#পর্ব_১
#ধূসর_রাঙা_মেঘ
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
‘আমি কিছুতেই ওই ছোটলোক টার সাথে এক টেবিলে খেতে পারবো না।
হঠাৎ করে তার ব্যাপারে এমন কথা শুনে অপমানে মুখ থমথমে হয়ে উঠে মেঘের। মাত্র খাওয়ার জন্য টেবিলে বসতে যাচ্ছিল সে । কিন্তু কথাটা শুনা মাত্র সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ছেলেটাকে একবার আড় চোখে পরখ করে মেঘ । ছেলের এমন কথায় ধমকে উঠে রুকনুজ্জামান বলে,,
এটা কি রকম ব্যবহার রুপ অসুস্থ মানুষের সাথে এ কিরকম আচরন। তোমার যদি এত সমস্যা হয় তাহলে তুমি তোমার রুমে চলে যেতে পারো। আমার সামনে অভদ্রতা আমি একদম সহ্য করবো না।
কথাটা শুনে রুপ রাগে ফেটে পড়ে আর চিল্লিয়ে বলে,,,
তুমি এই রাস্তার মেয়েটার জন্য আমাকে এই রাস্তার মেয়েটার সামনে অপমান করছো পাপা। আজ পর্যন্ত তুমি এতো উঁচু গলায় কথা বলো নি। আজ এই সামান্য মেয়েটার জন্য আমার ওপর চিৎকার করছো।
চুপ বেয়াদব ছেলে আরো আগেই তোমাকে শাষন করা উচিৎ ছিল নাহলে এই দিন টা আর দেখতে হতো না। এখন তুমি,,
এতক্ষন ধরে মেঘ চুপচাপ এদের কে দেখছিল তাকে নিয়ে এতক্ষন চুপ করে থাকলেও এখন ও বলল,,
প্লিজ আংকেল আমার জন্য আপনারা নিজেদের মধ্যে সমস্যা তৈরি করবেন না। ভাইয়া হয়তো ঠিক কথাই বলেছে তিনি হয়তো পরিবারের লোক ছাড়া অন্যদের সাথে বসে আনইজি ফিল করেন। সমস্যা নেই আংকেল আপনারা খান।
নিজের থেকে এত বড় মেয়ের মুখে ভাইয়া শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে রুপ। তার ওপর আবার আপনি করে বলছে ব্যাপারটা তার ঠিক হজম হচ্ছে না। রুকনুজ্জামান এর কথায় ধ্যান ভাঙে রুপের তিনি বলল,,
আমার ছেলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না ছোট মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলেছে তুমি প্লিজ বসো খেয়ে নাও। এমনিতেও তুমি অসুস্থ ঠিক মতো খেয়ে ওষুধ ও খেতে হবে।
আংকেল আমি কিছু মনে করি নি। আপনি প্লিজ নিজেকে ছোট ভাববেন না। তবে হ্যা খাবার টা আমি গ্ৰহন করতে পারছি না। কাল এক্সিডেন্ট এর সময় আপনি কি আমার ফোন বা ব্যাগ এনেছিলেন।
না তো আমি তোমার ফোন খেয়াল করি নি।
ওহ আচ্ছা। আপনারা খেয়ে নিন। ভাইয়া আমি যদি আপনাদের সোফায় বসি তাহলে কি আপনার সমস্যা হবে।
এবার রুপ মুখ বাঁকিয়ে বললো,,
আমি তোমার থেকে যথেষ্ট ছোট আমাকে আপনি করে বলছো কেন? জানো তো অতি ভক্তি চোরের লক্ষন।
এটা শুনেও মেঘের মুখের কোন ভাবান্তর নেই। তবে ছেলেটার কথায় সে বেশ মজা পেয়েছে সব মুখের ওপরে বলে। কিন্তু মেঘের ভাবগতি যেন সবাইকে অবাক হচ্ছে মেয়েটাকে মুখের ওপর অপমান করছে কিন্তু মেয়েটি রূপকে কতটা সম্মান দিয়ে কথা বলছে। মেঘ বিরস মুখেই বলল,,
আসলে আমি সহজেই কাউকে তুমি বা তুই বলতে পারি না। তারওপর অচেনা মানুষ দের তো একবারেই না। আমার জন্য তো আপনাদের খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। এবার বলুন সোফায় বসতে পারবো কিনা?
যেখানে ইচ্ছে সেখানে বসো আমার কি ?
তার মানে এখন টেবিলে বসলেও আপনার সমস্যা নেই।
এ কথা শুনে রুপের মুখ হা হয়ে যায় তবে এতে রুকনুজ্জামান এর পরিবারের বাকি সদস্যরা বেশ মজা পেয়েছে। কি সুন্দর করার জালে মেঘ রূপকে আটকে ফেলেছে। রুকনুজ্জামান এর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি বিদ্যমান। রুপের বড়বোন রুনা নিজেকে চেপে রাখতে না পেড়ে বেশ আওয়াজ করেই হেসে ফেলল। তা দেখে রুপ চোখ রাঙালো । রুপ একবার মেঘের চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল,,
কথার জালে ফাসাতে চাইছো। বেশ ধুরন্ধর তো তুমি।
এ কথা শুনে মেঘ আগের মতোই বলল,,
না একদম ফাঁসাতে চাইছি না। সমস্যা নেই আমি এখানে বসবো না। আমি শুধু বোঝাতে চাইলাম হুট করে না ভেবে কোন কথা বলবেন না। নাহলে আপনার অপছন্দের জিনিসটাও করতে দিতে হতে পারে। কথা বললে সবসময় ভেবে বুঝে সুনে বলবেন অপর পাশের লোকটা আপনার কথার ওপর কেমন আচরন করতে পারে সেটাও ভেবে নিবেন। তাই হোক অনেক সময় নষ্ট করলাম এখন আপনারা খাওয়া শুরু করুন প্লিজ।
তখন রুপের মা মিসেস রুকনুজ্জামান বলল,,
প্লিজ মামনি তুমি ও আমাদের সাথে খেয়ে নাও । রুপের জন্য আমি দুঃখিত তুমি তো অসুস্থ এমনিতেও কাল রাতেও তেমন কিছু খেতে পারো নি। খেয়ে মেডিসিন নাও।
তখন রুনা বলল,,
হ্যা খেয়ে নিন না আপু । রুপ অবুঝ মানুষ বুঝতে পারে নি। আপনি তো অসুস্থ।
মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
সমস্যা নেই আপু আমার এভাবে সমস্যা হচ্ছে না। আমার তেমন অসুস্থ বোধ ও হচ্ছে না। আমার এসবে অভ্যেস আছে। আপনারা খেয়ে নিন।
মাথা ফাটিয়েছে হাতেও ছোট খাটো ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছে। আবার ভাব দেখিয়ে বলছে তার অসুস্থ বোধ হচ্ছে না। আবার বলছে এসবে অভ্যেস আছে রোজ রোজ মাথা ফাটিয়ে বসে থাকো নাকি তুমি। এখন চুপচাপ টেবিলে বসে খেয়ে নাও। সবাই এত করে বলছে আবার আমাকেও ভিলেন বানাচ্ছো তুমি। এখন চুপচাপ খেতে বসে।
রুপের এমন কথায় মেঘ মুচকি হাসে। না পুচকে ছেলেটিকে যতটা খারাপ ভেবেছিল ততটা নয়। না বয়স বেশি নয় এই বার হয়তোবা ক্লাস টেনে বা ইন্টারে পড়ে। দেখতেও সুন্দর তবে ব্যবহার টা মোটেও ভালো মনে হচ্ছিল না কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ছেলেটা ভালো। সে মনে মনে নিজেকে ধমক দেয় তাকে অপমান করেছে আর সে কি ভাবছে আসলেও সে অদ্ভুত। মেঘ দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে রুপ বলল,,
বসতে বললাম তো! তুমি তো আচ্ছা পাজি মেয়ে সবার কাছে আমাকে খারাপ বানাতে চাইছো।
রুপের এমন কথায় তার পরিবার মুখ টিপে হাসছে। কিন্তু মেঘ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে শুধু বলল,,
এই জিনিসটা জুতো মেরে গরু দান হয়ে গেল না।
কথাটা শুনে সবার মুখ কালো হয়ে গেল। রুপের নিজের ও খারাপ লাগলো। রুপ কিছু বললো না মাথা নিচু করে নিল সত্যিই মেয়েটাকে প্রথমে ওভাবে বলা উচিত হয় নি। দেখে তো খারাপ মনে হচ্ছে না। সবাই চুপ দেখে মেঘ আবারও বলল,,
আপনারা খান আমি সোফায় বসছি আংকেল আপনার ফোনটা দিন আব্বাকে একটা ফোন দিব সে বোধহয় আমাকে খুঁজছে কালকে বাড়িতে খবরও পাঠাতে পারি নি চিন্তা করছে হয়তো।
রুকনুজ্জামান বিনা বাক্যে বাম পকেটে থেকে ফোন দিয়ে দিল। সবাই বুঝতে পেরেছে মেঘ সবার সাথে নরমাল ভাবে কথা বললেও তার আত্মসম্মান প্রখর । অপমান করে দুটো মিস্টি কথায় সে তার অপমান ভুলে যায় না। তাই তো এখন খেল না বোধহয় এই বাড়িতে খাবেও না। ও ফোন নিয়ে সোফায় বসে কানে ফোন নিলে রুপ বলল,,
ফোন লাউড স্পিকারে দাও বলা তো যায় না বাবার নাম করে তোমার পার্টনার কে ফোন দিচ্ছো নাকি যে ডা: রুকনুজ্জামান এর গাড়ির সামনে পড়ে আহত হয়ে তার বাড়িতে ঢুকে পড়েছি দুপুর বেলা সবাইকে অজ্ঞান করে বাড়ির সব টাকা পয়সা নিয়ে চম্পট দেব।
এ কথা শুনে মেঘের এতক্ষন কার নরমাল লুকটা ঘায়েব হয়ে রাগে পরিনত হলো। এখন খুব রাগ লাগছে সে রাগটাকে দেখাতে চাইছিল না বলে এতক্ষন ওরকম মুখ করেছিল । কারন তার রাগটা ভয়ংকর। সে কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে হ্যালো,,হ্যালো কে? শোনা যায় সে ফোনটা নিয়ে নাম্বার ডায়াল করেছিল রুকনুজ্জামান কিছু বলবেন তার আগে মেঘ ফোনটা লাউড স্পিকারে দিয়ে বলে,,
আসসালামু আলাইকুম আব্বা!
ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠ শোনা যায়,,
ওয়ালাইকুমুস সালাম আম্মা। আপনি কোথায় এখন আপনি কেমন আছেন। আপনার ফোন বন্ধ কেন? কাল থেকে আপনার কোন খোঁজ নাই । আপনি তো জানেন আমি চিন্তায় থাকবো তাহলে আমাকে জানালেন না কেন?
নিজের বাবার এরকম কথা শুনে মেঘের চোখ জ্বালা শুরু হয় কিন্তু সে কাদে না। মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
আসলে আব্বা ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আমার ফোনটা সেখানেই রয়ে গেছে কাল রাতে আমার তেমন জ্ঞান ছিল না তাই আপনাকে জানাতে পারি নি।
কি এক্সিডেন্টে! আপনি এখন ঠিক আছেন তো আম্মা। কোথায় আপনি আমি এখনি আসছি!
ড. রুকনুজ্জামান এর বাড়িতে কাল ওনার গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছিল। উনার বাড়ির কাছাকাছি ছিল বলে উনি আমাকে উনাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।একটু মাথায় চোট পেয়েছি আরেকটু হাতে তেমন গুরুতর কিছু হয় নি।
এম এন হাসপাতালের ড. রুকনুজ্জামান!
জি আব্বা উনিই।
আচ্ছা ঠিক আছে ওনার বাড়ির কাছাকাছিই আমি আপনাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম বিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাব।
সাবধানে আসবেন আব্বা আপনার মেয়ে ঠিক আছে।
এতক্ষন সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে মেঘের আর ওর বাবার কথা শুনছিল এভাবেও বাবা মেয়ের সম্পর্ক হয়। এখন রুপের একদম খারাপ লাগছে। তাই সে না খেয়েই ওপরে চলে গেল। বাকি সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলল সবাই কোনরকম এ খেয়ে উঠলো। মেঘের মাথাটা ভার হয়ে আছে। সে চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। রুকনুজ্জামান গিয়ে বলল,,
তুমি আমাকে চিনো?
মেঘ চোখ খুলে তাকিয়ে বলল,,
জি চিনি এমন কি আমার বাবাও চেনে আপনাকে!
কিভাবে?
আপনি ডক্টর মানুষ কিভাবে কোথায় মানুষের সেবা করেছেন হয়তো আপনার মনে নেই। কিন্তু যাদের সেবা করেছেন তাদের মনে আছে।
আমি কি তোমার বাবাকে চিনি যতদূর মনে হচ্ছে তোমাকে আমি বোধহয় দেখি নি। দেখলেও এর আগে আমাদের কথা হয় নি।
জি আমাদের কথা হয় নি। আমার বাবার বন্ধু আপনি সেই সাথে আমার বাবার রেগুলার ডাক্তার।
মানে বুঝলাম না তুমি কার কথা বলছো?
বিজনেস ম্যান আয়মান চৌধুরী আমার বাবা। আপনার কলেজ লাইফের বন্ধু।
রুপ ওপরে দাড়িয়ে সব শুনছিল ও বুঝতেই পারে নি। মেয়েটা এমন কেউ হবে। কালকের ময়লা কালো বোরকা আর হিজাব দেখে বুঝে নিয়েছিল ছোট ঘরের কোন মেয়ে হবে। কিন্তু এতো নামকরা বিসনেস ম্যানের সন্তান। বাড়ির সকলেই অবাক। সব থেকে অবাক যেন রুকনুজ্জামান নিজেই। তাই তিনি অবাক হয়েই বললো,,
কি! আয়মান তোমার বাবা কিন্তু আমি তো ওর পরিবারের সবাইকেই চিনি। তোমাকে তো কোনদিন দেখিনি।
আমার পারিবারিক বিষয়ে বা কোন অনুষ্ঠানে আমি কম থাকি। থাকলেও আমাকে চেনার কথা না। ওনার ছোট মেয়েকে কখনো দেখেছেন আপনি।
হ্যা দেখেছিলাম ছোটবেলায় তবে মেয়েটা কেমন যেন ? তার মানে তুমিই সেই আয়মানের ছোট মেয়ে।
জি আমিই সে কাসফিয়া আয়মান মেঘ।
তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নাও মামনি। তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।
আমি ঠিক আছি আংকেল। আব্বা এসে পড়লো বলে আব্বা আসলেই চলে যাব আপনারা প্লিজ বাধা দেবেন না।
মেঘ আর কোন কথা বলে না। রুকনুজ্জামান মেঘের মুখ দেখে বুঝতে পারে মেয়েটা যতোই বলুক সে ঠিক আছে আসলে তো মেয়েটা ঠিক নেই। এই মেয়েটা কিভাবে এখানে বসে সেটাই তো বুঝতে পারছে না সে এত অসুস্থ শরীর নিয়েও বসে থাকা যায়। অন্য কোন মানুষ হলে বিছানা ছেড়ে উঠতো না। তিনি আর কিছু বলে না । মেঘের খুব খারাপ লাগছে তার কাল দুপুর থেকে সে একেবারেই না খাওয়া। রাতে মিসেস রুকনুজ্জামান ওকে স্যুপ করে দিয়েছিল কিন্তু ও খেতে পারে নি। এতক্ষন রুপার মা আর বোন মেঘকে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। মেঘ কে একেবারে সুন্দরী বলা চলে না শ্যামবর্ন গায়ের রং লম্বা ও মিডিয়াম।বয়স চব্বিশ কি পঁচিশ হবে তবে চেহারায় মায়ায় কমতি নেই চোখ দুটো যেন কথা বলে। গায়ে শুভ্র রঙের গোল জামা মাথায় ব্যান্ডেজ থাকলেও মেয়েটা খুব সুন্দর করে ওরনা দিয়ে মাথাটা পরিপূর্ণ ঢেকে রেখেছে। ওরা বুঝতে পারল মেয়েটা বেশ ধার্মিক। কাল মেয়েটার পরনে কালো বোরকা কালো হিজাব আর নিকাব ছিল । কাল একটা অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে রুকনুজ্জামান এর গাড়ির সামনে হুট করে এসে পড়ে আর অজ্ঞান হয়ে যায় বাড়ি কাছাকাছি থাকায় ওকে বাড়িতেই নিয়ে আসে। বাড়ি এসেই মেয়েটার বোরকা হিজাব খুলতেই দেখা যায় মাথা থেকে র*’ক্ত পড়ছে। আর হাত দিয়ে র*ক্ত পড়ছে। রুকনুজ্জামান তাড়াতাড়ি করে মেঘের ট্রিটমেন্ট করেন। রাতে তেমন জ্ঞান ছিল না। ব্যান্ডেজ করার কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরলে রুপের মা ওকে ওকে কিছু খায়িয়ে ওষুধ খায়িয়ে দেয় মেঘ কোন কিছু করতে পারে না শরীরের সাথে না পেরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। রুপের মা ওর সাথে ছিলেন। সকালে নিচে আসতে পারবে কিনা জিজ্ঞেস করলে মেঘ বলে সে আসতে পারবে। সে আস্তে আস্তে নিচে এসে টেবিলে বসতে নিবে তখনি এবাড়ির ছেলে রুপ ওগুলো বলে তারপরেই এগুলো ঘটে। হুট করেই পঞ্চাশউর্ধ্ব লোককে দেখা যায় তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে ঢুকতে। আর ঢুকেই মেয়েকে বিধস্থ অবস্থায় দেখে বলল,,
মেঘ আম্মা আপনি ঠিক আছেন।
বাবার এমন কথায় মেঘ মুচকি হেসে বলল,,
আব্বা আপনাকে ফোনে বললাম না আপনার মেয়ে ঠিক আছে। দেখুন আমি সোফায় বসে আছি ঠিক না থাকলে তো বিছানায় শুয়ে থাকতাম। চলুন বাড়ি যাবো।
যাবো তো আম্মা। আগে রুকনের সাথে কথা বলে নিই। আর রুকন আমার মেয়েটা তোর গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে তুই আমাকে জানাবি না।
তখন রুকনুজ্জামান বললেন,,
আমি জানতাম নাকি ও তোর মেয়ে । জানলে তো আগেই বলতাম আমি ওকে চিনি নাকি।
তাও ঠিক শুকরিয়া ভাই আমার মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য।
আমার গাড়ির সাথে তোর মেয়ে এক্সিডেন্ট হয়েছে তুই আমাকে বলবি কেমন করে গাড়ি চালাই তা না বলে বলছিস ধন্যবাদ।
শোন ওটা একটা এক্সিডেন্ট। কোন চালকই ইচ্ছে করে কাউকে আহত করে না। তার ওপর তুই ডাক্তার মানুষ তুই কি করে একজনের ক্ষতি করবি।
এ কথা শুনে রুকনুজ্জামান চুপ মেরে গেলেন। কিছু বললেন না তখন মেঘ বলল,,
আব্বা!
জি আম্মা!
চলেন না এখন বাড়ি যাই।
হুম।
আয়মান চৌধুরী মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন মেঘ বাবার কাছে আস্তে আস্তে বলল,,
আব্বা আমায় খুব শক্ত করে ধরবেন প্লিজ। খুব খারাপ লাগছে আব্বা তবে এই বাড়িতে আর এক মিনিট ও থাকবেন না। এই বাড়িতে আপনার মেয়েকে কেউ অপমান করেছে।
এই কথা শুনে আয়মান চৌধুরীর চোখ জ্বালা করতে শুরু করলো তিনি একবার রুকনুজ্জামান এর দিকে তাকালেন কিন্তু কিছু বললেন না। তখনি রুপ কোথা থেকে উদয় হলো আর মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,
আই এম সরি!
মেঘ থমথমে মুখে করেই বলল,,
ইসলাম সম্পর্কে আপনার জানার পরিধি কতটুকু বলুন তো ?
রুপ মুখ ছোট করে বলল,,
খুবই নগন্য বলতে পারেন!
তাহলে শুনে নিন তাতে আপনার জানার পরিধি বাড়বে হাদিসে বলা হয়েছে,,
“না জেনে তোমরা কারো ওপর খারাপ ধারণা রেখো না। এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ ।
– সহীহ বুখারী –৫১৪৩
আরেকটা হাদিসে ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (মন্দ) ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, (মন্দ) ধারণাই হচ্ছে সব থেকে বড় মিথ্যা।” (বুখারী ৬০৬৬, মুসলিম ০২৬৩)
আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। আপনি নিজেকে চিন্তাধারা পাল্টান ভাইয়া । মানুষের সবকিছুই তার চিন্তাধারার ওপর নির্ভর করে বলে আমি মনে করি। খারাপ লাগলে দুঃখিত আসি আল্লাহ হাফেজ। আব্বা চলুন।
আয়মান চৌধুরী বুঝতে পারলেন এর সাথেই কিছু হয়েছে তিনি সবার থেকে বিদায় নিয়ে মেয়েকে শক্ত করে ধরে নিয়ে চলে গেলেন। রুকনুজ্জামান কিছু বলবে তার আগেই রুপ বলল,,
কিছু বলো না পাপা তোমার ছেলে মানছে সে ভুল করে ফেলেছে এখন প্লিজ আমায় কিছু বলো না।আই এম সরি ফর এভরিথিং কিন্তু তুমি ও তো জানো তোমার ছেলে এমনি এমনি কিছু করেনা। কোন কারন নিশ্চয়ই আছে। তবে এখানে ওনার কোন দোষ নেই। আমার বোঝার ভুল হয়েছে।
_________
আয়মান চৌধুরী মেঘকে নিয়ে বসতেই মেঘ বলল,,
আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি আব্বা?
অবশ্যই আম্মা! আপনার কি খুব খারাপ লাগছে হাসপাতালে যাবো।
মেঘ সম্মতি পেয়ে বাবার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজে বলল,,
না আব্বা হাসপাতালে না। আমার খুব ক্ষুদা লাগছে আব্বা কাল দুপুরের পর তেমন কিছুই পেটে পড়ে নি। শুধু কালকে রাতে শুধু একটু স্যুপ আর ওষুধ ছাড়া।
এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরীর চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। এই মেয়েটা কখনো তার কাছে থেকে লুকায় না। তার মেয়েটার খুদা লাগছে অথচ সে আজ সকালে বাড়িতে বসে খেয়েছে সব স্বাভাবিক রাখতে। তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে সেই সাথে অপরাধ বোধ ।তিনি ড্রাইভার কে বললেন,,
তাড়াতাড়ি কোন একটা ভালো রেস্টুরেন্টের সামনে চলো আমার আম্মার খুদা লাগছে।
আপনি খেয়েছেন আব্বা?
হুম খেয়েছি।
নিজেকে অপরাধী ভাববেন না আব্বা। আমি জানি বাড়ির সবকিছু ঠিক রাখতেই আপনি সব স্বাভাবিক ভাবে করেছেন। বাড়িতে কি বলেছেন আপনি?
বলেছি আপনার ফ্ল্যাটে গিয়েছেন।
বিশ্বাস করেছে সবাই বিশ্বাস করলেই কি আর না করলেই কি! আর তাদের তো আমার উপস্থিতি নিয়ে তাদের কিছু যায় আসে না। আমি বাঁচলাম না মরলাম।
কাল কি হয়েছিল আম্মা?
কেউ আমার পিছু নিয়েছিল আব্বা। তবে বুঝতে পারি নি সে কোন তরফের লোক। একটা সময় আমাকে ধাওয়া করলেই আমি দৌড়াতে থাকি আর হুট রুকনুজ্জামান এর গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়।
আপনার কি মনে কোনদিকের হবে লোকটা ?
বুঝতে পারছি না। চারদিকে যেন মায়াজাল দিয়ে ঘেরা। আচ্ছা আপনি আপাতত সব চিন্তা বাদ দিন। চুপ থেকে রেস্ট নিন।
সেই জো কি আছে বিকেলে ছুটতে হবে আবার!
এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও যাবেন না আপনি। ওহ হো আসার সময় রুকনের থেকে ওষুধের কথা জানা হয় নি। একটা ফোন দিই ?
এক মিনিট আব্বা আপনাকে আমি ফোন দিয়েছিলাম সেই নাম্বার টা আপনার ফোনে সেভ করা ছিল?
কই না তো আমি আপনার কথা শুনে বুঝতে পেরেছি যে আপনি। আর আপনার কথা শুনেই বুঝতে পারলাম আপনি ওর বাড়িতে। কিন্তু রুকনের নাম্বার তো আমার ফোনে সেভ করা আছে।
ওকে আব্বা যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। আপনার নাম্বার ও তার ফোনে ছিল না। আপনাকে ওনার থেকে ওষুধের ব্যাপারে জানতে হবে না আমরা একটা হাসপাতালে গিয়ে ওখান থেকে ডক্টর দেখিয়ে ওষুধ নিব।
হঠাৎ এরকম কেন বলছেন আম্মা আপনি তো হাসপাতাল এ যেতে বারন করলেন। এর পেছনে কি কোন কারন আছে আম্মা।
কারন তো আছেই আব্বা আপনাকে পরে বলবো।
স্যার রেস্টুরেন্ট এসে গেছে !
ড্রাইভারের কথায় মেঘ চোখ খুলে বলে,,
আব্বা আগে খেয়ে নিই তারপর মগজটাকে আরেকটু ধোলাই করতে হবে।
আয়মান চৌধুরী আর কিছু বললেন না মেয়েকে ধরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খায়িয়ে দিলেন। খাওয়া শেষে গাড়িতে এসে বসল তারপর হাসপাতাল থেকে ডক্টর দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে খেল। মেঘ গাড়িতে এসে বসে বলল,,
আব্বা যেখানে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেখানে চলেন তো সামনে গিয়ে বা দিকে একটা ফাঁকা রাস্তা আছে সেখানে।
ওখানে গিয়ে কি করবেন?
ওখানে আমার মোবাইল আর ব্যাগ পরে আছে হয়তো ওখানে মানুষের আনাগোনা কম চলেন তো গিয়ে দেখি আছে কি না তার থেকে বড় কথা কিছু পরিস্কার হওয়ার আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
মেঘরা ওখানে গেল দেখল ব্যাগ আর ফোনটা ওখানেই পরে আছে আর জায়গা টা বেশ নির্জন । এখানে গাড়িও খুব একটা চলে না। যা বোঝার বুঝে গেল। ওরা সেগুলো নিয়ে বাড়ি গেল। বাড়িতে ঢুকতেই একজনের কথা শুনে মেঘ আর ওর বাবা দায়িয়ে পরলো,,
ঐ যে জমিদার কন্যা এসে পরেছে কখন বাড়ি যায় কখন আসে তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না। এত নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে দেখিনি জীবনে বলি মেয়ে কি বাড়িতে শুধু সেই নাকি যে তার জন্য আলাদা ফ্ল্যাট কিনতে হবে আর বলা নাই কওয়া নাই সেখানে গিয়ে থাকতে হবে। ও বাবা আবার দেখি মাথা আর হাত ও ফাটিয়ে এসেছো তারমানে মার’পিট করেছো বুঝি। অবশ্য এর থেকে ভালো কিছু আশা করাও অন্যায়। আমি বুঝি না এই মেয়ের ওপর তোমার এত আদিখ্যেতা কিসের?
এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী বলল,,
চুপ থাক আয়না নাহলে খারাপ হয়ে যাবে। বোন বলে ভাবিস না সবসময় তোকে ছেড়ে দিব। আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি আমার মেয়েকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি তোর যদি ইচ্ছে হয় তোর মেয়েকে কিনে দে না। আমার তো মনে হয় না আমার বোনের বিয়ে কোন ফকিরের সাথে দিয়েছি। আমার মেয়ে আমি তা ইচ্ছে তাই করবো তোর তাতে কি?আর এখন আমি তর্ক করতে চাইছি না মেঘ অসুস্থ। মেঘ আম্মা চলেন ওপরে চলেন।
অপমানে আয়না চৌধুরী চুপ মেরে গেলেন তখন মেঘের মা মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
আজ অফিসে যাও নি ?
না যাওয়ার পথে শুনলাম মেঘ এক্সিডেন্ট করেছে তাই ওকে বাড়ি নিয়ে এলাম।
মেঘ এতক্ষন শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। মায়ের দিকেও একবার পরখ করে নিয়েছে এ কেমন মা? চোখটা জ্বালা করছে। বাড়িতে এখন তেমন কেউ নেই সবাই সবার কাজে বেরিয়েছে ওর মা চাচি আর ওর ছোট ফুফু এসেছেন কিছুদিন ধরে । মেঘ বলল,,
আব্বা আমি রুমে গেলাম আপনি বরং এখন অফিসে যান।
আমি ওপরে দিয়ে আসি!
আমি পারবো আব্বা।
মেঘ আস্তে আস্তে হাটা ধরলো। মেঘের মা একদৃষ্টিতে মেয়েকে দেখছেন হাজার হোক মা তো মেয়ের এই অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে কিন্তু এগুচ্ছে না। সিঁড়িতে ওঠার সময় মেঘ পরে যেতে নিল মায়মুনা চৌধুরী একটু এগিয়ে গেলেন মেঘ নিজেকে সামলিয়ে তাকে দেখতে পেয়ে বলল,,
যে আমার কাছে আসতে দ্বিধাবোধ করে তার আমার কাছে না আসাই ভালো।
মেঘ তাড়াতাড়ি করে ওপরে উঠে গেল। আয়মান চৌধুরী সব দেখেও কিছু বললো না। এ বাড়ির অন্য সবার সাথে মেঘের সম্পর্কের সমীকরণ সে আজ ও বুঝতে পারে নি। মেঘ রুমে গিয়েই শুয়ে পরলো শরীর টা একটু বেশিই খারাপ বুঝতে পারছে আজকে এত খারাপ লাগছে কেন এর আগেও বেশ কয়েকবার আ*হত হয়েছে এত খারাপ লাগে নি। শরীর খারাপ নাকি মন খারাপ। ফোনটা অন করতেই কয়েকটা মেসেজ চোখে পরলো মেঘের ও বিরবির করে বলল,,
এত ভালোবাসা দিয়ে কি হবে নিজের পরিবারেই কাছেই তো পরাজিত সৈনিক আমি।
~ চলবে,,,,,