দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব-৮+৯

0
1108

#দ্বিতীয়_বসন্ত
#পর্বঃ৮_৯
#Arshi_Ayat

জুতোজোড়া হাতে নিয়ে নরম ঘাসের ওপর হাতে হাত রেখে হাঁটছে দুজনে।নিজেদের মধ্যে কথা হচ্ছে থেমে থেমে।কখনো অহি হাসছে তো কখনো অহর্নিশ হাসছে আবার কখনো দুজনকেই একসাথে হাসতে দেখা যাচ্ছে।দূর থেকে দেখে মনে হয় একজোড়া মুক্ত কপোত-কপোতী মনের সুখে হাঁটছে।
——————
মিসেস অনামিকা বাসায় এসে অহর্নিশ,অহি দুজনের একজনকেও না দেখে ঘরে গিয়ে স্বামীকে জিগ্যেস করলেন,’অহর্নিশ কোথায় গিয়েছে জানো?’

‘হ্যাঁ ও তো ওর বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছে।’

‘আর ওই মেয়েটা?’

‘এটা তো জানি না।’পূর্ব চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বললেন।

মিসেস অনামিকা রুষ্ট হয়ে বলল,’এখনো বুঝতে পারছো না?দুজনে একসাথে গায়েব হওয়ার মানে কি?দেখো গিয়ে প্রেম করছে দু’জনে।’

‘কি করা যায় বলো তো?’

‘সেঁজুতির বাবা মা’কে ফোন দাও।যেনো দশদিনের মধ্যে এখানে চলে আসে।ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা দিয়ে রাখি।তারপর ওর পরীক্ষা শেষ হলে বড়ো করে করা যাবে।কিন্তু এখন এসব আটকাতে হলে এটার বিকল্প আমি দেখছি না।’

‘আচ্ছা আমি ইশতিয়াক রেজা’র সাথে কথা বলছি।আর তুমি একটু মেয়েটাকে চোখে চোখে রেখো।’

আরো কিছুক্ষণ তারা শলা পরামর্শ করলো।তারপর পূর্ব চৌধুরী সেজুতির বাবাকে ফোন দিলেন আর মিসেস অনামিকা বসার ঘরের সোফায় এসে বসলেন যেনো মেয়েটাকে কিছু কথা শোনাতে পারে।

সন্ধ্যার কিছু পরেই অহি প্রথমে বাসায় ঢুকলো।ওকে ঢুকতে দেখেই মিসেস অনামিকা টিভিটা বন্ধ করে সোজা হয়ে বসলেন।অহিকে চলে যেতে দেখে বললেন,’এই মেয়ে এদিকে আসো।’

কিছুটা ভীত মুখে অহি ওনার সামনাসামনি বসলো।ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছে সে।মিসেস অনামিকা গম্ভীর স্বরে বললেন,’এতক্ষণ কোথায় ছিলে?’

অহি কিছুটা ইতস্তত কন্ঠে বলল,’এই তো আন্টি কাছাকাছি একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম।’

‘তাই নাকি?তা এতো মিথ্যে কথা কোথাও শিখেছো?’মিসেস অনামিকার গলায় তাচ্ছিল্যের হাসি।

অহি চুপ করে রইলো।অপমান গুলো নিতে পারছে না সে।দৌড়ে ঘরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটা অসভ্যতা হবে।তাই কোনো কথা না বলে নিচের দিকে চেয়ে রইলো।মিসেস অনামিকা আগাগোড়া একবার অহিকে দেখে কঠোর গলায় বললেন,’দেখো মেয়ে আমার বাড়িতে খাচ্ছো,থাকছো আমি কিচ্ছু বলছি না কিন্তু আমার ছেলের পিছনে পড়ো না।ক’দিন বাদেই ওর দিবো আমার তাই কোনোভাবেই ওর কাছাকাছি আসবে না আর কতোদিন অন্যের বাসায় শুয়ে বসে খাবে।এবার নিজে নিজেই কিছু করো।স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার নাটকতো বেশিদিন চলবে না।অহর্নিশের বিয়ে হলো ওর বউ আসলে তোমাকে কিন্তু চলে যেতে হবে।বুঝতেই তো পারছো!যাক আর কিছু বললাম না ঘরে যাও।’
এটা বলেই মিসেস অনামিকা উঠে দাড়ালেন।তারপর গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলেন।উনি চলে যেতেই অহি বাঁ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দ্রুত পায়ে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।অতিশয় যন্ত্রণায় বিছানায় উপুড় হয়ে বালিশে মুখগুজে অশ্রুবিসর্জন দিতে লাগলো।

অহর্নিশ বাসায় এসে নিজের ঘরে চলে গেলো।সে একটু আগের কথোপকথনের কিছুই জানে না।মিসেস অনামিকাও অহর্নিশকে কিছু বললেন না।তাই ও ভেবেই নিয়েছে ঘরের কেউ বুঝতে পারে নি।ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে অহিকে কল দিতেই দেখলো ফোন বন্ধ।চার্জ নেই ভেবে আর ফোন দিলো না।পরে কথা বলা যাবে।

রাতে খাবার টেবিলে পূর্ব চৌধুরী খেতে খেতেই বললেন,’দিনকাল কেমন যাচ্ছে অহর্নিশ?’

‘এইতো ভালোই বাবা।’যদিও এই টাইপের প্রশ্নের মানে অহর্নিশ বুঝতে পারলো না তবুও সরল মনেই উত্তর দিলো।

‘ভালো হলেই ভালো।শোনো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’

অহর্নিশ কৌতুহলী গলায় বলল,’কি সারপ্রাইজ বাবা?’

‘সেটা সারপ্রাইজটা পেলেই জানতে পারবে।’

‘ওহ!আচ্ছা।আমি অপেক্ষা করবো।’এটা বলেই অহর্নিশ স্মিত হাসলো।

কাঁদতে কাঁদতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে অহি।ফোন বন্ধ বলে অহর্নিশ খবরও নিতে পারে নি।তবে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ও একবার অহির ঘরের সামনে এসেছিলো কিন্তু ভেতর থেকে লক বলে ঢুকতে পারে নি।বাইরে থেকে আসার পর থেকে কি এমন হলো যে ফোন বন্ধ আবার এখন দরজাও বন্ধ!এবার কিঞ্চিৎ সন্দেহ হলো অহর্নিশের।তবে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।হতাশ হয়ে অহির রুম থেকে ফিরে নিজের রুমে চলে গেলো সে।

রাতের শেষ প্রহর!বিছানায় হাটুমুড়ে মাথা ধরে বসে আছে অহি।ভিষণ যন্ত্রণা করছে মাথাটা।মন হচ্ছে ছিড়ে পড়ে যাবে।প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।স্বপ্নের মধ্যে কিছু একটা দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠেছে।তারপর থেকেই মাথায় ভিষণ যন্ত্রণা।কিন্তু স্বপ্নে যা দেখলো তার কোনো আগা মাথাই নেই।বোঝাই যাচ্ছে না এটা কেনো দেখেছে।
কষ্ট করে টলতে টলতে কোনোমতে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে হাঁটু মুড়ে বসে রইলো।ঠান্ডা পানির ছোঁয়ায় মাথাব্যাথাটা নামতে লাগলো।তবে প্রচন্ড শীত করছে।শীতে গা ঠকঠক করে কাপছে।তাড়াতাড়ি করে জামা কাপড় পাল্টে বিছানায় এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো।এখনও মাথাব্যথাটা আছে তবে অতো তীব্র না।কিন্তু বারবারই মনের চোখের সামনে স্বপ্নের দৃশ্য ভাসছে।দৃশ্যটা এমন যে একটা মহিলার শরীর ফ্যানের মধ্যে ঝুলছে কিন্তু চেহারাটা অস্পষ্ট!আশেপাশে আরো অনেককেই দেখতে পেয়েছে তাদের চেহারাও অস্পষ্ট!কেবল স্বপ্নের মধ্যে তার চেহারাটাই স্পষ্ট!সে ওই লাশটা দেখে জ্ঞান হারিয়েছে আর তখনই ঘুম ছুটে যায়।কিন্তু এটা কেনো?এই স্বপ্নের সাথে সম্পর্ক কি?এটা কি হারানো স্মৃতির অংশবিশেষ?তাহলে ওই মহিলাটাই বা কে?আমার আপন কেউ?আমি কাঁদছিলাম কেনো তার লাশ দেখে?ওই মহিলাটাই বা আত্মহত্যা কেনো করলো?
একগাদা প্রশ্নে অহির মাথা ভার হয়ে রয়েছে।অবেলায় গোসলের ফলে এখন কাশিও আসছে।কি মুসিবত!ইতিমধ্যে চার/পাঁচবার কাশি দেওয়াও শেষ।তবে শারীরিক অসুস্থতা ওর মনে এখন আর প্রভাব ফেলছে কেবলই নিজের অতীতের সাথে স্বপ্নের কানেকশন খুঁজতে চেষ্টা করছে।কিন্তু এখন আর কিচ্ছু মনে পড়ছে না।মনে করতে গেলে মস্তিষ্কে প্রেশার পড়ে!ব্যাথা হয়!তবুও মনে এগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে।শুয়ে শুয়ে এগুলো ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো সে।

সকালে উঠে ফ্রেশ হতে না হতেই হাসপাতাল থেকে জরুরি কল এলো অহর্নিশের।কলটা পেয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে হাসপাতালে রওনা হলো।আজকে নাস্তাটাও করা হয় নি অহির সাথেও দেখা হয় নি।হাসপাতালে পৌঁছুতেই ইমার্জেন্সিতে যেতে হলো।এরপর তিনঘণ্টায় অপারেশন শেষ করে চেম্বারে এসে বসলো।ক্ষিধেয় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।এখনি নাস্তা এসে পড়বে।যেহেতু আজ অহির সাথে কথা হয় নি তাই প্রথমেই অহিকে ফোন দিলো।দুবার রিং হতেই অহি কল ধরলো।অহর্নিশ ক্লান্ত কন্ঠে বলল,’সরি জানপাখি আজ হঠাৎ একটা ইমার্জেন্সি পড়ে যাওয়ায় দেখা করতে পারি নাই।এবার বলো তুমি খেয়েছো?’

‘হ্যাঁ।আপনি?’

কাল রাতে গোসল করায় অহির ঠান্ডায় প্রায় গলা বসে গেছে।তাই কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে।আর কথাও অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।ফোনের এপাশ থেকে ওর অস্পষ্ট কন্ঠ শুনে অহর্নিশ চিন্তিত হয়ে বলল,’কি হয়েছে তোমার?গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো?’

‘কিছু না একটু ঠান্ডা লেগেছে?’

অহর্নিশ একবার বাইরে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি নেই।তারপর বলল,’বাইরে তো বৃষ্টিও নেই তাহলে ঠান্ডা লাগালে কিভাবে?’

‘ওই তো এমনিই লেগে…’বলতে বলতেই অহি জোরেশোরে একটা কাশি দিলো।কাশির শব্দ শুনেই বোঝা যাচ্ছে সিরিয়াস লেভেলের ঠান্ডা লেগেছে।অহর্নিশ রাগী গলায় বলল,’আমাকে ডাক্তারি পড়াও?আমি বুঝবো না ভাবছো?এমনি এমনিই তোমার ঠান্ডা লাগছে।সিরিয়াসলি অহি তুমি আমাকে মিথ্যে বলছো!তুমি জানো তোমার মিথ্যে আমার কাছে ধোপে টিকবে না।বলো কিভাবে লাগলো ঠান্ডা?কি উল্টাপাল্টা কাজ করছো?’

‘আসলে কাল রাতে মাথাব্যথা হওয়ায় গোসল করছিলাম।’অহি কিছুটা ভীত কন্ঠে বলল।

‘ও মাই গড!তুমি মধ্যরাতে মাথাব্যথার জন্য গোসল করছো?মানে আমি বুঝি না অহি!তোমার কি সেন্স একবারেই চলে গেছে?কোন বুঝে তুমি ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে গেলে।আমাকে একবার কল দিতে!আর কাল রাতে ফোন বন্ধ তারওপর দরজাও বন্ধ ছিলো কেনো?’কঠোর শোনালো অহর্নিশের কন্ঠে।

‘আসলে,মানে আমার খুব ঘুম পেয়ে গিয়েছিলো তাই দরজা বন্ধ করে শুয়েছিলাম পরে আর খুলতে মনে নাই।আর ফোনে চার্জ ছিলো না।তারপর মাঝরাতে হঠাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথা হয় তাই গোসল করেছি।আপনাকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছে হলো না।’কোনোমতে মিথ্যা কথাগুলো বলে ফেললো ও

‘উফফ!ঘুম মাই ফুট।রাগ লাগছে ভিষণ।এখন যাও মনিষার মা’কে বলো তোমাকে আদা চা করে দিতে।সন্ধ্যার সময় আমি এসে দেখবো।আজকে সারাদিন একটু পরপরই আদা চা খাবে।’

এটা বলেই খট করে ফোনটা রেখে দিলো অহর্নিশ।আসলেই মেজাজ গরম হয়ে গেছে।একে তো তিনঘণ্টা ধরে একটা ক্রিটিকাল অপারেশন ছিলো তারওপর ক্ষিধেও লেগেছে চরম আর এদিকে অহির গাধামি দেখে আরো বেশি রাগ উঠছে।

অহর্নিশ ফোন রাখার পরও অহি গেলো না মনিষার মায়ের কাছে চায়ের কথা বলতে।আসলে ভালো লাগছে না তার।সবকিছু কেমন জেনো বিষের মতো লাগছে।কিন্তু একটু পরই মনিষার মা একটা বড়ো মগে করে আদা চা দিয়ে গেলো।অহি বুঝতে পেরেছে এটা অহর্নিশেরই কাজ।তবে খেতেও ভালো।লাগছে না আবার মা খেলেও গতি নেই।এক চুমুক দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো।অহর্নিশের ফোন এটা হলফ করেই বলা যায়।অহি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,’আমি জানতাম তুমি বলবে না তাই আমাকেই বলতে হলো।এখন তাড়াতাড়ি শেষ করবে চা।একদম গরম গরম থাকতে।এটা শেষ হলে আবার দিয়ে যাবে।ভুলেও না খাওয়ার কথা মাথায় আনবে না।তোমাকে আজ আমি চায়ে ডুবিয়ে রাখবো।এটাই তোমার সাস্তি।’

‘এতো চা কিভাবে খা…..’কথা শেষ করতে না করতেই আবার কাশি।

‘যেভাবে কাল রাতে আক্কেল আন্দাজ বিসর্জন দিয়ে গোসল করছো সেভাবেই খাবা।সন্ধ্যায় এসে তোমার বিহিত আমি করবো।’

‘সরি আর এমন করবো…. ‘আবার কাশি।অহর্নিশ হতাশ হয়ে কপাল চাপড়ে বলল,’আর কথা বলা লাগবে না।এখন তাড়াতাড়ি খাও।রাখছি।’

আজকে সারাদিন অহর্নিশ ফোন করে করে অহির খবর নিয়েছে।যখনই ফাঁক পেয়েছে তখনই।মাঝেমধ্যে না খাওয়ার বাহানা দেওয়ায় অহিকে দু’চারটা বকাও গিফট করেছে।আর বেচারি আজ নাহলে ৯/১০ মগ চা খেয়েছে।পাকস্থলীতে এখন চায়ের রাজত্ব।চা খেতে খেতে মুখ তিতা হয়ে গেছে।এখন চায়ের ওপর জাস্ট বিরক্ত সে।আর এক ফোটা চাও কেউ খাওয়াতে পারবে না ওকে।তবে উপকার হয় নি বললে ভুল।আগের থেকে গলাটা একটু পরিস্কার হয়েছে।বন্ধ নাকের দরজা খুলেছে।গলা ব্যাথাটাও কম।

শরীরটা অবসন্ন লাগায় বিকেলের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলো।অহর্নিশ যখন সন্ধ্যায় আসলো তখনও অহি ঘুমেই ছিলো।ফ্রেশ হয়ে একবার বাবা মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো তারা টিভি দেখে।অহর্নিশ চুপচাপ অহির ঘরে এসে ওর কপালে হাত দিলে গা সামান্য গরম।জ্বর এখনো পুরোপুরি আসে নি।এখনি কিছু খাইয়ে ঔষুধ খাওয়াতে হবে।অহর্নিশ অহির হাত ধরে কোমল কন্ঠে বলল,’অহি,ওঠো।খেতে হবে তোমার।খেয়ে ঔষধ খাবে।’

সে ওঠার বদলে আরো গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।অহর্নিশ আবারও ডাক দিলো।অহি চোখ মুখ কুঁচকে ঘুমের ঘোরেই বলল,’ যান তো!আর চা খাবো না।’

এবার অহর্নিশ হেসে ফেললো।সারাদিন চা খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছে বোঝাই যাচ্ছে।অহর্নিশ একটু ঝুঁকে ওর কানেকানে বলল,’আর চা খেতে হবে না।ওঠো অহি।’

এবার হাই তুলে চোখ খুললো অহি।ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,’কখন এলেন আপনি?’

‘এইতো আধঘন্টা হবে।সকালের চেয়ে বেটার লাগছে গলা।’

অহি রুষ্ট হয়ে বলল,’কচু লাগছে।চা খেতে খেতে আমার জিহ্বা পুড়ে গেছে।মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে।’

‘ঠিকই আছে।আরো যাও মাঝরাতে ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে।যদি বলো তাহলে আজকে মাঝরাতে তোমাকে খালের পানিতে চুবিয়ে আনবো।তাতে যদি তোমার শিক্ষা হয়।’

অহি ঠোঁট উল্টে মন খারাপ করে বলল,’কি করবো!তখন অনেক মাথাব্যথা ছিলো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।যা মনে হয়েছে করেছি।’

অহর্নিশ আলতো করে অহির গালে দুইহাত রেখে বলল,’আজকে আবারও বলছি।কখনো কোনো সমস্যা হলে আগে আমাকে বলবে।আমি তো আছি!রাত হোক দিন হোক।২৪ ঘন্টা তোমার জন্য সার্বিস খোলা থাকবে।’

অহর্নিশ কথায় অহি মৃদু হাসলো।মনিষার মাকে দিয়ে গরম ভাত আনিয়ে অহিকে খাইয়ে ঠান্ডা আর জ্বরের ঔষধ খাওয়ালো।তারপর গলায় মাফলার পেচিয়ে দিলো।তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের ঘরে চলে গেলো।যাওয়ার সময় মিসেস অনামিকার সামনে পড়তেই তিনি জিগ্যেস করলেন,’অহর্নিশ ওই মেয়েটার ঘরে কেনো গিয়েছো?’

‘মা ও অসুস্থ।’

‘কি হয়েছে ওর।’

‘ঠান্ডা লেগেছে অনেক।সাথে জ্বরও আছে দেখলাম।’

মিসেস অনামিকা বিড়বিড় করে বললেন,’সব নাটক।আমার ছেলের কাছ থেকে সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য করছে এগুলো।সমস্যা নেই।আর কয়েকটা দিন!’

মায়ের বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো অহর্নিশ বুঝতে না পারলেও এটা বুঝতে পেরেছে যে এগুলো অহিকে উদ্দেশ্য করেই বলা।তবে অহর্নিশ কিছু বলল না।একটা সৌজন্যমূলক হাসি বিনিময় করে নিজের ঘরে চলে এলো।

ঘড়িতে এখন সাড়ে তিনটা বাজে বোধহয়।আজকেও অহি কালকের স্বপ্নটা দেখেছে।আজকেও কালকের মতোই তীব্র মাথাব্যথা।দশমিনিট ধরে মাথা চেপে বসে ছিলো সে।তারপর কোনোমতে অহর্নিশকে কল দিলো।মাঝরাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অহর্নিশের বেডসাইড থেকে ফোনটা নিতেই দেখলো অহির ফোন।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অহি করুণ কন্ঠে বলল,’আমার খুব খারাপ লাগছে।আপনি একটু আসুন না।’

‘আসছি,আসছি।আমি আসছি।’দ্রুত ফোনটা নিয়ে অহর্নিশ অহির ঘরে চলে এলো।অহি তখনো মাথা চেপে ধরে রেখেছে।অহর্নিশ ঘরে এসে লাইট জ্বালিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,’কি হয়েছে অহি?খারাপ লাগছে খুব?’

‘মাথাব্যথা করছে খুব।অসহ্য লাগছে।’

অহর্নিশ দ্রুত মাথা ব্যাথার ঔষধ নিয়ে এলো নিজের ঘর থেকে।ঔষধটা খাইয়ে মাথাব্যথার বামটা মাথায় লাগিয়ে আবার শুইয়ে দিয়ে ওর বিছানার পাশে বসে মাথা মালিশ করে দিতে লাগলো।অহি চোখ মুখ খিঁচে শুয়েছিলো।ব্যাথা যেনো কমার বদলে বাড়ছে।তবে একটা সময়ে মালিশ করতে করতে আর ঔষধের প্রভাবে ব্যাথাটা কমে গিয়েছিলো।তারপর আস্তে আস্তে অহি ঘুমিয়েও গিয়েছিলো।অহর্নিশ যখন অহির ঘর থেকে বর হয় তখন রাত সাড়ে চারটা।নিজের ঘরে এসে বিছানায় বসলো।মাথায় চিন্তা ঝেকে বসেছে।পরপর দুইদিন ধরে মাথাব্যথার কারণ কি?কাল ডাক্তার দেখাতে হবে।কোনো সমস্যা হলে প্রথম থেকেই পরিত্রাণ করা ভালো।

সকাল সকাল মিসেস অনামিকা অহর্নিশের ঘরে এলেন।অহর্নিশ অহির ঘর থেকে আসার পর আর ঘুমায় নি।মা’কে তাও এতো সকাল নিজের ঘরে দেখে বুঝতে পারলো কোনো জরুরী কথা বলতেই এসেছে।তাই কোনোরকম ভণিতা না করেই বলল,’কিছু বলবে?’

‘হ্যাঁ আজ তোর ইশতিয়াক আঙ্কেল আসবেন।ওনাদেরকে আনতে যাবি তুই।’

অহর্নিশ কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল,’হঠাৎ?কোনো কারণ আছে নাকি?’

‘হ্যাঁ।আছে বলেই আসছে।তুই আনতে যাবি।’

‘কিন্তু মা আমার তো ডিউটি আছে।’

‘থাক।একদিন ছুটি নিবি।’

‘মা ডাক্তারদের ছুটি হয় না।তুমি তো জানোই।’

‘আমি কিছু শুনতে চাই না।তুমি যাচ্ছো!’

এটা বলেই মিসেস অনামিকা চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পর অহর্নিশের কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাজ পড়লো।হঠাৎ ইশতিয়াক রেজা’র এখানে আবির্ভাবের কারণ কি?একা আসছেন নাকি ওরা সবাই আসছে!

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে