ধর্ষক_থেকে_বর_পর্ব__৪র্থ_
.
রুমে এসে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেটা ধরিয়ে খুব দূরততার সাথে টানতে শুরু করলাম।নিজের শরীরের ভিতর থাকা কষ্ট গুলাকে পুড়িয়ে ফেলছি আর সিগারেটের ধোয়ার সাথে সেগুলো বাষ্প করে উড়িয়ে দিচ্ছি।হঠাৎ আম্মু আমার রুমে চলে আসলো।এসেই আমার গালে একটা বসিয়ে দিল।
— ঠাসসসসসসসসসসসসসস।
— আমি মাথা নিচু করে বসে
আছি।
— তুই আবার সিগারেট খাচ্ছিস।
— কতোদিন না বলেছি এইসব কিছু
খাবি না।
— একটা মেয়ের জন্য কেন নিজের
জীবন এভাবে শেষ করছিস?
— তোর আব্বুকে তো চিনিসই ওনি
একটার যা বলে তাই করে।
— তুই তোর আব্বুর পছন্দ করা মেয়েকেই
বিয়ে কর।তোর আব্বু কখনো তোর খারাপ
চাইবে না।
— উফফফ আম্মু তুমি আমার রুম
থেকে যাও তো।আমাকে একটু
একা থাকতে দাও।
— হু যাচ্ছি।তবে কথাটা ভেবে দেখিস।
.
আম্মু রুম থেকে চলে গেল।আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।তাই ঘুমানোর জন্য
বিছানায় শুয়ে পড়লাম।কিন্তুু কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না।চোখটা
বন্ধ করলেই সেই মেয়েটার অসহায় মুখটা ভেসে উঠছে।
আজ সারা দিনে লামিয়া একবারও বাসা থেকে বের হয়নি।কিভাবেই
বা বের হবে সে।তার এই ধর্ষিতা মুখ কাকে দেখাবে কেউ বা তার অসহায়ত্বটা বুঝবে।সে যে এখন ধর্ষিতা।ধর্ষিতাকে সমাজের কেউই
পছন্দ করে না।আমরা সবাই তাদের ঋূণা করি।একজন মেয়ে কি কখনো নিজের ইচ্ছায় ধর্ষিতা হয়।কখনোর নয়।একজন নিরহ মেয়েকে ধর্ষণটা কিন্তুু আমরা সমাজের মানুষরাই করে থাকি।অথচ আমরায় তাদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখি। কালকে রাতের পর থেকে লামিয়া সম্পর্ণ নিস্তদ্ধ হয়ে গিয়েছে।লামিয়া আর কারো সাথে তেমন কথা বলে না।তার জীবন থেকে যেন হাসি মুখটাই সম্পর্ণ হারিয়ে গিয়েছে।দিনের বেশী সময় সে রুমের ভিতরই নিস্তদ্ধ হয়ে বসে থাকে।একদিন লামিয়া তার রুমে বসে আছে।
এমন সময় লামিয়ার বাবা তার রুমে এসে বসলো:
— লামিয়া তোকে একটা কথা বলার
জন্য আমি এখানে এসেছি।
— কি কথা আব্বু বলো।
— আমি তোর বিয়ের জন্য পাত্র
ঠিক করেছি।
— বিয়ের কথা শুনেই লামিয়ার শরীরটা
কেঁপে উঠলো।
— বিয়ে।
— হ্যা।বিয়ে।
— কিন্তুু আব্বু আমি তো এখন বিয়ে
করবো না।
— কেন?
— আমি আরো পড়াশোনা করতে চাই।
পড়াশোনা করে নিজের পায়ে
দাড়াতে চাই।
— হু তুই পড়াশোনা করবি কর তোকে বাধা
দিচ্ছে কে?ওদের সাথে আমার কথা হয়েছে।
ওরা তোকে বিয়ের পরও পড়াবে।
— কিন্তুু আব্বু তবুও আমি এখন বিয়ে
করবো না।
— কিন্তুু কেন?
— আমি এখন বিয়ে করতে চায় না।(মেয়েটা কিভাবেই
বা তার বাবাকে বোঝাবে যে সে ধর্ষিতা।তাই সে
বিয়েটা করতে রাজি হচ্ছে না)
— আমি ওদেরকে কথা দিয়েছি।ওরা কাল তোকে
দেখতে আসবে।এর মাঝে কোন ঝামেলা হোক
তা কিন্তুু আমি চায় না।কথাটা মনে থাকে যেন।
.
কথাটা বলেই লামিয়ার বাবা রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।লামিয়া থ হয়ে বসে
পড়লো।দেখতে দেখতে তার দুচোখে পানি চলে এসেছে।তার এই জীবন আর সহ্য হয়তেছে না।মনে হচ্ছে এই সার্থ্য পর পৃথিবী ছেড়ে অজানা একটা দেশে চলে যেতে।যেখানে কোন যৌন ক্ষুধা থাকবে না।থাকবে না এদের মতো মানুষ রূপি পশুরা যারা মেয়ে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়ে।তাদের এই দেহটাকে ভোগ করার জন্য।লামিয়া উচ্চ স্বরে কাদছে কিন্তুু কেউ তার কান্না শুনতে পারছে না।সবাই শুধু মানুষের বাহিরটাই দেখে কিন্তুু কেউ কখনো কোন মানুষের ভেতরটা দেখে না।আজ নিজের অনিচ্ছা সত্যেও শাকিল তার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছে।আজ শাকিলের মুখে একটুও হাসি নেই।হাসি থাকবেই বা কি করে।সে যে এখন ধর্ষক।একটা মেয়ের জীবন সম্পর্ণ নষ্ট করে ফেলেছে সে।চোখের সামনে শুধু সেই মেয়েটার মুখটা ভেসে উঠছে।ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমেওই মেয়েটার কাছে ছুটে যেতে।কিন্তুু নিজের বাবার সম্মানের কথা ভেবে সেটাও পারছে না।দেখতে দেখতে হঠাৎ করে গাড়িটা লামিয়াদের বাসার সামনে দাড় করালো।শাকিল তো পুরাই টাসকি খেয়ে গেল।আব্বু গাড়িটা এখানে দাড় করালো কেন?তবে কি লামিয়া আব্বুুকে সব কথা বলে দিয়েছে।আল্লাহ বাচাও আমারে।জানি না এখন আমার কি হয়ে।
আমি আব্বুকে বললাম:
— আব্বু গাড়িটা এখানে দাড় করালে কেন?
— এইটায় তো আমার বন্ধুর বাসা।
— লামিয়ার ছোট বোনের সাথে আমার
বিয়ে নাকি। যদি তায় হয় তবে তো আমি
পুরাই বাঁশ খেয়ে যাবো।
— কিরে ভাইয়া তুই কি গাড়ি থেকে
নামবি না নাকি?(সাদিয়া)
— হু নামছি তো।
.
তারপর গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে ঢুকলাম।আমাদের সকলকে একটা রুমে বসতে দিয়ে সকলকে খাওয়ার জন্য সরবত দেওয়া হলো।আমি সরবতটা মুখে দেব এমন সময় মাথায় উয়া বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বউকে নিয়ে আসা হলো।লামিয়া কই লামিয়াকে তো দেখতেছি না।লামিয়ার কথা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।জানি না মেয়েটা কখনো আমাকে ক্ষমা করবে কি না।সকলের কথায় মেয়েটার মাথার ঘোমটা টা খুলে দেওয়া হলো।ঘোমটা টা খুলতেই আমি থ হয়ে গেলাম।মেয়েটাকে দেখেই বড় একটা ঝাটকা খেলাম।আমার হাত থেকে সরবতের গ্লাসটা নিচে পড়ে গিয়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আরে এইটা আমি কি দেখছি।এইটা তো লামিয়া।তার মানে লামিয়ার সাথেই আমার বিয়ের কথা চলছিল।যাক একদিক থেকে ভালই হবে।আমি নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্তটা করার একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম।লামিয়ার দিকে লক্ষ
করলাম।আমাকে দেখেই লামিয়া রাগে লাল হয়ে গেল।মনে হচ্ছে যেন আমাকে কাছে পেলে সম্পর্ণ চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো।আমি বললাম:
— আমরা কি একটু ৫ টা মিনিট আলাদা
কথা বলতে পারি?
— হু পারবে না কেন।তোমরা দুজন
দুজনকে ভাল করে চিনে নাও।
— আপনি একটু ছাদে আসবেন?
.
আমি বাসার ছাদে চলে গেলাম।ছাদে কিছু সময় অপেক্ষার পর লামিয়া
ছাদে চলে আসলো।দুজনই নিরব হয়ে দাড়িয়ে আছি।কিছু সময় পর
লামিয়া বললো:
— বলুন কি জন্য এখানে ডেকেছেন?
— আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।
আমি আসলে ইচ্ছে করে কিছু করিনি।
— ক্ষমা তো তাকেই করা যায় যে না জেনে
ভুল করে।কিন্তুুু আপনি ছি:।
— সেদিন নেশাটা এতো বেশী হয়ে গিয়েছিল
যে কি করতে কি করে ফেলেছি
বুঝতেই পারিনি।
— আপনি একজন নারীর পবিত্র দেহ টাকে
অপবিত্র করেছেন।এ পাপের কখনো
ক্ষমা হয় না।
— দেখুন আমি তো আর অন্য কাউকে বিয়ে
করছি না।আমি তো আপনাকেই বিয়ে
করতেছি।
— হু আমার জীবনটা সম্পর্ণ নষ্ট করে এখন
এসেছেন করুণা করতে।
— না বিশ্বাস করুন আমি সম্পর্ণ ভাল
হয়ে যাব।আর কখনো কোন নেশা
করবো না।আর তাহাড়া এখন তো
আমি আপনার হবু বর।
— আপনাকে আমি কখনোই আমার
বর হিসেবে মানে নিতে পারবো না।
— কিন্তুু কেন?
— ধর্ষক কখনো কারো বর হতে পারে না।
.
কথাটা বলেই লামিয়া ছাদ থেকে চলে গেল।আর আমি সেখানে
স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।
.
.
.
.
.
.
#________চলবে_________