#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ৪৫
#আদওয়া_ইবশার
শেষ রাতের নিঃশব্দতাকে চূর্ণ করে হাইওয়ে রোড ধরে স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে একটা ষোল সিটের মাইক্রো বাস।গাড়ির ভিতরে নিশাচর পাখির মতো চার জোড়া দম্পতি কিচিরমিচির করে ঘুরতে যাওয়ার আনন্দে মেতে উঠেছে। সবার মাঝেই টানটান উত্তেজনা।খুশিতে বুকের ভিতরটা অল্প অল্প কাঁপছে। তবে সবার থেকে ব্যতিক্রম শুধু দৃষ্টি। মুখের আদলে তার কোথাও একটু আনন্দের লেশমাত্র নেই। মনে হচ্ছে তাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে কোনো বন্দিশালায় পাঠানো হচ্ছে। এর পিছনে অবশ্য কারণও আছে।দুদিন আগে থেকেই রক্তিমের তাগিদে ট্যুরে যাবার গোছগাছ শুরু করে দৃষ্টি। এর মাঝে কতবার যে রক্তিমকে জিজ্ঞেস করেছে,তারা কোথায় যাচ্ছে, কবে যাচ্ছে?তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তবে রক্তিম বরাবরই “গেলেই দেখতে পাবে।আগেই এতো জানার কি আছে?”এই এক জবাবে দৃষ্টির উৎফুল্লতায় জল ঢেলে দিয়েছে। এমন এক জবাবে কৌতূহলী মন কি আর চুপ করে থাকে! রক্তিমের থেকে একই জবাব পাবে জানার পরও দৃষ্টি বারবার জানার চেষ্টা করেছে। তবে ফলাফল প্রতিবারের মতোই শূণ্য। আজ সন্ধ্যা মুহূর্তেও এই নিয়ে এক দন্ড বাকবিতন্ডতা চালিয়ে অভিমানে চুপচাপ শুয়ে পরে দৃষ্টি। রক্তিমও বউয়ের অভিমানী মুখটা দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। দুঃখ বিলাস করতে গিয়ে কখন যে দৃষ্টির দুই চোখের পাতা এক হয়ে যায় বুঝতেই পারেনি। রাত বারোটা নাগাদ হঠাৎ রক্তিমের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে দৃষ্টির। কাঁচা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
“হয়েছে কি? এমন মাঝ রাতে ডাকাডাকি শুরু করেছেন কেন?”
দৃষ্টির মেকি রাগ আর বিরক্তি ভাব দেখে অল্প হাসে রক্তিম। হাসি মুখেই জানতে চায়,
“সমুদ্রের গান শুনবে?”
ভ্রু কুঁচকে নেয় দৃষ্টি। রক্তিমের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে পায়ের কাছে পরে থাকা চাদরটা গায়ে ভালো ভাবে জড়িয়ে নিতে নিতে বলে,
“সরকার বুঝি আপনার কাজে খুশি হয়ে বাড়ির সামনে একটা সমুদ্র উপহার দিয়েছে? এখন সেখানেই গান শুনতে যাবেন?”
“উঁহু। সাগর কন্যার দর্শনে গিয়ে খুব কাছ থেকে তার গান শুনব। হাতে সময় নেই। আধা ঘন্টার মাঝে পুরো রেডি হবে। ওঠে পরো, কুইক।”
রক্তিমের কথাতেই স্পষ্ট বোঝা যায় কিছুক্ষণের মাঝেই তারা রওনা দিবে এতোদিন পযর্ন্ত লুকিয়ে-চুরিয়ে প্ল্যান করা সেই কাঙ্ক্ষিত স্থানে। শোয়া থেকে ঝট করেই উঠে বসে দৃষ্টি। চোখ দুটোতে বিস্ময় নিয়ে বলে,
“ঘুম থেকে এভাবে হুট করে ডেকে তুলে কেউ বেড়াতে যাবার কথা বলে কাউকে? পূর্ব প্রস্তুতি বলেও তো কিছু থাকে!”
দৃষ্টিকে তাড়া দিয়ে রক্তিম গুছিয়ে রাখা লাগেজটা চেক করে দেখে নিচ্ছিল সব ঠিকঠাক আছে কি না। নিজের কাজে ব্যস্ত থেকেই রক্তিম জবাব দেয়,
“গত এক সপ্তাহ যাবৎ গোছগাছ করেও এখন বলছো পূর্ব প্রস্তুতি নেই!তোমরা মেয়েরা আসলেই জিনিয়াস।একদম বাধিয়ে রাখার মতো জিনিয়াস। কোথাও যাবার হলেই বোঝা যায় তোমাদের কাছে সময় কতটা মূল্যহীন।”
এমন ঠেসপূর্ণ কথায় দৃষ্টি কিছু বলতে যাবে,তার আগেই রক্তিম হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয় তাকে।
“যত অভিযোগ আর যত যা বলার সব ট্যুর থেকে এসে বলো। আমি সব নিরবে মাথা পেতে নিব। তবুও এখন আর অহেতুক কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট করোনা। সবাই চলে আসবে এখনই।”
কিছু বলার আগেই মুখের উপর এমন নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা থমথম খেয়ে বিরস মুখে উঠে যায় দৃষ্টি। চুপচাপ নিজের মতো করে রেডি হয়ে অপেক্ষায় থাকে সবাই আসার। দুজন রেডি হয়ে বসতে না বসতেই নিচ থেকে ভেসে আসে গাড়ির হর্ন। ঝটপট দৃষ্টি পা বাড়াই শাশুড়ি মায়ের রুমের দিকে। উদ্দেশ্য শাশুড়ির থেকে বিদায় নেওয়া। দৃষ্টি ভেবেছিল হয়তো রেহানা বেগম ঘুমিয়ে থাকবে। কিন্তু রুমের সামনে যেতেই দেখতে পায় রেহানা বেগম গাড়ির হর্ন শুনেই বেরিয়ে এসেছে নিজের রুম থেকে। সাথে আছে ইতি। ইতিকে এতো রাতে এ বাড়িতে দেখে যারপরনাই অবাক দৃষ্টি। কন্ঠে অঘাত বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
“আপু! আপনি কখন এসেছেন?”
“যখন তুমি আমার ভাইয়ের সাথে রাগ করে গাল ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছিলে তখন।”
হেসে ঠাট্টার স্বরে জবাব দেয় ইতি। শাশুড়ির সামনে এ নিয়ে আর কোনো কথা বাড়ায়না দৃষ্টি। রেহানা বেগম না থাকলে নির্ঘাত তার গুণধর ভাই কেমন ধাচের মানুষ তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করতো দৃষ্টি। বুঝাতো ঠিক কেন তার ভাইয়ের সাথে রাগ করে গাল ফোলাতে হয়। শাশুড়ির উপস্থিতিতে সেটা সম্ভব না হওয়াই কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে দৃষ্টি,
“আপনি তাহলে সত্যিই যাবেন না আপু?”
“না ভাবি। মাইতা আর একটু বড় হোক, তখন আবার সবাই মিলে যাব।”
সেদিন সবাই মিলে ফ্যামিলি ট্যুরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেও সেখান থেকে বাদ পরে যায় ইতি। সে নিজেই সাত মাসের ছোট মেয়ের কথা ভেবেই যেতে নারাজ। এতো ছোট বাচ্চা যদি ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পরে, তখন শশুর বাড়ির লোকজন তাকে কথা শুনাতে ভুলবেনা। তাছাড়া একটু আনন্দের জন্য ভোগতে হবে বাচ্চা মেয়েটাকে। বাচ্চার কথা ভেবেই ইতি যাচ্ছেনা। আর কাপলদের মাঝে মেহেদী একা যেতেও রাজি না। যে চার জোড়া দম্পতি যাচ্ছে তারা হলো, রক্তিম-দৃষ্টি, জাবির- নাবিলা, রাকিব-বর্ণা,শান্ত-ঐশী। তাদের সাথে ফাইয়াজ-স্মৃতিরও যাবার কথা উঠলেও তারাও যাচ্ছেনা তাদের বিচ্ছু ছেলে-মেয়ে দুটোর কথা ভেবে। বাচ্চা দুটোর স্কুল পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
রাত তখন প্রায় দুইটা। পুরো এলাকা যখন ঘুমিয়ে,ঠিক তখনই শিকদার মঞ্জিলের সামনে থেকে বিশালাকৃতির বাইক্রো বাসটা বেরিয়ে যায় মূল গন্তব্যে। গাড়িতে উঠার পর কিছুক্ষণ দৃষ্টি চুপচাপ বসে থাকলেও গল্প রসিক তিন মেয়ে নাবিলা,ঐশী,বর্ণার সাথে পরে খুব বেশিক্ষণ মুখ ভাড় করে থাকতে পারেনি। বিভিন্ন হাসি-ঠাট্টা, কথা-গল্পে শেষ হয় লম্বা এক জার্নি। সকাল সাড়ে নয়টায় গাড়ি যখন কোয়াকাটা জিরো পয়েন্টে এসে থামে ঠিক তখনও দৃষ্টি জানেনা, তারা কোথায় ঘুরতে এসেছে। সেখানে দুই মিনিটের জন্য গাড়ি থামিয়ে রক্তিম কোথাও একটা গিয়ে আবারও ফিরে এসে ড্রাইভারকে নির্দেশনা দিয়ে এক টানে পৌঁছে যায় হোটেল খান প্যালেসে। সারা রাত জার্নি করার ফলে ক্লান্ত প্রত্যেকেই। সিরিপশনের ফর্মালিটিস পূরণ করে যে যার রুমের দিকে চলে যায়। রুমে ঢুকে দৃষ্টি কোনো দিকে না তাকিয়ে মাঝ বরাবর রাখা কিং সাইজ বিছানায় হাত-পা ছেড়ে শুয়ে পরে। তার এমন কান্ডে ভ্রু কুঁচকে নেয় রক্তিম। অসন্তুষ্ট ভঙ্গিতে বলে ওঠে,
“সাত সাগর-তেরো নদী পাড়ি দিয়ে আসোনি নিশ্চয়ই! শরীরে ধুলোবালি নিয়ে এভাবে ব্যাঙের মতো মটকা মেরে শুয়ে না থেকে গোসলটা সেড়ে নাও। হালকা কিছু খেয়ে পরে ঘুম দিও। কেউ নিষেধ করবেনা।”
ঝগড়া করার মতো শরীরে বর্তমানে এক বিন্দু ক্যালোরি না থাকলেও ছ্যাৎ করে উঠে দৃষ্টি। তড়িৎ শোয়া থেকে উঠে বসে কটমট করে তাকায় রক্তিমের দিকে।কিছুটা উঁচু গলায় বলে,
“কি পেয়েছেন টা কি আমাকে? সবসময় কেন আমার পিছনে এভাবে লেগে থাকুন? অন্য সময় যা করেন, বেশি কিছু বলিনা। কিন্তু আজকে! সরাসরি আমাকে ব্যাঙের সাথে তুলনা করলেন! এভাবে অপমান করার জন্যই কি এতো পথ পাড়ি দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছেন?”
রক্তিম শান্ত গলায় বলে,
“ঝগড়া করার জন্য হলেও শরীরে শক্তির প্রয়োজন। না খেলে শরীরে শক্তি পাবেনা।সুতরাং ঝগড়া করতে হলে খেয়ে শক্তি বাড়াতে হবে, শক্তি বাড়াতে হলে খেতে হবে, আর খেতে হলে ফ্রেশ হতে হবে। আরও কিছু বলতে হবে?”
অসহ্য,অত্যাচারী-পাষাণ,বর্বর এই শিকদার দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।বছরে যদি একটা দিন দুটো ভালো ভালো কথা বলে, তো অন্য সব গুলো মাস এইরকম তিতা তিতা কথা বলে অসহ্য করে তুলে দৃষ্টিকে। এসব আর কত নেওয়া যায়! ধুপধাপ পা ফেলে রক্তিমের দিকে এগিয়ে আসে দৃষ্টি। হাত থেকে লাগেজটা ছিনিয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় কাপড় বের করে পূণরায় ঘুরে তাকায় রক্তিমের দিকে। রাগ রাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শাসায়,
“পাষাণ শিকদার! সাবধানে থাকবেন। বলা যায়না, কোনদিন আপনার অত্যাচারে অসহ্য হয়ে বউ নির্যাতনের মামলা ঠুকে দেই। তখন জেলে গিয়ে সুন্দরী কনস্টেবল গুলোকে জ্বালিয়েন। জ্বালার হাড্ডি একটা।”
দৃষ্টির অদ্ভূত শাসানো বাক্যে হু হা করে হেসে ওঠে রক্তিম। ফের কটমট চোখে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে দৃষ্টি।
একে একে সকলে গোসল সেড়ে হোটেল খান প্যালেসের ক্যান্টিন থেকেই নাস্তা করে পূণরায় সকলের বরাদ্ধকৃত রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে রাত জাগা লম্বা পথ পাড়ি দেওয়া শরীরের ক্লান্তি দূর করে। পুরো দুপুর একটানা ঘুমিয়ে বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙ্গে দৃষ্টির। পাশে তাকিয়ে দেখতে পায় রক্তিম এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে আশপাশ তাকিয়ে দেখতেই চোখ যায় রুমের এক পাশ পুরোটা থাই গ্লাসে ঘেরা। পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে রুমের সাথে লাগোয়া সুন্দর এক বারান্দা। বিছানা থেকে নেমে পা বাড়ায় দৃষ্টি সেদিকে। কাচের দরজাটা হাত দিয়ে ঠেলে বারান্দায় পা রাখতেই বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়। অবাক নেত্রে শুধু তাকিয়ে দেখে যায় দু-চোখের আঙ্গিনায় ভেসে ওঠা সমুদ্রের ফেনীল ঢেউ। মাথার উপর দিগন্তজোড়া নীল আকাশ। সেই আকাশের নিচে অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত। এর থেকে সুন্দর, চোখ জোড়ানো দৃশ্য আর কি হতে পারে! দৃষ্টির এখনো স্পষ্ট মনে আছে, তার এসএসসি পরীক্ষার পর স্কুল থেকে তাদের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কোয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল। দৃষ্টির খুব ইচ্ছে ছিল তাদের সাথে যাবার। কিন্তু বাবা-মা তখন মেয়েকে এতো দূর সমুদ্র দেখতে দেওয়ার জন্য একা ছাড়তে নারাজ ছিল। ঐ সময় কিশোরী দৃষ্টির বাবা-মায়ের প্রতি সে কি অভিমান! এরপর তো আবার বন্ধুরা যখন ট্যুর থেকে এসে এই অনিন্দ্য সুন্দর সাগর কন্যার রূপের বর্ণনা দিয়েছিল,তখন থেকেই দৃষ্টির আফসোসের অন্ত ছিলনা এখানে আসার জন্য। সেই ইচ্ছেটা যে এভাবে পূর্ণতা পাবে, কল্পনাতেও বোধহয় ভাবেনি দৃষ্টি। রক্তিম যে তাকে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দিবে এটা জানলে কি আর শুধু শুধু বেচারার সাথে ঝগড়া করতো! অবাক, বিস্ময়,ভালোলাগা আর রক্তিমের প্রতি ভালোবাসার খুশিতে আঁখিদ্বয় সজল হয় দৃষ্টির। বিস্তৃত হয় চিকন দুই ঠোঁটের কোণে মনোহরী হাসি। অশ্রুজলে সিক্ত হওয়া চোখ দুটোতে সীমাহীন মুগ্ধতা নিয়ে অবলোকন করে সাগর কন্যার রুপ।
“কি ম্যাডাম! এখনো কোনো অভিযোগ আছে আমার উপর?”
পিছন থেকে হঠাৎ চির পরিচিত কন্ঠ শুনে ঘুরে তাকায় দৃষ্টি। দেখতে পায় রক্তিম ঘুম জড়ানো চোখে অমায়িক হেসে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দার দরজার মুখে। কাল বিলম্ব না করে ছুটে গিয়ে রক্তিমের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে।দৃষ্টির হঠাৎ আক্রমণে পিছিয়ে পিছিয়ে যায় রক্তিম। দেয়ালে হেলান দিয়ে নিজেকে সামলে বিস্তর হেসে জিনেও দুই হাতে ঝাপটে ধরে দৃষ্টিকে। ঠাট্টার স্বরে বলে,
“এবার অন্তত দয়া করে আমার নামে কোনো বউ নির্যাতনের কেস দিবেন না ম্যাডাম। জেলে গিয়ে সংসদীয় আসন হারাতে চাইনা আমি। বহু কষ্টে মানুষকে ভুলভাল আশ্বাস দিয়ে এই আসন জয় করেছি।”
লাজুক হেসে আরও নিবিড় ভাবে রক্তিমের বুকের সাথে মিশে যায় দৃষ্টি। মন্থর কন্ঠে উচ্চারণ করে,
“ভালোবাসি পাষাণ শিকদার।”
রক্তিম নিজেও হেসে শক্ত করে হাতের বাঁধন। মাথার এক পাশে ওষ্ঠ চেপে বলে,
“আমিও।”
“কি?”
মাথা উঁচিয়ে জানতে চায় দৃষ্টি।মিটিমিটি হেসে রক্তিম জবাব দেয়,
“তুমি যা বললে তাই।”
“কি বলেছি আমি?”
“তুমি কি বলেছো সেটা তো তুমিই ভালো জানো।”
মুহূর্তেই দৃষ্টির সুন্দর,শান্ত মেজাজটা ঘেটে যায়। বিরক্তি ভঙ্গিতে ভ্রু কুঁচকে নিজেকে রক্তিমের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,
“অসহ্য অসহ্য অসহ্য।”
শব্দ করে হেসে ওঠে রক্তিম। দৃষ্টিকে কাছে টেনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
“ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।”
চলবে….
#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ৪৬
#আদওয়া_ইবশার
গোধূলি লগ্ন। সাগরের তীর ঘেষে হাতে হাত ধরে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে দুজন নর-নারী। বিশাল সমুদ্রের জলরাশি হুটহাট এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে তাদের পা। যতবার ঢেউ গুলো দোলনার মতো দোলে দোলে এসে দৃষ্টিকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, ঠিক ততবার ভালো লাগার শিহরণে কেঁপে উঠছে দৃষ্টির শরীর। পরোক্ষণে আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে আনন্দে। সমুদ্রের গর্জন সাথে প্রিয় নারীর হাসি, দুটো মিলেমিশে রক্তিমের কানে বাজছে অপার্থিব এক খুশির গান। গোধূলির আলোয় মুগ্ধ চোখে দেখে যাচ্ছে প্রিয়তমার মায়া,মায়া,প্রাণোচ্ছল কায়া। চোখের মুগ্ধতা,হৃদয়ের ভালো লাগার আবেশটুকু কন্ঠে ফুটিয়ে রক্তিম অস্ফুট স্বরে বলে,
“অন্য দিনের থেকে তোমাকে আজ অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। মনে হচ্ছে মায়াবতীর মুখের মায়া অনেকাংশে বেড়ে গেছে। আমাকে নতুন করে নিজের মায়ার জাদুতে ফাঁসানোর জন্য এখানে এসে নতুন কোনো পন্থা অবলম্বন করেছো না কি?”
সামনের দিকে বাড়ন্ত পা জোড়া সহসা থেমে যায় দৃষ্টির। গোধূলির রঙে রাঙা মুখটা আরও একটু রঙিন হয় লাজ রঙে। ঠোঁটের কোণে উঁকি দেয় লাজুক হাসি। দৃষ্টির লাজুক মুখের রূপ দেখে রক্তিম যেন আরও এক দফা চমকায়। ভালো লাগার শিরশিরে অনুভূতি ছেয়ে যায় হৃদ প্রাঙ্গন। আশেপাশে সূর্যাস্ত দেখার জন্য মানুষের পদচারনা বাড়ছে। দৃষ্টি লোক সমাগম থেকে চোখ ফিরিয়ে উত্তাল সমুদ্রের বুকে তাকাতেই দেখতে পায় জেলেদের বাড়ি ফেরার তাড়া। সেদিকে নজর রেখেই ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
“হ্যাঁ। নতুন পন্থা তো অবলম্বন করছিই। এই যে, পাশে প্রিয় পুরুষ। গোধূলি আমার দেহে আবির ছড়াচ্ছে।সমুদ্র তরঙ্গ আমার হৃদয়ে আনন্দের বীণা বাজাচ্ছে। আকাশের নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়া গাংচিলের দল ভালোবাসার গান শুনাচ্ছে। দমকা প্রেমের হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার সর্বত্র। এই সবই তো আমাকে নতুন রূপ দিয়েছে। ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধেছে মন-প্রাণ।”
মুচকি হাসে রক্তিম। একটু নির্জন জায়গা দেখে হাঁটার গতি থামিয়ে দেয়। দৃষ্টির পিছনে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে ইশারা করে পশ্চিম আকাশের বুকে রক্তাব সূর্যের দিকে। যে আপাতত ব্যস্ত ধরণী কূলের মানুষদের ফাঁকি দিয়ে নীলাভ সমুদ্রের জলে গোধূলির আবির মিশিয়ে হারিয়ে যেতে। সময়ের গতিতে মনে হচ্ছে সূর্যটা যেন সুনীল আকাশের বুকে না,বরং তলিয়ে যাচ্ছে নীল সমুদ্রের জলের নিচে। জীবনের প্রথম খুব কাছ থেকে সূর্যাস্তের মতো অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে বাকহারা হয় দৃষ্টি। অবাক-বিস্ময়ে আঁখি মেলে তাকিয়ে দেখে যায় অপরূপ দৃশ্যটুকু। ভালো লাগার আবেশে শরীর ছেড়ে মিশে যায় রক্তিমের বুক পাঁজরে। রক্তিম নিজেও যত্ন সহকারে আগলে নেয় তার হৃদমোহিনীকে। সূর্যাস্তের সাথে দুটো প্রেমিক যুগলের সুখপূর্ণ মুহূর্তটা দূরে দাঁড়িয়ে ফ্রেম বন্দি করে নেয় জাবির। আকাশের বুকে সূর্যটা যখন পুরোপুরি বিলীন হয়ে সমুদ্রে আবছায়া অন্ধকার নেমে আসে, ঠিক সেই মুহূর্তেও ঘোর কাটেনা দৃষ্টির। আগের মতোই অপলক আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আবেগঘন স্বরে বলে,
“পাষাণ সাহেব! এই মুহূর্তে আমার কি করতে ইচ্ছে করছে জানেন?”
“কি?”
ভাবুক স্বরে দৃষ্টির উৎফুল্ল মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় রক্তিম। আয়েশি ভঙ্গিতে দৃষ্টি মাথাটা আরেকটু ঠেসে দেয় রক্তিমের শক্ত বুক পাঁজরে। চোখ দুটো বুজে মুচকি হেসে বলে,
“বলা যাবেনা।”
“বলা যাবেনা! এ আবার কেমন ইচ্ছে?”
কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে জানতে চায় রক্তিম। রিনিরিন চাপা শব্দ তুলে একটু হাসে দৃষ্টি। মিটমিট হাসি ঠোঁটে ধরে রেখে প্রফুল্লচিত্তে জবাব দেয়,
” এই ইচ্ছেটা আমার আজকের ইচ্ছে না। বহুদিন ধরে যত্ন করে পোষে রেখেছি ইচ্ছেটাকে। কিন্তু এখন বলা যাবেনা, কারণ ইচ্ছেটা একটু বেহায়া টাইপ। বললে আমি শিওর, আপনি আমাকে চরম বেহায়া ভাববেন আর মনে মনে বলবেন,এতো অল্প বয়সে এই মেয়ে এতো পেকে গিয়েছিল!”
এক ইচ্ছের এতো বিশদ বর্ণনা শুনে রক্তিমের মন উদগ্রীব হয় সেটা জানার জন্য। তবে দৃষ্টি অনঢ়। কিছুতেই বলবেনা তার ইচ্ছের কথা। রক্তিমও কম যায়না। নাছোড়বান্দা যেভাবেই হোক বউয়েদের যত্ন করে পোষে রাখা ইচ্ছের কথা জানবেই। অবশেষে দৃষ্টি রক্তিমের জোরের কাছে হার মেনে বলে,
“আচ্ছা আচ্ছা বলব। আগে আমাকে একটু ছাড়ুন। অপেক্ষণ ধরে একভাবে থাকতে থাকতে শরীর ব্যাথা করছে।”
অসল ভঙ্গিতে হাতের বাঁধন ঢিলে করে রক্তিম। দৃষ্টি তার বহুল আরাধ্য পুরুষের সান্নিধ্য থেকে দূরে গিয়ে জানান দেয় সেই ইচ্ছের কথা,
“এসএসসি পরীক্ষার পর যখন স্কুল থেকে কুয়াকাটা ঘুরতে নিয়ে আসার সময় আমি আসতে পারিনি,তখন মনে মনে একটা অদ্ভূত আর বেহায়া ভাবনা ভেবেছিলাম।ভাবনাটা হলো, বিয়ের পর স্বামীকে নিয়েই প্রথম কুয়াকাটা আসব। তারপর এই সাগর কন্যার তীরে দাঁড়িয়ে স্বামীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে সাগর কন্যাকে হিংসের আগুনে পুড়াবো।”
শেষের কথাটুকু লাজুক ভঙ্গিতে বলেই তাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জাবিরদের দিকে ছুট লাগায় দৃষ্টি। এমন বাচ্চাসুলভ ইচ্ছের কথা শুনে ভড়কে যায় রক্তিম। অদ্ভূত নজরে দৃষ্টির যাবার পানে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়িয়ে হেসে ওঠে। বিরবির করে বলে,
“পাগল একটা।”
আলো আধারির সময় টুকু সাগর পাড়ে নিজেদের মতো ঘুরেফিরে কাটিয়ে সবাই মিলে একত্রিত হয়ে চলে যায় ফিশ ফ্রাই মার্কেটে। সেখান থেকে মেয়েদের পছন্দমতো সামুদ্রিক মাছ কিনে বারবিকিউ করে খেয়ে কতক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে আসে রিসোর্টে। ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে আবারও বেরিয়ে পরে রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। আকাশের বুকে থালার মতো গোলাকার রুপালি চাঁদ। তাকে ঘিরে সহশ্র তারার মেলা। চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে সমুদ্রের জলরাশি। সন্ধ্যায় মানুষের যতটা ভীড় ছিল বর্তমানে তার আংশিকও নেই। টুকটাক যুগল আনমনে হেঁটে যাচ্ছে। কিছুটা দূরে এক ঝাক উচ্ছল তরুণ-তরুণী গিটার হাতে গানের আসর জমিয়েছে। হিম হিম বাতাসের সাথে ভেসে আসা গিটারের সুরে মন অন্যরকম এক ভালো লাগায় ছেয়ে যাচ্ছে। নিঃশব্দে মুহূর্তটাকে উপভোগ করে হাঁটতে হাঁটতে দৃষ্টির হঠাৎ মনে পরে অন্যদের কথা। থেমে গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে জানতে চায়,
“ওরা কোথায়? হারিয়ে গেল না কি?”
“ওরা সবাই কাপল ঘুরতে এসেছে। সবারই একটু প্রাইভেসির প্রয়োজন। নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে ওরা। তাছাড়া ওরা কি বাচ্চা, যে হারিয়ে যাবে!”
নিরবে প্রশ্নটা শুনে হেয়ালি করে জবাব দিয়ে পূণরায় দৃষ্টির হাত টেনে হাঁটা ধরে রক্তিম। দৃষ্টি প্রসঙ্গ পাল্টে টুকটাক গল্প জোরে দেয়। গল্পে গল্পে কখন যে ঝাউবনের ভিতর চলে যায় খেয়ালই করেনি দৃষ্টি। হঠাৎ চোখের সামনে সব ঘুটঘুটে অন্ধকার উপলব্ধি করে অৎকে উঠে থেমে যায় দৃষ্টি। ভয়ে আকড়ে ধরে রক্তিমের বাহু। দৃষ্টির ভীতিগ্রস্থ মনোভাব বুঝতে পেরে আশ্বাস দেয় রক্তিম,
“ভয় পেয়োনা। আমি আছি তো।”
মন পুরুষের আশ্বস্ততায় ভয় কাটেনা দৃষ্টির। শুকনো ঢোক গিলে বলে,
“এখানে কেমন অন্ধকার! কখন জঙ্গলে চলে এসেছি একটুও টের পেলাম না। চলুন ফিরে যায়। জঙ্গল থেকে যদি কোনো আগ্রাসী প্রাণী বেড়িয়ে আসে!”
“এটা নিরাপদ জায়গা। কোনো ভয়ংকর প্রাণী নেই। থাকলে কি তোমাকে নিয়ে আসতাম?”
তবুও মন মানেনা দৃষ্টির।কেমন যেন একটা ভয় কাজ করছে। ভূতুড়ে অন্ধকার পরিবেশ দেখে শরীর কাটা দিয়ে উঠছে। রক্তিমের কাছাকাছি আসতে আসতে একদম মিশে গেছে তার সাথে। তা দেখে নিম্নোষ্ঠে দাঁত কামড়ে হাসে রক্তিম। মিনিট দুই-এক পাড় হতেই হুট করে আলোকিত হয়ে উঠে চারপাশ।হঠাৎ আলোর ছটায়
অন্ধকার সয়ে যাওয়া দৃষ্টির চোখ ঝলসে যেতে চায়। পিটপিট পলক ঝাপটে পূর্ণ নজরে তাকাতেই ভিষণ ভাবে চমকায় দৃষ্টি। চোখের সামনে সব কিছুই ফকফকা। সামান্য কিছুটা জায়গা নিয়ে ঝাউগাছ গুলো বাহারি রঙের লাইটিং করা। সমুদ্র তীর ঘেষে ছোট্ট একটা টেবিল। তার উপরে নেট কাপড়ের ছাউনি দেওয়া। সেখান থেকেই টেবিলের মাঝ বরাবর ঝুলছে হারিকেলের মতো স্ট্রিং লাইট। টেবিলের চারপাশ লাভ সেইপ বেলুন আর নেট কাপড় দিয়ে ডেকোরেট করা। সাদা কাভারে ঢাকা টেবিলের উপর সুভা পাচ্ছে তরতাজা এক গুচ্ছ বেলি ফুল। পাশেই বেলি ফুলের ডিজাইন দিয়ে ডেকোরেট করা একটা কেক। হতবিল্বত নজরে চারপাশ দেখতে দেখতে এক সময় চোখ দুটো বিদ্ধ হয় রক্তিমের দিকে। যে আপাতত দৃষ্টিতে শীতল অনুভূতি লেপ্টে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ফাঁকা ঢোক গিলে দৃষ্টি কিছু বলতে যায়, তার আগেই রক্তিম বলে ওঠে,
” এক বছর আগের ঠিক আজকের এই দিনটাতে একটা হাঁটুর বয়সী মেয়েকে নিজের বিরোদ্ধে গিয়ে আমার কবুল বলে বউ করতে হয়েছিল। ধুরন্ধর সেই মেয়েটা সময়ের সাথে সাথে আমাকে এতোটাই মায়ার জাদুতে ফাঁসিয়েছে যে, সেই এক বছর আগের সহ্য করতে না পারা মেয়েটার মায়ায় আজ খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গেছি আমি। উপলব্ধি করতে পেরেছি,সেই মেয়েটাকে ছাড়া আমি রক্তিম অর্থহীন। কারণ সেই মায়াবতীর মায়ার ছোঁয়াতেই আমি রক্তিম নতুন এক জীবন পেয়েছি। মাঝখানে হয়তো অনেক মূল্যবান সম্পদ বাবাকে হারিয়েছি। তবে সব শোক কাটিয়ে, ছন্নছাড়া জীবন বিসর্জন দিয়ে বাঁচতে শিখেছি। হাসতে শিখেছি, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখেছি। সাথে আরও একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পেরেছি, পৃথিবীতে সবথেকে কঠিন জিনিস হলো মায়া। যদি কেউ একবার কারো মায়ায় আটকে যায়,তবে আমৃত্যু সেই মায়ার জালে আটকে থাকে। একটু একটু করে সেই মায়া থেকে জন্ম নেই ভালোবাসার। যে আমি একটা সময় ভালোবেসে জঘণ্যভাবে ঠকে গিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর কখনো কাউকে ভালোবাসি বলবনা। সেই আমি এক মায়াবতীর মায়ায় পরে সেই মায়ার জালে তৈরী ভালোবাসায় ডুবে গিয়ে বাধ্য হয়েছি ভালোবাসি বলতে। দ্বিতীয়বার ভালোবেসে সর্বত্র হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া আমি আজ আত্মসমর্পণ করলাম আমার মায়াবতীর কাছে, আমার হৃদমোহিনীর কাছে, আমার মনোহরির কাছে, আমার হৃদয়ের উঠোন জুড়ে যে আছে তার কাছে। ভালোবাসি মায়ার রাণী। আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবেসে আগলে রাখবে একটু? বার্ধক্যে তোমার কাধে মাথা রেখে যৌবনের রঙিন স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিবে আমাকে?”
ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়। প্রবাদ বাক্যটা বোধহয় খাঁটি সত্য। না হয় আজ কি দৃষ্টির জীবনে এমন দিন আসতো! যার একটু ভালো কথার জন্য, একটু মনযোগ পাবার জন্য দিনের পর দিন মুখ বুঝে সহ্য করেছে হাজার কথার বাণ। যার মুখ থেকে ভালোবাসি,শব্দটা শোনায় ছিল এক প্রকার ধু ধু মরুপ্রান্তে জলের সন্ধান পাবার মতো, সেই মানুষটাই সময়ের ব্যবধানে আজ নিয়ে দুবার তার কাছে এতো বিশদ ভাবে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। কাছে টেনে নিয়েছে তাকে যত্ন করে। আগলে রেখেছে পবিত্র এক ফুলের মতোই। প্রতিটা মুহূর্তে নিরবে অনুভব করিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার গভীরতা। এই এতো এতো প্রাপ্তির পর আর কিছু চাওয়ার থাকে দৃষ্টির? মাত্র একটা বছরেই নিজের চাওয়ার থেকেও অধিক পেয়ে দৃষ্টি আজ অনুভূতির জোয়ারে পৃষ্ঠ হয়ে বাকহারা। তির তির করে কাঁপন তুলেছে বুকের ভিতরটা। অনেক কিছু বলতে চেয়েও পারছেনা একটা শব্দও উচ্চারণ করতে। রোধ হয়ে আছে কন্ঠস্বর। উত্তাল সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ের মতোই হৃদয়ে শুরু হয়েছে খুশির জলোচ্ছাস। সেই জলোচ্ছাসের জলধারা কখন যে উপচে এসে দুই চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরেছে খুশির বহিঃপ্রকাশ জানাতে দৃষ্টি বুঝতেই পারেনি। বহু চেষ্টার পর কাঁপা স্বরে বলতে সক্ষম হয়,
“আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন তো!”
জবাব দেয়না রক্তিম। মন্থর গতিতে এগিয়ে আসে দৃষ্টির সন্নিকটে। হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আগে হাঁটুর বয়সী বউয়ের বাচ্চা কালের বেহায়া টাইপ ইচ্ছেটাকে পূর্ণতা দিয়ে নেই! পরে বলব, মিথ্যে ভালোবাসি না কি সত্যি।”
কথার সমাপ্তি টেনে দৃষ্টিকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওষ্ঠ যুগল বন্দি করে নেয়। উষ্ণ আবেশে বিবশ হয় দুটো হৃদয়। তৃষ্ণার্ত দুটো হৃদয়ের সন্ধিক্ষণে দূর আকাশের চাঁদ-তারা গুলোও মিটিমিটি হাসে। তরঙ্গায়িত সমুদ্র কন্যা হিংসের আগুনে না পুড়ে গান শোনায় তার কলকল শব্দে। সুখী দুটো মানুষের সুখের পরিণয় দেখে ঝাউবনে লুকিয়ে থাকা নাম না জানা কিছু পাখি মনের সুখে ডানা ঝাপটে উড়ে যায়। কিচিরমিচির সুর তুলে বহিঃপ্রকাশ ঘটায় আনন্দের।
চলবে…..