দুই বোন। মা বাবা গত হয়েছে মেঘ ছোট থাকতে। আয়মান চৌধুরী বড় তার স্ত্রী মায়মুনা চৌধুরী তাদের তিন সন্তান বড় মুনজেরিন চৌধুরী ডাকনাম মুন। মেঘের থেকে তিনবছর এর বড় পড়াশোনা শেষ কয়েকদিন পরেই তার বিয়ে এমনিতে অনেক আগেই আকদ হয়েছিল। তারপর কাসফিয়া আয়মান মেঘ কয়েকমাস হলো পড়াশোনা শেষ কি করে সেটা ওর বাবা ছাড়া পরিবারের আর কেউ জানেনা। শুধু জানে ওর পড়াশোনা শেষ। আর ওদের ছোটভাই আজান চৌধুরী এইবার ক্লাস এইটে পড়ে। মেঘের অনেক আদরের সে যদিও তেমন ভাবে কাছে পায় না। আয়মান চৌধুরীর ছোটভাই শাফিয়ান চৌধুরী স্ত্রী জাহানারা চৌধুরী তাদের তিন ছেলে মেয়ে ছেলে জিয়ান চৌধুরী সেও মেঘের থেকে তিন বছরের বড় পড়াশোনা শেষ করে সবে বাবা চাচাদের সাথে ব্যবসা দেখছে তার জন্য মেয়ে খোঁজা হচ্ছে বিয়ের জন্য। তারপর বড় মেয়ে জায়মা চৌধুরী মেঘের থেকে পাঁচ বছরের বড় বিয়ে হয়েছে দুই বছর হলো। তারপর ছোট মেয়ে শিফা চৌধুরী এই বার অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। আয়মান চৌধুরীর বড় বোন আশা চৌধুরী আর ছোট বোন আয়না চৌধুরী। এদের পরিবার নিয়ে পড়ে জানানো হবে।)
_____________
মেঘের রুমটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে বোধহয় ঘুমাচ্ছে। আয়মান চৌধুরী লাইট অন করলেন সত্যি মেয়েটা কাঁথা মুড়ে দিয়ে শুয়ে আছে তিনি গিয়ে মেঘের কপাল চেক করলেন হালকা জ্বর এসেছে বাবার হাতের স্পর্শে মেঘ বলল,,
“আব্বা লাইট টা অফ করে দেন আমি আরেকটু ঘুমাবো।
“আপনি কি করে জানলেন যে আমিই এসেছি।
“আপনি ছাড়া এবাড়ির লোকের আমার ঘরে যাতায়াত কম তাছাড়া আপনার স্পর্শ আমি ভালো করেই চিনি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি এখন উঠুন খেয়ে নিন দুপুরে ওষুধ আছে আর ওষুধ না খেলে সুস্থ হবেন কিভাবে?”
“খেতে ইচ্ছে করছে না আব্বা!”
“বেশি খারাপ লাগছে নাকি আম্মা।”
“না বেশি খারাপ লাগছে না কিন্তু এখন উঠতে ইচ্ছে করছে না।”
“আপনি হেলান দিয়ে বসুন আমি খায়িয়ে দেব।”
“আব্বা আপনি কি ভুলে গেলেন, আবূ জুহায়ফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি কখনো হেলান দিয়ে আহার করি না।
(সহীহ বুখারী: ৫৩৯২)
এর দ্বারা আমরা কি বুঝি বলুন তো তিনি হেলান দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। তবে অসুস্থ ব্যক্তিদের বিষয় টা আলাদা। আমি এখন এতটাও অসুস্থ নই যে হেলান দিয়ে খেতে হবে। আমি ভালোভাবে বসছি আপনি নাহয় খায়িয়ে দেবেন।
” সরি আম্মা বুঝতে পেরেছি আমি তো ভাবলাম আপনি বেশ অসুস্থ তাই বললাম।”
“সমস্যা নেই আব্বা। বাড়ির সকলে খেয়েছে?”
“হুম খাচ্ছে সবাই এখন টেবিলে!”
“তাহলে আপনি আবার তাদের ছেড়ে আমার কাছে আসলেন কেন পরিবারের সবার সাথে খেতে পারতেন। সবার সাথে খেতে পারাও আলাদা তৃপ্তি দেয়।”
“কিন্তু আমার তো মনে হলো আপনার সাথে খেলে আমি বেশি তৃপ্তি পাবো। তাছাড়া আমার আম্মা কি একা একা খাবে নাকি অবশ্য আমি না আসলে আপনি দুপুরে খেতেন কি না সন্দেহ। আপনিও আর নিচে যেতেন না আর কেউ আপনার খবর নিতে আসতো না।”
“বাদ দিন না আব্বা। তাদের কত কাজ সব কাজ ছেড়ে সবাই আমার পেছনে পরে থাকবে নাকি। তাছাড়া,,
“একদম ভালো মানুষি দেখাবেন না আমায়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি বসুন আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।”
মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেল তখনি মায়মুনা চৌধুরী এলেন খাবার নিয়ে আর বললেন,,
“তোমার মেয়ে আবার কোথায় গেল?”
“ওয়াশরুমে গেছে।”
“ওহ আচ্ছা। শরীর এখন কেমন?”
“যার শরীর তাকেই জিজ্ঞেস করো না এখনি এসে পরবে।”
“আচ্ছা আমি যাই তোমরা খেয়ে নিও আর হ্যা তোমার মেয়েকে একটু সাবধানে চলাফেরা করতে বলতে পারো না।”
“তুমি নিজেও তো বলতে পারো আমি তো সবসময় বাড়ি বাড়ি থাকি না।”
এ কথা শুনে মায়মুনা চৌধুরী চুপ মেরে গেলেন উনি কিছু না বলে চলে যেতে নিবে তখনি মেঘ বের হয়ে ওনাকে দেখে বলল,,
“মা !”
কথাটা শুনে তার পা আপনাআপনি থেমে গেল তিনি পেছনদিকে তাকালেন মেঘ কে এই অবস্থায় দেখে বুকটা চমকে উঠলেও মুখের ভাবান্তর নেই। তিনি বললেন,,
“তোমার বাবা খাবার দিতে বলেছিল পাঁচ মিনিট পর তাই খাবার দিতে এসেছিলাম।”
এ কথা শুনে মেঘ একটু এগিয়ে বলল,,
“মা আপনি কি এখন ব্যস্ত ?”
“কেন?”
“তাহলে একটু বসুন না আমাদের সাথে একসাথে খান নিচে তো বোধহয় সবার খাওয়া শেষ। চাচিও তো সবার সাথে খায় শুধু আপনি পরে খান।”
এ কথা শুনে মায়মুনা চৌধুরীর ভালো লাগলো কিনা বোঝা গেল না তিনি মুখে বললেন,,
“এখানে বসে কি তোমাদের বাপ মেয়ের আদিখ্যেতা দেখবো আমি। আমি খেয়ে নিব তোমরা খাও আর দেখেশুনে চলতে পারো না। অবশ্য তোমার দ্বারা কখনো কি ভালো কিছু হয়েছে যা হয়েছে খারাপ-ই হয়েছে।”
বলেই তিনি চলে গেলেন মেঘ বিছানায় বসলো আর বলল,,
“আব্বা নিন শুরু করুন।”
“খারাপ লাগলো না।”
“একটা সময় লাগতো এখন লাগে না। তবে দেখলেন তো এত কথার মাঝে আমাকে সাবধানে চলাফেরার কথাও বলে গেল। বাকি রইল খারাপ লাগার কথা এখন এরকম কথায় না খেয়ে থাকতে বলেন নাকি আপনার ছোট বোনের মতো।”
এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী হাসলো মেঘ ও মুচকি হাসলো। তিনি মেয়ে যত্ন সহকারে খায়িয়ে নিজে খেল তারপর মেঘকে ওষুধ খায়িয়ে চলে গেল।
_______________
“মিস্টার শুভ্র বাড়ি ফিরছেন কবে?”
“বউ যেদিন বলবে আসুন জামাই আপনার বউয়ের সঠিক সময় চলে এসেছে।”
“মজা করছেন আমার সাথে?”
“কই নাতো সত্যি কথা বলছি ।”
“আপনি তো বেশ মজার মানুষ। বিয়ে করছেন কবে?
“কি যে বলেন না আপনি মজার মানুষ। আর বিয়ে তো আগেই করেছি এখন বউ ডাকলেই হয়।
“কি! এত ড্যাশিং হ্যান্ডসাম ছেলে বিয়ে করেছে সকলের অগোচরে এ কথা শুনলে এই হসপিটালের জুনিয়র মেয়েরা হার্ট অ্যাটাক করবে।”
“হুম অগোচরে তেমন কেউ জানেনা খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ। কথায় কথায় আপনাকে বললাম।”
“তা কয় বছর হলো বিয়ে করেছেন অবশ্য এখানে আসলেনই তো একবছর ধরে। আগে তো বাইরে ছিলেন বোধহয়।”
“হুম! হয়েছে বছর কয়েক! আচ্ছা বাদ দিন
এখন বলুন ১০২ নাম্বার কেবিনের পেশেন্টের কি অবস্থা?”
“সেটা বলতেই তো এলাম কিন্তু এসে ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে দেখে বললাম বাড়ি ফিরছেন কবে। যাই হোক পেশেন্টের অবস্থা আগের থেকে ভালো কিন্তু তার পরিবার আজকেই তাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে চায় । কিন্তু ওনার আরো দুদিন হসপিটালে থাকা প্রয়োজন।”
“ওকে! তার পরিবার কে আমার কাছে পাঠান রিলিজ করাতে চাইলেও তো আমরা দিতে পারি না। যথেষ্ট রিস্ক আছে।”
“ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
“মে আই কাম ইন ।”
“ইয়েস কাম।”
“আপনি পেশেন্টের কি হন?”
“পেশেন্টের ভাই।”
“ওহ আচ্ছা তা আপনি যে আপনার ভাইকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন সেখানে কতটা রিস্ক আছে আপনি জানেন।”
“আমার ভাই হসপিটালে থাকতে চাইছে না তাই! তাছাড়া আমিও ওকে এখানে রাখতে চাইছি না।
“বুঝলাম ভাই কে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু তার ভালোর দিকটাও ভাবতে হবে। হসপিটালে থাকতে কারোরই ভালো লাগে না। তারওপর উনি আগের থেকে ভালো মানে খুব ভালো নয়। আমি এখন তাকে রিলিজ করতে পারছি না।”
“কিন্তু রিলিজ তো আপনাকে করতেই হবে আমি আমার ভাইকে হসপিটালে আর রাখবো না।”
“ওকে ফাইন এরপর আপনার ভাইয়ের কিছু হলে আমরা দায়ী থাকবো না। সবথেকে বড় কথা পরবর্তীতে ওনার কিছু হলে অন্তত আমাকে পাবেন না। এবার আপনি আসতে পারেন।”
“আমাকে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই আমি বুঝি না হসপিটালে থাকলেই তো আরো ইনকাম হবে আপনাদের তাই তো ছাড়ছেন না।”
এ কথা শুনে ডক্টর শুভ্র উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলে জোরে বাড়ি মেরে বলল,,
“হাউ ডেয়ার ইউ! আপনার সাহস কি করে হয় এসব বলার। ডক্টররা টাকার জন্য মানুষের চিকিৎসা করে না। তারা মানুষের সেবার জন্য মানুষের চিকিৎসা করে। আর আপনার কয় টাকা আছে যে আমাকে এসব বলেন আপনার ভাইয়ের ভালোর জন্য আমি ওনাকে এখানে রাখতে বলেছিলাম। এখন তো আপনি চাইলেও আমি আপনার ভাইকে এখানে রাখবো না। নাও আউট।”
“দুই টাকার ডক্টর হয়ে আমাকে এসব বলছেন আমি কে আপনি জানেন?”
“আমি জানি না আর জানতেও চাই না নাও আউট আই সে গেট আউট ……
“আপনাকে আমি দেখে নেব কি করে এই হাসপাতালে থাকেন সেটাও দেখবো।”
বলেই লোকটা চলে গেল এদিকে শুভ্র এর রাগ হচ্ছে ভিশন। কিন্তু এখানে প্রকাশ করতে চাইছে না। এদিকে বাইরে দু একজন লোক শুভ্রর চিৎকার পেয়েছে। তারা সবাই শুভ্রর রাগের সম্পর্কে অবগত।
লোকটা বাইরে গিয়ে রিসিভশনে বলল,,
“এই হাসপাতালের MD কে?”
‘কেন?”
“আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।”
তখনি শুভ্র এলো ওখানে আর বলল,,
“এই লোকটার ভাইয়ের রিলিজ করিয়ে দিন আর হ্যা এর থেকে একটা টাকাও নিবেন না গট ইট।”
রিসিভসনিস্ট বলল,,
“ওকে স্যার।”
শুভ্র ওখান থেকে চলে গেল । রিসিভসনিস্ট একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল,,
“সাইন করুন।
লোকটা হা করে তাকিয়ে থেকে বলল,,
“আমি কি ভিখারি নাকি যে বিনা পয়সায় ভাইয়ের ট্রিটমেন্ট করাবো। মোট বিল কতো হয়েছে বলুন?”
“সরি স্যার, স্যার যখন বলেছে টাকা নিবেন না মানে নিবেন না।”
“দুই টাকার ডক্টর বলল দেখে টাকা নেবেন না এতে আপনাদের হাসপাতালের লস হবে না।”
“এক্সকিউজ মি স্যার হি ইজ ডক্টর ডি.এ.শুভ্র এই হসপিটালের সিনিয়র ডাক্তার প্লাস এই হাসপাতালের MD. এই হাসপাতাল ওনার বাবা বানিয়েয়েছেন আর এর মালিক উনি নিজেই ডক্টর শুভ্র। আটাশ বছর বয়সেই উনি বেস্ট ডক্টরদের মধ্যে একজন হয়েছে। আর হাসপাতালের লাভ লস আপনার দেখতে হবে না। আপনি এখন আসতে পারেন।”
এ কথা শুনে লোকটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল এর জন্যই বলে কারো সম্পর্কে না জেনে কথা বলতে নেই। ওনার সব হাওয়া ফুস।
__________________
“কিরে মেঘ তুই নাকি হাত পা ফাটিয়ে বসে আসিস।”
মেঘ বিকেলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল তখনি কারো আওয়াজে পেছনে ফিরে নিজের বড় বোন মুন কে দেখে বলল,,
“ওহ হো আপু বসে কোথায় আছি আমি তো এখন দাড়িয়ে আছি।”
“মুখে মুখে তর্ক করবি না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন বলো কেন এসেছো? আমাকে যে দেখতে আসোনি সেটা আমি ভালো করেই জানি।”
“হুম ভালো বুঝেছিস। এখন কেমন আছিস?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
“তোর বিকাশ থেকে আমাকে পাঁচশ টাকা দে ফোনে রিচার্জ করবো ব্যালেন্স শেষ তোর দুলাভাই কে ফোন দিতে হবে।”
“দুলাভাই কে বলো না আমাকে কেন বলছো।”
‘আরে সবসময় তো তোর দুলাভাই দেয় আজ নাহয় আমিই দিলাম।”
“আজ কি যে তোমার দিতে হবে ?”
‘তুই বেশি বুঝিস দিতে বললাম তাই দে না। এত প্যাচাচ্ছিস কেন?”
“আচ্ছা ফোনটা নিয়ে আসো বিছানায় দেখো ।”
মুন মেঘ কে ওর ফোনটা এনে দিল মেঘ ওকে পাঁচশো টাকা রিচার্জ করে দিল। মুন খুশি মনে চলে গেল। মেঘ একবার তাকিয়ে সামনে তাকালো আর বলল,,
“যাক পরিবারের কেউ তো খুশি হলো আমার জন্য।”
________________
কয়েকদিন পর,,
মুনের শুশুরবাড়ি থেকে ডেট ফিক্সড করতে আসবে মেঘদের বাড়ি কাছের সব আত্মীয় স্বজন সবাই মেঘ দের বাড়ি মেঘ দুইটার দিকে বাড়ি ফিরলো। সবাইকে দেখে একপ্রকার অবাক হয়ে গেছে সে তো কিছু জানে না। তখনি মেঘের বড় ফুপি মেঘকে দেখতে পেয়ে বলল,,
“আরে মেঘ তুই এতো দেরি করে এলি কেন? ”
“ঐ ফুপি একটু কাজ ছিল। তোমরা হঠাৎ,,
“হঠাৎ কেন বলছিস আজ বিকেলে তো মুনের শুশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে তুই জানিস না।”
তখন মেঘ ছোট করে বলল,,
“ওহ আচ্ছা। আচ্ছা আমি রুমে যাই খুব টায়ার্ড লাগছে।”
মেঘ কোনরকম কথা কাটিয়ে ওপরে যেতে নিল। আজকের দিন সম্পর্কে ওর ধারনা নেই। ওর বাবাও কিছু বলেনি হয়তো মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে বলা হয়ে ওঠেনি। মেঘের সাথে মেঘের কাজিন দের ও তেমন কোন সম্পর্ক নেই। মূলত মেঘই চায় নি। মাঝে আজানের সাথে মেঘের দেখা হলো আজান মেঘকে দেখেই বলল,,
“আপু তোমার ব্যাগে চকলেট আছে?”
“না তো কেন?”
“খেতে ইচ্ছে করছে তোমার কাছে তো সবসময় থাকে।”
“আচ্ছা রুমে আয় রুমে আছে।”
তখনি ওর মা ওখানে এসে বলল,,
“আজান তোর বোনকে বলে দে আজ যেন ভালো একটা ড্রেস পরে আর আজ যেন নিচে যায়। ভং ধরে যেন রুমে বসে না থাকে এমনিতে তো কোন অনুষ্ঠানে বের হতে দেখা যায় না।”
‘আপনারা চান না তাই কোন অনুষ্ঠানে থাকি না। আপনাদের মতে শুভ অনুষ্ঠানে আমি থাকলে যাকগে যতপ্রকার কুসংস্কার। আমি আসবো তবে রেডি হতে হবে কেন? আজ আপুর শুশুরবাড়ি থেকে ডেট ফিক্সড করতে আসবে আমাকে দেখতে না।”
“বড্ড বেশি কথা বলো তুমি। যা বলছি তাই করবে। এমনিতে আমি তোমায় কিছু বলি না বলে তোমার ভালো লাগে না এখন বলছি যখন সমস্যা কোথায়।”
“কোন সমস্যা নেই আজান চল।”
মেঘ আজানকে নিয়ে হাটা ধরলো । মায়মুনা চৌধুরী ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে যেতে লাগলো। মেঘের রুমের আগে মুনের রুম সেখানে মুনকে সাজানো হচ্ছে। সবাই হাসি মজা করছে। মেঘ আজানকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো ওকে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল। ওখানে মেঘের কাকাতো ফুফাতো বোনরা সবাই আছে। মুন আয়নায় মেঘ কে দেখে বলল,,
“কিরে মেঘ তুই আমার রুমে ?”
“আমার রুমেই যাচ্ছিলাম এমনি এলাম।”
“ওহ আচ্ছা এখন ফিরলি বুঝি এখনো বোরকা হিজাব খুলিস নি। আজান কে পেলি কোথায় ও আমার রুমে ভাবা যায়।
“হুম এখন এলাম আজান আমার রুমে যাচ্ছিল তাই আমার সাথে এলো।”
“ওহ আমায় কেমন লাগছে?”
“মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর।”
“আচ্ছা যাই তাহলে তো মাই ডিয়ার লেডিস কাজিন মহল আপনারা কেমন আছেন?”
তখন মেঘের বড় ফুপির মেয়ে শায়লা বলল,,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো পিচ্চি তুই কেমন আছিস?”
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আর আপু তুমি আমাকে একদম পিচ্চি বলবে না। এত বড় মেয়েকে পিচ্চি বললে সব পিচ্চিরা লজ্জা পাবে। যাই হোক তোমরা থাকো আমি গেলাম।”
“আমি তো পিচ্চিই বলবো। আর মেঘ?”
“হুম!”
“আজ ও কি নিচে নামবি না।”
“নামবো তো আজ যে আমার আম্মাজান আমাকে নিচে যেতে বলেছে। আচ্ছা গেলাম থাকো তোমরা।
তখন মেঘের কাকাতো বোন শিফা বলল,,
“নিচে যখন যাবে তাহলে একটু সেজেগুজে যেও। নাহলে তো তোমাকে একদম কালো লাগবে। তা দেখে আবার কেউ না বলে তুমি এই বাড়ির মেয়ে না। কারন আমাদের বাড়ির মধ্যে তুমিই হচ্ছো যে নাকি কালো।”
তখন শায়লা বলল,,
“এই শিফা একদম চুপ কর। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখিস নি। আর হ্যা ও কালো না বুঝলি তোর ঐ ফ্যাটফ্যাটে সাদার থেকে আমার শ্যামবর্ন মেঘ ঢের সুন্দর । কি সুন্দর মায়াবী চেহারা তোকে দেখতেই তো পল্টি মুরগি লাগে। একদম মেঘের ব্যাপারে কথা বলবি না।”
এ কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসলো আজান বেশ জোরেই হাসলো । শিফা অপমানে চুপ করে রইল। তখন মেঘ বলল,,
“আহ হা আপু কি দরকার ছিল। আর সত্যি তো এবাড়ির সবথেকে কালো আমিই আচ্ছা বাদ দাও। তুমি শুধু শুধু ওকে বলছো।
“একদম নিজেকে ছোট করবি না।”
“আমি ছোট করছি না যাস্ট এমনিই বললাম। বাকি রইল কারো কথায় নিজেকে ছোট করা ওটা আমি কখনোই করি না। আমি আমিই, আমার এই আমি ভিশন পছন্দের বুঝতে পারলে তাছাড়া,, আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলেছে,
“নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে।”
[সুরা তীন : আয়াত-৪]
কথা হলো আমি যেমন তেমনই সুন্দর আল্লাহ আমাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন আমি ঐভাবেই সুন্দর।আমি অসুন্দর নই।তাহলে আমি কেন ছোট করবো নিজেকে ছোট করা মানে রবের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করা। যা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাকে এই সৃষ্টি কুলে শ্রেষ্ঠ জীব তথা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
“এই জন্যই আমার পিচ্চি কে আমি এত ভালোবাসি বুঝলি। আর শিফা এরপর থেকে যেন মেঘের ব্যাপারে কিছু না শুনি।
“আচ্ছা তোমরা থাকো আসছি ফ্রেশ হবো গরম লাগছে।”
বলেই মেঘ আজান কে নিয়ে চলে গেল বাবার আত্মীয় দের মধ্যে দুইজন কাজিন যারা নাকি মেঘের খেয়াল রাখে আদর করে তারা হলো শায়লা আর জায়মা। জায়মা এখনো আসেনি। রুমে গিয়ে মেঘ বলল,,
“ঐ যে ঐ ড্রয়ারে চকলেট আছে। তোর যত গুলো ইচ্ছে নিয়ে নে! আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
“আচ্ছা।”
আজান ড্রয়ার খুলে দেখলো অনেক রকমের অনেক গুলো চকলেট। ও সেখান থেকে তিনটি চকলেট নিল। আর একটা ছিড়ে খেতে লাগলো। মেঘ আসতেই আজান বলল,,
“আপু তুমি এতগুলো চকলেট এখানে রেখেছো কেন? ফ্রিজে রাখতে নষ্ট হয়ে যাবে না।”
“আসলে ওগুলো কাল এনেছি আজ একজন কে দেওয়ার কথা ছিল মনে নেই নিয়ে যেতে বিকেলে পার্সেল করে পাঠিয়ে দিতে হবে নাহলে মশাই আমার ওপর রাগ করবে।”
“কে রাগ করবে?”
“আম কিছুনা তোর জানতে হবে না তুই চকলেট খা।”
“আপু বাবার পক্ষ থেকে সরি!”
“কেন?”
“বাবার এখন অফিসে খুব চাপ চলছে এদিকে আপুর শুশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে সেটা বলতে ভুলে গেছে তুমি আবার বাবার ওপর অভিমান করো না। ঠিক আছে।”
“তা এটা বলতে কে বলেছে।”
“বাবা বলেছে তোমাকে বলে দিতে।”
“ওহ আচ্ছা আমি কিছুই মনে করি নি। আব্বা কোথায় এখন আসার পর দেখলাম না।”
“অফিসে ওনারা আসার আগে চলে আসবে।”
“ওহ আচ্ছা!”
“আপু!”
“হুম!”
“তোমাকে মা এত অবহেলা করে কেন?”
এটা শুনে মেঘ চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর বলে,,
“সময় হলে সব জানতে পারবি শুধু এটা জেনে রাখিস আমার মাও আমাকে একসময় খুব ভালোবাসতো এখনো বাসে কিন্তু প্রকাশ করে না বুঝলি। এখন তুই যা আর বড় ফুঁপিকে বল আমার খাবারটা ওপরে পাঠিয়ে দিতে নিচে অনেক লোক।”
“ঠিক আছে।”
বলেই আজান চলে যায় তখনি মেঘের ফোনে একটা মেসেজ আসে তা দেখে ও কিছু টা অবাক হয়,,
“আই এম ব্যাক ইন ইউর লাইফ হানি। গেট রেডি সি ইউ ভেরি সুন।”
তখনি ও নাম্বার টা নিয়ে ল্যাপটপে কি যেন করে কিছুক্ষণ পর কিছু একটা দেখে ও বাঁকা হেসে বলল,,
“আই এম ওয়েটিং ফর ইউ মিস্টার A.M.।”
~চলবে,,