#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ১৫
#আদওয়া_ইবশার
পুরোদমে সাত কলেজের ভর্তির জন্য প্রস্তুতি চলছে দৃষ্টির। মাথায় তার একটাই চিন্তা বাবা-মা’কে এই মুহূর্তে অখুশি রাখা যাবেনা। যেভাবেই হোক তাদের ইচ্ছে পূরণ করতে হবে। তবেই দৃষ্টি একটু ভরসা নিয়ে তাদের কাছে নিজের পছন্দের কথা তুলে ধরতে পারবে। একদিন আগে পরে হলেও বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করানো যাবে। কিন্তু এখন যদি তাদের কথা না রাখতে পারে তবে কোন মুখে যাবে মা-বাবাকে রক্তিমের কথা বলতে! আর মা-বাবাই বা কোন খুশিতে তার ইচ্ছে পূরণ করতে যাবে? এর মাঝে আবার দৃষ্টি খবর পেয়েছে আজীজ শিকদার নির্বাচনে বিপুল ভোট জয় লাভ করেছে। এখন তো ওনি নিশ্চয়ই দৃষ্টিকে দেওয়া কথা রাখবে। যেকোনো সময় হয়তো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হতে পারে তাদের বাড়িতে। কথাটা যতবার ভাবছে ততবারই পুলকিত হচ্ছে দৃষ্টি।
দিলশান আরা’র পরিচিত এক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সেমিস্টার শেষ করে নিজ এলাকায় কিছুদিনের জন্য ছুটি কাটাতে এসেছিল। তার কাছেই দিলশান আরা অনুরোধ রাখেন মেয়েটাকে যাতে পরীক্ষার জন্য একটু ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে। প্রিয় ম্যাডামের আবদার বাধ্য ছাত্র হয়ে মেনে নেয় ছেলেটা। আজ চারদিন যাবৎ দৃষ্টি তার কাছে প্রতিদিন বিকেলে পড়তে যাচ্ছে। নিয়ম করে আজকেও গিয়েছিল। টানা দুই ঘন্টা পড়া শেষে সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে নিজের বাসার দিকে যাচ্ছিল দৃষ্টি। রাস্তায় নেমে কয়েক কদম আগাতেই হঠাৎ মনে হয় পিছন থেকে কেউ তাকে নাম ধরে ডাকছে। অচেনা এক ছেলে কন্ঠে নিজের নাম শুনে একটু অবাক হয় দৃষ্টি। পিছন ঘুরে দেখতে বেশভূষায় ভদ্র গোছের সম্পূর্ণ এক যুবক তার দিকে এগিয়ে আসছে। দৃষ্টি মনে করার চেষ্টা করে লোকটা তার পূর্বপরিচিত কি না। কিন্তু নাহ! এর আগে কখনও লোকটাকে দেখেছে বলে মনে হচ্ছেনা। তবে একদম অচেনা একটা মানুষ কিভাবে তার নাম জানল! দৃষ্টির ভাবনার মাঝেই ছেলেটা একদম তার কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। অমায়িক হেসে বলে,
“আপনিই দৃষ্টি মেহজাবিন রাইট!”
“হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কে? আর আমার নাম কিভাবে জানেন?”
ছেলেটা আবারও হাসে। বলে,
“এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর দিব? আস্তে আস্তে বলুন। কেউ দৌড়াচ্ছেনা আপনাকে।”
চারিদিকে হুড়মুড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। লোকটা কি চোখে দেখছেনা! ভর সন্ধ্যায় একটা মেয়ে মানুষের বাড়ি যাবার তাড়া থাকবেনা! কিজন্যে একটা মেয়ে এই সন্ধ্যা বেলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অচেনা একটা ছেলের সাথে রসিয়ে আলাপ করতে যাবে? ছেলেটার কমন সেন্সের বড্ড অভাব। কথাটা ভেবে একটু বিরক্ত হয় দৃষ্টি। বলে,
“আরে ভাই আমি আপনাকে চিনিনা জানিনা আপনার সাথে রাজ্যের সময় নিয়ে কথা বলতে যাব কেন? তাছাড়া সন্ধ্যা নামছে চোখে দেখতে পাচ্ছেন না? অদ্ভূত লোক!”
ছেলেটা হয়তো দৃষ্টির বিরক্তি ভাবটা বুঝতে পারে। তাই আবারও হেসে বলে,
“আরে ভাবি সাহেবা এতো অধৈর্য হলে চলবে না কি? রক্তিম শিকদারের বউ হতে হলে প্রচুর ধৈর্য্য থাকতে হবে। নাহয় কিন্তু একদিনও সংসার করার ভাগ্য হবেনা।”
হুট করে লোকটার মুখে রক্তিমের নাম শুনে বিস্মিত হয় দৃষ্টি। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে জানতে চায়,
“কে আপনি? রক্তিম শিকদারকে কিভাবে চিনেন? আর আমি যে রক্তিম শিকদারের বউ হব এটা আপনি জানেন কিভাবে?”
“আমি রক্তিমের বন্ধু। আজীজ কাকু মানে রক্তিমের বাবা আমাকে পাঠিয়েছে আপনার সাথে দেখা করার জন্য।”
এবার একটু নরম হয় দৃষ্টির আচরণ। ভাবে লোকটাকে সত্যিই হয়তো আজীজ শিকদার পাঠিয়েছে কোনো প্রয়োজনে। নির্বাচন শেষ। এবার নিশ্চয়ই আজীজ শিকদার তার কথা নিয়ে ভাবতে বসেছে। সেজন্যই হয়তো কোনো কিছু জানতে বা জানাতে লোকটাকে তার কাছে পাঠিয়েছে। আর সে কি লোকটার সাথে বাজে আচরণ করা শুরু করে দিয়েছে! একটু লজ্জিত হয় দৃষ্টি। অল্প হেসে বলে,
“স্যরি ভাইয়া। আসলে আপনাকে এর আগে কখনো দেখিনি তো তাই চিনতে পারিনি। প্লিজ কিছু মনে করবেননা!”
প্রতিত্ত্যরে লোকটাও হাসে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না না। কিছু মনে করিনি। আপনার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলেও অপরিচিত ছেলের সাথে এমন ভাবেই কথা বলতো। এটা স্বাভাবিক। চলুন হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি! এতে আপনারও সুবিধা হবে। আপনি সময় মতো বাড়িতেও চলে যেতে পারবেন। এদিকে আমাদের কথাও শেষ হয়ে যাবে।”
বিনিময়ে দৃষ্টিও মুচকি হেসে সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে রাস্তার দিকে। উপরে দৃষ্টিকে দেখতে শান্ত মনে হলেও ভিতরে ভিতরে অস্থিরতায় ছটফট করছে মেয়েটা। না জানি আজীজ শিকদার কোন খবর পাঠিয়েছে! খবরটা দৃষ্টির জন্য আনন্দের হবে না কি দুঃখের? কথাটা জানার জন্য তর সইছেনা। অন্যদিকে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে তাড়া দিয়ে জানতেও পারছেনা।
***
রূপালী চাঁদের আজ অভিমান হয়েছে। ধরণীর বুকে আলো দিতে ভিষণ অনিহা তার। মিটিমিটি জ্বলতে থাকা তারা গুলোও আজ চাঁদের সাথে পাল্লা দিয়ে লুকিয়ে আছে। রাস্তার দুই পাশে জ্বলতে থাকা ল্যাম্প পোস্টের আলো যেটুকু অন্ধকার সড়াতে সক্ষম হয়েছে সেটুকুই আলোকিত। পার্টি অফিসের ছাঁদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে রক্তিম শিকদার এবং আজীজ শিকদার। বাবা-ছেলে দুজনেই নিরব। আজীজ শিকদার মনে করার চেষ্টা করছেন ঠিক কতদিন আগে এমনভাবে বাবা-ছেলে একসাথে ছাঁদে দাঁড়িয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকৃতি অনুভব করেছিল? অতীত হাতরে দেখা মিলে এমন শত শত মধুর মুহূর্ত। যে সময় গুলোতে বাবা-ছেলের মাঝে ছিল বন্ধুসুলভ এক সম্পর্ক। এমন কতশত রাত স্মৃতির পাতায় যুক্ত হয়েছে!যে রাত গুলোতে রক্তিম শিকদারের পেটে জমে থাকা সমস্ত কথা চালান হতো আজীজ শিকদারের কানে। সেই ছেলেটাই আজ কত গুলো বছর যাবৎ বাবার সাথে এক দন্ড বসেও একটু কথা বলেনা।
তবে আজ এতোদিন পর রক্তিম নিজে থেকেই পার্টি অফিসে এসে কি মনে করে যেন বাবাকে আহ্বান জানাই দুজনে মিলে একটু নিরব সময় কাটানোর জন্য। ছাঁদে আসার পর থেকে এখন পযর্ন্ত কোনো কথা বলেনি রক্তিম। শুধু নিরবে তাকিয়ে দেখে যাচ্ছে রাস্তায় চলতে থাকা গাড়ি গুলোর দিকে। ছেলেকে এক নজর দেখে আজীজ শিকদার নিজেই নিরবতার জাল ছিঁড়ে বলেন,
“তোমার মা’কে যত দ্রুত সম্ভব একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে।”
তড়িৎ রাস্তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাবার দিকে তাকায় রক্তিম। কপাল কুঁচকে জানতে চায়,
“কেন?”
“ইদানিং একটু বেশিই পাগলামি করছে। এক প্রকার ঘর বন্দি করে রাখতে হচ্ছে। কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে বলা যায়না।”
“আপনার কাছে কি আমার মা’কে পাগল মনে হয়? ঘরবন্দি করে রাখার মানে কি? এসব করে বুঝাতে চাইছেন সত্যি সত্যি ওনি পাগল?”
এবার রক্তিমের কন্ঠে রাগের আভাস পাওয়া যায়। হঠাৎ করে মা’কে ঘরবন্দি করে রাখার মতো একটা কথা শুনে ঠিক রাখতে পারেনা নিজেকে। রাগে এক প্রকার চেঁচিয়ে কথা গেছে বলে। বিপরীতে আজীজ শিকদার তার স্বভাবজাত গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“শিক্ষিত হয়েও মূর্খদের মতো কথা বলনা। শুধু পাগল হলেই মানুষ সাইক্রিয়াট্রিস্টের সরনাপন্ন হয়না। তাছাড়া তোমার কি মনে হয় তার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক? ঐ ঘটনার পর থেকে তোমার সাথে যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করে। মানলাম এক ছেলের শোকে আরেক ছেলের সাথে এমন করছে। কিন্তু এখন তো ইতির সাথেও এমন আচরণ করে। এমনকি আমাকে দেখলেও মা র তে তেড়ে আসে। এই আচরণ গুলো কি স্বাভাবিক কোনো মানুষের?”
বাবার কথার পৃষ্ঠে রক্তিম আর কোনো কথা রাখেনা। বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অভিশপ্ত জীবনের হিসেব কষতে ব্যস্ত হয়ে পরে নিরবে। আজীজ শিকদার নিজেই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে ওঠে,
“বাদ দাও সে কথা। তুমি কিজন্য ডেকেছো সেটা বলো।”
“আমার পরিচিত একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট আছে। শান্তর ফুফাতো ভাই। এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখব। কাল সময় করে গিয়ে দেখা করে আসবেন।”
স্নান হাসে আজীজ শিকদার। গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ছেলের দিকে। অনুভব করার চেষ্টা করে ছেলেটার মনের ব্যথা। কিন্তু ব্যর্থ হয়। ভাবে বাবা-ছেলের মাঝে কতটা দেয়াল তৈরী হয়ে গেল! মনে হয়, ঐতো কিছুদিন আগেই ছেলেটার মুখ দেখেই মনের কথা সব বলে দিতে পারত। বাবার এমন গুণ দেখে রক্তিম আনন্দোচ্ছল হেসে জানতে চাইত, “তুমি কিভাবে আমার মনের সব কথা বুঝে যাও বাবা? কোনো জাদু-টাদু জানো না কি?” উত্তরে আজীজ শিকদার স্বহাস্যে বলতো, ” পৃথিবীর সব বাবারাই এই জাদু জানে।যেদিন আমার মতো বাবা হবি সেদিন তুই নিজেও আমার মতো এমন জাদুবলে তোর সন্তানের মনের কথা মুখ দেখে বলে দিতে পারবি।” আজ সেই বাবা-ছেলে একটুও বুঝতে পারেনা একজন আরেক জনকে। দিন কে দিন আজীজ শিকদারের মনে হচ্ছে তার ছেলেটা কেমন যেন এক রহস্য মানবে পরিণত হচ্ছে। নিজের দুঃখ-কষ্ট গুলো নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখতে শিখে গেছে। এমনকি বাবা-ছেলের মাঝে সম্বোধনের স্বরটাও পাল্টে গেছে। যেখানে বাবা ছেলেকে ডাকত তুই করে সেখানে এখন ডাকে তুমি করে। আর ছেলে যেখানে ডাকত তুমি করে সেখানে আজ ডাকে আপনি করে। এভাবেই বুঝি পৃথিবীর প্রতিটা বাবা-ছেলের মাঝে সময়ের সাথে সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়? না কি শুধু তাদের বেলাতেই এমনটা হয়েছে?
প্রতি বারের মতো এবারও রক্তিম ব্যর্থ জীবনের হিসেব মিলাতে। বিরক্ত হয়ে ভাবনা ঘরে তালা ঝুলিয়ে ধ্যান ফেরায় বাস্তবতায়। নিকষ কালো আকাশের দিকে তাকায় গভীর নয়নে। বুক ভরে দম নেয়। ফের নজর ঘুরিয়ে তাকায় বাবার দিকে। শান্ত কন্ঠে বলে,
“ইতু বড় হচ্ছে। আপনার কি মনে হয়না ওর বিয়ে নিয়ে এবার ভাবা উচিৎ?”
আজীজ শিকদার নিজেও এবার একটু আনমনা হয়। তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“আমার ঘরের যে অসুস্থ পরিবেশ। সেই পরিবেশের কথা পুরো এলাকার মানুষ জানে। সাথে এও জানে, আমি আজীজ শিকদার পুরো একটা শহরের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারলেও নিজের ঘরে শান্তি ফিরানোর দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ। যে মেয়ের মা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে সবসময় নিজ ধ্যানে মজে থাকে। যার ভাই রাস্তায় রাস্তায় গুন্ডামি করে বেড়ায়। বাবা এসব সহ্য করতে না পেরে রাজনীতির ব্যস্ততা দেখিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। সেই মেয়েকে কে চাইবে বউ করে ঘরে তুলতে? আদও আমার মেয়েটা ঘরকন্নার কাজ জানে কি না সেটা তো আমি নিজেও জানিনা। আমার সেই মেয়ে কিভাবে পরের ঘরের লক্ষি হবে?”
বিষাদপূর্ণ চাঁদ-তারাহীন রাতের মতোই রক্তিমের কাছে তার বাবার প্রতিটা কথা তিক্ত মনে হচ্ছে। এতোটাই তিক্ত যা সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছে করছে এখান থেকে ছুটে অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে। তার জন্য তার আশেপাশের মানুষ গুলোর করা পাপের জন্য নিষ্পাপ ছোট বোনটা মাসুল গুণবে! কথাটা ভাবতেই ইচ্ছে করছে নিজেই নিজেকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে দিতে। অশান্ত মেজাজটা বাবার সামনে প্রকাশ করেনা রক্তিম। গভীর দুটো নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বলে,
“ছেলে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা। আমার বোনের জন্য আমি যোগ্য পাত্র অনেক আগেই বাছাই করে রেখেছি। আমার বোন কখনো কোনো অংশে অপূর্ণ থাকবেনা ইন শা আল্লাহ।”
আজীজ শিকদার এবার যথেষ্ট অবাক হয়। চোখে-মুখে বিস্ময় খেলে যায়। আশ্চর্যান্মিত হয় রক্তিমের দিকে তাকিয়ে জানতে চায়,
“কে সেই ছেলে?”
একটুও কাল বিলম্ব করেনা রক্তিম। ঝট করেই বলে দেয় যার সাথে আদরের বোনের জীবন জুড়ে দেবার করে ভেবে রেখেছে তার নামটা,
“মেহেদী।”
তৎক্ষণাৎ যেন বড়সড় একটা ঝটকা খায় আজীজ। এমনভাবেই বিদ্যুতাড়িত হয়ে বলে ওঠেন,
“অসম্ভব।”
সোজাসুজি এমন নাকুচ করাই একটু আশ্চর্য হয় রক্তিম। জানতে চায়,
“কেন?”
ক্রোধান্মিত দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকায় আজীজ শিকদার। বলেন,
“নিজে যেমন হয়েছো এক গুন্ডা-মাস্তান তেমন বোনের জন্যেও গুন্ডা ছেলে নির্বাচন করেছো! আমি ভাবতেই অবাক হয়ে যাচ্ছি। কিভাবে পারলে তুমি এমন একটা চিন্তা করতে? কি যোগ্যতা আছে ঐ ছেলের আমার মেয়েকে বিয়ে করার?”
দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে অল্প হাসে রক্তিম। বিদ্রুপাত্মক স্বরে বলে,
“একটু আগেই না বললেন যার ভাই রাস্তায় রাস্তায় গুন্ডামি করে বেড়ায় তার জন্য ভালো কোনো ঘর থেকে প্রস্তাব আসবেনা! গুন্ডা ভাইয়ের বোনের জন্য তো কোনো এক গুন্ডা ছেলের বিয়ের প্রস্তাবেই আসবে। এটাই স্বাভাবিক। এতো ভাবাভাবি আর অবাক হবার কি আছে?”
চলবে…..
#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ১৬
#আদওয়া_ইবশার
রক্তিমের এমন খামখেয়ালি কথায় মেজাজ উত্তপ্ত হয় আজীজ শিকদারের। দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে বলে,
“আমি এখনো বেঁচে আছি। সজ্ঞানে থাকতে কখনো আমার মেয়েকে আমি অপাত্রে দান করবনা।”
বাবার কথায় রক্তিম নিজেও এবার বিরক্ত। চোখে-মুখে বিরক্তির রেশ ফুটিয়ে বলে,
“মেহেদীকে আপনার অপাত্র মনে হচ্ছে কেন? দেখতে সুদর্শন, সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। দুই ভাই আর বাবা-মা নিয়ে মাত্র চারজন সদস্যদের ছোট্ট একটা পরিবার। এর থেকে ভালো পাত্র পাবেন কোথায় আপনি?”
“শুধু এগুলো দেখলেই হবে?এক টাকাও ইনকাম আছে তার?বিয়ের পর আমার মেয়েকে খাওয়াবে কি? ঐ ছেলের রূপ আর বংশ পরিচয়ে নিশ্চয়ই আমার মেয়ের পেট ভরবেনা।”
কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথেই কথাটা বলেন আজীজ শিকদার। উত্তরে রক্তিম জানায়,
” ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষকে কিভাবে রাখলে সুখে থাকবে সেটা আপনার-আমার থেকেও ভালো তারা বুঝবে।”
তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। এই কথাটাই যথেষ্ট ছিল আজীজ শিকদারকে চুপ করিয়ে দেওয়া। অবাক, বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে রক্তিমের মুখের দিকে।
“তুমি শিওর ইতি ঐ ছেলেকে ভালোবাসে?”
“গুন্ডা হতে পারি। তাই বলে বোন কি করছে, কার সাথে মিশছে এসব খোঁজ রাখবনা এতোটাও ছন্নছাড়া এখনো হয়নি। তার থেকেও বড় কথা আপনি খুব ভালো করেই জানেন, পুরো বিষয় না জেনে অযথা কোনো কিছু নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনা। আর মেহেদী এখন কিছু করেনা তাই বলে ভবিষ্যতেও করবেনা এমন কোনো কথা নেই। দায়িত্ব ঘাড়ে আসলে নিজ তাগিদে ঠিকই রোজগারের পথ খোঁজে নিবে। শুধু শুধু ছেলে বেকার, গুন্ডামি করে এমন কিছু ফালতু ইস্যু দিয়ে দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করবেন না।”
মেয়ে যেখানে নিজে থেকেই জীবন সঙ্গী ঠিক করে রেখেছে সেখানে আজীজ শিকদার আর কিই বা করতে পারে! অন্য আট-দশটা বাবার মতো অবশ্যই মেয়ের ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেননা তিনি। আর মেহেদী ছেলেটাও একেবারে খারাপ এমনও না। যথেষ্ট শিক্ষিত। নিজের ছেলেটার সঙ্গ পেয়েই চাকরি-বাকরি ছেড়ে গুন্ডামি বেছে নিয়েছে। চাইলেই ছেলেটাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সঠিক পথে আনা যাবে। তাছাড়া এটাই সুযোগ। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে যেভাবেই হোক নিজের ছেলেটাকেও বাধ্য করতে হবে নতুন করে জীবনটা গড়ার।
“বন্ধু আর বোনের ভালোবাসার পূর্ণতা দেবার জন্য উঠেপরে লেগেছো। অন্যদিকে যে একটা মেয়ে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে বারবার তোমার কাছে অবহেলিত হচ্ছে তার জন্য কি একটুও মায়া হয়না? না কি সে তোমার আপন কেউ না দেখে তার ভালোবাসার মূল্য নেই তোমার কাছে?”
বাবার মুখে হটাৎ এমন কথায় চমকায় রক্তিম। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে। মুখে কিছুই বলেনা। আজীজ শিকদার তবুও বুঝে যায় ছেলে কি চাচ্ছে। ঠোঁট টেনে সামান্য হেসে বলেন,
“দৃষ্টি মেয়েটার কথা বলছি আমি। এখন আবার এটা জিজ্ঞেস করোনা ওর কথা আমি কিভাবে জানলাম। যেখানে বলতে গেলে পুরো এলাকার মানুষ জানে একটা মেয়ে রাস্তাঘাটে রক্তিম শিকদারের সামনে ভালোবাসার দাবী নিয়ে দাঁড়াচ্ছে। খবরটা সেখানে রক্তিম শিকদারের বাবা হয়ে আমি জানবনা?”
অত্যধিক বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ বর্গীয় উচ্চারণ করে রক্তিম। খিঁচে বলে,
“ঐসব ফালতু বিষয় এখানে টানছেন কেন?”
“দৃষ্টি মেয়েটার ভালোবাসা যদি তোমার কাছে ফালতু মনে হয় তবে তোমার বন্ধু আর বোনের ভালোবাসাও আমার কাছে ফালতু। ঐসব ফালতু টপিকে আর কিছু বলতে এসোনা আমার কাছে।”
কথাটা শুনে কপালদ্বয়ে দুটো ভাজ পরে রক্তিমের। শান্ত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে জানতে চায়,
“কি চাচ্ছেন আপনি?”
সোজাসাপ্টা এমন প্রশ্নে মুখ ভরে হাসে আজীজ শিকদার। বলেন,
“তেমন কিছুই না।দৃষ্টি মেয়েটাও আমার মেয়ের বয়সী মিষ্টি একটা মেয়ে। দুজনই আবার দুটো ছেলেকে ভালোবাসে। তাই ভাবছিলাম আরকি যদি কারো ভালোবাসার পূর্ণতা দিতেই হয় তবে দুজনেরটাই দিব। একজন ভালোবাসা পেয়ে আজীবন সুখে কাটাবে। আর অপরজন ভালোবাসার বিরহে ছটফট করবে এমনটা তো আমি হতে দিতে পারিনা।”
এবার রক্তিম নিজেও একটু হাসে। তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
“ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। বারবার না। ঐসব ছলনাময়ীর ছলনায় রক্তিম শিকদার টলবেনা আর।”
“সব মেয়ে এক না।”
“কে ভালো কে খারাপ সেটাও তো কারো কপালে সীল মেরে দেওয়া নেই। তো বুঝব কিভাবে?”
“মানুষ চেনার ক্ষেত্রে তুমি বোকা হলেও আমি না। ঐ মেয়েটার চোখে আমি তোমার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি। আমার মতো পুড় খাওয়া ব্যক্তির চোখ ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ না।”
এতোক্ষনের শান্ত মেজাজটা এবার বাঁধনছাড়া হয় রক্তিমের। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এক প্রকার চেঁচিয়ে বলে,
“সমস্যা কি আপনার? আমাকে ভালো থাকতে দেখে কি আপনার ভালো লাগছেনা? আমি তো কাওকে বলিনি আমার ব্যাপারে এতো ভাবতে। তবে ভাবছেন কেন? ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন আমাকে আমার মতো?”
আজীজ শিকদার নিজেও এবার একটু চড়াও হয়। রাশভারী কন্ঠে বলেন,
“তুমি যেটাকে ভালো থাকা বলছো সেটা অন্য আট-দশটা স্বাভাবিক মানুষের কাছে অসুস্থ থাকা ছাড়া কিছুই না। একটা সুস্থ্য মানুষের জীবন কখনো এমন হতে পারেনা। আর কি সমস্যা জানতে চাচ্ছো না! সমস্যা আমার একটাই। সেটা হলো তোমার মতো ছেলের বাবা হওয়া। এখন না পারছি তোমাকে নিজের সন্তান বলে অস্বীকার করতে। আর না পারছি তোমার ছন্নছাড়া জীবন দেখেও চুপ থাকতে। অনেক করেছো। এবার অন্তত একটু দয়া করো আমার উপর! শান্তিতে বাঁচতে না দাও। অন্তত ম রা র সময় যাতে সন্তানদের সুখে দেখে শান্তিতে ম র তে পারি সেই সুযোগটা দাও। বাবা হয়ে তোমার কাছে আমার এটাই শেষ আবদার। দৃষ্টি মেয়েটাকে মেনে নাও। নতুন করে সংসার সাজাও।”
কথাগুলো শেষ করে একটু দম নেয় আজীজ শিকদার। পরক্ষনে আবারও চোয়াল শক্ত করে বলেন,
“শিকদার মঞ্জিলে যদি আবারও বিয়ের সানাই বাজে তবে আজীজ শিকদারের ছেলে-মেয়ে দুজনের বিয়ের সানাই একসাথে। বাজবে অন্যথায় না। অনেক দেখেছো তোমার দাপট আর হুঙ্কার। অনেক শুনেছি তোমার কথা। জন্ম তুমি আমাকে দাওনি। আমি দিয়েছি তোমাকে জন্ম। এবার থেকে যা বলার আমি বলব। আর যা শোনার সব তোমাকে শুনতে হবে।”
নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় রক্তিম। বড়বড় দম নিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফের গম্ভীর কন্ঠে জানতে চায়,
“শুনলাম আপনার কথা। রাজি হলাম বিয়ে করতে। কিন্তু ঐ মেয়ের পরিবার!আপনি নিজেই যেখানে মেহেদীর সাথে ইতুর বিয়ে দিতে চাচ্ছেন না। কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন মেহেদী বেকার, গুন্ডা। সে যদি হয় ছা-পোষা গুন্ডা তবে আমি তার ওস্তাদ। সেই আমার সাথে কিভাবে ঐ মেয়ের পরিবার বিয়ে দিতে রাজি হবে? এই কথা গুলো কি ভেবে চিন্তে আমাকে বরশির কলে বাজাতে এসেছেন! না কি আবেগে গা ভাসিয়ে ভেবেছেন পুটি মাছের বরশি দিয়ে বোয়াল ধরে ফেলবেন!”
কথাগুলো যৌক্তিক। আসলেই আজীজ শিকদারের মাথায় দৃষ্টির পরিবারের চিন্তা আসেনি। ওনি শুধু মেয়েটার কথায় তার ছেলের প্রতি ভালোবাসার প্রগাঢ়তা দেখে ছেলেটার সুন্দর একটা জীবন দেখার লোভে অন্ধ হয়ে গেছেন। এই কথাটা একবারো মাথায় আনেনি যে মেয়েটার অভিভাবক আছে। কোন দুঃখে তারা রক্তিমের মতো এমন একটা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে? যে ছেলে কি না পূর্বে বিয়ে করেছিল। বর্তমানে রাস্তা-ঘাটে গুন্ডামি করে বেড়ায়। পুরো সাভারবাসী যাকে এক নামে গুন্ডা-মাস্তান হিসেবে জানে সেই ছেলের সাথে কোনো ভালো পরিবারের মা-বাবা নিশ্চয়ই চাইবেনা তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে। যৌক্তিক চিন্তাধারা গুলো নিজের মাঝেই চেপে রাখেন আজীজ শিকদার। রক্তিমকে সেসব বুঝতে না দিয়ে বলেন,
“ঐসব দেখার বিষয় আমার। তুমি শুধু বলো আমার কথায় রাজি আছো কি না!”
রক্তিম নিশ্চিত ঐ মেয়ের বাবা-মা রক্তিমের আসল পরিচয় জানলে কোনোদিন মেয়ে বিয়ে দেবার কথা মুখেও আনবেনা। সেখানে রক্তিম রাজি হলেই কি আর না হলেই বা কি! তবে রাজি হলে লাভ একটা অবশ্য আছে। সেটা হলো ছেলে কথা রাখেনা এই নিয়ে বাবার মনে যে কষ্ট সেটা একটু হলেও ঘুচবে। আর দ্বিতীয়ত মেহেদীর সাথে ইতির বিয়েটা দিতে বেগ পেতে হবেনা। কথা গুলো ভেবে রক্তিম ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,
“ঠিক আছে। আপনি যদি সবটা ম্যানেজ করতে পারেন তবে আমিও পারব দ্বিতীয়বার বিয়ের পিড়িতে বসতে।”
কথাগুলো বলে আর একটুও দাঁড়ায়না রক্তিম। ছাঁদ থেকে নেমে সোজা বাইক ছুটিয়ে চলে যায় নিজের ছোট্ট কুঠিরে। আজীজ শিকদার চিন্তিত হয়ে ছাঁদেই দাঁড়িয়ে থাকে। মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে প্রয়াস চালায় সমস্যার সমাধান খোঁজে বের করার। কিন্তু কোনো বুদ্ধি খোঁজে পায়না। ভাবতে গেলেই মনে হচ্ছে সব ঝট পাকিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই নিরবতার জাল ছিঁড়ে আজীজ শিকদারের পাঞ্জাবীর পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। পিনপতন নিরবতার মাঝে হঠাৎ তাড়স্বরে ফোন বেজে ওঠায় ভাবনাচ্যুৎ হয় আজীজ শিকদার। পকেট হাতরে ফোন বের করে নাম্বারটা দেখেই কুঁচকে থাকা কপালদ্বয় স্বাভাবিক হয়। ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকিয়ে গম্ভীর মুখটা হাস্যজ্জল করে বলে,
“কেমন আছো মা?”
জবাবে ফোনের অপরপাশ থেকে মিষ্টি এক কন্ঠে প্রথমে সালাম ভেসে আসে,
“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন স্যার?”
“আমি ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। তবে আমি একটা বিষয় নিয়ে অত্যন্ত দুঃখিত স্যার। আপনি যাকে আমার সাথে দেখা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন ওনার সাথে আমার দেখা হবার পরও ঠিকঠাক কথা বলতে পারিনি। কারণ তখনই তখনই সেখানে আব্বু চলে আসে। ঠিক কিজন্য ওনাকে পাঠিয়েছিলেন সে বিষয়ে কি আমরা এখন ফোনে কথা বলতে পারি?”
দৃষ্টির কথায় হতবম্ভ আজীজ। ওনি আবার কখন কাকে দৃষ্টির সাথে দেখা করতে পাঠালো?
“আমি তো কাওকে তোমার সাথে দেখা করার জন্য পাঠাইনি। কার কথা বলছো তুমি মা? কে গিয়েছিল দেখা করতে?”
আজীজ শিকদারের কথায় এবার দৃষ্টির কপালেও চিন্তার ছাপ। ভাবুক হয়ে বলে,
“আপনি পাঠাননি? তবে লোকটা যে আপনার পরিচয় দিল! বলল আপনিই না কি কি দরকারে পাঠিয়েছিলেন!”
গভীর ভাবনায় পরে যায় আজীজ শিকদার। ওনার আর বুঝতে দেরী হয়না ঐ মুহূর্তে মেয়েটার বাবা উপস্থিত না হলে বড় ধরনের কোনো বিপদ হয়ে যেতে পারত। মেয়েটা তাদের জীবনের সাথে জুড়ে যাবার আগেই তাদের শত্রু নিষ্পাপ মেয়েটারও শত্রু হয়ে গেল! ঐ লোকটার যদি খারাপ কোনো উদ্দেশ্য থাকে তবে তো আজ সফল না হতে পেরে আবারও পিছু নিবে। শুধু শুধু তাদের বাপ-ছেলের শত্রুতার জন্য একটা অবুঝ মেয়ে বিপদের সম্মুখিন হবে! নাহ, কিছুতেই এটা হতে দেওয়া যাবেনা। যত দ্রুত সম্ভব তাদের কিছু একটা করতে হবে।
“শুনো মা। তুমি তো অনেক বুঝদার একজন মেয়ে তাইনা! কিন্তু তোমার ঐভাবে রাস্তা-ঘাটে আমার ছেলের পিছনে ঘোরাফেরা উচিৎ হয়নি। রক্তিমের শত্রুর অভাব নেই। এমনকি আমারও রাজধানীর সুবাদে যথেষ্ট শত্রু আছে। ওরা যদি এখন তোমাকে রক্তিমের কাছের কেউ ভেবে কোনো ক্ষতি করে ফেলে! ঐ লোকটাকে আমি পাঠাইনি। আমার যদি কোনো প্রয়োজন পরতোই তবে সরাসরি ফোনেই তোমার সাথে যোগাযোগ করতাম। এভাবে রাস্তায় যদি আর কখনো অপরিচিত কেউ আমার বা রক্তিমের পরিচয় দিয়ে তোমাকে কোথাও যেতে বলে একদম যাবেনা। বুঝতে পেরেছো আমার কথা?”
আজীজ শিকদারের কথায় দৃষ্টির মাঝে ভীতি সঞ্চার হয়। অজানা এক আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। ভাবে সত্যিই আজকে বাবা না থাকলে বড়সড় কোনো বিপদ হতে পারত। আল্লাহ সহায় ছিল বলেই হয়তো সুস্থ্যভাবে বেঁচে ফিরেছে। কথাটা ভেবে তৎক্ষণাৎ মনে মনে শুকরিয়া জানায় সৃষ্টিকর্তার নিকট। পরক্ষনে আজীজ শিকদারের কথায় সাই জানিয়ে বলে,
“আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আর কখনো এমন কোনো বোকামি করবনা স্যার।”
দৃষ্টির মনের ভয় টের পায় আজীজ শিকদার। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
“আচ্ছা মা! আমি ভেবেছিলাম তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব। কিন্তু এখন তো চিন্তা হচ্ছে তোমার বাবা-মা কি রক্তিমকে মেনে নিবে?”
এবার যেন এক চিন্তার সুতো কেটে আরেক চিন্তায় এসে পরল দৃষ্টি। ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই জিজ্ঞেস করে,
“আপনার ছেলের সাথে কথা বলেছেন? ওনি কি রাজি হয়েছে?”
ভরসা দেবার মতো করে আজীজ শিকদার অল্প হেসে বলেন,
“ও নিয়ে তুমি এতো ভেবোনা। তোমার ঐদিকটা আগে বলো কিভাবে কি করব। আমার ছেলেকে কিভাবে রাজি করাতে হবে সেটা আমার চিন্তা। ওকে রাজি করিয়ে সঙ্গে নিয়ে তবেই যাব আমি তোমাদের বাড়ি।”
আজীজ শিকদারের কথা শেষ হতেই প্রচণ্ড উৎসাহের সাথে কিছুটা চেঁচিয়ে বলে দৃষ্টি,
“আইডিয়া পেয়েছি একটা।”
হঠাৎ এমন অভিব্যক্তিতে কিছুটা হতচকায় আজীজ শিকদার। পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে জানতে চায়,
“কি আইডিয়া?”
দীর্ঘ দশ মিনিট সময় ব্যয় করে বুঝিয়ে দৃষ্টির মাথায় চলা পুরো বিষয়টা সম্পর্কে আজীজ শিকদারকে অবগত করতে সক্ষম হয় দৃষ্টি। আজীজ শিকদার সবটা শোনার পর রসাত্বক হেসে বলে,
“আরে বাহ্! তোমার মাথায় তো দেখছি দারুন বুদ্ধি। মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে আমার বদলে তোমাকেই এমপি পদে দাঁড় করাতে হবে।”
কথাটা শুনে একটু শব্দ করেই হেসে ফেলে। পরক্ষনেই ধাতস্থ হয়ে সামলে নেয় নিজেকে। দরজার ফাঁক গলিয়ে সতর্ক দৃষ্টি পরোখ করে নেয় কেউ আবার তার কথা বা হাসি শুনে ফেলল কি না।
চলবে…..