ধর্ষিতা_বউ
পার্ট: ১২
_গোসল করেই ওই বাড়ীর দেওয়া শাড়ীটা পরেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো প্রাপ্তি।নিলিমা বেগম মেয়েকে দেখে মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে মেয়েকে টেনে এনে আয়নার সামনে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে নিজের চোখেই নিজেকে দেখ কতোটা ভালো লাগছে তোকে।
প্রাপ্তি-(মুখে বিরক্তির ভাব এনে)ওহ্ আম্মু ছাড়োতো। ভালোলাগছে না! আমাকে যতোই সুন্দর দেখাক না কেনো তার পরোও সবাই বলবে আমি ধর্ষিতা।
নিলিমা বেগম -তোকে একটা কথা বললে একটুও শান্তি পাইনা।তুই এইটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য জায়গা নিয়ে যাস।এখন চল আসিফ তোদের জন্য এখনো খায়নি। খেয়েনিবি চল।
আসিফের কথা শুনে প্রাপ্তি নিলিমা বেগম কে কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে চলে গেলো। প্রাপ্তিকে সবাই দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তির মামী -আসিফ দেখ তোর বোনকে। একদম পরীর মতো লাগছে।মনে হচ্ছে ভুলে কোনো পরী এই বাড়ীতে চলে আসছে। আসিফ পিছনে ফিরে প্রাপ্তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার বোনকে সত্যিই পরীর মতো লাগছে।প্রাপ্তিকে দেখে আসিফের নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি এসে গেছে।প্রাপ্তি এসে আসিফের সামনে দাঁড়াতেই আসিফ প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেঙে পড়লো।কান্নার আওয়াজ শুনে আজাদ সাহেব রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসলো।আজাদ সাহেব ভাইবোনের এমন দৃশ্য দেখে নিজের চোখ দুটো ও পানিতে টলমল করছে।অরণী ও রুম থেকে এসে আসিফকে ধরে সে কাঁদতে শুরু করলো।
প্রাপ্তির কাকী আসিফের কাঁধে হাত রেখে আসিফ আজকে দিনে কাঁদতে নেই বাবা।তোর বোনেরা তো একসাথে কোথাও চলে যাচ্ছে না।
নিলিমা বেগম নিজের মনকে শক্ত করে এই তিন জনি ছাড়। ছাড় বলছি এতো কান্নাকাটি করার কি আছে? কই আমি তো কাঁদছি না।তাহলে তোরা কেনো কাঁদছিস?
আসিফ দুই বোনকে ছেড়ে দিয়ে না খেয়েই রুমে চলে গেলো।প্রাপ্তি তখনো কাঁদতে ছিলো।
নিলিমা বেগম -দেখেছিস ছেলের কাণ্ড না খেয়েই চলে গেলো।আমি কি ওকে খারাপ কিছু বলেছি?
প্রাপ্তি -আম্মু খাবার টা আমার হাতে দাও আমি ভাইয়ার রুমে যাচ্ছি।প্রাপ্তির মামী খাবার প্লেটটা প্রাপ্তির হাতে দিয়ে বললো সকাল থেকেই ছেলেটা কিছু খায়নি।খাবেই বা কি করে? দেখ খাওয়াতে পারিস কিনা।
প্রাপ্তি মামী কে কিছু না বলে খাবারটা নিয়ে আসিফের রুমে গিয়ে দেখে রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে। প্রাপ্তি লাইট অন করে দেখে আসিফ খাঁটের সামনে নিচে হাত পা গুটে বসে আছে।প্রাপ্তিও সামনে এসে বসেছে প্রাপ্তিকে বসতে দেখে আয়ান মাথাটা উঠিয়ে কিরে,,, তুই লাইট অন করলি কেনো?
প্রাপ্তি -তুই কি মনে করছিস তুই শুধু একা তোর বোনদের ভালোবাসিস।ওরা তোকে ভালোবাসেনা?তাই একা একা থাকতে চাইছিস।
আসিফ -আমি তা তো একবারো বলিনি।তোদের ছাড়া আমি এই বাড়ীতে থাকবো কি করে?
প্রাপ্তি -পরে দেখা যাবে কিভাবে থাকবি আগে খেয়েনে।
আসিফ -নারে,,,তুই খায়েনে আমি খাবোনা।
প্রাপ্তি -তুই কি করে ভাবলি তুই খাবিনা আমি খেয়ে নিবো।খেলে এক সাথেই খাবো।
হাঁ করতো আজ আমি তোকে খাইয়ে দিবো।
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান চোখ মুছে ঠিক আছে তাহলে খেতেই পারি।
আবিদ চৌধুরী রেডি হচ্ছে সন্ধ্যার আগেই বাড়ী থেকে বের হয়ে যাবে।সবার মন খারাপ করে আছে।আয়েশা বেগম ব্যাগ গুছিয়ে ড্রইংরুমে নিয়ে এসেছে।বাসায় অনেক গেস্ট সবাই ড্রইংরুমেই দাঁড়িয়ে আছে।
আবিদ চৌধুরী -রফিক ব্যাগ গুলো গাড়ীতে রেখে আসো।সবার দিকে তাকিয়ে, তোমরা কেউ মন খারাপ করার দরকার নেই।মাত্র এক মাসেরই তো ব্যাপার আর আমি তো চেষ্টা করবো আরো আগেই আসার জন্য।(আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে)যে আসছে মনে করবে সে তোমার ঘরের লক্ষ্মী আর ঘরের লক্ষ্মীকে যত্ন করেই ঘরে তুলবে। আকাশ! তোমাকে তো আর কিছু বলতে হবে না।সবাইকেই বলছি ভালো ভাবে বিয়েটা ইনজয় করো।আমার কথা ভেবে কেউ মন খারাপ করবে না।
কথা গুলো বলেই আবিদ চৌধুরী চলে গেলো।সবাই যে যার কাজে লেগে গেলো।
ঝিনুক -ভাবী! এই ভাবী! মেয়েদের বাড়ীতে একটা ফোন দিয়ে দেখো কি অবস্থা।আমাদের তো যাওয়ার কথা ছিলো ওনাদের বলে দাও এখন আর যাবো না।
সুমি -চিন্তা নেই আমি সব আগেই বলে দিয়েছি আসিফ কে।ঝিনুক আপু এক কাজ করো তুমি আয়ান কে রেডি হতে বলো। অনুষ্ঠান যখন হবে মা বলেছে তাড়াতাড়িই করতে। বেশী রাত জেনো না হয়।
ঝিনুক -আচ্ছা আমি দেখছি। ভাবী রুমকি কে দেখেছো?
সুমি -হুম আয়ানের কাছেই আছে।আর তুমিও যাও।আয়ান কে তাড়া দাও না হলে ও আজও লেট করবে।
ঝিনুক সুমির কথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে আয়ানের রুমে চলে গেলো।
পার্লার থেকে লোক এসে দুই বোনকে সাজিয়ে দিয়ে গেলো।প্রাপ্তির না চাইলেও সাজতে হয়েছে। আসিফ অনেক বার বলাতে ভাইয়ে কথা ফেলতে না পেরে সেজেছে। নিজের কাছে খুব অসস্থি লাগছে প্রাপ্তির।আর অরণী! সেই এতো চঞ্চল মেয়ে হয়েও কেমন জানি নিরব হয়ে আছে।সব কিছুতেই চুপচাপ থাকে।প্রাপ্তির মনে বার বার একটাই প্রশ্ন জাগে উঠে কোথাও কোনো কিছু গোলমাল আছে।কিন্তু এই প্রশ্নটা কেনো আসে।হাজার বার চেষ্টা করলেও ভুলতে পারিনা।কি করে ভুলবো অরণীকে দেখলে তো ভুলা যায় না।প্রাপ্তি কথা গুলো ভাবছে আর অরণীর দিকে তাকিয়ে আছে।
অরণীর নজর পড়তেই, মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে কিরে আপু এইভাবে তাকিয়ে আমায় কি দেখছিস?
প্রাপ্তি -তোকে ! আমার সেই ছোট্র বোন আজ কতো বড় হয়ে গেছে। জানিস অরণী আমি কিন্তু আজ একটা জিনিস খুব মিস করছি।
অরণী -কি মিস করছিস আপু?
প্রাপ্তি -সেই চঞ্চল অরণীকে।যে অরণী সবার নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতো।কোনো বিষয় তার কাছে সিরিয়াস ছিলোনা। আমি সেই অরণীকে মিস করছি আজ যে অরণী এই আপুকে ছাড়া তার দিনই শুরু হতো না।আচ্ছা অরণী কি আমার কিছু লুকাচ্ছে?
অরণী -আপু তুইইতো আমার থেকে দূরে সরে গেলি।হ্যাঁ হয়তো তার কারণ আছে।এইসব বাদ দে আপু আজ আমি অতীত কে এইখানে টেনে নিয়ে আসতে চাইনা।আর হ্যাঁ আমি তোর কাছে কিছুই লুকাচ্ছিনা।
কথা গুলো শেষ করে অরণী ভাবছে, আপু মিথ্যা টা বলার জন্য আমায় ক্ষমা করেদিস।আমি তোর ভালো চাই।সিয়াম হয়তো সব কিছু জেনে বুজেই এই বিয়েটা করেছে।হয়তো আমাকে ওর ভালো লাগেনি।
এমন সময় আজাদ সাহেব এসে বললো অনুষ্ঠান শুরু করা হক। আসিফ কোথায় গেলো প্রাপ্তি আর অরণী কে নিয়ে ছাদে আসতে বলো।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।
প্রাপ্তির মামা -ওই তো আসিফ এসে গেছে।এই আসিফ তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি? চল ওদেরকে নিয়ে যাই।
তিন বাড়ীতেই হৈচৈ চলছে।সবার মনে আনন্দের রেখা থাকলে ও প্রাপ্তি আর অরণীর মনে নেই।প্রাপ্তির মনে শুধু একটাই চিন্তা তার জীবনে কি কোনো নতুন ঝড় আসছে? ভাইয়া কে এতো করে জিজ্ঞাস করলাম আমার কোনো আনসার সে দিলোনা।জানিনা কাল আমার জীবনে কি ঘটতে চলেছে।সিয়ামের সাথে আমার একটু কথা বলা উচিত ছিলো কিন্তু তাও পারলাম না।
মিনু! এই মিনু! তুই কতো পিকচার উঠাবি আর অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে গেলো।আয়েশা বেগমে কথা শুনে মিনু অট্র হাঁসি দিয়ে আম্মু আমাদের বাড়ীতে এটাই শেষ বিয়ে।আবার কবে বিয়ে হবে না হবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে।
সুমি -আচ্ছা এখন এইদিকে আসো।
মিনু -ঝিনুক আপু! দেখ ভাবী কে আজ কতো সুন্দর লাগছে।কিন্তু আমার ছাগল ভাইটা কাজ নিয়ে পড়েই আছে বউয়ের দিকে কোনো খবর আছে?
রাহাত-মিনু যা বলো না কেনো আজ যদি আয়ান হতো বউয়ের পিছু আর ছাড়তোনা।
আয়ানের এইসব কথায় কোনো মন নেই।তার চোখে প্রাপ্তির মুখ বার বার ভেসে উঠছে।হুলুদের সাজে আজ তাকে কেমন লাগছে একটা বার যদি দেখতে পেতাম। নিশ্চয় পরীর মতোই লাগছে, আমার বউ বলে কথা।কাল গিয়ে আগে ওকে দেখবো।
এইদিকে সিয়ামের মনেও একি কথা । কাল যেই করেই হোক আগে গিয়ে আমি অরণী সাথে কথা বলবো তার পর বিয়ে।তিন বাড়ীতেই গাঁয়ে হলুদের সব নিয়মনীতি শেষ করতে করতে ভোর হয়ে গেলো।
চলবে,,,,,,